সুখের ঠিকানা পর্ব-৩২+৩৩

0
207

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩২

“বউকে নিজের বাড়ি নিয়ে একেবারে দরজা,জানালা লক করে তারপর রোমান্স করবো।এর আগে কখনো না।তওবা তওবা। সব সময় আমার রোমান্টিক মুডের বারোটা বাজিয়ে অস্বস্তিতে ফেলতে উস্তাদ পাবলিক।এখন থেকে বউয়ের থেকে সব সময় দুই ফিট দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে।সব সময় সবাই রং টাইমে এন্ট্রি নেয়।”

জারিফ বিড়বিড় করে কথাগুলো বলল।লিয়া স্পষ্ট না শুনলেও অস্পষ্ট করে কিছুকিছু কথা কর্ণগোচর হয়। লিয়া কটমট চোখে জারিফের দিকে চাইলো।লিয়ার চোখের ভাষা জারিফ খুব সহজেই পড়তে পারলো।লিয়ার চোখের ভাষা বলছে,এহেন লজ্জাকর পরিস্থিতির জন্য স্বয়ং জারিফ দায়ী।জারিফ লিয়ার এভাবে তাকানো দেখে শুকনো ঢোক গিলে নেয়।জারিফ হালকা কেশে ইভাকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়।লিয়া লজ্জায় আড়ষ্টতায় মূর্ছা যাওয়ার ন্যায় হয়েছে।পা যেনো অবশ হয়ে আসছে।ইভা চোখের উপর রাখা নিজের হাতের আঙ্গুল একটু ফাঁকা করে চোখ পিটপিট করে চাইলো।জারিফের প্রস্থান করা বুঝতে পেরে তড়িৎ চোখ থেকে হাতটা সরিয়ে নেয়।লিয়ার দিকে ব্যাকা চোখে চাইলো।ইভার কিশোরী মনটা এইতো মিনিট তিনেক আগেই ভেঙ্গে খন্ডখন্ড হয়ে গিয়েছে। জারিফকে প্রথম দেখেছিলো আলিফের বাসায়।বিয়ের একদিন আগে।আলিফ বিয়ের প্রোগ্রামের ব্যাপারে জারিফের সাথে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করছিলো। কোন ডেকোরেটর নাম করা আরো এটাসেটা বিষয় নিয়ে। জারিফ যেহেতু এই শহরের স্থানীয়।আর এই শহরে কাছের মানুষ হিসেবে আলিফ জারিফকেই বেছে নেয় প্রোগ্রামের ব্যাপারে ভালোমন্দ আলোচনার জন্য। যেহেতু আগে থেকেই পরিচিত।জারিফ দেখতে হ্যান্ডসাম।একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ।যে কোনো মেয়ে দেখলেই ক্রাশ খাবে বা ভালো লাগবে আকর্ষিত হবে।এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।আর কিশোরী বয়সটাই আবেগের।এই বয়সে কাউকে ভালো লাগলে অবুঝ মন তাকে নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ডুবতে থাকে।ঠিক তেমনি ইভার কিশোরী মনটাও জারিফকে নিয়ে অনেক কিছুই ভাবতে শুরু করেছিলো।জারিফকে দেখলেই মনটা পুলকিত হচ্ছিলো।এমন সময় লিয়া আর জারিফের এতটা ক্লোজ দৃশ্য দেখে মনটা ব্যাথিত হয়ে উঠলো। মনেমনে লিয়ার প্রতি ঘৃণার সৃষ্টি হতে থাকে।কেমন মেয়ে মানুষ সুদর্শন ছেলে দেখছে আর অমনি পটিয়ে ফেলেছে।সোজা কিস আদান প্রদান শুরু করছে।আর জারিফই বা কেমন চরিত্রের?ইভার মনে এখন এই কয়েকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কিশোরী মনটা আবার আনমনেই জারিফের দিকে সাফাই গাইলো।ছেলে মানুষ। সুন্দরী মেয়ে দেখেছে তাই হয়তো কন্ট্রোল করতে পারেনি।মেয়েটার তো একটু লাজ লজ্জা থাকা দরকার।যেই সুদর্শন ছেলে দেখেছে আর অমনি জাদুটোনা করেছে।এসব কথা ভাবতেই ইভার চোয়াল শক্ত হয়ে আসে।ইভা মোটাচোখে লিয়ার দিকে চেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“ইউ নো হাউ টু ল্যুর আ বয়”

লিয়া এবার মাথাটা কিঞ্চিৎ তুলল।ইভার দিকে অবাক চোখে চেয়ে শক্ত কণ্ঠে বলল,”হোয়াট?হোয়াট ডু ইউ মিন?”

ইভা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।ইভার এরকম হাসির কারন ঠিক না বুঝলেও,লিয়ার কাছে হাসিটা ভালো লাগলো না।লিয়ার এবার রা’গ হলো।লিয়া ঠোঁট মেলে বলল,”শোনো।না জেনে কারো সম্পর্কে ভুলভাল কিছু বলতে আসবে না।তুমি না জেনেই হয়তো ভুলভাল ভাব

লিয়ার কথায় ব্যাঘাত ঘটে তুলির ডাকে।তুলির কথায় লিয়া থেমে সামনে তাকায়।তুলি একহাত উঁচু করে কর্কশ গলায় বলল,”লিয়া এই লিয়া।কখন আসছিস এখানে।আমি তো ভেবেছি ঘুমিয়ে টুমিয়ে পড়লি নাকি।”

তুলির কথায় লিয়া অপ্রস্তুত হলো।কিছুক্ষণ আগের কথাগুলো ফের লিয়ার মনস্তাত্ত্বিকে ভেসে উঠলো।তুলি কিঞ্চিৎ সময় পর ফের ঠোঁট চেপে বলল,”ওদিকে আরেকটু বাদেই বিদায়।সে খেয়াল আছে তোর।কখন টাকাটা তুলবো,হ্যা। তাড়াতাড়ি আয়।”

লিয়া কপাল কুঁচকে বলল,”একটু ওয়েট কর।আমি ওর সাথে কিছু কথা বলেই আসছি।”

ইভাকে দেখিয়ে লিয়া বলল।তুলি নাছোড়বান্দার মতো লিয়ার কোনো কথা শুনলো না। লিয়ার একহাত ধরে টেনে নিয়ে আসলো।ইভা মুখ ভেংচি কে’টে ফিরে আসতে থাকে।ধ্যাত এখন আর জুতা কেনো হিরে খোঁজারও কোনো মুড নেই ইভার। হিরোর মতো দেখতে ছেলেটা অন্য কাউকে কিস করছে।এটা ইভার অবুঝ মন মেনে নিতে পারছে না।মন , চোখ সবই যেনো আজ ইভার সাথে বেইমানি করছে। ইশশ্!না চাইতেও বারংবার ঐ রোমান্টিক সীনটা ভাসছে দুচোখেতে।সাথে সাথেই মনটাও ব্যাথিত হচ্ছে।

আলিফের পাশে এসে তুলি সহ আরো কয়েকটা মেয়ে কাজিন দাঁড়িয়েছে।তাদের এক দফা এক দাবি।জুতা ফেরত পেতে হলে নগদ দশ হাজার টাকা দিতে হবে। এখানে নয় হাজার নিরানব্বই টাকা দিলেও চলবে না।পুরো দশ হাজারই দিতে হবে।আলিফ বিষয়টা নিয়ে মজা করতে চাইলো।চোখে মুখে একটু অসহায়ত্বের ছাপ টেনে আনলো। তাসনিমের দিকে সরু চোখে চেয়ে বলল,

“আমার জুতার দাম মাত্র তিন হাজার টাকা। সেখানে জুতা ফেরত পেতে হলে আমাকে নাকি দশ হাজার টাকা দিতে হবে।এইটা কোনো কথা হলো।তোমার বোনদের দাবিটা একটু বেশিই হয়ে গেলো না।আমি তো এই ডাবল টাকা দিয়ে আরো দুইজোড়া জুতা কিনতে পারবো অনায়াসেই।তাই তুমিই বলো তিন হাজারের বদলে সাত হাজার টাকা ডোনেশন দেওয়া ঠিক হবে কি?”

আলিফের কথায় তাসনিম বাদে বাকি সবাই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তাসনিম রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো আলিফের দিকে।আলিফ ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়। তাসনিম সামনে দাঁড়ানো বোনেদের দিকে একপলক তাকিয়ে ফের আলিফের দিকে তাকায়।আলিফের দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল,”এই আপনি তো খুব কিপটে দেখছি।আমার বোনেরা মাত্র দশ হাজার টাকা দাবি করেছে।এটা খুব বেশি নয়,হু।আর আপনি কিনা কয়জোড়া হয় লাভ -লস হিসাব করছেন।হায়! আল্লাহ!এরকম হাড় কিপটের সাথে সংসার করবো কিকরে?”

