প্রানেশা পর্ব-১৫

0
308

#প্রানেশা
#পর্ব_১৫
#জান্নাত_সুলতানা

সমুদ্র আর রাশি রাত দেড়টা নাগাদ এসে শহরে পৌঁছাল।রিক্সা হতে নেমে বিশাল বড় এক দালানের ভেতর প্রবেশ করলো। গেইটে থাকা সিকিউরিটি গার্ড অবাক চোখে তাকালো দুজনের দিকে।তবে সালাম ঠুকলেন। রাশি দারোয়ানের দৃষ্টি সব টা পর্যবেক্ষণ করলো।
দারোয়ান অনেকবার করে সমুদ্রের হাতের ব্যাগ টা নিতে চাইল।তবে সমুদ্র বারণ করে দিলো প্রতিবার।বাড়ি টা যথেষ্ট বড় ডুপ্লেক্স চোখধাঁধানোর মতো চমৎকার বাড়িটার দিকে রাশি অবাক হয়ে তাকিয়ে বিস্ময় নিয়ে সমুদ্র কে জিজ্ঞেস করলো,

-“এটা আপনাদের বাড়ি?”

রাশির এহন বোকাবোকা প্রশ্নে সমুদ্রের পেট মুচড়ে হাসি পেলো।তবে হেয়ালি স্বরে বলল,

-“নাহ,আমরা তো এখানে ভাড়া থাকি।”

কথা টা বলতে বলতে সমুদ্র মেইন দরজার পাশের বোর্ডে সুইচ টিপে কলিং বেল বাজাল।
টুংটাং শব্দ হওয়ার সাথে সাথে একজন সুন্দর রমণী দরজা খুলে দিলো।দেখে মনে হচ্ছে যেনো এতোক্ষণ ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিল।ভেতর হতে পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে আসছে। মেয়ে টা সমুদ্র আর রাশির দিকে তাকিয়ে চমৎকার একখানা হাসি উপহার দিয়ে দরজা হতে সাইড হয়ে ওদের উদ্দেশ্য করে বলল,

-“এসো,ভেতরে এসো।”

সমুদ্র রমণীর দিকে তাকিয়ে নিজেও একটা মুচকি হাসি উপহার দিয়ে রাশির হাত ধরে ভেতরে এলো।
ভেতরে লিভিং রুমে তখন সমুদ্র ভাই আর বাবা বসে কথা বলছিল।সমুদ্র বাবা সমুদ্র কে দেখে ওঠে এগিয়ে এলো এসেই রাশি কে নিয়ে ওনার পাশে বসিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগলো। রাশির ওনার সাথে তেমন আগে বিশেষ আলাপপরিচয় নেই।তবে ওনি ভীষণ সাদাসিধা আর সরল মনের মানুষ এটা রাশি জানে।রাশি নিজেও সমুদ্রের বাবা আর ভাইয়ের সাথে আড্ডা দিতে লাগলো।সমুদ্র তখন একটা সিঙ্গেল সোফায় চুপচাপ বসে ফোনে স্ক্রল করছে।রাশি সে দিকে হতে চোখ ফিরিয়ে রান্না ঘরের দিকে এক পলক তাকালো।সেখানে সমুদ্রের ভাবি সহ আরও একজন মহিলা কিছু করছে।রাশি সমুদ্র ভাবির দিকে তাকিয়ে রইলো। কি সুন্দর দেখতে মানুষ টা।বয়স বুঝা যায় না। রাশির ভাবনার মাঝেই সমুদ্রের ভাবি সমুদ্র রাশি কে ফ্রেশ হয়ে খাবার খাওয়ার জন্য আসতে বলে।সমুদ্র তাই করল।কিন্তু রাশি তখনো বসে আছে। সমুদ্র বাবা আর ভাই ততক্ষণে ডাইনিং টেবিলে বসে পড়েছে। রাশি কে বসে থাকতে দেখে মেহরিন এগিয়ে এলো।রাশির কাঁধে হাত রেখে বলল,

-“তুমি রুমে যাও।
ড্রেস নিয়ে চিন্তা করো না।ফ্রেশ হয়ে এসো।”

