#যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয়
#আফসানা_মিমি
|পর্ব: চৌদ্দ|
সময় যেন থমকে আছে। ধোঁকা শব্দটার সাথে পরিচয় না হলে মানবজাতিকে কষ্ট পেতে হতো না। জ্ঞানহীন মিষ্টির সাথে কী ঘটতে চলেছে সেই বিষয়ে সজলেই অজ্ঞাত। পানির ছিটে পড়ায় মিষ্টির জ্ঞান ফিরে আসে। প্রথমেই তার চোখ যায় অন্তিকের দিকে। বারান্দায় অন্তিক বাচ্চাটাকে কাঁধে নিয়ে দোল খাওয়াচ্ছে। বাচ্চাটা অন্তিকের কাঁধে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। কী সুন্দর দেখাচ্ছে দুজনকে! মুখে পানির ছিটে অনুভব করায় মিষ্টি সেদিকে তাকায়। হাস্যজ্বল মুখশ্রী নিয়ে সেই মেয়েটি তাকিয়ে আছে। মিষ্টিকে ধরে ওঠায় সে। পিঠের কাছটায় বালিশ চেপে বলে, ” তুমিই বুঝি মিষ্টি?”
” হ্যাঁ, আপনি কে?”
দুর্বল সুরে মিষ্টির উত্তর শুনে মেয়েটি মুচকি হেসে বলে, ” আমার নাম আফিয়া। পিয়াসের একমাত্র ডাক্তার বউ।”
পিয়াস অর্থাৎ লায়লা বেগমের সন্তান। মিষ্টি মনের ভেতরে কু মনোভাব আনায় অনুতপ্ত হয়। সে নিজের মাথায় গাট্টি মে’রে বলে, ” দিনে দিন অকালমন্দ হয়ে যাচ্ছিস নাকি মিষ্টি। যাচাই-বাছাই না করে ভোলা ভালা স্বামীকে সন্দেহ করছিস! অন্তিক জানতে পারলে প্রথমে তোর ঠোঁটের উপর নির্যাতন করবে তারপর অন্য স্থানে।”
ভাবনায় মশগুল মিষ্টির স্তম্ভিত ফিরে আফিয়ার ডাকে।
” শরীর কী বেশি খারাপ লাগছে?”
মিষ্টি মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বুঝায়। সত্যিই তার শরীর খারাপ লাগছে। আফিয়া অন্তিককে ডেকে তার উদ্দেশ্যে বলে, ” ওকে নিয়ে কাল আমার চেম্বারে আসবে। এসেছিলাম দেবরের মিষ্টি বউকে দেখতে কিন্তু মেয়ে তো আমাকে দেখেই চিৎপটাং!”
মিষ্টি ভীষণ লজ্জা পায়। আফিয়ার হাতে হাত রেখে বলে, ” লজ্জা দিও না ভাবী! অমন সুন্দরী ভাবীকে দেখলে কী আর হুঁশ থাকে? আমি না হয়, বেহুশ হয়েই ভাবীকে মোল্লা বাড়িতে আমন্ত্রণ জানালাম!”
অন্তিক মিষ্টির দিকে তাকায়। সত্যিই মেয়েটার মুখ মলিন দেখাচ্ছে। চোখের নিচে কলি পড়েছে। দুর্বলতায় নুইয়ে পড়েছে। অফিসের চাপের কারণে ইদানীং সে মিষ্টিকে তেমন সময় দিতে পারে না। আফিয়ার কথার প্রত্ত্যুত্তর দেয়, ” বেশি সমস্যা মনে হচ্ছে কী, ভাবী?”
” তেমন কিছু নয়, তবে আমি যা সন্দেহ করছি সেটা হলে ভালোই হবে।”
অন্তিক চিন্তায় পড়ে যায়। মিষ্টি মিটিমিটি হাসে। পাকা মেয়েটাও কিছু একটা বুঝতে পারছে।
” আজ চলি মিষ্টি রাণী! কাল চলে যেও।”
পিয়াস ভাই বিয়ে করেছে এবং তাদের একজন কন্যা সন্তানও আছে। বিষয়টি মাথায় আসায় মিষ্টি নড়েচড়ে বসে। বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছে বয়স দুই থেকে তিন বছর হবে। তারমানে পিয়াস ভাইয়া বিয়ে করেছে চার বছর হবেই। এতদিন সে বিয়ের সম্পর্কে গোপন করেছে? এবাড়িতে পিয়াসকে দেখার পর মিষ্টির পিয়াসের সাথে মেলামেশা অন্তিকের পছন্দ হয়নি। তারমানে সেও কী জানতো না? না জানলে আজ ভাবী তার সাথে মোল্লা বাড়িতে পা রাখলো কীভাবে?
