শুক্লপক্ষের পরিশেষে পর্ব-৫০+৫১

0
414

#শুক্লপক্ষের_পরিশেষে
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
|৫০|
[কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য]

সময়টা পহেলা ফাল্গুনের। প্রকৃতিটা সমগ্ররূপে নতুন সাজে সজ্জিত হয়েছে। নারীরা সকালে উঠেই নিজেদেরকে বিভিন্ন ফুলে রাঙাবে। আজ বসন্ত, আজ প্রেমবসন্ত। ক্যালেন্ডারে আরও একটি দিবস চকচক করছ; ভ্যালেনটাইনের দিন। তুশি মেয়েটা বড়ো আহ্লাদী। গতকালের সারাটাদিন সে বিভিন্ন পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিল। বিয়ের পরের প্রথম প্রেমবসন্ত তার। কীভাবে দিনটি উদযাপন করবে, তার চিন্তায় ঘুম হারাম হয়েছে সপ্তাহ খানেক হবে। রাত যখন ১১টা বাজে, তখন থেকে উৎসুক হয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মূল ফটকের দিকে চেয়ে রয়েছিল অনেকটা সময়। শ্রেয়ানকে বার বার সে বলে দিয়েছে, ‘আজ একটু জলদি ফিরবেন, একটু কাজ কম করবেন।’

শ্রেয়ান কি তা কানে নেয়নি? ঠোঁট উলটে ফেলল তুশি। মেয়েটা নেহাতই বাচ্চা। পুরো রুম সে কী সুন্দরভাবে ভালোবাসার রঙে সাজিয়েছে! তার ভালোবাসা তো দাম দিচ্ছে না এর। তুশি কিচ্ছুটি বুঝল না এই তুচ্ছতার। রুম, বারান্দা, করিডর, ছাদ পায়চারি করল। কয়েকবার কলও দিয়েছিল শ্রেয়ানকে। রিং হয়েছে, রিসিভ করেনি।
এক পর্যায়ে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। অপেক্ষাদের সাময়িক সমাপ্তিতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যায় তুশি।

শ্রেয়ান অফিসে বসে আছে। আপাতত গার্ডস ও সে ব্যতীত পুরো অফিসের এরিয়াতে আর কেউ নেই। শ্রেয়ান তার কেবিনে, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। লাইটগুলো অফ রাখা। জানালা দিয়ে বাইরে থেকে আলো এসে কেবিনে আঁড়াআঁড়িভাবে পড়ছে। মৃদু আলোয় পরিবেশটা দেখতে বেশ নান্দনিক লাগছে। বেশ দূরের কোথাও থেকে ভেসে এলো গান,

আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে,
নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছ।
আমি শুনেছি সেদিন তুমি নোনাবালি তীর ধরে,
বহুদূর বহুদূর হেঁটে এসেছ।

আমি শুনেছি সেদিন নাকি তুমি তুমি তুমি মিলে
তোমরা সদলবলে সভা করেছিলে,
আর সেদিন তোমরা নাকি অনেক জটিল ধাঁধা
না বলা অনেক কথা, কথা তুলেছিলে।

কেন শুধু ছুটে ছুটে চলা, একে একে কথা বলা
নিজের জন্যে বাঁচা নিজেকে নিয়ে।
যদি ভালোবাসা নাই থাকে, শুধু একা একা লাগে
কোথায় শান্তি পাবো, কোথায় গিয়ে?
বলো কোথায় গিয়ে?

ঘুমোয়নি শ্রেয়ান। আনমনে হাহাকারেরা দীর্ঘশ্বাসরূপে বেরিয়ে এলো। প্রতিটি বসন্তে প্রিয় রাতে শাড়ি পরে শ্রেয়ানকে ভিডিয়ো কলে রেখে ঘন্টা ধরে বকবক করে যেত। শ্রেয়ান শুনত, শুনতে শুনতে কাজ করত। এমনিতে অন্যান্য দিনে যা করুক, ফাল্গুনের এই দিনটা প্রিয়কে দেওয়া তার জন্য বাধ্যতামূলক ছিল। প্রিয় এ-দিন একটু অন্যরকম ভালো লাগা নিয়ে থাকত। আজ প্রিয় নেই, আজ অশান্তি নেই, আজ বাধ্যবাধকতা নেই কোনো। বুকের ভেতর মস্ত বড়ো একটা ক্ষত তার। সে অন্যায় করেছে। ভীষণ অন্যায় করেছে। এ-অন্যায়ের শাস্তি হয় না, এ-অন্যায়ের ক্ষমা হয় না। সে ফুলকে বিষিয়ে দিয়েছিল। সে ফুলকে যন্ত্রণা দিয়েছিল। সে ফুলকে পায়ে পিষেছিল। কী ভয়াবহ কাজ!

শ্রেয়ানের চোখ কেঁপে উঠল, বুকের কম্পন লক্ষণীয়। নিঃশ্বাসের গতিবেগ অসম্ভব বেড়েছে। সে হাঁপাতে লাগল। চোখ খুলল তৎক্ষনাৎ। ঝুঁকে পড়ল টেবিলের দিকে। গ্লাস তুলে জল খেয়ে নিল। প্রিয় একটা দুঃস্বপ্ন তার, এমন এক দুঃস্বপ্ন যে তাকে দুনিয়াদারির সাথে পরিচয় করিয়েছে। নয়তো ছিল সে এক অমানুষ। জানোয়ারের চেয়েও নিকৃষ্ট বললে মন্দ হয় না।

সময় দেখার জন্য ফোনের স্ক্রিন অন করল। ঘড়িতে বাজে দেড়টার কাছাকাছি। ঠিক তার নিচে ভেসে এলো ১৭টা মিসড কলের নোটিফিকেশন। নাম্বারটা তুশির। শ্রেয়ান কপাল কুঞ্চিত করে সেখানটায় প্রথমে তাকিয়ে থাকলেও, এরপরই মনে পড়ল তুশির মায়াময় মুখটা। সকালে অফিসে আসার সময় জলদি ফিরতে বলেছিল। নিশ্চয়ই অনেক পরিকল্পনা করে রেখেছে মেয়েটা! সুদীর্ঘ শ্বাস ছাড়ল শ্রেয়ান। এখন তার ফেরা উচিত, এখন তার ঘরে ফেরা উচিত।
প্রিয়কে সে ভীষণ রকমের অবহেলিত ও উপেক্ষিত ফুলে তৈরি করেছে। অবহেলায় ঝরেছিল সেই ফুল। আবারও একই ভুল কী করে করতে পারে সে? কিন্তু এখন তো তার একাকী থাকার সময়৷ তার একাকিত্বকে, একাকী আনন্দগুলোকে অন্যের সাথে ভাগ করতে সে মোটেও সাচ্ছন্দ্য করবে না।

একপাশে অনুভূতি, অন্যপাশে দায়িত্ব। অবিলম্বে সে দায়িত্বের দিকে ঝুঁকে পড়ল। বুকের পাশের খোলা বোতাম একটা লাগিয়ে শেল্ফের পাশে ঝোলানো স্ট্যান্ডের ওপর ফেলে রাখা ব্লেজারটা টেনে কাঁধে তুলে নিল। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে এলোমেলোভাবে বেরিয়ে পড়ল কেবিন থেকে। অফিস থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠে সিটবেল্ট বাঁধতে গিয়ে খেয়ালে পড়ল, “কেউ কি তার অপেক্ষা করবে?”

সম্পূর্ণ মনোযোগ সে ড্রাইভিংয়ে দিতে পারছে না। খানিকটা রাস্তা এসে এক নির্জন সড়কে ব্রেক কষল। ফোন হাতে নিয়ে মুখস্ত নাম্বারটা ডায়াল করল। তার তারিখ মনে থাকে না, নাম্বার মনে থাকে না। সংখ্যা জাতীয় কোনো কিছুই শ্রেয়ান মনে রাখতে পারে না। তার ভুলোমনটাও তবুও কীভাবে কীভাবে যেন এই নির্দিষ্ট নাম্বারটা মনে রেখে দিয়েছে।

নাম্বারটা আর সেইভড নেই। আগে সম্ভবত ‘mine’ দিয়ে সেইভ করা ছিল। এরপর সে অধিকার হারালো, মানুষ হারালো, অহংবোধ হারালো, নিজের প্রতি ভালোবাসা হারালো। নতুন সিম নেওয়ার পর আর এই নাম্বারটা কন্ট্যাক্টে অ্যাড করেনি সে। কী নামে অ্যাড করবে? কোনো নাম আছে কি আদোও দেওয়ার মতো?

সে কথা ভাবতে গিয়েই শ্রেয়ানের খেয়ালে এলো—এখন রাত দুইটা ছুঁইছুঁই। অন্য কারো বউকে কল দেওয়াটা কতটা মানানসই দেখাবে? কল লাগানো ঠিক হবে কি? ভাবতে হলো। ভাবতে হলো, কেননা মানুষটা এখন আর তার নিজের নেই। অন্যের অন্তরালে, অন্যের নিজের মানুষ সে। বিশেষণটা খেয়ালে আনা উচিত, ‘অন্যের’!

দমবন্ধকর অনুভূতি নিয়ে হাঁসফাঁস করতে করতে শ্রেয়ান কল লাগিয়েই ফেলল। রিং হতে হতেই পুনরায় কেটে দিলো। কী জ্বালা! সে স্থির হতে পারছে না কেন? একটা কাজ করতে গিয়ে যেই শ্রেয়ানের একবারও ভাবার প্রয়োজন পড়ত না, সে আজ এ কী করছে? শত-সহস্র-কোটি যত্নের ভালোবাসাকে ঠুকরে অন্য পাতে মুখ দিতে যে শ্রেয়ানের বিবেকে বাঁধেনি একবারও, সে শ্রেয়ানের আজ এ কী দশা! এ কেমন পরিবর্তন! ভারি আশ্চর্যের বিষয়!

শেষমেষ শ্রেয়ান আবারও কল লাগাল। প্রথম কলেই প্রিয় সজাগ হয়েছে, তবে টের পায়নি কিছুই এত জলদি শ্রেয়ানের কল কেটে ফেলার বাবদে। প্রিয়র অর্ধ জাগরণের মাঝে পুনরায় শ্রেয়ানের কল এলো। মস্তিষ্ক সম্পূর্ণরূপে জাগ্রত হলো। ত্বরিতে পাশ হাতড়ে ফোন হাতে তুলল। নাম্বারটা সম্পূর্ণ অপরিচিত হলেও, এই অ-দিনে, অ-সময়ে ঠিক কার কল আসতে পারে, প্রিয়র ভাবার বিশেষ প্রয়োজন পড়ল না। কল কেটে দিলো তৎক্ষণাৎ।

পাশে শরৎ শুয়ে আছে প্রিয়কে জাপটে ধরে। প্রিয়র গলার ভাঁজে তার মুখ। এক হাত দিয়ে প্রিয়কে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে। বলা বাহুল্য, শরতের সম্পূর্ণ শরীরটার ভর এখন প্রিয়র ওপর। সে যখনই কিঞ্চিৎ জেগে উঠছে, ভারি যত্নের সাথে বাহুবন্ধনী দৃঢ় করে প্রিয়র গলার ওই অংশটায় চুমু খাচ্ছে আলগোছে। প্রিয় ঘুমের আচ্ছনতায় তা টের পায় অবশ্য।

ওঠার তাগিদে প্রিয় নড়েচড়ে উঠলে শরৎ ঘুম জড়ানো গলায় শব্দ করল টুকরো টুকরো,
-“উঁম্ম..উঁম..”

হেসে ফেলল প্রিয়। অন্যহাতে শরতের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে বলল,
-“একটু সরেন না, বাবা! উঠতে দিন।”

শরৎ আরও চেপে ধরে প্রিয়র বুকে মুখ ঘষে বলল,
-“দেবো না, চুপচাপ শুয়ে থাকেন।”

প্রিয় খিলখিল করে হেসে সম্পূর্ণ ভর বিছানায় ছেড়ে ফেলল। চুমু খেল শরতের কপালে। শরৎ বলল,
-“হঠাৎ এত প্রেম পাচ্ছে কেন, আপনার? কিছু-মিছু চাই?”
-“উঁমহু, একটা কল এসেছে। একটু ছাড় চাই। দেবেন? একটু!”

শরৎ সামান্য সরে প্রিয়কে ওঠার জন্য জায়গা করে দিলো। প্রিয় উঠে বসে নরম স্বরে শুধাল,
-“কে কল দিয়েছে, জিজ্ঞেস করবেন না?”

শরৎ বালিশে মুখ ডুবিয়ে বলল,
-“প্রয়োজন নেই তার।”

কিছুটা অবাক হয়ে প্রিয় শুধাল,
-“আপনার কাছে কি আমি বিষয়ক সবকিছুই তুচ্ছ? কখনও কোনো কিছুতেই আগ্রহ দেখান না! বিষয়টা আমাকে বড়ো ভাবায়, নীরজ।”

শরৎ হতবাক হয়ে বালিশ থেকে মুখ ওঠাল। ঘুম ফোলা চোখে সামান্যভাবে চাইল প্রিয়র দিকে। রুমে জিরো পাওয়ারের লাইট জ্বলছে, আবছা নীলচে আলোতে শরতের কুঞ্চিত কপাল ও প্রিয়র আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টি দৃশ্যমান। প্রিয়র ভাবনাটা শরতের ঠিক পছন্দ হলো না। সে ব্যাখ্যা করল,
-“নিজেকে তুচ্ছ ভাবছেন, প্রিয়?”
-“ভাবছি।”

