#প্রতিশোধ
#শিখা
#পর্ব_১৪
শুভ আমাকে রুমে নিতেই, আমার রাগ আর উঠে গেলো, আমার ইচ্ছে করছিল গানটা ওর মাথায় ধরে শুট করে দেই..
শুভ: চুপচাপ এখানে বসে থাকো এখান থেকে কোথাও যাবে না
আমি: আপনি কেন এমন করছেন? কি সমস্যা আপনার? আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?
শুভ: তুমি কোন ক্ষতি করোনি আমাযর,তোমার কারনেই তো আমি এটা বলেই চুপ হয়ে যায়..
আমি: আমার কারনে কি?
চুপ হয়ে গেলেন কেন? আর আপনি আমার মাকে কেন মেরেছেন? একজনই তো ছিল আমার, যে আমাকে সত্যি ভালোবাসতো, আব্বুর কাছে তো আমার জন্য সময়ই ছিল না, আর আপনি?
আপনি তো ভালোবাসার নামে ধোঁকা দিয়েছেন?
শুভ: আমি তোমাকে কোন ধোঁকা দেইনি, আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি..
আমি: ছিঃ আপনার এই নোংরা মুখে আমাকে কিছু বলবেন না..
শুভ আমার হাত থেকে গানটা কেড়ে নিয়ে চলে যায়, আমি চুপচাপ বসে ভাবতে থাকি কিভাবে এখান থেকে বের হব আর কিভাবে শুভর কাছে নিজের প্রতিশোধ নেব…
শুভ আমার ফেইক শ্বশুড় এর কাছে যায়, সে বসে খাবার খাচ্ছিল, শুভ তার পাশে গিয়ে বসে
শুভঃ তো খাবার কেমন হয়েছে..
মিরাজ সাহেব: তুমিও খাও (কাপা কাপা গলায় বলে কথাটা)
শুভ:সুবর্ণার স্বামীর ব্যবস্থা করেছেন আপনি?
মিরাজঃ এতক্ষণে তো ওর লাশ সমুদ্রের কোথায় চলে গেছে? খুঁজেও পাওয়া যাবে না
শুভ: ভালো কাজ করেছেন? কিন্তু আপনাকে একটা কথা বলার ছিল?
মিরাজ সাহেব: হ্যাঁ বলো
ঠিক তখনই মিরাজ সাহেব তার গলা আকড়ে ধরে, আর চিৎকার করে ওঠে..
মিরাজঃআমার গ লা আমাকে পানি দাও..
শুভ গ্লাসে পানি নিয়ে, মিরাজ সাহেবের সামনে রাখে এরপর আবার সরিয়ে নেয়..
শুভ: পানি খেয়ে তো কোন লাভ হবে না, কারণ আপনার সময় তো শেষ হয়ে এসেছে (বাঁকা হেসে)
মিরাজ সাহেব: তুি এটা করতে পারিস না, আমি সব সময় তোর সাহায্য করেছি, আর আজ তুই আমাকে মেরে ফেলতে চাস..?
শুভঃ আমি শেষ করতে চাই, আমি সব শেষ করতে চাই, এই প্রথম আমার বাচঁতে ইচ্ছে করতেছে
মিরাজঃ ঐ শিখার জন্য এসব করছিস, কোন লাভ নেই ও কখনো তোর হবে না..
এটা বলতেই শুভ মিরাজের চেয়ারের উপর লাথি দেয় আর মীরাজ দূরে গিয়ে পরে…
আমি বসে ভাবছিলাম কি করা যায়, তারপর আমার কাছে থাকা ছুরিটার কথা মনে পড়ে, আর খেয়াল হয় টেবিলে রাখার সেই বিচ্ছুর কথা..
আমি এতোটুকু বুঝতে পারি, এখানে যারা যারা আছে কেউ আমাকে আঘাত করতে পারবে না।
তাই আমি সাহস করে রুম থেকে বের হই, আর সেই টেবিলের দিকে যাই,সবাই আমাকে দেখছিল কিন্তু কেউ কিছু বলছিল না..
