যদি দেখার ইচ্ছে হয় পর্ব-২৪+২৫

0
390

#যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয়
#আফসানা_মিমি
|পর্ব: চব্বিশ|

” এত বছর পর তোমাকে কাছে পাইয়া ভেতরের জানোয়ারটা জেগে গেছে, তুমি আমার বউ হলেই কী? ছুঁইতে দিছো? সৎ ভাইয়ের ছেলেকে এত জীবন দেইখা শুইনা রাখছিলাম, এর প্রতিদিন হিসাবেও তো একবার ছুঁয়ে দেওয়ার অনুমতি দিতে পারো!”

ভয়ংকর চোখ,হিংস্র মনোভাব। ভালো মানুষের আড়ালে আস্ত জা’নো’য়া’র কায়েস মোল্লা। রুনাকে বিছানার পায়ার সাথে হাত পা বেঁধে রেখেছে কায়েস। মুখে তার ক্রুর হাসি। লালসার দৃষ্টি রুনার সারা শরীরে বুলাচ্ছে। অবচেতন রুনা কায়েসের এরূপ সম্পর্কে অজ্ঞ। যদি জানতো, ভাল মানুষের আড়ালের হিংস্র পশুর জন্য সে এত জীবন আফসোস করেছে তবে হয়তো আত্মহত্যা করতো।

কায়েস রুনার কাছাকাছি এসে শরীরের ঘ্রাণ নেয়। বিশ্রী হেসে বলে,” কত বছরের আরাধনা তুমি! তোমাকে নিয়ে আমার রাজ্যে আজই চলে যাব। স্ত্রী নয়! রক্ষিতা হবে তুমি। যখনই তোমার নেশা ধরবে তখনই,,,,,!

কায়েসের লোলুপ দৃষ্টি বিচরণ করছে রুনার শরীরের উপর। পাঞ্জাবী সে অনেক আগেই খুলে ফেলেছে। পূর্ব অভ্যাস মোতাবেক জীর্ণ শার্টের সাথে লুঙ্গী পরেছেন তিনি। পিছন থেকে দেখে বুঝা যাবে ফিরোজের কার্বনকপি। এই সজ্জা তার অ’স্ত্র, কতো অপরাধ করেছে ইয়ত্তা নেই। ভালো মানুষের আড়ালে হিংস্র পশু কায়েস। শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বৈধ স্ত্রীর দিকে এগোতে থাকে কায়েস। লোলুপ দৃষ্টিতে রুনাকে অনেক আগেই অর্ধ ধ’র্ষ’ন করে ফেলেছে সে এখন শুধু শরীরগত কাজ বাকী। কিছু পুরুষ রয়েছে যাদের ভালো মুখোশ পরে সমাজে বসবাস করে কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক বিকৃতি সম্পন্ন থাকে; তাদের পৃথক করা যায় না। আমরা আমাদের সন্তানদের পাড়া প্রতিবেশীদের বাড়িতে পাঠিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকি কিন্তু একবারও কী ভেবে দেখি! কায়েসের মতো কীটরা আমাদেরকে সন্তানদের জন্য কতটুকু নিরাপদ!

জঙ্গলের এই শুনশান বাড়িতে তিনজন মানুষের বসবাস। একজন কায়েস অপরজন রুনা; তৃতীয় ব্যক্তি ফিরোজ যাকে কায়েস বর্তমানে পাশের ঘরে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে। লোকটা জ্বালাচ্ছিল তাকে তাই লোকজন দিয়ে বেঁধে রেখেছে। অবশ্য পাহারায়ও রেখেছে কয়েকজনকে! যেন ছুটতে না পারে আর মোক্ষম সুযোগে তার কার্যসিদ্ধি হাসিল করতে পারে। রুনাকেও ঘুমের ঔষধ দিয়েছে সে! সজাগ থাকলেই তার কাজের ব্যাঘাত ঘটাবে রুনা।
” এতদিন মাইয়ারা নিজের ইচ্ছায় ইজ্জত খুয়াতে আইতো, মজা পাইতাম কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, তুমিও সজাগ থাকলে ভালো হতো রুনা! তোমার চিৎকার দেখে আনন্দ পাইতাম। তবে আমি শুভকাজে দেরী করতে চাই না।”

