প্রানেশা পর্ব-১২

0
219

#প্রানেশা
#পর্ব_১২
#জান্নাত_সুলতানা

সারাহ কে হসপিটাল থেকে বাড়ি আনা হয়েছে। রিয়াজ মাহমুদ রাহনুমা বেগম দুজন মিলে সারাহ কে দেখতে গিয়েছে।সমুদ্র রাশির শরীর ভালো না তাই রাহনুমা বেগম আর রিয়াজ মাহমুদ কে থাকার জন্য বলে গিয়েছে। সে নিজেও যত দ্রুত সম্ভব ফিরা আসার চেষ্টা করবে।
রিহান কর্মচারীর সাহায্য দোকান সামলে নিবে বলে রিয়াজ মাহমুদ কে থাকতে বলেছে।একটা মাত্র আদরের বোন তাঁর। কিছু হলে সে পাগল হয়ে যায়।সেখানে বোন টা তার উপর অসুস্থ সম্ভব হলে সে নিজে গিয়ে থাকতো।নয়তো বোন কে নিজের কাছে নিয়ে আসতো।কিন্তু এটাও সম্ভব না সমুদ্র রাজি হবে না।
মিরা বাড়িতে এখন একা রয়েছে। রিহান আজ সাতটার দিকে বাড়ি চলে এলো।মেয়েটার কাল বৃষ্টিতে ভেজবার ফলে শরীর হাল্কা গরম।বাড়িতেও কেউ নেই। সব দিক বিবেচনা করে রিহান জলদি বাড়ি ফিরে।
উঠোনে এসে মিরা কে ডাকতেই মিরা গেইট খুলে দিলো। রিহান বাজার থেকে ফিরার সময় মিরার জন্য একটা পার্সেল নিয়ে এলো।
সেটা মিরার হাতে দিতেই মিরার চোখ খুশিতে চিকচিক করে ওঠে।
জ্বর নেই। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে মনে হচ্ছিল টক জাতিই কিছু হলে খেতে পারতো।
দুপুরেও খাবার খেতে পারে নি হয়তো রিহান সেটা লক্ষ্য করেছে।
মিরা ফুচকার প্যাকেট নামিয়ে নিতে ব্যাগে আরও কিছুর সন্ধান মিলে।সেখানে একটা আইসক্রিম রয়েছে।অষ্টাদশী কন্যা মিরার যেনো সব স্বপ্ন মনে হচ্ছে।
রিহান ফ্রেশ হয়ে এসে মিরা কে খাবার ঘরে থম মে’রে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,

-“এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

মিরা শুধু রিহানের দিকে চমৎকার এক চাহনিতে তাকিয়ে রইলো। যাতে রয়েছে একরাশ ভালোলাগা।
রিহান বুঝতে পারলো।আজ হয়তো সে একটু বেশি অস্বাভাবিক আচরণ করছে।
তবে নিজে কে গুটিয়ে নিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো।

-“কিছু বানিয়ে দেই আপনাকে?”

-“তুমি খাও।
অসুস্থ শরীর নিয়ে কিছু করতে হবে না।”

মিরা জোর করলো।তবে রিহান এক ধমক দিতেই মেয়ে টা চুপ করে গেলো।
অভিমান হলো।তবে রিহান কে বুঝতে দিলো না।
এগিয়ে এসে গুটিশুটি মেরে রিহানের পাশে বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই বসলো।ফুচকা হাতে আগে একটা রিহানের মুখের সামনে ধরলো।রিহান ফোনের স্কিনে তাকিয়ে ছিল হঠাৎ সামনে ছোট হাত টা দেখে চমকাল।তবে নিজে কে সামলে মিরার দিকে এক পলক তাকিয়ে মিরার হাত থেকে ফুচকা টা মুখে নিয়ে নিলো।
মিরার নিজেও একটা নিলো।
পর পর রিহান দু’টো নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“আমি আর খাব না।
তুমি খেয়ে নাও।”

মিরা কিছু বলার আগেই রিহান দ্রুত পা রুমে চলে গেলো।
মিরা মুচকি হাসলো। লোক টা ভীষণ নরম মনের মানুষ।খুব সহজে চাইলে সেই নরম মনে মিরা হয়তো নিজের নাম টা লিখে নিতে পারবে।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে মিরা খাবার শেষ নিজেও রুমে চলে গেলো।

——-

-“শোনছেন?”

রাশি ফোন টা কানে চেপে ঘুম জাড়ানো কণ্ঠে ডাকল।সমুদ্র বেসামাল হলো।তবে নিজে কে শক্ত করে মৃদু কণ্ঠে বলল,

-“হুঁ,বলো বউ!”

-“আপনি একটু ভালো না।”

সমুদ্রের কথা শুনে রাশি আবার আগের ন্যায় কণ্ঠে অভিযোগ করল।
সমুদ্র এক টা ফাঁকা ঢোক গিলে।
বউ তাকে নাস্তানাবুদ না করে ছাড়বে না।এই জন্যেই সমুদ্র নিজে কে ব্যস্ত রাখে।দিনে দুই থেকে বেশি হলে তিন বার কল করে।রাতে তো কল দেয় না।কিন্তু আজ কিছুতেই ঘুম আসছিল না।তাই তো না পেরে কল দিলো। কিন্তু কল দিয়ে মনে হচ্ছে নিজেই ফেঁসে গিয়েছে।
সমুদ্র নিজে কে স্বাভাবিক করে।
ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করে,

-“আমি কি করলাম?”