আলিফের মুখটা থমথমে হয়ে যায়। ‌যাহ! মশকরা করে কথাগুলো বলল।আর বউ কিনা উল্টো বুঝল। এইটা কোনো কথা হলো?একদম ডিরেক্ট হাড় কিপটে উপাধি দিয়ে ফেলল।যাক তাও ফিসফিসিয়ে বলেছে। সামনে দাঁড়ানো জঞ্জাল পার্টি। উফ্ সরি শালিকা পার্টিরা শুনতে পায়নি।না হলে এতক্ষণ মজা নিতে ভুলতো না।আলিফ মনেমনে এসব ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়। কিয়ৎকাল পর আলিফ তাসনিমকে উদ্দেশ্য করে একদম ক্ষীন আওয়াজে বলল,
“আরে আমি তো তোমাকে পরখ করতে চেয়েছিলাম।যে তুমি কোন দিকে থাকো। নিজের বরের দিকে নাকি তোমার বোনেদের দিকে।তুমি তো আমার দিকে থাকলেই না আরো উল্টো আমাকে কথা শুনালে।”

তাসনিম স্মিত হেসে ক্ষীন আওয়াজে বলল,”আমিও তো আপনাকে বাজিয়ে দেখছিলাম, আসলে কেমন কিপটে আপনি?”

“তা কি বুঝলে?

আলিফের কথার মাঝেই তুলি বলল,”কি হলো জিজু?বউয়ের সাথে এত কি ফুসুরফুসুর করছেন?বউ কে হাত করেও লাভ হবে না। জলদি জলদি টাকাটা দিয়ে দিন,কেমন।”
তুলির কথায় আলিফ সোজা হয়ে বসলো।পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করে মুঠোর মধ্যে করে।হাতটা তুলির সামনে বাড়িয়ে বলল,”এইযে শালিকারা আপনাদের এনামি নিন।আমার পক্ষ থেকে সামান্য কিছু।”

তুলি কপাল কুচকালো।হাতের মধ্যে বেশ কয়েকটা একহাজার টাকার নোট আছে।তা দেখা যাচ্ছে।তবে এটা তো জানা যাচ্ছে না আসলে কত টাকা আছে।তাই তুলি বলল,”জিজু নিজের ছোট বোনকে বিশ্বাস করে ঠকলাম।ছোট বোন কিনা বরের দিকে ব্যায়াস হলো।আর সেখানে আপনাকে বিশ্বাস করি কিভাবে?বলা তো যায়না দশ হাজারের থেকে কিছু কম আছে।তাই বলছি গুণে দিন।”

“সম্মানিত শালিকা কাউন্ট করার প্রয়োজন নেই।ঠকবেন না। এতটুকু বিশ্বাস করতেই পারো।”

তুলির অবুঝপনা মন আলিফের কথা মানতে পারলো না।তুলির কাঠকাঠ জবাব সামনের উপর কাউন্ট করে দিতে হবে।আলিফও মজা করতে তুলির কথার বিরোধিতা করছে। এরমধ্যে তাসনিম বলল,
“এই টাকাগুলো আমার কাছে দিন।আমি দেখছি।”

আলিফ হাতের টাকা তাসনিমের দিকে বাড়িয়ে দিতে দিতে বলল,”বউয়ের আদেশ মানতেই হবে।নিন ম্যাডাম।”

তাসনিম বিনিময় স্মিত হাসলো।টাকা টা গুনতে থাকে। অবশেষে দেখা গেলো দশ হাজার নয়।বিশ হাজার টাকা। তাসনিম ছোট বোনদের হাতে টাকাটা দিয়ে দেয়। তাসনিম মৃদুস্বরে বলল,”ভালোই তো ফান করতে পারেন।আপনাকে আজ যতো দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।একের পর এক চমক দেখাচ্ছেন। গম্ভীর এটিটিউডের মালিক ডক্টর আলিফ শাহরিয়ার খান আজকে একেক রুপে ধরা দিচ্ছে।আর এই দেখে আমি বিস্মিত হচ্ছি।”

“এখনই এতো অবাক হয়ো না। কিছুটা তুলে রাখো।কারন সামনে আরো চমক থাকছে। স্পেশাল চমক তো রাতে থাকছেই।”

তাসনিম দৃষ্টি নত করে ফেললো।সাথে লজ্জায় আড়ষ্ট হলো।
.
জাহানারা বেগম,রাজিয়া সুলতানা লিয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। জাহানারা বেগম সবার থেকে একএক করে বিদায় নিয়ে গাড়ির সামনে দাঁড়ালেন। সন্ধ্যা হয়ে আসছে বাড়ি ফিরবেন।নীল ড্রাইভিং সিটে বসে দুই হাত স্ট্রিয়ারিংয়ের উপর ভাঁজ করে বসে আছে। আনোয়ার রহমান অপর দিকের ডোর খুলে গাড়িতে বসলেন।জারিফ এপাশের ডোর খুলে দেয়। লিয়া জাহানারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,”আন্টি আজকে থেকে যান না, প্লিজ। আঙ্কেল কে রাজি করিয়ে থাকেন।আসলেন মাত্র এইটুকু সময় থাকলেন।সবার সাথে তো ভালো করে কথাবার্তাই হয়নি।তাই বলছি রাতটা থেকে যান।”

জাহানারা বেগম অমায়িক হাসলেন।লিয়ার কাঁধে একহাত রাখলেন।অপর হাত লিয়ার মাথায় বুলিয়ে বললেন,”নাহ্,সোনা।আজ নয়।অন্যদিন এসে থাকবো।নাতাশাকে রেখে আসছি।জারার পরীক্ষা দুইদিন পর থেকে।নাতাশা জারাকে জ্বালাবে।আর ছোটও বাড়িতে আছে।বাড়িতে কোনো ছেলে মানুষ নেই।ওরা দুজন একাএকা কিকরে থাকবে। ভালোমন্দ-র কথা বলা যায়না।কখন কি প্রয়োজন হয়?তাই আজ আসি,কেমন।মন খা’রাপ করো না।”

লিয়া অভিযোগের সুরে বলল,”নাতাশাকে আনতে পারতেন ।সাথে ছোটো আন্টি,জারা আসলে খুব ভালো হতো। আচ্ছা মানলাম জারার এক্সাম আসতে পারলো না।আর ছোটো আন্টিও নাহয় জারার জন্য থেকে গিয়েছে।তবে নাতাশা।নাতাশাকে অন্তত নিয়ে আসতেন।”

জাহানারা বেগম মৃদু হাসলেন। কণ্ঠে একরাশ মায়া মিশিয়ে ফের বললেন,”নাতাশা জার্নি করতে পারে না। লং জার্নি করতে গেলেই বমি টমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ে।আর ওতো এমনিতেও অসুস্থ।তাই ওর উপর স্ট্রেচ দেইনি সহজে।”

একটু থেমে লিয়ার গালে হাত রেখে বললেন,”মন দিয়ে পড়াশোনা করো।সামনে তো তোমার এডমিশন।জারিফ বলছিলো ওদের ভার্সিটিতে ভর্তি হলে সব দিক দিয়ে ভালো হতো।এখানে থেকেই পড়াশোনা করা যেতো।অন্য জায়গা যাওয়ার থেকে নিজ জেলাতে থাকলেই সব দিক দিয়ে ভালো হয়।সব কিছু চেনা জানা থাকে।তার উপর জারিফ থাকবে।কোনো সমস্যা হলে জারিফ হ্যান্ডেল করতে পারবে।”

লিয়া জারিফের দিকে আড়চোখে তাকালো।জারিফ একহাতে মাথা চুলকিয়ে নিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করলো। জাহানারা বেগম রাজিয়া সুলতানাকে উদ্দেশ্য করে শান্ত স্বরে বললেন,”আপা।জারিফের বাবা ভাইজানকে বলেছেন,লিয়াকে আমাদের কাছে নেওয়ার কথা।ভাইজান বলেছেন,সামনে লিয়ার এডমিশন।এখন নতুন করে লিয়া জারিফের বিয়ের অনুষ্ঠানাদি করলে লিয়ার পড়াশোনার উপর ইফেক্ট পড়তে পারে। তাই উনি বলেছেন,লিয়া ভর্তি হোক। ক্লাস করুক।তার কয়েকমাস পর।বড় করে অনুষ্ঠান করে সবাইকে জানিয়ে লিয়াকে উঠিয়ে নেওয়া যাবে।”