” উপর ওয়ালারে ভয় করো কায়েস ভাই! তোমার ভালো মুখোশের আড়ালের জানোয়ার রূপ অনেক আগেই টের পাইছি। বাচ্চারা যেন জেনে কষ্ট না পায় তাই চেপে গেছিলাম। কিন্তু আজ স্বামীর বিপদের আশঙ্কা করে এখানে না আসলে জানতেই পারতাম না, তোমার মাথায় কী কী চলছে।”

লায়লা বেগমকে এই মুহূর্তে এখানে আশা করেনি কায়েস। গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যাঘাত ঘটানোর জন্য লায়লা বেগমের দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায়। গায়ে শার্ট জড়িয়ে লায়লা বেগমের কাছে এসে গলা চেপে ধরে হুঙ্কার ছাড়ে,” এখানে এসে ভালো করো নাই, ভাবী! তোমার স্থান মোল্লা বাড়ি, তোমার সাম্রাজ্য ছাইড়া এখানে মৃত্যু টেনে নিয়ে আসছে।”

” ম’র’ন’কে ভয় করি না, কায়েস। গতবারও এই মাইয়ারে বাঁচাইছিলাম এবারও বাঁচাইতেই আসছি।”

রাগে কায়েস থরথর করে কাঁপছে। লায়লা বেগমের গলা আরো শক্ত করে দেয়ালে চেপে ধরে বলে,” কালসাপ তাহলে তুমিই ছিলা,ভাবী! তাহলে তো, সব ঘটনাও জানতে।”

লায়লা বেগম বড়ো বড়ো নিশ্বাস ফেলতে চেষ্টা করছে কিন্তু সে একজন পুরুষের সামনে ব্যার্থ। একসম কায়েস লায়লা বেগমকে জমিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বলে,” কি কি জানো, বলো। আর জানলেই কী? তুমি আমার কিছুই ক্ষতি করতে পারবা না। তোমার আগেও এক মা”‘”‘”‘””‘গী আমার পর্দা ফাঁস করতে চাইছিল। ঐ যে রুস্তমের বউ! মা”””””গীর শরীর মে’লা’ই’য়া দিত। শেষে আমার মন উঠে যাবার পর হুমকি দিতে শুরু করে। তাই তারে পাঠাইয়া দিছি জমের বাড়ি। তোমাকেও পাঠাবো, তার আগে শুনি তুমি কী কী জানো?”

ঘৃণায় লায়লা বেগম মুখ ফিরিয়ে নেয়। জমিনে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে পিছাতে থাকে সে। অতি কষ্টে মুখনিঃসৃত কথা শোনা যায়,” আমি সব জানি। এতো বছরের পুরানো কথা ভুলি নাই। তুমি প্রতি রাতে,রুনারে কামনার ঔষধ খাওয়াইয়া মাইয়াডারে ধ”র্ষ”ণ করতে। তুমি জানতে এই মাইয়া সজাগ থাকাকালীন তোমার কাছে নিজেকে শপে দিবে না।”

