#একঝাঁক_জোনাকি
#পর্বঃ২৪
#ইশরাত_জাহান_অধরা
তিথি কাজ শেষে ঘড়ির কাটার দিকে তাকাতেই দেখলো সাতটা বাজে।সবকিছু গুছিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে বাস স্টেশনে দাঁড়ালো বাস আসার অপেক্ষায়।বাস আসবে ৭ঃ৩০ এ।দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মোবাইল দেখছিলো। হঠাত পাশে তাকাতেই দেখলো কয়েকটা ছেলে ওর ওড়নার দিকে তাকিয়ে আছে।তিথি ভ্রু কুচকে ওড়নার দিকে তাকাতেই দেখলো অর্ধেকটা ছিড়ে গেছে।মনে হয় সকালের রিকশার ঘটনার জন্যই ছিড়ে গেছে।ছিড়া ওড়নাটাকে গায়ে ভালোভাবে জড়িয়ে নিলো।তবুও বিশ্রী লাগছে।ওড়না ছিড়ে যাবার ফলে শরীরের বেশ খানিকটা অংশই দেখা যাচ্ছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো তিথি।আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো পুরো রাস্তা জন মানবহীন।জড়ো হয়ো একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো।আর দোয়া করলো যেন বাস তাড়াতাড়ি চলে আসে হঠাৎ পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে ভয়ে কেঁপে উঠলো পুরো শরীর।তবে কি অই ছেলেগুলা পিছনে চলে এসেছে?ওরাই পিঠে স্পর্শ করেছে?ভেবেই ঘৃণাউ শরীর রিরি করে উঠলো।পিছনের লোকটা পাশে এসে দাঁড়াতেই রাগে লোকটার গালে দুইটা চড় দিয়ে বসলো।চোখ খুলে সামনে তাকাতেই তাহসানের মুখ চোখে পরল।গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তিথির দিকে।তিথিও অবাক হয়ে বলল,
“আপনি?আপনি কখন আসলেন?”
“আপনি আমার গালে থাপ্পড় মারার একটু আগে।”
“দুঃখিত।আমি বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছি অই ছেলেগুলাই মনে হয় পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।”
“ইট’স ওকে৷ আমি কিছু মনে করিনি।”
“আপনি এখানে কি করছেন?”
“আপনাকে সাহায্য করতে আসছিলাম।তার বদলে যে থাপ্পড় খাবো ভাবি নি।যাইহোক,আমার ব্লেজার কালকে অফিসে দিয়ে দিবেন।আজকের জন্য আপনাকে ধার দিলাম জাস্ট। ”
তিথি ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ব্লেজার?”
“হুম!যেটা রাখতে গিয়ে আপনার হাতে থাপ্পড় খেলাম।”
তিথি অবাক হয়ে নিজের দিকে তাকাতেই দেখল ব্লেজার গায়ে জড়ানো।ব্লেজারটা খুলে তাহসানের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“আমার কোন ব্লেজার লাগবে না।আপনি এটা নিয়ে যান!”
