তোমাতেই বসবাস পর্ব-০৯

0
256

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পর্বঃ৯

দরজা খুলে দিতেই একজন কাজের মহিলা প্রবেশ করলেন তার হাতে আরও একটা পেকেট।

—সরি ম্যম এইটা দিতে ভুলে গেছিলাম।
—এইসব কে দিয়েছে চারু দিদি।
—এইসব তো স্যার দিয়েছে।
—স্যার দিয়েছে তো বুঝলাম কিন্তু কোন স্যার।

চারু নামক মেয়েটি কিছু বলার আগেই তার ডাক পড়ে নিচে। চারুর আর বলা হয়না। আদ্রি ভাবে আদ্রফ দিয়েছে হয়তো সে এমন ফাজলামো তো করেই সেম এজ হওয়ার কারনে তাই বিষয়টা মাথা ঘামালোনা বেশি।

পরেরদিন সকালে ড্রেস কোড মোতাবেক জুনিয়ররা লাল গোল্ডেন শাড়ি আর পাঞ্জাবি পড়বেন আর বাকীরা শুধু গোল্ডেন আর লাল পড়েই যাবে। আদ্রি কোড হিসেবে রেডি হয়ে নিলো রেডি হয়ে নিচে নামতেই হচকচিয়ে গেলো কারন এক দুই জোড়া চোখ না ডাইনিং রুমে উপস্থিত প্রায় সবার চোখ বর্তমানে আদ্রির দিকে।

নওমি কোথায় থেকে দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরলো আদ্রিকে আদ্রি টাল খেয়ে পড়তে পড়তে বাচলো।
—কিউটি আই মিস ইউ স মাচ। এন্ড ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল (আদ্রির গালে চুমু খেয়ে)
—এতোদিন পরে এসে আই মিস ইউ।
—আর কি করার সব তোমার ওই হিটলার ভাই এর জন্য(মুখ বাকিয়ে বিরবির করে)
—কি বললি শুনিনি।
—আর বলনা নানি মনি ছাড়তেই চাচ্ছিলোনা বলে এতোদিন পড়ে এসেছিস কলেজ বন্ধ থেকে যা তাই আরকি। (জোড় পূর্বক হাসার চেষ্টা করে)
—আচ্ছা সে যায়হোক রেডি হয়েনে যা।
—আমি কিন্তু কেন
—কারন তুই ও যাবি আমার সাথে সেজন্য
—এই না না আমি যাবোনা। তোমার মেডিকেল কলেজে আমার কি কাজ। আমি হলাম ইকোনমিকস এর ছাত্রী।
—তোকে যা বললাম তাই কর।
—ওকে ফাইন যাচ্ছি।

নওমি চলে যেতেই আদ্রি নিচে নেমে এলো আদ্রি নিচে নামতেই দুই মামি দুইপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে তার কপালে চুমু খেলো।
—অসম্ভব সুন্দর লাগছে আমাদের মিষ্টি মাকে নীড়ে চয়েজ আছে বলা লাগবে।

নীড় নামটা শুনে আদ্রি হা হয়ে যায়
—নীড় মানে।
—হ্যা নীড়কেই তো আমরা তোর জন্য এইসব নিয়ে আসতে বলেছিলাম বারে কলেজ ফাংশন আর তোর ত তেমন শাড়ি নেই। আর সেজন্যই নীড়কে বলা।
—ওহ।
—তাইতো বলি রাক্ষস রাজা নিজ থেকে আমাকে এতোসব কিনে কেন দিতে যাবে কিন্তু কিনে দেওয়ার কারন ত বুঝলাম কিন্তু এমন অদ্ভুত চিরকুট কেন দিলো এই পাগল লোক।(মনে মনে)

খাওয়া দাওয়া শেষ করে নওমি আদ্রিতা দুইজনে বেরিয়ে পড়লো কলেজের উদ্দেশ্য।

ভীতরে ঢুকতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অদ্ভুত সুন্দর ভাবে সাজিয়েছে পুরা মেডিকেল কে। আসল ও নকল ফুলের সমাহারে ভরিয়ে তুলেছে। আদ্রিতা আর নওমি ভীতরে প্রবেশ করতেই আদ্রিতার বন্ধু মহল তার দিকে এগিয়ে এলো
সবাই মিলে নওমির সাথে পরিচয় হয়ে তাকে নিয়েই চলে গেলো স্টেজের দিকে।স্টেজে ভাইজ প্রিন্সিপাল ভাষন দিচ্ছে। যা অনেক স্টুডেন্টই মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর বাকিরা মানে আরকি লেখিকার মত ফাকিবাজ তারা ফোন টিপতে বা গল্প করতে ব্যস্ত।