লায়লা বেগমের কথা শুনে কায়েস হাসতে থাকে। মাথায়, বুকে হাত বুলিয়ে সরল ভাষায় বলে,” আজ পর্যন্ত রুনার হাত ছাড়া কিছুই ছুঁয়ে দেখি নাই, ভাবী। তবে একবার রুনারে পাইছিলাম। তোমার দেখা সেই পুরুষ আমি ছিলাম না, তোমার প্রাণপ্রিয় স্বামী ছিল। বড়ো ভাইজানের মৃত্যুর পর ভাই চাইছিল রুনাকে বিয়া করতে। কিন্তু আব্বা আমার সাথে বিয়ে দেয়। আমার বেপোরয়া চলাচল নাকি আব্বার কাছে ভালো লাগে নাই, তাই বিয়ের প্রথমদিনই শর্ত দেয় পরনারীর প্রতি লোভ লালসা কমিয়েই যেন রুনার কাছে আসি। আমিও ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করি, সারাদিন রুনার সামনে ভালো আর রাতের আঁধারে অন্য নারীর শরীর ভক্ষণ! ফিরোজ ভাই এই সুযোগ কাজে লাগায়, প্রতিদিন পানির সাথে কামনার ঔষধ দিয়া রুনাকে কাবু করে নিজে ফুর্তি করতো। আমি যেদিন টের পাইয়া যাই, সেদিন প্রথম রুনার কাছে যাই সেদিনই তুমি আমারে দেখে ফেলো। তারপরের দিন রুনা বাড়ি থেকে চলে গেছে। কই গেছে জানতে এতো বছর ভালো মানুষ সেজে ছিলাম। আজ অবশেষে রুনাকে পেলাম!”

লায়লা বেগম বাকরুদ্ধ অবস্থায় জমিনে পড়ে আছে। স্বামীর করা জঘন্যরকম কাজে সে স্তম্ভিত। এমন সংবাদ শোনার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয় ছিল তার কাছে। সে কাঁপা স্বরে শুধায়, ” তুমি মিথ্যা কথা বলছো,কায়েস ভাই!”

কায়েস নির্লজ্জের মতো উত্তর দেয়,” মিথ্যা বললে এত বছর ভালো মানুষের আড়ালে এই সুন্দর রূপ লুকিয়ে রাখতে পারতাম না। তুমি জানতে ভাই কাজের কারণে বাহিরে থাকে, কিন্তু তুমি এটা জানতে! ভাই আমার ঘরে আমার পরিবর্তে খাঁটে ঘুমিয়ে থাকতো আর আমি রাতে অন্যান্য নারীর শরীরের স্বাদ নিতাম! একবার তো তোমার কাছেও,,,,,

লায়লা বেগম কায়েসের কথা শেষ হতে দেয়নি। কোমড়ে গুঁজে রাখা ছু”’রি ঢুকিয়ে দেয় কায়েসের পেটে। একবার, দুইবার নয়! যতক্ষণ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছে যে কায়েসের জীবন শেষ ততবার ছু’রি’ঘা’ত করেছে সে। আকস্মিক আক্রমণে কায়েস প্রস্তুত ছিল না। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসছে তার। পেটে হাত চেপে বলতে থাকে, ” আমাকে বাঁচাও ভাবী, রুনাকে না পাইলে আমার আত্মাও শান্তি পাবে না!”

কায়েসের মুখে থুথু ফেলে বলে,” তোর আত্মা শান্তি না পাক। বিজের বাপকে মারার সময় হাত কাপে নাই কায়েস? রুস্তমের সাথে যে তুইই ছিলি, আমি জানি। আবারও পিয়াসের বাপেরে তুই ফাঁসাবি তা হতে দিব না! তোর কাম খতম।”

লায়লা বেগমের হিংস্ররূপে সহকারী লোকজনও ভয়ে পালিয়ে যায়। পাশের ঘরে চেয়ারের সাথে ফিরোজকে বাঁধা অবস্থায় দেখে লায়লা বেগমের চোখ ভরে আসে। মানুষটা যেমনই হোক সে তাকে ভালোবাসে। স্বামীর ভালেবাসা পেতে সে দুনিয়ার সাথেও লড়াই করতে পারে। ফিরোজের এক হাত কাঁধে ফেলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায় লায়লা বেগম। এবার সে দক্ষতার সাথে রুনাকে ফাঁসিয়ে গেল। পুরো বাড়ির ভেতরে রুনা ছাড়া আর কেউ নাই, এতক্ষণে কায়েসও শেষ। কিন্তু লায়লা বেগম জানে না, অপরাধীরা অপরাধ করার পর কিছু না কিছু ভুল করেই থাকে। অতি চালাক লায়লা বেগম ছুরি সেখানেই ফেলে রেখে এসেছে তা কী সে জানে!

