#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩০)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৭৯)
বি*দ্ধ*স্ত মুখশ্রী নিয়ে রূপগঞ্জ গ্রামের বাগান বাড়ির মূল দরজা ভেদ করে গাড়ি ভিতরে প্রবেশ করালো কুশল। গার্ডসরা গাড়ি থেকে নামে। ৪জহ গার্ডস সাদিককে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা লোকটিকে ধরে গু*দা*ম*ঘরের দিকে নিয়ে যায়। আর বাকি গার্ডসরা বাগান বাড়ির চারপাশ ঘিরে নেয়। তরুনিমা, কুশল গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। গাড়ির পিছন সিটে সন্ধ্যা এখনও নি*স্ত*ব্ধ হয়ে সাদিকের লা*শে*র পাশে বসে আছে। কুশল দু’জন গার্ডসকে ইশারা করলে তারা কুশলের সামনে এসে দাঁড়াতেই কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“সাদিককে গাড়ি থেকে নামানোর ব্যবস্থা করো।”
গার্ডস দু’জন তৎক্ষনাৎ গাড়ির কাছে গিয়ে পিছন দরজা খুলে দিতেই গাড়ির ভিতরে সন্ধ্যাকে এখনও বসে থাকতে দেখে মাথা নিছু রেখে বললো…….
—“ম্যডাম..স্যার আমাদের সাদিক ভাইয়ের লা*শ গাড়ি থেকে নামাতে বললেন। আপনি যদি গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেন তাহলে ভাইয়ের লা*শ নামাতে আমাদের সুবিধা হতো।”
সন্ধ্যা আরেকপলক সাদিকের নি*স্ত*ব্ধ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বব্দে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়। বাড়ির ভিতর থেকে একজন মধ্যবয়সের মহিলা সাদা চাদর এনে বাড়ির সামনের অংশে মাটির উপর বিছিয়ে দেয় গার্ডস দু’জন সাদিকের লা*শ গাড়ি থেকে নামিয়ে সেখানে শুইয়ে দিয়ে আরেকটা সাদা চাদর নিয়ে সাদিকের আপাদমস্তক ঢেকে দেয়।
সন্ধ্যা তরুনিমার পাশে এসে দাঁড়াতেই কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“তোমরা বাড়ির ভিতরে গিয়ে বিশ্রাম করো।”
তরুনিমা কুশলের দিকে তাকিয়ে বললো…
—“আপনি!”
কুশল আগের স্থানেই দাঁড়িয়ে সাদিকের লা*শে*র দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বললো….
—“কিছু অসম্পূর্ণ কাজের হিসাব মিলানো বাকি আছে। শেষ করা অতিব জরুরী।”
তরুনিমা আর কিছু না বলে সন্ধ্যাকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। পরক্ষণে কুশলও গু*দা*ম*ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। গু*দা*ম*ঘরে প্রবেশ করতেই কুশল ওর সামনে সাদিককে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা মানুষটিকে হাত-পা-মুখ বাঁধা অবস্থায় মেঝেতে পড়তে থাকতে দেখতে পায়। কুশল লোকটির সামনে চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে বললো…..
—“এর মুখের বাঁধন খুলে দাও।”
কুশলের কথানুযায়ী একজন গার্ড লোকটির মুখের বাঁধন খুলে দেয়। মুখের বাঁধন খোলা পাওয়া মাত্রই লোকটি উচ্চস্বরে বললো….
—“আমাকে মে*রে ফেললেও আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারবেন না আ…..”
লোকটি পুরো কথা শেষ করার পূর্বেই কুশল লোকটির ডান পায়ের হাটুর নিচের মাংসপেশিতে একটা গু*লি করে। সঙ্গে সঙ্গে লোকটি ‘আআআআ’ বলে আ*র্ত*না*দ করে উঠে বললো….
—“পায়ে কেনো গু*লি করলেন? সরাসরি বুকে বা মাথায় করে দিত….”
কুশল এবার লোকটির বাম পায়ের মাংসপেশিতে আরেকটা গু*লি করে। য*ন্ত্র*ণায় লোকটি বসাবস্থা থেকে শুয়ে পড়ে আ*র্ত*না*দ করতে করতে বললো…
—“গু*লি করতে করতে আমার সর্বশরীর ঝাঁ/ঝ*ড়া করে ফেললেও আমার মুখ থেকে কোনো কথা বের করতে পারবেন না আপনি।”
চেয়ারের হাতলের উপর হাত ভাঁজ করে রেখে কুশল ওর কপালের ডান পার্শে শাহাদত আঙুল দিয়ে ঘ*ষা দিতে দিতে লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—“দেখ তো এদের চিনতে পারিস কি না…!”
কুশলের মুখে এমন কথা শুনে লোকটি শোয়াবস্থাতেই য*ন্ত্র*ণায় দাঁতে দাঁত পি*ষে গু*দা*ম*ঘরের দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখে ৪জন গার্ডস ১জন বৃদ্ধ বয়সের মহিলা, ১জন মধ্যবয়সের মহিলা ও ২জন কমবয়সী মেয়ের মাথায় ব*ন্দু*ক ঠেকিয়ে গু*দা*ম*ঘরের ভিতরে প্রবেশ করছে। এই দৃশ্য দেখা মাত্র লোকটি ভ*র*কে গিয়ে বললো….