-“আপনি আজ এক সাপ্তাহ ধরে আমাকে একটুও ভালোবাসেন নি।”

সেই আবার অভিযোগ। সমুদ্র নিজের মনস্থির করার চেষ্টা করে।
এবার যেনো সে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে।
মেয়ে টার কাছ থেকে তাঁর এক দিন দূরে থাকা এক যুগ মনে হয়। এখন সব ফেলে দিয়ে ছুটে আসতে মন চাচ্ছে। কিন্তু এটা তো সম্ভব নয় রাত বাজে আড়াই টের মতো।
সমুদ্র হঠাৎ বাঁকা হাসলো।
বউ তাঁকে জ্বালাচ্ছে।এখন না হয় সে নিজেও একটু জ্বালাল।
নেশাতুর কণ্ঠে নিজের বক্তব্য রাখেন,

-“প্রস্তুত হোন।
সমুদ্র শিকদার খুব শীগগির তাঁর ভালোবাসার দাবানলে আপনাকে পোড়াতে আসছে।”

রাশির ঘুম উড়ে গেলো।
চোখ বড় বড় শোয়া থেকে ওঠে বসে।
আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই সমুদ্র বলে উঠলো,

-“কাল কলেজ থেকে আমি নিতে যাব।
পরীক্ষার যা যাবতীয় কাজ সব আমি করিয়ে নেব।
টেনশন করো না।
ঘুমিয়ে পড়ো।”

-“আচ্ছা।”

সমুদ্র কল টা কাটলো না।
রাশি ফট করেই জানালো,

-“ভালোবাসি।”

-“উঁহু।
সেটা রাতে প্রমাণ হবে।”

সমুদ্র’র এমন লাগামহীন কথা শুনে রাশির কান গরম হয়ে এলো।
লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে ফট করে কল কাটে।

——

সময় খুব দ্রুত চলে যায়।খারাপ ভালো কোনো টাই স্থায়ী হয় না।শুধু মানুষের মনে হয় খারাপ সময় কাটতে চায় না আর ভালো সময় খুব দ্রুত কাটে।
মিরা রিহানের সাথে এই এক সাপ্তাহ খুব ভালোই কেটেছে। রাহনুমা বেগম আর রিয়াজ মাহমুদ দু’দিন পরেই শিকদার বাড়ি থেকে নিজেদের বাড়ি ফিরে গিয়েছে।
রাশি মিরা কলেজ এর কিছু কাজ ছিল সেগুলো শেষ করে কলেজ হতে বেড়িয়ে এসে দেখলো রিহান অপেক্ষা করছে ওদের জন্য।
ওঁরা এগিয়ে এলেই রিহান বলল,

-“তাড়াতাড়ি কর বনু।
তোকে রেখে আবার দোকানে যেতে হবে।”

রাশি মুখ টিপে হেঁসে বলল,

-“আমার জন্য এসছো!না-কি ভাবির জন্য।
আচ্ছা যাই হোক তুমি মিরা কে নিয়ে যাও।”

-“সমুদ্র আসবে?”

-“হুঁ।”

রিহানের প্রশ্নের জবাব জানালো রাশি।রিহান বোন কে রেখে যেতে চাইল না তবে রাশির জোড়াজুড়িতে বাধ্য হয়ে মিরা কে নিয়ে চলে গেলো। যাওয়ার সময় অবশ্য অনেকবার সাবধানে থাকতে বলে গিয়েছে।
রিহানরা চলে গেলে রাশি কলেজের পেছন গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। কলেজে তেমন একটা স্টুডেন্ট নেই কয়েকদিন পর পরীক্ষা সেই সুবাদে শুধু অফিস কার্যকম চলছে।আর যাঁরা আছে তাঁরা সবাই কলেজর ভেতরে। এদিক টা একদম ফাঁকা। রাশির এতোক্ষণ ব্যাপার টা খেয়াল না করলোও এখন বুঝতে পেরে কেমন একটা ভয় ভয় লাগছে। রাশি ভাবলো মেইন গেইটে গিয়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের জন্য অপেক্ষা করবে।কিন্তু রাশি ওদিকে যাওয়ার আগেই রাশির হাতে থাকা বাটন ফোন টা বেজে উঠল। রাশি ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো সমুদ্র কল করেছে। রাশি কলটা রিসিভ করে হ্যালো বলার সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্রের কণ্ঠ শুনতে পেলো।তবে হঠাৎ পেছন দিক হতে কেউ কাপড় জাতীয় কিছু মুখে চেপে ধরলো।রাশি কোনো শব্দ করতে পারে না ওদিকে ফোনের ওপাশে সমুদ্র রাশির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অস্থির হয়ে রাশি কে ডেকে চলছে। এদিকে রাশির চোখের জলে গাল বেয়ে মুখের কাপড় টায় এসে ঠেকলো।কয়েক সেকেন্ড এর মতো ধস্তাধস্তি করলো। অতঃপর মিনিটের মাথায় চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। ঢলে পড়লো পেছনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটার উপর।
ব্যক্তিটা রাশি কে টেনে নিয়ে চলে গেলো পেছন গেইট দিয়ে আবার কলেজে এর ভেতর চলে গেলো। অবহেলায় পড়ে রইলো রাস্তায় রাশির ছোট বাটন ফোন টা।

——

সমুদ্র রাশির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে অস্থির হয়ে উঠলো কল কেটে আবার কল দিলো তবে কল টা রিসিভ হলো না।
সমুদ্র গ্রামের প্রায় পৌঁছে গিয়েছে। কলেজ পৌঁছাতে বেশি হলে মিনিট দশকের মতো লাগবে।
সমুদ্র হেলমেট এর ভেতর ব্লুটুথ টা আরও কয়েকবার চাপলে কাজ না হওয়াতে বাইকেরে গতি বাড়িয়ে ছুটতে লাগল নিজের গন্তব্যে।

#চলবে…..