“ভেবে বলছেন?দেখুন ব্লেজারটা আমি হেল্পের জন্যই দিয়েছি।ইম্প্রেস করার জন্য নয়।আপনার যদি ছিড়া ওড়না পরে থাকার ইচ্ছা থাকে তাহলে দিন আমাকে।”
তিথি সামনে তাকিয়ে দেখল বখাটে ছেলেগুলা এখনো ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ভয়ে পুরো শরীর শিউরে উঠলো।হাত ঘুটিয়ে ব্লেজারটা আবার পরে বলল,
“কালকে ফেরত দিয়ে দিব।চিন্তা করবেন না।”
তাহসান মাথা নাড়ালো।বাসের জন্য ওয়েট করতে লাগলো।কিছুক্ষনের মধ্যেই বাস এসেও গেল। বাস আসার সাথে সাথেই পুরো এলাকায় লোড শেডিং হয়ে গেলো।চারপাশ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেলো।তিথি অন্ধকারে ভয়ে ভয়ে বাসের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।না জানি কখন পরে গিয়ে পা ভেংগে ফেলে।ওর সাথেই কেন এরকম সবসময় হয়?দীর্ঘশ্বাস ফেলে দু কদম পা ফেলতেই কেও ওর দিকে লাইট ফেলল।ভ্রু কুচকে পিছন ফিরে তাকাতেই দেখল তাহসান মোবাইলের টর্চ লাইট তিথির সামনের ফেলেছে।এতে করে সামনের রাস্তাটা দেখা যাচ্ছে।তিথিকে তাকাতে দেখে তাহসান পিছু হাঁটতে হাঁটতে বলল,
“অন্ধকার! রাস্তা দেখা যাচ্ছে না।তাই লাইট জ্বালালাম নয়তো পরে গিয়ে হাত পা ভেংগে ফেলতে পারি!আবার ভাববেন না আপনার সুবিধার জন্য চালিয়েছি।আমি আমার।সুবিধার জন্য লাইট জ্বালিয়েছি।”
তিথি বিরক্ত নিয়ে বাসে উঠে বসল।তাহসান ও তিথির পিছু পিছু বাসে উঠে পরল।চারপাশ নজর বুলাতেই দেখল একটা সিটও খালি নেই শুধু তিথিরটা বাদে।অগত্যা না চাইলেও দাঁড়িয়ে থাকতে হলো তাহসানকে একটা সিটের মাথা ধরেই দাঁড়িয়ে ছিল।গাড়ি চলা শুরু করে দিয়েছে।তিথি একবার তাহসানের দিকে তাকালো পরমুহূর্তেই জানলার বাইরের দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।
.
.
মুক্তা বেগম নিহানের ঘরের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলেন।এমন সময় আড়চোখে ঘরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন অনিমা খাটের কোণায় বসে আছে।না চাইতেও ঘরের ভিতর ঢুকে বললেন,
“শুনলাম বিকালে নিহান নাকি তোমাকে নিয়ে বেরুবে?”
নিহানের মাকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরল অনিমা।
“হুম।উনি যাবার সময় বলে দিয়ে গিয়েছিলেন।”
নিহানের মা সামনে থাকা দেয়ালের ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলেন চারটা বাজে।
“বিকাল তো হয়ে গিয়েছে!রেডি হচ্ছো না কেন?নিহান আসার পরে যদি রেডি হও তাহলে তো দেরি হয়ে যাবে!রেডি হয়ে বসে থাকো!”
অনিমা মাথা নাড়াতেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।অরিনের দিকে তাকাতেই দেখল অরিন ঘুমাচ্ছে।কয়েক কদম হেঁটে কাবার্ড থেকে একটা শাড়ি বের করলো।কালোর মধ্যে সাদা কাজ করা।এটা ছাড়া আর কোন শাড়ি নেই অনিমার যেহেতু বেশি একটা শাড়ি পরে না তাই শাড়ি কিনেও নি।কিছু না ভেবে চট করে ওয়াশরুমে শাড়ি নিয়ে চলে গেলো।সব প্রয়োজনীয় জিনিস পরে শাড়িটা পরতে যেয়েই সমস্যা হলো।শাড়ি জিনিসটা অতটা ভালো করে পরতে পারে না সে।এরআগে যতবারই শাড়ি পরেছে কেও না কেও পরিয়ে দিয়েছে।তাই নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে শাড়ি পরার চেষ্টা করতে লাগলো।কিন্তু এত চেষ্টার পরেও শাড়িটা পরতে পারলো নন কোনমতে গায়ে জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।নিচে নিহান এসেছে।নিহানকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে নিহানের মা নিহানের রুমে এসে অনিমাকে এখনো রেডি না হতে দেখে বললেন,
“কি হলো?এখনো রেডি হওনি কেন?আমার ছেলেটা নিচে দাঁড়িয়ে আছে!”
অনিমা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“শাড়িটা পরলেই হয়ে যাবে।”
“তাহলে পড়ো!বসে আছো কেন?”
“ইয়ে মানে….”
নিহানের মা বিরক্ত হয়ে বললেন,
“আবার বলো না যে তুমি শাড়ি পড়তে পারো না!”
