#প্রতিশোধ
#শিখা
#পর্ব_১৩
আব্বু পুলিশ স্টেশন চলে যায়। আর সেখানে গিয়ে জানতে পারে, এই কাসটা আর কারো না, রফিক এর আব্বু লাশ দেখে অবাক হয়ে যায়..
খুব ভয়ংকর ভাবে হত্যা করা হয়েছে রফিক আঙ্কেলকে…
আব্বু খবর নিয়ে জানতে পারে যে, শুভর বাড়ির সামনে লাশটা পাওয়া গেছে, এমনকি ওই বাসায় কোন মানুষের অস্তিত্ব নেই। আর যারা এই বাসায় ছিল তারাও এ বাসার আসল মালিক না, এটা আসলে একটি ভাড়া দেওয়া বাসা ছিল, যেটা শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেওয়া হতো..
আব্বু বাসায় ফেরার পথে গাড়িতে বসে ভাবছিল, কত বড়ই ভুল না করেছে, না জেনে না বুঝে মেয়েকে একটা অচেনা ছেলের হাতে তুলে দিয়েছে..
ফেরার পথে হঠাৎ গাড়ির সামনে আরেকটা গাড়ি এসে থামে, ড্রাইভার যেই নেমে দেখতে যাবে, তখনী কেউ ড্রাইভারকে শুট করে দেয়..
সাথে সাথে ড্রাইভার মাটিতে পড়ে যায়, আব্বু তাড়াতাড়ি নেমে ড্রাইভারের কাছে যায়, কিন্তু আরো কয়েকজন লোক এসে আব্বুকে অন্য একটি গাড়ীতে তুলে নিয়ে যায়..
এদিকে আমি বসে ছিলাম, আমি ওদের কথাই বুঝতে পারলাম, ওরা আমার পরিবারকে শেষ করার কথা ভাবছে…
আমি: না আর চুপ থাকলে চলবে না, কিছু একটা করতে হবে আমি আমার মা-বাবাকে কিছু হতে দেবো না…
তখনই শুভ ভেতরে আসে এসে আমার সামনে একটি গান আরেকটি ছুরি রাখে।
শুভঃ এখান থেকে বের হওয়ার একটাই রাস্তা আছে। হয়তো আমাকে শেষ করো, আর না হলে আমি তোমাকে শেষ করে দেবো…
আমি শুভর দিকে অবাক হয়ে তাকাই
আমিঃ কেন করছেন এসব? কি সমস্যা আপনার মেয়েদের সাথে? কেন মারেন তাদেরকে কি শান্তি পান তাদের মেরে?
শুভ বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকায়, তারপর একটা মুচকি হাসি দেয়।
শুভর হাসিটা আমার এখন অসহ্য লাগে, না জানী হাসির পেছনে কত ভয়ঙ্কর রূপ লুকিয়ে থাকে..
শুভ আমার দিকে এগিয়ে আসছিল আমি ভয়ে এক পা দু পা করে পিছাতে থাকি..
এক সময় গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খাই, শুভ তার কপালের সাথে আমার কপাল ঠেকায় আর চোখ বন্ধ করে ফেলে..
কিছুক্ষণ থাকে এরপর আমার গালে হাত রাখে, আমার অসহ্য লাগছিলো, আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে সামনে রাখার ছুরি আর গানের কাছে যাই, আর সেখান থেকে গান হাতে নিয়ে শুভর দিকে ধরি
আমিহ একদম আমার কাছে আসবেন না, আমি শুট করে দিব..
শুভ: করো শুট আমিও এটাই চাই
আমি কান্না করতে করতে বারবার বলছিলাম আমার, কাছে আসলে আমি শুট করে দেবো
আমি গান হাতে নিয়ে পিছাতে থাকলাম,শুভ আমার দিকে এগোচ্ছিল, আমার হাতে গান থাকতেও আমার সাহস হচ্ছে না শুট করার আমার হাত প্রচুর কাঁপছিলো
এরপর আমি শুট না করেই তাড়াতাড়ি রুমের বাইরে চলে যাই, আর দরজা লাগিয়ে দেই বাহির থেকে। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম,শুভ দরজায় বারবার টোকা দিয়ে ডাকছিল দরজা খোলার জন্য..
শুভ: ওপেন দা ডোর শিখা, ওরা তোমাকে শেষ করে ফেলবে তাড়াতাড়ি খোলো বলছি..
আমি দরজার দিকে তাকিয়ে কান্না করছিলাম, আমি এদিক ওদিক অনেক দৌড়াদৌড়ি করলাম কিন্তু বের হওয়ার রাস্তা খুজে পাচ্ছিলাম না..
আশেপাশে যত লোক ছিল কেউ আমাকে বাধাও দিচ্ছিলো না, এমন লাগছিল সবাই চাচ্ছে আমি এখান থেকে বের হয়ে যাই..
সুবর্ণাঃ আরে বৌমা যে? কোথায় যাচ্ছো? তোমার জন্য তো একটা মুভি ছিল তুমি দেখে যাবে না মুভিটা..
