#শান্তিসুধা
১০.
অ্যারেন্জ ম্যারেজে মতের অমিল হবে। ঝগড়াঝাটি করে বিতৃষ্ণ হবে মন। দুজন দুজনের ছায়া মাড়ালেই শরীরটা জ্বলে যাবে। ক্ষণে ক্ষণে অশান্তি আর অশান্তি ঠেকবে।
অপরিণত শান্তি তার বিবাহিত জীবন নিয়ে এমন কিছুই ধারণা করেছিল। সেই ধারণা অনুযায়ী কল্পনায় একটা অশান্তির সংসার তৈরি করেছিল সে। সুযোগ পেলেই যা বাস্তবে প্রয়োগ করতো। চেষ্টা করতো নুবাইদের জীবনটা ঝালাপালা করে দেওয়ার। সেই চেষ্টা ধীরেধীরে নুয়ে পড়তে শুরু করেছে। ইদানীং অশান্তি করতে ভালো লাগে না শান্তির। তবুও সে অশান্তি করে। তবে সেগুলো খুবই মিষ্টি অশান্তি হিসেবে ধরা দেয় নুবাইদের মনে। শ্যামবর্ণের নুবাইদকে দেখলে কিছুকাল আগেও মুখ ভেঙচাতো শান্তি। মনে মনে শত সহস্রবার কালা মানিক নাম জপতো। অথচ আজ এই শ্যামলাটে, সুদর্শন মানবটির প্রতিই ভীষণ রকম আগ্রহ বোধ করে। কোথায় তার অপরিণত মনের সেই কিশোর বয়ফ্রেন্ড? ওসব যেন আজ কেবলই ঘুমের ঘোরে এক সাধারণ স্বপ্ন মাত্র। লম্বা, চওড়া, সুঠাম দেহের অধিকারী। ভারিক্কি বুদ্ধিমত্তার, গম্ভীর মুখের শীতল দৃষ্টি বা পুরুষালি ওই প্রগাঢ় চাউনির মুচকি হাসিতেই যেন আটকা পড়ে গেছে নানুমনি আর নানুভাইয়ের রূপবতী অথচ উচ্ছৃঙ্খল নাতনি শান্তিসুধা৷
প্রতিটি মেয়ের জীবনেই একটা সময়কাল থাকে। যখন অজানাকে জানার আগ্রহ বাড়ে। অচেনা কেউ একজন
হুট করে মনের গভীরে এঁটে বসে রয়। হৃদয়ে বাড়ায় তীব্র উৎকণ্ঠা। সবচেয়ে অপছন্দের জিনিস বা ব্যক্তি খুবই বিস্ময়কর ভাবেই হয়ে উঠে সবচেয়ে পছন্দের কেউ। সময়কালটা আসে অল্পবয়সে। যখন তীব্র ভালোলাগাটুকুর বাইরে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়ে যায় অহংবোধ। চারপাশে ঘিরে থাকা সেই অহং দুমড়েমুচড়ে পড়তে গিয়েও পড়ে না। আটকে রয়।
শান্তির জীবনে সেই সময়টাই চলছে। অচেনা নুবাইদ ধীরেধীরে চেনা হয়ে উঠছে। অপছন্দের মানুষটাকে প্রতিনিয়ত চোখের সামনে দেখে, চারপাশের মানুষজনদের তাকে নিয়ে উৎসাহ, উদ্দীপনা আর তার সম্পর্কে বলা অজস্র প্রশংসা শুনে কীভাবে যেন ভালো লাগতে শুরু করেছে। যেই ভালো লাগার শেষ সীমান্ত তার অজানা। যে মানুষটাকে পাঞ্জাবি, পাজামাতে দেখে একদিন সে নাক ছিঁটকেছিল। আজ সে মানুষটাকে এই পোশাকে দেখলে সে অপলকে তাকিয়ে থাকে। তার সে পলকহীন চাউনিতে যখন নজর আঁটকে নুবাইদের। মুচকি হেসে, ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ কী ব্যাপার শান্তি? এই কালো, বুড়ো বরের প্রেমেটেমে পড়ে যাচ্ছো নাকি? ‘