লিয়ার লজ্জা লাগছে।সাথে অবাক হচ্ছে ।ওর অগোচরে কখন এসব কথাবার্তা হলো।আর জারিফ সে কি লিয়ার মতোই জানে না?নাকি এসবের পেছনে জারিফের হাত আছে। লিয়া এসব কিছু ভাবতে থাকে।রাজিয়া সুলতানা অমায়িক হেসে বললেন,”ঠিক আছে আপা।সবাই মিলে আলোচনা করে যা ভালো বোঝে তাই হবে।টেনশন করবেন না।আমার মেয়ে হলেও এখন ও আমার কাছে আপনাদের আমানত।আমাদের মেয়ের উপর আমাদের যতটা অধিকার আছে।ঠিক ততটাই আপনাদের আছে। বরং বেশিই।একটা মেয়ের বিয়ের পর তার প্রধান গার্ডিয়ান হয় তার স্বামী।আর আমার মনেহয় অধিকার ছেড়ে দিয়ে অধিকার ধরে রাখা ঠিক নয়।মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।এখন একমাত্র মেয়ে বলে এটাওটা বলে নিজের কাছে রেখে দেবো।এটা মোটেই একজন সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষের কাজ নয়।মা হিসেবে এতটুকু দাবি সব সময় রাখবো,মেয়ের কখনো কোনো ভুলত্রুটি হলে,ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিয়ে শুধরে নিতে সাহায্য করবেন।নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখবেন।আর আমার বিশ্বাস।আমার মেয়ে কপাল করে এমন একটা শ্বশুড়বাড়ি পেয়েছে।সবাই আমার মেয়েকে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবে।”

জাহানারা বেগম আশ্বাস দিয়ে বললেন,”আপনার মেয়ে।আমার বাড়ির সম্পদ।আর নিজের বাড়ির সম্পদকে তো জান দিয়ে হলেও আগলে রাখতে হবে।”

“জারিফের মা সন্ধ্যা হয়ে আসছে যে। তাড়াতাড়ি করো।ওদিকে বাড়িতে ওরা দুজন বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে কি করছে।চলো।”

মেয়ে মানুষ কথা বললে সহজে থামতেই চায়-না।আবার যখন সবচেয়ে আদরের ধন সন্তান সন্ততি নিয়ে কথা হয়।তখন তো মাথায় অন্যকোনো চিন্তা থাকেই না। সন্তান সন্ততি নিয়ে আবেগ প্রবণ হয়ে এটাসেটা বলতেই থাকে। আনোয়ার রহমান যাওয়ার জন্য তাড়া দেওয়ায় জাহানারা বেগম কথা থামালেন।জাহানারা বেগম লিয়ার গালে আলতোকরে একহাত রেখে বললেন,”আমার ছেলেকে সারাজীবন ভালো রেখো।আমার ছেলেকে কখনো কষ্ট দিও-না।নিজের ছেলেকে ভালো রাখার জন্য এক মায়ের চাওয়া তুমি সকল মান অভিমান দূরে ঠেলে ভাইজানের কথাটা মেনে নিও কেমন।আমাকে তোমার স্বার্থপর মনে হতে পারে।মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য একটু আধটু স্বার্থপর হয়ে থাকে।আমাকে নাহয় তাই ভেবো তুমি।তবুও আজ নিজের ছেলের জন্য স্বার্থপরের মতো তোমাকে মেনে নিতে বলায়,আমার লজ্জা অনুভব হচ্ছে না।আমার ছেলেটা খুব ভালো।হয়তো তোমাকে বিলাসীতায় ডুবিয়ে রাখতে পারবে না।তবে সুখে শান্তিতে রাখতে যা দরকার। আল্লাহর রহমতে আমার ছেলের সে সামর্থ্য আছে।আর জানো মা সুখে শান্তিতে থাকার জন্য বিলাসবহুল গাড়ি বাড়ি,কারিকারি টাকা পয়সার দরকার হয়না।সৎ চরিত্র ,সকল মানবীয় গুণাবলী থাকলেই সুখে শান্তিতে থাকা সহজ হয়।আমি জানি এসবের সবটাই আমার ছেলের মধ্যে আছে। নিজের ছেলে বলে বলছি না। যাইহোক তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া থাকবে,আমার ছেলেকে ভালো রেখো।”

লিয়া বিনিময় কিছুই না বলেইনিশ্চুপ রয়।আর একটা মেয়ের নীরবতাকে সাধারণত সবাই মৌন সম্মতি ধরে নেয়।ঠিক তেমনই জাহানারা বেগম লিয়ার নিরব থাকাকে সম্মতি হিসেবে ধরে নেয়। জাহানারা বেগম গাড়িতে উঠে বসলেন।জারিফ দরজা লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,”মা বাসায় পৌছে ফোন দিয়ে জানিয়ে দিয়ো।নীলকে বলেছি।ওর যা মন। ফোন দেওয়ার কথা মনে নাও থাকতে পারে।”

“জারিফ তুই তো এখন আলিফের ওখানে যাবি বোধহয়।বাসায় ফিরবি কখন?”

জারিফ কিছু ভেবে বলল,”দেখি কখন যাই।”

জারিফ নীলকে উদ্দেশ্য করে ফের বলল,”নীল দেখেশুনে ড্রাইভ করিস। গ্রামের এই রাস্তাটা তেমন ভালো নয়।আর রাত সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। মনোযোগ সহকারে কেয়ারফুলি ড্রাইভ করিস ,কেমন?”

নীল একশব্দে বলল,”ওকে।”

গাড়ি চলে যেতেই রাজিয়া সুলতানা বাড়ির ভেতরে চলে যান।এখন কনে বিদায় হবে।বিদায় ক্ষণ আসছে যতো। ততো সবার মনটা বিষাদে ছেয়ে যাচ্ছে।তাসনিমের বুক ফেটে কান্না পাচ্ছে। তহমিনা বেগম মেয়ের সামনে আসতেই তাসনিম মা’কে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরে। উফ্! তহমিনা বেগম মেয়ের সামনে যতই শক্ত থাকার চেষ্টা করছে।ততই যেনো ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে পড়ছেন। তহমিনা বেগমের চোখের কোলে জমে থাকা নোনাজল মূহূর্তেই গাল বেয়ে পড়লো। তহমিনা বেগম মেয়েকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,”কান্না করে না,সোনা।কালকেই তো আসছো। তোমাকে এভাবে কান্নাকাটি করতে দেখতে সবারই খুব খা’রাপ লাগছে।”

পাশে তুলি দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। জান্নাত বেগম নাতনির সামনে দাঁড়িয়ে মাথায় হাত রাখলেন। তাসনিম দাদিমনিকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করতে থাকে। তহমিনা বেগম তুলির কাঁধে হাত রেখে বললেন,”মেয়েটা এত কান্না করছে।মাথা ধরে যাবে তো।ও বাড়িতে প্রথম দিন একলা একলা মন খা’রাপ হবে ভীষণ।তাই বলছি তুই আর লিয়া সাথে যা, কেমন।তাহলে ওর একটু হলেও ভালো লাগবে।”

তুলি নাক টেনে নিয়ে বলল,”লিয়া যাবে না হয়তো।আর নতুন কুটুম বাড়ি আমি এভাবে একা যেতে পারবো না।কাউকে তেমন চিনি না।”

“আমি লিয়াকে বলছি।আমি বললে লিয়া যাবে।”

থেমে‌।এদিক ওদিক তাকিয়ে তহমিনা বেগম ফের বললেন,”লিয়া কই দেখছি না যে।লিয়াকে ডেকে আন আমি বলে দেখি।”

তুলি ঠিক আছে বলে।
.
জারিফ আর লিয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে।লিয়া রাজিয়া সুলতানার পেছনে ভেতরে আসতে নেয়।এমন সময় জারিফ পিছু ডাকে।লিয়া বিরস মুখায়ব করে পিছন ফিরে তাকায়।জারিফ লিয়ার দিকে এগিয়ে আসে।কিছু বলার জন্য।জারিফ বলার আগেই লিয়া শান্ত কণ্ঠে প্রশ্ন করে উঠলো,”আপনি আন্টিকে এসব বলতে বলেছেন? আব্বুকে রাজি করাতে আপনি বলেছেন আন্টি আঙ্কেল কে?”

জারিফ সহসা বলে উঠলো,”নাহ্।আমি মা’কে সরাসরি বলিনি।তবে হয়তো পরোক্ষভাবে বলেছি।”

“মানে?”

“মা গতকাল রাতে আমার রুমে এসে প্রথমে ভালোমন্দ কথাবার্তা বলে। অবশেষে বলে,কালকে যেহেতু লিয়াদের বাড়িতে যাচ্ছি।তাই লিয়ার আব্বুকে বলবো লিয়াকে আমাদের কাছে নিয়ে আসার কথা।নিজের বাড়ির বউকে এভাবে বাপের বাড়ি রাখা মোটেই ভালো লাগছে না।তাই ভাবছি দ্রুতই তোদের বিয়ের কথা সবাইকে জানিয়ে নিয়ে আসবো লিয়াকে।”

জারিফের কথার মাঝেই লিয়া বলল,”আন্টি যে মান অভিমান কথাটা বললো।আপনি না বললে জানলো কিকরে?”

