#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৮০)
নিজঘরে বিছানায় বসে ল্যপটপ দেখছিলো কনক। সেইসময় কনকের মা সাবরিনা চৌধুরী কনকের রুমের ভিতরে প্রবেশ করে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে শান্ত স্বরে বললেন….
—“কি রে বাবা কি করছিস? বউমা কে দেখছি না তো। কোথায় সে?”
কনক ল্যপটপেই দৃষ্টি স্থির রেখে বললো….
—“এইতো একটা ইমেইল পাঠাতে হবে অফিসের একজন ক্লাইন্টকে সেটাই রেডি করছিলাম। অনন্যা মনে হয় ওয়াশরুমে গিয়েছে মা। আর তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেনো বসো এখানে।”
সাবরিনা কনকের কিছুটা কাছে এগিয়ে এসে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই বললো…
—“বসে আর কাজ নেই। তোর সাথে আমার কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলার ছিলো। বউমা যখন তখন ওয়াশরুম থেকে বের হতে পারে। তাই হাতের কাজ শেষ হলে একবার আমার রুমে আসিস। যা বলার তখনি বলবো।”
—“ঠিক আছে মা..আমি একটু পরই আসছি তাহলে।”
—“আচ্ছা।”
এই বলে সাবরিনা কনকের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।
.
.
.
নিজরুমে বসে আছেন সাবরিনা। কনকের রুম থেকে নিজ রুমে এসেছেন বেশ অনেক সময় পেরিয়ে গিয়েছে। সায়মন সকাল সকালই অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গিয়েছেন। সেইসময় সাবরিনা লক্ষ্য করলেন কনক তার রুমে প্রবেশ করছেন। সাবরিনা শান্ত স্বরে বললেন….
—“দরজাটা ভিতর থেকে বন্ধ করে দে বাবা।”
কনক মায়ের কথানুযায়ী দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করে বিছানায় তার সামনা-সামনি এসে বসতেই সাবরিনা শান্ত স্বরে বললো……
—“আমার আর তোর বাবার প্রতি তোর বিশ্বাস, ভরসার জায়গা ঠিক কতোটা মজবুত বলতো!”
মায়ের মুখে হঠাৎ এরূপ ধরণের প্রশ্ন শুনে কনক কিছুটা অবাক হয়ে বললো….
—“এসব কি প্রশ্ন করার মতো কোনো বিষয় হলো মা! তোমাদের জন্য আমি পৃথিবীর আলো দেখতে পেরেছি। আল্লাহর রহমতে একটা সুস্থ সুন্দর জীবন পেয়েছি। তোমাদের থেকে সবসময় সবরকম পরিস্থিতিতে অফুরন্ত ভালোবাসা পেয়েছি। আর সেই তোমাদের উপর আমার বিশ্বাস, ভরসার স্থান কি ঠুনকো হতে পারে বলো!”
—“হুম বুঝলাম। কিন্তু আজ তোকে কিছু সত্য সম্পর্কে অবগত হতে হবে বাবা।”
—“সত্য! কিসের সত্য? কি বিষয়ে কথা বলছো তুমি মা?”
—“অনেক দিন ধরেই আমি আর তোর বাবা ভাবছিলাম অতীতে চাপা পড়া সত্যগুলো তোর সামনে তুলে ধরতে। কিন্তু তুই বিষয়গুলো কিভাবে নিবি, আমাদের ভু*ল বুঝে যদি আমাদের সাথে আর সম্পর্ক না রাখিস তখন আমাদের কি হবে। এসব নানান চিন্তা করে করে তোকে আর কথাগুলো বলা হয়ে উঠে নি। কিন্তু সময় যতো যাচ্ছে ততোই মনে হচ্ছে তোর থেকে সত্যগুলো আর না লুকিয়ে রাখাই ভালো। আমরা আর ক’দিনই বা বাঁচবো! তাই আজ সব চিন্তা, দ্বি*ধা বোধকে মনের এক কর্ণারে চা*পা দিয়ে রেখে তোকে সম্পূর্ণ সত্য বলবো বলেই মনঃস্থির করেছি। আমার সবকথাগুলো মাথা ঠান্ডা রেখে শুনবি। আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো কথা বলবি না কেমন!”
কনক ওর মায়ের হাতের উপর হাত রেখে বললো….
—“নিজের সন্তারের কাছে কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলতে এতো বেশি চি*ন্তা বা দ্বি*ধা বোধ করলে কি চলে মা! তুমি নিশ্চিন্ত মন নিয়ে আমাকে যা বলার বলতে পারো।”
সাবরিনা কনকের কথা কিন্ঞ্চিত পরিমাণ ভরসা পায়। অতঃপর তারা অতীতে কুশলের বাবা-মায়ের সাথে যা যা করেছেন সেই সব সত্যঘটনা কনককে খুলে বললেন। সাবরিনার মুখে তার নিজের মা-বাবা ও চাচা-চাচীর তার নিজের বড়বাবা-বড় মায়ের সাথে করা নি*ষ্ঠু*রতা ও অ*ন্যা*য় কর্মের সম্পূর্ণ বর্ণনা শুনে কনক পুরোপুরি ভাবে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। সাবরিনা ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে আবারও বললেন…..
—“কুশল আর সন্ধ্যা তোর নিজের ভাই-বোন নয়। ওরা দু’জনেই তোর বড়বাবা-বড় মায়ের সন্তান। বংশের নিয়ম অনুযায়ী ৩০ বছর পূর্ণ হলে কুশলের সম্পত্তির সিংহভাগ অংশ পাওয়ার কথা ছিলো আর তোর কুশল যে পরিমাণ সম্পত্তির মালিকানা লাভ করতো তার অর্ধেক পাওয়ার কথা ছিলো আর সর্বশেষ ও সবথেকে কম অংশটুকু রাজবীরের পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এমন ফা*ল*তু নিয়ম আমরা বা তোর চাচা-চাচী কিছুতেই মেনে নিতে পারি নি। আমরা তোর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেছি আর তোর চাচা-চাচী রাজবীরের। অতঃপর পথ পরিষ্কার করতে ২০ বছর আগে আমাদের ঐ কাজটা করতে হয়েছিলো। দেড় বছর পর কুশল ৩০ বছরে পা দিবে। তখন সে সম্পত্তি ২য় ভাগের মালিকানা লাভ করবে। আর তখনি ওর অস্তিত্বও ওর মায়ের মতো এই পৃথিবীর বুক মুছে ফেলার ব্যবস্থা করবো আমরা। সন্ধ্যার তো বিয়ে হয়েই গিয়েছে। তাই ওকে নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কুশলের ভাগের সম্পত্তি আর রাজবীরের নিজের ভাগের সম্পত্তি একত্র করলে তুই যে পরিমাণ সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেছিস তখন তার সমতুল্য হয়ে যাবে। আর এভাবেই আমাদের পরিকল্পনা পুরোপুরি ভাবে সাকসেসফুল হবে।”
কনক এখনও নিশ্চুপ, স্তব্ধ। সাবরিনা কিছুসময় নিরব থাকার পর আবারও বললেন….
—“শুধুমাত্র তোর ভালোর কথা চিন্তা করেই আমি আর তোর বাবা আপনজনদের সাথে বিশ্বাস*ঘা*ত*ক*তা ও তাদের খু*ন করতেও দ্বি*ধা বোধ করি নি। এই যুগে কেউই অল্প কিছু পেয়ে সন্তুষ্ট হয় না। আমরা তো আর যুগের বাহিরে নই। তাই আমরাও অল্পতে সন্তুষ্ট হতে পারি নি। যদি সেদিন বংশের নিয়ম মাথা পেতে মেনে নিতাম আমরা তাহলে তোর বড়বাবা আর বড়মায়ের ক্ষমতার নিচে কবেই চা*পা পড়ে মা*রা যেতাম। নয়তো এতো স্বাধীনতা, সংসারে কতৃত্ব চালানো, ব্যবসায় তোর বাবার নিজ ইচ্ছে মতো রাজত্ব করা এসব কিছুই হতো না। ওনাদের পায়ের তলা চে*টে খেয়ে খেয়েই দিন পার করতে হতো। তাই আমরা যা করেছি একদম ঠিকটাই করেছি। এ নিয়ে এতো যাবৎ এও আমাদের কারোর মনে বিন্দুমাত্র খারাপ লাগা বা অনুশোচনা কাজ করে নি। তুই তোর মাঝেও এসবের কোনো জায়গা দিস না। নিজের মধ্যে নিজের বাবা-মা, চাচা-চাচীর মতো মেন্টালিটি, চিন্তা করার ক্ষমতা ও সাহসিকতা জোগা তাহলেই পুরো বিষয়টাকে খুবই সাধারণ বলে মনে হবে তোর। আর দেড় বছর পর তোকে আর রাজবীরকে একত্র থেকে নিজেদের পথের কা*টা কুশলকে পথ থেকে একেবারের জন্য উ*ফ*রেও ফেলতে হবে বুঝলি! তারপর তোরা দু’জনে নিজেদের মতো করে রাজকীয় ভাবে নিজের জীবন কাটাতে পারবি।”
সাবরিনার বলা এতোসময়ের সবগুলো কথা যেনো কু*চ*কু*চে কালো বি*ষে*র রূপ ধারণ করে কনকের কান দিয়ে প্রবেশ করে সম্পূর্ণ মস্তিষ্কে ও মনে পুরোপুরি ভাবেই জায়গা দখল করে নিলো। ওর চোখের সামনে কোটি কোটি টাকা আর অফুরন্ত সম্পত্তি জলন্ত শি*খা*র ন্যয় ভাসছে। ঠোঁটে ফুটে উঠেছে পৈ*শা*চি*ক হাসির উজ্জ্বল রেখা। ছেলের চেহারার অবস্থা দেখেই সাবরিনার বুঝতে বাকি রয় না সে তার কাজে আজও সফল হয়েছে। টাকা আর সম্পত্তি যেকোনো মানুষের মাঝে লো*ভে*র সৃষ্টি করে খুব সহজেই যে নিজের বশীভূত করে নিতে পারে তার প্রমাণ আবারও কনককে দেখে পেয়ে গেলেন তিনি। কনক হাসিমুখে বললো……
—“মা..!তোমরা যা করেছো তা নিয়ে আজও তোমাদের মনে বিন্দুমাত্র খারাপ লাগা বা অনুশোচনা কাজ করে না তাহলে তোমাদের ছেলে হয়ে আমার ভিতর সেসব কাজ করবে এটা তো হতে পারে না তাই না! যদি সেদিন তোমরা এসব মেনে নিতে তাহলে আজ আমাকেই আমার পথ থেকে সকল কা*টা গুলো উ*ফ*রে ফেলার কাজটা করতে হতো। তোমরা দু’জনকে সরিয়ে খুব উপকার করেছো। কুশলকে নিয়ে এতো চিন্তা করো না। প্রতিটি সেকেন্ড পার হচ্ছে আর ওর মৃ*ত্যু*র দিন ওর দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। আর ওর মৃ*ত্যু নিশ্চিত করার যে শুভ কাজ তা আমি খুব যত্নসহকারে সম্পন্ন করবো। অতঃপর আরো তিনজন কা*টা কেও নিজের রাস্তা থেকে উ*ফ*রে ফেলার ব্যবস্থা করবো।”
কনকের শেষ কথাটুকু শুনে সাবরিনা কিছুটা অবাক হয়ে বললেন…
—“বাকি তিন জন মানে! কাদের কথা বলছিস তুই বাবা?”
—“আমি কারোর সাথে এই সব অর্থ-সম্পত্তি শেয়ার করতে পারবো না মা। যদি মালিকানা লাভ করতেই হয় তবে পুরো সম্পত্তির মালিকানা আমি একাই লাভ করতে চাই। কাওকে এক কানা কড়িও ভাগ দিবো না। রাজবীরকেও না। তাই কুশলের ভাগের সম্পত্তির মালিকানা লাভের পর রাজবীর আর ওর বাবা-মা কেও পথ থেকে চিরতরের জন্য সরিয়ে ফেলে সকল সম্পত্তির মালিকানা আমি একাই লাভ করতে চাই। পুরো চৌধুরী মেনশন ও কোম্পানি জুড়ে শুধু আমি একাই রাজত্ব চালাতে চাই। আমার সমতুল্য আর দ্বিতীয় কেও থাকবে না এই চৌধুরী মেনশনে। বুঝলে!”
সাবরিনা হাসিমুখে বললেন….
—“সাব্বাশ, এই না হলে বাঘের বা*চ্চা বাঘ এর মতো কথা। তোর জন্য আজ আমার ভিষণ গর্ব হচ্ছে রে বাবা। আমার নিজেকে সার্থক মনে হচ্ছে তোর মতো সন্তান জন্ম দিতে পেরেছি জন্য। তোর প্রতিটি কাজে আর সবরকম পরিস্থিতিতে তুই আমাকে আর তোর বাবাকে তোর পাশে ছায়ার মতো পাবি সবসময়। তবে এখন খুব সাবধান থাকিস। ওদের কাওকে তোর কোনো কথা বা আচারণে এটা বুঝতে দিবি না যে তুই সব সত্য সম্পর্কে ইতিমধ্যেই অবগত হয়ে গিয়েছিস। আর ওদের বিরুদ্ধে এতো বড় পরিকল্পনা করেছিস।”
—“চিন্তা করো না মা। তোমাদের ছেলে এতো কাঁচা মাথার খেলোয়ার না।”
(১৮১)
হাসপাতালে হুমায়রার কেবিনের বাহিরে রাখা চেয়ারেই নিরবতা বজায় রেখে তাহির, কুশল আর তরুনিমা পাশাপাশি বসে আছে। লম্বা অপেক্ষার প্রহর গুণছে ওরা তিনজন। কখন হুমায়রার ঘুম ভা*ঙ*বে! কখন ওর সাথে একটু কথা বলে নিজেদের অশান্ত, গ্লা*নি*তে ভরপুর হৃদয়টাকে শান্ত করতে পারবে তার অপেক্ষা করছে ওরা। কিছুসময় ওভাবেই পেরিয়ে যায় হঠাৎ একজন নার্স হুমায়রার কেবিন থেকে বেড়িয়ে ওদের তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“পেশেন্টের ঘুম ভে*ঙে গিয়েছে আপনারা চাইলে এক এক করে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারেন। তবে পেশেন্ট যেনো একদমই উত্তেজিত না হন আর বেশি কথা বলার চেষ্টা না করেন এই বিষয়ের দিকে খেয়াল রাখবেন।”
এই বলে নার্সটি চলে যান। ওদের তিনজনের মুখেই প্রশান্তির হাসির রেখা ফুটে উঠে। কুশল আর তরুনিমা একসাথে তাহিরকে উদ্দেশ্য করে বললো…
—“ভিতরে যাও আর সবার প্রথমে নিজের অনুভূতি আর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করো প্রিয়তমার নিকট। এতো সুমধুর সময় ও সুযোগ কিন্তু বারবার আসবে না।”
তাহির হাসিমুখে চেয়ার ছেড়ে উঠে হুমায়রার কেবিনের ভিতর প্রবেশ করে। তরুনিমা কুশলের একহাত জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা রেখে দু’চোখ বুঁজে ফেলে। কুশল অন্যহাত দিয়ে তরুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে শুরু করে।
#চলবে ইনশাআল্লাহ………..
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৪ পর্বের ২য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৮২)
হুমায়রা বেডের উপর শুয়ে থাকা অবস্থাতেই শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহির নিজের মুখশ্রীতে সংকোচ বোধ ও অনুতপ্ততার ছাপ স্পষ্ট রেখে ধীরপায়ে হুমায়রার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। হুমায়রার বেডের পাশে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়াতেই হুমায়রা ধীর স্বরে বললো…
—“চেয়ারটা টেনে বসো আমার পাশে।”
তাহির চেয়ার টেনে হুমায়রার পাশে বসে। এখনও সে ওর দৃষ্টি নিচের দিকেই স্থির করে রেখেছে। হুমায়রা একবার শুকনো ঢো*ল গি*লে। গলায় ক্ষ*ত থাকায় এই সামান্য ঢো*ক গি*ল*তে*ও ওর বেশ ক*ষ্ট হয়। হুমায়রার দু’হাতে অসংখ্য বার ধা*রা*লো ছুঁ*ড়ি দিয়ে আ*ঘা*ত করেছিলো রাজবীর। এখন অ*ব*শ ছাড়ার পর শরীরের একেকটা ক্ষ*ত স্থান বি*ষা*ক্ত ব্য*থা*য় পুরপুরে হয়ে আছে যেনো। সামান্য একটা ফুলের টো*কা লাগলেও যেনো ব্য*থা*য় ওর সর্বশরীর জমে যাবে। কিছুসময় রুমজুরে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করে। হুমায়রা সেই নীরবতার দেওয়াল ভে*ঙে ধীরস্বরে আবারও বললো….
—“খুব ভ*য় পেয়েছিলে তাই না! ভেবেছিলে আমি বুঝি সত্যিই ম*রে যাবো?”
হুমায়রার মুখে এরূপ কথা শুনেও তাহির নিশ্চুপ রয়। হুমায়রা আবারও শান্ত স্বরে বললো….
—“তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। তুমি নিশ্চয়ই খুশি হয়েছিলে এটা ভেবে, যে মেয়েটা ছ্য*চ*ড়া*র মতো তোমার পিছনে সবসময় ঘুরঘুর করতো, কারণে অকারণে ভালোবাসার কথা বলে পারলে তোমার মাথাই খেতো, তোমার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শুনতে তোমাকে কতোই না বিরক্ত করতো সেই মেয়েটার থেকে তোমার চিরতরের জন্য মুক্তি লা….!”
হুমায়রাকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে তাহির চট করে বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হুমায়রার উপর ঝুঁকে দু’হাত ওর মাথার দু’পাশে রেখে খুব যত্নসহকারে ওর ঠোঁটের ভাঁজে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেয়। হুমায়রা তাহিরের আকস্মিক এমন কাজে অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় যেনো। সঙ্গে সঙ্গে দু’চোখ খিঁ*চে বন্ধ করে নেয় সে। কতোসময় এভাবে পার হয়ে যায় তার আন্দাজ কেও করতে পারে না। তাহির হুমায়রার ঠোঁটের ভাঁজ থেকে নিজের ঠোঁট সরিয়ে ওর উপর ওভাবেই ঝুঁকে থাকা অবস্থাতেই জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে শান্ত স্বরে বললো…..
—“অসুস্থ তুই তাই ডোজটা কম দিলাম। তাই এতো বেশি মুখ চা*লা*স না তাহলে এই অ*সুস্থ অবস্থাতেই বার বার তোর মুখ বন্ধ করাতে এমন ডোজ তোর উপর বার-বার আমাকে এপ্লাই করতে হবে। প্রথমবার তাই ডোজের মাত্রা কম ছিলো কিন্তু পরের বার অনেক ভ*য়া*ব*হ হবে। তাই বুঝে শুনে হিসাব করে মুখ থেকে প্রতিটা শব্দ বের করিস।”
অতঃপর তাহির হুমায়রার উপর থেকে সরে আগের স্থানে বসে পরে। হুমায়রা এখনও দু’চোখ খিঁ*চে বন্ধ করে রেখেছে। হুমায়রার চেহারার এরূপ অবস্থা দেখে তাহিরের ঠোঁটে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠে। তাহির নিজের ঠোঁটে ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়া আলতো ভাবে ঘষা দিয়ে বললো…..
—“এতোদিন শুধু লোকমুখে শুনেছিলাম মেয়েদের ঠোঁটে যেই মিষ্টি থাকে তার কাছে নাকি পৃথিবীর সব দামী দামী সুস্বাদের মিষ্টিও হার মেনে যায়। আজ টেস্টটা পেয়ে বুঝলাম। লোকমুখে শোনা কথা সব মি*থ্যে হয় না।”
তাহিরের মুখে এরূপ কথা শুনে হুমায়রা চোখের আকৃতি ছোট করে তাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো….
—“মুখ ফুটে তো একবারও ভালোবাসার কথা বলতে পারলেন আর যেই না আমি উচিত কথা বলেছি ওমনি আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন!”
—“আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিয়েছিস নাকি তুই! এসেছি পর থেকে তো একা একাই বক বক করেই চলছিলি।”
—“বেশ করেছি বকবক করেছি। নি*র্ল*জ্জ পুরুষ কোথাকার। নিরীহ একটা মেয়েকে একলা পেয়ে তার ঠোঁটের স্বতিত্ত্ব হ*র*ণ করে নিলো।”
—“তুই আমার বউ হোস। তোর উপর আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। বউয়ের সামনে নি*র্ল*জ্জ হবো না তো কি অন্য নারীর সামনে হবো!”
—“আমাকে নিজের বউ হিসেবে মানো নাকি তুমি!”
—“বিয়ের পর কখনও বলেছি নাকি যে তোকে আমার বউ হিসেবে আমি মানি না!”
হুমায়রা কোনো প্রতিত্তুর করলো না। তাহির আবারও বললো…..
