তোমাতেই বসবাস পর্ব-০৮

0
283

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
পর্বঃ৮

ক্যান্টিনের গেটের সামনেই আদ্রিয়ান নীড় আর তার আর তিনটা ক্লাসমেট দাঁড়িয়ে আছে পাচজন এর এইগ্রুপ এই মেডিকেলে একপ্রকার জনপ্রিয় বললেই চলে।সবচেয়ে বেশি আদ্রিয়ান নীড়ের। কিন্তু বাকী দুইজন ছাড়া মানায় না তাদের আদ্রিয়ান, নীড়, আশিক,আফতাব,আর মিথিলা তাদের সামনে এগিয়ে আসে।মিথিলাকে দেখেই আদ্রিতার গলা শুকিয়ে আসে মনে পড়ে যায় শপিংমলের ঘটনা এই মেয়েটাই তো সে যার সাথে সে জামাটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো

—এই সেরেছে।এক সাথে এতোগুলা ঝামেলা আমার সাথেই কেন হয় একে নীড়কে হিটলার বলেছি আরেকএ রাক্ষস রাজার ফ্রেন্ডের সাথেই ঝামেলা করেছি কথাটা যদি ওর কানে যায় আমার কানে নির্ঘাত চার পাচটা তবলা বাজবে।

কথাটা মনে মনে ভাবতেই পাশের চেয়ার টানার শব্দ কানে আসতেই আদ্রি সেদিকে তাকায় দেখে নীড় তার পাশেই এসে বসেছে।আদ্রিতার চেয়ার পা দিয়ে নিজের দিকে টেনে বলে উঠে

—কিজানি বলছিলা তুমি হিটলার রাক্ষস আর কি কি জানি আদি(আদ্রিয়ান)। আমার মনে নাই তোর মনে আছে?
(ভুলে যাওয়ার ভান করে)

—হুম আমিও ভুলে গেছি বনু কি জানি বলছিলি।
—ভাইয়ু আমি ত মজা করচ্ছিলাম সত্যি(কাদো কাদো হয়ে)

আদ্রিতার ফেস দেখে সবাই হেসে উঠে। আদ্রি বুঝে এতোক্ষন সবাই ওর মজা নিচ্ছিলো।
—তোমরা ভীষণ খারাপ।(গাল ফুলিয়ে)

—খারাপের দেখেছো কি ।

কথাটা বলেই হাত দিয়ে ফুলিয়ে রাখা গালটা টিপে ধরে আদ্রির মুখে পরোটা ঢুকিয়ে দেয়।
এদিকে মিথিলা রাগে ফুসছে।সে জানত নীড়ের খালাতো বোন ভর্তি হয়েছে কিন্তু বোনটা যে আদ্রিতা আর নীড়ের এমন ভাবে তার সাথে মিশাটাও মেনে নিতে পারছেনা।কই এতোদিন ধরে তাদের বন্ধুত্ব নীড় তো কোনদিন তার পাশেও দাড়ায়নি সেখানে তাকে স্পর্শ করে এইভাবে অধিকার নিয়ে খাইয়ে দেওয়া তার আজগুবি বকবকানি শুনা তো দূরের বিষয়। অন্যদিকে রামিসাও নীড়ের আর আদ্রির খুনসুটি দেখছে কিন্তু তার মনে মিথিলার মতো ঈর্ষা তৈরি হয়নি বরং তার শান্তি লাগছে।তার ভালোবাসার মানুষ যে ভুল মানুষকে ভালোবাসেনি।

—নীড় ক্লাস শুরু হবে যাবিনা।

মিথিলার কথায় নীড় তেমন পাত্তা দিলোনা বরং নীড়ের জায়গায় আফতাব বলে উঠলো
—তুই কবে থেকে ক্লাস নিয়ে এতটা পানচুয়াল (punctual) কবে থেকে হলি আগে ত ছিলি না।
—সেটা তোকে বলার প্রয়োজন নেই আমার তোরা দেখ এইসব আদিক্ষেতা আমার শখ নাই।

কথাটা বলেই রেগে সেখান থেকে চলে যায় মিথিলা। আশিক সেটা দেখে বলে উঠে
—আর আবার কি হলো পেত্নির মাথায় কি ভুত ভর করেছে নাকি।
—হতে পারে (আফতাব)।