প্রেমের সূত্রপাত ঘটে গেছে। ভীষণ রকম একটা প্রেম, প্রেম অনুভূতিতে জড়িয়ে যাচ্ছে সে। আচ্ছা প্রেমের কী কোনো ঘ্রাণ আছে? ঘ্রাণটা কেমন? নাফের কি কোনোভাবে তার প্রেমে পড়ে যাওয়ার ঘ্রাণ পাচ্ছে? সুঘ্রাণ? এক নিমেষে বারকয়েক ঢোক গিলে শান্তি। আমতাআমতা করে দৃষ্টি লুকোয়। দুর্বল হয়ে আসা মনটাকে পরিণত করে তিরিক্ষি মেজাজে। তারপর রুক্ষ গলায় বলে,
‘ আহা শখ কত বুড়োর! এই শান্তিসুধা কারো প্রেমে পড়ে না ওকে? সে প্রেমে পড়ায় কিন্তু পড়ে না। ‘
নুবাইদ তখন দুষ্টু হাসে। লম্বা এক শ্বাস টানে। এরপর কাছে এসে শান্তির কণ্ঠস্বর আঁটকে দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
‘ বাতাস অন্যদিকে বইছে মিসেস। ধাক্কাটা সামলাতে পারবে তো? ‘
শান্তি তখন ঘনঘন ঢোক গিলে রাগত চোখে তাকায়। ওর নীলচে চোখ দুটোর রাগ দেখে নিজের চোখ দুটো আলগোছে বন্ধ করে নেয় নুবাইদ। সুযোগ পেয়ে দুহাতে তার বুকের পাটায় ধাক্কা মেরে রুম ত্যাগ করে শান্তি। বিড়বিড় করে কী যেন বকতে বকতে চলে যায় মেয়েটা। বকা গুলো নুবাইদ ঠিকঠাক শুনতে পায় না।
দুষ্টুমিষ্টি ঝগড়ার ছলে একটুআধটু কাছাকাছি চলে আসা। তারপর আবার ছিটকে দূরে সরে যাওয়া। অফিসে কাজের চাপ নুবাইদের। শাশুড়ির সঙ্গে যত ব্যস্ততা শান্তির। বোনাস হিসেবে রয়েছে একই সঙ্গে খালা এবং কাকি শাশুড়ির সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে, মুখে মুখ চালিয়ে ঝগড়া। এইতো নিজের চেয়ে ঢেড় বেশি বয়সের বরের সঙ্গে দাম্পত্য জীবন চলছে শান্তির।
আজ নুবাইদ অফিস থেকে ফিরল রাত এগারোটা নাগাদ। প্রতিদিন আটটায় বাড়ি ফেরা মানুষটা আজ এগারোটায় এলো। এই নিয়ে শান্তির কোনো ভাবান্তর নেই। সে দিব্যি সাউন্ড বক্সে গান ছেড়ে নাচানাচিতে ব্যস্ত। গতকাল বিকেলেই মামাতো ভাই পাপন এসে সাউন্ড বক্সটা গিফট করে গেছে। কারণ আজ শান্তির সতেরো তম জন্মদিন। পাপনের পরীক্ষা আগামীকাল। তাই আজ আসতে পারবে না বলে গতকালই একটু সময় বের করে প্রান্তিকে নিয়ে এসেছিল। আহ্লাদে আটখানা হয়ে গিয়েছিল শান্তি। আহা ভাই বোন দুটো কতই না ভালোবাসে তাকে। নুবাইদ রুমে এসে দেখল, শান্তির সুগঠিত শরীরটা খুব সুন্দর কৌশল খাঁটিয়ে নৃত্যে ব্যস্ত। যদিও এসব পছন্দ করে না সে। তবুও ঘরের ভেতর একা একা বলে কিছু বলল না। চুপচাপ পোশাক পাল্টে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার নিল। এরপর শর্ট প্যান্ট পরে উদাম শরীরে বাথরুম থেকে বের হতেই শান্তি তড়িঘড়ি করে গান বন্ধ করে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
‘ আজ এত্ত লেইট যে কাহিনী কী? ‘
গলায় তোয়ালে ঝুলানো নুবাইদের। যার এক কোণা দিয়ে কানের পানি মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ছোটো ছোটো চুল দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝড়ছে। বা হাতে চুলগুলো এলোমেলো ঝাড়ল। ড্যাবড্যাব করে হ্যান্ডসাম বর নাফেরকে দেখল শান্তি। অবচেতনে মুগ্ধ হলো হৃদয়। ইদানীং বারংবার যেটা হয়েই থাকে। আহা মুগ্ধতা! শান্তির চোখে নিজের জন্য এই মুগ্ধতা টের পায় কি নাফের? তার জীবনে প্রতি মুহুর্তে অশান্তি তৈরি করা শান্তিও যে আজকাল নিগূঢ় এক অশান্তিতে ভুগছে জানবে কি সে? না চাইতেও ছোট্ট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্তি। আকস্মিক মাথায় রক্ত চড়ে যায়। কত্ত বড়ো সাহস এই নাফেরের। তার প্রশ্নের উত্তর দেয় না। নিমেষে তর্জনী উঁচিয়ে, প্রচণ্ড ঝগড়ার তালে সামনে গিয়ে দাঁড়াল। চিৎকার করে বলল,
‘ আপনার সাহস তো কম না। আমার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না। ‘
সারাদিনের লাগামহীন ব্যস্ততায় মাথা ধরেছিল নুবাইদের। তাই আকস্মিক শান্তির এই চিকন গলার ধারাল চিৎকার মস্তিষ্কে আঘাত হানল। তালা ধরল কানে। ঠান্ডা মাথার নুবাইদ খুব একটা চটে না। আর যখন চটে যায় সামনের ব্যক্তির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। আজ জোরছে চটল নুবাইদ। শ্যামলাটে, স্নিগ্ধ মুখাবয়ব কঠিন করে ফেলল নিমেষে। চোখ দুটো গরম করে তাকিয়ে দিলো দুর্ধর্ষ এক ধমক। শান্তি আশা করেনি এমন কিছু। ভেবেছিল স্বাভাবিক তর্ক, বিতর্ক হবে। রোজ যেমন হয়৷ কিন্তু এমন দৃষ্টি আর ধমকে আঁতকে উঠল সে। নড়বড়ে হয়ে রইল পা দুটো। তবুও সাহস করে বুকে দম নিয়ে ধারাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। থমকানো কণ্ঠে বলল,
‘আপনি এত বড়ো জল্লাদ! আমাকে এভাবে ধমকাচ্ছেন?’