হতাশা মিশ্রিত শ্বাস ফেলে শরৎ বলল,
-“আর ভাববেন না। আমার সকল আগ্রহ কেবল আপনাকে নিয়ে। আপনার পরে সকল কিছুই তুচ্ছ, আপনি নন। আপনাকে আমি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই।”

প্রিয় চুপ রইল, শরৎ সোজা হয়ে শুয়ে প্রিয়র হাতটা ধরে নিজের বুকের ওপর রেখে বলল,
-“একটা কলই তো এসেছে? আসতে পারে, প্রিয়। এত রাতে কল আসাটাও অস্বাভাবিক নয়। ঢাকায় বড়ো হয়েছেন আপনি। এখানে রাত-দিনের তারতম্য অনেক কম। যে-কোনো সময় যে-কেউই কল দিয়ে ফেলে। তাছাড়া আজ ভ্যালেন্টাইন্স ডে, আজ ফাল্গুন। স্পেশ্যাল ওক্যেশন, কল আসাটা অস্বাভাবিক নয়। আমি কৈফিয়ত চাইলে বিষয়টা আপনার কাছে খারাপ লাগবে। প্রিয়, আরেকটু খুলে বিশ্লেষণ করি?”

প্রিয় তাকিয়ে রইল অনিমেষ,
-“করুন।”
-“আপনার মেনটাল হেলথ পুরোপুরি সুস্থ নয়। আপনার কাছে কৈফিয়ত চাওয়াটা আপনার সবক্ষেত্রে ভালো না-ও লাগতে পারে। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগবে, মাঝে মাঝে রাগ লাগবে। আমি তা চাইছি না। সম্পর্কে বোঝাপড়াটা খুব জরুরি। আমার আর আপনার মাঝে তা শতভাগ থাকুক, তাই চাইছি আমি। না থাকলেও, সর্বদা আমি আপোষে আসতে রাজি। তাছাড়া আমি লক্ষ করেছি, আপনি নিজ থেকেই আমাকে সব বলেন। আমাকে জানানোর মতো হলে, এটাও বলবেন। বুঝলেন, ম্যাডাম? এখন আমার ঘুম পাচ্ছে, ঘুমালাম। জলদি আসেন। আপনাকে ছাড়া ঘুমাতেও মন চায় না। অভ্যেস খারাপ করে দিচ্ছেন আমা…”

শরতের কথাগুলো শেষ করতে দিলো না প্রিয়। ত্বরিতে এসে চুমু খেল শরতের ঠোঁটে। শুষ্ক চুমু। সেকেন্ডের গতিতে যেভাবে এসে ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট ঠেকেছিল, সেভাবে সেকেন্ড দুয়েকের মধ্যে প্রিয় আবার সরে গেল এবং উঠে শরতের ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল ফোনটা নিয়ে। প্রিয় বারান্দার দিকে যেতেই শরৎ চিল্লিয়ে উঠল,
-“এটা কী হলো, প্রিয়? সরলেন কেন? আমার কম্পলিট হয়নি। এই মেয়ে, আসেন এদিকে! আমার চুমু কম্পলিট হয়নি রে, আসেন না!”

প্রিয় হাসতে হাসতে বারান্দার গ্লাস স্লাইড করে ওখানে দাঁড়িয়ে ঠোঁট চৌকা করে চুমুর ভঙ্গিমা করে বলল,
-“হয়েছে হয়েছে, ঘুমান এবার। খুব না ঘুম পাচ্ছিল? গুন্নাইট, বেইব!”

শরৎ ছোট্ট কুশনটা বুকে জড়িয়ে হাহাকার করল,
-“ঘুমের চৌদ্দটা বাজিয়ে এখন বলছেন ঘুমাতে। আসেন আপনি, আমি অপেক্ষায় রইলাম, আজ আপনার হচ্ছে!”

প্রিয় হাসতে হাসতে বারান্দায় গ্লাস আটকে দিলো। আজ চাঁদরাত। শরতের ফ্ল্যাটের এইপাশে বেশ অনেকটা জায়গা ফাঁকা রয়েছে, এজন্য চাঁদের আলো বেশ সুমিষ্টভাবে বারান্দায় হেলে পড়েছে। প্রিয় প্রান্তে ঝোলানো ছোট্ট দোলনাটিতে বসে পড়ল। এরপর কল লাগাল সেই চিরপরিচিত ব্যক্তিটির অপরিচিত কন্ট্যাক্ট নম্বরটিতে।