রহস্যের উন্মোচন আজ করতেই হবে। মিষ্টি আফিয়ার উদ্দেশ্যে বলে, ” এখানে থাকো না কেন?”
” পিয়াস ভয়ে বাড়িতে জানায়নি।”
” থেকে যাও না, ভাবী! আজ শরীর চলছেই না। পাশে থাকলে মনে করব আমার বড়ো বোন পাশে আছে!”
” পিয়াস মানবে না। তাছাড়া শাশুড়ি মা চলে আসলে মোল্লা বাড়িতে কুরুক্ষেত্র তৈরী করে ফেলবে।”
আফিয়ার কথা শুনে মিষ্টি হাসে। আফিয়ার কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে, ” ঐ লায়লা কাঠের কয়লার গলার জোর আমার সামনে এলেই থেমে যায়। তোমাকে কিছু বলতে আসলে আমার সামনা-সামনি করতে হবে তাকে। আর আমি যদি চটে যাই, তো লায়লা বেগমের পিত্ত পর্যন্ত তেঁতো বানিয়ে ছাড়ি।”
আফিয়া উচ্চ আওয়াজে হাসতে থাকে। অন্তিকের উদ্দেশ্যে বলে, ” চমৎকার বউ পেয়েছো দেবর সাহেব! তা কোথায় পেলে এমন রত্মকে?”
অন্তিক হেসে জবাব দেয়, ” ভাগ্য আমাকে তার কুঠিতে দাড় করিয়েছিল। তখনও ভাবিনি এই রত্ন আমার জন্য এতো মুল্যবান। যখন থেকে বুঝতে পেরেছি, আগলে রেখেছি মনের পিঞ্জিরায়।”
আফিয়া বাহবা দেয় অন্তিকের কথায়। মিষ্টি উশখুশ করছে আফিয়া ও অন্তিকে মূল ঘটনা জিজ্ঞেস করতে। কিছু বিষয় না জানাই নাকি উত্তম কিন্তু মিষ্টি সমস্ত ঘটনার উদঘাটন না করতে পারলে মূল রহস্যের গোড়ায় পৌঁছাতে পারবে না। তাই সে বনিতা ছাড়াই বলে ওঠে, ” পিয়াস ভাইয়ার বিয়ের কথা পূর্ব থেকেই কী তুমি জানতে, অন্তু?”
অন্তিক মিষ্টির কাছে এগিয়ে আসে। কাঁধ থেকে বাচ্চাকে মিষ্টির কোলে তুলে দিয়ে বলে, ” দুই মাস আগে জেনেছি। ভাইয়া যখন মোল্লা বাড়িতে ছিল তখন। বলতে পারো, চুরি করে কথা শুনে সব জেনে ফেলেছি। পান্না মানে পিয়াস ভাইয়ার মেয়ের সেদিন প্রচন্ড জ্বর ছিল। হাস্যজ্বল রসিক মানুষ যে কাউকে এতো ভালবাসতে পারে সেদিন জেনেছিলাম। সেদিন চাচী ভাইয়াকে বাড়িতে থেকে যেতে বলেছিল। যেহেতু ভাইয়ার বিয়ের ব্যাপারে কেউ জানে না তাই ভাইয়া সেদিন কোনো অজুহাতেও সেদিন বের হতে পারছিল না। চাচী সর্বদা ভাইয়ার আশেপাশপ ঘুরঘুর করছিল।বাচ্চার জন্য যখন ভইয়া ফোনে ভাবীর সাথে কথা বলছিল তখন আমি শুনে ফেলি। ভাইয়া ঘরের সবকিছু তছনছ করে ফেলছিল। তখন আমি এসে হজির হই।ভাইয়ার হাত ধরে বাড়ির বাইরে পা রাখি।চাচী সেদিন আটকাতে এসেছিল। আমার শক্ত চাহনি দেখে কিছু বলতে পারেনি। সেদিনের পর থেকে ভাবি ও পান্নার সাথে প্রায়শই দেখা করে আসি। আজ মূলত তোমাকে দেখানোর জন্য ভাবীকে নিয়ে এসেছি।”
পুরো কথা শুনে মিষ্টি হেসে বলে, ” এই বাড়িতে আমার যেমন অধিকার আছে তেমন ভাবীরও। আজ থেকে ভাবী এখানেই থাকবে।সবাইকে আমি সামলে নিব চিন্তা করো না।”
মিষ্টি পান্নাকে আফিয়ার কাছে দিয়ে উঠতে নিতেই আবারও পড়ে যায়। আফিয়া একহাতে মিষ্টিকে ধরে বলে, ” আরে উঠতে হবে না। তুমি বরং রেস্ট নাও, আমি পিয়াসকে কল করে আসতে বলি। যতটুকু জানি,আমার শাশুড়ি আমাকে একা পেলে কাঁচা মরিচ গুঁড়ো করে আমাকে খাওয়াবে। আমি ভাই একা খেতে চাই না, পিয়াসকে সাথে নিয়ে খেতে চাই।”
আফিয়ার কথায় দুজনেই হাসে। আফিয়া চলে যেতেই অন্তিক মিষ্টির কাছে এসে বসে। কপালে হাত রেখে তাপমাত্রা বুঝতে চেষ্টা করে। জ্বর নেই, ঠান্ডাও নেই কিন্তু মিষ্টির শরীরের দুর্বলতার কারণ কী? অন্তিক মিষ্টিকে শুইয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পড়ে। মিষ্টিকে বুকের সাথে চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ” ঘুমাও, চন্দ্র!”
