তোমাতেই বসবাস পর্ব-১৬

0
269

#তোমাতেই_বসবাস
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৬

আদ্রিতা সামনে তাকাতেই তার চোখ পড়ে বাড়িতে প্রবেশ করা তিনটা গাড়ির দিকে।মাঝখানের গাড়ি দেখে চিনতে বাকী থাকেনা এইটা নীড়ের গাড়ি যা তিনবছর ধরে পার্কিং এড়িয়ায় যত্নসহকারে পার্ক করা ছিলো।কিন্তু এখন এই গাড়ির এখানে থাকার তো কথা না কারন নীড় এর এই মহূর্তে Seoul এ থাকার কথা।আর উনাকে ছাড়া উনার গাড়ি কেউ স্পর্শ করুক তা তার মৌটেও পছন্দ না।
হঠাৎ করেই গাড়ির ছাদ নামিয়ে বের হয়ে আসে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি যাকে দেখে মহূর্তে আদ্রিতার চোখ শীতল হয়ে আসে।বহু অপেক্ষার পরে যেনো সামনে দাঁড়ানো মানুষ টিকে দেখে চোখ ফিরাতে ইচ্ছা করলোনা।এতো বছরেও কিছু বদলায়নি। বরং বলতে গেলে তার চেহারার উজ্জ্বলতা বেরেছে।মুখের খোচা খোচা দাড়ি গুলো বেরেছে বেশ এতে তার সৌন্দর্য ভাটা পড়েনি বরং বেরেছে অনেক।

—আসলেই সৌন্দর্যের কোন কমতি নেয় উনার মাঝে যা আজ অব্দি আমি দেখিনি। আসলেই উনার যোগ্যনয় আমি। কোথায় উনি আর কোথায় আমি হয়তো দেরি করে হলেও উনি এটা বুঝেছেন উনার পাশে আমাকে মানায় না তাই হয়তো এই দূরত্ব। এখন তো উনি বিরাট বড় ডাক্তার হয়ে এসেছেন রাক্ষস রাজা।(মুচকি হেসে)

গাড়িতে থেকেই নীড় নওমি আর আদ্রিয়ানের উদ্দেশ্য গান গেয়ে উঠে।সব ভাইবোনেরা সে গানের তালে নাচতে শুরু করে।অনেকদিনের প্রিপারেশান বলা চলে।

—তারমানে উনার যোগাযোগ সবার সাথেই ছিলো শুধু ছিলোনা আমার সাথে।
(তাচ্ছিল্যের হেসে)যাক উনি ভালো আছেন সুস্থ আছেন এইটাই কি অনেক না।

আদ্রিতা নিজের রুমে ঢুকে পড়ে দরজা বন্ধ করে নেয়।কিছুক্ষনের মাঝেই দরজায় আঘাত এর আওয়াজ আসে।আদ্রিতা ইচ্ছার বিরুদ্ধে উঠে যেয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলতেই শেরওয়ানী পরিহিত আদ্রিয়ান কে দেখে অবাক হয়।
—ভাইয়া তুমি বিয়ে রেখে এখানে কেন?( অবাক হয়ে)
—তো আর কি করবো নওমির ভাই হাজির আমার বোন কই।তার ভাই সাত সমুদ্র পার করে এসেছে আর আমার বোন এখান থেকে এখানে রাগ করে বসে আছে তা কি হয়।চল।(আদ্রিতার হাত ধরে)
—যাবোনা আমি যাদের প্রয়োজন সবাই নিচে আছে আমার ওখানে কারো প্রয়োজন নেয়।
—আমার আছে যাবি মানে যাবি চল (রাগ দেখিয়ে)
—ভাইয়া।
—চুপ(ধমক দিয়ে)

আদ্রিতা কাদো কাদো হতেই আদ্রিয়ান আদ্রির হাত চেপে ধরে হাটা ধরে।
আদ্রিতা কি আর করবে সে জানে এখন সে না গেলে আদ্রিয়ান যাবেনা আর এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে আর লেট করা উচিত হবেনা একটু পড়েই এশার আজান দিবে বলে।

