#চারুকাব্য ৪
লেখা : #azyah_সূচনা
“আমিতো ওকে মেরে ফেলিনি।আমি শুধু ওর পায়ের গোড়ালিতে অল্প ব্যথা দিয়েছি”
মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে একজন।তার রক্তে সবুজ ঘাসগুলো লালচে।সেও বাকিদের মতনই কালো রঙের স্যুট পড়া।দেখে বোঝা গেলো তাদের মধ্যেই একজন। কাঠের চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে ছিলো কাব্য।এতবড় কান্ড সেই ঘটিয়েছে।বুঝতে বাকি নেই চারুর।মিনিট দুয়েক হবে দৌড়ে এলো এখানে।বারান্দা থেকে এই দৃশ্য দেখে নিজেকে কিছুতেই থামাতে পারেনি।চারুকে দেখে উঠে এসেছে কাব্য।
তার কথার জবাবে চারু চেচিয়ে বললো,
“একটা মানুষকে গুলি করেছেন আপনি?আর বলছেন মারতে চাননি?”
বাঁকা হাসে কাব্য।তার অসময়ে এমন হাসির কারণ এখনও যথাযথ জানে না চারু।হাতের পিস্তলটি এগিয়ে দিলো আমজাদের হাতে।চারুর পাশে দাড়িয়ে আঙ্গুল তুলে দেখালো পড়ে থাকা লোকটির পায়ের দিকে।বললো,
“কাট টু কাট ওর পায়ের হাড়টাতে গুলি করেছি। এতে ওর বিশেষ কোনো সমস্যা হবেনা। হ্যা কয়েকমাস ব্যাথা থাকতে পারে।কিন্তু মরবে না।আর আমি ওকে এই ব্যাথাটাই দিতে চাচ্ছিলাম”
“কিন্তু কেনো!কেনো আঘাত করবেন আপনি মানুষকে?”
“যেনো এই আঘাত আর ব্যথা তাকে বারবার স্মরণ করায় আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার পরিণাম কি হতে পারে”
ফ্যালফ্যাল নয়নে মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে থাকা কাব্যর দিকে চাইলো চারু।এই বাক্যটা তার জন্যেও সতর্কবার্তা নয়তো?দুর থেকে আরো একজনকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়।বড় বড় কদম ফেলে পাশে এসে বসে লোকটির।ব্যাগ থেকে তুলো, ব্যান্ডেজ বের করে লোকটির পা ব্যান্ডেজ করতে লাগলো।সাথে ইনজেকশন পুশ করেছে।মায়া হলো চারুর। স্বাস্থ্যবান লোকটি রীতিমত কাদঁছে।সামান্য আঘাতে মানুষের প্রাণ যায় যায় অবস্থা।সেখানে গুলি?
কাব্য আমজাদের উদ্দেশ্যে বললো, “ওকে খাতির যত্ন করো।পেইন কিলার দিয়েছে না?”
“জ্বি স্যার”
“ডাক্তারকে সাথে রাখবে ওর টুয়েন্টি ফোর সেভেন।আর সবচেয়ে বড় কথা!ওকে একা ছাড়বে না।বেশি বাড় বাড়লে হাত পা বেঁধে রাখবে।”
কাব্য হাঁটছে।নিজের প্রগাঢ় চোখে বুঝিয়ে দিলো চারুরও সাথে আসতে হবে।একবার পেছনে চেয়ে চারুও পা বাড়িয়েছে তার পেছনে।পাশাপাশি হাটতে হাটতে কাব্য বলে উঠলো,
“তুমি শুটিং শিখবে?”
এমন প্রশ্নে মুখে তুলে তাকালো কাব্যের পানে।অবাক চক্ষু তার।শুটিং আর চারু? কখনোতো মাথাতেও আসেনি এই ধারণা।কাব্য বললো,
“তুমি শিখতে চাইলে আমি তোমাকে শেখাবো।তোমার যা করতে মন চাইবে তৎক্ষনাৎ আমাকে জানাবে।”
“আমি কি তাহলে ভন্ড শিক্ষকের পাশাপাশি ভন্ড শুটারও?”