—“আ-আমার প-পর-পরিবারকে ছ-ছে-ছেড়ে দিন। ও-ওরা তো আ-আপ-আপনার কোনো ক্ষ-ক্ষতি করে নি। যা ক-করার আমি করেছি। তাই যা শা-শা*স্তি দেওয়ার আমাকে দিন। ওদের ছেড়ে দিন।”
কুশল লোকটির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে বললো…
—“তোর গলার স্বর এতো তাড়াতাড়ি পরিবর্তন হয়ে গেলো কি করে! আপন মানুষদের হা*রা*নো*র ভ*য় বুঝি তোর মনের ভিতর জেঁ*কে বসেছে এখন? এতোসময় চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে বললি তোর সর্বশরীর গু*লি মে*রে মে*রে ঝাঁ*ঝ*রা করে দিলেও তোর মুখ থেকে কোনো কথা আমি বের করাতে পারবো না। বুঝতে পারলাম তোর কাছে তোর প্রাণের কোনো মূল্য নেই। তাই ঠিক করলাম তোর উপর গু*লি ব*র্ষ*ণ করে সময় ও বুলেট গুলো নষ্ট না করে তোর পরিবারের মানুষগুলোর সর্বশরীর গুলি মে*রে ঝাঁ*ঝ*ড়া করে দিবো। দেখি এতেও তোর মুখ থেকে কোনো কথা বের হয় কি না!”
এই বলেই কুশল লোকটির পরিবারের মানুষগুলোর দিকে হাতে থাকা ছোট্ট ব*ন্দু*ক*টি তাঁ*ক করে একবার গু*লি করে। ভ*য়ে লোকটি চোখ বন্ধ করে নিয়ে মুখ দিয়ে ‘নাআআআআ’ শব্দটি উচ্চারণ করে। পরক্ষণেই চোখ মেলে নিজের পরিবারের সদস্যদের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে সকলেই এখনও অ*ক্ষ*ত আছে। কুশল লোকটির উপর দৃষ্টি স্থির রেখে ওর ডান হাতের আঙুল দ্বারা ব*ন্দু*কটি ঘুরাতে ঘুরাতে বললো….
—“এবার গু*লি*টি শূন্যে করে সময় ও বুলেট দুটোই ন*ষ্ট করেছি ঠিকই কিন্তু এরপর আর ন*ষ্ট হবে না। ব*ন্দু*ক থেকে বের হওয়া প্রতিটি গু*লি তোর পরিবারের প্রতিটি সদস্যের শরীর ঝাঁ*ঝ*ড়া করে দিবে।”
লোকটি ভী*ত স্বরে বললো….
—“না…না…আ-আমি ব-বলছি..বলছি…আমি সব সত্য বলছি। আ-আমার পরিবারের কারোর কোনো ক্ষ*তি করবেন না দয়া করে।”
—“বল, কার কথায় এই কাজ করেছিস?”
—“চে-চেয়ারম্যান…চেয়ারম্যান সাহেব এর কথায় এই কাজ করেছি আমি।”
লোকটির মুখে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন এর কথা শুনে কুশল কিছুটা অবাক হয়ে ভাবে ‘চেয়ারম্যানের তার সাথে কি সমস্যা!’ হিসাবে বড় ধরণের গ*ন্ড*গো*ল উঠে আসছে। লোকটি আবারও বললো…
—“আমি অনেক গরীব। আমার নিজস্ব কোনো জমিজমা নাই। চেয়ারম্যানের জমিতে কা*ম*লা খেঁ*টে যে টাকা পাই তাই দিয়েই আমার সংসার চলে। প্রতিদিনের মতো গতকাল বিকালেও চেয়ারম্যানের জমিতে কাজ করছিলাম। তখন চেয়ারম্যান লোক পাঠিয়ে আমাকে তার বাড়িতে ডেকে পাঠান। আমি যখন যাই তখন তিনি আমাকে বলেন তার হয়ে আমাকে একটা কাজ করে দিতে হবে। আমি জিগাইছিলাম ‘কি কাজ করতে হইবো!’ তখন উনি বললেন , ‘আপনি আজ গ্রামে জঙ্গলের পথে আসার সময় আমি যেনো আপনাকে গু*রু*ত*র*ভাবে আ*হ*ত করে দেই। যদি আপনাকে আ*ঘা*ত করতে না পারি তাহলে আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি আপনার সাথে থাকেন তখন তাকে যেনো আ*হ*ত করে দেই। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আ*হ*ত হলে চিকিৎসার জন্য আবারও শহরে যেতে হবে আপনাকে। যেকোনো ভাবে আপনাকে আজ গ্রামে আসা ভে*স্তে দেওয়ার কাজই আমায় করতে বলেছিলেন।’ এমন কাজের কথা শুনেই আমি ‘করতে পারবো না’ জানিয়ে দিয়েছিলাম চেয়ারম্যানকে। তখন তিনি আমাকে মোটা অংকের টাকা দেবেন বলে লো*ভ দেখান, আমাকে ইট-পাঁকা ঘর করে দিবেন, কয়েকশতক জমির মালিকানা দিবেন এও বলেন। কিন্তু আমি তবুও রাজি হই নাই। পরে কোনো ভাবেই যখন আমাকে রাজি করাতে পারলেন না তখন উনি বললেন , ‘উনি আমার দুই মাইয়ারে উঠায় নিয়ে এসে নিজের ছেলের হাতে তুলে দিবেন , আমার মাইয়া দু’টোর স*র্ব*না*শ করে ওদের মে*রে নদীতে ভা*সা*ই*য়া দিবেন।’ ওনার এমন কথা শুনে আমি নিরুপায় হয়ে গিয়েছিলাম। এইসব কথা বাড়তি কারোর কাছে যাইয়া যেনো না বলি এটা নিয়াও উনি আমাকে হু*ম*কি দিয়েছিলেন। আমি আমার পরিবারের প্রাণের কথা চিন্তা করে আজ আপনাদের উপর আ*ক্র*ম*ণ করে বসছি মালিক। চেয়ারম্যানের কথা মাইনা নেওয়া ছাড়া আমার কাছে আর কোনো উপায় ছিলো না। আমি ভাবি নাই আমার আ*ঘা*তে একটা মানুষের প্রা*ণ চলে যাবে। আমার এই জীবন আমি রাখতে চাই না মালিক। আমার কর্মের শা*স্তি আমার পরিবারের কাওকে দিয়েন না। আমারে মা*ই*রা ফেলেন আপনি।”
এই বলে লোকটি হু হু কাঁদতে শুরু করেন। কুশল কিছুসময় নিরব থাকার পর দু’জন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বললো…
—“ওর দুই পায়ের মাংসপেশি থেকে গু*লি দু’টো বের করে ক্ষ*ত স্থানে ঔষধ লাগিয়ে দাও। আর ওর পরিবারের সদস্যদের আপাতত বাড়ির ভিতরে নিয়ে যাও। এই সময় ওদের নিজেদের বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়।”
কুশলের এমন কথা শুনে ছু*ড়ি*কা*ঘা*ত করা লোকটি স্ত*ব্দ হয়ে যায়। লোকটি মনে মনে এটা ভেবে আ*ফ*সো*স করছে যে…..