সুবর্ণার কথা শুনে আমি সুবর্ণার দিকে তাকাই, আমার দিকে তার ফোনটা এগিয়ে দেয় সুবর্ণা
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে যা দেখি, তাতে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়..
শুভ আমার মাকে মারছিলো,প্রথমত শুভ মার হাতের রগ কেটে দেয়, মায়ের হাত থেকে রক্ত ঝরে পড়ছিল আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদছিলাম আর বলছিলাম না না এমন করিয়েন না
সুবর্ণাঃ এটা অলরেডি হয়ে গেছে বেবি, গতকাল রাতেই শুভ এটা করেছে..
আমি সুবর্ণার দিকে তাকাই কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না , ফোনের স্ক্রিনে আবার তাকাই দেখি শুভ কি যেন বলছিল কোন কথাই শোনা যাচ্ছিল না..
শুভ মায়ের হাতে আরও অনেক অংশ কাটে আর তার উপর মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেয়, ফোনের ভিতরে এগুলো দেখে আমার ভিতরটা ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল, আমার মাকে শুভ মারছে আর আমি কিছুই করতে পারলাম না..
সুবর্ণা খপ করে আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে যায়,
সুবর্ণাহ আর সহ্য করতে পারবে না, তো এখন বল নিজের মার লাশটাকে দেখতে চাও?
আমি সুবর্ণাকে বারবার কান্না করে বলতে ছিলাম, প্লিজ আমাকে মার কাছে নিয়ে যান
সুবর্ণাঃ এত সহজে কেমনে নিয়ে যাবো? আগে আমার পা ধরে বল তারপর তোকে নিয়ে যাবো..
কোন উপায় না পেয়ে আমি তার পা ধরে কান্না করতে করতে বললাম। প্লিজ আমাকে মার কাছে নিয়ে যান, আমি আপনার সব কথা শুনবো, যত টাকা চান সবকিছু দেবো আমি..
সুবর্ণা আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দে, এরপর আস্তে আস্তে বলে এটাই তোর জায়গা..
এরপর আমাকে মার লাশের কাছে নিয়ে যায়
লাশের অবস্থা দেখে আমার চোখের পানি যেন আরও ভেরে যায়। সারা শরীর থেকে চামড়া উঠীয়ে ফেলা হয়েছে
আমার ভিতরটা ফেটে যাচ্ছিল,
আমিঃএ কোন জাহান্নামে এসে পড়েছি,কেন হচ্ছে এসব? কি দোষ করেছিলাম? একটা মানুষই তো ছিল আমার জীবনে তাকে এভাবে কেন নিয়ে গেলে আল্লাহ..
সুবর্ণাঃ আহারে আমার বৌমার কষ্ট হচ্ছে খুব? থাক মা কাঁদে না তোমার বর এগুলো খুব পছন্দ করে, মেয়ে মানুষকে মারতে ওর খুব ভালো লাগে( শয়তানি হাসি দিয়ে কথাগুলো বলছিল)
আমার ভেতরটা এত ফেটে যাচ্ছিল যে, আমার ইচ্ছে করছিল আমি সুবর্ণাকে মেরে ফেলি, রাগের মাথায় আমি গানটা হাতে ছিল আমার, সেটা দিয়ে সুবর্ণা বরাবর শুট করেি
সাথে সাথে গুলি সুবর্ণার শরীল বেধ করে বের হয়ে যায়,
চিৎকার দেওয়ার সময় টুকুও পায় না, আমার হাত থেকে সাথে সাথে গানটা পরে যায়,আমার হাত কাঁপছিল, গলা থেকে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল না..
নিজের হাতে একটা খুন হয়ে গেছে, এটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না আমি, গুলির আওয়াজ শুনে বাকিরা ও ভিতরে চলে আসে..
এতক্ষণে শুভও চলে আসে আমাকে এই অবস্থায় দেখে,শুভ এসে আমার কাছে দাঁড়ায় আর আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে..
শুভ: ইটস ওকে এটা এমন বড় কিছু না? ভয় পেয়ো না আমি সব ঠিক করে দেবো..
শুভ কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেই, আর চিৎকার করে বলতে থাকি এটা আপনার কাছে সামান্য বিষয় হতে পারে।
কিন্তু আমার কাছে এটা অনেক বড় বিষয়, আমি আপনার মত পশু না, আমি কাউকে মারতে চাইনি। কখনো না এটা বলে জোরে জোরে কান্না করতেছিলাম…
শুভঃ লাশগুলো এখান থেকে সরা তাড়াতাড়ি(চিল্লানী দিয়ে)
আমি তাড়াতাড়ি মার লাশটা ধরি,আমার তখন কোন কথাই কানে যাচ্ছিলো না..
আমিঃ প্লিজ আমার মার লাশটা ভালো করে কবর দেন প্লিজ(শুভর কাছে হাত জোর করে)
শুভ আমাকে তুলে টেনে নিয়ে যেতে থাকে আর বাকিদের কাজ শেষ করতে বলে..
..চলবে..?
(কোন ভুল হলে হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন)