শান্তিসুধা পর্ব-১৬

0
307

#শান্তিসুধা
১৬.
মুখোমুখি নুবাইদ আর তালাল শেখ। পাশাপাশি নুবাইদ শান্তি। তালাল শেখ গম্ভীর। নুবাইদ শান্ত। আর শান্তি ভীত, উদ্বিগ্ন, তীব্র কষ্টে জর্জরিত। বাইরে শক্ত মূর্তি রূপে বসে থাকলেও ভেতরে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া শান্তিকে কী টের পাচ্ছে নুবাইদ?

স্বামী-স্ত্রীর মাঝে দ্বন্দ্ব-কলহ অস্বাভাবিক কিছু না। তাই নুবাইদ, শান্তির দ্বন্দ্ব মেটাতে আলোচনায় বসল তালাল শেখ। কথা ছিল মামারাও উপস্থিত থাকবে। থাকবে নুবাইদের দাদুভাইও। কিন্তু হঠাৎই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হলো। পরিবর্তন করল নুবাইদ নিজেই। হুট করেই সকালবেলা ফোন করে জানাল, নানুভাই আর শান্তি দুজনের সঙ্গে একান্তে কথা বলবে সে। এরপর দুপুরের আগেই উপস্থিত হলো নুবাইদ। তালাল শেখ নাতনি আর নাতজামাই নিয়ে আলাদা ঘরে বসলেন। দৃঢ় কণ্ঠে শান্তিকে প্রশ্ন করলেন,

” তাহলে এই বিয়েতে সুখী হলেই না তুমি। বেরিয়ে আসতে চাও সম্পর্ক থেকে? ”

নিশ্চুপ, স্তব্ধ শান্তি। অনড়ভাবে বসে। পলকহীন মলিন চোখে তাকিয়ে রইল নানুভাইয়ের দিকে। নুবাইদ দেখল প্রাণহীন দৃষ্টি, বিবর্ণ মুখের শান্তিকে। বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠল। বিয়ের সম্পর্কটা কেমন! তিন কবুল পড়ে সামাজিক রীতিতে শুধু বিয়েই হয়েছে। আর তো কিছু হয়নি৷ না মেয়েটার ভালোবাসার স্বীকারোক্তি পেয়েছে। আর না দিয়েছে স্বামীর অধিকার। তবুও অদৃশ্য এক মায়ায় হৃৎপিণ্ডটা ছটফট করছে। মেয়েটা যে তার বউ। বউয়ের প্রতি এই অনুভূতিটাকে ভালোবাসা বললে ভুল হবে না। এ কেবল তার অনুভূতি। একান্তই তার৷ কিন্তু শান্তির? অকস্মাৎ মনে পড়ে গেল গতরাতে শান্তির চাওয়া বিচ্ছেদের কথা। চমকে উঠল নুবাইদ। বিস্ময় ভরে তাকাল শান্তির মুখপানে। গতরাতে ডিভোর্স চেয়ে আজ কেন এমন নির্লিপ্ত হয়ে আছে? নানুভাইকে কেন জোর গলায় বলছে না, ‘আমার ডিভোর্স চাই। নাফেরকে আমি ডিভোর্স দিব। ‘

ধীরে ধীরে নিজেকে শক্ত করে নিল নুবাইদ। শান্তির বেদনার্ত মুখে, প্রাণহীন চোখে তাকিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বলল,

” শান্তি আমাকে ডিভোর্স দিতে চায় নানুভাই। আপনি অনুমতি দিলে আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করব। ”

নুবাইদের এহেন কথা বজ্রপাত ঘটাল শান্তির হৃদয়ে। চকিতে তাকাল মানুষটার পানে। ধীরে ধীরে রক্তিম হয়ে উঠল চোখ দুটো। অজস্র নোনাপানি জমল সেখানে। নুবাইদ খেয়াল করল। স্পষ্ট দেখল নির্ভীক শান্তির অসহায় মুখ। টের পেল ভেতরে ভেতরে হাউমাউ করে কাঁদছে তার বউ। হাউমাউ করে কাঁদছে। মুহুর্তেই চট করে মুখ ঘুরাল। আড়ালে ফিচেল হাসল একবার। তারপর নিজেকে পূর্বের ন্যায় কঠিন করে নানুভাইয়ের দিকে তাকাল। তালাল শেখ দৃঢ় চোখে তাকিয়ে আছেন। নুবাইদ চোখে ইশারা করল তাকে কিছু বলতে। অমনি তিনি বললেন,

