“আ না ম”- ১৭
-Azyah সূচনা
মানুষের মস্তিষ্ক আর মন।এই দুটো যন্ত্র মানুষের অভ্যন্তরে অবস্থান করলেও কাজ করে নিজের মতন।যুদ্ধ চলে দুয়ের মাঝে সর্বদা। মস্তিষ্কের কাছে আছে ‘লজিক’ নামক শব্দটি।যেখানে আবেগের কোনো খেলা চলে না।আর মন তার সম্পূর্ণ বিপরীতে।এইযে ইচ্ছে হচ্ছে এখন শাবাবের।এই কাজ,কেস,অপরাধী, ভুক্তভোগী সব বাদ দিয়ে ছাদে মায়ের শখ করে তৈরি বসার স্থানে শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখতে।তবে এই ইচ্ছেকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টায় মস্তিষ্ক। বারবার বলে উঠছে, ‘ তুমি তোমার কাজে গাফিলতি করতে পারো না।অনেকটা দেরি হয়ে গেছে।তোমার কেস নিয়ে ভাবা উচিত’। দ্বিমুখী সংঘর্ষ।দুইরকম চিন্তার মাঝে শাবাবের ইচ্ছে হচ্ছে চেঁচিয়ে বলুক ‘শাট আপ’।কাকে বলবে?নিজেকে?নাকি নিজের চিন্তাকে?জটলা পাকিয়ে যাচ্ছে যেনো সবকিছু।
জঞ্জালে পূর্ন এক সন্তানের হৃদয় বুঝে একজনই।তার জন্মদাত্রী। শাবাব বাড়ি ফেরার মতন মানুষ নয়।বছরে দুই ঈদ ব্যতীত থাকতে কখনো আসেনা।আজ এসেছে।অবশ্যই ভিন্ন কোনো কারণ আছে।মুখ মন্ডল বলছে তার হৃদয়ের অস্থিরতার কথা।আবার এসে ছেলের পাশে বসলেন রুনা বেগম।
বললেন, -“তোমার কি মন খারাপ বাবা?”
শাবাব তৎক্ষনাৎ জবাব দেয়, -“নাতো”
-“মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।”
-“একটা কেস নিয়ে চিন্তিত”
-“কেস নিয়ে তোমাকে এত চিন্তিত দেখিনি কখনো।অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আছে নাকি বাবা?”
শাবাব লম্বাটে নিঃশ্বাস ফেলে।খামখেয়ালী করে বললো,
-“বেশি ভাবছো তুমি।অন্য কোনো চিন্তা নেই আমার মাথায়।ঘুমিয়ে পড়ো গিয়ে।”
-“তুমি?”
আকাশের শুভ্র চাঁদের দিকে মুখ তুলে শাবাব জবাব দেয়,
-“আমি এখানেই আছি।থাকবো”
-“সারারাত এখানে থাকবে?ঘুমাবে না?”
-“উহু। গুড নাইট!”
তমসাচ্ছন্ন রাতের আকাশে, তারার সন্ধান করলে হৃদয়ে আলো এসে প্রস্ফুটিত হয়।রাতের আকাশে তারা ঝিলমিলে বস্তুত একটি অদৃশ্য পৃথিবীর মুক্তিপাত। তার মধ্যে গুঁজে আছে গল্প, যেখানে আকাশের অনেক অজানা তারারা নিজেদের উপন্যাস বলে।রাতের আকাশে মেঘের সাথে মিলিয়ে নতুন স্বপ্নের কথা বলে, সৃষ্টির অদ্ভুত কারুকাজ দেখায় সময়ের রহস্যময় ছায়াচিত্র।অক্ষি গহ্বরে আকাশের দৃশ্য ভ্রমের মতন লাগছে শাবাবের।তবে সে সজ্ঞানে।মস্তিষ্কে জাগলো আরো এক ভাবনা।এক নাম- শব্দহীন আওয়াজ বলে উঠলো,
“মিস্টারিতে মোড়া শহরে,
আলোর মধ্যে নিভে গেছে একা।
সন্ধ্যা বিলুপ্ত, রহস্য লুকিয়ে আছে,
কে তা খুঁজে পেতে পারবে তারে?”
__
সকাল দশটা চট্টগ্রাম ব্যুরোর প্রত্যেকটা মানুষের জন্য অনেক বেলা।সময়ের ঠিকঠাক খেয়াল রাখা শাবাব এই বেলা করেই এসেছে।সবাই অবাক আর প্রশ্নবিদ্ধ চোখ নিয়ে চেয়ে।জানতে চায় সকলে এই মহোদয় সারারাত থেকে কোথায় ছিল?এসেই দেখলো অনেকগুলো মেয়ে এসে হাজির। ব্যুরোতে পাঁচ থেকে সাত জন একই সিরিয়ালে বসে আছে।বুঝতে বাকি রইলো না তার অনুপস্থিতিতে কাজ থেমে থাকে নি।
হাত পা ছড়িয়ে চেয়ারে এসে বসে শাবাব। মেয়েগুলোর উদ্দেশ্যে বললো,
-“আপনাদের এখানে কেনো ডাকা হয়েছে অবশ্যই জানেন।”
সকলেই মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বোধক উত্তর দিলো।তবে মুখের মধ্যে ভয়ের ছাপ। এদের মধ্যে কয়েকজনকে দেখে বোঝা গেলো তারা আদিবাসী।অবশ্যই এদের মাঝে আরো অনেক মেয়ে এই শহরের বাইরের। এসেছিল পড়ালেখা করতে।কিন্তু?