—“তরুনিমাকে আমি ভালোবাসতাম। আমার মনের সবটা জুড়ে ওর বসবাস ছিলো। মাঝে একটা দমকা হাওয়া এসে আমাদের দু’জনকে আলাদা করে দিলো। পাঁচ পাঁচটা বছর জে*লে বসে এই আশায় দিন পার করেছিলাম যে ঐ ন*র*ক থেকে বের হওয়া মাত্র আমি আমার ভালোবাসার মানুষটির মনে আমাকে নিয়ে তৈরি হওয়া সকল ভু*ল ধারণা ভে*ঙে দিয়ে আবারও আপন করে নিতে পারবো। কিন্তু বিধাতার পূর্ব থেকে লিখে রাখা বিধিলিপি খ*ন্ড*ন করার ক্ষমতা কি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের হাতে আছে! নেই। আমি হাজার চেয়েও তরুনিমাকে পাই নি। আমি জে*ল থেকে বেড়োনোর পূর্বেই সে চিরতরের জন্য কুশলের হয়ে গেলো। এতো বড় সত্যটা জানার পর আমার মনের উপর দিয়ে কি পরিমাণ ঝ*ড় চলে গিয়েছিলো সেটা আমি বুক চিঁ*ড়ে কাওকে দেখাতে পারি নি। নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলার শো*কে আমি প্রতিনিয়ত দ*গ্ধ হচ্ছিলাম সেইসময় তুই তোর ভালোবাসা অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ করতে শুরু করেছিলি আমার সামনে। তখন আমার মনে ভালোবাসা শব্দটির প্রতিও তীব্র রাগ কাজ করছিলো। তাই আমার প্রতি তোর নি*খাঁদ ভালোবাসা দেখেও আমি এড়িয়ে চলেছিলাম সবসময়। তোকে উঠতে বসতে ছোট বড় অনেক আ*ঘা*ত মূলক কথা শুনিয়েছিলাম। এতোকিছুর পরেও তুই আমার প্রতি সৃষ্টি হওয়া তোর ভালোবাসার অনুভূতি গুলোকে জীবিত রেখেছিলি। এ নিয়েও আমার ভিতর রাগ কাজ করতে শুরু করেছিলো। আবার মাঝেমধ্যে খারাপ লাগাও কাজ করতো। কিন্তু আমার রাগের সামনে সেই খারাপ লাগা গুলো তু*চ্ছ হয়ে যেতো বরাবর। তোর কান্না, তোর মুখে তোকে হারিয়ে ফেলার কথাগুলো শুনে বুকের বাম পাশটায় চিনচিনে ব্য*থা অনুভব হতো। যার কোনো যুক্তি যুক্ত কারণ আমি খুঁজে পেতাম না। এরপর আমাদের বিয়ের দিন চলে আসে। হাস্যকর হলেও সত্য সেদিন তরুনিমা আমার মনে ওর জন্য এখনও ভালোবাসার অনুভূতি গুলো জীবিত আছে শুনে আমাকে পর পর চারটে থা*প্প*ড় দিয়েছিলো। ওর সেদিন থা*প্প*ড় গুলো আর ওর কথাগুলো আমার মন-মানসিকতা পুরোপুরি ভাবে পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম হয়। আমাকে আমার অতীত থেকে বেড়িয়ে আসতে সর্বোচ্চ রকম ভাবে সহায়তা করে। তরুনিমার ঐ কাজের জন্য আমার ওর কাছে কৃতজ্ঞ রইবো আজীবন। সেদিন যদি ও আমাকে ওভাবে বুঝিয়ে না দিতো তাহলে হয়তো আমার রাগের পায়ের নিচে তোর জন্য কাজ করা খারাপ লাগা গুলো চিরতরের জন্য চা*পা পরে যেতো। আমার মনকে শ*য়*তা*ন নিজের দ*খ*লে নিয়ে নিতে সক্ষম হতো। আমার জন্য তরুনিমা আর কুশলের ভালোবাসা পূর্ণ জীবন ন*র*ক য*ন্ত্র*ণা*য় পূর্ণ হতো। আমার আর অ*মানুষগুলোর ভিতর কোনো পার্থক্য থাকতো না। বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কে যখন কোনো দম্পতি আবব্ধ হয় তখন তাদের দু’জনের উপর আল্লাহ তায়ালার অফুরন্ত রহমতও বর্ষিত হয়। আল্লাহ তায়ালা সেই দু’টি মানুষের মাঝে সব দূরত্ব কাটিয়ে তোলার ক্ষমতা প্রদান করেন। একে-অপরের প্রতি দূর্বলতা, ভালো লাগা, ভালোবাসার সৃষ্টি করে দেন ধীরে ধীরে। তেমনি তোর প্রতিও আমার দূর্বলতা, ভালোলাগার কাজ করতে শুরু হয় ধীরে ধীরে। যখন আমি তোকে বলেছিলাম আমার সময়ের প্রয়োজন তখন তোর ধৈর্যশক্তি আমাকে তোর প্রতি আরো আকৃষ্ট করে তুলেছিলো। গতকাল যখন ঐ ন*র*পি*শা*চটা আমার সামনেই তোকে নিয়ে নোং*রা কথা বলছিলো, তোর শরীরে বারংবার আ*ঘা*ত করছিলো তখন আমার বুকের ভিতরটা য*ন্ত্র*ণা*য় ছিঁ*ড়ে আসছিলো। আমি শত চেষ্টা করেও যখন ওকে থামাতে পারি নি তখন নিজেকে বড্ড অ*স*হা*য় মনে হচ্ছিলো জানিস। তোর মাথা নিজের কোলের উপর নিয়ে যখন তোর ক্ষ*ত স্থান গুলো পরিষ্কার করছিলাম তখন আমার বুকের ভিতরে ঠিক কি চলছিলো তা তোকে বলে বুঝাতে পারবো না। ধীরে ধীরে তোকে হারানোর ভ*য় আমার মনে এতোটা জেঁ*কে বসেছিলো। আমার কথা গুলো শোনার পর যদি তোর মনে হয় যে আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি তবে হ্যা আমি সত্যিই তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে ফেলেছি। তোকে ছাড়া আমি আমাকে আর কল্পনা করতে পারবো না। এই জীবন এই নিঃশ্বাস আমার জন্য হারাম হয়ে যাবে যেনো। ডাক্তার সাহেব যখন তোকে আমার থেকে ছাড়িয়ে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমি এতোটাই হিতাহিত ঙ্গান হারিয়ে ফেলেছিলাম যে আমি ভেবেছিলাম এখন তুই আমার থেকে দূরে চলে গেলে তোকে আমায় চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলতে হবে। পা*গ*লের মতো পা*গ*লা*মী করছিলাম। পরে তোকে একপলক দেখার জন্যও কেমন ছটফট করছিলাম। প্রতিটা সেকেন্ড নিজের কাছে কয়েক শত বছরের সমতুল্য মনে হচ্ছিলো। আজ যদি পুরো ৭০০কোটি মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয় যে আমি তোকে ভালোবাসি কিনা! তাহলে আমি চিৎকার করে বারবার এটাই বলবো হ্যা আমি তোকে ভালোবাসি। অনেক অনেক অনেক বেশিই ভালোবাসি আমি তোকে। তোকে আমি হারাতে পারবো না। সারাজীবনের জন্য আমার তোকে চাই। তোর প্রতি সারাটাজীবন ধরে আমি আমার ভালোবাসার অধিকার খাটাতে চাই। তোর কাছে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে আমি আমার ভালোবাসার অনুভূতি গুলোর বহিঃপ্রকাশ করতে চাই।”
এই বলে তাহির থেমে যায়। হুমায়রার দু’চোখ বেয়ে ঝরঝর করে নোনাজল গড়িয়ে পড়ছে। আজকের এই নোনাজলে নেই কোনো ক*ষ্ট, নেই কোনো খারাপ লাগার চিহ্ন। আছে শুধু অফুরন্ত খুশি আর আনন্দ। লম্বা সময় ধরে অপেক্ষা করার পর নিজের ভালোবাসার মানুষটির মুখ থেকে ভালোবাসার কথাগুলো শোনার পর যে মনের ভিতরে কতোটা প্রশান্তি কাজ করছে তা হুমায়রা কাওকে মুখে বলে বোঝাতে পারবে না হয়তো। তাহির হুমায়রার চোখের পানি যত্নসহকারে মুছে দেয়। খুশিতে হুমায়রার ঠোঁটজোড়া কাঁপছে। হুমায়রা কাপাস্বরে বললো…..
—“আমার মতো খুশি আর সুখি আজকে এই পৃথিবী জুড়ে আর দ্বিতীয় কেও হতে পারবে না।”
তাহির বাঁকা হেসে বললো…..
—“তোর ঐ নেশাক্ত ঠোঁট জোড়াকে এভাবে কাঁপাস না নয়তো আমি আমার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলবো।”
তাহিরের এরূপ কথায় লজ্জায় হুমায়রা নেতিয়ে পড়ে যেনো। গাল দু’টো হালকা লালচে বর্ণ ধারণ করে। তাহির হুমায়রাকে লজ্জা পেতে দেখে নিজের বুকের বামপার্শে একহাত রেখে বললো….
—“ইসস..এতো সুন্দর করে লজ্জা পেলে কি চলে?”
লজ্জায় এবার হুমায়রার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হওয়ার উপক্রম হয়। তাহির ঠোঁটে ঠোঁট চে*পে নিঃশব্দে হাসে।
#চলবে ইনশাআল্লাহ……….
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৪ পর্বের ৩য় অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৮৩)
বেশ কিছু সময় পর তাহির ওর ঠোঁটে হাসির রেখা স্পষ্ট রেখেই হুমায়রার কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে। তরুনিমা আর কুশল তাহিরের হাসির মাঝে ওর খুশিটা লক্ষ্য করে। ওদের ঠোঁটেও হাসির রেখা ফুটে উঠে। তাহির কুশলের পাশে এসে বসে লম্বা করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বললো…..
—“এবার আমাকে যেতে হবে।”
কুশল আর তরু তাহিরের উপর প্রশ্নসূচক দৃষ্টি স্থির করলে তাহির আবারও বললো….
—“হিমুর এমন অবস্থার জন্য যে দায়ী সে তো এখনও এই পৃথিবীতে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। ওর কর্মফল ওকে ভো*গ করাতে তো আমাকে যেতেই হবে তাই না! শুভ কাজ যতো তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করা যায় ততোই ভালো।”
তাহিরের এরূপ কথার মাঝে কুশল আর তরু স্পষ্টভাবে রাগ, ক্ষো*ভ ও ঘৃ*ণা*র রূপ দেখতে পায়। কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“বেশ চলো তাহলে।”
—“হুম চলো।”
এই বলে ওরা দু’জনেই বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কুশল তরুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…..
—“নিজের আর হুমায়রার খেয়াল রেখো। সময় মতো দু’জনেই খাবার খেয়ে নিও। কোনো স*ম*স্যা বুঝলে কল করো। আমরা চলে আসবো।”
তরুনিমা মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে ‘হ্যা’ সূচক জবাব দিয়ে বললো….
—“আচ্ছা ঠিক আছে। তোমরাও সাবধানে থেকো।”
অতঃপর কুশল আর তাহির একসাথে স্থান ত্যগ করে। তরুনিমা ওরা আড়াল না হওয়া পর্যন্ত সেদিক পানে চেয়ে থাকে।
(১৮৪)
নিজরুমে বিছানায় বসে আছেন সাগরিকা চৌধুরী। চোখে-মুখে তার চি*ন্তা ও অ*প*রা*ধ বোধের ছাপ স্পষ্ট ফুটে আছে। সাগরিকা চৌধুরী নিজে নিজে বলে উঠেন….
—“এভাবে আর চুপ থাকা যায় না। বড় বউমা আমাদের মাঝে নেই, বড় খোকা ২০ বছর যাবৎ কো*মা*য় আছে বলে ওদের উত্তরসূরীদের থেকে এতো বড় সত্য লুকিয়ে ওদের সাথে আর অ*ন্যা*য় করতে পারবো না আমি। সত্যটা জানার সম্পূর্ণ অধিকার আছে ওদের। ওরা সকালেই এখন ম্যচিউর হয়ে গিয়েছে। তাই সব সত্যটা জানার পর চিন্তা করে নিজেদের সামলে নেওয়ার মতো ক্ষমতাও আছে ওদের মাঝে। তাই খুব তাড়াতাড়ি আমি ওদেরকে সম্পূর্ণ সত্য সম্পর্কে অবগত করবো। নয়তো এর আগে মা*রা গিয়েও যে আমি শান্তু পাবো না।”
এই বলে সাগরিকা চৌধুরী একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
(১৮৫)
কুশলের গোপন আ*স্তা*নায় সেন্স লে*স অবস্থায় চেয়ারের সাথে বেঁ*ধে রাখা হয়েছে রাজবীরকে। রাজবীরের পরণে শুধু একটি হাফ প্যন্ট আছে। বুকের ডান পার্শে গু*লি লাগা স্থানটি থেকে গু*লি বের করে সেখানে ব্য*ন্ডে*জও করে দিয়েছে। রাজবীর যেই রুমে অবস্থান করছে রুমটির আকৃতি অনেক বড়। চারপাশে ব*ন্দু*ক হাতে কালো পোশাকধারী বেশ কিছু গার্ডসরা দাঁড়িয়ে আছে। সেইসময় কুশল আর তাহির মূল দরজা ভে*দ করে সেই কক্ষের ভিতর প্রবেশ করে রাজবীরের সামনে এসে দাঁড়ায়। দু’জন গার্ডস দু’টো চেয়ার নিয়ে কুশল আর তাহিরের পিছনে রাখতেই ওরা দু’জন সেখানে বসে পায়ের উপর পা তুলে। তাহির সূক্ষ্ণ ও রাগ-ক্ষো*ভে ভরপুর দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে রাজবীরের উপর। কুশল ওর হাতের ডান পার্শে দাঁড়িয়ে থাকা একজন গার্ডকে ইশারা করলে গার্ডটি কুশলের পাশে এসে দাঁড়ায়। কুশল শান্ত স্বরে বললো…..