প্রিয়র কল কেটে দেওয়ার পর শ্রেয়ান সেই নির্জন রাস্তাটির ফুটপাথ ধরে একপাশে বসে বসে আকাশ দেখছিল। কল দেওয়াটা যে কত বড়ো বোকামি ছিল, তা ভেবে কপাল চাপড়াচ্ছিল। শেষবার প্রিয়র কাছে ছবি পাঠিয়ে কী বিশ্রী কাণ্ডটাই না ঘটিয়েছিল! এতটা ইমম্যাচিউরিটি সে দেখিয়েছিল ভাবতেই রাগে মাথা খারাপ হয়ে যায়। সেসব ভাবনার মাঝে প্রিয়র কল আসে।

শ্রেয়ান কিছুটা অবাক হলো প্রথমত, এরপর বার দুয়েক প্রলম্বিত শ্বাস ছেড়ে কল রিসিভ করল। দু-পাশে থমথমে নিস্তব্ধতা। অনেকটা পর শ্রেয়ান পুনরায় শ্বাস ফেলে শুধাল,
-“কেমন আছ?”

চলবে..

#শুক্লপক্ষের_পরিশেষে
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
|৫১|
[কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য]

প্রিয়র কল কেটে দেওয়ার পর শ্রেয়ান সেই নির্জন রাস্তাটির ফুটপাথ ধরে একপাশে বসে বসে আকাশ দেখছিল। কল দেওয়াটা যে কত বড়ো বোকামি ছিল, তা ভেবে কপাল চাপড়াচ্ছিল। শেষবার প্রিয়র কাছে ছবি পাঠিয়ে কী বিশ্রী কাণ্ডটাই না ঘটিয়েছিল! এতটা ইমম্যাচিউরিটি সে দেখিয়েছিল ভাবতেই রাগে মাথা খারাপ হয়ে যায়। সেসব ভাবনার মাঝে প্রিয়র কল আসে।

শ্রেয়ান কিছুটা অবাক হলো প্রথমত, এরপর বার দুয়েক প্রলম্বিত শ্বাস ছেড়ে কল রিসিভ করল। দু-পাশে থমথমে নিস্তব্ধতা। অনেকটা পর শ্রেয়ান পুনরায় শ্বাস ফেলে শুধাল,
-“কেমন আছ?”

প্রিয় প্রত্যুত্তরে বলল,
-“ভালো আছি৷ তুমি কেমন আছ?”
-“আছি।”
-“কী করছ?”
-“এই তো, রাস্তায় বসে আছি।”
-“কেন? কত রাত! বাড়ি ফেরোনি?”
-“ইচ্ছে করছে না।”

তারপর দুজনেই কথা হারাল। অনেকটা সময় পর প্রিয় শুধাল,
-“কল দিলে যে হঠাৎ?”
-“এমনিই।”
-“এমনি কল দিলে কি চলবে? আমি বিবাহিত, আমার পাশে আমার স্বামী থাকে।”
-“সরি, ভুল হয়ে গেছে। খেয়ালে ছিল না এত কিছু।”
-“খেয়ালে রাখতে হবে, শ্রেয়ান। যাক সেসব। তোমার স্ত্রী কেমন আছে?”
-“ভালো আছে।”
-“ভালো রেখেছ তো?”

শ্রেয়ান এ-পর্যায়ে মলিন হাসল,
-“আমি কাউকে ভালো রাখতে পারি না। আমার দ্বারা কেউ ভালো থাকে না।”

প্রিয় জানতে চাইল,
-“কিছু বলো তোমার স্ত্রীর ব্যাপারে, শুনি।”

শ্রেয়ান ধুলোমাখা রাস্তায় সোজা শুয়ে পড়ল। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
-“ওকে কোনোদিন সেভাবে লক্ষ করা হয়নি।”

প্রিয় রসিকতা করে বলল,
-“বললে এক মিথ্যে! ইন্টিমেট হওনি?”
-“হয়েছি।”
-“লক্ষ না করেই?”
-“করেছি লক্ষ, তবে কীরকম ও—এটা বর্ণনা করার মতো কখনও ভাবিনি ওকে।”
-“আজ ভাবো একটু, শুনি।”