” ঘুম আসে না। একটা গান শুনাবে, অন্তু!”
অন্তিক মিষ্টির মাথায় চুমু এঁকে গাইতে শুরু করে,
খোলা চোখখানা করো বন্ধ
বাতাসের ঠাণ্ডা গন্ধ
বয়ে বেড়ায় ঘরেরও বাহিরে
আসো ছোট্ট একটা গান করি
যাতে ঘুম পাড়ানি মাসি এসে পাশে বসে
হাতখানা দিবে কপাল ভরে
ভয় নেই, আছি আমি পাশে
হাতখানা ধরে আছি হেসে
কোলেতে আমার মাথা তোমার…….
অসময়ে ঘুম না আসলেও মিষ্টি সময়টাকে খুব উপভোগ করে। দুপুরে আহারের সময় বাড়ির প্রতিটি সদস্য উপস্থিত হয়। মিষ্টির শরীর পূর্বের চেয়েও ভালো। তবে কতক্ষণ ঠিক থাকবে জানা নেই।নাজিমউদ্দীন নিশ্চুপে খাচ্ছে। পিয়াসের বিয়ের কথা এখানে আসার পূর্বেই মিষ্টি তাকে অবগত করেছে। নাজিমউদ্দীন প্রথমে মেনে নিতে অসম্মতি জানালে মিষ্টির ব্ল্যাকমেইলের কাছে হার মানে। মিষ্টি নাজমার ছবি দেখাবে বলে নাজিমউদ্দীনকে আশ্বাস প্রদান করে। নাজিমউদ্দীন খাওয়া শেষ করে বলতে শুরু করে, ” যা হওয়ার তা হইয়া গেছে। মেয়ে তো ডাক্তার হইয়া গেছে। আমগোর পরিবারে ডাক্তার কেউ নাই। পিয়াসের বউ না হয় ডাক্তার বউ হইয়া আমগোর মোল্লা বাড়িতে থাইকা যাইবো।”
নাজিমউদ্দীনের কথা শেষ হতেই লায়লা বেগমের কণ্ঠস্বর শোনা যায়। সে চিৎকার করে বলে উঠে, ” এই বিয়ে আমি মানি না আব্বা। আপনার সব কথা রাখতে পারলেও এই কথা রাখতে পারুম না। আমার পিয়াসের লাইগা আমার বোনের মেয়েরে ঠিককরে রাখছি। তার সাথে পিয়াসের বিয়ে হবে। চিনি না জানি না, এই মেয়েকে আমি পুত্রবধূর হিসাবে মানতে পারব না।”
” তোমার মতামত জানতে চাই নাই বউমা। এই বাড়িতে আমি যা বলি তাই শেষ কথা। এরপর আর কোনো কথা থাকে না।”
নাজিমউদ্দীনের হুঙ্কারে মোল্লা বাড়ির প্রতিটি দেয়াল কেঁপে উঠে সাথে বাড়ির প্রতিটি সদস্যেরও। নাজিমউদ্দীন চলে যেতেই লায়লা বেগমের আর্তচিৎকার শোনা যায়। সে নিজের বুকে নিজেই আঘাত করে বলতে থাকে, ” আমার কী হবে রে! আমার ভোলাভালা ছেলেটা ডাইনির পাল্লায় পড়ে বিয়ে করে নিছে রে! এতো কষ্ট কইরা পুলারে মানুষ করলাম প্রতিদান কী দিলো। এই মেয়ে কই, বাইর হও। আমার ছেলে আমার কথা শুনবে। তোমাকে আজই ডিভোর্স দিবে।”
” জোরে চিৎকার করলে কী ছেলেকে ফিরে পাবে, লায়লা কাঠের কয়লা চাচী শাশুড়ি! তুমি বরং মেনে নাও। বিনা খরচে ডাক্তার বউ পেলে সাথে কিউট নাতনি। তোমার ভাগ্য কতো ভালো দেখলে চাচী শাশুড়ি! নাতনির ন্যাপকিন পাল্টানোর মতো মহৎ কাজও তোমার করতে হলো না। এরচেয়ে সুখ কই পাবা!”