শাবাব গলায় গাম্ভীর্য বজায় রেখে বললো, -“দেখুন আপনাদের সবার সুরক্ষার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।আর প্রফেসর এর নামে মামলা দায়ের করা শেষ।এখন সে বা তার কোনো লোক আপনাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তাছাড়াও আপনাদের সব ছবি আর এভিডেন্স নিঃশেষ করে দেওয়া হয়েছে।সো আপনারা রিল্যাক্স থাকতে পারেন।”
তাদের মধ্যে একজন শাবাবের কথার উত্তরে বললো,
-“অনেক অনেক ধন্যবাদ অফিসার।প্রফেসর রাজিন আমাদের জীবনটা নরক বানিয়ে রেখেছিলো।ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারছিলাম না।”
-“এখন কোনো চিন্তা নেই।কিন্তু আমাদের সাহায্য প্রয়োজন।এই সাহায্যটা আপনারাই করতে পারবেন।”
আরো একজন জানতে চাইলো, -“কেমন সাহায্য অফিসার?”
-“আচ্ছা আপনারা সকলে এখানে উপস্থিততো?আর কেউ বাকি নেইতো যাকে প্রফেসর উত্যক্ত করেছিলো?”
-“না স্যার আমরাই আছি।আর কেউ আছে কিনা সেই বিষয়ে আমরা কেউ কিছু জানি না।”
শাবাব বললো, -“আপনারা নিজেদের সমস্ত ইনফরমেশন আর ফিঙ্গারপ্রিন্ট আমাদের দিয়ে যাবেন।আর একটু ভেবে বলুন যে প্রফেসর এর সাথে?বা কাজে অন্যকেউ জড়িত কিনা?”
আদিবাসী মেয়েদের মধ্যে একজন বলে উঠল, -“আমাদের একজন শিক্ষক আছেন।উনি এখন রিটায়ার্ড।নাম জিল্লুর স্যার।প্রফেসর রাজিন এর সম্পর্কে সে সব জানতেন।কিন্তু কখনো কোনো পদক্ষেপ নেননি।”
শাবাব আরো আগ্রহ দেখায়।মেয়েটিকে প্রশ্ন করে, -“আর?আর কোনো ইনফরমেশন?”
অন্য আরেকজন বলল, -“এখানে একজন অনুপস্থিত স্যার।…..সে কখনো উপস্থিত হতেও পারবে না।”
এবার রবিন মুখ খুলে।এগিয়ে এসে জানতে চায়, -“কেনো?”
-“সি ইজ নো মোর।সে প্রফেসর রাজিন এর ব্ল্যাকমেইল নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।আজ থেকে আরো এক বছর আগে।”
সকলেই অবাক চাহনি ছুড়লো একে অপরের দিকে।রবিন শাবাবের পানে চাইলো।মৃত্যু অব্দি হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে?এতটা নিচে নেমে গেছে মনুষ্যত্ব? বিকৃত হচ্ছে মস্তিষ্ক দিনদিন।
নির্বাক শাবাব আর রবিনকে এক পলক দেখে মির্জা প্রশ্ন করে, -“ওই মেয়েটা কি প্রফেসরকে অপরাধী করে গিয়েছিল?”
-“না স্যার।কিন্তু আমি জানি সে কতটা ডিপ্রেসড ছিলো।ওর বাবা নেই।মা গ্রামে থাকতো। প্রফেসর তাকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলেছিল।একদিন মাত্রা অতিক্রম করে গেলে সে !” বলতে বলতে চুপ হয়ে যায় মেয়েটি।
মির্জা আবার বলে উঠে, -“আপনি ওর আর ওর ফ্যামিলির সমস্ত ইনফরমেশন দিতে পারবেন?”
-“জ্বি অফিসার”
সকলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়েছে।সাথে ইনফরমেশনও।তারপরও সন্দেহ আছে অনেকটাই।এদের মধ্যে সকলের হাবভাব ভিন্নরকম।কেউ নির্দ্বিধায় কথা বলেছে কেউ জানতে চেয়েছে এত ফর্মালিটির কারণ।সবটা টেকেল দেয় আবির।বুঝিয়ে কার্য উদ্ধার করে।ফাহাদ সাইফাকে কঠোর স্বরে আদেশ করেছে শাবাব উপাচার্যকে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসতে।তার চোখের আড়ালে এত এত ক্ষমতাবান ব্যক্তিত্বের নজরদারিতে থাকা সত্বেও কি করে এতবড় জঘন্য কাজ ঘটছে সেখানে?পাশাপাশি রিটায়ার্ড শিক্ষকের সমস্ত ডিটেইলসসহ তাকে ব্যুরোতে আনার আদেশত আছেই।মেজাজ চড়া।কোনো শব্দ ছাড়াই সাইফা,ফাহাদ কাজে চলে গেলো।
রবিন শাবাবের পানে চেয়ে বললো, -“এবার?”