—“নিজের আপন জনের হ*ত্যা*কা*রীকে কঠিন শা*স্তি না দিয়ে আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছেন এমন একজন ভালো মনের মানুষকে আ*ঘা*ত করার চেষ্টা করেছি আমি, এই লজ্জায় আমার এখুনি ম*রে যাওয়া উচিত।”
কুশলের কথানুযায়ী লোকটিকে আর তার পরিবারকে গু*দা*ম*ঘরের বাহিরে সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যায় গার্ডসরা। কুশল চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে কয়েকজন গার্ডসকে উদ্দেশ্য করে বলে…
—“তোমরা চেয়ারম্যানের বাড়িতে যাও। চেয়ারম্যানকে ও ওনার পরিবারের সকল সদস্যদের এখানে উঠিয়ে নিয়ে আসবে। খেয়াল রাখবে আশেপাশের কোনো প্রাণী যেনো এই বিষয়ে কিছু টের না পায়।”
কুশলের কথানুযায়ী গার্ডসরা চেয়ারম্যানের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কুশল ও গু*দা*ম*ঘর থেকে বেড়িয়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
#চলবে ইনশাআল্লাহ…..
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩১)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৮০)
বাগান বাড়িতে নিজের জন্য নির্ধারিত রুমে এসে কুশল চোখ বন্ধ করে বিছানায় বসে আছে। কিছুসময় পর তরুনিমাও সেই রুমে প্রবেশ করে বিছানায় কুশলকে বসে থাকতে দেখে বিছানার কাছে গিয়ে কুশলের পাশে বসে শান্ত স্বরে বললো…
—“আপনি বাহির থেকে নিজেকে যতোটা কঠিন ও শক্ত রূপে প্রকাশ করেন ভিতর থেকে ঠিক ততোটাই নরম ও ভ*ঙ্গু*র হৃদয়ের মানুষ বলে মনে হয় আপনাকে।”
তরুনিমার কথায় কুশল ওর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে। পরক্ষণেই আবারও তরুনিমা কুশলের চোখে চোখ রেখে বললো….
—“পুরুষ জাতির কান্না করা বারণ এই নিয়ম যিনি করেছেন তিনি ঠিক কি বুঝে এমন উ*দ্ভ*ট নিয়ম তৈরি করেছেন আমি জানি না৷ নারী জাতির সামান্যতম কষ্ট হলে তারা কান্না করে নিজের মনকে হালকা করতে পারলে পুরুষ জাতি কেনো পাহাড় সমতুল্য ক*ষ্ট বুকের ভিতর চে*পে রেখেও কান্না করে নিজের মনকে হালকা করতে পারবে না?”
কুশল এখনও তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে। তরু কুশলের চোখের সামনে নিজের হাত নাড়ায়। পরক্ষণেই কুশল তরুকে অবাক করে দিয়ে ওকে দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আকস্মিক কুশলের এমন কাজে তরু যেনো বরফের মতো জমে গিয়েছে। তরুর কাছে মনে হচ্ছে সময়টাও যেনো তার মতোই স্থির হয়ে আছে। কিছুসময় ওভাবেই কে*টে যাওয়ার পর তরু অনুভব করে ওর ঘাড়ে টপ টপ করে পানি জাতীয় কিছু পড়ছে। তরু বুঝতে পারে কুশল কান্না করছে। তরু ওর কম্পিত এক হাত কুশলের পিঠের উপর রাখতেই কুশল যেনো আরো শক্ত করে তরুকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
(৮১)
চৌধুরী মেনশনের স্টোর রুমের ভিতর দাঁড়িয়ে দু’জন ছায়া মানব একে-অপরের সাথে কথপোকথন করছে। সেইসময় স্টোর রুমের দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে আরো একজন ছায়ামানব। ৩য় ছায়া মানবটি স্টোর রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়ে ঐ ২য় ছায়া মানবের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ১ম ছায়া মানব বললো…
—“এভাবে আর কতোদিন চলবে? ২৮ বছর আগে সেই কালোরাতে যদি রায়হানুলের স্ত্রীর সাথে ওকেও মে*রে ফেলতেন তাহলেই ভালো হতো। না থাকতো বাঁশ আর না বাজতো আমাদের স*র্ব*না*শের বাঁশি।”
২য় ছায়ামানব ১ম ছায়ামানবের কথায় সম্মতি জানিয়ে বললো…
—“এখন এই একটা মানুষের বেঁচে থাকা আমাদের জীবনকে জা*হা*ন্না*ম বানিয়ে তুলছে। এতোবছর ধরে রায়হানুলকে কো*মায় রেখে কুশলের সামনে সত্যটা আসতে দেন নি। কিন্তু কুশল যেভাবে রায়হানুলকে পুরোপুরি ভাবে সুস্থ করে তোলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে তাতে মনে হয় না কালো চাদরে মোড়ানো অতীতের সত্যিগুলো ওর সামনে পরিষ্কার হতে খুব বেশি সময় লাগবে।”
১ম ও ২য় ছায়ামানবের কথাগুলো শুনে ৩য় ছায়ামানবটি ধ*ম*কের স্বরে বলে উঠলেন….