জারিফ বি’রক্ত হলো। গম্ভীর গলায় বলল,”ও লিয়া।কথা ফিনিশ করতে দিবে তো।মা যখন তোমাকে আনার বিষয়ে বলছিলো,তখন আমি বলি লিয়া এখনো অনেক ছোটো।এখনো অনার্সে ভর্তি হয়নি।তাই ওয়েট করা যাক।এখন যেভাবে চলছে।এভাবেই চলুক।তিন চার বছর পর লিয়াকে আনা যাবে।”

একটু সময় নিয়ে জারিফ বলল,”যদিও কথাগুলো আমার মনের থেকে বলা ছিলো না।তবুও মা’কে এমনটা বলেছিলাম।কারন তোমার জিদ সম্পর্কে আমি অবগত আছি।তবে কি জানো মা’য়েরা তাদের সন্তানের মনের কথা পড়তে পারে।তাদেরকে মুখ ফুটে কিছু বলতে হয়না।মা হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছে।সেই আন্দাজ থেকেই তোমাকে এরকমটা বলেছে।তবে লিয়া আমি কখনো তোমাকে জোর করবো না।মা বলেছে এইজন্য তোমাকে রাজি হতে হবে।এমন নয়।তুমি চিন্তা ভাবনা করে দেখো।তোমার যা ভালো মনেহয় তাই করবে।তোমাকে সরাসরি না করতে হবে না।আমি অন্যভাবে মা’কে বুঝিয়ে বলবো।আমি কজ দেখিয়ে সময়টা বাড়িয়ে নেবো।তোমার কথায়ই থাকবে।”

জারিফ দুই হাত প্যান্টের পকেটে গুঁজে সটান দাঁড়ালো। শান্ত নজরজোড়া লিয়ার হরিণী চোখে রেখে শান্ত শীতল গলায় বলল,”আমার মা’য়ের এভাবে বলায় তুমি কি আমাকে দায়ী করছো?ভাবছো কি আমি মা’কে উকিল নিযুক্ত করে বাবাকে দিয়ে আঙ্কেলকে রাজি করিয়েছি?”

লিয়া কপালে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে জারিফের মুখশ্রীতে শান্ত চাহনিতে চাইলো। ঠোঁট প্রসারিত করে বলল,

চলবে,,,

#সুখের_ঠিকানা
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৩

ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত্রি নয়টা বাজতে চলছে।আলিফের ফ্লাটটা আভিজাত্যপূর্ণ রুচিশীল সাজে সজ্জিত।বিয়ে উপলক্ষে সাজানো কৃত্রিম আলোয় ঝলমল করছে পুরো ফ্ল্যাট।এ্যশ কালারের ডিস্টেম্বার করা।বাসার দেওয়ালের মাঝে মাঝে কৃত্রিম এবং তাজা তুল দিয়ে ডেকোরেট করা। ফুল দিয়ে ডেকোরেট করা দেওয়াল যেনো সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে। কিছুক্ষণ আগে আলিফের মা আতিকা বেগম নিজ হাতে নতুন বউকে বরণ করে ভেতরে আনেন।আতিকা বেগমের চোখে মুখে ছিলো প্রশান্তির হাসি। নিজের পছন্দ করা মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়েছেন আতিকা বেগম। আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো সুখানুভূতি হচ্ছে।নিজ হাতে ছেলে সহ ছেলের বউকে মিষ্টি মুখ করান।সোফায় আলিফ আর তাসনিম পাশাপাশি বসে।অপর পাশের সোফায় লিয়া আর তুলি বসে।তখন তহমিনা বেগম এমন করে বললেন লিয়া সরাসরি না করতে পারছিলো না।আবার আসতে ইতস্তত বোধ করছিলো।রাজিয়া সুলতানাও লিয়াকে যাওয়ার কথা বলেন।অবশেষে একপ্রকার বাধ্য হয়েই লিয়া আসতে রাজি হয়। আলিফের ফ্ল্যাটে এখন নিজস্ব আত্বীয় ছাড়া বাইরের কেউ নেই।বর যাত্রী হিসেবে যাওয়া কলিগ এবং এখানকার পরিচিত সবাই যার যার বাসায় চলে গিয়েছে।তাদের আবার কালকে কমিউনিটি সেন্টারের রিসেপশনের দাওয়াত আছে। সেখানে আসবে।এখন বর্তমানে আলিফের মামা মামী, খালা-খালু আর তাদের ছেলে মেয়েরা আছে।আলিফের বাবা একমাত্র সন্তান হওয়ায় দাদার দিকে আত্মীয় স্বজন খুব কম।দূর সম্পর্কের আত্বীয়দেরকে ইনভাইট করা হয়েছিলো।বাট এখানে বিয়ের অনুষ্ঠান করায় ওখান থেকে এতদূর কেউ আসেনি। দুইচারজন আসলেও কালকে রিসেপশনে আসবে।ইভা ফোন হাতে নিয়ে বিভিন্ন এঙ্গেলে আলিফ তাসনিমের কাপল ছবি তুলে যাচ্ছে।এই একবার বলছে ভাবীর কাঁধে হাত রাখো,আরো ক্লোজ হয়ে বসো। আলিফ ধমকিয়ে উঠে ইভাকে।এখন এখানে সবাই আছে যতই বউ হোক লজ্জার বিষয় আছে।তাই আলিফ কাঠখোট্টা জবাবে বলল,
“এভাবেই তোল।আর রুমে যাবো। ফ্রেশ হবো। তাড়াতাড়ি কর।”

ইভা গাল ফুলিয়ে রাখলো।তুলি ঠোঁট টিপে হাসলো।লিয়া নির্বিকারভাবে বসে ফোন স্ক্রল করছে।ইভার মুখ ভার দেখে আলিফ ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে তাসনিমের দিকে আরেকটু চেপে বসল।একহাত তাসনিমের পেছন দিয়ে নিয়ে কাঁধের উপর রেখে বলল,”এবার হ্যাপি।নে ফটাফট তুলে ফেল।”

তাসনিম আলিফের দিকে একপলক চাইলো। আলিফ বিনিময় স্মিত হাসলো।ইভা একগাল হেসে বলল,
“থেংকিউ ভাইয়া।”

কিয়ৎকাল পর ইভা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,”এখন লজ্জা পাচ্ছো।ঠিকতো এই ছবিগুলোই ডিসপ্লেতে দিয়ে রাখবে।আবার বড় করে বাঁধিয়ে রুমজুড়ে টানিয়েও রাখবে।আজ বলে রাখলাম দুইদিন পর মিলিয়ে নিও কেমন।”

আলিফ মোটামোটা চোখে চাইলো।কি সাংঘাতিক ব্যাপার স্যাপার।হাতি কাঁদায় পড়লে ব্যাঙও যেমন লাথি দেয়।ঠিক তেমনি বিয়ের দিন পুঁচকে গুলোও লজ্জায় ফেলতে উস্তাদ দেখছি।এমনি সময় কথা বলতে থরথর করে না কাপলেও মেপে মেপে বলে।আর আজ কিনা তারাই টিপ্পনি কে’টে কথা বলে মজা নিচ্ছে। উফ্!ভাবা যায়।

“এই ইভা এখন ছবি টবি তোলা রাখ।মেয়েটা এই গরমের মধ্যে ভারী পোশাকে আছে।ওকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে।যা রুমে নিয়ে যা।তাসনিম ফ্রেশ হবে।বিশ্রাম করবে।”

আতিকা বেগম কিচেন থেকে বের হয়ে সোজা ড্রয়িংরুমে আসতে আসতে কথাটা বললেন।ইভা জবাবে বলল,”ওকে ফুপি।”

অতঃপর তাসনিমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। মিষ্টি করে হেসে বলল,”ভাবী আসুন।”

তাসনিম একহাতে মাথার উপর দেওয়া জর্জেট ঘোমটা ঠিক করে নিলো।উঠে দাঁড়িয়ে লেহেঙ্গার দুইকোণা ধরে ধীর পায়ে হেঁটে ইভার সাথে যেতে থাকে।ইভা আলিফের রুমের দরজা পর্যন্ত গিয়ে তাসনিমকে ইশারা করে ভেতরে যেতে। বলল,”ভাবী এইটা ভাইয়ার রুম। তারমানে আজ থেকে আপনাদের রুম।আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। কোনো দরকার পড়লে আমাকে ডাকবেন, কিন্তু।”