হেসে ফেলে কাব্য।বলে, “শুটার ভন্ড হয়না।শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষক হতে হয়না।শিক্ষিত হলে চলে তবে কোনো সার্টিফিকেট এর দরকার পড়েনা।”
মাথার উপর দিয়ে গেলো।কি বললো সে?বোঝাতে চাইলো কি? শিক্ষক থেকে তথাকথিত স্বামী হওয়ার পর তার কথাবার্তা চালচলন পুরোটাই ভিন্ন।এই অংকের সমাধান কোথায়?জানতে হবে।কাব্য নামক রহস্যের সমাধান করতে হবে।
ঘুমিয়ে পড়েছে কাব্য।শুয়ে পড়ে মিনিট খানেকও সময় নেয়নি।বুকের ওঠানামা করা গতি তার নিস্তেজ দেহের প্রমাণ দিচ্ছে।এই অপেক্ষায় ছিলো চারু।খুব সাবধানতার সাথে কাব্যের পাশে গিয়ে দাড়ায়। সাইড টেবিল থেকে তার ফোনটা হাতে তুলে নিলো। দ্রুত পায়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেছে।মনের মধ্যিখানে কাব্যর জেগে উঠার ভয় নিয়েই ফোনটা অন করলো।চারুর চোখকে চমকে দিয়ে ভেসে এলো ফোনের স্ক্রিনে তার ছবি।সাদা রঙের ওড়না টানা মেয়েটি আর কেউ নয় সেই। ফটোকপির দোকান এর বেঞ্চিতে ক্লান্ত মাথা নুয়ে বসে ছিলো।নিজের ছবিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে লক খোলার জন্য উদ্যত হয়।আশ্চর্যজনক ভাবে কোনো লক নেই ফোনে।যাক এই যাত্রায় তার জন্য ভালোই হয়েছে। সর্বপ্রথম কল লিস্ট চেক করে।সম্পূর্ণ ফাঁকা! লিস্টে কোনো নাম্বার না দেখে কপাল কুচকে নেয় চারু।পুরো ফোন চেক করার পর মনে পড়লো গ্যালারির কথা।সেটাতো চেক করা হয়নি। গ্যালারি ওপেন করে আরেকদফা চমকে ওঠে। বৃদ্ধাঙ্গুলের সাহায্যে টাচ স্ক্রিন উপর নিচ করছে।পুরোটা গ্যালারি জুড়ে শুধু একজনের ছবি।চারু।কখনো রাস্তায়,কখনো ক্লাসরুমে,কখনো তাদের পুরোনো বাড়ির দরজায়।এগুলো কখন তুলেছে সে?হাজারটা ছবি এখানে।নিজেকে নিজেও কখনো এভাবে কল্পনা করেনি।যেভাবে কাব্য তাকে এই যান্ত্রিক ফোনে আবদ্ধ করেছে।
“তুমি চাইলে গোয়েন্দা সংস্থায় চাকরি নিতে পারো”
মোবাইলটা ধপ করে মাটিতে পড়ে গেল। ধড়ফড়িয়ে উঠেছে চারু। সর্বাঙ্গে ভয়ানক কম্পন সৃষ্টি হয়েছে।দুয়েক কদম পিছিয়ে চলে যায়।কাব্য এগিয়ে এসে বলল,
“পড়ে যাবে চারু। পেছাচ্ছ কেনো?”
খেয়াল নেই।ভীতিকর ধরা পড়ে যাওয়ার পরিস্থিতে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে।ঝুঁকে ফোন হাতে তুলে কাব্য আবার বলে উঠে,
“কিছু পেয়েছো আমার ফোনে?শুধু তুমি ছাড়া আর কিছুই নেই”
ঠোঁটজোড়া কাপছে চারুর।ছোটোবেলা থেকেই ভীত প্রকৃতির মেয়ে সে। পড়ালেখায় মেধাবী হওয়া সত্বেও এই ভয়টা তার মন থেকে দুর হয়না। কাব্যকে দেখলেই মনে হয় যেনো তার জীবন হরণ করতে সে সর্বদা প্রস্তুত।দৃষ্টি শীতল করে কাব্য। কম্পন ধরা ওষ্ঠজোড়ায় নজর পড়তে অন্তরের ব্যাকুলতা বাড়াবাড়ি শুরু করলো।কয়েক সেকেন্ডে চোখ নামিয়ে নিলো।মুখ শক্ত করে নত দৃষ্টিতে চারুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে,
“আমি তোমাকে ব্যথা দিয়েছি, বকেছি?কেনো ভয় পাচ্ছো আমাকে।আমি কি মানুষ না তোমার মতন?কোনো ক্ষতি আমি করিনি।তারপরও কেনো এত ভয়?”