—“আহহ…বে*বা*কু*ফের দল থামো তোমরা। কবে কোনটা করলে ঠিক হতো বা হবে তা আমি খুব ভালো করেই জানি আমাকে কোনো বিষয় নিয়ে বুদ্ধি বা জ্ঞান দিতে এসে নিজেদের ব্রেইন শূন্য গো*ব*র ভর্তি মাথার রূপ প্রকাশ করো না। একবার রায়হানুলকে সুস্থ করে তোলার জন্য নিজস্ব ডাক্তার নিয়ে এসেছিলো তো! তার পরিণতি কি হলো তা নিশ্চয়ই তোমরা খুব ভালো করেই জানো? এভাবেই যতোবার রায়হানুল কে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা নিয়ে কুশল নিজস্ব ডাক্তার নিয়ে এ বাড়িতে আসবে ততোবারই সেইসব ডাক্তারদের শেষ পরিণতি মৃ*ত্যু*ই হবে। না সুস্থ হবে রায়হানুল আর না কুশলের সামনে প্রকাশ পাবে কালো চাদরে মোড়ানো অতীতের সেই কালো সত্যগুলো।”
(৮২)
বেশকিছুসময় কুশল আর তরু একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে পাড় করে দেয়। পরক্ষণেই কুশল নিজেকে সামলে নিয়ে তরুকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসে। দু’জনেই নিজেদের দৃষ্টি ই নিচের দিকে স্থির করে রেখেছে। কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“আমি আমার কাজের জন্য দুঃখিত তরুনিমা, তুমি কিছু মনে করো না।”
তরু কুশলের দিকে তাকিয়ে অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো…
—“আপনার কোন কাজের জন্য আমি কি বা মনে করতে যাবো?”
কুশল তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখে বললো….
—“যদিও একজন স্বামীর তার স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরার জন্য স্ত্রীর থেকে কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তুমি তো এখনও আমাকে নিজের স্বামীরূপে পুরোপুরি ভাবে গ্রহন করো নি তাই তোমার অনুমতি না নিয়েই তোমাকে জড়িয়ে ধরায় তুমি যেনো আমায় ভু*ল না বুঝো তাই আমি তোমাকে আমার কাজের জন্য দুঃখিত বললাম।”
কুশলের মুখে এরূপ কথা শুনে তরু কিছু বলতে নিবে সেইসময় ওদের রুমের দরজায় কারোর নক করার শব্দ ভেসে আসে। কুশল বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো…
—“তুমি বসো..আমি দেখছি কে এসেছে।”
এই বলে কুশল দরজার দিকে অগ্রসর হয়। দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই দরজার বাহিরে একজন গার্ডকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। গার্ডটি কুশলকে দেখামাত্র বললো….
—“স্যার..আপনার কথানুযায়ী চেয়ারম্যানকে তার পরিবারসহ উঠিয়ে এনে গু*দা*ম*ঘরে বেঁ*ধে রাখার কাজ সম্পন্ন হয়েছে।”
কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“ঠিক আছে, তুমি যাও।”
গার্ডটি তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যগ করে। কুশল আবার তরুর সামনে এসে দাঁড়াতেই তরু শান্ত স্বরে প্রশ্ন করলো….
—“কে এসেছিলেন?”
—“একজন গার্ড।”
—“ওহহ।”
—“বাহিরে আনাচে-কানাচে বিভিন্ন বি*প*দ লুকিয়ে আছে তাই তুমি আর সন্ধ্যা বাড়িত ভিতর থেকে বের হইও না। মালতী চাচী সহ আরো বেশ কয়েকজন মহিলা সার্ভেন্ট আছেন বাড়ির ভিতরে। তোমাদের কোনোকিছুর প্রয়োজন পড়লে নির্দ্বিধায় তাদের বলিও। তারা তোমাদের সবরকম প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখবে।”
—“আপনি কি এখন আবার বাহিরে যাবেন?”
—“হুম..আমার কাজ এখনও শেষ হয় নি তাই বাহিরে যেতে হবে।”
—“নিজের খেয়াল রাখবেন।”
—“আচ্ছা।”
এই বলে কুশল রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু কুশলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো মাত্র।
(৮৩)
গু*দা*ম*ঘরে প্রবেশ করতেই কুশল দেখলো ওর সামনে দুইটা চেয়ারে বাঁধাবস্থায় বসে আছেন চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও তার স্ত্রী শরিফা বেগম। তাদের পাশেই খুঁটির সাথে দাঁড় করা বস্থায় বেঁধে রেখেছে চেয়ারম্যানের ছেলে আরিফকে। কুশল চেয়ারম্যানের সামনে চেয়ার নিয়ে বসে পায়ের উপর পা তুলে। আমজাদ হোসেন কুশলকে নিজের চোখের সামনে দেখামাত্র ভ*র*কে যান। আমজাদ হোসেন মনে মনে ভাবেন…..