আদ্রিতারাও সিট খুজে বসে পড়লো।নওমি এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেনো খুজচ্ছিলো অনেকক্ষন ধরেই আদ্রি সেটা লক্ষ করচ্ছিলো
—কি রে কিছু খুজচ্ছিস নাকি তখন থেকে দেখছি এদিক ওদিক তাকাচ্ছিস
—ইয়ে না মানে ওয়াস ওয়াসরুম টা কই।
—সামান্য ওয়াসরুমের কথা বলায় এতো দফা ততোলাতে হয়।
—চল আমার সাথে।
—আরে না না তুই আমাকে বল আমি চলে যাবো।
—আচ্ছা স্টেট যায়ে বামদিকে তারপর ডানদিকে ঘুরতেই দেখবি লেডিস ওয়াসরুম।
—নওমি মাথা দুলিয়ে সেদিকে রওনা দিলো।

হঠাৎ এক শক্ত পক্ত হাত এসে নওমির বাহু খামিচে ধরে তাকে নিয়ে হাটা ধরলো নওমি জানে লোকটিকে তাই সেও কোন আওয়াজ না করে চুপচাপ হাটতে শুরু করলো। একটা রুমে এনে ছেড়ে দিলো পুরুষালী হাত।

—কবে আসলি।

গম্ভির গলাই কথাটা কেমন যেনো শুনালো নওমির কাছে
—তোমার তাতে কিছু যায় আসে আদি ভাইয়া।

সাথে সাথে আদ্রিয়ানের চোখ মুখ রক্তিম আকার ধারণ করে।
—তোকে যেইটুকু প্রশ্ন করা হয়েছে সেইটুকু প্রশ্নের উওর দে।
—আমি বাধ্য নই আদি ভাইয়া।
—অবশ্যই তুই বাধ্য।
—তুমি বাধ্য না হলে আমি কেন বাধ্য হতে যাবো উত্তর দেও আমাকে।
—বিকজ ইউ আর মাই লিগাল ওয়াইফ ডেম ইট (দেওয়ালে সজোড়ে ঘুষি মেরে)
—সেদিন তো একই কথা আমিও বলেছিলাম আদি ভাইয়া জবাবে তুমি কি দিয়েছিলা মনে আছে “ছোটবেলার ওইসব বড়দের ছেলেখেলা আমি মানিনা বের হয়ে যা আমার চোখের সামনে থেকে” এইটাই তো বলেছিলে তাইনা। তাহলে যেখানে বউ হিসেবেই মানোনা সেখানে কিসের বাধ্য বলতে পারো।
—মানতাম না এখন মানি।
—আমি কোন পুতুল নই আদি ভাইয়া যে তুমি যখন ইচ্ছা বউ হিসেবে স্বিকৃতি দিবে যখন ইচ্ছা কেড়ে নিবে।
—দেখ নমু
—কি দেখবো বলো ছোটবেলা থেকে তো দেখেই আসছি যখন ইচ্ছা তুমি আমার কাছে চলে আসো অধিকার চাইতে আমার উপর নিজের জোড় খাটাও তুই এটা করতে পারবিনা সেটা করতে পারবিনা কিন্তু যখন আমি একবার জোড় খাটালাম তোমার আর সহ্য হলোনা।
—দেখ সেদিন আমি রেগে ছিলাম। আর তুই ও কাউকে কিছু না বলেই নানী বাসায় যায়ে ঘাপটি মেরে বসে পড়লি।
—আর তাই গ্রেট আদ্রিয়ান এর ইগো হার্ট হয় রাইট যে কিভাবে তার ইশারায় চলা পুতুল তার বিনা অনুমতি নিয়ে চলে যায়।