রাশি জোর করে হাসার চেষ্টা করলো।সত্যি সে এতোক্ষণ ফ্রেশ হয়ে কি পড়বে সেটা নিয়েই চিন্তা করছিল।
রাশি গুটিগুটি পায়ে সমুদ্র সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেদিকে গিয়েছে রাশিও সে দিকে গেলো।

—–

সমুদ্র ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এলে রাশি ফ্রেশ হতে গেলো।সমুদ্র কোমড়ে শুভ্র রঙের টাওয়াল জড়িয়ে কাবাডে কিছু খোঁজে চলেছে। ঠিক তক্ষুনি দরজায় কেউ শব্দ করে। সমুদ্র গলা উঁচিয়ে জিগ্যেস করলো,

-“কে?”

-“আমি সমুদ্র।
খাবার টা রুমে দেব?”

সমুদ্রের ভাবি বাইরে থেকে জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করলো। সমুদ্র কিছু একটা ভেবে বলল,

-“তোমরা খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাও ভাবি।
আমি ওঁকে নিয়ে নিচে গিয়ে খেয়ে নেব।অনেক টা রাত হয়েছে যাও।”

সমুদ্রের ভাবি একটু ভেবে জানালো ঠিক আছে। সমুদ্র তপ্ত শ্বাস ছাড়ে। রাত বাজে দুইটার মতো। একে-তো ওঁরা আসবে শুনে কেউ খাবার খায় নি তারউপর এখন রাত অনেক টা হয়েছে তাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা বলল।
সমুদ্র অনেক খোঁজা-খুঁজি করে একটা প্যাকেট বেড় করলো।সেটা বিছানার উপর রেখে সেখান থেকে একটা জাম কালার শাড়ী বের করলো।সেটার সাথে শাড়ীর সব প্রয়োজনীয় জিনিস বেড় করে নিজে একটা স্লিভলেস এর সাদা রঙের শার্ট গায়ে দিয়ে ট্রাউজার পড়ে টাওয়াল নিয়ে ব্যালকনিতে মেলে দিয়ে এসে রাশি কে ডেকে জিজ্ঞেস করলো,

-“শেষ হয়েছে?”

-“হুঁ।কিন্তু পড়ব কি?”

রাশি মিনমিন করে প্রশ্ন করল।
সমুদ্র কোমড়ে দুই হাত রেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

-“তুমি টাওয়াল টা জড়িয়ে বাইরে এসো।
তাড়াতাড়ি এসো।”

রাশি প্রথমে রাজি না হলেও পরে বেড়িয়ে এলো সমুদ্রের কথা মতো।তবে লজ্জায় যে বারবার নিজে কে লুকানোর বৃথা চেষ্টা করছে সেটা দেখে সমুদ্র কেবল হাসলো।

-“তুমি এটা পড়ে নাও।
আমি খাবার নিয়ে আসছি।”

সমুদ্র নিজের দৃষ্টি এলোমেলো ঘুরিয়ে নিয়ে বলল।
রাশি চট করে এগিয়ে এসে একদম সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

-“আপনি পড়িয়ে দিন না,প্লিজ!”

রাশি বিয়ের পর শাড়ী পড়া শিখে নিয়েছে ওর মায়েরা কাছ থেকে। কিন্তু সমুদ্র কে জ্বালানোর জন্য এমন টা করছে সমুদ্র বেশ বুঝতে পারে।
সমুদ্র একটা ফাঁকা ঢোক গিলে। নিজে কে সামলে রাশির দিকে না তাকিয়ে বিছানায় থাকা শাড়ী টা নিজে হাতে নিয়ে ভাঁজ খুলতে খুলতে রাশি কে বলল,

-“তুমি বাকি গুলো পড়ে নাও।”