তাসনিম ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দেয়। অতঃপর রুমে পা রাখে।রুমে পা রাখতেই তাসনিমের গা কেমন জানি শিহরিত হয়ে উঠল।রুমজুড়ে তাজা ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করছে।ক্যান্ডেলের আলোয় রুমের পরিবেশটা অন্যরকম লাগছে। রুমের জায়গায় জায়গায় বড়বড় সুন্দর সুন্দর ক্যান্ডেল রাখা। তাসনিম ঘাড় ঘুরিয়ে চারিদিকটা দেখতে থাকে। বিছানার মাঝে লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ সেপ আঁকা।লাভ সেপের মাঝে আলিফ আর তাসনিমের নামের প্রথম ইংরেজি লেটার লেখা।বেডের পাশে কাঁচের ছোট টেবিলের উপর কাঁচের বোলের মধ্যে গোলাপের লাল পাপড়ি গুলো ভাসছে।রুমের ডেকোরেশন দেখলেই যে কেউ বলবে যার পছন্দে এসব করা।সেই মানুষটা নিশ্চয় খুব রুচিশীল।ফুলের সুবাসেতে তাসনিমের মনটা পুলকিত হয়ে উঠল।সাথে গা ছমছম করে উঠলো অজানা অনুভূতিতে। তাসনিম ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়ালো। নিজেকে দেখলো।দুইহাত ভরতি চুড়ি।গলায় ভারী ভারী গহনা।কানে বড় ঝুমকো দুল।মাথায় নজরকাড়া টিকলি।গায়ে লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা।এই সব কিছুই প্রিয় মানুষটার পছন্দ করা। উফ্ফ!মনে হচ্ছে সব কিছুতেই ঐ মানুষটার ছোঁয়া লেগে আছে।শরীরের লোমকূপ শিহরিত হয়ে উঠল।মনে হচ্ছে প্রিয় মানুষটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে।তাসনিম প্রথমে হাতের চুড়ি গুলো একএক করে খুলে ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখতে থাকে।
.
আতিকা বেগম লিয়া আর তুলির সাথে ভালোমন্দ কথাবার্তা বলতে থাকেন। অবশেষে লিয়া আর তুলিকে উদ্দেশ্য করে আদূরে গলায় বললেন,”মামনিরা তোমরাও ফ্রেশ হয়ে নাও।আর হ্যা কোনো সমস্যা হলে সাথে সাথেই বলবে কিন্তু।কোনো হেজিটেশন রাখবে না,কেমন?”

ইভা এসে আতিকা বেগমের পাশে দাঁড়ালো।আতিকা বেগম ইভাকে উদ্দেশ্য করে লিয়া আর তুলিকে রুমে নিয়ে যেতে বলেন।ইভা ব্যাকা চোখে লিয়ার দিকে চাইলো। গম্ভীর কন্ঠে বলল,”আসুন আপনারা।”

লিয়া বেশ বুঝতে পারলো এই মেয়ে তুলির সাথে স্বাভাবিক আচরণ করলেও,ওর দিকে কেমন অদ্ভুত নজরে তাকাচ্ছে। যেহেতু নিউ রিলেটিভ।তাই লিয়া আর এসব ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামালো না।একটা রাতেরই তো ব্যাপার। কালকেই তো চলে যাবে।আর এই মেয়ের সাথে কবে দেখা হবে?আর আদৌ হবে কিনা সন্দেহ।তাই চুপচাপ থাকাই বেটার মনে করলো লিয়া।আতিকা বেগম খুব ভালো মনের আর মিশুক স্বভাবের।
উনার কথায় সহজেই সবাই মায়ায় জড়িয়ে যায়।কি সুন্দর এই অল্প সময়ের মধ্যে লিয়া তুলির মনে দাগ কে’টে ফেলেছেন।কেমন যেনো মনে হচ্ছে অনেক দিন আগে থেকেই চেনাজানা তো বটেই।মনেহয় রক্তের সম্পর্ক আছে।এতটা আদর জড়ানো স্বরে কথা বলছেন।সাথে অমায়িক উনার আচরণ।লিয়া মুগ্ধ হয়ে দেখছে।আসলে কোনো কিছুতে প্রথমেই নিরাশ হতে নেই।এইতো তাসনিমের বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়ার পর কতজনই তো কত কুটু কথা বলেছিলো।বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়া মেয়েকে কেউ কি সহজেই বিয়ে করতে আসবে? হেনোতোনো কতকি বলেছিলো লোকজন। ভাগ্যের লিখন খন্ডনোর উপায় কারো নেই।হয়তো আজকের এই দিনটার জন্যই ঐ দূর্ঘটনার দিনটা দরকার ছিলো।কালকে কি হবে? সেটা কেউ জানে না।তাই কোনো কিছুতে হতাশ না হয়ে সৃষ্টিকর্তার উপর তাওয়াক্কুল ঠিক রেখে ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়।আর কথায় আছে না ধৈর্য্যর ফল মিঠা হয়।আবার সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে বিভিন্ন সময় বিপদ আপদ,বালা মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করেন।তাই কোনোকিছুতেই হতাশ না হয়ে সহজ সরল পথে জীবন যাপন করে ধৈর্য্য ধারণ করে চলতে হয়।এতদিন মনেমনে লিয়া নিজেকে দায়ী ভাবতো।নিজেকে খাটো মনে হতো।ওর জন্যই তাসনিমের বিয়েটা ভেঙ্গে গেলো।তবে লিয়া বিলিভ করতো আপু ভালো মনের মানুষ।তার জন্য ভালো কিছুই আছে নিশ্চয়।আর তাসনিম আজ যে পারফেক্ট ঘর,বর।একটা নির্ভেজাল, ঝঞ্ঝাট মুক্ত সংসার পেয়েছে।তা সে ডিজার্ভ করে।লিয়া খুব খুশি হয়। মনেমনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।

আলিফ রুমে যাওয়ার উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ায়।এমন সময় আতিকা বেগম শুধালেন,”কি ব্যাপার আলিফ।জারিফ তো এখনো আসলো না।কত করে বলে দিলাম আসার কথা।কই এখনো তো দেখছি না ছেলেটাকে।”

জারিফ ওদের সাথেই ফিরে আলিফের কাছে বাসায় চলে যাওয়ার কথা বলতেই,আলিফ সহ আতিকা বেগম না করেন।বলেন আজকে এখানেই থাকতে। একপ্রকার জোড়াজুড়ি করেই বলেন আতিকা বেগম। অবশেষে জারিফ রাজি হয়।তবে বলে ফ্রেশ হওয়া দরকার।আর বাসা যেহেতু এখান থেকে কাছেই। তাই বাসায় যায় ফ্রেশ হতে।আলিফ কপাল কুঁচকে বলল,”বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ফিরতে সময় লাগবে তো।আর একটু দেখি।তারপর নাহয় ফোন করবো।”
.
তাসনিম চুলের থেকে ক্লিপগুলো খুলছে। এত্ত এত্ত ক্লিপ আটকানো।তাসনিম খুলতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে। হঠাৎ তাসনিম মিররে আলিফের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলো। আয়নায় দুজনের চোখাচোখি হলো।আলিফ শীতল কণ্ঠে শুধায়,”হেল্প লাগবে?”

“না মানে।ঠিক আছে।”

অপ্রস্তুত কণ্ঠে জবাব আসলো।আলিফ স্মিত হাসলো।একহাত দিয়ে তাসনিমের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়।তাসনিমের চুলে হাত দিয়ে চুল থেকে ক্লিপগুলো ছাড়াতে থাকে।আলিফ তাসনিমের খুব কাছে অবস্থান করছে।আলিফ নির্বিকার আছে। কিন্তু ওদিকে তাসনিমের হার্টবিট যেনো দ্রুত ফাস্ট হচ্ছে।বুকের ভেতর দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে।সেই শব্দটা শুনতে না পেলেও আলিফ ঠিকই বুঝতে পারছে। উপলব্ধি করতে পারছে তার ব্যক্তিগত নারীটির কম্পন।আলিফ মুচকি মুচকি হাসতে থাকে।চুলের জট খোলা শেষে তাসনিম চুলগুলো চিড়নি করে নেয়।
.
লিয়া তুলি ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে। পিচ্চি দুইটা জমজ বাচ্চা অপর পাশের সোফায় বসে ফোনে গেইমস খেলছে।লিয়া তাদের সাথে এটাসেটা কথা বলছে।আলিফের খালার টুইন ছেলে বাচ্চা।তুলি ফোন স্ক্রল করছে।আতিকা বেগম আর ওনার বোন দুজনে কিচেনে।তুলি লিয়ার দিকে চাইল। হঠাৎ করেই ঠোঁট উল্টে বলল,
“এই লিয়া। আন্টিকে ডেকে একটু ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড টা শুনে নে না, প্লিজ।আমার এমবি শেষ। এফবিতে লগইন করতে পারছি না।আর এখানে নতুন জায়গা ফোন ছাড়া শুকনো মুখে থাকা ইম্পসিবল আমার জন্য।”