দাঁত কিড়মিড় করতে করতে শাবাব উত্তর দেয়, -“এবার গেম খেলবো একটা।”
-“কেমন গেম?”
-“চোর পুলিশের গেম”
মির্জা কফির মগ শাবাব আর রবিনের সামনে রেখে বললো,
-“কি চলছে তোমার মাথায়?”
-“চলো অপরাধীকে ধরতে নিজেরাও অপরাধে লিপ্ত হই”
__
ব্যুরো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পথে এক ছেলে পিছু নিলো। শাবাব লুকিং গ্লাসে তাকে বৃষ্টিতে দৌঁড়াতে দেখে তৎক্ষনাৎ ব্রেক চাপে।বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বেরিয়ে এলো।তার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে তাদের কাছেই এসেছে সে। ততক্ষণে শাবাব,রবিন উভয়েই কাক ভেজা।তাতে তাদের কারো মধ্যেই বিশেষ কোনো ভাব পরিবর্তন দেখা গেলো না।সামনে দাঁড়ানো ছেলেটা তাদের মূল আকর্ষণ।
ছেলেটি বলল, -“আপনারা.. সি. আই. ডির লোক না?”
বৃষ্টির ভেজা আওয়াজে কথাবার্তা অনেকটা অস্পষ্ট। শাবাব গলার স্বর বাড়িয়ে বললো, -“হ্যাঁ! তুমি কে?”
রবিন বলে উঠলো, -“পার্কিংয়ে আসো।এখানে কিছুই শোনা যাচ্ছে না।”
তিনজন একত্রে পার্কিংয়ের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।ছেলেটি ভীত গলায় বলতে লাগলো,
-“স্যার আমার কথা শুনুন!”
শাবাব উত্তর দেয়, -“বলো শুনছি”
-“স্যার আমাকে কিছু করবেন না।আমি কিছু বলতে চাই আপনাদের।”
রবিন বলল, -“বিনা কারণে তোমাকে কেনো কিছু করবো?কে তুমি?”
ছেলেটি উত্তর দেয়, “আমি সাব্বির।আমিই রুবি ম্যাডামের রেস্টুরেন্টের শেফ এর কাজ করতাম”
শাবাব বিনাবাক্যে ছেলের ঘাড় চেপে ধরলো।রেগে আগুন হয়ে বললো, -“তোকেই তো খুঁজছিলাম। কোথায় পালিয়ে ছিলি তুই!”
-“স্যার!আমাকে ছাড়ুন স্যার আমি কিছু করিনি।”
-“তাহলে পালিয়ে ছিলি কেনো?”
সাব্বির ঢোক গিলে।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল,
-“স্যার আমাকে দিয়ে এসব করানো হয়েছে।আমাকে পালাতে বাধ্য করেছে একজন”
যতটা জেদী শাবাব তার ঠিক বিপরীধর্মী রবিনের চরিত্র। শাবাবের হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য হাত এগোয়।ঠিক সেই সময় শাবাব হাত ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দিলো সাব্বিরকে।রবিনের দিকে চাইলো রবিন চোখ বুঁজে তাকে ঠান্ডা হওয়ার ইশারা করে।সাব্বির বলার সুযোগ পায়।অনেকটা সাহস জুগিয়ে এসেছে এখানে।
সাব্বির বলতে লাগলো,
-“আমি এভাবেও ফেঁসে যেতাম ওভাবেও ফেঁসে যেতাম।আমার মধ্যে কোনো খোট থাকলে আপনাদের কাছে কোনোদিন আসতাম না স্যার।আমাকে বিশ্বাস করুন।সেদিন রাতে আমি কিচেনে ছিলাম।রান্নার সব সামগ্রী গুছিয়ে রাখার পরপর ম্যানেজার সাহেব আসেন।আমাকে আরো একজন কাস্টমার এর জন্য খাবার রান্না করতে বলেন।বলে তিনি কাউন্টার এর দিকে চলে যান।ঠিক সেই সময় কিচেনের গেট বেয়ে একজন আসে।তাকে দেখে কোনো প্রকার আওয়াজ করার পূর্বেই আমার দিকে পিস্তল তাক করে। বিদঘুটে আওয়াজে বলে কোনো সাড়াশব্দ করলে জানে মেরে দিবে।আমি চুপ বনে যাই।তারপর আমাকে একটা কাঁচের শিশি দিলো।বললো এটা খাবারের সাথে মেশাতে।আমি কিছু বলতে চাইলে আমার হাত চেপে আগুনের অনেক কাছাকাছি ধরে রাখে।এই দেখুন স্যার আমার হাত অনেকটা পুড়ে গেছে”
বলেই হাত এগিয়ে দিলো সাব্বির। হাতের কিছু অংশ পোড়া। স্পষ্ট লক্ষ করা যাচ্ছে সেটা হাতের তালুতে। শাবাব প্রশ্ন করলো,
-“তারপর?”