ধমক দিয়েও আশ্চর্য হয়ে গেল নুবাইদ। কী দিয়ে তৈরি এই মেয়ে? এর জায়গায় অন্য কেউ হলে নির্ঘাত নিঃশ্বাস আঁটকে তার সামনে থেকে পালাতো। আর শান্তি পালানো তো দূরে থাক সামান্য সরলোও না! গম্ভীর মুখে কয়েক মুহুর্ত তাকিয়ে রইল নুবাইদ। শান্তির দৃষ্টি অনড়। যা ধীরেধীরে তীক্ষ্ণ হচ্ছিল। নিশ্চিত গায়ে পড়ে ঝগড়া বাজানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। খিদে পেয়েছে তার। ঝগড়া করার মুড নেই একদম। তাই সরে গেল। শান্তির জন্মদিন আজ। সেজন্য নিজের পছন্দ সই একটা উপহার এনেছে। শান্তির পছন্দ হবে না জানে। তবুও এনেছে। যদি কোনোদিন পছন্দ হয়। তবে নিশ্চয়ই পরবে।
নুবাইদ সরে যেতেই মাথায় আগুন ধরে গেল শান্তির। তাকে অবজ্ঞা? এত জঘন্য একটা ধমক দিলো। আবার অবজ্ঞাও করা হচ্ছে। এই নাফেরকে ছাড়বে শান্তি।
নুবাইদ রেখে দেওয়া শপিং ব্যাগটা নিয়ে শান্তিকে দিয়ে বলল,
‘ শুভ জন্মদিন। এটা রাখো। ‘
ফুঁসে উঠল শান্তি। শপিং ব্যাগটা হাতে ধরেই ছুঁড়ে ফেলল ফ্লোরে। স্তব্ধ হয়ে গেল নুবাইদ। কত্ত বড়ো বেয়াদব তার বউ! আর কত ছাড় দেবে? আর না। এই মেয়েকে যত ছাড় দেবে ততই উদ্ধত হয়ে উঠবে। এবার শক্ত করে ধরার পালা। মাত্র কয়েক মাসেই কলেজ থেকে গোটা দশেক নালিশ পেয়েছে। ঘরের বউয়ের নামে যদি এত নালিশ আসে। কত আর সহ্য করা যায়? নালিশ পেয়ে যখন তার সত্য, মিথ্যা যাচাই করতে যায় লজ্জায় মুখ লুকাতে ইচ্ছে করে। তার বউ সিনিয়র ছেলেদেরও পিঞ্চ করে! সেদিন এক সিনিয়র তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ক্যান্টিনে গল্প করছিল। শান্তি গিয়ে ছেলেটাকে প্রশ্ন করেছে,
‘ ভাইয়া এটা আপনার কত নাম্বার? আমার বান্ধবী তো তিন নাম্বার ছিল রাইট? ‘
গতকাল আরেক সিনিয়রকে চোখ মেরেছে। যে কিনা নুবাইদের পিএর ছোটোভাই! এছাড়া ক্লাসের পড়া শিখে যায় না৷ টিচার পড়া ধরলে না পারলে গর্ব করে বলে,
‘ স্যার আমি ম্যারেড। বিবাহিত মেয়েদের স্টুডেন্ট লাইফ কি সুখকর হয়? রান্নাবান্না সেরে, সংসার সামলে, জামাইয়ের হাতে-পায়ে ধরে তারপর কলেজে আসতে হয়। সেখানে প্রতিদিন পড়া মুখস্থ করে আসা কি বিলাসিতা নয়? ‘
শান্তির এসব আজগুবি কথায় বন্ধু, বান্ধবরা অবাক হয়। কেউ কেউ দুঃখ পায়। আর স্যারের চোখে জাগে বিস্ময়! কারণ নুবাইদ তালুকদার নাফের সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা আছে তার। ছেলেটা কী পরিমাণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন, নারীদের প্রতি তার কী প্রগাঢ় সম্মানবোধ। অথচ তার বউ কিনা তার হাতে, পায়ে ধরে কলেজে আসে? শান্তিদের কলেজের ক্যামিস্ট্রি লেকচারার ওবায়দুল স্যার নুবাইদেরই এক বন্ধু। তাই শান্তির স্বামী, শশুর বাড়ির লোকজন কেমন? আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। পড়াচোর শান্তি যে টিচার্সদের ঢপ দিতে ওস্তাদ এ সম্পর্কে এখন ভালোই অবগত সবাই।