লিয়া কটমট চোখে চাইল। দাঁত কিড়মিড় করে বলল,”মাথা খা’রাপ হয়েছে নাকি তোর?নতুন আত্বীয় বাড়ি মাত্রই আসলাম।আর এখনি আমি পাসওয়ার্ড চাই। অদ্ভুত তোর কথাবার্তা!এমবি শেষ হয়েছে চুপচাপ বসে থাক।আর খুব দরকার হলে আমি হটস্পট দিচ্ছি,কেমন?তবুও নির্লজ্জের মতো এইসব চাওয়া চায়ি বাদ দে।”

তুলি ঠোঁট উল্টে ফের বলল,”ওকে। হটস্পট দে।”

লিয়া হটস্পট চালু করে পিন বলতে থাকে।এমন সময় লিয়া নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পায়।জারিফ ধপ করে লিয়ার পাশে ফাঁকা জায়গায় বসে পরে। কলিং বেলের শব্দ হওয়ায় ইভা দরজা খুলে দেয়।শুনেছিলো জারিফ আসবে তাই অবাক হয়না।ইভা ওর পিচ্চি দুই কাজিনের পাশে বসলো। দৃষ্টি তার লিয়ার পাশে বসা জারিফের দিকে।ইভার মনে কৌতুহল হচ্ছে জারিফ লিয়াকে নিয়ে।ইভার মন বলছে,এদের আগে থেকে কোনো কানেকশন আছে হয়তো।লিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে নিজের পাশে জারিফকে দেখে।জারিফের চুলগুলো হালকা ভেজাভেজা লাগছে। তারমানে কিছুক্ষণ আগেই হয়তো শাওয়ার নিয়েছে।লিয়া জারিফের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।ফের মোবাইলে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে।জারিফ লিয়ার কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

“তোমাকে সিকিউরিটি দেওয়ার জন্য ফিরে আসতেই হলো।যদিও আসার ইচ্ছে তেমন ছিলো না।তুমি একা একা বোর হবে তাই সঙ্গ দেওয়ার জন্য আসলাম।”

লিয়া রা’গি দৃষ্টিতে থাকাতেই জারিফ থেমে যায়। লিয়ার বলতে ইচ্ছে করছে,কে বলেছে আপনাকে আমি একা একা বোর হবো? নিজের মন মতো আজগুবি কথাবার্তা।তবে কথাটা মুখ দিয়ে বের না করে লিয়া গিলে নেয়।আর ভাবলেশহীন থাকে।ইভা ভাবছে, এত সুন্দর হ্যান্ডসাম দেখতে ছেলেটার চরিত্র মোটেই হ্যান্ডসাম নয়।কেমন লুস ক্যারেক্টার গো। সুন্দরী মেয়েটার পিছুপিছু ঘুরছে।এইতো আরো জায়গা থাকা সত্ত্বেও ছেলেটা কিনা ঠিক ঐ লিয়া ফিয়ার পাশেই গিয়ে বসলো। আর তখন যা দেখলাম এমা ছিঃ ছিঃ ছিঃ।এসকল কিছু ভেবে ইভা নাক মুখ সিঁটকায়।

লিয়া ফিসফিস করে বলল,”তখন না বললেন আমার থেকে দুই ফিট দূরত্ব বজায় রেখে চলবেন।এখন তো ঠিকই গা ঘেঁষে বসলেন।”

কথাটা বলে লিয়া মুখ ভেংচি কাটলো। জারিফও হুইচপার করেই ফের বলল,”আমার দোষ আর কোথায়?তুমিই তো চুম্বক আকর্ষণ করো। সেখানে দুই ফিট কেনো চুল পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখাও মুশকিল।”

লিয়া একটু নড়েচড়ে বসলো।মৃদুস্বরে শুধালো,”এখান থেকে আপনাদের বাসায় যেতে কত সময় লাগে?”

জারিফ সোফায় গা এলিয়ে আয়েশি ভঙ্গিতে বসলো।বলল,”রিকশা করে বিশ মিনিটে বাসায় গিয়েছি।তারপর লম্বা একটা শাওয়ার নিয়েছি টুয়েন্টি ফাইভ মিনিটস ধরে।তারপর মায়ের সাথে প্রায় বিশ মিনিটের মতো হবে কথা বলেছি। টপিক বিভিন্ন। সেগুলো নাহয় নাই বললাম।আরো দশ মিনিট খানেক নীলের সাথে কথা বলেছি।টেন মিনিটসে রেডি হয়েছি।দেন গাড়ি নিয়ে টেন মিনিটের মতো আসতে লেগেছে।”

লিয়া অবাক হলো।একটা প্রশ্ন করলো।আর এ কিনা এ টু জেড , টাইম টু টাইম বলছে।আর হিসেব করে রেখেছে নাকি।কোন ক্ষেত্রে কতটুকু সময় ব্যয় করেছে। অদ্ভুত!লিয়া ভ্রু বাঁকিয়ে ফের প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো,”এই আপনি যেভাবে বললেন,মনে হচ্ছে তো প্রত্যেক ক্ষেত্রে টাইমার ধরে রেখেছিলেন।”

“টাইমার না ধরলেও আমার অনুমান শক্তি খুব তীক্ষ্ণ।তুমি হিসেব করে দেখো আমি প্রায় দেড় ঘণ্টা খানেক পরেই ফিরেছি।”

লিয়া এবার মাথায় চাপ দিয়ে এখানে আসার সময়টা মনে করে।আবার এখন জারিফ আসার সময়টা মনেমনে বের করে।হ্যা সত্যিই দেড় ঘন্টা খানেকই হবে। অল্প স্বল্প প্লাস মাইনাস হতে পারে।যা ধরার মতো নয়।
.
আলিফ দুইহাত বিছানায় রেখে পা ঝুলিয়ে বসে ছিলো।এমন সময় খট করে ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হয়।মাথাটা তুলে সেদিকে তাকাল।মাথায় সাদা তোয়ালে জড়িয়ে রাখা।পার্পেল কালারের স্লিকের শাড়িটা গায়ে কোনো রকমে জড়িয়ে রাখা। তাসনিম কয়েক পা এগিয়ে আসতেই আলিফের দিকে নজর যায়।আলিফ সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাসনিমের দিকে তাকিয়ে আছে। তাসনিম অপ্রস্তুত হলো। তড়িৎ এলোমেলো দৃষ্টি ফেললো। মাত্রই শাওয়ার নেওয়ার ফলে তাসনিমকে খুব স্নিগ্ধ লাগছে।ন্যাচারাল লুকে একদম সদ্য ফোঁটা ফুলের ন্যায় পবিত্র আর কোমল লাগছে তাসনিমকে।আলিফ বড় করে শ্বাস টেনে নেয়। তাসনিম শাড়িটা ঠিক করবে।ওয়াশরুমে ঠিক করতে গেলে ভিজে যাবে।তাই কোনো রকমে পেঁচিয়ে বের হয়েছে ‌।এখন আলিফের সামনে ঠিক করতে লজ্জা অনুভব হচ্ছে।আবার মুখ ফুটে কিছু বলতেও ইতস্তত বোধ হচ্ছে। আলিফ তাসনিমের অস্বস্তি বুঝতে পেরে মৃদু হাসলো। কোনো কথা না বলে টি-শার্ট আর টাউজার নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢোকে। তাসনিম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে শাড়িটা ঠিক করতে থাকে।এর আগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কয়েকবার শাড়ি পড়া হয়েছে।তাই পড়তে পারে তাসনিম।তবে একদম একা কখনো পড়া হয়নি। আম্মু বা চাচিমারা পড়িয়ে দিয়েছে।একা একা পড়তে তাসনিম হিমশিম খাচ্ছে। বিশেষ করে কুঁচিটা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। প্রায় ফিফটিন মিনিটস ধরে তাসনিম চেষ্টা করছে অথচ কুঁচিটা মন মতো হচ্ছে না। এরমধ্যে আলিফ ওয়াশরুম থেকে বের হয়।তাসনিম বি’রক্ত হয়ে বারবার কুঁচি দিচ্ছে। আলিফ তাসনিমের সামনে দাঁড়িয়ে একহাতে ভেজা চুলগুলো ঝাড়ে।তাসনিমের মুখে বিন্দু বিন্দু পানি ছিটে পড়ে। তাসনিম চোখ তুলে আলিফের দিকে চাইলো। ব্লাক কালারের টাউজার আর নেভি ব্লু টিশার্ট আলিফের ধবধবে সুঠাম দেহে দারুণ আকর্ষণীয় লাগছে। তাসনিম নিষ্পলক চাহনিতে আলিফের দিকে ঠাঁই তাকিয়ে রয়।আলিফ তাসনিমের সামনে তুড়ি বাজিয়ে দুষ্টুমি করে বলল,