কেঁদে উঠলো চারু।বললো, “জোর করে বিয়ে করেছেন।এর চেয়ে বড় ক্ষতি কি হতে পারে কাব্য আফনান?”
___
“আপনি চাইলে আমাদের পার্টির সাথে হাত মেলাতে পারেন মিস্টার কাব্য।এতে আপনার আমার দুজনেরই লাভ”
মেটে রঙের ফতুয়া পরিহিত একজন।কাব্য থেকে বেশ খানিকটা দুরত্ব নিয়ে কালো রঙের সোফায় বসে।বিশাল ওয়ের হাউজটায় কথা বাড়ি খাচ্ছে এদিক ওদিক। ঠোঁটের কোন থেকে জ্বলন্ত সিগারেট সরিয়ে কাব্য বললো,
“আমার লাভ?”
“হ্যা আপনার লাভ।আপনাকে কেউ চেনে না এই শহরে। রাজনীতির সাথে জড়ালে আপনার মুখ চেনা জানা হবে।ফেম পাবেন।”
“ফেম দিয়ে আমি কি করবো প্রমোদ সাহেব?”
“ক্ষমতা আর ফেম কে না চায়?”
“আপনার ক্ষমতা কতটুকু?”
আজব বচনভঙ্গি কাব্যর।স্বাভাবিক সুরেই কথা বলছে। ঘোর গলায় অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছে।নাদান শিশুর মতন বিস্তারিত জানতে চাচ্ছে সব বিষয়ে।
কপাল কুঁচকায় প্রমোদ। তৎক্ষনাৎ স্বাভাবিক মুখটায় ফিরেও এলো।এখানে কোনো রকম ত্যাড়ামি চলবে না।নিজের স্বার্থের জন্য হলেও অন্তত নত হতে হবে।
“সেটা জনতা জানে আমার ক্ষমতা কতটুকু। পরপর দুইবার নির্বাচিত হয়েছি।”
“তারপরও আমার সামনে এসে বসে আছেন।ক্ষমতা দ্বিগুণ করার জন্য।এত ক্ষমতা কোথায় রাখবেন?ঘরে জায়গা হবে?বউ বাচ্চাতো ক্ষমতার চাপে ডেবে যাবে।”
খট করে হেসে ফেলে আমজাদ।ডান হাতে মুখ চেপে ধরলো তৎক্ষনাৎ।ভরাট কণ্ঠে মাঝেমাঝে কৌতুকপূর্ণ কথা বলে ফেলে কাব্য।শীতল চোখজোড়া আমজাদের দিকে তুলে নেয় কাব্য।তার হাসির মৃদু শব্দ পেয়েছে।কফির মগ হাতে তুলে বললো,
“বড্ড বেশি হাসো তুমি আমজাদ।নেতাসাহেবের ইগো হার্ট হয়েছে নিশ্চয়ই।ক্ষমা চাও!এক্ষণ ক্ষমা চাও”
আমজাদ এর মুখে পূনরায় আসন্ন হাসি কোনরকম গিলে নিয়েছে।নয় বছর যাবত কাব্য নামক রহস্যে আটকা সে।কথার ধাঁচ বুঝে বেশ ভালোভাবেই!এই কথাটাও যে বলেছে প্রমোদকে তাচ্ছিল্য করে সেটা বুঝতে বাকি নেই।তারপরও নিজের বসের আদেশ অনুযায়ী ছোট্ট করে বললো,
“সরি”
ইনিয়ে বিনিয়ে অপমান করা হচ্ছে।সেটা প্রমোদের বোধশক্তিতে এরাচ্ছে না। রাজনীতিতে একটু বুঝদার না হলে হয় না।এই সাময়িক অপমান তার দলকে ভারী এবং পক্ত করতে পারলে সেটাতেই সে রাজি।আমজাদ অবাক হচ্ছে।এখনও লোকটা বসে। একটু পরই কাব্য কাটকাট না বোধক উত্তর দিয়ে তাকে বিতাড়িত করবে।খুব ভালো করেই অবগত সে। আপাদত দাড়িয়ে একটু মজা লুটে নেওয়াতে তার তেমন কোনো অভিযোগ নেই।
“আপনি কিছু মনে করবেন না প্রমোদ সাহেব।আমার আমজাদ শুধু ঠাট্টা করে।রসিক মানুষ”
মুখে মিথ্যে হাসির টেনে প্রমোদ বলে উঠে,”আরে নাহ নাহ আমি কিচ্ছুটি মনে করিনি।”
“গুড বয়”
বাবার বয়সী একজন লোককে গুড বয় বলছে। প্রমোদের মুখ থেকে প্রস্ফুটিতো হলো,”কিহ!”
