প্রিয় রোদ্দুর পর্ব-১০

0
345

#প্রিয়_রোদ্দুর🤍
#লেখনীতে:অনুসা রাত❤️(ছদ্মনাম)
#পর্ব:১০

সেই বিকাল থেকে আমি রান্নাঘরে যখন পায়েস বানাচ্ছি ঠিক তখনই আম্মু ওড়না গায়ে দিতে দিতে এসে ঢুকলো রান্নাঘরে।আমাকে দুধ জাল দিতে দেখে অবাক হয়ে বললো,

-“এসব তুমি কি করছো অতসী!”

আমি মুচকি হেসে বললাম,

-“আমি স্পেশাল আইটেম বানাচ্ছি আম্মু।”

-“এসব রাখো!আজ আমার বোতলের সব দুধ মেবি নষ্ট করে ফেলবে এই মেয়েটা।সরো সরো।”

আমি আম্মুর কথাতে অপমানিত বোধ করে বিরহ কন্ঠে বললাম,

-“আম্মু তোমার কি নিজের মেয়ের উপর বিশ্বাস নেই? ”

-“একদম না।”

বলতে বলতে আম্মু আমার হাত থেকে চামচ নিয়ে নাড়তে লাগলো।

-“আম্মুউউ!সরো প্লিজ।সব আমি করব!”

-“পাকামো করবে না।”

-“আম্মু প্লিজ!”

এমন সময় ফুপি এসে ঢুকলো রান্নাঘরে।এসব দেখে বললো,

-“কি রে কি হচ্ছে? ”

আমি এই সুযোগে আম্মুর থেকে চামচ নিয়ে নাড়তে লাগলাম।আম্মু দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফুপিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-“আর বইলেন না!এই মেয়ে নাকি পায়েস বানাবে।”

ফুপি হেসে বললো,

-“বাহ বাহ!খুব ভালো তো।”

আমি হেসে সায় দিলাম।ফুপি আবার বললো,

-“তোর খেতে মন চাচ্ছে আমায় বলতি।বানিয়ে দিতাম।”

-“আমার মন চাচ্ছে না তো।”(আনমনে)

-“তাহলে কার জন্য?”

ফুপির এমন প্রশ্ন শুনে আমার জিভে কামড় পড়লো।জোরপূর্বক হেসে বললাম,

-“আমার জন্যই তো।আর কার!”

আম্মু সবজি কাটতে কাটতে বললো,

-“আমি বললাম আমি করে দিই।”

-“লাগবে না আম্মু!”

আমার এমন জবাব পেয়ে আম্মু আর কিছু বললো না।আমি ইউটিউব দেখে যা শিখছি সমস্তটাই কাজে লাগিয়ে বানিয়ে ফেললাম স্পেশাল পায়েস ফর স্পেশাল পারসন!
ঘড়িতে সময় তখন ৭ টা বাজতে আরো ৩২ মিনিট বাকি।আমি গরম পায়েসটা টেবিলে সার্ভ করে রাখলাম। ঠিক তখনই কলিং বেল বেজে উঠল।
এই অসময়ে আবার কে এলো!
আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলতেই রোদ্দুর স্যারকে দেখতে পেলাম।
অগোছালো চুল,এলোমেলো শার্ট!
এই বুঝি ফিরলেন ভার্সিটি থেকে!হয়ত আড্ডা দিতে দিতে লেট হয়ে গেছে! ওনার চোখগুলোতে আজ বড্ড অস্থিরতা কাজ করছে।আমায় দেখে হালকা হেসে বললো,

-“কি মেডাম?ঢুকতে দিবেন না?”

আমি দরজা থেকে সরে গিয়ে বললাম,

-“আপনি এত তাড়াতাড়ি? ”

উনি রুমে ঢুকে চেয়ারে বসে পড়লেন।আমি পায়েসের বাটিটা এনে আমার রুমে রাখলাম।এখনো গরম!নামালামই কিছু সময় হলো।আমি ওনার পাশে বসতে বসতে বললাম,

-“এত জলদী কেন আজ?”

-“এইযে স্পেশাল সারপ্রাইজ এর জন্য! “(মিষ্টি হেসে)

ওনার হাসিতে আমার বুকের মধ্যে কেমন করে উঠলো!
আমি তুতলিয়ে বললাম,

-” ও..হ।জ্বর কমলো?”