————————

শাওনের সাথে অন্তিক পশ্চিমের জঙ্গলের বাড়িতে প্রবেশ করে। এক ঘর পেরিয়ে কায়েসের বিভৎস অবস্থা দেখে চোখ বন্ধ করে নেয় সে। অন্তিক শাওনের উদ্দেশ্যে বলে,” দুনিয়াতে তুমি যেই পাপ করবে তার কর্মফল দুনিয়াতেই ভোগ করেই তোমার মৃত্যু হবে। ভেবেছিলাম, এতো বছরের পুরোনো মূল আসামীকে হাতেনাতে ধরব কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস দেখেছিস! অপরাধী আগেইতার শাস্তি পেয়ে গেছে। কিন্তু আফসোস হচ্ছে, এইলোকটাকে আইনি সাজা দিতে পারলাম না! চোখের সামনে তার পাপকর্মের শাস্তি দেখলে শান্তি পেতাম রে!”

অন্তিকের হঠাৎই রুনার কথা স্বরণে আসে। শাওনের দিকে তাকাতেই সেও অন্তিকের চোখের ভাষা বুঝে নেয়। দুজন দৌড়ে অন্যান্য ঘরে রুনাকে খুঁজতে থাকে। অবশেষে রুনাকে খাটে বাঁধা অবস্থায় দেখতে পেয়ে অন্তিক বিচলিত হয়ে পড়ে। হাত পায়ের বাঁধন খুলে মায়ের হাতে গালে নিজের হাত রেখে ডাকতে থাকে। রুনার হুঁশ না আসাতে শাওন বলতে শুরু করে, ” চাচীর কিছু হবে না। আমাদের এক্ষুনি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হতে হবে, অন্তিক! নয়তো খারাপ কিছু হয়ে যাবে।”

অন্তিক আর দেরী করে না। মাকে পাঁজা কোলে তুলে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। শাওন অফিসারদের বলে বাড়ির প্রতিটা জিনিসপত্র নিয়ে আসতে বলে। হয়তো অপরাধীর খোঁজেই তার এই নির্দেশনা!

চলবে…………

#যদি_দেখার_ইচ্ছে_হয়
#আফসানা_মিমি
|পর্ব: পঁচিশ|

রুস্তমকে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ৩০৪ নাম্বার রুমে আনা হয়েছে। নিস্তেজ শরীরে রুস্তম চেয়ারে বসে। নির্বিকার দৃষ্টি তার! হাহাকার করছে বুকখানা। স্ত্রীর মৃত্যু নিঃস্ব করে দিয়েছে একেবারে তাকে। শাওন ও তার সহকর্মীরা জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই রুমটাকে রিমান্ড রুমও বলা যায়। রুস্তমের চেয়ারের পাশের টেবিলে ব্লেড,হাতুড়ি, লং নোজ প্লায়ার্স, কাটিং প্লায়ার্স সহ আরো যন্ত্রপাতি রাখা আছে। লবন ও মরিচ রাখা আছে একপাশে। শাওন আজ অন্তিককেও ডেকেছে। তার মনে হচ্ছে আজ রুস্তম সব স্বীকার করবে। কিছু সত্য অন্যের মুখে নয়, অপরাধীর মুখ থেকে শোনা উত্তম। শাওন আরেকটা চেয়ার নিয়ে রুস্তমের মুখোমুখি বসে। নরম স্বরে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব শুরু করে, ” দেখ রুস্তম! তোর মালিকেরও খু’ন হয়েছে। কে করেছে জানি না। তোর স্ত্রীর জন্য আফসোস হচ্ছে ঠিকই কিন্তু আসল অপরাধী কে জানিস?”
রুস্তম মাথা না বোধক ইশারা করে। সে জানে না, জানলে হয়তো চৌদ্দ শিকল ভেঙে তাকে শাস্তি দিতে চলে যেত। শাওন আবারো বলা শুরু করে, ” তুই কী চাস না! আসল অপরাধী কে তা জানতে? যদি চেয়ে থাকিস, তাহলে আমার প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিতে হবে।”