—“এক বালতি কড়া ঠান্ডা পানি আনার ব্যবস্থা করো।”
কুশলের কথানুযায়ী গার্ডটি কিছুসময়ের মধ্যেই এক বালতি কড়া ঠান্ডা পানি নিয়ে আসে। অতঃপর কুশল ইশারা করলে গার্ডটি রাজবীরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর মাথার উপর বালতিটি ধরে সম্পূর্ণ পানি ঢেলে দেয়। কনকনে শীতের দিনে খালি শরীরে হুট করে এক বালতি কড়া ঠান্ডা পানি পড়ায় রাজবীর ঝাঁ*কি দিয়ে উঠে। বাঁধা অবস্থায় থাকার কারণে শুধু বসা অবস্থা থেকে উঠতে পারে না সে। মাথা এপাশ-ওপাশ ঘনঘন নাড়িয়ে মুখে ও চুলে লেগে থাকা পানিগুলো ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে। ওর শরীরের প্রতিটি লোমকূপ দাঁড়িয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। রাজবীর চোখ মেলে সামনে তাকাতেই কুশল আর তাহিরকে দেখতে পায়। অতঃপর নিজের চারপাশটা একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে সে। রাজবীরের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডটি ওর মাথার চুলগুলো একহাতে শক্ত ভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে ধরে ওর মাথাটা কিছুটা উপরের দিকে তুলে ধরে। রাজবীর হালকা ব্য*থা*য় চোখ-মুখ খিঁ*চে বন্ধ করে আবার তাকায়। তাহির দুই হাঁটুর উপর দুই হাত রেখে সামনের দিকে কিছুটা হে*লে বললো……
—“এতো অল্পতেই তোর চেহারার এমন অবস্থা হবে তা আমি আশা করি নি। এখনও তো অনেক লম্বা জার্নি বাকি। তোর জীবনে তুই নিরীহ শত শত মেয়েদের স্বতিত্ত্ব হ*র*ণ করে যতোটা য*ন্ত্র*ণা দিয়ে দিয়ে তাদের মে*রে ফেলে মজা নিয়েছিলিস তার থেকে হাজারগুণে বে*শি য*ন্ত্র*ণা দিয়ে আজ তোকে তিলে তিলে মে*রে সেইসব নারীদের মৃ*ত্যু*র প্র*তি*শো*ধ নিবো আমরা৷ খুব খুব খুবই ভ*য়ং*কর কিছু অপেক্ষা করছে তোর জন্য। তোকে একটু একটু করে মৃ*ত্যু*র দিকে ঢ*লে পড়তে দেখে তোর নিজ আ*ত্মা*ও থ*র*থ*রি*য়ে কেঁ*পে উঠবে।”
তাহিরের মুখে এরূপ কথাগুলো শোনার পরও রাজবীর এর চেহারায় বিন্দুমাত্র ভ*য়ে*র ছাপ স্পষ্ট হয় না। রাজবীর স্বশব্দে হেসে উঠে। কিছুসময় পর হাসি থামিয়ে বললো….
—“যেই হাত শত শত মানুষের শরীর কে*টে টুকরো টুকরো করেছে, যেই চোখ শত শত মানুষকে মৃ*ত্যু*র য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট*ফ*ট করতে দেখে আনন্দ পেয়েছে, যেই কান শত শত মানুষের ক*রু*ণ আ*র্ত*না*দ শুনেছে তাকে কিনা তুই য*ন্ত্র*ণা দিয়ে মে*রে ফেলার গল্প শোনাচ্ছিস! আর ভাবছিস আমি সেসব শুনে ভ*য়ে থ*র*থ*র করে কাঁ*প*বো! হাহ্ চাল হাট শা*লে।”
রাজবীরের মুখে এরূপ কথা শুনে তাহিরের রাগ এবার সপ্ত আসমান ছুঁই ছুঁই অবস্থা হয়ে দাঁড়ায়। তাহির রাগে হি*স*হি*সি*য়ে বললো……
—“তোর এমন পরিণতি করবো যে একটু পর তুই নিজেই আমাদের কাছে তোর নিজের মৃ*ত্যু*র জন্য ভি*ক্ষা চাইবি। কিন্তু আমরা তোকে এতো সহজে ম*র*তে দিবো না।”
এই বলে তাহির বসা অবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ওর প্যন্টের পকেট থেকে সেই ছোট ধাঁ*রা*লো ছুঁ*ড়ি*টা বের করে। সেই ছুঁ*ড়ি*টা দিয়ে গতকাল রাজবীর হুমায়রার শরীরে একের পর এক আ*ঘা*ত হে*নে*ছি*লো। ছুঁ*ড়ি*টা নিয়ে তাহিরে রাজবীরের সামনা-সামনি গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর চোখের সামনে নাড়াতে নাড়াতে বললো……
—“এই ছুঁ*ড়ি*টা দিয়ে তুই আমার হিমুর শরীরে আ*ঘা*ত করেছিলি তাই না? আজ এই ছুঁ*ড়ি দিয়েই তোর শরীরে যে কতোগুলো চিঁড় ধ*রা*বো তুই কল্পনাও করতে পারছিস না।”
তাহিরের এরূপ কথা শুনে রাজবীর কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই তাহির রাজবীরের ডান গালের উপর ছুঁ*ড়ি দিয়ে পাশাপাশি পরপর ৪বার টেনে দিয়ে হালকা চিঁ*ড় ধরায়। রাজবীর য*ন্ত্র*ণা*য় কুঁ*কি*য়ে উঠে। দাঁতে দাঁত চে*পে মুখ দিয়ে আ*র্ত*না*দ ঠেকানোর চেষ্টা করে। তাহির রাজবীরকে এমন করতে দেখে বাঁ*কা হেসে ওর গালের চিঁ*ড় ধরা স্থানের পাশে ছুঁ*ড়ি দিয়ে চওরা ভাবে আরেকটা টান মা*রে। অতঃপর গালের সেই স্থানের উপরের চামড়াটা হালকা উঠে আসলে তাহির তা হাত দিয়ে ধরে উল্টো পার্শে জোরে একটা টান মা*রে। সঙ্গে সঙ্গে রাজবীর স্বজোরে আ*র্ত*না*দ করে উঠে। এবারের য*ন্ত্র*ণা*টা আর চে*পে রাখার মতো সহনীয় ছিলো না। ওর গালের ২ ইন্ঞ্চি জায়গার চামড়া তাহির উঠিয়ে ফেলেছে। রাজবীর য*ন্ত্র*না*য় মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে আ*র্ত*না*দ করতে থাকে। চেয়ারের হাতল থেকে হাতের বাঁধন ছু*টা*নো*র ব্য*র্থ চেষ্টা করে।
তাহির বাঁ*কা হেসে বললো….
—“একটু আগেই তো কেমন গ*লা বা*জি করছিলি আর এখুনি য*ন্ত্র*ণা*য় এমন ছ*ট-ফ*ট করছিস কেন? সহ্য ক্ষমতা এতো তাড়াতাড়িই লো*প পেয়ে গেলো কি করে?”
রাজবীর য*ন্ত্র*ণা*য় ছ*ট-ফ*ট করতে করতেই উচ্চস্বরে বললো…..
—“আমাকে বেঁ*ধে রেখে আ*ঘা*ত করছিস কেনো? আসল পুরুষ যদি হোস তাহলে বাঁ*ধ*ন গুলো খুলে দে। তারপর দেখ কে কাকে আ*ঘা*ত করে।”
তাহির সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে স্বশব্দে হেসে উঠে বললো…..
—“আমি কা*পুরুষ নই। আমি আসল পুরুষ, তাই যে নারীরা সম্মান পাওয়ার যোগ্য তাদের যথেষ্ট সম্মান করি। আসল কা*পুরুষ তো তুই। তাই তো নারীরা নিরীহ, অবলা আর দূর্বল হয় জেনে-বুঝেও তুই তাদের উপর তোর মর্জি মতো অ*ত্যা*চা*র-নি*র্যা*ত*ন করে মজা নিয়েছিস বহুকাল ধরে। আর আজ নিজেকে তেমন পর্যায়ে দেখে খুব লজ্জা কাজ করছে তোর তাই না!”
রাজবীর ডান পার্শে ঘাড় বাঁ*কি*য়ে থু*থু ফেলে তাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো……
—“কিসের এতো রাগ, ক্ষো*ভ তোর আমার প্রতি? শুধুমাত্র তোর প্রিয়তমা স্ত্রীকে আ*ঘা*ত করেছি সে জন্য? নাকি অন্যকিছু?”
তাহির আবারও রাজবীরের সামনে কিছুটা ঝুঁকে হাতে থাকা সেই ধাঁ*রা*লো ছুঁ*ড়ি*টা দিয়ে রাজবীরের বাম গালের উপরও ডান গালের মতো একই ভাবে একটা একটা করে চিঁ*ড় ধরাতে ধরাতে বললো…..