আগুনে ঘি ঢেলে মিষ্টি মুচকি হাসছিল তখনই লায়লা বেগম রেগেমেগে তেড়ে আসে। মিষ্টির হাত শক্ত করে ধরে বলে, “তুই সব নষ্টের মূল। এ বাড়িতে পা ফেলার পর থেকেই আমার জীবন থেকে সব সুখ চলে যাচ্ছে। আমার মেয়ে যেখানে প্রতিমাসে বাড়ি আসতো সে এখন তিনমাসেও ফিরে না। আমার সোনার টুকরো ছেলে, বিয়ে করে ফেলল। সব তোর জন্য অলক্ষ্যি মেয়ে, সব তোর জন্য।”
” বিয়ে তো আরো চার বছর আগেই করে নিয়েছে পিয়াস ভাই। মিষ্টিকে দোষারোপ কেন করছো, চাচী?”
অন্তিকের কথায় চাচী মিষ্টির হাত ছেড়ে দেয়। তিনি তখনো রাগে ক্ষুব্ধ। প্রত্ত্যুত্তরে বলে, ” তুইও সব জানতি? খুব বউয়ের সেবা করা হচ্ছে তাই না? তোর মতো কাপুরুষেরা এটাই পারে।পারলে তের বউকে তোর জীবনের সত্যিটা জানিয়ে দেখা তুই কেমন পুরুষ। আসছে আমাকে জ্ঞান দিতে।”
” সত্য, মিথ্যা সব মিলিয়ে আমরা মানুষেরা বেঁচে আছি। তোমার দুই কথার ধমকে মিষ্টি আমাকে ভুল বুঝবে না, চাচী। পরেরবার আমার স্ত্রীকে আঘাত করতে আসলে তোমার মেয়ের মতো তোমাকেও বাড়ি ছাড়া করব বলে দিলাম।”
আফিয়া কায়েসের ঘরে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে।সেএকজন ডাক্তার হয়েও শাশুড়ির সামনে ছোট পিঁপড়ে। কায়েস বরাবরের মতো ঘরে বন্দী। পান্নাকে পেয়ে ঘর থেকে আজ বের হয়নি। মিষ্টি আফিয়াকে শ্বশুরের কাছে বসিয়েই খাবারের ঘরে এসেছিল। আফিয়া সবটাই শুনেছে। পিয়াস এখনো ফিরেনি, হয়তো আজ ফিরবেও না। লায়লা বেগমের রাগান্বিত দৃষ্টিতে ভস্ম হতে চায় না সে। ফিরোজ নামক মানুষটা বড়োই অদ্ভুত। মিষ্টি এই মাবুষটার মাঝে অন্যরকম হিংস্রতার আভাস পেয়েছিল সেদিন যেদিন লায়লা বেগমের ঘরে রাতের আঁধারে সে চুপি চুপি এসেছিল। যদিত সেই রাতে মিষ্টি তাকে চিনতে পারেনি কিন্তু মিষ্টিকে দোষারোপ করার জন্য লায়লা বেগমকে প্রহার করার পর সে বুঝতে পেরেছিল যে রাত্রির সেই মানুষটা ফিরোজই। কিন্তু বিবাহিত স্ত্রীর নিকট আসাতে তার এতো লুকোচুরি কেন? প্রশ্নটা মাথায় আসলেও ব্যাখ্যা পায়নি আজও।
———–
সকালে লায়লা বেগমের আর্তচিৎকারে মিষ্টি ও অন্তিকের ঘুম ভাঙে। সিঁড়ি ডিঙিয়ে নিচে আসতেই নাজিমউদ্দীনের ঘর থেকে আওয়াজ ভেসে আসে। মিষ্টি দুর্বল শরীরে সেদিকে এগোয়। নাজিমউদ্দীনের দেহখানা নিথর হয়ে পড়ে আছে জমিনে। চোখ দুটো খোলা, হাতদ্বয় মুষ্টিবদ্ধ করা। মিষ্টি দাদা বলে চিৎকার করে ওঠে। অন্তিক দেয়াল ঘেঁষে বসে মাথায় হাত দেয়। কীভাবে হলো এমন! নাজিমউদ্দীন কী কোনো অসুখে মা’রা গেছে নাকি কেউ মে’রে ফেলেছে? মিষ্টি নাজিমউদ্দীনের পাশে এসে বসে। সে এখনো হতভম্ব। চোখের সামনে নাজিমউদ্দীনের এহেন অবস্থা দেখে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। সে নাজিমউদ্দীনের পাশে বসে বলতে থাকে, ” দাদী বলেছিল,তোমাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে। তোমার জন্য একটা পাটি বুনেছে দাদী। তোমাকে সেখানে বসিয়ে খেতে দিবে এমন শখ দাদীর। তুমি পূরণ করবে না! তোমার নাজমা তোমার পথ চেয়ে আছে দাদা, ও দাদা ওঠো না!