“নাথিং।কি বলছিলেন আপনি?”
“বললাম আমাদের সাথে জয়েন করেন।এই এরিয়াতে আপনিও একটা শক্তপোক্ত অবস্থান পাবেন।কথা দিচ্ছি আপনাকে।”
সোফায় হেলান দিয়ে কাব্য বলে উঠে, “আমি নেতা নই, মন্ত্রী নই,আমি কোনো ডনও না, মাফিয়াও না।আমি কিছুই না।আপনি কেনো আমাকে চাচ্ছেন?”
“তাহলে আপনাকে কেনো ভয় করছে বিশেষ কিছু উচ্চপদস্থ মানুষগুলো?”
“কে জানে?হয়তো কেউ অনেক কিছু জানে।আবার হয়তো কেউ কিছুই জানে না”
“বড্ড পেঁচিয়ে কথা বলেন আপনি মিস্টার কাব্য”
“দেখেন প্রমোদ সাহেব।মনোযোগ দিয়ে সততার সাথে রাজনীতি করুন।আপনার জন্য ভালো।”
“আজকাল সৎ রাজনীতি কে করে?”
“আপনি করবেন।দেখিয়ে দেবেন সবাইকে আপনিও কারো থেকে কম নয়।”
একে রাজি করানো মুশকিল।বড়সড় দান খেলার জন্য কাব্যকে চাই ই চাই।নিজের দলকে টিকিয়ে রাখার জন্য ‘ ভয় ‘ নামক শব্দটাকে কাজে লাগাতে চাচ্ছে।আমজাদ দাড়িয়ে।এই ছোটোখাটো গম্ভির কম কমেডি মিটিংয়ের অন্ত কোথায়?আবার ক্ষিদে পেয়েছে তার।বিয়ে করার পর কাব্য বদলে যাচ্ছে।আমজাদের যত্নে এক শতাংশ অবহেলা করছে।
“আমার ছোটবেলার সখ ছিলো। হাতে পিস্তল,পাশে দশ বারোটা বডিগার্ড,বাড়ি আর গাড়ীর।আমি শুধু সখ পূরণ করেছি আমার প্রমোদ সাহেব।আপনি আমাকে ক্ষমতাবান ভেবে ভুল করছেন।আসলে আমি একটা অধম।আপনার দলে আমি আসলে লাভের চেয়ে লস বেশি।”
প্রমোদ কিছু বলতে চাচ্ছিলো।হাত তুলে থামিয়ে দেয় কাব্য। ইশারা করে আসতে।আমজাদ সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। কাব্যর ব্যাটারি ডাউন হয়েছে।যাক! বাঁচা গেলো।কথাবার্তার পর্ব এখানেই শেষ। প্রমোদ শক্ত মুখে বেরিয়ে গেলো তার ছেলেদের নিয়ে।আপদ বিদায় হয়েছে।
আমজাদ কাব্যর উদ্দেশ্যে বললো, “স্যার আমার মনে হয় প্রমোদের চ্যাপ্টার ক্লোজ করে দেওয়া উচিত।অযথা ঝামেলা।”
“ঝামেলাতো করতে চাইনা আমজাদ।কিন্তু প্রমোদতো যে দুয়েক দিনে লাফালাফি শুরু করবে সেটার কি হবে?”
“আপনি বললে ওকে…..”
“তোমাকে কতবার বলেছি খুন খারাবির কথাবার্তা আমার সামনে বলবে না?গাড়ি বের করো।”
___
“আমি বাড়ি ফিরলাম।তুমি কেনো প্রশ্ন করলে না কোথায় ছিলাম চারুলতা?”
গুনেগুনে তিন ঘণ্টা কাব্য ঘরের বাহিরে ছিলো।ঘরের গুমোট পরিবেশটাও অনেকটা কমে এসেছিলো।পূনরায় ঘোর নিস্তব্ধতা ছেয়ে গেলো চারিদিকে।একা বারান্দায় আনমনা হয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো কাব্য।
“প্রয়োজন বোধ করিনি!”