—“তোর জন্য সাংবাদিক জগতের একজন সৎ ও উজ্জ্বল নক্ষত্র মিস.অরুনিমা সিকদারকে নিজের জীবন ত্যগ করতে হয়েছে। আর তার মৃ*ত্যু*র দা*য়*ভার আমার ঘাড়ের উপর এসে বর্তেছিলো যার ফলে আমাকে পাঁচ বছর যাবৎ জে*ল খা*ট*তে হয়েছিলো। তোর জন্য আমি আমার জীবন থেকে সেই পাঁচ পাঁচটা বছর হা*রি*য়ে ফেলেছি। তোর জন্য আমি আমার অতীতের ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়েছি। তোর জন্য আমার গানের উজ্জ্বল ক্যরিয়ার ন*ষ্ট হয়েছে , আমার অর্জিত সম্মান ধু*লোর সাথে মিশে গিয়েছে। নিজের অতীতকে পিছনে ফেলে আমার নতুন জীবন সঙ্গী হুমায়রার সাথে জীবনের পথচলা শুরু করার চেষ্টা করছিলাম। আর তুই আমার সেই নিষ্পাপ হিমুকে তোর এই নোং*ড়া হাত দিয়ে স্পর্শ করেছিলি, ওকে আ*ঘা*তে*র পর আ*ঘা*ত দিয়েছিলি। ওকে জীবন ও মৃ*ত্যু*র সাথে ল*ড়া*ই করার মতো পর্যায়ে ঠে*লে দিয়েছিলি। তোর জন্য শত শত মায়ের, বাবার বুক শূন্য হয়ে গিয়েছে। শত শত স্বামী তার প্রিয়তমা স্ত্রীকে হা*রি*য়ে ফেলেছে, শত শত সন্তানরা তাদের সবথেকে প্রিয় ও কাছের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র মমতাময়ী মা কে হারিয়ে ফেলেছে। অ*ন্যা*য় করতে করতে সমস্ত সীমা রেখা ল*ঙ্ঘ*ণ করে ফেলেছিস তুই। তোর পা*পে*র কলসী বহু আগেই পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। নিজের পা*প*কে আড়ালে রাখতে ৫ বছর ধরে বিদেশে গা ঢা*কা দিয়েছিলি। আর ৫ বছর পর স্বয়ং আ*জ*রা*ই*ল তোর জান এই দেশের মাটিতে ক*ব*জ করার জন্য তোকে টেনে এনেছে। আজই তোর জীবনের সেই শেষ দিন হবে রে জা*নো…র।”
তাহির এরূপ কথাগুলো বলতে বলতে রাজবীরের বুকের উপর দুই হাতের উপর একের পর এক ছুঁ*ড়িটি দেয় অগুনিত বার টা*ন মে*রে মে*রে চিঁ*ড় ধরিয়েছে। রাজবীর য*ন্ত্র*ণা*য় কেবল গ*লা কা*টা মুরগীর ন্যয় ছ*ট-ফ*ট করছে আর মুখ দিয়ে ক*রু*ণ আ*র্ত*না*দ বের করছে। কুশল শুরু থেকে এখনও পর্যন্ত আগের স্থানেই নিরব হয়ে বসে তাহিরের কার্যক্রম দেখছে। যেহেতু রাজবীরের কারণে সবথেকে বেশি ক্ষ*তি*র সম্মুখীন তাহির হয়েছে তাই আজ রাজবীরের খেল খ*ত*ম করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব সে তাহিরকেই দিয়েছে। কুশল আজ একজন নিরব দর্শকেরই ভূমিকা পালন করছে আর শেষ পর্যন্ত তেমনটাই করে যাবে।
য*ন্ত্র*ণা গুলো রাজবীরকে ধীরে ধীরে কা*বু করে ফেলছে। ওর মুখ দিয়ে লা*লা পড়তে শুরু হয়েছে। তাহির তবুও থেমে নেই। তাহির রাজবীরের চিঁ*ড় ধরা প্রতিটি স্থানের চওড়া পাশে ছোট ছোট করে চিঁ*ড় ধরিয়ে সেখানের চামড়াগুলো কিছুটা তুলে তুলে হাত দিয়ে তা টেনে টেনে যতোটা পারছে উঠিয়ে ফেলছে। এভাবে রাজবীরের গালের, বুকের উপরের, দুই হাতের, দুই পায়ের মাংসপেশির চামড়া গুলো তুলতে তুলতে ওর শরীরের ধরণই পরিবর্তন করে ফেলেছে তাহির। তাহিরের শরীরে থাকা সাদা রংয়ের টি-শার্টের অনেকগুলো জায়গায় রাজবীরের র*ক্ত ছিঁ*ট*কে ছিঁ*ট*কে এসে লেগেছে। চেয়ারের চারপাশটা র*ক্ত দিয়ে একাকার অবস্থা হয়ে গিয়েছে। চারপাশে সকল সুঠাম দেহের সাহসী গার্ডসাদের পর্যন্ত ভ*য়ে চোখ-মুখের ধরণ বদ*লে গিয়েছে। পরক্ষণেই তাহির লক্ষ্য করে রাজবীর আর য*ন্ত্র*ণা সহ্য করতে না পেরে সেন্স লে*স হয়ে গিয়েছে। তাহির রাজবীরের সামনে থেকে সরে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে কুশলকে উদ্দেশ্য করে বললো……
—“আচ্ছা ওর এই ক্ষ*ত স্থান গুলো উপরে যদি এখন শুকনো মরিচের গুঁড়ো আর লবণ ঢেলে দেওয়া যায় তাহলে কেমন হবে কুশল!”
কুশল শান্ত স্বরে বললো…..
—“প্র*তি*শো*ধ*টা তোমরা। তাই তোমার যেভাবে ইচ্ছে তুমি সেভাবেই নিতে পারো। যতোটা য*ন্ত্র*ণা দিয়ে মা*র*লে তোমার মনে শা*ন্তি কাজ করবে ততোটাই তুমি দাও। আমার কিছুই বলার নেই।”
—“ঠিক আছে।”
অতঃপর তাহির দু’জন গার্ডসকে ইশারায় ওর কাছে ডাকে। তারা কাঁ*পা কাঁ*পা পায়ে তাহিরের সামনে এসে দাঁড়াতেই তাহির বললো….
—“আরো এক বালতি কড়া ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা করো। আর সেই পানির ভিতর লবন আর শুকনো মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে তারপর নিয়ে আসবে ওকে!”
গার্ডস দু’জন শুকনো ঢো*ক গি*লে স্থান ত্যগ করে।
#চলবে ইনশাআল্লাহ……
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৪ পর্বের ৪র্থ অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৮৬)
বিয়ের পর থেকে নিলাদ্র সন্ধ্যাকে নিয়ে তালুকদার ভিলাতেই আছে। তাহিরের বাবা তমিজ তালুকদার ও মা রেবেকা তালুকদার অভিনয় করতে গিয়ে নিলাদ্রকে সত্যি সত্যিই নিজের আপন ছোট ছেলে হিসেবে মেনে নিয়েছে যেনো। র*ক্তে*র সম্পর্ক না থাকলেও যে গভীর ভালোবাসাপূর্ণ প্রকৃত সম্পর্ক তৈরি হতে পারে তা ওদের মাঝের বন্ধনটা না দেখলে বোঝা যেতো না হয়তো। নিলাদ্র আর সন্ধ্যার জন্য বরাদ্দকৃত রুমের বেলকনিতে রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো নিলাদ্র। সেইসময় সন্ধ্যা দু’হাতে দু’কাপ কফি নিয়ে বেলকনিতে প্রবেশ করে নিলাদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে ওর দিকে একটা কাপ বাড়িয়ে দিয়ে হাসিমুখে বললো…..
—“নিন ধরুন…আপনার জন্য এই প্রথম রান্নাঘরে গিয়ে এতো যত্ন করে কফি বানালাম। খেয়ে জানান কেমন হয়েছে। তবে খাওয়ার পর মি*থ্যে প্রশংসা করবেন না একদম। সত্যিটা বলবেন।”
নিলাদ্র হাসিমুখে সন্ধ্যার হাত থেকে কফির কাপটা নিয়ে তাতে একবার চুমুক দিয়েই চোখ-মুখ কুঁ*চ*কে ফেলে বললো…..
—“উমমম..এতো তেঁ*তো কেনো? কফি পাওডার বেশি দিয়ে ফেলেছিস নিশ্চয়ই।”
সন্ধ্যা ওর চেহারায় কিছুটা খারাপ লাগার ছাপ স্পষ্ট করে নিজের কফির কাপে একবার চুমুক দিয়ে বললো….
—“কোথায়! আমারটা তো তেতো হয় নি। এটাতে যেপরিমাণ কফি পাওডার আর মিষ্টি দিয়েছিলাম আপনার টাতেও তো একই পরিমাণ সব দিয়েছিলাম। তাহলে তেঁ*তো হলো কি করে?”
নিলাদ্র সন্ধ্যার দিকে নিজের কফির কাপটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো….
—“এখান থেকে এক চুমুক নিয়ে দেখ তাহলেই বুঝবি।”
সন্ধ্যা স্বাভাবিক ভাবেই নিলাদ্রের কাপ থেকে এক চুমুক কফি পান করে চোখ ছোট ছোট করে ওর দিকে তাকায়। নিলাদ্র সন্ধ্যার সামনে থেকে নিজের কফির কাপটা সরিয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি স্থির করে একের পর এক কফির কাপে চুমুক দিতে শুরু করে। সম্পূর্ণ কফিটুকু শেষ করে নিলাদ্র তৃপ্তির সাথে মুখ দিয়ে ‘আহহ’ শব্দ উচ্চারণ করে কাপটা পাশে থাকা ছোট টেবিলের উপর রেখে দিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিঃশ্বব্দে হাসে। সন্ধ্যা এখনও ওভাবেই নিলাদ্রের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো….
—“শুরুতে তেঁ*তো বলে মুখ-চোখ কুঁ*চ*কা*লে*ন পরে আমাকে দিয়ে এক চুমুক খাওয়াইয়ে নিজে তৃপ্তির সাথে বাকি কফিটুকু শেষ করলেন কি করে! এর মাঝের লজিকটা কাইন্ডলি আমাকে বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ!”
নিলাদ্র সন্ধ্যার হাত থেকে ওর কফির কাপটা নিয়ে টেবিলের উপর নিজের কাপের পাশে রেখে দেয়। অতঃপর নিলাদ্র সন্ধ্যার ডান হাত ধরে হ্য*চ*কা টা*ন মে*রে নিজের বুকের সাথে সন্ধ্যাকে মিশিয়ে নিয়ে অন্যহাতে ওর কমোর জড়িয়ে ধরে ওর কানের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো…..
—“পৃথিবীর ভিতর সবথেকে সেরা ও সুস্বাদু মিষ্টি লেগে আছে তোর ঠোঁটে। সেই ঠোঁট দিয়ে যেই খাবার বা পানীয়র স্বাদ গ্রহন করবি পরবর্তীতে সেটা আমার কাছে সবথেকে বেশি সুস্বাদীয় হয়ে যাবে। শুরুতে কফির স্বাদ স্বাভাবিক থাকলেও আমার কাছে অপূর্ণ লাগছিলো। তাই তোর ঠোঁটের স্বাদ নিয়ে কফির স্বাদে পূর্ণতা পাওয়ার জন্য বলেছিলাম তেঁ*তো হয়েছে। এরপর তুই যখন এক চুমুক নিলি তখন কফির স্বাদে আসল পূর্ণতা ফিরে এসেছিলো। আর তাই এরপর আমি খুব তৃপ্তি নিয়ে সবটুকু কফি শেষ করতে পেরেছিলাম।”
নিলাদ্রের এতো কাছে নিজের অবস্থান উপলব্ধি করতে গিয়ে সন্ধ্যার সর্বশরীরের লোপকূপ দিয়ে অদৃশ্য এক শীতল হাওয়া বয়ে যায়। সন্ধ্যার হার্ট স্বাভাবিক এর তুলনায় খুব দ্রুত বিট করতে শুরু করেছে। নিলাদ্রের গরম নিঃশ্বাস আর ফিসফিসিয়ে বলা প্রতিটি শব্দ সন্ধ্যাকে কাঁ*পি*য়ে কাঁ*পি*য়ে তুলছে। সন্ধ্যা ওর চোখ জোড়া খিঁ*চে বন্ধ করে রেখেছে। নিলাদ্র সন্ধ্যার কানের কাছে থেকে মুখ সরিয়ে ওর মুখের উপর নিজের মুখ রাখে। ওদের দু’জনের মাঝে এইমূহূর্তে মাত্র ২-৩ ইন্ঞ্চি দুরত্ব আছে। নিলাদ্র সন্ধ্যার নাকের সাথে নিজের নাক ঠেকিয়ে আবারও বললো….
—“এরপর থেকে আর আলাদা আলাদা কাপে চা-কফি বানিয়ে আনবি না। আমাদের দু’জনের জন্য একটা কাপই যথেষ্ট। শুরুতে তুই পান করবি। তারপর আমি পান করবো। তাহলে প্রতিবারই আমার তৃপ্তি লাভ হবে।আর এর ফলে তোর আর আমার মাঝের ভালোবাসার বন্ধনটা আরো বেশি মজবুত হবে।”
এই বলে নিলাদ্র সন্ধ্যার কপালে আর ওর বুঝে থাকা দু’চোখের উপরিভাগে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে ওকে ছেড়ে আবারও রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে বুকের উপর দু’হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে সন্ধ্যার উপর শান্ত দৃষ্টি স্থির করে রাখে।
(১৮৭)
গার্ডস দু’জন একবালতি কড়া ঠান্ডা পানিতে লবণ আর শুকনো মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে সেই বালতি নিয়ে তাহিরের পাশে দাঁড়াতেই তাহির একপলক বালতির দিকে তাকিয়ে পরপরই সেন্স*লে*স হয়ে থাকা রাজবীরের দিকে তাকায়। অতঃপর গার্ডস দু’জনকে ইশারা করলে একজন সেই বালতি হাতে নিয়ে রাজবীরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বালতিটা ওর মাথার উপর তুলে ধরলে তাহির বললো….