” আইজ সব কমু। আমনে কি জিগাইবেন কন।”

শাওন নড়েচড়ে বসে পুনরায় বলতে শুরু করে, ” নাজিমউদ্দীনের মৃত্যুর সময়ের ঘটনা পুরোপুরি জানতে চাই। আমরা কিন্তু তোর হাতের ছাপ পেয়েছি সেখানে। তুই যে সেখানে ছিলি না,এটা বলতে পারবি না।”

সারাঘরে পিনপতন নীরবতা, অন্তিক সিসিটিভির ঘরে বসে সমস্ত কথা শুনতে পারছে। তার শরীর কাঁপছে, প্রিয়মানুষের মৃত্যুর বর্ণনা না জানি কতো ভয়ংকর হবে! রুস্তমের নতজানু চোখ জমিনে নিবদ্ধ। মনে মনে কথা সাজিয়ে নিচ্ছে যেন। একসময় মুখ খুলে রুস্তম। বর্ণনা করতে থাকে সেই বিভৎস রজনীর পাপীয়সী মুহূর্তগুলো, ” একদিনের লাইগা আমারে শহরে আইতে কইছিল উস্তাদ। রাতের আঁধারে মুখে গামছা প্যাঁচিয়ে মোল্লাবাড়ির দরজায় দাঁড়াতে কইছিল উস্তাদ। কিন্তু কাম কী কয় নাই। দরজা খুলে দিলে সরাসরি দাদার ঘরে নিয়ে যায় আমারে। দরজার শব্দে দাদার ঘুম ভেঙে যায়। দাদা কে কইয়া চিৎকার করলে উস্তাদ দাদার মুখ চেপে ধরে আমারে পা দুইটা চেপে ধরতে কয়। আমি তাই করি। উস্তাদ তহন গলায় গামছা প্যাঁচাতে থাকে, চোখ মুখও প্যাঁচাইয়া নিয়া মুখের উপর বালিশ চাইপা ধরে। বুড়া মানুষ জোয়ানগোর শক্তির কাছে পারে নাই, ম’রে যায়। হাত পা ছাইড়া দিলে বালিশ, গামছা সব সরাইয়া নেয় উস্তাদ। দাদাকে সেই অবস্থায় রাইখা আমরা দরজা চাপাইয়া আইয়া পড়ি। ঐরাইতেই আমি আবার কামের জায়গায় আইয়া পড়ি। উস্তাদ কইছিল, আমার কামে উনি খুশি হইছেন। আমার বউরে দেইখা রাখবেন কিন্তু আমার বউ তো ভালা রইলো না! আমারে রাইখা কই গেলো,,,,!”

শাওন খুব মনোযোগ সহকারে কথাগুলো শুনে। গম্ভীরস্বরে আবারও প্রশ্ন করে, ” তুই কী মোল্লা বাড়িতে ঐ রাতেই প্রথম গিয়েছিলি?”