অনিমাকে চুপ করে মাথা নিচু করে থাকতে দাঁড়িয়ে নিহানের মা অবাক হয়ে বললেন,
“তুমি শাড়ি পরতে পারো না?”
কিছুক্ষন থেমে বললেন,
“শাড়িটা দাও আমাকে!”
অনিমা শাড়ি মুক্তা বেগমকে দিতেই অনিমাকে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই শাড়ি পরিয়ে দিলেন।
“আমাকে গিয়ে বললে কি হতো?আমি তো কোন না কোন ব্যবস্তা করতাম!কত সময় নষ্ট করলে বসে থেকে।”
অনিমা নিজের দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো।পাঁচ মিনিটের মধ্যেই কেও যে এত সুন্দর করে শাড়ি পরাতে পারে তা সে কোনদিন কল্পনাও করেনি!
“যাও এবার দাঁড়িয়ে থেকে আর সময় নষ্ট করো না।”
কুচি ঠিক করতে করতে কথাটা বললেন।অনিমা অরিনকে কোলে নিয়ে কিছুদুর যেতেই কি একটা মনে করে পিছু ফিরে বলল,
“ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেবার জন্য। ”
“হয়েছে!আমি তোমাকে সাহায্য করার জন্য শাড়ি পরিয়ে দেয়নি।আমার ছেলেটা এই গরমের মধ্যে নিচে দাঁড়িয়ে আছে দেখে সাহায্য করেছি।”
অনিমা কিছু না বলে হেসে অরিনকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।নিহান সত্যিই বলেছিলো উনি বাইরে থেকে শক্ত দেখালেও ভিতরে অনেক নরম।
নিহান নিচে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছিলো।বাসের সময় বিকাল ৫ টা।এখন ৪ টা বাজে।বাস স্টেশন ওদের বাসা থেকে দুরে হওয়ায় একটু আগেই রওনা দেওয়া লাগে!আচ্ছা অনিমা এত দেরি করছেন কেন?কোন অসুবিধা হলো নাকি?ভেবেই পায়চারি করা বন্ধ করে দিলো।বাড়ির ভিতর যেতেই যাবে হঠাত সামনে অনিমাকে আসতে দেখে পা জোড়া থমকে গেলো।এর আগে কোনদিন শাড়ি পরতে দেখেনি।খুবই সিম্পল ভাবে সেজে এসেছে অনিমা।লম্বা চুলগুলাকে বেনি করে কাদের এক পাশে রেখে দিয়েছে।কপালে একটা কালো টিপ,চোখে হালকা কাজল।ব্যাস!আর কোন রকম প্রসাধনীর ছোয়া নেই মুখে।এই সাধারন মানুষটার উপরই সে আসক্ত!কত্ত বছর ধরে এই মানুষটার জন্য তার অপেক্ষা করা!একমাত্র আল্লাহ জানে কত করে মোনাজাতে শুধু এই মানুষটাকেই চেয়েছে সে।আজ সে তার চাওয়াতে সফল!আল্লাহ তার পাশে ছিলো বলেই অনিমাকে আজ স্ত্রী হিসেবে পাওয়া!
“চলুন!দাঁড়িয়ে আছেন কেন?”
অনিমার কথায় ধ্যান ভাংগল নিহানের।মুখ ফুটে বলল,
“অহ হ্যা হ্যা চলুন।”
বলেই অনিমার কাছ থেকে অরিনকে কোলে তুলে নিলো।
.
.
