#কুঞ্জলতার_মায়ায়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ১
নিজের সব থেকে অপছন্দের টিচারের সঙ্গে হুট করে বিয়ে হয়ে যাবে কল্পণাও করেনি শুভ্রতা। কোথায় ভেবেছিল বিয়ে করে বরের সঙ্গে ঘুরতে যাবে। সুন্দর সুন্দর পিক তুলবে তা না। বিয়ে যেই গম্ভীর,রাগী, আখাম্বার সঙ্গে হয়েছে সে কখনোই ওর সঙ্গে ভালো করে কথা বলা তো দূরে থাক শুধু ধমকাবে। কথাগুলো ভেবেই ভে ভে করে কান্না করতে লাগল শুভ্রতা।
হুট করে মাথা কারো গাট্টা খেয়ে চটে গেলো শুভ্রতা। রেগে পিছু ফিরে কিছু বলতে নিবে তার আগেই সে দমে গেলো। নাক টানতে টানতে বলল
-“স্যার আপনি আমাকে এখনো কেন মারছেন। ভুলে যাবেন না আমি কিন্তু এখন আপনার বউ।”
শুভ্রতার মুখে এমন কথা শুনে কাব্য কপাল কুচকে গম্ভীর কন্ঠে বলল
-“এই মেয়ে আমি তোমাকে কয়দিন পড়াইছি যে স্যার স্যার বলে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছো বিয়ের পরেও।”
শুভ্রতা হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে নাক মুছে বলল
-“ওই তো তিনমাস তো ম্যাথ করিয়েছেন। আমার নানি বলতো একটা ছোট জিনিসও যদি কেউ শেখায় সে তোমার শিক্ষক।”
কাব্য শুভ্রতার মাথায় আরেকটা গাট্টা দিয়ে বলল
-“হয়েছে আপনার আর পকপক করতে হবেনা। এমন করে কান্না করছিলে মনে হয় বুইড়া কাকুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। যাও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। নাকের জলে চোখের জলে আমার বেড নষ্ট করছো। কাজল লেপ্টে পেত্নির মতো লাগছে।”
শুভ্রতা এবার চটে গেলো লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে বলল
-“হ আমাকে তো পেত্নির মতো লাগবেই। আমাকে তো আপনে পছন্দ করেন না। হুদাই বিয়েটা করে আমার বরের সঙ্গে পিক তোলার স্বপ্নটা শেষ করে দিলেন বদ লোক। দেখেন আপনের বউ আপনাকে ঝাটা ধরবে।”
কাব্য এক ভ্রু উচিয়ে বলল
-“কি বলছো ভেবে বলছো তো!”
শুভ্রতা কিছুক্ষণ ভেবে দাঁত দিয়ে জিভ কেটে ওয়াশরুমের দিকে ভো দৌড় দিতে গিয়ে ধপ করে উল্টে পড়লো।
শুভ্রতা যে এমন করে ধপ করে উল্টে পড়বে তা কল্পনাও করেনি কাব্য। হুট করেই কাব্য হো হো করে হেসে দিলো।
শুভ্রতা রাগে কিটমিট করে বলল
-“কোথায় নিজের বিয়ে করা বউটা পড়ে গেছে টেনে তুলবেন। তা না করে হো হো করে হাসছেন।”
কাব্য শুভ্রতার কথা শুনে ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো। শুভ্রতা বুঝতে পারলো এই বেটা কিছুতেই তাকে তুলতে আসবেনা। শুভ্রতা নিজে নিজেই কষ্ট করে উঠে দাড়ালো। পায়ে একটু ব্যাথা পেয়েছে। সেইদিকে পাত্তা না দিয়ে হনহন করে নিজের ব্যাগ থেকে একটা প্লাজু, ওড়না আর গেঞ্জি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। ঠাস করে ওয়াসরুমের দরজা লাগতেই কাব্যের আরো বেশি হাসি পেলো। কাব্য হাসি চেপে নিজেও ড্রেস চেন্স করে নিলো।