শ্রেয়ানকে ভাবার জন্য প্রিয় সময় দিলো। গুনে গুনে ছয় মিনিট ভেবে শ্রেয়ান বলল,
-“ভীষণ মিষ্টি একটা মেয়ে ও। দেখতেও সুন্দর। মায়ের চাচাতো বোনের মেয়ে তুশি। প্রথমে ভেবেছিলাম ঠিক বনিবনা হবে না। মায়ের সাইডের কাজিনগুলো বেশ গায়েপড়া ছিল, ওভার স্মার্ট ছিল। ওকেও তেমনই ভেবেছি। বিয়ের পর দেখলাম, ও কিছুটা ভিন্ন। ওর মাঝে ম্যাচিউরিটি একটুও নেই, সামান্য চঞ্চল। রাগটাগ এ-অবধি দেখিনি। তবে ভীষণ ছিঁচকাঁদুনে ও। আমি সামান্য কড়া নজরে তাকালে ছাদে গিয়ে কেঁদে আসে। রাতে ওর ফুলো মুখ দেখে মা আমাকে হাজারটা প্রশ্ন করে। আমি অসহায় চোখে তখন ওর দিকে কেবল তাকাই, কিছু বলতে পারি না আর।

রাতে আগে আগে গিয়ে সাইড ঘেঁষে শুয়ে পড়ে। আমিও আমার সাইডে ঘুমিয়ে পড়ি। ঘুমের মধ্যে টের পাই, ও এদিকে আসছে। আস্তে আস্তে আমার সাথে মিশে যাচ্ছে। এরপর একসময় আমার পিঠে মুখ রেখে ফোঁপানো শুরু করে দেয়। জানো, প্রিয়শ্রী? আমাকে নিয়ে ওর হাজারো অভিযোগ। আমি সেসব শুনি, তবে কেন যেন ওর কান্না সহ্য করতে পারি না। ওর কান্না ভালো লাগে না।

ওর ফোঁপানো শুনেই তাই ওর দিকে ঘুরে ওকে বুকে নিই। বুকে মুখ লুকিয়ে ও শব্দ করে কাঁদতে থাকে। বাড়ির কেউ শুনে ফেললে কী একটা অবস্থা হবে ভেবেছ? আমি ওকে শান্ত করতে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে থাকি। এক পর্যায়ে অভিযোগ ঝাড়া শুরু করে সে। ঠিক বাচ্চাদের মতো বলে—‘আপনি আমাকে শুধু কষ্ট দেন, আমার ভালো লাগে না, আপনি এরকম কেন করেন? আপনি একটু ভালোভাবে কথা বললেই তো আমার এত কষ্ট লাগে না। শুধু শুধু আমাকে কান্না করান। আমাকে কাঁদিয়ে এত শান্তি পান?’
বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উলটে এসব কথা বলে। আমার হাসি পায়, আমি হাসতে পারি না। আমি মলিন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে বলেও ফেলি—আর কষ্ট দেবো না।

ও পরদিন উঠে সব ভুলে যায়। আহ্লাদী হয়ে পুরো বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। মালি কাকার বউয়ের সাথে বাগানের সাইডে বসে ফুলের মালা বানায় প্রায়শই। তারপর ফুল দিয়ে সেজে আমার কাছে এসে জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন লাগছে?’
আমি কিছুক্ষণ ওকে দেখি। আমি অস্বীকার করতে পারব না—আমার বউটা আহামরি সুন্দর না হলেও, স্নিগ্ধ মারাত্মক। আমি চোখ ফেরাতে পারি না। মনে হয় কিছুটা সময় ওকে না দেখলে আমার সাংঘাতিক ভুল হয়ে যাবে। আমি মনের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে তাকিয়ে থাকি। শেষে বলি, ‘সুন্দর লাগছে।’
আমার মুখস্ত জবাবের বিনিময়ে ওর মুখস্ত প্রত্যুত্তর ঠিক যেন সর্বদা ঠোঁটের আগায় থাকে, ‘আপনাকেও সুন্দর লাগছে।’

মিষ্টি করে হাসে, তারপর চলে যায়। আমি কেমন যেন ঘরমুখো হয়ে যাচ্ছি, প্রিয়শ্রী। বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে। ভবঘুরে লাইফটা থেকে ঠিক কখন যে বিচ্ছিন্ন হয়ে এসেছি, বলতে পারি না। দায়িত্ববোধ ভীষণ বাজেভাবে আমাকে চেপে ধরেছে। ব্যস্ততা, প্রিয়শ্রী, ব্যস্ততা! আমি এখন সত্যিকারভাবেই ব্যস্ত। তুমি বিশ্বাস করবে না, আমি শেষ কবে ড্রিংক করেছি, মনে নেই। আমি শেষ কবে তুশি ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে তাকিয়েছি, মনে নেই। আমি ভালো হয়ে যাচ্ছি।”

প্রিয় মুগ্ধ হয়ে শুনল। বুকের কোণার ধারালো ব্যথাটাকে অগ্রাহ্য করে ওঠার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে বলল,
-“কষ্ট দিয়ো না মেয়েটাকে। ও মোটেও কোনো ধরনের কষ্ট ডিজার্ভ করে না।”

শ্রেয়ান হেসে উঠল,
-“প্রিয়শ্রী, শোনো!”
-“বলো।”
-“পুরুষ তার শখের নারীকে হারানোর পর থেকে দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে। তুমি আমার কতটা শখের ছিলে, আমি তোমার পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হবার পর তা টের পেয়েছি। ছিলাম আমি আগে এক অমানুষ। নয়তো কি তোমাকে ধরে রাখার ইচ্ছে না দেখিয়ে থাকতে পারতাম?”

