কুঞ্জলতার মায়ায় পর্ব-০৮ এবং শেষ পর্ব

0
286

#কুঞ্জলতার_মায়ায়
#লেখিকাঃশুভ্রতা_শুভ্রা
#পর্বঃ০৮(শেষ পর্ব)

শুভ্রতা আর কাব‍্য রওনা হয়েছে কাব‍্যের দাদুর বাসার উদ্দেশ্যে। অনেকটা দূরের পথ হওয়ায় মাঝ পথে বাইক থামিয়ে কাব‍্য আর শুভ্রতা হালকা নাস্তা খেয়ে নিলো। রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতেই একটা কালো গাড়ি ওদের সামনে এসে দাড়ালো।

এমন করে সামনে কালো গাড়িটা দেখে কপাল কুচকে এলো কাব‍্যের। কালো গাড়ি থেকে কিছু লোক। শুভ্রতা লোকগুলোকে দেখে ভয়ে কাব‍্যের সাদা শার্ট খামচে ধরলো। গাড়ির মধ্যে থেকে কিছু লোক নেমে এলো কালো কাপড় পড়া।

——————–

চোখ পিটপিট করে কাব‍্য তাকাতেই প্রচণ্ড মাথা ব‍্যথায় আবারও চোখ বুজে এলো। সে কষ্টে চোখ খুলেই দেখলো কালো সুটবুট পরিহিত একটা লোক টেবিলের উপর পা রেখে বসে আছে। মুখটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। নিজেকে বাধা অবস্থায় আবিষ্কার করলো কাব‍্য। শুভ্রতার কথা মনে পড়তেই। চারপাশে শুভ্রতাকে খুঁজতে লাগল সে। কিছুটা দূরে অজ্ঞান অবস্থায় দড়ি দিয়ে বাধা শুভ্রতাকে দেখতে পেল।

কারো বিকট হাসির শব্দে শুভ্রতার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সামনের ব‍্যক্তির দিকে তাকালো। তার সামনেই বসে আছে তার চির পরিচিত বেস্ট ফ্রেন্ড নামক মানুষটি। যার সঙ্গে সে স্কুল কলেজ ভার্সিটি পড়ে এসেছে। লোকটা উঠে কাব‍্যের কাছে এসে এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলল
-“কিরে অবাক হলি না যে। এই কাব‍্য তুই কি থামবিনা। কি শুরু করেছিস বল তো। আমাকে আমার মতো কাজ করতে দিচ্ছিস না কেন!”

পাশে থাকা একটা লোককে বলল
-“যা ওই বউরে জাগা।”

শুভ্রতার মুখে ‍পানি ছিটা দিতেই শুভ্রতার জ্ঞান ফিরে এলো। শুভ্রতা কাব‍্যকে এমন অবস্থায় দেখে হতভম্ব হয়ে গেল।

লোকটা আরো জোরে ধরে বলল
-“আমানের সঙ্গে লাগতে আসছিস না আজ আমার হাতেই তোরা মরবি।”

বলেই ধাক্কা মেরে দিলো কাব‍্যকে। কাব‍্যের ছোট কেটে রক্ত বের হচ্ছে। কাব‍্য মুখ নিচু করে ডান হাতের বুড়া আঙ্গুল দিয়ে রক্তটা মুছে বাঁকা হেসে বলল
-“আমান জানিস তো আমি তোকে নিজের ভাইয়ের জায়গা দিয়েছিলাম। তোর বাবা মা ছিল না যতটা সম্ভব আমি আর হাসান তোকে সাহায্য করছি সবসময়। তুই তো ভুল করে ফেললি। চট্টগ্রামে যখন তুই হাসানের হাতে ছুরি চালাস তখন তোর চোখ দেখেই আমি তোকে চিনে ফেলি। খুব কষ্ট লেগেছিল আমার। জানিস হাসান তো বিশ্বাসই করছিল না আমার কথা। আর তুই কি ভাবছিস তোকে আমি ছেড়ে দিবো। শেষমেশ নারী পাচার ছিহ। আমার ভাবতেও গা ঘিন ঘিন করছে।”

আমান আবারও বিকট শব্দে হেসে ‍বলল
-“টাকাই জীবনে সব। কিভাবে আসলো কি করে আসলো তা দেখার বিষয় না। তুই আমার অনেক ক্ষতি করেছিস। একশ মেয়ে আমি খুব কষ্ট করে জোগার করেছিলাম। আর তুই কি করলি।”

আমান রেগে সামনের চেয়ারটা লাথি দিয়ে ফেলে দিলো। হিসহিসিয়ে বলল
-“এখন তো এই ক্ষতির ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কি বলিস তোকে মেরে ফেলি।”

শুভ্রতা কান্নাভেজা কন্ঠে বলল
-“না প্লীজ ওনাকে মারবেন না। আমাদের ছেড়ে দিন দয়া করে।”

কাব‍্য চোখ গরম করে শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে ধমকে বলে উঠলো
-“এই নিচ মনমানুষিকতার মানুষের সামনে নত হবে কেন তুমি। এদের সঙ্গে গলা উচু করে কথা বলতে হয়।”