সবাই আফতাবের রিয়েকশান দেখে হেসে দেয়।এদিকে আশিক সভার অগোচরে চাঁদনীর দিকে তাকায়ে চোখ টিপ মারে।হঠাৎ এমন হওয়াই চাঁদনী হাসি থামিয়ে চুপচাপ আদ্রিতার হাত ধরে বসে থেকে খাওয়াই মন দেয়।

***
আদ্রিতারা যেহেতু ফার্স্ট ইয়ার সেজন্য তাদের বরণ করার দ্বায়িত্ব ফাইনাল ইয়ার এর স্টূডেন্টদের উপরেই পড়েছে।যার কারণে নীড় সহ আরও স্টুডেন্ট ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে কলেজ এবং মেডিকেল দুইটাই সাজাতে যেহেতু জায়গা টা বড় সেজন্য টাইম ও বেশি লাগবে তাই স্টুডেন্টদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।যার কারণে তিনদিন যাবত নীড় আর আদ্রির দেখা নেই। আদ্রির তেমন কোন সমস্যা না থাকলে নীড়ের মাথায় চড়ে গেছে রাগ একেত কাজের কারণে রাত হচ্ছে ফিরতে আবার তাড়াতাড়ি চলে যেতে হচ্ছে সেজন্য আদ্রির দেখা নাই এদিকে আদ্রিতাও একবার চেষ্টা করছেনা বলে তার রাগ আকাশচুম্বী

—আমি নাহয় কাজে ব্যাস্ত সে কি করছে হ্যা মহারানী ভিক্টোরিয়া কোথাকারা তিনদিন হলো খাওয়া দাওয়া কি রুমে করে একদিন দেরি করে ঘুমালে কি এমন ক্ষতিটা হয় ওর মাত্র ত বাজে এগোরোটা তাতেই মহারানী ঘুম ভাল্লাগেনা একবার পায় সামনে যদি দুইগালে দুইটা থাপ্পড় না দিসি কতোবড় বেদ্দপ্স আমাকে নীড়কে অপেক্ষা করায় একবার পাই সামনে রাক্ষস রাজা বলেনা রাক্ষসের মতোই গিলে খাবো পাইসে টা কি আমা,,,,,,

নীড়ের কথা পূরন না হতেই তার কানে মিষ্টি এক সুর ভেসে উঠে।নীড়ের পা আপনাআপনি থেমে যায়।শব্দটা কই থেকে আসছে বলেই শব্দ অনুসরণ করতে করতে ছাদে চলে যায় আর তাতেই যেনো তার দিন দুনিয়া থমকে যায়।

ছাদে টাংগানো দোলনাই পা তুলে বসে আছে ছাদের লাইট বন্ধ করে রাখা চাদের আলো যারকারণে সোজা এসে পড়ছে আদ্রিতার শ্যামা মুখে।এলোকেশী চুল গুলোও দোলখাচ্ছে হাওয়ার সাথে সাথে। এদিকে তার গান সবমিলিয়ে পরিবেশটা নীড়কে নেশা ধরিয়ে দিয়েছে তার আদরপাখির নেশা

আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে
শুধু তোমায় ভালবেসে
আমার দিনগুলো সব রঙ চিনেছে তোমার কাছে এসে
শুধু তোমায় ভালবেসে
তুমি চোখ মেললেই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে
ভোরের শিশির ঠোঁট ছুঁয়ে যায় তোমায় ভালবেসে,,,,,,

গানের মাঝেই নিজের কোলে কারো মাথা পেতেই চমকে উঠে আদ্রিতা।তাড়াতাড়ি চোখ মেলে তাকাতেই নীড় ক্লান্তি মাখা মুখটা ভেসে উঠে।

—একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেও না আদরপাখি।মাথাটা ব্যাথা করছে খুব।
—আপনি উঠুন। এইভাবে বিনা পার্মিশানে আমাকে স্পর্শ করার পার্মিশান কে দেয় আপনাকে।,(রেগে)
—আমার কারো থেকে কিছু চাওয়ার অভ্যাস নেই আদর পাখি আর ব্যাপারটা তুমি হলে ত আরওই না উলটা তোমাকে স্পর্শ কেন দেখার আগেও আমার পার্মিশান লাগবে।