প্রিয় দোল খেতে থাকা দোলনাটা থামিয়ে ফেলল মেঝের সাথে পায়ের ঘর্ষণে। থেমে থেমে বলল,
-“এই পরিবর্তনটা আগে হলে মন্দ হতো না, তাই-না?”

শ্রেয়ান চোখ বন্ধ করল। কার্ণিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অজানা অনুভূতির সাথে অশ্রু,
-“তবে আজ তোমার আর আমার দুটো ভিন্ন সুখের গল্প হতো না। আমরা ভালো আছি খুব, প্রিয়। তাই-না?”

প্রিয় মলিন হাসল,
-“হ্যাঁ, ভালো আছি।”

তারপর দু-জনেই চুপ। প্রকৃতি চুপ। সময় চুপ। শ্রেয়ান গুনগুন করল,
ওরা সুখের লাগি চাহে প্রেম
প্রেম মেলে না..
শুধু সুখ চলে যায়
শুধু সুখ চলে যায়
এমনই মায়ার ছলনায়..

প্রিয় বলে উঠল,
-“সুখ যায়নি, শ্রেয়ান। সুখ যায়নি। আমাকে তুমি নিজ দায়ে হারিয়েছ, প্রকৃতি তোমায় তার চেয়েও চমৎকার কিছু ফিরিয়ে দিয়েছে। সেই চমৎকার কিছু একটাকে ঠুকরিয়ো না। সে তোমার অপেক্ষায় আছে, সে এখনও তোমার অপেক্ষায় আছে। তার কাছে ফেরো। স্রষ্টা তোমায় ভালো রাখুক।”

শ্রেয়ানের মাথায় কথাটা ধরল সময় নিয়ে। সে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়াল, ফোন কানে নিয়েই গাড়িতে উঠে বসল। ড্রাইভ করতে করতে প্রিয়কে বলল,
-“আমি তোমাকে কখনও ভুলতে পারব না, প্রিয়শ্রী। কখনও ভুলতে চাই না। আমি তোমায় যেসব ভুলে হারিয়েছি, আমি সেসব ভুল আমৃত্যু মনে রাখব। আমি সেসব ভুলগুলো শুধরে নেব তুশির ক্ষেত্রে। ও পাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষকে।”

প্রিয় দোলনাটা গতিশীল করে বলল,
-“সাবধানে ড্রাইভ করো।”
-“প্রিয়শ্রী?”
-“হুম।”
-“পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ফুল তুমি, শোনো! তুমি অন্যের ঘরকে সুরভিত করো, যেভাবে আমার জীবন এসে থমকেছে অন্যের সুঘ্রাণে। তুমি আমায় ক্ষমা কোরো, তুমি ভীষণ ভালো থেকো।”
-“তুমিও ভালো থেকো, শ্রেয়ান। আমায় ক্ষমা করো, আমি তোমায় ক্ষমা করতে পারব না।”

হাসল শ্রেয়ান,
-“না করলে। আমি ডিজার্ভ করি। কিছু মানুষের আমৃত্যু ঘৃণা বয়ে বেড়ানোটা আমি ডিজার্ভ করি। তুমি শুধু ভালো থেকো, আমার তাতেই চলবে। আমিও ভালো থাকব। তুশি মেয়েটা আমায় ভালো রাখবে।”
-“আমি জানি।”

তারা অদ্ভুত কিছু ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছে। তারা মানুষকে খুব সহজেই ভাঙতে পারে, তারা মানুষকে ভীষণ শক্ত দণ্ডের ন্যায় এক নিমিষেই তৈরি করতে পারে। যেমনটা শ্রেয়ান ভেঙেছে প্রিয়কে, শরৎ তৈরি করেছে; শ্রেয়ানের ক্ষেত্রে প্রিয় ও তুশিও একই ভূমিকা পালন করেছে।