“হ্যালো?ম্যাম।কোথায় হারিয়ে গেলেন।সারারাত পরে আছে আমাকে দেখার জন্য।এখন ফাস্ট শাড়িটা ঠিক করুন। আপনার উন্মুক্ত পেট দেখে আমার চোখে নেশা ধরে যাচ্ছে কিন্তু।নিজেকে কন্ট্রোল করা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।”

তাসনিম দ্রুত একহাতে শাড়ির আঁচলটা পেটের উপর টেনে দেয়।কি বেলাজ লোক। এভাবে কেউ বলে নাকি? আশ্চর্য!তাসনিমের লজ্জায় মাটির তলায় লুকোতে ইচ্ছে করছে।

আলিফ শাড়ির কুচির আগা ধরে আর তাসনিম একটা একটা করে দেয়। অবশেষে শাড়ি পরা কমপ্লিট হয়।আলিফ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো পরিপাটি করতে করতে আড়চোখে তাসনিমের দিকে তাকায়। তাসনিম হাতে কয়েকটা চুড়ি পরে নেয়।কানে দুল পরে।গলায় শুধু একটা চেইনই এখন পরে। শাওয়ার নিতে যাওয়ার আগে সব অলংকারাদি খুলে রেখেছিলো।এখন আবার ডিনার করার জন্য ডাকছে।সবাই বাইরে আছে।তাই হালকা কিছু পরে নেয়।
.
ডিনার শেষে সবাই একসাথে ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে।বড়রা কেউ নেই।আতিকা বেগম আর ওনার বোন ভাবী হাতে হাতে সব কিছু গুছিয়ে রাখছে। কিচেনে ওনারা।ড্রয়িংরুমে আলিফ জারিফ পাশাপাশি বসে।আলিফের অপর পাশে ইভার স্কুল পড়ুয়া ভাই।আর অপর পাশের সোফায় লিয়া,তুলি আর ইভা বসে।তাসনিম রুমে। বিভিন্ন কথাবার্তার মাঝে আলিফ জারিফকে উদ্দেশ্য করে হঠাৎ বলল,

“জারিফ সাহেব।আপনি সংসার লাইফ শুরু করছেন কবে থেকে?”

জারিফ লিয়ার দিকে তাকালো।কোনো প্রকারের ভণিতা ছাড়াই স্পষ্ট করে বলল,”বউ যেদিন রাজি হবে সেদিন থেকেই।”

লিয়া আড়চোখে জারিফের দিকে চাইলো।ইভা বড়বড় চোখ করে চাইলো।ইভার কানে বউ শব্দটা একবার নয় কয়েকবার বাজতে থাকলো।এ্যা এর বউও আছে। আবার বাইরে লুচ্চামিও করে বেড়ায়।একবার যদি এই জারিফ ব্যাটার বউকে পেতাম,এর করা সব নষ্টামির কথা বলে দিতাম,হু।

আলিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,”ছোট শালিকা ভায়রাকে আর অপেক্ষা করানো মনেহয়না ঠিক হবে।তাই বলছি ভায়রা ভাইয়ের মনের ইচ্ছা পূরণ করে ফেলো।জলদি জলদি চুটিয়ে সংসার করো কেমন।”

লিয়ার লজ্জা লাগছিলো।এখানে সবার সামনে এসব কথায় আনইজি লাগছে লিয়ার।লিয়া দাঁতে দাঁত চেপে নিশ্চুপ রয়।ইভা যেনো কোনো জটিল সমীকরণ মেলাতে ব্যস্ত।জারিফকে ভায়রা বলল।তারপর লিয়াকে এসব বলল।এর মানে?ইভা দুইয়ে দুইয়ে চার মিলাতে পারছে না।ইভা তুলির কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে শুধালো,

“লিয়া আর উনি।আই মিন জারিফ ভাইয়া কি ম্যারিড?মানে লিয়া ওনার ওয়াইফ?”

তুলি একশব্দে বলল,”হুম।”

ইভা তৎক্ষণাৎ জিহ্বায় কামুড় দেয়।নিজের উপর নিজেই লজ্জিত হয়। এইরে তখন না জেনে লিয়াকে ওভাবে বলা মোটেই ঠিক হয়নি।আর এখন তো ভেবেছিলাম জারিফ ভাইয়ার বউয়ের কাছে ওনার করা লুচ্চামির তথ্য দেবো।ওমা সেই বউ তো লিয়া নিজেই।এইজন্য জ্ঞানীরা বলে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। থ্যাংক গড! অল্পের থেকে বেঁচে গিয়েছি।নাহলে আবার ভুলভাল লিয়াকে কি বলে ফেলতাম। উফ্!চোখের দেখা ঠিক হলেও।জানা সবসময় ঠিক হয়না।

এরমধ্যে আতিকা বেগম এসে ইভাকে বলেন, লিয়া, তুলিকে নিয়ে রুমে যেতে।আতিকা বেগম সিঙ্গেল সোফায় বসলেন।জারিফের সাথে এটাসেটা কথা শুরু করলেন।

“জারিফ বাবা। মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর চিন্তা ভাবনা কি? পিএইচডি কি দেশে থেকেই করবে?নাকি বিদেশ থেকে করার চিন্তা ভাবনা আছে?”

জারিফ নম্র স্বরে বলল,”আসলে আন্টি।আপাতত বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করার কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।আমাদের ভার্সিটি থেকেই করবো হয়তো। তারপরে যদি কখনো কোনো স্কলারশিপ আসে।তখন ভেবে দেখবো।আর আমার মা সবসময় চায় আমি যেনো তাদের কাছেই থাকি।আমার ভার্সিটিতে চাকরি হওয়াতে আমার থেকেও আমার মা-বাবা বেশি খুশি হয়েছিলেন। অনার্স শেষ হয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার পরপর ভার্সিটিতে টিচার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়।আমি পরীক্ষা দেই। আল্লাহর রহমতে সবার দোয়ায় উত্তীর্ণ হই।সেই সময় মা খুব বেশিই খুশি হয়েছিলো। বাড়িতে থেকেই সব কিছু করা যাবে এইজন্য।আর আমার কাছে মনেহয় শিক্ষকতা পেশা নিঃসন্দেহে একটা সম্মানীয় পেশা।সেই সাথে এই পেশায় থাকলে নিজেকে খুব সহজেই ভালো রাখা যায়।নিজেকে পবিত্র রাখা যায়, দূর্নীতি মুক্ত রাখা যায়। হালাল উপার্জন ।যা আসলে ইন্জিনিয়ারিং , প্রশাসনিক, ব্যাংকিং আরো কিছু পেশা আছে সেখানে থেকে সহজেই করা যায় না।একটু কঠিন হয় । বর্তমান প্রেক্ষাপটের জন্য। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার জন্য।তারপরেও কিছুকিছু মানুষ আছে নিজেকে ভালো রাখেন।ঘুষ,অবৈধ বিল ভাউচার থেকে নিজেকে দূরে রাখে।তবে সীমিত সংখ্যক।”

আতিকা বেগম মুগ্ধ হয়ে জারিফের কথা শুনছিলেন।মায়াময় স্বরে বললেন,”একদম ঠিক বলেছো বাবা।”

আলিফ বলল,”এখন তো ডাক্তারি পেশাটাকেও মানুষ সেবা হিসেবে না নিয়ে ব্যবসা ভিত্তিক নেয়। অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত টেস্ট দিয়ে রোগীকে হয়রানি করে। বিভিন্ন নামকরা হসপিটাল, ক্লিনিক থেকে টেস্টের বিনিময়ে পার্সেন্টেন্স নেয়।ঔষধ কোম্পানী গুলোও ছোটবড় সব ডাক্তারদেরকে মাসে পার্সেন্টেন্স দেয়। এসবের জন্য সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে।”

“আসলে ভাই সব জায়গাতেই ভালো মন্দ সব রকমের মানুষই আছে। ‌এরমধ্য দিয়ে নিজেকে রং রাইট বিবেচনা করে চলতে হবে।কে কি করলো সেটা না দেখে নিজেকে বিশুদ্ধ রাখতে হবে।আর নিজেকে বিশুদ্ধ রাখলে আত্মার প্রশান্তি হয়।যা অদৃশ্য দেখা যায়না।তবে অনুভব করা যায়।”

আলিফ এপ্রিসিয়েট করে বলে উঠলো,”রাইট।একদম মনের কথা বলেছেন।”
.
তাসনিম বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আকাশে থালার মতো চাঁদটা রুপালি আলো উপচে দিচ্ছে ধরণীতে। চাঁদের একফালি আলো তাসনিমের উপর এসে পড়ছে। তাসনিম উদাসীন হয়ে কিছু ভেবে চলেছে।আজ থেকে জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরু হলো। কিভাবে সবকিছু মানিয়ে চলবে।তাই নিয়ে ভাবছে।এমন সময় দরজা লকড করার শব্দ এলো। কিয়ৎক্ষন পরে একজোড়া শক্ত পোক্ত হাতের অস্তিত্ব নিজের কোমড়ে পায়। তাসনিমের শরীরটা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।আলিফ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখলো।আদূরে স্বরে বলল,

“কি ভাবছো?”