এমন উত্তরটাই চারুর কাছ থেকে আশা ছিলো।তারপরও কেনো জেনো রুক্ষ কথাটি হৃদয়ে কাটার মতন বিধলো।দুর থেকে কতটা ভালোবেসেছে সেটা উপলব্ধি করতে পারছে এখন।কাছে,চোখের সামনে,তার কন্ঠস্বর মনের মধ্যে নতুন নতুন বাসনার সৃষ্টি করে চলেছে প্রতি মুহূর্তে।
“কিন্তু আমার তোমাকে প্রয়োজন।ভীষণ প্রয়োজন।”
ঘুরে তাকায় চারু।বলে, “এসব কথা বলে আমার মনে সামান্য মায়া জন্মাতে পারলেও ভালোবাসা নামক অনুভূতিটা কখনো পাবেন না।”
“ভালোবাসতে সময় প্রয়োজন হয় অনেকের ক্ষেত্রে।আমিও আটমাসে ধীরেধীরে তোমাকে হৃদয়ে ধারণ করেছি।সেই সময়টুকু তুমিও পাবে”
বুকে হাত বেধে দাড়ায় চারু।চোখ মুখ জুড়ে রুক্ষতার ছোঁয়া। কাব্যর চোখে চোখ রাখে।ভয় নেই এখন।কোনো ভীতি নেই। অথচ কাব্য ভীতুর মতন চোখ নামিয়ে নিয়েছে।কপালে প্রগাঢ় ভাজ ফেলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাড়িয়ে। প্রস্তুত করছে নিজেকে।এখনই চারুর মুখ থেকে তার জন্য আসবে তীরাঘাত।
” ভালোবাসা কি করে উপলদ্ধি করাতে হয় জানেন?কিভাবে অপরপক্ষকে সেই অনুভব করাতে হয় সেটা জানেন?মেনে নিলাম আপনি আমাকে ভালোবাসেন।কিন্তু আপনি যে পথ বেছে নিয়েছেন সেটা ভুল ছিলো!আপনি শুধু আমাকে পেতে চেয়েছেন।আমার ভালোবাসা না!”
অপরাধীর ন্যায় মাথা নুয়েই উত্তর আসে, “কান্ড জ্ঞান হারিয়ে বসেছি”
“কত সাফাই গাইবেন?কেনো সাধু সাজছেন?পিস্তলের ভয় দেখিয়ে আমাকে বিয়ে করে নিলেন।আমার জীবনে আসার কি কোনো সুস্থ স্বাভাবিক পথ ছিলো না?হয়তো ভেবে দেখতাম।একদিন ঠিক মেনে নিতাম।ধীরেধীরে আপনাকে ভালোও বাসতাম।আপনি নিজ হাতে সব পথ বন্ধ করে দিয়েছেন।শুধু মাত্র আপনার একটা ভুলে।এভাবে ভালোবাসা যায়না।আপনি ভুল।”
অস্ফুট শব্দে কাব্যও আওড়ালো, “আমি ভুল”
“জানেন কতটা ভয়ে রেখেছেন আমার পরিবারকে?আমাকে? সারাক্ষণ হৃদয়টা হাতে নিয়ে ঘুরতে হয়।আপনার ঐ বন্দুকের ভয়ে।ওই লোকটার মতন আমাকেও যদি একদিন মেরে ফেলেন।আপনি পারবেন।আপনি সব পারবেন।আপনার ভালোবাসা না এটা।হয়তো শুধুই একটা আকর্ষণ।যেদিন দেখবেন আপনার ভালোবাসার ডাকে আমি সাড়া দিতে পারছি না।সেদিন হয়তো মেরে ফেলবেন আমাকে!”
“চুপ থাকো চারু!জাস্ট শাট আপ।আমি চুপচাপ শুনছি বলে যা তা বলে যাচ্ছো!”
বলে দুয়েক কদম এগিয়ে আসে কাব্য।শার্টের আড়ালে প্যান্ট এ গুজে রাখা পিস্তলটি বের করে এগিয়ে দিলো চারুর দিকে।বললো,
“আমার সাধ্য নেই তোমাকে হত্যা করার। তুমিই নাও!বুকের বাম পাশটায় বরাবর গুলি করবে। হৃদয়ের বিস্ফোরণে হারিয়ে যাবো এই গোটা পৃথিবী থেকে।কাব্য নামক ভয়ের অস্তিত্বটা সারাজীবনের জন্য কেটে যাবে।শুট মি!”
চলবে….