শান্তির ওসব আচরণ নিয়ে অল্প রাগ ছিল। আজ ভয়াবহ এই বেয়াদবির জন্য অল্প রাগটা বেড়ে গেল৷ অগ্নি চোখে তাকিয়ে ফুঁসছিল শান্তি। কিছু একটা বলার জন্য উদ্যত হতেই নুবাইদ ওকে আক্রমণ করল। দু কাঁধে গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে চেপে ধরে ক্রোধ মিশ্রিত গলায় বলল,
‘ তুলে জাস্ট আছাড় দিব! ‘
চমকে উঠল শান্তি। মনে হলো না এমনি এমনি ভয় দেখাচ্ছে নাফের। অন্তরে উপচে পড়া ভয়টা লুকিয়ে ফেলল নিমেষে। ঢোক গিলল সন্তর্পণে। যেন বুঝতে না পারে নাফের। তারপর তাচ্ছিল্য করে বলল,
‘আর আমি বুঝি ছেড়ে দিব? উঠে এসে আপনার মগজ চিবিয়ে খাব।’
নাহ, এই মেয়ে দমবার পাত্রী নয়৷ নুবাইদও আজ এক চুল ছাড় দেবে না৷ তার ভেতরে অদম্য জেদ চেপে বসল। শান্তিকে পরাস্ত করার জেদ। তাই চোয়ালজোড়া শক্ত করে আচমকা পাঁজাকোলা করে নিল শান্তিকে। এরপর সত্যি সত্যি আঁছড়ে ফেলল! কিন্তু টাইলস করা শক্ত ফ্লোরে নয়। নরম বিছানায়। তবুও কোমরে ব্যথা পেল শান্তি। ‘ ও মা গো ‘ বলে একহাত কোমরে চেপে চিৎকার করে উঠতেই নুবাইদ ক্রোধে গর্জনরত নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ওর শরীরের ওপর নিজের বলবান দেহটা ছেড়ে দিলো। একদিকে আচমকা কোমরে লেগেছে, আরেকদিকে নুবাইদের ভারিক্কি শরীরের চাপে ভর্তা হওয়ার উপক্রম। ওই যে পাটায় পিষে কিছু ভর্তা করা হয় না? অমন ভর্তা। আহ, কী ভার! ফের ‘ ও মাহ গো!’ বলে দু’হাতে নুবাইদের বুকে ধাক্কা দিলো। পা দুটো নড়চড় করার সাধ্য নেই৷ ওগুলো যেনো ট্রাকের চাকায় আটকা পড়েছে উহ। নুবাইদ নামক গাড়ির পা নামক দুই চাকার কাছে পুরোপুরি জব্দ শান্তির দু পা। ধীরেধীরে দু’হাতও বল প্রয়োগ করে জব্দ করল। দুটো শরীর, আর শরীরে থাকা হাত, পা একে-অপরের সঙ্গে লেপটে আছে। একজন অনিচ্ছায়। আর একজন তীব্র ইচ্ছায় গায়ের জোর খাঁটিয়ে বউকে আয়ত্ত করার জেদে।
শান্তির টালমাটাল লাগছে। নাফের তাকে এভাবে আক্রমণ করল কেন? এমন করেই বা তাকিয়ে আছে কেন? এক্ষুনি যেন গিলে খাবে। হায় হায় মেরে ফেলবে না তো? কী জোর শরীরে! কী আগুন চোখে! নিমেষে চোখ বন্ধ করে ফেলল শান্তি। অমনি চট করে কল্পনায় দেখে ফেলল, নাফের ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে দুটো বড়ো ধারাল দাঁত। যা এক্ষুনি তার গলায় ডাবিয়ে দিবে। শুষে নেবে শরীরের সব রক্ত। এরপরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে সে। তার লাশটা বস্তা ভরে গুম করে দেওয়ার দৃশ্য দেখা শেষেই থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে চোখ খুলল। একটা অদ্ভুত ভয় আর ঘোরের ভেতর রাক্ষস রূপী নাফেরের থেকে নিজের প্রাণ বাঁচাতে নিজের ভেতর সঞ্চয় করল এক দৈবশক্তি। এরপর কোনোকিছু না ভেবে ফের চোখ বুজে মুখ এগুলো। হাত, পা, শরীর বন্দী। এই মুখটুকুই এখন তার অস্ত্র। তাই বড়ো একটা হা করে নাফেরের মুখে শক্ত করে কামড়ে ধরল।
…চলবে..
® জান্নাতুল নাঈমা