রাশির নিজের লজ্জায় চোখ বুঁজে আসছে। কিন্তু লজ্জা পেলে তো আর চলবে না।তাই সমুদ্রের পেছনে দাঁড়িয়ে বাকি গুলো পড়ে নিলো।সমুদ্র রাশির কোমড়ে শাড়ীর আঁচল গুঁজে দিতে গিয়ে বুঝতে পারলো।এই ভয়ংকর এক কাজ।তাঁর এটা হবে না। কিন্তু অন্য যা কিছু ঘটতে পারে এখন।সমুদ্র রাশির দিকে এক পলক তাকালো। মেয়ে টা মৃদু কাঁপছে সাথে কম্পন করছে কালচে ঠোঁট জোড়া। যা সমুদ্র কে আকৃষ্ট করেছে। নিজের ভালোবাসা স্ত্রী এমন রূপ সমুদ্র উপেক্ষা করতে পারবে না। যদিও সমুদ্রের ধৈর্য শক্তি খুব প্রখর কিন্তু সমুদ্র সেটা এখন কাজে লাগাতেন চাইছে না।তাঁর এখন বউয়ের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেওয়ার তীব্র ইচ্ছে মনে জাগ্রত হচ্ছে। আর সমুদ্র সেটা করলো।রাশি কে খাবলে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। রাশি নিজেও সমুদ্র’র পেটের কাছে পিঠে খামচে ধরে। দীর্ঘ এক চুম্বনে আবদ্ধ হয়।বেশ গাঢ় একটা স্পর্শ করে সমুদ্র রাশি কে ছেড়ে দিলো।নিজের দানবীয় হাতের আঁজলে রাশির মুখ টা নিয়ে ডান হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল উঁচিয়ে রাশির ঠোঁটে স্লাইড করে মৃদু কণ্ঠে বলল,

-“এখন এটুকুই যথেষ্ট।
বাকিটা পরে হচ্ছে।
শাড়ী টা পড়ে নাও খাবার নিয়ে আসছি আমি।”

সমুদ্র চলে গেলো রাশি কে ছেড়ে দিয়ে। রাশি একটা ঘোরের মধ্যে রয়েছে। এসছিল আগুন হয়ে জ্বালাতে কিন্তু এভাবে ছাই হয়ে মূর্ছা যাবে ভাবতে পারে নি। তবে পরক্ষণেই ভাবে যেই মানুষ টা কে দেখলে মুখের বুলি ফুঁড়িয়ে যায়।আর সেই মানুষ টার ছোঁয়ায় মূর্ছা তো যাবেই।
রাশি শাড়ী টা সুন্দর করে পড়ে নিলো।রাশি শাড়ী পড়ে রুমে থাকা বিশাল আয়না টায় একবার নিজে কে দেখে নিলো।
রাশি শাড়ীর আঁচল টা টেনেটুনে ঠিক করে নেয়।এর মধ্যে সমুদ্র খাবার থালা হাতে রুমে প্রবেশ করলো। রাশি দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজে গিয়ে সোফায় বসে। রাশি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে সমুদ্র গা ঘেঁষে বসলো।সমুদ্র খাবার মেখে আগে রাশির মুখে দিলো।রাশি চুপচাপ খেয়ে নিলো।সমুদ্র নিজেও খেলো। খাবার শেষ সমুদ্র রাশি কে পানি খাইয়ে দিয়ে নিজেও হাত ধুয়া এলো।
রাত অনেক টা হয়েছে রাশি গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। সমুদ্র লাইট অফ করে এসে রাশি কে টেনে নিলো নিজের প্রসস্থ বুকে।

-“এখান থেকে গিয়ে পরীক্ষা দিতে হবে?”

রাশি মিনমিন করে জানতে চাইলো।
সমুদ্র রাশির মাথার তালুতে চুমু খেয়ে বলল,

-“নাহ।
পরীক্ষার সময় হলে তোমাদের ওখানে রেখে আসব তোমায়।
আর আমাকে এখানে থাকতে হবে। কোম্পানির কিছু জরুরি মিটিং রয়েছে সামনে মাসে।তবে আমি রোজ পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করব।”

রাশি আর কিছু বলল না।সমুদ্রের গেঞ্জি কাঁধ থেকে টেনে সরিয়ে উন্মুক্ত করে সেখানে চুমু খেলো।
সমুদ্র বউয়ের মতিগতি বেশ বুঝতে পারে। তবে সমুদ্র রাশির চাওয়া পাত্তা দিলো না। রাশির অধরে আলতো স্পর্শ করলো নিজের রুক্ষ অধর দিয়ে। অতঃপর জানাল,

-“তোমার এক্সাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের মাঝে গভীর কিছু আর হবে না বউপাখি।”

#চলবে……