উনি কপালটা এগিয়ে দিয়ে বললেন,

-“নিজেই দেখে নাও!”

আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম।কাঁপা কাঁপা হাতে ওনার কপাল স্পর্শ করলাম।হালকা গরম।উনি চোখ তুলে তাকাতেই আমি হাত নামিয়ে নিলাম।উনি মুচকি হেসে বললেন,

-“কেমন দেখলেন ডাক্তার সাহেবা?”

আমি কিছু বলতে পারছি না।মনে হচ্ছে কেউ মুখের মধ্যে কস্টেপ মেরে রাখছে।আমি কি লজ্জা পাচ্ছি?
উনি আমার গাল টেনে বললেন,

-“তাকাচ্ছো না কেন?”

-“আ..আমি চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারি না।”

-“লজ্জা পাচ্ছো?”

আমার শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো।চাপা হেসে বললাম,

-“এ..একদম না।”

-“হাম হাম!’

-“বললাম তো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারি না।”

-“ওহ আচ্ছা। চলেন তবে পড়া শুরু করি।”

আমি মাথা নাড়ালাম।বেশ অনেকক্ষণ ধরে পড়ানোর পর উনি কলম রেখে বললেন,

-“সবগুলো করে রাখবে হুম!”

আমি মাথা নাড়ালাম।উনি শ্বাস ছেড়ে বললেন,

-“একটু পানি খাওয়াবে?”

আমি ওনার সামনে পায়েসের বাটি আর এক গ্লাস পানি দিয়ে সামনে বসে পড়লাম।উনি পায়েস দেখে অবাক হয়ে বললেন,

-“পায়েসসস!”

-“ইয়াহ!”

-“আমার জন্য? ”

-“হ্যা!”(হেসে)

-“আমি ভীষণ খুশি হয়েছি।”

-“টেস্ট করুন।”

উনি চামচ দিয়ে টেস্ট করলেন।আমি তাকিয়ে আছি কি বলবে সেই আশায়।এই মুহুর্তটা যে পেয়েছে সে বুঝবে কেমন লাগে!উনি কিছু বলতে যাবেন এমন সময় ফুপি এসে ঢুকলো। উনি আর কিছু না বলে খেতে লাগলেন।ফুপি হেসে বললো,

-“ওহ এজন্য মহারাণী বিকাল থেকে রান্নাঘরে ব্যস্ত।”

আমি হাসার চেষ্টা করলাম শুধু। ফুপি স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-“তোমার শরীর ভালো এখন?”।

-“হ্যা আন্টি ”

-“পায়েসটা কেমন হলো?”

-“ভালোই হয়েছে! ”

বলে আমার দিকে তাকালেন।হাজারো সুখপাখি আমার মনের মধ্যে উড়াউড়ি করছে।ফুপি এবার বলতে লাগলো,

-“অতসী এটা তুই রেঁধেছিস?”

-“সেকি!তুমি দেখোনি ফুপি?”

-“আমি তো দেখলাম তোর মা রান্না করলো!”

আমার বেশ রাগ হলো।ফুপি কি ইচ্ছে করে এমন করছে!আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

-“তুমি দেখনি ফুপি?”

-“দেখলাম তো তোর মা নাড়ছিল…”

-“সেটা তো জোর করে..”

ফুপি কিছু বলতে যাবে এমন সময় আম্মু ডাক দিলো।ফুপি বললো,

-“আচ্ছা যাই রে।যে রান্না করুক।একজন করলেই হলো!”

বলেই ফুপি চলে গেলো।আমি মন খাারাপ করে বসে রইলাম।ফুপি কেন এমন করলো।আমি কষ্ট করে বানালাম।স্যার আমার দিকে ঝুঁকে বললেন,

-“অনেক মজা হইছে!”

আমি ওনার দিকে তাকালাম।ওনার চোখে চোখ পড়লো।উনি বললেন,

-“তাও গাল ফুলিয়ে রাখবে!বললাম তো মজা হইছে।!

আমি মন খারাপ করে বসেই রইলাম।উনি আবার বললেন,

-“এই মেয়ে!আমি বলছি আমার কথা বিশ্বাস হয় না?”