আমি আড়াল করে বিচ্ছুর কৌটাটা কাপড়ের পিছনে লুকিয়ে ভিতরে নিয়ে আসি
আমিঃ আপনার খেলা আমি আপনার সাথে খেলবো এখন(বাকা হেসে)
শুধু আমার প্রয়োজনীয় সব জিনিস এখানে রেখে গেছে, ছোট্ট একটা কিচেন আছে, ওয়াশরুম আছে..
কৌটার ভিতরে দুইটা বিচ্ছু ছিলো, আমি ভয়ে ছিলাম এগুলোর সাথে কি করবো.
তারপর অনেক সাহস নিয়ে কৌটাটার মুখ খুলে দেই, বিচ্ছুগুলো বাইরে আসতেই। আমি ছুরিটা দিয়ে বার কয়েকবার আঘাত করে বিচ্ছুগুলো মেরে ফেলি
এরপর একটা ভাটি নেই বিচ্ছুসহ যত রক্ত পড়েছিল, সব কেচে তুলি বাটিতে, আর কিছুটা পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখি
এরপর কিচেন গিয়ে শুভর পছন্দের খাবার রান্না করি, আর প্রতিটা খাবারে বিচ্ছুর রক্তসহ পানি ঢেলে দেই
রান্না শেষ করে শুভর আসার অপেক্ষায় ছিলাম, কিছুক্ষণের ভিতরেই শুভ আসে, সাথে এটা শপিং ব্যাগ ছিলো
শুভঃ এটা পরে নাও প্লিজ(ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে)
আমি হাতে নেই, ব্যাগের ভিতর একটা লাল শাড়ি ছিল
আমি চুপচাপ শাড়িটা নিয়ে পড়ে আসি, শাড়ি পরে আসতেই শুভ আমাকে বসিয়ে নিজের হাতে সাজানো শুরু করে। হাতে চুরি, কানের দুল,
পায়ে আলতা দিতে দিতে শুভ আমাকে বলে
শুভঃ আমি জানি তুমি আমাকে কখনো মাফ করবে না, কিন্তু এটাও সত্য, আমি তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি..
এটা বলেই শুভ আমার পায়ের চুমু খায়। সাথে সাথে আমি আমার পা সরিয়ে ফেলি
শুভঃ তোমার চোখের এই ঘৃণা আমি নিতে পারতেছি না.
আমি মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলি কারণ ওর কোন কথাই আমার এখন বিশ্বাস হয় না
শুভ আমার হাত ধরে বলে আমাকে আজকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবে..
আমি এটাই চাচ্ছিলাম আমার কিছু করতেই হলো না, শুভ নিজে থেকেই নিজের মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল
আমি একটা বাঁকা হাসি দেই এরপর খাবার বেড়ে নিয়ে আসি
আমি নিজের হাতে খাবার শুভকে খাইয়ে দিচ্ছি,লাম শুভ মুচকি হেসে খাবার খাচ্ছিল, খাবার শেষে শুভ আমার হাত ভালো করে ধুয়ে দেয়..
শুভ আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে, আমার একটা হাত তার বুকের উপরে রাখে
শুভঃ আমি তোমার বাবাকে কল করে এখানে আসতে বলেছি, তোমাকে নিতে আর আমি ফয়সালকেও জানিয়ে দিয়েছি
আমিঃ ফয়সাল কে?
শুভঃ আমার বন্ধু মনে আছে দিন রাতে তোমাকে যে বাঁচিয়েছিল, ও তোমাকে খুব পছন্দ করে, ওই তোমার সম্পর্কে আমায় সব বলেছিল? যেমন আমি তোমাকে ভুল ভাবছি, তোমার সম্পর্কে তোমার মা আমাকে সব ভুল বলেছিল..
আমি: আমার মা কি বলেছিল?