শুভ্রতা ওয়াশরুমের দরজাটা একটু সরিয়ে মাথা বের করে টুকি দিলো। আশেপাশে কাব্যকে না দেখে সস্থির একটা নিশ্বাস ছাড়লো।
তখনই গম্ভীর কন্ঠে কাব্য বলে উঠলো
-“রুমটা যেহেতু আমার আর রাত বারোটা বাজে সেহেতু আমার এই সময় বাহিরে থাকার প্রশ্নই উঠে না।”
শুভ্রতা গাল ফুলিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে বলল
-“আমি কি বলেছি যে আপনার রুম থেকে আপনি বের হয়ে যান।”
কাব্য শুভ্রতার কথায় পাত্তা না দিয়ে ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বলল
-“বেড সাইট টেবিলে বিরিয়ানি রাখা আছে। খেয়ে নেও।”
শুভ্রতা মুখ ভেংচি কেটে বলল
-“আপনার বিরিয়ানি আপনে খান। আমার পেট ভরে গেছে।”
কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
-“আমি বিরিয়ানি নিয়ে আসিনি। আম্মু দিয়ে গেছে।”
শুভ্রতা হাসি মুখ নিয়ে বলল
-“ও তাই বলেন। আমিও বলদ আপনার কাছে আশা করাই বৃথা।”
কাব্য কোনো প্রতিউত্তর করলোনা। চুপচাপ নিজের কাজে মনোযোগ দিলো। শুভ্রতা সোফায় পা তুলে বিরিয়ানির প্লেটটা হাতে নিয়ে গবগব করে খেতে লাগল। আসলেই অনেক জোরে ক্ষিধা লেগেছিল তার। তার উপর কাঁদতে কাঁদতে আরো ক্ষিধা লেগে গেছে।
কাব্য চশমার নিচ দিয়ে শুভ্রতার এমন খাওয়া দেখে হাসলো। হুট করে ফোনটা বেজে উঠতেই কপাল কুচকে কাব্য ফোনের দিকে তাকালো। ল্যাপটপটা কোলের উপর থেকে সরিয়ে বেড সাইট টেবিলে রেখে কলটা রিসিভ করলো। কলটা রিসিভ করতেই কাব্য ধপ করে উঠে দাড়ালো।
কাব্য উৎকণ্ঠা হয়ে বলল
-“কি বলছেন এগুলো ইশিতা এক্সিডেন্ট কিভাবে করলো। কোথায় আমি এখনই যাচ্ছি।”
শুভ্রতা খাওয়া বাদ দিয়ে তাকিয়ে রইলো কাব্যের দিকে। কাব্য তাড়াহুড়ো বাইকের চাবি আর মানিব্যাগটা নিয়ে বাহিরে চলে গেলো। শুভ্রতা শুধু গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো কাব্যের যাওয়ার দিকে।
খাওয়া শেষ তার। হাত ধুয়ে বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো সে। চোখ বেয়ে তার নোনা জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। কাধে কারো স্পর্শ পেতেই চমকে উঠে শুভ্রতা। পিছনে তাকাতেই কাব্যের মা কবিতা বলে উঠলেন
-“কান্না করোনা। এরপর থেকে দেখবে তোমার মায়ায় কাব্য এমনভাবে জড়িয়ে যাবে যে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভাবতেও পারবেনা। যাইহোক আসো তোমায় ঘুম পারিয়ে দেই।”
বলেই কবিতা বেগম শুভ্রতার হাত ধরে বেডের কাছে নিয়ে এলেন। শুভ্রতাকে শুয়ে দিয়ে কবিতা বেগম আধশোয়া হয়ে শুভ্রতার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। কবিতা বেগম বললেন
-“তোকে তুই বলেই বলছি। আমার মেয়ে নেই আমার খুব শখ ছিল একটা মেয়ের। তুই কি আমার মেয়ে হবি।”
শুভ্রতা কবিতা বেগমের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
-“হুম হবো তো আন্টি।”
কবিতা বেগম কপাল কুচকে বললেন
-“আমি কিন্তু এখন তোর আম্মুর বান্ধবী না তোর আম্মুই লাগি। আম্মু বল।”
চলবে কি?