চলবে…………
#যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয়
#আফসানা_মিমি
|পর্ব: পনেরো|
বরই পাতা ও উশনান ঘাষ দিয়ে গরম পানি জ্বাল দেয়া হচ্ছে। মহিলারা এক ঘরে বসে দোয়া ইউনুস ও ইয়াসিন সুরার খতম পড়ছে। সুগন্ধি, সুরমা সাদা কাফন তৈরী করা হয়েছে মৃত ব্যক্তিতে পরিধানের জন্য। আগরবাতি প্রজ্জ্বলিত করা হয়েছে মাইয়্যাতের মাথা ও পায়ের কাছে। মোল্লা বাড়িতে কান্নার রোল পড়েছে। পারিবারিক গোরস্থানে করব খোঁড়া হচ্ছে। কায়েস দাঁড়িয়ে থেকে কবর খোঁড়ার কাজ দেখছেন। একদিন তারও এই ঘরের বাসিন্দা হতে হবে। শুধু কায়েস নয় প্রতিটা মুসলমানেরই একদিন এই ঘরই শেষ ঠিকানা হবে। মিষ্টি বিছানায় শায়িত অবস্থায় পড়ে আছে। অতিরিক্ত কান্নার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। আফিয়া মেয়েকে কোলে নিয়ে মিষ্টির পাশে বসে আছে। মোল্লা বাড়িতে পা রাখার পরদিনই যে এমন ঘটনা ঘটবে তা প্রত্যাশা করেনি সে। লায়লা বেগম নিজের ঘরে বিলাপ করছেন, কলি সকালেই চলে এসেছে মাকে স্বান্তনা দিচ্ছে। বসারঘরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এসেছেন ফিরোজকে স্বান্তনার দেয়ার জন্য। অন্তিক ও পিয়াস ভদ্রতার খাতিরে দাঁড়িয়ে সকলের কথোপকথন শুনছে। মসজিদের ইমাম নাজিমউদ্দীনের গোসল কার্য সম্পন্ন করেছেন সবে। এখন শুধু নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা! এরপরই নাজিমউদ্দীনের শেষ ঠিকানায় চির নিদ্রায় শায়িত করা হবে।
অন্তিকদের বাড়ির প্রধান ফটকে দুইজন মহিলার আগমন ঘটে। একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধা অপরজনকে দেখে অনুমান করা যাবে না। বৃদ্ধার সাথে আগমনকারী অতিথি নিজের আপাদমস্তক কালো বোরকার আড়ালে আবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি বৃদ্ধাকে ধরে ধরে বাড়িতে প্রবেশ করেন। অন্তিক সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়। আগমন কৃত বৃদ্ধা তার পূর্ব পরিচিত। তিনি মিষ্টির দাদী। বিয়ের দিন তিনিই মিষ্টির হাত অন্তিকের হাতে তুলে দিয়েছিল। সময় অপচয় না করে অন্তিক সেদিকে এগোয়। বৃদ্ধার হাত সাবধানে হাতপর মুঠোয় ধরে শুধায়, ” এত কষ্ট করে এতো পথ আসতে গেলেন কেন, দাদী! চলুন আপনাকে ঘরে নিয়ে যাই।”
” আমাকে নাজিম ভাইয়ের কাছে নিয়ে যাও, নাত জামাই।”
বৃদ্ধা থমথমে সুর শুনে অন্তিক হতভম্ব হয়। তার সাথে অন্তিকের দাদাকে নাজিম বলে সম্বোধন করায় অবাক হয় সে। আমরা সাধারণত আপনজনকেই নাম ধরে সম্বোধন করতে পারি, অপরিচিতদের নয়। অন্তিক নাজমা অর্থাৎ মিষ্টির দাদীকে ধরে খাটিয়ার কাছে নিয়ে যায়। সাদা কাপড়ে আবৃত নাজিমউদ্দীনীর চেহারা অনাবৃত করার সাথে সাথে মিষ্টির দাদী নুইয়ে পড়েন। অন্তিক ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পেরে খাটিয়ার পাশে বসে ক্রন্দনরত কণ্ঠে বলেন, ” তোমার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারলাম না নাজিম ভাই। আমাকে ক্ষমা কইরা দিও তুমি। আমি তোমার লাইগা পাটি বুনছি গো নাজিম ভাই, তুমি না যাইবা কইছিলা! আমার হাতে সরিষাবাটা দিয়া ইলিশ রান্না খাবা? কেন চইলা গেলা। আমারে শাস্তি দেওয়ার লাইগা? সারাজীবনের কষ্ট কী কম ছিল নাজিম ভাই?”