—“কুশল চৌধুরী গ্রামে তাও সম্পূর্ণ সুস্থরূপে আছেন কি করে! এতোক্ষণে তো ওনার শহরে হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা ছিলো! তবে কি ঐ চাষী আমার সাথে নে*মো*খা*রা*মী করলো!”
পরক্ষণেই আমজাদ হোসেন নিজের মধ্যে ভ*য় ও চিন্তা ভাব চে*পে রেখে রাগ নিয়ে উচ্চস্বরে বললেন….
—“এগুলা কি ধরণের অভদ্রতা কুশল চৌধুরী সাহেব? আমার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে উঠিয়ে এনে এভাবে বেঁধে রাখার মানে কি?”
কুশল চেয়ারম্যানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি স্থির করে রেখে বললো….
—“আমার সাথে আপনার কি কখনও কোনো বিষয় নিয়ে দ্ব*ন্দ্ব হয়েছিলো?”
—“না।”
—“তাহলে আপনি আমাকে আ*হ*ত করার জন্য লোক পাঠালেন কেনো এই হিসাবটা আমি কিছুতেই মিলাতে পারছি না।”
কুশলের মুখে এমন কথা শুনে আমজাদ হোসেন এর মাঝে ভ*য় ও চিন্তা ভাব দ্বীগুণহারে বেড়ে যায়। আমজাদ হোসেন আমতা আমতা করে বললেন….
—“এ-এসব ক-কি বলছেন আ-আপনি! আ-আমি ক-কেনো আপনাকে আ-আ*হত ক-করার জন্য ল-লোক পাঠাতে যাবো? আমার উপর এতো বড় ম-মি*থ্যে অ*প*বাদ দিবেন না আপনি। আমাকে ও আমার পরিবারকে ছেড়ে দিন।”
কুশল একজন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বললো…
—“ঐ চাষীকে এখানে নিয়ে এসো।”
গার্ডটি চলে যায় চাষীকে আনার জন্য। চেয়ারম্যানের আর বুঝতে বাকি নেই কুশল কোন চাষীকে আনার জন্য গার্ডকে পাঠিয়েছে। কিছুসময় পর হুইলচেয়ারে বসারত অবস্থায় সেই চাষীটিকে নিয়ে গু*দা*ম*ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে গার্ডটি। চাষিটিকে ক্রমশ নিজের দিকে অগ্রসর হতে দেখে চেয়ারম্যানের চোখে-মুখে ভ*য়ে*র ছাপ স্পষ্ট হয়। চেয়ারম্যান ভী*ত দৃষ্টি নিয়ে চাষীকে একবার দেখছেন তো আরেকবার কুশলকে দেখছেন। গার্ডটি চাষিটিকে কুশলের হাতের ডান পার্শে এসে রাখতেই কুশল শান্ত স্বরে চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“এনাকে কি চিনতে পারছেন চেয়ারম্যান সাহেব?”
চেয়ারম্যান কোনোরকমে নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করে বললেন….
—“ন-না-না তো কে উনি? আমি চিনি না ও-ওনাকে।”
চেয়ারম্যানের মুখে এমন কথা শুনে চাষিটি উচ্চস্বরে বললেন….
—“মালিক..উনি মি*থ্যে কথা বলছেন। উনিই আমাকে আপনাকে আ*হ*ত করার জন্য পাঠিয়েছিলেন।”
আমজাদ হোসেন উল্টো স্বরে বললেন….
—“এ-এই কে তুই? আমার নামে এসব মি*থ্যে কথা কেনো বলছিস? কে তোকে পাঠিয়েছে কুশল চৌধুরী সাহেবের সামনে আমার নামে মি*থ্যে অ*প*বাদ র*টা*নোর জন্য? কার থেকে টাকা খেয়েছিস তুই বল?”
—“মালিক…আমি আমার মায়ের কসম কা*ই*টা কইতাছি আমি একটা শব্দও মি*থ্যা বলি নি। চেয়ারম্যান নিজেরে বাঁচানোর লাইগা এমন নাটক করতাছে।”
আমজাদ হোসেন প্রতিত্তুরে কিছু বলতে নিবেন সেইসময় কুশল হাত উঠিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন….
—“চেয়ারম্যান সাহেব..আপনার অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার চেষ্টা করা, চেহেরায় ফুটে উঠা ভ*য়ে*র ছাপ ও আটকানো স্বরে বলা কথাগুলো শুনেই বোঝা যাচ্ছে আপনি মি*থ্যে বলছেন। এখন মি*থ্যে নাটক করে সময় ন*ষ্ট না করে সত্যিটা বলে দিন নয়তো আপনার মুখ দিয়ে সত্য বের করার জন্য আমার নেওয়া পদক্ষেপটি আপনার জন্য সুবিধাজনক হবে না।”
কুশলের কথাগুলোকে হালকা ভাবে নিয়ে চেয়ারম্যান না*ক*চ স্বরে বললেন….
—“যেখানে আমি কোনো মি*থ্যে কথা বলিই নি সেখানে কোন লুকিয়ে রাখা সত্য আপনাকে বলবো?”