শুভ চুপ হয়ে যায়
শুভ কাশছিল আর বলছিল আমার না তোমার সাথে বাঁচতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু আমি এটাও জানতাম তুমি কখনো আমাকে মাফ করতে পারবে না। কিন্তু তোমার হাতে মরতে পেয়েও শান্তি লাগতেছে আমার.
শুভর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে যাই তার মানে সব জানতো
শুভ তখন চোখ খুলে আমি ওর দিকেই তাকিয়ে ছিলাম
শুভহ আমার খুব ইচ্ছে করছে তোমাকে আদর করতে শেষবারের মতো..কিন্তু তোমার হ্মতি হবে..
আমি: আমার মা কি বলেছে আপনাকে? সত্যি করে বলেন?
শুভঃ ওই মহিলা তোমার মা ছিল না..
আমিঃ কি বলছেন কি আপনি? আপনার সাহস কিভাবে এসব বলতে? আমার মা আমার মা ছিলো নয় এটা কেমন কথা?
শুভঃআরে বউ এখন কিছু বলো না একটু চুপ থাকো, তোমার কাছে আছি শেষ সময়টা, এই সময় উপভোগ করতে দাও প্লিজ..
আমার ভেতরটাও ধুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল, কারণ যতই খারাপ হোক এই মানুষটাকে আমি অসম্ভব ভালোবাসি। আমার চোখের কোনে পানি দেখেই শুভ তার হাতে চোখ মুছে দেয়..
শুভ: আমাকে মাফ করে দিও প্রিয় আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, কিন্তু আমার কোন দোষ ছিল না, তারা এসব ডিস্টার্ব করতো
কথার মাঝ দিয়ে শুভর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে, শুভর শরীরও নীল হয়ে আসছিল, বুঝা যাচ্ছিল বিষ কাজ করছে..
আমার কোলেই শুভ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে, আমি শুভকে ধরে চিৎকার করে কান্না করতে থাকি, আমি এমনটা চাইনি..
আমি: সত্যি বলছি আমি এমনটা চাই নি, আমিও আপনাকে অসম্ভব ভালোবাসি, কিন্তু আপনি আমার মাকে মেরে ফেলেছেন, না জানি এভাবে আর কত মেয়েকে মেরেছেন আপনি..
তখনই আমি আমার আব্বুর ডাক শুনতে পারি, আমি শুভকে ধরে কান্না করতেছিলাম..
আব্বু পুলিশ সহ এসেছিল, পুলিশ সবকিছু দেখে সবাইকে আটক করে, ফয়সালও তার সাথে ছিল..
আব্বু এসে আমার পাশে দাঁড়ায় আমি শুভকে কুলে রেখেই আব্বুকে জড়িয়ে ধরি,আর কান্না করতে থাকি পাগলের মত..
আব্বুঃআমারে মাফ করে দে মা, আমার অনেক ভুল হয়েছে আবার বিয়ে করে.. তোর ঐ সৎ মা এসবের পিছনে ছিলো
আমি আব্বুর কথা শুনে অবাক হয়ে যাই, বিশ্বাস হচ্ছিল না কোন কিছুই, যে মহিলাটাকে আমি এত বছর ধরে নিজের মা ভেবে আসছি, যে আমাকে এত যত্ন রেখেছিল সেই কিনা এসবের পিছনে ছিলো..
আব্বুঃ হ্যাঁ রে মা, তোর রফিক আঙ্কেল কেউ তোর মা মেরে ফেলেছে, আর শুভকেও বলেছিলো তোকে শেষ করতে, ফয়সাল আমাকে সব বলেছে… তোর ওই মা তো আমাকেও তুলে নিয়ে গিয়েছিল মারার জন্য, কিন্তু শুভই আমাকে বাঁচিয়েছে আর তোর ঠিকানা দিয়েছে…
হুট করেই চোখে ঝাপসা দেখছিলাম আমি,আর শুভর বুকেই পরে যাই..
..চলবে..?
(কোন ভুল হলে হ্মমার দৃষ্টিতে দেখবেন)