অন্তিক মনোযোগ সহকারে মিষ্টির দাদীর আর্তনাদ শুনে। এতটুকু বুঝতে পারে, তার দাদা মিষ্টির দাদীর পূর্ব পরিচিত ছিল। অন্তিক দাদীকে শক্ত করে ধরে রাখে। বৃদ্ধা মহিলা তখনো বিড়বিড় করছে। নাজমার সাথে আসা আগন্তুক মহিলা এবার তার কাঁধে হাত রাখে, মিষ্টির দাদী আগন্তুকের দিকে ফিরলে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায়। নাজিমউদ্দীনের দিকো পুনরায় ফিরে বলে, ” পরকালে আমগোর সাক্ষাৎ হইবো তো, নাজিম ভাই!”
কথাটা অন্তিকের বুকের মধ্যে লাগে। এতো কষ্ট, এতো হাহাকার না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা! অন্তিক নির্বাক দৃষ্টি ফেলে। নাজমা বেগম অন্তিকের উদ্দেশ্যে বলে, ” মিষ্টির কাছে লইয়া যাও, নাত জামাই। মাইয়াটা কানলে অসুস্থ হইয়া পড়ে।”
নাজিমউদ্দীনকে কবরে চিরতরে শায়িত করে রেখে আসা হয়েছে। সবাই চলে আসলেও কায়েস ও অন্তিক কবরের পাশেই থেকে যায়। অন্তিক থেমে থেমে কাঁদছে। একাকীত্বের সময়ে আড়ালে অবডালে নাজিমউদ্দীন তাকে সাহস জুগিয়েছিল। লায়লা বেগম যখন তার দুই সন্তানকে আদর করতো অন্তিকের মন খারাপ হতো। নাজিমউদ্দীন তখন তাকে নিয়ে সারা শহর ঘুরতো। কায়েসের কাছে অন্তিক যা না বলতে পারতো নাজিমউদ্দীনের কাছে তা বলতো। রুনা চলে যাওয়ার পর কায়েসের নিস্তব্ধতায় অন্তিকও আঁধারে তলিয়ে যাচ্ছিল নাজিমউদ্দীন সেই জীবন থেকে তাকে বের করে সুন্দর জীবন দিয়েছিল। অন্তিকের ভাবনার মাঝেই কায়েস বলতে শুরু করে, ” আমি এতিম হয়ে গেলাম রে, বাপ!”
অন্তিক দীর্ঘশ্বাস ফেলে উদাস সুরে বলে, ” দাদা বলেছিল, মা একদিন ফিরে আসবে। কতো বছর হয়ো গেলো তাই না, বাবা! দাদাও চলে গেলো। এখন আমায় কে আশায় রাখবে?”
বাবা ছেলের বুক ছারখার হয়ে যাচ্ছে একই কষ্টে। মৃত্যুর যন্ত্রণা যেমন কঠিন, অমৃত্যু তত কষ্টের। আমাদের প্রিয়জনেরা পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও আমাদের স্মৃতি থেকে বিদায় নেয় না। তাদের স্মৃতিচারণে আমরা আজীবন পাড় করতে পারি।
মোল্লা বাড়িতে প্রবেশ করতেই কলি অন্তিকদের দিকে দৌড়ে আসে। বুকে হাত চেপে হাঁপাচ্ছে সে। হাতের ইশারায় দুইতলার দিকে করে বলে, ” ভাবী, ভাবীর কী যেন হইছে। পিয়াস ভাই আর তার বউ হাসপাতালে নিয়ে গেলো। উপরে বুড়ি মহিলা কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ভাবী বলে গেছে,তোমাকে বুড়ি মহিলাকে দেখে রাখতে। ”
একদিকে প্রিয়তমা স্ত্রী অপরদিকে স্ত্রীর নিকটবর্তী আত্নীয়া কাকে দেখবে অন্তিক। দুতলা সিঁড়ি ডিঙিয়ে তাদের ঘরে যেতেই মিষ্টির দাদীর শুকনো মুখখানা দেখতে পায় অন্তিক। মাথার কাছে ভদ্রমহিলা বসে হাত পাখার বাতাস করছে। অন্তিকের পিছু পিছু কায়েসও ঘরে প্রবেশ করে। অন্তিক ভদ্রমহিলাকে জিজ্ঞেস করে, ” দাদীকেনিয়ে হাসপাতালে যেতে হবে?”