বাসের সিটে অনিমা আর নিহান বসে আছে।বাস সে কখনই ছেড়ে দিয়েছে।অরিন অনিমার কোলে ঘুমাচ্ছে।অনিমাও প্রায় ঘুমে পরে যাবার অবস্তা!বাসে উঠলেই তার এই এক সমস্যা! ঘুমিয়ে যাওয়া!যতোই ঘুমটাকে আটকাবার চেষ্টা করে কিছুতেই পারে না।বাসে উঠলেই মনে হয় ঘুমের দলগুলা দৌড়ে আসে অনিমার কাছে।নিহান এক চোখ ঘুরিয়ে দেখলো।অরিনকে নিজের কোলে নিয়ে নিলো।অনিমাও ঘুমের ঘোরে টের পেলো না। সিটে মাথা এলিয়ে দিলো।অনিমার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে নিহান মুচকি হাসলো।কে জানতো এই মেয়েটার জন্যই একদিন পৃথিবীর সবার সাথে লড়াই করতে হবে।
প্রায় অনেকটা সময় জার্নি করে অবশেষে কাংখিত জায়গায় পৌছালো।অনিমা আর নিহান বাস থেকে নেমেই একটা সিএনজিতে উঠে পরল।ততক্ষনে অরিনও ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।সিএনজিতে নামার পর অনেকখানি রাস্তা হেঁটে যাওয়া লাগবে।অই রাস্তায় কোন রিকশা বা ভ্যানগাড়ি যাওয়া আসা করে না।একদম মাটির কাচা পথ।আশেপাশে তাকাতেই দেখল চারদিকে ক্ষেত আর গাছ গাছালি।এরকম পরিবেশে কতদিন আসেনি অনিমা।ঠিক কবে এসেছিলো মনেও পরছে না তার। শেষমেষ বাড়িতে এসে পৌছালো তারা।বাড়িতে পৌছাতেই দেখল…
চলবে…
#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ২৫
প্রায় অনেকটা সময় জার্নি করে অবশেষে কাংখিত জায়গায় পৌছালো।অনিমা আর নিহান বাস থেকে নেমেই একটা সিএনজিতে উঠে পরল।ততক্ষনে অরিনও ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে।সিএনজিতে নামার পর অনেকখানি রাস্তা হেঁটে যাওয়া লাগবে।অই রাস্তায় কোন রিকশা বা ভ্যানগাড়ি যাওয়া আসা করে না।একদম মাটির কাচা পথ।আশেপাশে তাকাতেই দেখল চারদিকে ক্ষেত আর গাছ গাছালি।এরকম পরিবেশে কতদিন আসেনি অনিমা।ঠিক কবে এসেছিলো মনেও পরছে না তার। শেষমেষ বাড়িতে এসে পৌছালো তারা।বাড়ির ভিতর ঢুকতেই দেখল বসার ঘরে সবাই বসে আছে।নিহান এক এক করে সবাইকে চিনিয়ে দিলো অনিমাকে।নিহানকে দেখেই নিহানের দাদী বসা থেকে সামনে এসে দাঁড়ালেন।নিহানকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
“কতদিন পর এলি!তোর আম্মু ভালো আছে?”
নিহান জবাব দিতেই দাদী অনিমার দিকে তাকিয়ে বলল,
“এই মেয়েই বুঝি আমার নাতনির বউ?”
নিহান মাথা নাড়ালো।অনিমা সালাম দিতেই দাদী মিষ্টি হেসে সালামের উত্তর দিলেন।
“তোর তো আসার কোন নাম গন্ধই নাই!কত বছর পর আসলি!”
আবিরের কথা শুনে নিহান হেসে বলল,
“সময় থাকে না হাতে।সারাদিন ডিউটি করে সত্যিই সময় থাকে না।”
“হয়েছে আর এক্সিউজ দেওয়া লাগবে না।ফ্রেশ হো তোরা যা!”
.
.
অনিমা বাচ্চাকে বিছানায় শুয়াতেই নিহান তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল,
“খাবার নিচতলায় দেওয়া হবে। আপনার কি কোন অসুবিধা আছে?”
“না!আমার কি অসুবিধা হবে?”
“নতুন পরিবেশ অসস্তি লাগতেই পারে!আপনি বললে আমি এখানে খাবার আনার ব্যবস্তা করছি।তাহলে আপনাকে নিচে গিয়ে খেতে হবে না!”
“সবাই কি মনে করবে?”
“সবার মনে করাতে আমার কিছু আসে যায় না।তাছাড়া অরিন এখানে একা একা থাকবে।উপর থেকে কান্না করলে শুনাও যাবে না।তাই বলছি।আপনি বলুন! আমি ওদেরকে বুঝিয়ে বলব।”
“আচ্ছা।আপনার যা ভালো মনে হয়!”