চেয়ারম্যানের মুখ থেকে সত্য বের করতে কুশল ওর বা’হাত দিয়ে একজন গার্ডকে ইশারা করতেই গার্ডটি চেয়ারম্যানের ছেলে আরিফের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। আরেকজন গার্ড আরিফের দিকে ব*ন্দু*ক তাঁক করে রাখে যেনো আরিফ ছোটার চেষ্টা না করে। আরিফের পাশে দাড়ানো গার্ডটি আরিফের দু’হাতের বাঁধন খুলে ওর হাত দুটো কমোরের পিছনে নিয়ে বেঁধে দেয়। সেইসময় উপর থেকে একটি দড়ি নেমে আসলে গার্ডটি ঐ দড়িটি আরিফের গলায় বেঁধে দিয়ে ওর পাশ থেকে সরে দাঁড়িয়ে খুঁটির পাশে থাকা সুইচটিতে চাপ দেয়। যার ফলে আরিফের পায়ের নিচে থাকা লোহার ঢাকনা ওয়ালা মেঝেটি সরে যেতেই ওর গলায় ফাঁ*স লাগে। আরিফ নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে শুরু করে। কিন্তু হাত বাঁধা থাকায় নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হয় আরিফ। নিজের একমাত্র ছেলেকে নিজের চোখের সামনে ফাঁ*সি*তে ঝুলে ছটফট করতে দেখে শরিফা বেগম কান্নায় ভে*ঙে পড়েন আর কুশলকে অনুরোধ করতে থাকেন আরিফকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আমজাদ হোসেন আর কোনো উপায় না পেয়ে অনুরোধের স্বরে বললেন…
—“চৌধুরী সাহেব…আমার ছেলেটাকে ছাইড়া দেন। ও ম*রে যাবে। ওরে ছাইড়া দেন, আমি স্বীকার করছি আমি আপনাকে আ*হ*ত করার জন্য ঐ চাষীরে পাঠিয়েছিলাম। কোনো পাঠিয়েছিলাম সেই সব সত্যিও বলছি আমি আপনাকে। আমার পোলারে ছেড়ে দিতে বলেন।”
চেয়ারম্যানের কথা শুনে কুশল হাত দিয়ে ইশারা করতেই গার্ডটি আবারও সুইচে চাপ দেয় যার ফলে আরিফের পায়ের নিচের ঢাকনা মেঝেটি আগের ন্যয় হয়ে যায়। নিজের পায়ের নিচে মেঝের সাপোর্ট পাওয়া মাত্র আরিফ জোড়ে জোড়ে কাশতে শুরু করে। মৃ*ত্যু*র খুব কাছে থেকে যেনো বেঁচে ফিরলো সে।
চলবে ইনশাআল্লাহ………
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৩২)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৮৪)
চেয়ারম্যানের ছেলে আরিফের গলা থেকে ফাঁ*সে*র দড়িটা খুলে আগের ন্যয় দুই খুঁটির সাথে ওর দুইহাত বেঁ*ধে দেয় একজন গার্ড। অন্যদিকে চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেনের সামনে বসে কুশল নিজের ফোনের ভিডিও রেকর্ড অন করে ফোনটি ওর পাশে দাঁড়ানো একজন গার্ডকে ধরতে দিয়ে চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে বললো…
—“এবার বলুন আমার সাথে আপনার স*ম*স্যা*টি আসলে কোথায় হয়েছে যার রে*শ ধরে আপনি আমাকে মা*র*তে লোক পাঠালেন।”
চেয়ারম্যান একপলকে নিজের ছেলের নি*স্তে*জ হয়ে যাওয়া রূপ দেখে নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে অসহায় মানুষ বলে মনে করছেন। পরক্ষণেই আর কিছু ভেবে সময় ন*ষ্ট না করে বললেন…..
—“আগামীকাল যেই চাষীর মেয়েকে ধ্ব*র্ষ*ণে*র অ*প*রা*ধে আপনি মেম্বার ছেলেকে উপযুক্ত শা*স্তি দেওয়ার জন্য বিচার বৈঠকখানার আয়োজন করেছিলেন সেই বৈঠকখানা ভে*স্তে দেওয়ার জন্যই আমি আপনাকে আ*হ*ত করতে লোক পাঠিয়েছিলাম।”
চেয়ারম্যানের কথায় কুশল কিছুটা অবাক হয়ে বললো..
—“মেম্বারের ছেলের জন্য বসা বিচার বৈঠকখানা ভে*স্তে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে যদি মেম্বার আমাকে আহত করার জন্য লোক পাঠাতেন তাহলে বুঝতাম তিনি নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য এমন কাজ করেছেন। কিন্তু মেম্বারের এই কাজ আপনি কেনো করলেন? আপনার কোন স্বা*র্থ হা*সি*ল হতো এই কাজ করে?”
কুশলের প্রশ্ন শুনে আমজাদ হোসেন একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন….