” বুজান ঔষধ খেয়ে ঘুমাচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই।”
কায়েস মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনে ভদ্রমহিলার দিকে তাকায়। আপাদমস্তক কালো কাপড়ে আবৃত নারীর কোনোকিছু দেখার সম্ভাবনা নেই। এই কণ্ঠস্বর কায়েসের খুব পরিচিত। অন্তিক হাফ ছেড়ে বাঁচে এবার সে মিষ্টির কাছে যেতে পারবে। দাদীর খেয়াল রাখার কথা বলেই আফিয়ার হাসপাতালের দিকে চলে যায় সে।
অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজটায় অনেকের মনে আনন্দ বয়ে আনে তো অনেকের মনে কষ্ট। হাসপাতালে পৌঁছালে সজনদের আহাজারি ও ডাক্তারদের অস্থিরতা দেখলেই অন্তর অশান্ত হয়ে যায়। কার ভাগ্যে সুখের ছন্দ আর কার ভাগ্যে দুঃখের ছায়া কেউ জানে না। শহরের প্রাইভেট হাসপাতালে আফিয়ার চেম্বারে এসে উপস্থিত হয় অন্তিক। মিষ্টি তখন জুস খাচ্ছিল। আফিয়া সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মাত্রই কেবিনে বসেছে অন্তিককে দেখে বলতে শুরু করে, ” এসেছো ভালোই হয়েছে। মিষ্টিকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাও। আমি রিপোর্ট নিয়ে বিকালে আসছি।”
অন্তিক মিষ্টির দিলে এগোয়। মিষ্টির দুর্বল হাসি বুকে গিয়ে বিঁধে তার। সে ভাবছে, এ কোন পরীক্ষায় ফেলল উপরওয়ালা তাকে। একদিকে প্রাণ প্রিয় দাদার ওফাত অন্যদিকে স্ত্রীর অসুস্থতা। মিষ্টিকে পাঁজাকোলে তুলে কপালে অধর ছুঁয়ে দেয় অন্তিক। অপরাধী হয়ে বলে, ” আমি সত্যিই অকর্মক স্বামী,তাই না চন্দ্রিমা!”
মিষ্টি অভিমানের সহিত উত্তর দেয়, ” এতো দেরী করলে কেন, অন্তু!”
অন্তিক পুনরায় মিষ্টির কপালে চুমু এঁকে বলে, ” সরি সোনা, আর এমন হবে না।”
মিষ্টি অন্তিকের বুকে মাথা গুঁজে বলে, ” বাড়ি চলো, অন্তু। তোমাকে মন ভরে দেখব। মনে হচ্ছে, তোমাকে হাজার বছর ধরে দেখি না।”
অন্তিক দ্রুতগামী হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসে।
——————–
পাড়া পড়শীদের প্রস্থানে লায়লা বেগমের কান্নাও থামে। সে বিছানায় আয়েশ করে বসে স্বামীর জন্য পান সাজাচ্ছে। ফিরোজ কপালে হাত রেখে শুয়ে আছে। বাড়ির প্রধান মাথা যে গত হয়েছে সেই সম্পর্কে লায়লা বেগমের কোনো চেতনা নেই। স্বামীকে পাশে পেয়ে দিন দুনিয়া সব ভুলে বসেছে। পান সাজিয়ে স্বামীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলতে শুরু করে, ” বাড়িতে নয়া কুটুম আসছে। অনৃতিকের শ্বশুর বাড়ির লোক। কথা বলছিলে?”
ফিরোজ নিরুত্তর হয়ে পান মুখে পুরে নেয়। লায়লা বেগমও মুচকি হেসে পান মুখে পুরে। রসালো পানের স্বাদের সাথে গল্প জুড়ে বসে।
আফিয়া বাড়ি ফিরে সন্ধ্যার পরে। আজ মোল্লা বাড়ি নিস্তব্ধ, নীরবতায় জানান দিচ্ছে বাড়ির সকলের মনের অবস্থা। আফিয়ার হাতে মিষ্টির রিপোর্ট। লায়লা বেগম সেই সময়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। আফিয়াকে তার পছন্দ হয়নি। শ্বশুরের মুখের উপর কিছু বলতে পারেননি তিনি কিন্তু আজ তো হুকুমজারি করার মতো কেউ বেঁচে নেই। অনেকদিন পর রাজ্যের রাজা ও রাজত্ব তার হাতের মুঠোয়। একটু হুকুমমত না চালালে হয় নাকি? লায়লা বেগমের মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে ওঠে সে এগিয়ে এসে বলতে শুরু করে, “বুড়া ম’রে যাওয়ার আগে সমস্ত সম্পত্তি ভাগাভাগি করে গেছে নাকি? নাকি এই বাড়ির গুপ্তধন সম্পর্কে জানিয়ে দিয়ে গেছে।”