“আজকে এখানে খান।কাল সকালে নিচে খাবেন!”
নিহান ভেজা তোয়ালে চেয়ারের উপর রেখে নিচে চলে গেলো। নিহান যেতেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল অনিমা।আসলেই নিচে গিয়ে সবার সাথে খেতে অসুবিধাই হতো ওর। এ বাড়ির অনেকেই যে ওকে পছন্দ করেনি সেটা সে বাড়িতে ঢুকে মুখ দেখার সাথে সাথেই বুঝে ফেলেছে।তাছাড়া শরীরও কুলাচ্ছিলো না নিচে যাবার।সারাদিন জার্নি করে এক ফোটাও শক্তি নেই ওর।বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল অরিন ঘুমাচ্ছে।এই সুযোগে শাওয়ার নিয়ে নেওয়া যায়।গরম লাগছে অনেক।ভেবেই ব্যাগ থেকে কাপড় আর তোয়ালে বের করে বাথরুমে চলে গেলো।প্রায় ২০ মিনিট শাওয়ার নিয়ে বাথরুম থেকে বেরুতেই দেখল নিহান এখনো রুমে আসেনি।তোয়ালে দিয়ে চুলগুলাকে ভালো করে মুছে তোয়ালে দিয়ে চুলগুলাকে পেচিয়ে নিলো।নয়তো চুল থেকে পানি পরবে।পেচিয়ে খোপা বেধে পিছনে ফিরতেই নিহানকে বিছানায় বসা দেখলো।মোবাইল স্ক্রলিং করছে।অনিমা অবাক হলো।নিহান যে রুমে এসেছে টেরই পায়নি!
“আপনি কখন আসলেন?”
মোবাইলে চোখ রেখেই বলল,
“যখন চুল বাধছিলেন তখন।”
“অহ আচ্ছা।”
“বাসাতে থাকলে আপনাকে কষ্ট করে চুল মুছতে হতো না।আমিই হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে দিতাম।কিন্তু দুভাগ্যবশত এই জায়গায় হেয়ার ড্রায়ার নেই।”
“আমার কোন সমস্যা হয়নি!আগে তো চুল তোয়ালে দিয়েই মুছতাম।আপনাদের বাড়ি যাবার পর হেয়ার ড্রায়ার প্রথম ইউজ করলাম।”
কিছু একটা মনে পরতেই অনিমা বলল,
“জানেন আজকে সকালে কি হয়েছে?”
নিহান মোবাইল থেকে মাথা উঠিয়ে অনিমার দিকে তাকালো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।
“মা চা চেয়েছিলেন আমার কাছে।আমার কাছে না বলেছিলেন রহিমা খালাকে গিয়ে বলতে যেন চা বানিয়ে দিয়ে যায় উনার নাকি অনেক মাথা ব্যাথা করছে।তো আমি গেলাম কিচেনে গিয়ে দেখলাম খালা মাছ কাটছেন।এই হাত দিয়ে উনি কি করে চা বানাবেন?তাই আমিই চা বানিয়ে কাপ নিয়ে রুমে ঢুকতেই দেখলাম মা অরিনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন!খেলছিলেন ওর সাথে,মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।অরিনও হাসছিলো।ও অইদিনই হাসি দিয়েছিলো প্রথম।এর আগে আমি হাসতে দেখিনি ওকে।আমাকে দেখেই মা কেমন যেন চমকে গেলেন।অস্বস্তিতে পরে গেলেন।আমি না দেখার ভান করে চা দিয়ে চলে এসেছি রুম থেকে।”
নিহান সবগুলো কথা মনযোগ দিয়ে শুনে বলল,
“অরিন হাসতে পারে আর এই কথা আপনি আমাকে এখন বললেন?এখন তো আমার ওর হাসি দেখতে মন চাচ্ছে!”