-“তারপর আমাকে বলে অন্যহাতে যেনো শিশি’র মধ্যে বিষ মেশাতে।নাহয় নাকি হাত ছাড়বে না।আমি কাঁপতে কাঁপতে মিশিয়ে দিলাম।ততক্ষনে বিশ্রী একটা গন্ধ ছড়ায় কিচেনে।ডেস্ক থেকে বিশাল চাকু নিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো।বললো এই গন্ধ পুরোপুরি শেষ করে দিতে।আমি কোনো উপায় না পেয়ে হাতের কাছে কেউড়া জল আর যত ধরনের মশলা ছিলো মিশিয়ে দিয়েছি।পুরো কিচেনে স্প্রে করা হয়।আমার চোখের সামনে যা ঘটছিল আমি কোনো হুশে ছিলাম না স্যার।আমাকে যা বলা হচ্ছিলো আমি করতে বাধ্য।খাবার রেডি হলে আমি বেল বাজাই।ঠিক সেই সময়ের মধ্যে ওই লোক আমাকে নিয়ে চলে যায়।আমাকে বাহিরে এসে ম্যানেজারকে কল করায়।বলতে বলে খাবার রেডি করে আমি চলে গিয়েছি।আমাকে পাঁচ হাজার টাকা ধরিয়ে বলেছে এক সপ্তাহের জন্য যেনো শহর ছেড়ে যাই।”
সাব্বির কথা বলা থামানোর সাথেসাথে রবিন আরো এক প্রশ্ন করলো,
-“তুমি ওকে দেখেছো?কেমন দেখতে?”
-“আমাকে সে এটাও বলেছে এক সপ্তাহ পর রেললাইনের পাশের জঙ্গলের এরিয়া থেকে পাঁচ মিনিট হাঁটলে একটা জায়গা আছে সেখানে দেখা করতে।হুমকির উপর রেখেছিলো।আমি গিয়েছি গতকাল সেখানে।ওই লোক ওখানেই ছিলো।আমি তার কাছে জানতে চাই এরপর কি করবো।সে আমাকে বলেছে বাঁচতে চাইলে মুখ বন্ধ রাখতে।এখানে আপনারা আমাকে খুঁজছেন।সেখানে ওই লোক আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।আমি সাহস করে এসেছি এখানে স্যার।হাত জোড় করছি আমাকে ওই হিংস্র লোক থেকে বাঁচান।”
রেল লাইনের পাশের জঙ্গল। যেখানে প্রফেসর এর কেসের পূর্বের লাশটা পাওয়া গিয়েছিল। চিনতে ভুল করলো না শাবাব।সেখান থেকে তাদের উপর গুলিও ছোড়া হয়েছিলো।
শাবাব বললো, -“তোমাকে কি জিজ্ঞেস করেছে এস. আই রবিন?সে দেখতে কেমন?নারী নাকি পুরুষ সেটা বলো”
সাব্বির ভাবলো কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে।ঠোঁট কামড়ে মনে করার চেষ্টা করলো। হঠাৎ মনে পড়লো তার চুলের কথা।সাব্বির দ্রুত গলায় বলে উঠে,
-“স্যার দেখতে লম্বা চওড়া দেহ।সাথে কালো মোটা কাপড় পড়ে থাকায় আরো বিশাল দেখাচ্ছিল।ছেলে না মেয়ে ঠিক বলতে পারছি না। কিন্তু আমি তার সামনের অংশের চুল দেখেছি।ছেলেদের যেমন সামনের কাট থাকে ঠিক তেমন ছিল।গলার আওয়াজও অদ্ভুত ছিলো স্যার।”
শাবাব রবিন কিছু বলার পূর্বে সাব্বিরের চোখ পড়ে তাদের হাতে থাকা বন্দুকের উপর।আরো একবার মস্তিষ্ক জ্বলে উঠলো তার।বললো,
-“স্যার আপনারা ডান হাতে বন্দুক ধরেন?”
-“হ্যাঁ কেনো?”