“মৌনতা সম্মতির লক্ষণ। তার মানে তুমি নুবাইদের সাথে সংসার করতে চাইছ না। আচ্ছা বেশ, হোক তবে তোমাদের বিচ্ছেদ। ”

আচমকা কেঁপে উঠল শান্তি। ওর চমকে যাওয়া, কেঁপে উঠা স্পষ্ট বুঝতে পারল নুবাইদ আর নানুভাই। শান্তির চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরবে প্রায়। ঝাপসা চোখে হতভম্ব মুখে নানুভাইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে সে। নানুভাই ফের বললেন,

” যেহেতু তোমরা আলাদা হয়েই যাবে আমার আর কিছু করার নেই। কিন্তু কোনো দম্পতি যদি আইনি ভাবে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয়। তাহলে তাদেরকে অন্তত ছয় মাস ভাবার সময় দেওয়া হয়৷ আমি চাই তুমি আর নুবাইদ নয়দিন সময় নাও। নুবাইদ নয়দিনের জন্য ওর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। যেখানে ওর দাদুভাই নাজিরের জন্মস্থান। একটি মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে ওখানে। নাজিরের শরীর খারাপ তাই ওর হয়ে সব দায়িত্ব পালন করবে নুবাইদ। আমি চাচ্ছি তুমি নুবাইদের সঙ্গে যাও। এই নয়দিনে যদি তোমার মন পরিবর্তন ঘটে ভালো। পরিবর্তন না ঘটলেও সমস্যা নেই। ফিরে আসার পরই আইনিভাবে তোমাদের আলাদা হবার ব্যবস্থা করে দিব৷ ”

~চলমান~
®জান্নাতুল নাঈমা

#শান্তিসুধা
১৬. (বর্ধিত অংশ)
পরের দিন ভোরবেলা। তালাল শেখের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামল নুবাইদের। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তালাল শেখ। পাশে অফ হোয়াইট সেলোয়ার-কামিজ পরে শান্তি দাঁড়িয়ে। হাতে ছোট্ট একটা লাগেজ। নুবাইদ গাড়ির ডোর খুলে দিল। তালাল শেখ শান্তির কাঁধে ভরসা ভরে হাত রাখলেন। বললেন,

” দেরি হয়ে যাচ্ছে উঠে বসো। দোয়া করি তোমার জীবনে সব ভালো হোক৷ ”

এক পলক নানু ভাইকে দেখে গাড়িতে উঠে বসল শান্তি। ড্রাইভিং সিটে নুবাইদ বসে আছে। ব্ল্যাক কালার ফরমাল পোশাকে দারুণ হ্যান্ডসাম লাগছে। আচমকা চমৎকার এক পুরুষ সুগন্ধি এসে নাকে লাগল। বুঝতে বাকি রইল না, নুবাইদের শরীর থেকেই এই ঘ্রাণ আসছে। সিটে বসে সামনে দৃষ্টি স্থির রাখল সে। একবারও তাকাল না নুবাইদের দিকে। নুবাইদ তাকাল তার দিকে৷ খুবই আশ্চর্য হলো বউয়ের মাথায় ঘোমটা দেখে! আর কত আশ্চর্যজনক ঘটনা করবে মেয়েটা? নারী মন এত রহস্যময় কেন? নারী আচরণ কেন এত ধাঁধা মেশানো? ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল নুবাইদ। মনে মনে হাসল কিঞ্চিৎ। তারপর নানু ভাইয়ের থেকে বিদায় নিয়ে শান্তিকে বলল,

” ডোর লক করে দাও। ”

মৃদু চমকে নুবাইদের দিকে তাকাল শান্তি। যেন কী বলেছে শুনতেই পায়নি সে। নুবাইদ বুঝল ওর অনুভূতি। মুখে মিথ্যা গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলে পুনরায় বলল,

” ডোর লক হয়নি। ভালোভাবে লক করো। ”