কিছুক্ষন থেমে বলল,
“বলেছিলাম না আম্মু বাইরে থেকে কঠিন দেখালেও ভিতর ভিতর অনেক নরম।অরিনের প্রতি মায়া জম্মে গেছে আম্মুর।দেখবেন আস্তে আস্তে আপনাকেও মেনে নিবে।”
অনিমা হাসলো।হেসে পাশে জানলার দিকে তাকাতেই দেখলো একটা শিউলি ফুলের গাছ জানলার পাশেই।ছোটবেলা থেকেই ওর শিউলি ফুল অনেক পছন্দের।আলাদা একটা দুর্বলতা কাজ করে এই শিউলি ফুলের উপর।বসা থেকে উঠে গিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলল,
“এখানে যে শিউলি ফুলের গাছ আছে আগে বলেন নি তো?”
“শিউলি ফুলের গাছ?”
বসা থেকে উঠে অনিমার পাশে দাঁড়াতেই দেখল আসলেই বাইরে একটা শিউলি ফুলের বড় একটা গাছ আছে।
“আমি তো জানতামই না এখানে শিউলি ফুলের গাছ আছে!অনেকদিন হয়েছে আসি না।এর মধ্যেই মনে হয় কেও লাগিয়েছে এখানে।”
অনিমা মুগ্ধ হয়ে গাছটাকে দেখছে।ইচ্ছা করছে এক্ষুনি রুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে গাছটার কাছে চলে যেতে।ইশ চাঁদের আলোয় কি সুন্দরই না লাগছে গাছটাকে।একটা ফুল যদি ছুতে পারতো!নিহান অনিমার দিকে ফিরে তাকাতেই এক রাশ মুগ্ধতা দেখতে পেল অনিমার চোখে মুখে!গাছ থেকে একটা ফুল পরে যাওয়া দেখে অনিমা হাত বারালো ফুলটাকে ধরার জন্য। কিন্তু ব্যর্থ হলো সে।মুখ থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো অনিমার!একটা ফুল পরল সেই ফুলটাকে ধরতে পারলো না!নিহান দেখলো ব্যাপারটা!এরমধ্যে খাবার খাওয়ার জন্য নিচ থেকে ডাক আসলো।
“আমি খাবার নিয়ে আসছি আপনার জন্য! ”
অনিমা মাথা নাড়িয়ে বিছানায় গিয়ে বসল।কিছুক্ষন বাদেই নিহান খাবার নিয়ে রুমে এসে অনিমার সামনে বসলো।প্লেট থেকে ঢাকনা সরিয়ে ভাত মেখে লোকমা করে অনিমার দিকে এগিয়ে দিলো।
“আমি এখন আর অসুস্ত নেই!নিজের হাতে নিজে খেতে পারব।আপনি আপনার খাবার খান!কেও দেখে ফেললে কি হবে?”
“কেও দেখবে না।সবাই নিচে বসে খাচ্ছে।আর আপনাকে খাইয়ে দিতে আমার কোন অসুবিধা নেই।আপনি হা করুন।”
“কিন্তু….”
“কোন কিন্তু না! হা করুন।পরে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে।”
অগত্যা কোন উপায় না পেয়ে অনিমা হা করে লোকমাটা মুখের ভিতর নিয়ে নিলো।নিহান মুরগির মাংস ছিড়তে ছিড়তে বলল,
“আপনি অসুস্থ বলে আপনাকে খাওয়াচ্ছি এই কথা কে বলল?”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“কেন আমি অসুস্থ বলে আপনি খাওয়াচ্ছেন না?”
নিহান লোকমা করে অনিমার গালে পুরে বলল,
“মোটেও না!আপনি অসুস্ত থাকুন আর সুস্ত থাকুন আমি সবসময় আপনাকে এভাবে খাইয়ে দিব।”
“কিন্তু কেন?”
“এতে আমি তৃপ্তি পাই!”
অনিমা গালে ভাত রেখেই অবাক হয়ে বলল,
“খাবার খাই আমি আর তৃপ্তি পান আপনি?”
“আপনি নিজের হাতে খেলে আমার মনে হয় কিছুই খাননি আপনি!পেট ভরেনি আপনার!কিন্তু আমি খাইয়ে দিলে মনে হয় আপনি পেট ভরে ভাত খেয়েছেন।আর এভাবে গালে খাবার রেখে কথা বলবেন না। ”
“কেন?”