-“স্যার ওই লোক বাম হাতে বন্দুক ধরে।”
অহেতুক ছেলেটার উপর রাগ দেখিয়েছে শাবাব।অথচ অনেক ইনফরমেশন দিয়ে যাচ্ছে সে।তার কাঁধে হাত রেখে বলল,
-“গ্রেট জব।…কিন্তু তুমি বেকুবের মতন একটা কাজ করেছো এতদিন পালিয়ে থেকে।এবার আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো।স্বল্প সময়ের জন্য বিশ্বাস করলাম তোমাকে।পুরোপুরি নয়। দ্বিতীয়বার যেহেতু তোমার সাথে তার দেখা হয়েছে আবারো হতে পারে।তুমি আমাদের হয়ে কাজ করবে।আমাদের ওই জায়গায় নিয়ে চলো এক্ষুনি।আমাদের হয়ে কাজ করলে বেঁচে যাবে সাব্বির।ওই খুনীর হয়ে কাজ করলে হয়তো তার হাতে মরবে নয়তো আমাদের হাতে।”
চলবে…
“আ না ম”- ১৮
-Azyah সূচনা
কে হবে অপরাধী?নিজের লোক নাকি বাহিরের? শাবাবের মতলব আন্দাজ করেছে মোটামুটি সকলে।বাকিটা সে নিজ থেকেই পরিষ্কার করে বললো।এমন কাউকে উপস্থাপন করবে যে নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িত।তার ভাষ্যমতে একজন হবে অপরাধী আরেকজন ভুক্তভোগী।সবটাই হবে সাজানো নাটক।আর এই নাটক ধরে ‘আনাম’ আসবে তাদের ফেলা জালে।যদি অপরাধীদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয় তার মুখ্য বিষয় সে আসবে!নিশ্চয়ই আসবে অপরাধীর কাছে।সাব্বির এর কথায় পরিষ্কার।খুনি চট্টগ্রামেই আছে।তাই জায়গা বেছে নিলো রেললাইন এর পাশের জায়গাটাকে।
আপাদত ব্যুরোতে বসে শাবাব নজর ঘোরাচ্ছে সবার দিকে।বলির পাঠা কে হবে।এখানে সকলে পুরুষ।রবিন সেফ জোনে।বাকিদের অবস্থা নাজেহাল।কয়েক দফা একেক জনের দিকে চেয়ে তার নয়নজোড়া এসে থামে ফাহাদের দিকে। টুপ করে ঢোক গিললো বেচারা।
তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো,
-“স্যার আমার মুখ মোটেও অপরাধীর মতন না।”
-“আমি তোমায় কিছু বলেছি ফাহাদ?” বিপরীতে প্রশ্ন আসে শাবাবের ক্যাটক্যাটে গলার স্বর ধরে।
কপালে আঙ্গুল ঘষতে ঘষতে ফাহাদ বললো,
-“না স্যার.. মানে?আমার দিকে চেয়ে ছিলেন যে?”
-“তোমাকে আজ দেখতে বিশ্রী দেখাচ্ছে।এইযে অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলে?কত মেয়ে সেখানে জানো?একজন না একজনের প্রেমে পড়ার কথা।এটাইতো বয়স।এখন কে পছন্দ করবে তোমায়?উল্টো বখাটে ছেলে ভেবে গণধোলাই দেবে।একজন অফিসার এর হতে হয় পরিপাটি।আর তোমাকে ছন্নছাড়া অপরাধীর মতন লাগছে।এখন কি করা যায় বলো?”
আবির,মির্জা,রবিন সকলেই ঠোঁট টিপে হাসছে।মির্জা ধরে ফেলেছে শাবাবের জঞ্জালে পূর্ণ মস্তিষ্কের কারসাজি।সরাসরি নয় ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বললো।অপরাধীর খাতায় ফাহাদ এর নামটাই উঠতে যাচ্ছে।বলির পাঁঠা সেই।
ফাহাদ বললো নিচু গলায়,
-“আমি কি করবো স্যার?আমিতো এখনও ছোট মানুষ।…সমস্যা নেই শিখে নিবো কিভাবে আপনার মতন পরিপাটি হতে হয়।”
শাবাব মির্জার দিকে চাইলো আরচোখে। রহস্যময়ী মৃদু হাসলো।বললো,
-“দেখছো মির্জা?ফাহাদ বাবাজী কথাও বলে”
মির্জা সায় দিয়ে উত্তর দেয়,
-“দেখছি।এখন ওকে কি করা উচিৎ?”
-“শেওলাকে ডাকো”
মির্জা কপাল কুঁচকে নিলো।সাথে বাকিরাও আশ্চর্য্য। শেওলাকে ডাকবে?কিভাবে?মির্জা বললো,
-“লিয়ানা এখানে নেই শাবাব।”
হতবিহ্বল চোখ শাবাবের।লিয়ানার নাম শুনে নিজের মন আর মুখের উভয়ের ভুল বুঝতে পেরেছে।এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে বারংবার। ভুলকে ঢাকতে উচু কন্ঠস্বর ব্যবহার করে বললো,
-“স্লিপ অফ টাং!সাইফাকে ডাকো!”
নিজের চেয়ার থেকে দ্রুত গতিতে উঠে কফি মেশিনের দিকে যায়।বিড়বিড় করতে থাকে বাকিদের শুনিয়ে,
-“পাগলের সাথে থেকে আমাদের মাথাটাও রসাতলে যাচ্ছে।আবার এস. আই রবিন বলে তাকে আমাদের সাথে যুক্ত করতে।তখন পুরোপুরি পাগল হবো।তারপর কি?তারপর কেস সলভ।সব অফিসারস মিলে পাগলা গারদে থালা বাসন পেটাবো!যত্তসব পাগল ছাগলের কারখানা!”