সঙ্গে সঙ্গে ডোর লক করে দিল শান্তি। গাড়ি স্টার্ট করার পূর্বে নুবাইদ আবারো আদেশ সূচকে বলল,

” গ্রামের পথ সুবিধার নয়। ভীষণ আঁকাবাঁকা আর ভাঙা রাস্তা। সিট বেল্ট লাগাও। ”

শান্তির ইচ্ছে হলো না সিট বেল্ট লাগাতে। নুবাইদ দুবার বলল। তবুও সে কথা শুনল না। অগত্যা ওভাবেই গাড়ি স্টার্ট করল নুবাইদ। প্রায় দু’ঘন্টা পেরিয়ে গেল। চুপচাপ বসে আছে দুজন। ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে শান্তির খেয়াল রাখছে নুবাইদ। আর শান্তি জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে। সে বোঝাচ্ছে রাস্তা দেখছে। আসলে তা নয়। মুখ ওদিকে থাকলেও মন নুবাইদের দিকে। বুকের ভেতর তীব্র কষ্টে জর্জরিত হয়ে আছে সে। বেইমান নাফের কেন একটুও বুঝতে পারছে না?

শহর পেরিয়ে এবার গ্রামের দিকে গাড়ি এগুবে। তার আগে একবার গাড়ি থামাল নুবাইদ। শান্তিকে জিজ্ঞেস করল,

” কিছু খাবে? ”

মাথা নেড়ে না করল শান্তি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নুবাইদ পাশেই এক দোকান থেকে ঠান্ডা পানি আর চকোলেট নিয়ে এলো। শান্তিকে সাধতে উদ্যত হয়ে খেয়াল করল,
ও সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তবে কি খারাপ লাগছে? ইশ, সর্বক্ষণ ছটফট করা, চঞ্চল মেয়েটা কেমন নির্বাক হয়ে পড়েছে। সব দোষ তার। বাচ্চা মেয়ে। তার কিশোরী বউটার কোনো দোষ নেই। আসামি সে নিজেই। ভেবেই বাঁকা হাসল। সচেতন গলায় প্রশ্ন করল,

” শান্তি, শরীর খারাপ লাগছে? ”

চোখ দুটো বন্ধ রেখেই দুদিকে মাথা নাড়ল শান্তি। নুবাইদ মনে মনে বলল, ” খারাপ তো অবশ্যই লাগছে বউ৷ কিন্তু সেটা শরীরে না মনে। ”

মুখে বলল,

” খিদে পেয়েছে? ”

এবারেও না করল শান্তি। নুবাইদ একটুখানি কাছে ঘেঁষে নরম গলায় বলল,

” একটু পানি খাও আরো দু’ঘন্টার পথ। এই গরমে এতক্ষণ পানি না খেয়ে থাকা উচিত না। ”

এবারে তাকাল শান্তি। হুট করেই এত কাছে নুবাইদকে দেখে বুকের ব্যথাটা টনটন করে উঠল। ইচ্ছে করলে বলিষ্ঠ বুকটায় ঝাঁপিয়ে পড়তে৷ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে ইচ্ছে করল,

” আমি আপনাকে ডিভোর্স দিতে চাই না নাফের। আমি যেমন আপনাকে বিয়ে করতে চাইনি ঠিক তেমনি এখন আপনার, আমার বিয়েটা ভাঙতেও চাই না। সেদিন রাতে যা বলেছি, যা করেছি সবটা জেদের বশে, রাগের মাথায়। ভয়াবহ রকম হিংসা থেকে। আপনার পাশে অন্য কোনো মেয়েকে দেখলে হিংসে হয় আমার৷ জ্বলে, পুড়ে শেষ হয়ে যাই। কেন হয় এমন নাফের কেন হয় বলুন তো। ”

বুকের ভেতর হওয়া তীব্র যন্ত্রণাটুকুও বোঝাতে মন চাইল। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে মানুষটাকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করল,

” এখানে কেন এত কষ্ট হচ্ছে নাফের? আপনার আমার বিচ্ছেদ কেন মেনে নিতে চাইছে না এই বুক কেন? ”