সুষ্ঠ ভাবেই বিয়ে টা সম্পূর্ণ হলো। কিন্তু পুরাটা সময় নীড় বা আদ্রি কেউ কারো দিকে তাকায়নি।বলতে গেলে নীড় তাকায়নী। আদ্রিতা বার কয়েক নীড়ের দিকে তাকিয়েছে আড়চোখে।আর প্রতিবার নিরাশ হয়েছে নীড়ের অচেনা মনোভাব দেখে। এবার কান্না পাচ্ছে আদ্রিতার।রাতের বেলা ঘুম না আসায় আদ্রিতা ছাদে চলে যায়। হঠাৎ করে কেমন দম আটকে আসছে।ব্যালকনিতে যেতে ইচ্ছা করলোনা কারন ব্যালকনি জুড়ে নীড়ের ঘ্রাণ। দুইজনার রুম পাশাপাশি হওয়াই ওর ব্যালকনিতে নীড়ের ঘ্রাণ বাতাসের সাথে মিশে ওর রুমের ব্যলকনিও মো মো করছে যা তার অস্থিরতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।কই এর আগে তো আবিরের বেলায় এমন হতোনা সে তো বছরের পর বছর অবহেলা করতো কথা বলতোনা কই তার জন্য এতো খারাপ লাগেনি এই শূন্যতা আগে সে টের পায়নি।কিন্তু এই সাত মাসে সে হারে হারে টের পাচ্ছে শূন্যতা সবার মাঝে থেকেও নীড় নামক শূন্যতা সে হারে হারে টের পাচ্ছে।

আদ্রিতা নিজেকে সামলে উঠে বসে ছাদের দরজা খুলতেই সিগারেট এর দুর্ঘন্ধ নাকে এসে লাগতেই গা গুলিয়ে উঠে।এই মাঝরাতে ছাদে কে ভেবেই কৌতুহল জাগে।পা টিপে টিপে ছাদে আসতেই পা থমকে আসে যার থেকে দূরে পালাচ্ছিলো সে নাকি তার সামনে। আদ্রি আর সামনে আগায় না পুনরায় পা পিছনের দিকে ফিরতে নিলেই গম্ভীর কন্ঠে প্রিয় মানুষ এর কথা কানে আসতেই সময় টা থমকে যায়।

—কেমন আছো আদ্রিতা।

আদ্রিতা পিছনে ফিরে দেখে নীড় আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে।একবারের জন্য তার দিকে তাকায়নি কিন্তু তাও বুঝে গেছে তার উপস্থিতি। কেমনে বুঝে এই লোক। কিন্তু অভিমানী মনটা সেখানে দাড়াতে সায় দিলোনা। ছোট এক বাক্যেতে বলে উঠলো
“ভালো”

আদ্রিতার এই ছোট শব্দ মেনে নিতে কষ্ট হলো নীড়ের। চোখ বেয়ে এক ফোটা পানি পড়তেই চোখ মুখে নিলো পুনরায় টান দিলো সিগারেট এ নিকোটিনের বিষাক্ত হাওয়া বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে বলে
তোমার ঘ্রাণ মিশে আছে এই বাতাসে
তোমার ছায়া মিশে আছে এই আকাশে
তুমি থাকো আর না থাকো
মিশে থাকো আমার চারপাশে,,,,।

পরেরদিন না খেয়েই বেরিয়ে গেলো আদ্রিতা মেডিকেলের উদ্দেশ্য। গেটের সামনে আয়াজকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জোড় করে নিজের মুখে হাসি ফুটিয়ে আনে।দুই বছর হলো রোজ দেখা হয় আয়াজের সাথে। প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও পরে ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়।

—আপনি এইযে প্রতিদিন এইভাবে নিজের অফিসের রাস্তার বিপরিত এতোদূরে আসেন আপনার কি অসুবিধা হয়না।