—“উহুহ…মাথা থেকে নয়। গলার নিচ থেকে পা পর্যন্ত এই অংশটুকুতে ঐ পানিগুলো ঢেলে দাও। চোখে লবন-মরিচের পানি পড়লে নিজের শরীরের ক্ষ*ত স্থানগুলোর পরবর্তী রূপ তো ও ভালোভাবে দেখতে পারবে না। আর আমি ওর চোখে ওর মৃ*ত্যু ভ*য় ও পা*প কর্ম করার জন্য অনুশোচনার ছাপ দেখতে চাই। তাই ওর চোখ দু’টো ঠিক রাখা ভিষণ জরুরী।”
তাহিরের কথানুযায়ী গার্ডটি শুকনো ঢো*ক গি*লে রাজবীরের গলার নিচ থেকে পা পর্যন্ত বালতির পানিটুকু সম্পূর্ণ ঢেলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে সে*ন্স লে*স থাকা রাজবীরের সেন্স ফিরে আসে আর সে ম*র*ণ য*ন্ত্র*ণা*য় দা*ফা-দা*ফি করতে শুরু করে। মুখ দিয়ে ক*রু*ণ স্বরে আ*র্ত*না*দ করতে থাকে। এই মূহূর্তে ওর এমন প্রতিটি যদি কোনো দূর্বল হৃদয়ের ব্যক্তি নিজের চোখের সামনে দেখতো তাহলে নিশ্চিত হার্ট এ্য*টা*ক করে বসতো। রুমের চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিছু গার্ড এমন দৃশ্য আর দেখতে না পেরে অন্যপাশ হয়ে ঘুরে মেঝের উপর বসে পরে। রাজবীর ক*রু*ণ স্বরে বললো….
—“দয়া কইরা আমারে আর য*ন্ত্র*ণা দিস না। আমারে মে*রে ফেল তুই। কুশল ভাই…তোমার সাথে তো আমার র*ক্তে*র সম্পর্ক আছে। নিজ র*ক্ত*কে এতো য*ন্ত্র*ণা পেয়ে ধীরে ধীরে মৃ*ত্যু*র কোলে ঢলে পড়তে দেখছো কি করে তুমি! একটা সময় তো আমি তোমাকে ভাই ভাই বলে মাথায় তুলে রাখতাম।আজ সেই ভাইয়ের জন্য একটুও দয়া কাজ করছে না তোমার! আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না৷ আমাকে একেবারে মে*রে ফেলতে বলো ওকে।”
কুশল রাজবীরের কথাগুলো শুনেও না শোনার ভান ধরে নিজের প্যন্টের পকেট ব্লুটুথ স্টিটেম ইয়ারফোনটি বের করে দু’কানে লাগিয়ে নিয়ে চেয়ারের সাথে ভালোভাবে হেলান দিয়ে দু’চোখ বুঁজে ফেলে। তাহির কুশলকে এমন করতে দেখে বাঁ*কা হেসে বললো…..
—“তোদের মতো কু*র*ক্তে*র জন্য কুশল কেনো পৃথিবীর কোনো ভালো মানুষের মনে বিন্দুমাত্রও দয়া-মায়া কাজ করবে না কখনও বুঝলি! সবাই তোদের ক*রু*ণ ভাবে মৃ*ত্যু হোক এমনটাই কামনা করবে।”
—“প্লিজ আমাকে মে*রে ফেল তুই।”
তাহির শান্ত স্বরে বললো…..
—“ঠিক আছে তোকে আর য*ন্ত্র*ণা দিবো না যদি তুই আমার একটা শ*র্ত পূরণ করিস তবেই।”
—“বল..বল..কি শর্ত! আমি সব শর্ত পূরণ করতে রাজি আছি।”
—“তুই তোর জীবনে এতো যাবৎ ধরে যা যা অন্যায় করেছিস সেই সবকিছু তোকে নিজমুখে শিকার করতে হবে।”
—“ঠিক আছে, করবো।”
তাহির রাজবীরের সামনে ওর ফোনের ক্যমেরা অন করে ভিডিও রেকর্ড চালু করে। রাজবীর গড়গড় করে ওর করা সকল পা*প কর্মের কথা বলে দেয়। সব বলা শেষ হলে তাহির ক্যমেরা বন্ধ করে। রাজবীর এখন য*ন্ত্র*ণা*য় থ*র-থ*রি*য়ে কাঁপছে। নিজেকে বাঁধন মুক্ত করার আর বেঁচে থাকাবস্থায় এই ন*র*ক য*ন্ত্র*ণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ছ*ট-ফ*ট করতে করতে পুরোপুরি ভাবে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে সে। আ*র্ত*না*দ করতে করতে আর এখন এতোগুলো কথা বলে ওর গলা শুঁকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। জিহ্বাটা অনেকটা বাহিরের দিকে বের করে লা*লা ফেলতে ফেলতে হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে রাজবীর। তাহির আরো কিছুসময় পর অন্য দু’জন গার্ডসকে ডাকলে তারা তাহিরের পাশে এসে দাঁড়াতেই তাহির বললো…..
—“একটা বড় সাইজের প্লাস্টিকের ড্রামের ব্যবস্থা করো।সাথে এক বস্তা সিমেন্ট, বালু, ২-৩টা লোহা, একটা হাতুড়ি আর একটা মাঝারি সাইজের তক্তার ব্যবস্থাও করো জলদী।”
রাজবীর ধীরে ধীরে আরো নেঁ*তি*য়ে পড়ছে। পরক্ষণেই গার্ডসরা তাহিরের হুকুম অনু্যায়ী সব জিনিসগুলো এসে সাইডে রাখে। তাহির শান্ত স্বরেই বললো…..
—“একে এভাবেই ড্রামের ভিতর ঢোকাও।”
গার্ডসরা একে-অপরের দিকে একবার তাকিয়ে পরমুহূর্তে শুকনো ঢোক গিলে রাজবীরকে চেয়ারে বসা অবস্থাতেই উঠিয়ে ড্রামের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। ড্রামের সাইজ আর মুখ বড় হওয়ায় রাজবীরকে ঢোকানো নিয়ে গার্ডসদের কোনোরূপ বে*গ পেতে হয় না। রাজবীরের অবস্থা এতোটাই কা*হি*ল হয়ে গিয়েছে যে ও নিজের একটা আঙুল উঠিয়ে নিজেকে বাঁচানোর মতো শক্তি নিজের মাঝে জোগাতে পারছে না। তাহির আবারও বললো……
—“পানি মিশিয়ে সিমেন্ট আর বালুর মিশ্রণ তৈরি করো আর ঐ ড্রামের ভিতরে মিশ্রণটি সম্পূর্ণ ঢেলে দাও। শুধুমাত্র ওর গলা থেকে নিচের অংশটুকুই যেনো সিমেন্ট বালুর মিশ্রণে চা*পা পড়ে সেই দিকে খেয়াল রাখবে।”
তাহিরের কথানুযায়ী গার্ডসরা দ্রুততার সাথে সিমেন্ট আর বালুর মিশ্রণ তৈরি করে রাজবীরকে বসিয়ে রাখা ড্রামের ভিতরের ফাঁকা অংশে তা ঢেলে দিতে শুরু করে। কিছুসময়ের মধ্যেই ওরা ওদের কাজ সম্পন্ন করে ফেলে। ড্রামের উপর দিকে এখন শুধু রাজবীরের মাথাটা বেড়িয়ে আছে। তাহির চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে রাজবীরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো…..
—“ধীরে ধীরে এই সিমেন্ট আর বালুর মিশ্রণটি জমাট বাঁধতে শুরু করবে। আর এর চাপে তোর শরীরের সব হাড় ভে*ঙে যেতে শুরু করবে। তোর নিঃশ্বাস একটু একটু করে ব*ন্ধ হয়ে আসবে। তুই বাঁচার জন্য একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য ছ*ট-ফ*ট করার আ*প্রাণ চেষ্টা করবি কিন্তু বরাবরের মতোই ব্য*র্থ হবি। একটু একটু করে নিজের মৃ*ত্যু*কে নিজের দিকে অগ্রসর হতে দেখবি। মৃ*ত্যু*র এই জার্নিটা খুব ভালোভাবে উপভোগ কর কেমন!”
রাজবীর কোনোরূপ প্রতিত্তোর করার মতোও শক্তি নিজের মাঝে জোগাতে পারে না। সে এখনও হা করে জিহ্বা বের করে নিঃশ্বাস নিচ্ছে। তাহির একজন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বললো…..
—“এই তক্তাটা ওর গলার নিচে রাখো।”
গার্ডটি দ্রুততার সাথে তক্তাটি সেইস্থানে রাখে। তাহির হাতুড়ি আর একটা লোহা হাতে নিয়ে আরেকজন গার্ডকে উদ্দেশ্য করে বললো…
—“ওর বেরিয়ে আসা জিহ্বাটা টেনে আরো বের করে তক্তার উপর ঠেকাও। পার্মানেন্ট ভাবে জিহ্বাটা তক্তার সাথে সেট করে দেই।”
গার্ডটি নিজের জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে শুঁকিয়ে আসা ঠোঁট জোড়া হালকা ভাবে ভিজিয়ে নিয়ে রাজবীরের জিহ্বাটা টেনে তক্তার উপর ঠেকিয়ে ধরে। রাজবীরের দু’চোখের আকৃতির বড় হয়ে যায়। ওর চোখের মণির চারপাশ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। যেনো চোখ দু’টো ফেঁ*টে*ও র*ক্ত বেড়িয়ে আসবে। তাহির রাজবীরের জিহ্বার উপর লোহার ধাঁ*রা*লো অংশ রেখে হাতুড়িটা দিয়ে জোড়ে জোড়ে বা*রি দিয়ে দিয়ে তক্তার সাথে গেঁ*থে ফেলে। এতোটুকুতেই যেনো রাজবীরের প্রাণভ্রমরের তিনভাগ অংশ ওর দেহ ত্যগ করে বেড়িয়ে আসে। বেঁচে যাওয়া একভাগ অংশের কারণে সে এখনও নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে। তাহির ওর হাতে থাকা হাতুড়িটা মেঝের উপর ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো……
—“মানুষ মা*রা গেলে তার স্মৃতি রক্ষার্থে ইট, পাথর, সিমেন্ট, বালু কিংবা মাটি, কাঠের টুকরো দিয়ে স্ট্যচু বা মূর্তি বানানো হয়। এই বিষয়টা সকলের কাছে নরমাল হলেও একজন জীবন্ত মানুষকে ড্রামে ভরে তার উপর সিমেন্ট, বালু ঢেলে তার স্ট্যচু বানানোর বিষয়টা কিন্তু পুরোপুরি ভাবে ইউনিক। কালকে যখন তোর এই মৃত্য স্ট্যচু সবাই দেখবে তখন সবার মুখে মুখে তোর চর্চা হবে। তুই তো ফেমাস হয়ে থাকবি রে।”
এই বলে তাহির রাজবীরের সামনে থেকে সরে আবারও চেয়ারে গিয়ে বসে পড়ে। দেখতে দেখতে ড্রামের ভিতর থাকা সিমেন্ট বালুর মিশ্রণটি জমাট বেঁধে আসতে শুরু করে। যার ফলে রাজবীরের নিঃশ্বাস আঁটকে আসে। আর ও সেখানেই মা*রা যায়। বেশ লম্বা সময় পর রাজবীর মা*রা গেছে নিশ্চিত হয়ে তাহির কয়েকজন গার্ডসকে উদ্দেশ্য করে ড্রামটি কে*টে শুধু সিমেন্ট বালুর মিশ্রণে চাপা পড়া রাজবীরকে বের করতে বললো। অতঃপর ওকে খুব সুন্দর ভাবে গিফট র্যপিং পেপার দিয়ে মুড়ে সাবধানের সহিত চৌধুরী মেনশনের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিতে বললো। গার্ডসরা তাহিরের কথানুযায়ী কাজগুলো সম্পন্ন করে। পুরো বিষয়টা নিশ্চিত হওয়ার পর কুশল আর তাহির দু’জনেই আ*স্তা*না থেকে বেড়িয়ে পরে।
#চলবে ইনশাআল্লাহ……..