বলা হলো না৷ কিছুই বলতে পারল না শান্তি। আর না ঝরাতে পারল দু-চোখে দুফোঁটা অশ্রুজল। অথচ ভেতরটা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল। বিনাবাক্যে পানির বোতল নিয়ে একটু পানি খেল সে। নুবাইদ যেন স্বস্তি পেল৷ গাড়ি স্টার্ট দিল ফের। আধঘন্টার মধ্যে ঘুমিয়ে গেল শান্তি। সে ঘুমাচ্ছে নুবাইদ এটা টের পেল যখন ভাঙা রাস্তায় গাড়ি নড়েচড়ে উঠল আর ত্যাড়ামি করে সিট বেল্ট না লাগানো শান্তি ঘুমে বুঁদ হয়ে নিজের ভারসাম্য হারাল। একটুর জন্য মেয়েটার মাথায় আঘাত লাগল না। নুবাইদ ত্বরিত বেগে হাত বাড়িয়ে আগলে ধরল মাথা। গাড়ির ব্রেক কষল অত্যন্ত কৌশলে। ঘুমন্ত শান্তির মাথা আলগোছে বুকে টেনে নিল। বারকয়েক ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলে আগের মতো সিটে আধশোয়া করে দিল। তারপর সিট বেল্ট লাগিয়ে বিড়বিড় করে বলল,

” বেডরুমের বাইরে নরম বিছানা ছাড়াও এই মেয়ে এমন গভীর ঘুম ঘুমাতে পারে? সর্বস্ব লুট করে নিলেও তো টের পাবে না দেখছি! ”

গ্রামে পৌঁছাতে বারোটা বেজে গেল। মাথার উপর তীর্যক হয়ে আছে সূর্যরাজ। শান্তি তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। একটা বাংলো বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সে। বাংলোটা তার দাদুভাইয়ের। জরুরি কাজে দু একদিনের জন্য এ গ্রামে আসা হয়। যখনি আসে তার কয়েকদিন আগে বংশের লোকদের জানিয়ে রাখে। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ এসে ঠিক পুরো বাংলো পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন করে দিয়ে যায়। চাবি থাকে নির্দিষ্ট একজনের কাছে। নুবাইদের চাচাত দাদার ছেলে এগিয়ে এলো। কুশলাদি বিনিময় করে বলল, হাতমুখ ধুয়ে রেস্ট করতে৷ দুপুরের খাবার তৈরি হচ্ছে তাদের জন্য। প্রসন্ন চিত্তে হাসল নুবাইদ। গ্রামের হালচাল, মসজিদের কাজ, জমিজমা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে গাড়ির ডোর খুলল। শান্তির ঘুম ভাঙিয়ে বিরক্ত না করে চটজলদি পাঁজাকোলা করে নিয়ে চলে গেল বাংলোর ভেতর। বেডরুমে গিয়ে শান্তিকে শুইয়ে দিয়ে সে হাতমুখ ধুয়ে পোশাক পাল্টে নিল। একটু পরই এলাকার এক চাওয়ালার ডাক শুনল। চাচাত ভাই দুই কাপ চা পাঠিয়ে দিয়েছে। সে গিয়ে আন্তরিক হেসে চা নিল। তারপর বেডরুমে এসে শান্তিকে ডাকল। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পর ঘুম ভাঙল মেয়েটার। চোখ খুলে খুবই চমকে গেল। ধাতস্থ হয়ে উঠে বসে আশপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল সে কোথায়? গাড়ি থেকে কীভাবে এখানে এলো? মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। নুবাইদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,

” ওদিকে ওয়াশরুম। ফ্রেশ হয়ে পোশাক পাল্টে নাও। একটুপরই দুপুরের খাবার এসে যাবে। ”

পেটে চাপ অনুভব করল শান্তি। সত্যি ওয়াশরুম যাওয়া প্রয়োজন। হাতমুখ ধুয়ে নতুন আরেকটা সেলোয়ার-কামিজ পরে নিল সে। পারপেল কালার তার ধবধবে ফর্সা ত্বকে এত্ত সুন্দর ফুটে থাকল। চায়ে চুমুকের ফাঁকে একবার দেখেই নুবাইদের নিঃশ্বাস আঁটকে এলো।