নওমি আরও কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান নওমির ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে যায়।কিছুক্ষন নিজের মতোই চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে যায়।নওমি সেখানেই হাটু মুরে বসে পড়ে।

নীড় এদিক ওদিক খুজে আদ্রিতাকে পিছনের দিকে দেখতে পেয়ে তাদের ইশারায় সামনে ডাকে সাথে সাথে চাদনী আর সিয়াম তার হাত ধরে দৌড় মারে।

আদ্রিতাকে দেখে মুচকি হাসে নীড় নীড়ের হাসি দেখে দমটা কেন জেনো আটকে আসতে শুরু করে।
—এই লোকটার আজ হয়েছে কি এমনে হাসে কেন ভুত টুত ধরলো নাকি আজব। এমন হাসি দেখলে ভয় লাগে নাজানি কোন খুরাফাতি চলছে মাথায়।(মনে মনে)

আদ্রিতা সামনে আসতেই নীড় তার সামনে এসে তার হাত ধরে তাকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে শুরু করে।

—আরে আরে এইভাবে টানতে টানতে কই নিয়ে যাচ্ছেন ছাড়ুন আমাকে। আর,,
—একদম চুপ আর একটা কথা যদি মুখ থেকে বের করো সাথে সাথে কিন্তু কিস করবো বলে দিলাম পড়ে বলিও না আমি আগে ওয়ার্ন করিনি।

আদ্রিতা রাগে ভয়ে দুঃখে চুপচাপ নীড়ের সাথে তাল মিলাতে শুরু করে।কিছুদূর যেতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে দেখে পা জোড়া থেমে যায়।যেনো কোন বরফের মাঝে গেথে গেছে তার পা। চায়েও এগুতে পারছেনা। নিশ্বাস টাও যেনো বন্ধ হয়ে আসছে।চোখের পাতায় ভেসে উঠতে শুরু করেছে অতীতের পৃষ্ঠা।
অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো

—আব্বু!

সাথেই সাথে হাত বাড়িয়ে দিলেন মিস্টার খান। আদ্রিতাও সব ভুলে ছূটে গেলো নিজের আব্বুর বুকে নিজের ভরসা স্থানে।এই বাহুডোড় যে তার সবচেয়ে কাছের তার সবচেয়ে আপন।

—আমাকে মাফ করে দে মা আমার খুব কষ্ট দিয়েছেনা আব্বু প্রিনসেন্স কে। আব্বু পচা।
—একদম না আমার আব্বু বেস্ট।

আদ্রিতা কান্না করতে করতে হেচকি তুলে ফেলেছে তাও কান্না থামার নাম গন্ধ নিচ্ছেনা

—প্রিন্সেস তো স্ট্রোং প্রিন্সেস রা কি কান্না করে দেখি চুপ নাহলে কিন্তু আব্বু চলে যাবে।

আদ্রিতা অনেক কষ্টে নিজের কান্না বন্ধ করে আনে কিন্তু অতিরিক্ত কান্নার কারনে তার হেচকি বন্ধ হতে চায়না
—বিশ্বাস করো আব্বু আমার কোন ছেলের সাথে কোন ধারনের সম্পর্ক ছিলোনা। আমি জানিনা ওই ছবি কিসের।আমিত,,

—আমি জানি মা ওইটা তোর ছিলোনা কিন্তু আমি জানলেও এই সমাজ বা অন্যকেউ তো জানতোনা লিনা তোর ভিডিও এডিট করে আমাদের বলেছিলো যদি আমরা তোর সাথে খারাপ ব্যবহার না করি ওইটা ভাইরাল করে দিবে তুই বল বাকিরা কি বুঝতো তাদের কথার জ্বালাই হা কি তুই সহ্য করতে পারতি সেজন্যই না চাইতেও আমাকে শক্ত হতে হয়েছে।আর তোর মাকে ওমন ব্যবহার করতে হয়েছে।

সব শুনে আদ্রি স্তব্ধ হয়ে যায় লিনার প্রতি ঘৃণা তার মনটাকে বিষিয়ে দেয়
—কাজটা তুই ঠিক করিস নি লিনা তার শাস্তি তুই হারে হারে পাবি আর আমি নিজেই দিবো আর এটা আমার প্রমিজ আমার বোনের কাছে।

চলবে?