আমি তাও কিছু বলছি না।উনি আমার হাত ধরে বললেন,

-“অতসী…”

আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিলাম।উনি আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে পানি খেয়ে উঠে গেলেন।তারপর বললেন,

-“আসছি…”

বলে আমার হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে চলে গেলেন।আমি ওনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।পায়েসের বাটির দিকে তাকিয়ে দেখলাম এখনো কিছু টা বাকি।কি ভেবে সেটা নিয়ে নিজের মুখে দিলাম।মিষ্টিই হইছে।খারাপ না!আমি ওনার বাটিটা থেকে খাচ্ছি। কেমন একটা অনুভূতি হচ্ছে মনে।কেন করছি,কি করছি আমি জানি না।তবে ভালো লাগছে।এতটা ভালো লাগা কেন আমি জানি না।সত্যিই জানি না!

পায়েসের বাটিটা রাখতে গিয়ে দেখলাম ফুপি বসে আছে ডাইনিং এ।আমি রেগে বললাম,

-“ফুপি তুমি এমন করলা কেন?”

-“কখন?”

-“ওইযে তখন বললা কেন যে পায়েস আমি রাধি নি।”

-“আরে তোর মাই তো রান্না করলো।”

-“দেখো ফুপি,আমি রান্না করছি মানে আমিই।এখন চাইলেই সেটা আম্মুর হবে না।আর আম্মু বলছেও না।”

-“তুই এমন করছিস কেন!”

-“আমার খারাপ লাগছে তাই।আমার আর কিছু বলার নেই।!”

বলেই আমি চলে এলাম রুমে।ফুপি যা করলো এতে আর কিইবা বলার আছে!

খেয়েদেয়ে বিছানায় শুলাম রাত ১২ টায়।বিছানায় বসতেই রোদ্দুর স্যারের সেই ব্যাগটা চোখে পড়লো।ব্যাগটা খুলতেই দুটো মেহেদী পেলাম।আমি অবাকের শীর্ষে!রোদ্দুর স্যার তো মেহেদী দেয়া পছন্দ ই করেন না!আবার আমার জন্য মেহেদী আনলেন!আল্লাহ!
আমি মুচকি হেসে মেহেদী দিতে বসলাম।
রাত প্রায় ১ টায় দেয়া শেষ হলো। ফোনটা হাতে নিয়ে কিছু সময় ভিডিওস দেখলাম।মেসেঞ্জারে ঢুকতেই দেখলাম রোদ্দুর স্যারের আইডিতে সবুজ বাতি।তারমানে সাহেব নেটে।তাও আমায় আজ নক করলো না কেন?
কি ভেবে আমিই জিজ্ঞেস করলাম,

-“কেমন আছেন এখন?”

-“হুম ভালো।”

-“ঔষধ খেয়েছেন?”

-“হুম থ্যাংক ইউ।”

-“কিসের থ্যাংক ইউ?”

-“জিজ্ঞেস করার জন্য! ”

কিরে ভাই!আমার ট্রিকটা এপ্লাই করছে।আমি আবার লিখলাম,

-“এটার জন্য ধন্যবাদ কেন!”

-“হুম ধন্যবাদ! ”

-“আরে…”

যাকগে!আমি মেহেদী দেয়া হাতের পিক তুলে দিয়ে বললাম,

-“কেমন হলো?”

-“হুম সুন্দর। ধন্যবাদ! ”

-“আবার কেন!”

-“আমার আনা মেহেদী দেয়ার জন্য! ”

-“এটার জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছেন কেন?”

-“এমনি।”

কি শুরু করলো এই লোকটা। এই না ভালো ছিলো!
আমার খুব রাগ হলো।আমি রেগেই বললাম,

-“আগেই বলতেন মুছে ফেলতাম।”

-“এত বাজে লাগলে ডাস্টবিনে ফেলে দাও।”

আমার বুকটা ছ্যাত করে উঠলো।এত সুন্দর জিনিসটা আমি ডাস্টবিনে কেন ফেলব?
আমি অভিমান করে বললাম,

-“আপনি ফেলে দিন।হুহ!”

বলেই নেট থেকে বের হয়ে এলাম।বাজে লোক একটা! শুধু শুধু আমর সাথে এমন করলো।কি এমন করলাম আমি?ভালো লাগে না ধ্যাত!

চলবে….