গজগজ করে একেকটা বাক্য ছুঁড়ে শাবাব।মির্জা কোনোদিন দেখেনি এভাবে নজর লুকিয়ে সরে যেতে।ফাহাদ হা করে চেয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে তার শাবাব স্যারের মাথাটাও বুঝি গিয়েছে এই আনাম আনাম করে।
রবিন বলল,
-“আমরা ঠিকই আছি।পাগল বোধহয় আপনিই হচ্ছেন।”
মুখমণ্ডল বিবর্ণতায় টইটুম্বুর। বিরক্তিতে ভরা মুখটায় সবসময় ভাঁজ দেখা যায়।কিছু কুচকানো দাগ স্থায়ী হয়ে গিয়েছে। এস. আই রবিনের দিকে চেয়ে কফি মগের খটখট আওয়াজ করতে শুরু করে শাবাব। সম্পূর্ণ প্রসঙ্গ পাল্টে দিয়ে বললো,
-“সাইফাকে ডাকতে বললাম না? কোথায় সে?কাজের সময় দেখা যায় না কেনো আহাম্মকটাকে?”
নিজের কপালে নিজেই টেনে হিঁচড়ে শনি নিয়ে এসে হাজির ফাহাদ। সাইফার সাথে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।অপেক্ষায় তারা।কখন শাবাব মহোদয়ের কফি ফুরাবে।আর সেও কফির মতন তেতো বাক্য ছুঁড়ে দিবে।দুজনেই পেছনে দুহাত বেঁধে শাবাবের সামনে দাঁড়িয়ে।পায়ের উপর পা তুলে সাহেবী ভঙ্গিতে বসে শাবাব কফি গিলছে।মিনিট দুয়েক পর কফির মগটা টেবিলে রেখে সাইফার দিকে চাইলো।
অদ্ভুত এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,
-“তোমরা মেয়েরা যেনো কি কি মাখো মুখে?…. হ্যাঁ মেকআপ! পারো?”
সাইফা জবাব দিলো, -“আমিতো মেকআপ করিনা স্যার”
-“তুমি কি ছেলে?”
-“ছেলে হবো কেনো স্যার?”
-“তাহলে মেকআপ করো না কেনো?”
সাইফা চোখ নামিয়ে খানিক বিরক্তি মাখা গলায় জবাব দিল,
-“মেয়ে হলেই মেকআপ করতে জানতে হবে এমন কোনো কথা নেই স্যার।আর যে পেশায় আছি।সেখানে মেকআপ করার সময় কোথায়?”
-“ভেরি গুড অফিসার সাইফা।এখন না পারলেও আপনার মেকআপ করতে হবে।সেটা নিজের মুখে নয় ফাহাদের মুখে”
ফাহাদের চক্ষু রসগোল্লার মতন বিশাল হয়ে উঠে।সে মেকআপ কেনো করবে?ছোটোখাটো হার্ট অ্যাটাক আসার পূর্ব মুহুর্ত।আর কি কি দেখতে হবে? কি কি করতে হবে? শেষমেশ কিনা মেয়েদের প্রসাধনী সামগ্রী নিজের মুখের উপর চালান দিবে? ছিঃ!
ফাহাদ অসহায় মুখে বললো, -“স্যার?”
-“শাট আপ। এমন মুখ নিয়ে তোমাকে আমি এই ব্যুরোতে এলাউ করবো না।…. সাইফা কাজ শুরু করো। ফিরোজকে দেখেছো না?হ্যাংলা পাতলা?ফাহাদের মুখে কালো মেকআপ করো।এমন একটা লুক দিবে যেনো দেখে মনে হয় কোনো অপরাধী।একটা ট্রায়াল দাও।আমরা একটু জঙ্গল ভ্রমণ করে আসি।বেস্ট অফ লাক”
মির্জা আর রবিন উঠে দাড়ায়।ল্যাবে দাঁড়িয়ে দাঁত বের করে হাসছে আবির। হাসতে হাসতে নিজের বাহুর ব্যথাটা মনে পড়লো।গুলি লেগেছিলো এখানে।তৎক্ষনাৎ হাসি উধাও হয়। শাবাব দরজা অব্দি গিয়েও ফিরে আসে।
বোকার মতন দাঁড়িয়ে থাকা সাইফার সম্মুখে ঘাড় বেঁকিয়ে বললো,
-“আর আপনি হবেন অবলা নারী। ভুক্তভোগী।আপনাকে উত্যক্ত করবে ফাহাদ। দ্রুত প্র্যাকটিস শুরু করুন অফিসার সাইফা”
সাইফা আর ফাহাদের একে অপরের চোখে চোখ পড়লে গা তিরতির করে উঠে।ভাবা যায় এগুলো? ফাহাদের মতন ভোলাভালা ছেলে মেয়ে উত্যক্তকারী বখাটে হবে?আর সিনিয়র সাইফা হবে তার শিকার।জীবনে যত পাপ করেছে সবটার প্রায়শ্চিত্ত এই এক কেসের মধ্যেই চুকে যাবে। সাইফা লম্বা শ্বাস টেনে নিয়ে আবার ফেলে দেয়।
বলে, -“আসো”
ফাহাদ অবুঝের মতন প্রশ্ন করলো, -“কোথায় ম্যাডাম?”