“গালে খাবার রেখে কথা বললে আপনাকে অনেক কিউট লাগে।ফুলা ফুলা গালগুলাকে আপেলের মতো লাগে।আপেল ভেবে কখন খেয়ে ফেলি বলা যায় না।সবসময় তো আর নিজেকে কনট্রোল করা যায় না।তাই সাবধান করে দিলাম।”
কথাটা শুনেই ভাত গলায় আটকে গেল অনিমার কাশতে শুরু করলো।নিহান তাড়াতাড়ি করে গ্লাসে পানি ভরে অনিমার দিকে এগিয়ে দিলো।পানি খেতে কাশি কমলো অনিমার।গাল দুটো অলরেডি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।কান থেকে গরম ধোয়া বের হচ্ছে অনিমার।নিহান একটা শ্বাস ফেলে বলল,
“সামান্য কথাতেই আপনার এই অবস্তা!”
.
.
রাত ১২ টায় জানলায় ঠকঠক আওয়াজে অনিমার ঘুম ভেংগে গেলো।খাট থেকে নেমে নিচে তাকাতেই দেখলো নিহান নেই।একটু আগেই ফ্লোরে শুয়ে ছিলো।কোথায় গেলো?ভাবতে ভাবতে আবারও জানলায় আওয়াজ পরল।এত রাতে কে জানলায় নক করছে ভেবে পেলো না।জানলার দিকে এগিয়ে ভয়ে ভয়ে বলল,
‘কে?”
ওপাশ থেকে ফিসফিস করে কেও বলল,
“আমি নিহান!জানলা খুলুন।”
অনিমা অবাক হলো। এত রাতে নিহান বাইরে জানলার ওপাশে কি করছে?জানলা খুলতেই নিহান বলল,
“বাইরে আসুন।”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“এত রাতে?আর তাছাড়া অরিন?”
নিহান দুই পা উচু করে উকি দিয়ে অরিনকে দেখে বলল,
“অরিন এখন ঘুমাচ্ছে।ও জাগবে না।আর জাগলেও কান্না করলে এখান থেকে শুনা যাবে।আপনি আসুন।তাড়াতাড়ি!”
অনিমা মাথায় ঘোমটা দিয়ে অরিনের দিকে একবার তাকালো।দরজা আস্তে খুলে বেরিয়ে গেলো।বাড়ির পিছনে যেতেই নিহানকে দেখলো।শিউলি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে।অনিমা কয়েক পা এগিয়ে সামনে যেতেই নিহান বলল,
” দুই হাত পাতুন।”
“কেন?”
“আহা যা বলছি তা করুন না!”
অনিমা দুই হাত পাততেই নিহান তার মুঠো করে রাখা দুই হাত অনিমার হাতের উপর রেখে ছেড়ে দিলো মুঠোয় থাকা সবগুলা শিউলি ফুল।অনিমা হাত ভর্তি শিউলি ফুল দেখে খুশিতে হেসে দিলো।
“আপনি এত রাতে সামান্য শিউলি ফুলের জন্য এখানে এসেছেন?”
নিহান দুই হাত ভাজ করে বলল,
“তো?গ্রামে এতো রাত।শহরেতো এই রাত কিছুই না।আর আপনার কাছে এই বিষয়টা সামান্য হতে পারে।কিন্তু আমার কাছে না!এইযে হাত ভর্তি শিউলি ফুল দেখে আপনার যে খুশি হবার ব্যাপারটা এই খুশি, হাসি কি আমি দেখতে পেতাম যদি সামান্য কাজটা না করতাম?”
অনিমা হেসে ফুলগুলার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ধন্যবাদ আপনাকে!আমার ইচ্ছা ছিল ফুলগুলাকে ছোয়ার।সে ইচ্ছা পুরন করার জন্য ধন্যবাদ।”
নিহান এগিয়ে এসে একটা ফুল অনিমার কানে গুজে দিয়ে বলল,
“ভালোবাসি।”
চলবে….