রুস্তম মাথা না বোধক ইশারা করে বলে, ” না, আগেও গেছি। তখন আমি যুবক। শরীরের রক্ত টগবগে। যৌবনের উত্তাপ রক্তে। একদিন দোকানে উস্তাদের বউরে দেইখা আফসোস করছিলাম তখন বড়ো উস্তাদ শুনে ফেলে। আমারে লোভ দেখায় আর কয়, তারে ঘুমের আর উত্তেজনার ঔষধ আইনা দিলে আমারেও সুযোগ দিবে। ঔষধ আইনা দিলে মাঝে মাঝে আমারে রাইতে মোল্লা বাড়িতে ঢুকতে দিত বড়ো উস্তাদ।”

এবার রুস্তমের নাক বরাবর ঘুষি পড়ে। শাওন রাগে রিরি করে কাঁপছে। রুস্তম জমিনে লুটিয়ে পড়ে, শাওন তাকে বসিয়ে আরো কয়েকটা চড় থাপ্পড় দিয়ে গালিগালাজ করতে থাকে। পুনরায় রুস্তমকে চেয়ারে বসিয়ে বলে, ” আর কী কী জানিস এই দুই ভাইয়ের ব্যাপারে?”

” দুইটাই হারামী। এক নাম্বার কু’ত্তা’র বাচ্চা। বড়ো ভাই ঘরে ছোট ভাইয়ের বউয়ের লগে খারাপ করতো আর ছুডু ভাই বাইরে পতিতালয়ে মাইয়া খুঁজতো।”

” তুই যে তোর থেকে বয়সী মহিলার সাথে খারাপ আচরণ করতি, সে কী বুঝতে পারতো না?”

” জানি না, কিন্তু শেষেরদিন দেইখা মনে হইছিল, নেশার বদলে ভাবীর চোখে মৃত্যুর চাওয়া বেশি আছিল। আমি ভয়ে পরে আর যাই নাই।”

শাওন সহকারী অফিসারদের চোখের ইশারা করে ৩০৪ নাম্বার রুম থেকে বের হয়ে আসে।পিছন থেকে রুস্তমের গগনবিদারী আর্তচিৎকার ভেসে আসছে।

বারান্দার চেয়ারে অন্তিক মুখে হাত রেখে বসে আছে। শাওন বন্ধুর পাশে বসতেই হাত সরিয়ে নেয় অন্তিক।চোখ জোড়া তার লাল বর্ণ ধারণ করেছে। অনুনয়ের সহিত বন্ধুর উদ্দেশ্যে বলে, ” একটাবার অনুমতি দে শাওন! ঐ জানুয়ারটাকে আমি নিজ হাতে শা’স্তি দিতে চাই।”

শাওন বন্ধুকে স্বান্তনা দিয়ে বলে, ” পৃথিবীতে যেই শাস্তি পেয়েছে তাতে সে অর্ধমৃত। বাকী শাস্তি না হয় উপরওয়ালাই তাকে দিবে! আরো দুইজন অপরাধী যে আমাদের চোখের সামনে ঘুরছে! তাদেরও তো শাস্তি দিতে হবে। চল বন্ধু! ভেঙে পড়িস না। চাচী ও ভাবী তোর অপেক্ষায় আছে।”

অন্তিক কোনো কথা না বলে হাঁটা শুরু করে।
—————————–

মোল্লা বাড়ি মানুষ ভর্তি থাকলেও থমথমে পরিবেশ। নাজমা বেগম সকালে এসে পৌঁছেছেন। রুনার মাথার কাছে তিনি বসে আছেন। মিষ্টি উসখুস করছে, তার দৃষ্টি দরজার দিকে। অন্তিকের ব্যাপারে আজকাল তার খুব চিন্তা হয়! মানুষটা কেমন যেন হয়ে গেছে। মিষ্টির সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। সারাক্ষণ ছটফট করে। বাহিরেই সময় কাটায়! মনি মা ও বাবাকে উদ্ধার করতে গিয়ে মনি মাকেই নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাবা কোথায়? বাবাকে কী খুঁজে পায়নি? হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মিষ্টির মাথায় যার উত্তর একমাত্র অন্তিকের কাছেই আছে। রুনাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সকালেই হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করে অন্তিক ও শাওন বাসায় শিফট করে কাজে চলে যায়। মিষ্টি খাবার নাড়াচাড়া করে ভাবছিল। রুনা সকাল থেকে অনাহারে। মিষ্টি হাজারবার জোর করেও খাওয়াতে পারেনি। নাজমা বেগম বিছানায় রুনার পাশে বসেই তাজবীহ পড়ছেন। মিষ্টি খাবার হাতে রুনাকে ডাকতে থাকে, ” একটু খেয়ে নাও, মনি মা! তোমার ছেলে বাড়ি এসে তোমাকে না খাওয়া অবস্থায় দেখলে আমাকে খুব পি’টা’বে। তুমি এটাই চাইছো তাই না!”