______
প্রিয় রুমে ফিরল বেশ সময় নিয়ে। তখন মেজাজটা ফুরফুরে হয়ে আছে ওর। এসে বেডে বসে ল্যাম্পটা অফ করল। সময় নিয়ে সোজাসুজিভাবে শুয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতেই শরৎ এসে জড়িয়ে নিল প্রিয়কে। প্রথমে কপালে চুমু, এরপর দুই চোখে চুমু, নাকের ডগায় চুমু, দুইগালে চুমু, থুতনিতে চুমু, ঠোঁটে চুমু। তারপর দু’ইঞ্চি ওপরে থেকে মুখোমুখি তাকিয়ে রইল। প্রিয় পিটপিট করে চোখ খুলে ফিসফিসিয়ে বলল,
-“এভাবে বাঘের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে কেউ শিকার করতে আসে? গর্জন তো করে আসবেন, আমি হরিনী বেচারি একটু প্রস্তুতি নিতাম!”

শরৎ একই ভঙ্গিমায় ফিসফিস করল,
-“প্রস্তুতি? উঁহু, দরকার নেই।”
-“বললেই হলো?”
-“প্রিয়, আপনি এত টেস্টি কেন? ইয়াম্মি ইয়াম্মি।”

প্রিয় হেসে ফেলে বলল,
-“কিছু মিছু গিললেন নাকি, মশাই?”
-“ইউ মিন নেশাদ্রব্য?”
-“ইয়েশ!”
-“আপনি থাকতে ওসবের কী দরকার? লেট মি টেস্ট ইউ এগেইন।”

শরৎ আবারও চুমু খেল প্রিয়র ঠোঁটে। এলোমেলোভাবে উঠে পড়ল প্রিয়র ওপর। তার দু’পা প্রিয়র দু’পাশে, দু’হাত প্রিয়র হাত দুটোকে আটকে ফেলল। নিঃশ্বাসের বেগ এলোমেলো। প্রিয়র বুকের ওঠা-নামা শরৎ টের পাচ্ছে ভীষণভাবে। এক হাত উঠিয়ে প্রিয়র ঠোঁটে স্লাইড করল শক্তভাবে। সেই হাতটা কানের সাইডে গুঁজে শরৎ প্রিয়র ঠোঁটের ভাঁজে ঠোঁট রেখে বলল,
-“ওয়ানা সি মাই ম্যাডনেস? ওয়ানা?”

প্রিয় কম্পনরত ঠোঁট শরতের ঠোঁটকে ছুঁয়ে ধীরতায় শব্দ করল,
-“ইয়েসসস..”

এরপর চুমু। একটা চুমু কেবল শুধু চুমু নয়, একটা চুমু কখনও সখনও মনের বিষকেও ভাগাভাগি করে নেওয়ার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়। তারপর দীর্ঘ সময়ের আশ্লেষের চুম্বন শেষে প্রিয় যখন হাঁপিয়ে উঠল, শরৎ গলা ও কাঁধে ছোট ছোট চুমুতে প্রিয়র অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলতে লাগল। প্রিয়র হাত উঠে এলো শরতের চুলে, মুঠো করে ধরে ফেলল শরতের জংলীপনা সহ্য করার তাগিদে। শরতের পাগলামি ক্রমশ বাড়তেই লাগল। প্রিয়র দুইহাতের কব্জিতে শরতের হাতের গ্রিপ শক্ত হয়ে উঠল। ছোট ছোট চুমু টুকরো টুকরো কামড়ে পরিণত হয়ে উঠল। শরতের হাত উঠে এলো প্রিয়র পিঠের দিকটায়, কামিজের চেইন খুলে জামার গলাটা কাঁধ বরাবর নামিয়ে দিলো। প্রিয় শরতকে ধাক্কা দিয়ে বিছানায় ফেলে দিলো। উঠে বসল শরতের পেটের ওপর। শরতের সমগ্রমুখে চুমু খেতে খেতে আস্তে-ধীরে নিচে নামল। খালি লোমশ বুকে এসে গভীরভাবে শ্বাস টানল। শরতের স্মেলটা তার কী যে ভালো লাগে! খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে। ভাবনার সাথে তাল মেলালো সে। শরতের বুকটা কামড়ে ভেজাতে লাগল। প্রিয়র কাঁধে শরতের নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। আবারও মেতে উঠেছে আদিম খেলায়। শীৎকৃত ধ্বনিতে মুখোরিত হতে লাগল রাতটা। প্রিয় ক্রমাগত এটা-সেটা বিরবির করছে। তবে যা শরতের মন-মস্তিষ্কে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলল, তা হলো প্রিয়র বলা একটি কথা,
-“নীরজ, ভালোবাসাকে ভালোবাসার আগে, তোমায় ভালোবাসি। কারণ তুমি আমার ব্যক্তিগত মানুষ।”

চলবে..