—“কারণ চাষীর মেয়েকে মেম্বারের ছেলে একা ধ্ব*র্ষ*ণ করে মে*রে ফেলার চেষ্টা করে নি। মেম্বারের ছেলের সাথে আমার ছেলেও ছিলো। যদি আগামীকাল মেম্বার এর ছেলের বিচার বৈঠকখানা বসতো তাহলে মেম্বারের ছেলে স্বীকারোক্তিতে ওর সঙ্গ দেওয়ার জন্য আমার ছেলের নাম ও বলতো। তখন আমার ছেলের জীবনেও ধ্ব*র্ষ*ণে*র কালো দাগ পড়তো, আমার মান-সম্মান ন*ষ্ট হতো, এমনকি আমাকে চেয়ারম্যান পদ থাইকা ইস্তফাও নিতে হতো। নিজের ছেলের জীবন, আমার সম্মান ও চেয়ারম্যানের ক্ষমতা বাঁচানোর জন্যই আমি আমার জমিতে কাজ করে এই চাষীকে নিজের মেয়েদের ই*জ্জ*ত ন*ষ্ট করার ভ*য় দেখিয়ে আপনাকে আ*হ*ত করার জন্য পাঠিয়েছিলাম।”
চেয়ারম্যানের কথাগুলো শুনে কুশলের সামনে এখন পুরো বিষয়টা স্বচ্ছ পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যায়। কুশল ওর দু’চোখ বন্ধ করতেই সাদিকের নিষ্পাপ মুখশ্রী যেনো ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে। পরক্ষণেই কুশল নিজেকে সামলে নিয়ে শান্ত স্বরে বললো…
—“সব বাবা-মায়ের কাছেই তাদের নিজ নিজ সন্তানরা অনেক প্রিয় হয়। কিন্তু সন্তান যখন পা*পে*র পথে অগ্রসর হতে শুরু করে তখন প্রতিটি বাবা-মায়ের উচিত কঠোর ভাবে নিজের সন্তানদের শাষণ করে ভালোর পথে আনার চেষ্টা করা। এটা প্রতিটি বাবা-মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মাঝে পড়ে। সন্তানরা ভু*ল করলে, পা*প করলে সেই ভু*লকে প্রশ্রয় দেয় যেই বাবা-মায়েরা তারা নিজ হাতে নিজের সন্তানদের জীবন ন*ষ্ট করে। আপনার ছেলে ধ্ব*র্ষ*ণে*র মতো একটা জ*ঘ*ন্য কাজ করেছে কোথায় আপনি আপনার ছেলেকে শাস্তি মাধ্যমে উচিত শিক্ষা দিবেন যেনো পরবর্তীতে কোনোরূপ খা’রাপ কাজে লি*প্ত হওয়ার আগে শত বার চিন্তা করে তা না করে নিজের ছেলের অ*প*রা*ধকে ধা*মা*চা*পা দেওয়ার চেষ্টা করলেন? কেমন বাবা আপনি? আপনার মুখে থু*তু ফেলতেও ঘৃ*ণা হচ্ছে আমার। আজ যদি ঐ চাষীর মেয়ের জায়গায় আপনার নিজের মেয়ে ধ্ব*র্ষ*ণে*র শিকার হতো তখনও কি আপনি চাইতেন আপনার মেয়ের ধ্ব*র্ষ*ণ*কারী নিজের করা অ*ন্যা*য়ে*র জন্য কোনোরূপ শা*স্তি না পেয়ে হাসিখুশি ভাবে চলাফেরা করুক?”
কুশলের কথাগুলো শুনে চেয়ারম্যান লজ্জায়, অ*প*মানে মাথা নুইয়ে রেখেছেন। কিছুসময় নিরব থাকার পর কুশল আবারও বললো….
—“বাহিরে মাটির উপর সাদা চাদরে মুড়ানো প্রাণহীন অবস্থায় আমার খুব কাছের একজন মানুষ শুয়ে আছেন। আজ যদি তার আগে আমি গাড়ি থেকে নামতাম তাহলে ঐ জায়গায় আমার লা*শ পড়ে থাকতো। তখন আপনাদের ছেলেদের জীবন, সম্মান ও পদ অক্ষত থাকতো। কিন্তু আপনারা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন যে আমাদের সকলের উপরেও একজন আছেন। যার কাছ থেকে কোনো অ*ন্যা*য়*কারী, পা*পী*রা নি*স্তার পায় না। সকল পা*পীদের নিজ নিজ কর্মের জন্য উচিত ফল দেন তিনি। নি*মি*ষের মধ্যেই অ*ন্যা*য়*কারীদের জীবন ধ্বং*স স্তুূপে পরিণত করে দেন তিনি। তাই আগামীকাল বিচার বৈঠকখানা বসবেই। সেখানে আপনার ছেলে ও মেম্বারের ছেলে উচিত শিক্ষা লাভ করবে। এর পাশাপাশি আমার উপর আ*ক্র*মণের চেষ্টা করতে গিয়ে আমার পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্টকে খু*ন করার জন্যও যথাযথ শা*স্তি পাবেন আপনি। কেও বাঁচাতে পারবে না আপনাকে।”
আমজাদ হোসেন শা*স্তি*র কথা শুনে উচ্চস্বরে বললেন…
—“শা*স্তি পাওয়ার হলে আমি একা কেনো পাবো? ঐ মেম্বার ও আমাকে ব্লাকমেইল করে বলেছিলো ওর ছেলেকে শা*স্তি*র হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা না করলে ও আমার ছেলের গোপনীয়তাও ফাঁ*স করে দিবে। তাহলে এই কাজে সেও কি সমান ভাবে দো*ষী হলো না? শা*স্তি কি ওর ও প্রাপ্য নয়? আর ছোট খান সাহেব! ওনার কি হবে? উনি তো সর্বক্ষণ আপনার ও গ্রামবাসীর ক্ষ*তি কিভাবে করা যায় সেই চিন্তাভাবনা নিয়ে ঘুরেন। অনেকবার ক্ষ*তি করার চেষ্টাও করেছেন। এবারও ওনার কথানুযায়ীই তো আমি আপনাকে আ*হ*ত করতে লোক পাঠিয়েছিলাম। উনি তো সবথেকে বড় দো*ষী। ওনার ও যথাযথ শা*স্তি হওয়া উচিত। বিচার বসাইলে সব পা*পী*দের নিজ নিজ কর্মনুযায়ী শা*স্তি দিতে হবে আপনাকে। যদি এমনটা আপনি করতে পারেন তাহলে আমি আমার জন্য নির্ধারণ করা শাস্তি মাথা পাইতা মাইনা নিমু।”
কুশল শান্ত স্বরে বললো…
—“কোনো পা*পীই পা*প কর্ম করে নি*স্তার পাবে না চেয়ারম্যান সাহেব। মুবিন খান ভিষণই ধু*র*ন্ধ*র স্বভাবের মানুষ। সে এমন ভাবে প্রতিটি কাজ করে যেনো কাজ অসম্পূর্ণ হলেও তার উপর কোনোরূপ দো*ষ না পড়ে। উপযুক্ত প্রমানের অভাবে সে প্রতিবারই শা*স্তি*র হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এবার আর বাঁচতে পারবে না মুবিন খান। এতোদিন ধরে করে আসা পা*প কর্মের জন্য উচিত শিক্ষা এবার সে পাবে। ওর বিরুদ্ধে শ*ক্ত প্রমাণ এবার আমার হাতে আনার সুব্যবস্থাও আমি আজই করবো।”
কুশলের এমন কথায় চেয়ারম্যান অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ওর দিকে। পরমুহূর্তেই কুশল চেয়ারম্যানের উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির রেখে আবারও বললো…
—“মুবিন খানের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ এনে দেওয়ার কাজ সম্পন্ন করবেন আপনি চেয়ারম্যান সাহেব।”
চেয়ারম্যান অবাক স্বরে বললেন….