রুনা মলিন হেসে মিষ্টির হাত থেকে খাবার খেয়ে নেয়। সে জানে, মেয়েটা এবার আঁটসাঁট বেঁধে এসেছে, তাকে খাবার না খাইয়ে চুপ হবে না। এর জন্য দুনিয়ার যত অযাচিত কথা আছে সব রুনার কানেও ঢুকাবে। খাবার চিবুচ্ছে রুনা দুর্বল স্বরে প্রশ্ন করে, ” তোকে অন্তিক মে’রে’ছে বুঝি!”

মিষ্টি পিটপিট দৃষ্টিতে চেয়ে ভ্রু যুগল কুঁচকে বলে, ” কেন বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি! আরো কতকিছু করে জানলে তো গাঁট বেধে ছেলেকে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলবে, কি বলবে না?”
” আচ্ছা, আগে বলতো, শুনি!”
” তোমার ছেলে একটা পূর্ণ পাগল। রাত বিরাতে আমাকে বলে, ঐ কাঁঠাল গাছের ডালে বসে থাকো। আমি যদি বলি, যাবো না! তো গলায় ছু’রি বসিয়ে দিবে বলে ভয় দেখায়।”

মিষ্টির ছলছুতা কথার তালে রুনা হাসতে হাসতে খাবার শেষ করে। মিষ্টি হাফ ছেড়ে বাঁচে।তার মনি মা খেয়েছে তাতেই সে খুশি। ঔষধ এগিয়ে দেওয়ার সময়ও দেখতে পায় রুনা হাসছে। মিষ্টি বিরক্ত হয়ে বলে, ” এতো হাসছো কেন? পাগলের বাচ্চা পাগল যে মানুষ বলে তা আজ স্বচক্ষে দেখলাম। তুমি পাগল, তোমার ছেলেও তাই পাগল হয়েছে।”

নাজমা বেগম এতক্ষণ হাসি চাপিয়ে রেখেছিল। মিষ্টির জিজ্ঞাসাবাদে রুনার সাথে তিনিও হাসতে শুরু করেন। মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে বসে তাদের হাসি দেখতে থাকে। অবশ্য মনে মনে সে খুবই খুশি, তার মনি মার মুখে হাসি ফুটিয়ে। দুজনের হাসির সাথে পুরুষালীর হাসিও শুনতে পায় সে।

” একটু বাহিরে আসবে, বউ?”

অন্তিকের মুখনিঃসৃত বাণী বো’মা বিস্ফোরণের মতো মিষ্টির মনে আঘাত করলো যেন। মুহূর্তেই কক্ষ জুড়ে পিনপতন নীরবতা বিরাজ। মিষ্টি কটমট চোখে মনি মা ও রুনার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলে, ” পানের বাটা না সাজিয়ে আমার ঘর কেন ভাঙতে চাইছো তোমরা? তোমার ছেলে, তোমার নাত জামাই এসেছে বললে কী মহা ভারত ডুবে যেত!”