-“নারী উত্যক্তকারী সাজবে না?”
হতাশ!চরম হতাশ ফাহাদ এস. আই শাবাবের আদেশে।লোকটা মোটেও সুবিধার নয়।নিজের দেহের সমস্ত বেদনা ভুলে আবির চেয়ে আছে ফাহাদ আর সাইফার দিকে। হাসতে হাসতে জমিনে গড়াগড়ি খাচ্ছে না এটাই অনেক।
সাইফা ফাহাদের মুখে ব্রাশ চালাতে চালাতে চোখ কটমট করে চায় আবিরের দিকে।বলে,
-“পয়জন কি দিয়ে তৈরি বের করতে পেরেছেন স্যার?”
-“জেরা করছো সাইফা?”
-“এটাই আমাদের কাজ।”
-“শাবাবকে জেরা করো পারলে”
-“উনি এই গ্রহের মানুষ হলে নিশ্চয়ই করতাম।”
ফাহাদের মুখ দেখে সাইফার হাসিও থামলো না।ছেলেটা আজ শাবাবের কারণে ভুক্তভোগী। ইউটিউব দেখে দেখে মেকআপ করছে সাইফা।যেখানে মেকআপ মানুষের সৌন্দর্য্যকে আরো ফুটিয়ে তোলে সেখানে সেই কাজের উল্টো করতে হলো।সৌন্দর্য বাড়ানোর পরিবর্তে সৌন্দর্য্য হ্রাস করছে।জ্ঞানী অভিজ্ঞ মেকআপ আর্টিস্ট বলছেন।বোঝাচ্ছেন ফোনের স্ক্রিনে কিভাবে গোয়েন্দারা তাদের বেশ পাল্টে অপরাধীকে ধরতে যায়।সেখানে মেকআপ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ফাহাদ বললো,
-“সবই নিজের ভিডিও মানুষকে দেখিয়ে টাকা কামানোর ধান্দা। মেকআপ নাকি অপরাধীকে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে! আইনের কয় নাম্বার ধারায় লেখা এটা!যত্তসব!”
-“চুপ থাকো ফাহাদ। শাবাব স্যার আসলে আমাদের দুজনকে আস্ত রাখবে না।”
-“এর বিনিময়ে কি আমাকে এক্সট্রা টাকা দেওয়া হবে ম্যাম?….আমি এই অভিনয়ের বিনিময়ে এক্সট্রা টাকা চাই। এডিডাস এর একটা জুতো কিনবো”
-“আর ওই জুতো দিয়েই শাবাব স্যার তোমার সংবর্ধনা দেবে।এবার চুপচাপ বসো।আমার কাজ করতে দাও।তোমাকে তামিল হিরো বানাবো দাঁড়াও”
__
অন্ধকারে ডুবে গভীর জঙ্গল,
বাতাসে কানে মৃদু মৃদু স্বপ্নের ঝড়কাল,
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে লেপ্টে চিত্রিত,
ভয় আর আনন্দের মিশ্রিত রুপালি।
রাতের পাখি সুলগিয়ে গান গায়,
ভয়ের ঝাপটা আবির্ভাব করে নায়,
চাঁদের আলোয় রহস্যময় ভাসা,
অনুভূতির জালে অবিরত ফাঁসা।
জঙ্গলের অন্ধকারে দেখা সুস্পষ্টভাবে সৃষ্টিকৃত কিছু অবাক প্রাকৃতিক দৃশ্য।অন্ধকারের ভেতরে মহাকালীন চিরস্থায়ী সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। বনের ঘোরে কিছু অদ্ভুত শব্দের মধ্যে বাস্তবিকতা ও অনুভূতির রহস্যময় প্রকাশ।ভয়ানক জঙ্গলের চিত্র মানুষের মতই চমৎকার আবার ভিন্ন কল্পনার চেয়ে।রাতের অন্ধকারে জঙ্গলের গুগুলি শুনে মনে হয় যেমন প্রাকৃতিক শহর। চাঁদের আলো আলোকিত।অজানা এক অনুভব। অদ্ভুত স্বরে মাঝে মাঝে শ্বসন শোনা যায়, যেনো জঙ্গলের নিঃশ্বাস। সাথে আছে ভয়াবহ নিশানা।
একহাতে হলদে বাতি ছড়ানো টর্চ লাইট।অন্যহাতে সুরক্ষা বস্তু।কেউ হামলা করতে এলেই দেহের যে কোনো অংশে গেড়ে দেবে গুলি।
শাবাব মির্জার উদ্দেশ্যে বললো,
-“আমাদের আলাদা আলাদা জায়গায় সার্চ করা উচিত।”
রবিন তার কথার প্রেক্ষিতে বললো,
-“না এস. আই শাবাব।এখানে নেটওয়ার্ক নেই।আমরা কোথাও কিছু সন্দেহজনক পেলেও একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারবো না”
শাবাব মাথা দুলিয়ে উত্তর দিলো, -“রাইট!”