#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৭৪ পর্বের ৫ম অংশ)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(১৮৮)
আ*স্তা*না থেকে বেড়িয়ে কুশল আর তাহির সরাসরি হুমায়রাকে ভর্তিকৃত হাসপাতালে চলে এসেছে। হুমায়রার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়াতেই ওরা তরুনিমাকে হুমায়রার কেবিন থেকে বের হতে দেখলো। তাহির শান্ত স্বরে বললো…..
—“হিমু কি জেগে আছে?”
তরুনিমা শান্ত স্বরে বললো….
—“উহুহ…একটু আগে দুপুরের খাবার আর ঔষধ খাওয়াইয়ে দিয়ে ঘুমাতে বললাম। তাই ঘুমিয়ে গিয়েছে।”
—“আচ্ছা, ভালো করেছো।”
তরুনিমা কুশলের দিকে তাকিয়ে কৌতূহলীর স্বরে বললো…..
—“আপনারা যেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য গিয়েছিলেন সেটা কি সম্পন্ন হয়েছে?”
তরুর প্রশ্ন শুনে তাহির ওর ঠোঁটে বাঁ*কা হাসির রেখা ফুটিয়ে তুললো। কুশল শান্ত স্বরে বললো….
—“খুব ভালো ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আর এখন আমাদের দু’জনকে বাড়িতে ফিরতে হবে। আগামীকাল সকালে অ*মানুষগুলোর জন্য একটা বিশেষ চমক অপেক্ষা করছে। চমকটি দেখার পর অ*মানুষগুলোর অবস্থা নিজের চোখে দেখতে চাই আমি।”
তরুনিমা অবাকস্বরে বললো….
—“চমক? কিসের চমকের কথা বলছেন আপনি?”
তাহির বললো….
—“কুশল ভাইয়ের সাথে এখন বাড়ি যাও। আগামীকাল সকালে চমকটা নিজের চোখেই দেখতে পারবে। আর হ্যা, চমকটি আমি খুব যত্নসহকারে বানিয়েছি। আগামীকাল সকালে তা চৌধুরী বাড়িতে পৌঁছে যাবে।”
—“আপনাদের মাথায় কখন কি যে চলে তা বোঝার ক্ষমতা আমার নেই। কুশল চলুন তাহলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া যাক।”
—“হুম, তাহির সাবধানে থেকো আর হুমায়রার খেয়াল রেখো। আমরা আসছি।”
—“আচ্ছা।”
অতঃপর কুশল আর তরুমিনা হাসপাতাল থেকে বের হয় চৌধুরী মেনশনে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তাহির হুমায়রার কেবিনের দরজার বাহিরে রাখা চেয়ারে পিঠ ঠেকিয়ে বসে দু’চোখ বুঁজে ফেলে।
বেশ কিছুসময় ড্রাইভ করার পর কুশল আর তরুনিমা চৌধুরী মেনশনে এসে পৌঁছায়। ড্রয়িং প্লেসে সাগরিকা চৌধুরী চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসেছিলেন। সেইসময় কুশল আর তরুনিমাকে একসাথে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে তিনি বললেন….
—“কুশল দাদুভাই…তরু দিদিভাই আমার কাছে আয় তোরা একবার।”
ওরা দু’জনেই নিজেদের মুখে স্মিত হাসির রেখা স্পষ্ট রেখে সাগরিকা চৌধুরীর সামনে এসে দাঁড়াতেই তিনি বললেন…
—“তোদের সাথে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমার কথা বলার ছিলো। তোরা একটু আমার সাথে আমার রুমে চলে এখুনি।”
সাগরিকা চৌধুরীর এরূপ কথায় ওরা দু’জনেই কিছুটা অবাক হয়। পরক্ষণেই মুখ দিয়ে ২য় কোনো শব্দ উচ্চারণ না করে ওরা দু’জনেই সাগরিকা চৌধুরীর সাথে তার রুমের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করে। ড্রয়িং প্লেসে বা ওর আশেপাশে তখন ৪র্থ কোনো প্রাণী উপস্থিত ছিলেন না। সবাই দুপুরের খাবার খাওয়ার পর নিজ নিজ রুমেই আছেন।
.
.
.
নিজরুমে রিজভী কম্বল মুড়ি দিয়ে গভীর ঘুম মগ্ন হয়ে আছেন। আর সেইসময় কামিনী ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ চোখে নিজেই নিজেকে পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করেন। পরক্ষণেই কামিনী নিজের চুলের ভাঁজ থেকে কাঁ*ক*ড়া ব্যন্ডটি খুলতেই লক্ষ্য করে ব্যন্ডটিতে বেশ অনেকটা চুল লেগে আছে। কামিনী ওভাবেই ব্যন্ডটি ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে সেখান থেকে চিরুনিটা হাতে নিয়ে চুল চিরুনি করতে শুরু করেন। চিরুনি করা শেষ হতেই কামিনী লক্ষ্য করলেন চিরুনিতে স্বাভাবিক এর তুলনায় আজ আরও বেশি চুল উঠে জমে আছে। এমনটা দেখে কামিনীর দু’চোখ নোনাজলে ভরপুর হয়ে উঠে। কামিনী বললেন….
—“আমার এতো সাধের চুলগুলো হঠাৎ এভাবে অত্যাধিক হা*রে উঠতে শুরু করেছে যে কেনো বুঝতেই পারছি না। এমন চলতে থাকলে তো কয়েকদিন এর ভিতরেই আমার মাথা টা*কে পরিণত হবে। আর তখন আমাকে দেখতে কেমন লাগবে!”
এই বলে কামিনী ছলছল দৃষ্টি নিয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই চোখের সামনে নিজেকে চুলহীন অবস্থায় আবিষ্কার করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে ‘নাআআআআআ’ বলে স্বশব্দে চি*ল্লি*য়ে উঠলেন তিনি। কামিনীর চি*ৎ*কার শুনে রিজভী চার হাতে-পায়ে লাফ দিয়ে ঘুমন্তবস্থা থেকে জেগে উঠে বসে বললেন….
—“আআআ…এই কে কে…কার কি হলো!”
কামিনী দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হু হু করে কান্না করছেন। রিজভী কামিনীর কান্নার শব্দ শুনে ওর দিকে তাকালেন। পরক্ষণেই দ্রুততার সাথে বিছানা থেকে নেমে কামিনীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন…
—“কামিনী..কি হয়েছে তোমার? এভাবে কান্না করছো কেনো?”
কামিনী ওভাবে থেকেই কান্না করতে করতে বললেন…
—“আমি টা*কু হয়ে গিয়েছি গো। আমার মাথায় একটাও চুল নেই। সব ঝড়ে পড়ে গেছে। আমাকে কি যে বি*শ্রী লাগছে দেখতে। এই মুখ আমি আর তোমাকে দেখাতে পারবো না…না…না…না।”
রিজভী কামিনীর এরূপ কথা শুনে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বললেন….
—“কি পা*গ*লের প্রলাপ ব*কা শুরু করেছো তুমি হ্যা! মাথার সব তা*র কি ছিঁ*ড়ে গিয়েছে?”
কামিনী মুখে কিছু না বলে হু হু করে কান্না করে শুধু। কামিনীর এমন কাজে রিজভী এবার চরম বি*র*ক্ত হয়ে কামিনীর পিঠের উপর থাকা কিছু চুল ধরে হালকা ভাবে নিচের দিকে টান মা*র*লেন। সঙ্গে সঙ্গে কামিনী কিছুটা ব্য*থা অনুভব করে মুখ ‘আহহহ’ শব্দ উচ্চারণ করে মুখের উপর থেকে দু’হাত সরিয়ে ব্য*থা*র স্থানে হাত বুলাতে শুরু করলেন। রিজভী বিরক্তির স্বরে বললেন….
—“তোমার মাথার চুল যে তোমার মাথাতেই আছে সেটা নিশ্চয়ই এখন খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছো?”
কামিনী কান্না থামিয়ে বললেন….
—“হুম, কিন্তু একটু আগে যে আমি আয়নায় নিজেকে চুলহীন অবস্থায় দেখলাম সেটা কি ছিলো!”
—“তোমাকে খুব দ্রুতই একজন মাথার ডাক্তার দেখাতে হবে যা বুঝতেছি। শুধু শুধু গাই গরুর মতো গলা ছেড়ে চি*ল্লি*য়ে আমার সাধের ঘুমের ১২ টা বাজিয়ে দিলে।”
কামিনী চোখ বড় বড় করে রিজভীর দিকে তাকিয়ে বললেন….
—“এ এই কি কি বললে তুমি? তুমি আমাকে গাই গরুর সাথে তুলনা করলে?”
রিজভী কামিনী সামনে থেকে সরে বিছানার দিকে যেতে যেতে বললো….
—“হুম করেছি। তুমি একটা ধা*ম*ড়া আড়িয়া গরুর মা বুড়ি গাই গরু বুঝেছো।”
রিজভীর এমন কথা শুনে কামিনী তেলে-বেগুনে জ্ব*লে উঠে রিজভীকে অনরগল কথা শোনাতে শুরু করে। রিজভী বিছানায় এক কাত হয়ে শুয়ে কানের উপর আরেকটা বালিশ চে*পে ধরে দু’চোখ বন্ধ করে ফেলে।
.
.
.
সাগরিকা চৌধুরী কুশল আর তরুনিমাকে নিয়ে নিজের রুমে বিছানায় মুখোমুখি হয়ে বসে আছেন। রুমের দরজা ভিতর থেকে আটকে দিয়েছেন। অতঃপর সাগরিকা চৌধুরী নিজের চেহারায় গ্লা*নি ভাব স্পষ্ট রেখে বললেন…..
—“দাদুভাই তোর আর সন্ধ্যা দিদিভাইয়ের থেকে আমি বলতে গেলে এবাড়ির সবাই-ই অনেক বড় একটা সত্য লুকিয়ে রেখেছি বিগত ২০ বছর যাবৎ।”
সাগরিকা চৌধুরীর এরূপ কথা শুনে কুশল আর তরুর বুঝতে বাকি রয় না তিনি কোন সত্যের কথা বলছেন। ওরা দু’জনেই বুঝেও না বোঝার ভান ধরে। কুশল বললো….
—“দাদীমা..যেই সত্য তোমরা সকলের আমাদের থেকে দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ লুকিয়ে রেখেছো আজ হঠাৎ সেই সত্য আমাদের সামনে কেনো তুলে ধরতে চাইছো?”