চা পছন্দ নয় শান্তির। তবুও আজ খেলো। দুধ চা বলে মন্দ লাগল না৷ চা শেষ করে নুবাইদ পুরো বাংলো ঘুরে দেখল। আর শান্তি এক জায়গায় বসে ওটা সেটা দেখতে লাগল। দুপুরের খাবার এলো ঠিক একঘন্টা পর। টাকি মাছ ভর্তা, বেগুন ভাজি, গরুর কষা মাংস, সাদা ভাত, ডাল আর পায়েস। গোলাকৃতি ছোট্ট একটা টেবিলে মুখোমুখি বসে দুজন চুপচাপ খেয়ে নিল। ভর্তা, ভাজি, তরকারিতে ঝালের পরিমাণ এত বেশি ছিল। যে মাথার উপর পাখা চললেও শান্তি ঘেমে উঠল। ঠোঁট, নাক লাল টকটকে হয়ে একাকার অবস্থা। অন্য কোনো সময় হলে চিৎকার, চ্যাঁচামেচী করে সব মাথায় তুলত। নুবাইদের কানের বারোটা বাজিয়ে মাথা খেতো। কিন্তু আজ সময় খুবই জটিল। যার কারণে কঠিন সমস্যায় পড়েও সে মুখ দিয়ে টুঁশব্দ করতে পারছে না।

নাক টানার শব্দ শুনে আচমকা মাথা তুলল নুবাইদ। খাবারে ঝালের পরিমাণ বেশি হলেও তার সমস্যা হচ্ছিল না। বেশ সুস্বাদু লাগছিল। কিন্তু শান্তি যে এত ঝাল সহ্য করতে পারবে না ব্যাপারটা মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল৷ যখন খেয়াল করল চমকে গেল! ত্বরিত পায়েসের বাটি সামনে ধরে মৃদু ধমকে বলল,

“হায় আল্লাহ, কী অবস্থা হয়েছে মুখের! এত ঝাল লাগছে তবুও ষ্টুপিডের মতো খেয়ে যাচ্ছ কেন? মিষ্টি খাও তাড়াতাড়ি। ”

দুচোখ বেয়ে অনর্গল জল গড়াতে লাগল শান্তির। এই জল শুধুই কি ঝালের নাকি ভেতরে জমে থাকা কষ্টেরও?

পায়েস খেলো না শান্তি। নুবাইদ বিরক্ত হয়ে আবার সাধল৷ এতে জেদ গাঢ় হলো তার। উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে বেডরুমে চলে গেল। খাওয়া শেষ করে ধীরেসুস্থে নুবাইদও চলে গেল রুমে। হাতে পায়েসের বাটি। শান্তি স্তব্ধ মুখে বসে আছে। শ্বাস নিচ্ছে বড়ো বড়ো করে। নুবাইদ বলল,

” এক চামচ হলেও মুখে দাও৷ এত জেদ ভালো নয় শান্তি। ”

শান্তির কোনো ভাবান্তর হলো না৷ মেজাজ গরম হলো নুবাইদের। কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল,

” তুমি কী চাচ্ছ বলো তো? পায়েস খাবে না রাইট? তো তোমার এই ঝাল ঠোঁটে কিস করে যন্ত্রণা কমাবো? ”

চকিতে তাকাল শান্তি। নুবাইদ চোখ ছোটো ছোটো করে বলল,

” এভাবে তাকাচ্ছো কেন? স্টিল নাও তুমি আমার ওয়াইফ। কথা না শুনলে কিস করব, শাস্তি দিতে বাসরও করব সমস্যা কোথায়? ডিভোর্স সমস্যা? কাল ডিভোর্স হলেও আজ বাসরে বৈধতা আছে নো প্রবলেম। ”

আকস্মিক নুবাইদের এহেন কোথায় আরো বেশি সংকুচিত হয়ে গেল শান্তি। যা দেখে সতর্ক হলো নুবাইদ। নিজের চারপাশে, আপাদমস্তক গাম্ভীর্যের দেয়াল তুলে বলল,

” জাস্ট কিডিং। পায়েসটা খেয়ে নাও। আমি একটু বাইরে যাব৷ ”

~চলমান~
‌®জান্নাতুল নাঈমা