লায়লা বেগমের কথায় রসিকতা ছাপ স্পষ্ট। আফিয়ার এই মুহূর্তে লায়লা বেগমের কথা পছন্দ হয়নি সে লায়লা বেগমকে উপেক্ষা করে দু তলা ডিঙিয়ে উপরে উঠে সরাসরি অন্তিকের ঘরে প্রবেশ করে। সেখানে মিষ্টির দাদীর থেকে জানতে পারে তারা অন্য ঘরে আছে। আফিয়া দেরী না করে পিয়াসের ঘরে চলে যায়। পথে পিয়াসের সাথে দেখা হয় আফিয়ার। রিপোর্ট সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় সব খুলে বলে সে। পিয়াস রিপোর্ট শুনে মুখে হাত দেয়, এমনটাও কী হতে পারে? কলি তাদের সমস্ত কথা শুনে দৌড়ে লায়লা বেগমকে জানাতে চলে যায়।
মিষ্টিকে বুকের সাথে মিশে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অন্তিক। দাদার মৃত্যু অন্তিকের সাথে মিষ্টির মনেও প্রভাব ফেলেছে। দুজন দুজনের ছায়া হয়ে পাশে রয়েছে। অন্তিকের নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসছে। দাদার জন্য মন খারাপ লাগছে তার। মিষ্টি বুঝতে পেরে বলতে শুরু করে,
” দাদা আমাদের মাঝে নেই অন্তু! কিন্তু ওনার বলা প্রতিটা কথা, আদেশ, উপদেশ আমাদের সাথেই রয়েছে।”
” গতকাল রাতেও না সব ঠিক ছিল চন্দ্রিমা। হঠাৎ কী হয়ে গেলো, এজ রাতের মধ্যেই সব শেষ।”
মিষ্টি অন্তিকের কথায় ভাবনায় পড়ে যায়। সত্যিই তো! দাদার হঠাৎ মৃত্যু কেউ কাম্য করেনি। দাদা রাতেও সুস্থ ছিল। মিষ্টি চোখ বন্ধ করে নাজিমউদ্দীনের শেষ দেখার স্মৃতি স্বরণ করে। নাজিমউদ্দীনের খোলা চোখ, হাতের শক্ত মুঠো ও এলোমেলোভাবে শোয়া স্বাভাবিক মৃত্যু মনে হচ্ছে না তার কাছে। মিষ্টির ভাবনার মাঝেই আফিয়া ও পিয়াসের আগমন ঘটে। অন্তিক ও মিষ্টিকে একসাথে দেখতে পেয়ে দুজনেই চোখ বন্ধ করে বলে, ” এবার আলাদা হওয়ার সময় হয়েছে দেবর সাহেব। দশমাস বউয়ের কাছাকাছি আসা নিষেধ আপনার জন্য।”
অন্তিক কিছু বুঝতে পারছে না। মিষ্টি কিছু একটা বুঝতে পেরে মুখে হাত রাখে। তার ছলছল চোখ ও হাস্যজ্বল মুখশ্রী জানান দিচ্ছে তার খুশির মুহূর্ত। অন্তিক জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে আফিয়া রিপোর্টখানা অন্তিকের হাতে দিয়ে বলে, ” নতুন অতিথির আমন্ত্রণের আয়োজন করো দেবর সাহেব। তুমি বাবা হতে চলেছো।”
অন্তিক অবিশ্বাস্যের দৃষ্টিতে আফিয়ার দিকে তাকিয়ে কাঁপা হাতে রিপোর্ট খানা উল্টিয়ে দেখে। আফিয়ার কথা সত্য মিষ্টি দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট। ইউরিন ও ব্লাড টেস্টের রেজাল্ট ও পজিটিভ। অন্তিকের হাত থেকে রিপোর্ট পড়ে যায়। সে জমিনে হাঁটু গেড়ে স্তব্ধ বনে যায়। আফিয়া হতবিহ্বল হয়ে প্রশ্ন করে, ” তুমি খুশি না, অন্তিক?”
অন্তিক কাঁপা স্বরে উত্তর দেয়, ” এটা কীভাবে সম্ভব।”
অকস্মাৎ দরজা খোলার আওয়াজে সকলে ভয় পেয়ে যায়। লায়লা বেগম এসেছে তার মুখশ্রীতে ভীতি বিদ্যমান। পিছনেই কলি ভয়ংকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন সে সুযোগ পেলে মিষ্টিকে চোখের আগুনে ভস্মীভূত করে দিবে। লায়লা বেগম নিচু হয়ে রিপোর্ট হাতে নেয়। কলির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”পড়ে শোনা, কী লেখা আছে।”
কলি রিপোর্ট পড়তে শুরু করে, ” মিষ্টি দেড় মাসের প্রেগন্যান্ট।”
লায়লা বেগম কিছু একটা ভেবে বিকট শব্দে হাসতে শুরু করে। এরপর ঠাট্টার ছলে বলে, ” কার পাপের ফল তোর মিষ্টি সতী বউয়ের পেটে, অন্তিক? তুই না কখনো বাবাই হতে পারবি না!”
চলবে…………