সাগরিকা চৌধুরী শব্দ করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে বললেন….
—“আজ যদি না বলতে পারি তবে আর কখনও বলা হবে বলে মনে হয় না। এতো বড় সত্যগুলোকে নিজের ভিতর চে*পে রেখে যে এই বুড়ি মা*রা গিয়েও শান্তি পাবে না রে দাদুভাই।”
তরুনিমা বললো….
—“দাদীমা..এভাবে কথা বলো না তুমি। তুমি আমাদের মাথার উপর থাকা বট বৃক্ষের মতো মূল্যবান। সারাজীবন ধরে এ বাড়ির সকলকে ছায়া দেওয়ার মতো আগলে রেখেছো।”
তরুনিমার কথায় সাগরিকা চৌধুরীর ঠোঁটে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠে। অতঃপর তিনি বললেন….
—“আমার মৃ*ত্যু*র ঘন্টা কখন বেজে উঠবে তার ঠিক রে দিদিভাই। তাই আমি চাই মা*রা যাওয়ার আগে দাদুভাইকে সব সত্য জানাতে।”
কুশল বললো….
—“হুম, বলো তুমি দাদীমা।”
পরক্ষণেই তিনি কুশল আর সন্ধ্যা যে রায়হানুল চৌধুরীর ছেলে-মেয়ে সেই কথা বললেন। আর তার জানামতে কোন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তিনি কুশল আর সন্ধ্যাকে নিজের ছেলে-মেয়ে হিসেবে বড় করার দায়ভার ওর মেজো চাচা-চাচীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন সেসব কিছুও খুলে বললেন আর ওনাদের জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করলেন। তরুনিমা ছোট্ট করে একবার নিঃশ্বাস ফেলে মনে মনে বললো…..
—“দাদীমা..যদি তুমি তোমার নিজের ছেলে আর বউমাদের করা নৃ*শং*স কর্মগুলো সম্পর্কে জানতে তাহলে ওনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে ঘৃ*ণা প্রকাশ করতে।”
সাগরিকা চৌধুরী আবারও বললেন….
—“এতো বড় সত্য আমি সন্ধ্যা দিদিভাইকে বলতে পারবো না রে দাদুভাই। ও যে ভিষণ নরম মনের মেয়ে। কেঁ*দে কেটে একাকার অবস্থা করে ফেলবে। তাই তুই সময়মতো শান্ত ভাবে ওকে বুঝিয়ে বলিস পুরো বিষয়টা।”
কুশল মাথা উপর নিচ নাড়িয়ে ‘আচ্ছা’ জবাব দিলো। পরক্ষণেই সাগরিকা চৌধুরী বললেন….
—“আরো একটা বড় সত্য তোদের জানা উচিত রে দাদুভাই৷ এই সত্য সম্পর্কে শুধু আমি আর তোর বাবা-মা ই এতো যাবৎ অবগত ছিলাম। আজ তোদের বলছি।”
কুশল আর তরু এবার কিছুটা অবাক হলো। সাগরিকা চৌধুরী বললেন….
—“কনক দাদুভাই মেজো খোকা আর মেজো বউমার নিজের সন্তান নয়। কনক দাদুভাই ও তোর আর সন্ধ্যার আপন বড় ভাই। বড় খোকা আর বড় বউমার ১ম সন্তান সে।”
সাগরিকা চৌধুরীর মুখে এরূপ কথা শুনে কুশল আর তরুনিমা দু’জনেই যেনো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। তরুনিমা অবাক স্বরে বললো….
—“কি বলছো কি তুমি দাদীমা!”
—“হুম…আমি সঠিক-ই বলছি রে দিদিভাই। মেজো বউমা আর বড় বউমা বিয়ের পরে ওরা দু’জন একই সাথে সন্তান সম্ভবা হয়েছিলো। সময়টা তখন বেশ ভালোই কাটছিলো। পুরো চৌধুরী মেনশন জুড়ে আলাদাই আনন্দ আর খুশিরা জ্বল জ্বল করছিলো। ১০মাস পর অলৌকিক ভাবে মেজো বউমা আর বড় বউমার একই সাথে প্র*স*ব বে*দ*না শুরু হয়েছিলো। ওদের দু’জনকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। কিন্তু দূ*র্ভা*গ্য বশত মেজো বউমা মৃ*ত সন্তানের জন্ম দিয়েছিলো। আর অন্যদিকে বড় বউমা ফুটফুটে পুত্র সন্তান অর্থাৎ কনক দাদুভাইকে জন্ম দিয়েছিলো। মেজো বউমা গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন পুরো ১০ মাস সময়ে নিজের বাচ্চাকে নিয়ে অনেক বেশিই আশাবাদী আর খুশি ছিলো। মেজো খোকা সেসময় ব্যবসার কাজে মালেশিয়াতে ছিলো। অপারেশনের পর ডাক্তার আমার আর বড় খোকার সামনে এসে বলেছিলেন মেজো বউমার শারিরীক অবস্থা ভালো না। বাচ্চা আরো ২দিন আগেই ওর পেটে থাকাকালীন অবস্থাতেই মা*রা গিয়েছিলেন। তার এমন অবস্থায় যদি আমরা তাকে জানাই যে তিনি মৃ*ত সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাহলে মেজো বউমাকে হয়তো আমরা আর জিবীত অবস্থায় ফিরে পাবো না। তোর বাবা-মা বরাবরই অনেক নরম মনের মানুষ ছিলো। ওরা দু’জনে মেজো বউমার কথা চিন্তা করে নিজেদের প্রথম সন্তানকে ত্যগ করে মেজো বউমার হাতে সেদিন তুলে দিয়েছিলো। আর মেজো বউমার মৃ*ত সন্তানকে নিজের সন্তান বলে মেনে নিয়েছিলো। আর আমাকে ওয়াদাবদ্ধ করেছিলো যেনো আমি কখনও কারোর কাছে এ নিয়ে মুখ না খুলি। বিশেষ করে মেজো খোকা-মেজো বউমা আর কনকের সামনে তো নয় ই।”
তরুনিমার দু’চোখ নোনাজলে ভরপুর হয়ে আসে। একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখ দিয়ে শুধু ‘ইয়া আল্লাহ’ শব্দটি উচ্চারণ করলো। কুশল নিজের দৃষ্টি নিচের দিকে স্থির রেখে শান্ত হয়ে বসে আছে।
(১৮৯)
পরেরদিন সকালবেলা……
চৌধুরী মেনশনে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে আছে সাগরিকা চৌধুরী সহ চৌধুরী পরিবারের মধ্যবয়সের সদস্যরা আর কুশল-তরুনিমা ও কনক-অনন্যা। সেইসময় মূল দরজার কলিং বেল বেজে উঠলে কামিনী কিছুটা উত্তেজিত স্বরে বললেন…
—“নিশ্চয়ই আমার ছেলে এসেছে। এই যাও না দরজাটা গিয়ে খুলে দাও।”
কামিনীর এমন কথায় সাবরিনা চোখ ছোট ছোট করে ওনার দিকে তাকালেন। কুশল ওর জন্য বরাদ্দকৃত সোফায় পিঠ ঠেকিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে দু’চোখ বুঁজে রেখেছে। তরুনিমা সাগরিকা চৌধুরীর পাশে বসে থাকা অবস্থাতেই কুশলের দিকে একপলক তাকিয়ে মনে মনে বললো….
—“তাহলে কি এ বাড়ির অ*মানুষ গুলোর জন্য সকালের চমকটা এসে গিয়েছে!”
কনক শান্ত স্বরে বললো….
—“চাচা তুমি বসো আমি দেখছি কে এসেছে।”
কনকের কথায় রিজভী স্মিত হাসলেন। কনক সোফা ছেড়ে উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দরজার সামনে ওর বুক বরাবর উচ্চতার কিছু গিফট র্যপিং কাগজ দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় রাখা দেখে বেশ অবাক হয়। পরক্ষণেই রাজবীর বাহিরে বেড়িয়ে চারপাশটা একপলক দেখে কিন্তু অপরিচিত কাওকে বা কোনো ডেলিভারি ম্যনকে সে দেখতে পায় না। কামিনী বসা অবস্থাতে থেকেই ঘাড় বাঁ*কিয়ে দরজার দিকে লক্ষ্য করার চেষ্টা করে বললো….
—“কে এসেছে দেখতে গিয়ে কনক কোথায় চলে গেলো?”
কনক গেইটের কাছে গিয়ে দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলো….
—“একটু আগে একটা বিশাল আকৃতির গিফট বক্স নিয়ে কে এসেছিলো?”
দারোয়ান মাথার পিছনের অংশের চুলগুলো চুলকাতে চুলকাতে বললেন….
—“সাহেব…আমি তো চা খাইতে গেছিলাম একটু। কে আসছিলো দেখতে পাই নি৷”
কনক রাগী স্বরে বললো….
—“চা খাওয়ার জন্য আপনাকে মাসে মাসে টাকা দেওয়া হয়? যে কাজ যদি ঠিক ভাবে করতে পারবেন না সেই কাজের জন্য আসেন কেন? যতোসব ফাঁ*কি বা*জের দল এসে জুটেছে।”
এই বলে কনক দ্রুত পায়ে বাড়ির ভিতরের দিকে অগ্রসর হয়। কনকের এমন ব্যবহার ও কথার ধরনে দারোয়ানের মুখে মলিনতার ছাপ ফুটে উঠে। তিনি কেবল একবার দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। কামিনী অধৈর্য হয়ে বসা অবস্থা থেকে উঠে ঘন ঘন বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে দরজার দিকে অগ্রসর হতে হতে বললেন….
—“আমিই দেখছি হয়েছেটা কি বাহিরে।”
দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই এতো বড় গিফট বক্স দেখে কামিনীর চোখজোড়া কপালে উঠার উপক্রম হয়। সেইসময় কনক ও বাড়ির ভিতর প্রবেশ করে। কামিনী ওর দু’গালের উপর দু’হাত রেখে অবাক স্বরে বললো….
—“এতো বড় গিফট বক্স! কি আছে এর ভিতর?”
কনক ড্রয়িং প্লেসে এসে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টা বাকিদের খুলে বললে সকলেই বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে অগ্রসর হয়। কুশল নিজের মুখশ্রীতে শান্ত ভাব স্পষ্ট রেখে দরজার বাহিরে থাকা বক্সটির দিকে তাকিয়ে আছে। তরুনিমা কুশলের পাশেই দাঁড়িয়ে। রিজভী গিফট বক্সটার চারপাশে হাত দিয়ে বেশ কয়েকবার টোকা দিয়ে বললো….
—“ভিতর বেশ শক্ত কিছু আছে বলেই মনে হচ্ছে। আমাদের এটা খুলে দেখা উচিত।”
সাবরিনা শান্ত স্বরে বললেন….
—“হুম..বক্সটাকে ভিতরে আনার ব্যবস্থা করো। বাহিরে রেখে খোলাটা ঠিক হবে না।”
রিজভী একা ঠেলে ভিতরে আনার চেষ্টা করে কিন্তু অনেক ভাড়ি হওয়ায় সে থেমে গিয়ে কয়েকজন পুরুষ সার্ভেন্টকে ডেকে আনে। তারা বক্সটিকে উঠিয়ে ভিতরে এনে রেখে স্থান ত্যগ করে। কামিনী ঘন ঘন বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললো….
—“আরে তাড়াতাড়ি খোলো এই বক্সটা। এর ভিতরে কি আছে তা দেখার জন্য আমার তর সইছে না।”
#চলবে ইনশাআল্লাহ……..