আয়াজ হাসে,,,
—যদি এই সামান্য অসুবিধার বিনিময়ে এই মিষ্টি হাসি দেখার সৌভাগ্য হয় তাহলে একটু কেন সারাটা দিন এই রাস্তাই অপেক্ষা করতে রাজি।

—আপনি পাগল নাকি।
—তুমি বলছো তাহলে হবো হয়তো।
—আচ্ছা এবার জান
—তোমার কি মন খারাপ আমি যতোদূর জানি নীড় কাল ফিরে এসেছে তাহলে ত খুশি হওয়ার কথা।
—আপনি এতো কিছু কিভাবে জানেন।
—প্রিয় মানুষদের খোজ রাখতে লাগে।
—হুম এসেছে কাল।(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
—তাহলে তোমার ফেসে ত ইয়া বড় হাসি থাকার কথা।তাহলে হাসির বদলে মুখ ভার কেন।
—বাদ দেন আমার ক্লাস শুরু হবে আসি।
—আচ্ছা যাও।

আদ্রিতা যেতেই আয়াজ তার যাওয়ার দিকে তাকায়ে হাসে ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠে শয়তানী হাসি।ফোনে সেভ করে রাখা পরিচিত এক নাম্বারে কল দেয়।দুইবার রিং বাজতেই রিসিভ হয়
—কেমন আছেন মিস্টার চৌধুরী শুনলাম দেশে এসেছেন তো দেখা সাক্ষাত করবেন না।
—প্রয়োজন মনে করিনা। (গম্ভির কঠে)
—আহা নিজের শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে এইভাবে কথা বলতে নেয় মিস্টার চৌধুরী।
—মিস্টার আয়াজ প্রয়োজনীয় কিছু থাকলে বলেন।
—কি বলবো বলেন আমি আমার প্রমিজ রেখেছি আদ্রিতা এখন আমার।
—আসলেই কি আপনার।(তাচ্ছিল্যের হেসে)
—মা,,,মানে কি বলতে চান।(ঘাবড়ে)

নীড় এবার উচ্চ স্বরে হেসে উঠে।
—আপনার কি আসলেই মনে হয় আপনার সামান্য কই সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপ দেখে আমি ভেবে নিয়েছি আদ্রিতা আপনাকে পছন্দ করে সে আমার আদর পাখি কাল থেকে তার সম্পূর্ণ ছটফট আমি দেখেছি আমার অপেক্ষাই তার চোখের নিচের কালো দাগ স্পষ্ট।তার উদাসীন হাসি স্পষ্ট আমাকে জানান দিচ্ছে সে আমি হীনা আমার অবেলায় কষ্ট পাচ্ছে।
—এইসব আপনার মনের কল্পনা। সে আমাকে ভালোবাসে।
—তো ঠিক আছে৷ সে নিজে বলুক সে কাকে ভালোবাসে।যদি আপনাকে ভালোবাসে তাহলে ঠিক আছে আমি সরে যাবো কিন্তু যদি সে আমাকে ভালোবাসে তাহলে আপনার মিথ্যার জন্য আপনার পরিনতি কি হবে আপনি জানেন না।

আয়াজ কল কেটে অবাক হয় তার প্ল্যান যে এইভাবে বেকফায়ার করবে সে বুঝেনি সে ভেবেছিলো আড়ালে নীড়কে আদ্রির জীবন থেকে সরিয়ে তাকে আপন করে নিবে।কিন্তু নীড় আদ্রিকে ছাড়বেনা তা বেশ বুঝতে পেরেছে।তার অন্যকিছু ভাবতে লাগবে।

নীড় কল কেটে হেসে উঠে।আদ্রিতার ছবি হাতে নিয়ে বলে উঠে।
—যে গলায় নিজের জন্য কাতর স্বর শুনেছি
যে চোখে নিজের মরণ দেখেছি
তাকে কিভাবে ছেড়ে দেয়।
তুমি আমার নিশ্বাস চলার কারন
তোমাতেই যে আমার বসবাসের স্থান,,,

চলবে?