নাজমা বেগম মুখে হাত দিয়ে হেসে বলে, ” ওরে বিবি লা! আমাদের না বইকা যা জামাইয়ের আদর সোহাগ খাইয়া আয়।”

মিষ্টি বিড়বিড় করে বিছানা ছেড়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। দরজার কাছে পিয়াসের হাসি দেখে বুঝতে পারে, ফাটা বাঁশ গলায় আর কেউ নয়! তার ভাসুরই জাসছিল। মুখে ভেংচি কেটে হাঁটতে থাকে সে।
——————–

” আমি তোমাকে শা’স্তি দেই?”

খুব শক্তভাবে মিষ্টিকে প্রশ্ন করে অন্তিক। মিষ্টি ভেবেছিল বরাবরের মতো অন্তিক এসেই তাকে জড়িয়ে ধরবে। তার রসালো ঠোঁটে চুমু এঁকে বলবে, ‘তোমার ঠোঁটের স্বাদ চেঞ্জ হয়ে গেল কীভাবে!’ কিন্তু তা না বলে এরূপ ধমকে কেঁদে উঠে সে। নাকের চোখের পানি একাকার করে হেঁচকি তুলে কাঁদতে থাকে। অন্তিক ক্যাবলাকান্তের ন্যায় থমকে যায়। পুরোটা বিষয় বুঝতে পেরে হেসে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরতে আসে। মিষ্টি কান্না অবস্থায় পিছিয়ে যেতে যেতে বলে, ” আমাকে এখন ভালো লাগে না, তাই না! তাই তো যখন খুশি তখনই কষ্ট দিতে থাকো! এখন আমি পুরান হয়ে গেছি। আমি চলে যাচ্ছি মনি মার সাথে। তুমি নতুন কাউকে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকো!”

” ব্যস্ত ছিলাম চন্দ্রিমা! কিন্তু তোমার প্রতি উদাসীন ছিলাম না। প্রতি রাতে তোমার ঘুমন্ত মুখখানায় কতো চুমু খেয়েছি হিসাব নেই। দিবালোকে আমাদের নাই কথা হতো, কিন্তু মনে প্রাণে আমরা দুজন দুজনের অন্তরেই ছিলাম।”

” তোমার মিষ্টি কথায় এই মিষ্টির মন গলবে না, অন্তু।”

অন্তিক হাঁটু গেড়ে বসে এক কান ধরে বলে,” তবে কী কানে ধরে বলব, সরি রাজকন্যার মা!”

মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে বলে, ” রাজকুমার আসবে, আমার অন্তুর কার্বনকপি।”
” আমি রাজকন্যা চাই, চন্দ্রিমা! মিষ্টির মতো সাহসী রাজকন্যা। যার জন্য অন্তিকের মতো ছেলেদের জীবনে আলো ফিরে আসবে।”

নাক ফুলিয়ে, মুখ ঘুরিয়ে মিষ্টি চলেই যাচ্ছিল। অন্তিক পেছন থেকে মিষ্টিকে জড়িয়ে ধরে। পেটের কাছটায় হাত রেখে মিষ্টির কানে ফিসফিস করে বলে, ” এখানে কয়জনকে জায়গা দিয়েছো, শুনি! আমি তো ধরতেই পাচ্ছি না!”

” এজন্যই বলে, ছেলে মানুষ বাচ্চা হলে পরিবর্তন হয়ে যায়। এখন দেখি তুমি বাচ্চা পেটে থাকতেই পাল্টে গেলে। ছাড়ো কথা নেই,অন্তু।”

বউয়ের অভিযোগ খুলে বসেছে। অনেকদিন যে তাকে সময় দেয়া হয় না! মন ভরে আদর করা হচ্ছে না। অনবরত কথা শোনাও হচ্ছে না। আজ সব অভিমান দূর করবে অন্তিক। মিষ্টিকে পাঁজা কোলে তুলে ঘরের দিকে হাঁটা ধরে সে। দটজা আটকে বিছানায় শুয়ে মিষ্টির রসালো ঠোঁটে চুমু বসায়। আজ আদরে সোহাগে সে তার বউয়ের মান ভাঙবে।

চলবে……………..