মির্জা বললো,
-“এই জঙ্গলে কোনো বন্য প্রাণী নেই। আসামী অনায়াসে এখানে ঘাঁটি স্থাপন করতে পারে।”
-“আর ইউ শিউর কোনো বন্য প্রাণী নেই?” রবিন জানতে চাইলো।
মির্জা বললো,
-“না এখানে কোনো বন্য প্রাণী নেই।সাপ থাকতে পারে সামনে পরিত্যক্ত ডোবা আছে একটা।”
রবিন বলল,
-“সেটায় সমস্যা নেই।একটু সাবধানে চললেই হবে।অপরাধী যদি এখানটায় থাকতে পারে আমরাও পারবো।”
-“আগে শিউর হয়ে নেই?”
রবিন পরাভূত গলায় বললো,
-“জঙ্গলের পাশের এরিয়া সার্চ করলাম।মানুষ কেনো মানুষের ছায়া অব্দি নেই।একটা বেঞ্চি আছে যেটার কথা বলেছিলো সাব্বির।আমি কিছুই বুঝতে পারছি না কেসটা কোন দিকে যাচ্ছে।”
-“একটার পর একটা জঞ্জালে ফেঁসে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।” একি সুরে মির্জা বললো।
শাবাব গান রিলোড করলো।তার এরূপ কাজে মির্জা এর রবিন একই সাথে জানতে চায়।কারণ কি? শাবাব চোখ দিয়ে ইশারা করে দেখায় ডান দিকে বরাবর এক জায়গা।আলোর দেখা মিলছে সেখানে। আধাঁরে ঢাকা জঙ্গলে আলোর সন্ধান অর্থাৎ কোনো প্রাণ আছে সেখানে।এলার্ট হয় বাকি দুইজন।একে একে নিজেদের গান রিলোড করে নেয়।পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ট্রিগারে তর্জনী আঙ্গুল রাখা আছে।প্রয়োজনে চাপ প্রয়োগ করবে সেখানে।কাছাকাছি গিয়ে দেখলো ছোট্ট একটি টেন্ট।সবুজ রঙের।পাশে আগুন অর্ধ নিভে।ওই সামান্য আগুনের শিখা ধরেই শাবাব,মির্জা,রবিন এসেছে এখানে।সতর্কতা অবলম্বন করে।
শাবাব বললো,
-“আশপাশ খেয়াল রাখো।আমি যাচ্ছি টেন্ট এর মধ্যে।”
-“সাবধানে”
জঙ্গলের উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম সব দিকে দু’জোড়া চোখের কড়া দৃষ্টিপাত।যেকোনো জায়গা থেকে আকস্মিক আক্রমণ।সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ পড়লো না উপরের দিকটাও।গাছের ডালে ডালেও চোঁখ গিয়েছে মির্জা আর রবিনের।মুখ ঘুরিয়ে একবার শাবাবকেও দেখে নিলো। টেন্টের মধ্যে যা কিছু আছে সব এলোমেলো করছে।হাতের গতি তাই বোঝালো।
মিনিট খানেক এর মাঝেই শাবাব বেরিয়ে আসে।তাকে বেরিয়ে আসতে দেখে এগিয়ে গেলো রবিন আর মির্জা।তার হাতে কাগজ।
রবিন জানতে চাইলো, -“এটা কি?”
-“পুরো টেন্ট জুড়ে শুধু ঘাস আর ঘাস।একটা কিছু নেই।এই কাগজটা ছাড়া।কিছু লেখা আছে।”
মির্জা কাগজটি হাতে তুলে নেয়।মধ্যম আওয়াজে পড়ে শোনাতে লাগলো লিখিত বাক্যগুলো।মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে মির্জার বলা প্রত্যেক লাইনে। চিঠিটায় লেখা,
“এসেছেন অফিসার্স?জানতাম আসবেন।আমার খোঁজে আসবেন।আর ভেবেছিলেন আমাকে পাবেনও?এত সহজে?…..একটা কথা আছে।আপনারা আমার পেছনে,আমি আপনাদের পেছনে।…..তবে আমি কিছুদিন এই খুন খারাবি থেকে রেস্ট নিচ্ছি।হাত কঠোর হয়ে যাচ্ছে।….আপনারাও একটু চিল করুন।নাহয় অন্য কেসগুলো দেখুন।আপনাদের চোখের আড়ালে আরো অনেককিছু হচ্ছে….আনাম যেদিন চাইবে সেদিন তাকে পাবেন।আর না চাইলে পাবেন না।আর আপনাদের তদন্তকে আরেকটু মশলাদায়ক বানাতে এই চিঠিতে আমার ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে গেলাম।খুঁজতে থাকুন অথবা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।চোখে চোখে রাখলাম আপনাদেরকেও।অতি চালাকিতে নরকের সাক্ষাৎ হবে সকলের।ওহ হ্যাঁ…..তেইশ সেপ্টেম্বর এর জন্য রেডি থাকুন।দেখা হতে পারে অথবা হবে। হু নৌজ?বেস্ট অফ লাক!”
চলবে….