আমান বাঁকা হেসে শুভ্রতার কাছে এগিয়ে এসে ওর মাথায় বন্দুক তাক করে বলল
-“আহারে বেচারা শিশিরের তখন মিশন না থাকলে তোমারে তুলে নিয়ে আসতাম। কিন্তু দেখ তোমার ভাগ্য কত ভালো শিশিরের তখনই মিশনে যেতে হলো আর আগেই একশ মেয়ে হয়ে গেল। সমস্যা নেই তোমাকে তো মরতেই হবে কাব‍্যের বউ বলে কথা।”

কাব‍্য রক্ত লাল চোখে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে। আমান কাব‍্যের দিকে তাকিয়ে বলল
-“জানিস তো তোকে বদ করার আগেও অনেক চেষ্টা করেছি। প্রতিবার তোর মা বাঁচিয়ে দিয়েছে। তারপর তোর ভাগ‍‍্য। নিজের বউকে তোর কাছে টোপ ফেললাম। কিন্তু তুই হালা সেখান থেকে বেঁচে গেলি।”

কাব‍্য হাসলো আর বলল
-“ইশিতা যে তোর বউ আমি জানিনা মনে করছিস। তুই এখনো বুদ্ধিতে আমার কাছে কাঁচা। বল তো ইশিতা কোথায়।”

কাব‍্যের কথায় কপাল কুচকে এলো আমানের। কাব‍্য আবারও বাঁকা হাসি দিয়ে বলল
-“হাসান সবকিছু ডান।”

মুহূর্তেই পুলিশ ফোর্স নিয়ে হাজির হলো হাসান। হাসানের ফোনে জেলে বসে থাকা ইশিতার ভিডিও দেখে কিছুটা থমকালো আমান। আমান তাড়াতাড়ি করে শুভ্রতার মাথায় বন্দুক তাক করে বলল
-“আমাকে যেতে দে কাব‍্য। তাছাড়া কিন্তু তোর বউকে শেষ করে দিবো।”

কাব‍্যের হাতের দড়ি অনেকক্ষণ আগেই ছুটিয়ে ফেলেছে। আমান কিছু বুঝে উঠার আগেই পাশে থাকা পুলিশের বন্দুক নিয়ে কাব‍্য গুলি করে দিলো আমানকে।

আমান যেন হতভম্ব হয়ে গেছে। শুভ্রতার কাছে গিয়ে ওর দড়ি খুলে দিলো কাব‍্য। শুভ্রতা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে।

আমান মাটিতে পড়ে আছে। হাসান এগিয়ে এলো। কাব‍্য শুভ্রতাকে নিজের বুকে আকড়ে ধরলো শক্ত করে। হাসান আর কাব‍্য তাকিয়ে রইলো আমানের দিকে। দুইজনেরই চোখ টলমল করছে।

ফাহাদ হোসেন আসতেই দুইজন নিজেদের স্বাভাবিক করে নিলো। ফাহাদ হোসেন মুচকি হেসে বলল
-“ওয়েলডান কাব‍্য। তোমার জন‍্যই আজ এত বড় আসামী শাস্তি পেল।”

কাব‍্য মুচকি হেসে বলল
-“না স‍্যার শুধু আমার জন‍্য না হাসানও আমাকে সাহায্য করেছে।”

ফাহাদ হোসেন বললেন
-“তোমাদের দুইজনকেই পুলিশের সিনিয়র পদে দেওয়া হবে। আই মিন তোমাদের প্রমশনের ব‍্যবস্থা আমি করছি। মিষ্টি রেডি থাকে যেন।”

দুইজনই হাসলো। শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
-“আপনি কি তাহলে পুলিশ।”

শুভ্রতার এমন কথায় সবাই হেসে দিলো। ফাহাদ হোসেন বলল
-“এতোদিন তোমার বর সহকারী পুলিশ ছিল। এখন ওর পদ উন্নতি হবে।”

শুভ্রতা অবাক হয়ে বলল
-“তাহলে কলেজের চাকরি।”

কাব‍্য বলল
-“ওটা লোক দেখানো ছিল। আমি আমানের কেসের জন‍্য নাটক ছিল।”

শুভ্রতা শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে রইলো।

———————-

দেখতে দেখতে কেটে গেছে একটা বছর। আজ কাব‍্য আর শুভ্রতার বিয়ের এক বছর সম্পূর্ণ হলো। শুভ্রতা লাল শাড়ি আর কাব‍্য সাদা পাঞ্জাবি পড়ে বসে আছে বারান্দায়। কাব‍্য বেলিফুলের গাছ থেকে বেলি ফুলে গুজে দিলো শুভ্রতার কানে। কাব‍্য নেশালো কন্ঠে বলল
-দেখছো তো কুঞ্জলতা গাছ কেমন বেয়ে উঠেছে বারান্দার গ্রিল দিয়ে। এই গাছটি বেড়ে উঠতে একটা সাপোর্টের প্রয়োজন। তেমনি আমার জীবনে চলার পথে তোমার সাথ আমার গভীর ভাবে প্রয়োজন। তুমি আমার ভালোবাসা না তুমি আমার মায়া। যাকে ছাড়া হয় তো বেঁচে থাকা যায় কিন্তু আত্মাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। তাই তো আমি আমার কুঞ্জলতার মায়ায় পড়েছি বারবার।”

শুভ্রতা কাব‍্যের বুকে মাথা রেখে বলল
-“ভালোবাসি আপনাকে”

কাব‍্য মুচকি হেসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
-“আমিও তোমার অসীম মায়ায় আবদ্ধ। ভালোবাসি আমার কুঞ্জলতাকে।”

#সমাপ্ত