আদ্রিতা আবার কিছু বলার আগেই নীড় নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠে
—এই নিয়ে পড়ে তর্ক করো আদর পাখি। এখন নয় এখন আমার বড্ড প্রেম প্রেম পাচ্ছে আর তুমি রেগে গেলে তোমাকে খেয়ে ফেলার স্বাদ জাগে খালি অবাধ্য মন এই মহূর্তে আমার বাধ্য ভুলেও হবেনা তাই চান্স নিও না।

আদ্রিতা নীড়ের এমন আওয়াজে কেপে উঠে।নীড়ের মুখ দেখে এমনিতেও তার মায়া লাগছিলো ছেলেটা তিনদিন হলে অনেক কাজ করছে।নানাজান সব দ্বায়িত্ব তার উপর দিয়েই যশোর চলে গেছেন।আদ্রিতা আর কিছু না বলেই নীড়ের চুলে হাত বুলাতে লাগলো।এদিকে আদ্রির নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে কখন ঘুমিয়ে গেছে নীড় তা সে নিজেও টের পেলোনা নীড়ের ঘুম ভাংলো আদ্রির ফোনের সাউন্ডে। তাও সে চোখ না খুলে আলসিতে চোখ বুঝেই রাখলো। এদিকে আদ্রিতা ভেবেছে নীড় ঘুমে তাই সে তরীঘড়ী করেই কলটা রিসিভ করলো একবার দেখলোও না নাম্বার টা কার।

কল রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপার থেকে পুরুষালী কন্ঠ ভেসে উঠলো
—কেমন আছো বুড়ি বাচ্চা।অবশ্য আমাকে ছাড়া তুমি যে ভালো থাকবে না তাও আমি জানি। চিন্তা করোনা খুব জলদিই তোমাকে তোমার শহর থেকে তুলে আমার পৃথিবীতে নিয়ে আসবো আমার রাজ্যের রানী করে তৈরি থেকো। যেদিন আমি আসবো সেদিন আমাকে কেউ আটকাতে পারবেনা তোমাকে আমার করে নিতে,,

কথাটা বলেই কল কেটে দিলো

—ওমা এ আবার কোন পাগল সব মাথার তারছিড়া পাবনা ফিরত পাগল কি আমার কপালেই জুটেছে আজব কান্ড (বিরবির করে বলে উঠলো)

এদিকে ফোনের অপর পাশের বলা সমস্ত কথায় নীড়ের কান অব্দি পৌছেছে।

—তোমার সাথে যারা অন্যায় করেছে তাদের শাস্তি নেওয়ার জন্য তোমাকে প্রস্তুত আমিই করবো কিন্তু যারা তোমাকে আমার থেকে কেরে নেওয়ার ফন্দি এটেছে তাদের ও সায়েস্তা আমিই করবো আমার জান আমার প্রান ভোমরার দিকে নজর দিয়ে কাজটা ভুল করলে মিস্টার আয়াজ নীড় সব সহ্য করে কিন্তু নিজের জিনিস এর উপর অন্যকারো ছায়া না। সেখানে তুমিত আমার কলিজা নিয়ে টানাটানি করতে শুরু করেছে। যে কলিজা নিয়ে তুমি আমার কলিজাই হাত দিয়েছো সে কলিজা আমি ছিড়ে ফেলবোনা ভেবেছো।
(মনে মনে)

***
আদ্রি নিজের রুমে ঢুকে বিছানার কাছে যেতেই অবাক হয় সেখানে একটা লাল চিরকুট আর তার পাশেই লাল গোল্ডেন এর শাড়ি সাথে প্রয়োজনীয় জিনিস।আদ্রি অবাক হয়ে সব গুলা দেখতে দেখতে চিরকুট হাতে নেই সেখানে বড় বড় অক্ষরে লিখা
— বেনরোসি পাঠানোর সময় হয়নি
তাই লাল শাড়িই দিলাম
বধূ বেসে নাহয় অন্যকোনদিন দেখবো
তারআগে হৃদয়হরনীর রুপেই সাক্ষাত হোক
ইতি~এতো আগ্রহ ভালো না

আদ্রি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ছন্দের দিকে তার মন বলছে এটা নীড় কিন্তু নীড়ত এতোক্ষন ছাদে ছিলো তাহলে ভাবতেই দরজাই টোকা পড়ে,,,

চলবে?