—“আ-আমি? আমি কিভাবে ওনার বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ এনে দিবো চৌধুরী সাহেব?”
অতঃপর কুশল চেয়ারম্যানকে তার কাজ খুব ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়ে বললো….
—“আপনার স্ত্রী ও ছেলে কিন্তু আমার কাছে ব*ন্দী হয়ে আছে। আপনার ছেলে যে কাজ করেছে তার জন্য ওকে প্রা*ণে মা*র*তে আমার হাত একটুও কাঁ*প*বে না। তাই কোনোরকম চালাকি করার চেষ্টা না করে যতোটুকু করার কথা বুঝিয়ে বললাম ঠিক ততোটুকুই করা হয় যেনো।”
চেয়ারম্যান ইতিমধ্যে বুঝতে পেরেছেন কোনো ভাবেই শা*স্তি*র হাত থেকে তিনি বা তার ছেলে বাঁচতে পারবে না। তাই নিরুপায় হয়ে কুশলের কথানুযায়ী কাজ করতে তিনি রাজি হয়ে যান। অতঃপর কুশল চেয়ারম্যানকে বাঁ*ধা অবস্থা থেকে মুক্ত করে দেন এবং কয়েকজন গার্ডসদের সাথে মুবিন খানের বাসায় যাওয়ার জন্য পাঠিয়ে দেন। কুশলও চেয়ার ছেড়ে উঠে গু*দা*ম*ঘর থেকে বেড়িয়ে একটা গাড়ি নিয়ে বাহিরে চলে যায়।
(৮৫)
তরুনিমা সন্ধ্যার রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই দেখতে পায় সন্ধ্যা মলিন মুখশ্রী নিয়ে জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে৷ তরুনিমা ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে সন্ধ্যার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধের উপর একহাত রেখে বললো….
—“সন্ধ্যা..এসেছো পর থেকে এক ফোঁটা পানিও মুখে তুলো নি। এখন একটু কিছু খেয়ে নাও। তোমার শরীর এমনিতেই অনেক দূ*র্ব*ল এই সময় না খেয়ে দু*শ্চি*ন্তা করলে শরীর আরো খা*রাপ করবে।”
সন্ধ্যা মলিন কন্ঠে বললো….
—“ভাবী..এমনটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। কখনও ভাবি নি জীবনে এমন ও কোনো দূ*র্বি*ষ*হ সময় পাড় করতে হবে। বড় ভাইয়া, মেজো ভাইয়ার মতোই সাদিক ভাইকেও আমি আমার আপন একজন মনে করতাম সবসময়। আজ মৃ*ত্যু*র পূর্বে উনি যখন খুব শক্ত করে আমার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধরেছিলেন তখন মনে হচ্ছিলো আমার ভিতরটা ভে*ঙে আসতেছে। উনি হয়তো আমাকে কিছু বলার জন্য খুব চেষ্টা করছিলেন কিন্তু ওনার শরীর ওনাকে সেই শক্তিটুকুও দেন নি। আমার দিকে স্থির করা ওনার অশ্রুসিক্ত চোখ জোড়া ফেঁ*টে যেনো ওনার মুখ দিয়ে বের না হওয়া কথাগুলো বের হতে চাইছিলো। কিন্তু ওনার চোখের সেই ভাষাগুলো আমি বুঝতে পারি নি। আমার কোলের উপর মাথা রাখা অবস্থায় উনি শেষ নিঃশ্বাস ত্য*গ করেছেন এখনও আমার এই কথাটা বিশ্বাস করতে ভিষণ ক*ষ্ট হচ্ছে ভাবী।”
তরুনিমা একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো….
—“বাস্তবতা ভিষণ নি*র্ম*ম হয় সন্ধ্যা। জীবনে যখন বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হয় তখন কিছু চরম সত্যকে বুকের ভিতর পাহাড় সমতুল্য কষ্টগুলো চা*পা দিয়ে হলেও মেনে নিতে হয়। আজ সাদিক ভাই যদি আগে গাড়ি থেকে না নেমে তোমার মেজো ভাইয়া নামতেন তাহলে হয়তো সাদিক ভাইয়ের জায়গায় তিনি থাকতেন। সাদিক ভাই নিজের জীবন বি*স*র্জ*ন দিয়ে ওনাকে বাঁচিয়েছেন। উনার এই ঋণ আ*মৃ*ত্য কেও ভুলতে পারবো না। দেখিও সাদিক ভাইয়ের মৃ*ত্যু*র জন্য দা*য়ী একটা প্রাণীকেও নি*স্তার দেবেন না তোমার মেজো ভাইয়া। সাদিক ভাই যেনো জান্নাতবাসী হতে পারেন এই প্রার্থনা করা ছাড়া আমার বা তোমার করণীয় কিছুই নেই।”
তরুনিমার কথাগুলো শুনে সন্ধ্যা তরুনিমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে নিরবে অশ্রুপাত করতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ……….