“কিছু না।”

“মন খা’রাপ লাগছে?এখানে ভালো লাগছে না নিশ্চয়?”

“নাহ্।তেমন কিছু নয়।ঠিক আছি।”

তাসনিম বড় করে হামি দেয়।তা দেখে আলিফ ফের বলল,”ঘুমটুম দূরে রাখো।আজকে সেখানে আলিফের আদর ভালোবাসাকে ঠাঁই দাও।”

তাসনিম লজ্জায় আড়ষ্ট হলো।তবে বাইরে প্রকাশ করলো না।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়।আলিফ তাসনিমকে উদ্দেশ্য করে বলল,”চলো একসাথে দুই রাকাত নফল নামাজ পরে নেই।”

তাসনিম মাথা উপর নিচ করে সম্মতি দেয়।ওযু করে এসে দুজনে একসাথে নফল নামাজ পরে।মোনাজাতে সংসার জীবনের জন্য প্রার্থনা করে। তাসনিম জায়নামাজ টা ভাঁজ করে রেখে দেয়।এমন সময় রুমের লাইট নিভে যায়।আলিফ নিভিয়ে দিয়েছে।শুধু ক্যান্ডেল লাইট জ্বলছে।ক্যান্ডেলের আলোয় পরিবেশটা চমৎকার লাগছে। তাসনিমের বুকের মধ্যে ধুকধুক শব্দ ক্রমশ বেড়েই চলছে।আলিফ তাসনিমের সামনা-সামনি দাঁড়ালো। শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরলো।কপালে কপাল রাখলো। আলিফের গরম নিঃশ্বাস তাসনিমের মুখের উপর আছড়ে পড়ছে। তাসনিমের বুকের ভেতর থাকা হৃদপিন্ড নামক সংকোচ প্রসারণ যন্ত্রটা যেনো বেড়িয়ে আসার মতো।বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে। তাসনিমের গলা অদ্ভুত তৃষ্ণায় শুকিয়ে আসছে কেমন যেনো।রুমে এসি চলছে।তারপরেও তাসনিম মৃদু ঘামতে থাকে। জিহ্বা দিয়ে ঢোক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নেয়।তাসনিম ঘনঘন শ্বাস টেনে নেয়।আলিফ আরেকটু টান দিয়ে তাসনিম কে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় ।তাসনিমের লোমকূপ কাঁটা দিয়ে উঠলো যেনো।আলিফ তাসনিমের কপালে প্রগাঢ় চুম্বন আঁকে। তাসনিম দুইহাতে শাড়ি মুঠো করে ধরে।আলিফ তাসনিমের মায়াবী মুখে শান্ত নজরে তাকায়।ক্যান্ডেলের আলোতে তাসনিমকে দীপ্তিময় লাগছে।খুবই আকর্ষণীয় লাগছে।আলিফ তাসনিমের মায়াবী চোখে নজরজোড়া নিবদ্ধ করে নেশা জড়ানো কণ্ঠে বলল,

“তুমি আমার দুইচোখের শীতলতা।তুমি আমার হৃদয়ের পরিপূর্ণতা।তুমিই আমার সুখের ঠিকানা। ইউ আর মাই এভরিথিং।আই লাভ ইউ সো মাচ্। তোমাকে আমার অর্ধাঙ্গিনী হিসাবে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।আমার ছোট্ট জীবনে সবচেয়ে বড় উপহার তুমি।তুমি আর শুধুই তুমি।আজ তোমাকে ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দিতে চাই।যদি তোমার অনুমতি পাই।”

তাসনিম নিশ্চুপ রইলো।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে।মুখ দিয়ে কোনো কথাই আজ যেনো বের হতে চাচ্ছে না।শরীরটা কেমন যেনো ক্ষনে ক্ষনেই কম্পিত হচ্ছে। সম্পূর্ণ নতুন অনুভূতি হচ্ছে হৃদয় জুড়ে।আলিফের বুকে মাথা রাখতে প্রচন্ড ইচ্ছে হলো। তাসনিমের মুখে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়ছে।তাসনিম হুট করে আলিফের বুকে মুখ লুকালো।আলিফ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। দু’জনের মাঝে নীরবতা চলছে। শুধু দু’জনের নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া পিনপতন নীরবতা চলছে রুমজুড়ে। কিয়ৎক্ষন পর,আলিফ তাসনিমের মুখটা দুইহাতে আঁজলা করে ধরলো। তাসনিমের গোলাপী কোমল ওষ্ঠজোড়া তিরতির করে কাপছিলো।আলিফ তাসনিমের কাঁপাকাপা ঠোঁটে নিজের ঠোঁট রাখে। ঠোঁটে গাঢ় চুম্বন আঁকে।দুজনে আবেশে আঁখিযুগল বন্ধ করে নেয়। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে।আলিফ বড়করে শ্বাস টেনে নেয়। তাসনিম বুক ভরে বারকয়েক শ্বাস টেনে নেয়।আলিফ তাসনিমের কানের দুলটা এক হাতে খুলে তাসনিমের হাতে ধরিয়ে দেয়।কানে ঠোঁট ছোঁয়ায়।গলার চেইনটা খুলে গলায় মুখ ডুবায়। তাসনিম আলিফের টিশার্ট খামচে ধরে। আলিফের স্পর্শ বাড়তে থাকে।
.
লিয়া বেডের এক সাইডে তুলি মাঝে অপর পাশে ইভা।তিনজন শুয়ে।লিয়া মাত্রই ঘুমিয়েছে।আর এমন সময় ভো ভো শব্দ করে ফোনটা কেঁপে উঠলো।ফোন হাতে নিয়ে চোখের পাতা টেনে তুলে জারিফের কল দেখতে পায়। রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ফোনের ওপাশ থেকে আদেশ স্বরুপ বার্তা এলো,

“আমি ছাদে আছি। তুমি ফাইভ মিনিটের মধ্যে আসো।”

লিয়া উঠে বসলো।একহাতে চোখ ডলতে থাকে। অতঃপর ঘুমুঘুমু কণ্ঠে ফিসফিসিয়ে জবাব করল,”এই আপনার মাথা ঠিক আছে তো।এই নতুন জায়গায় এসে আমি ছাদে যাই।যেখানে কোনো কিছুই আমি চিনি না। আশ্চর্য!”

“ওকে।ব্যাপার না।আমি নিচে আসছি।মেইন ডোরের সামনে আসছি।তুমি আসো।”

“অসম্ভব।এখানে তুলি ইভা আছে।ওরা জানলে লজ্জাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।আমি পারবো না।”

“এতো দেরি করে বললাম সবাই ঘুমানোর পর।এতক্ষণে ঘুমি আসেনি?,”

“আসছে ঘুম।তারপরেও যদি টের পায়।আমার এভাবে রুম থেকে বের হওয়া।না না অসম্ভব।আমি পারবো না।আর কী দরকার?ফোনেই বলুন।”

“আমার পরে বিয়ে হয়ে সবার আগে বাসর হচ্ছে।তাই আমারও ইচ্ছে হয়েছে বাসর করতে তাই।বুঝতে পেরেছো?”

জারিফ একটু রেগে কথাটা বলল।জারিফের কথার ধরন লিয়া টের পেলো। ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,”আপনি অহেতুক রা’গ করছেন কেনো? ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখুন।তখন একবার ইভা ঐভাবে দেখল।আবার কে কোন

এতটুকু বলে থামলো লিয়া।ফের ঠোঁট উল্টে বলল,”তাই বলছি ফোনেই বলুন, প্লিজ।আর একটু আগে যা বললেন সেটা হলে বলবো,ওয়েট করুন।ঠিক সময় মতো মনের বাসনা পূরণ হবে।এভাবে নয়।”

জারিফের এবার রা’গের সাথে হাসিও পেলো।তবে না হেসে নির্বিকার চিত্তে বলল,”শোনো বাসর করার হলে তোমাকে ছাদে না ডেকে সোজা বেডরুমে ডাকতাম।আমাকে একাই একটা রুম দেওয়া হয়েছে।সো প্রবলেম ছিলো না।এতবড় সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রুমে না ডেকে ছাদে ডাকার কারন তাহলে কি?আজকে চাঁদনি রাত। তুমি আমি এক ছাদের নিচে আছি। তাই ইচ্ছে করলো চন্দ্র বিলাস করতে।তোমাকে সাথে নিয়ে।আর তখন তোমার না বলা কথাটাও শুনতে চাই। সন্ধ্যায় তুমি কিছু বলার আগেই তো তোমার ডাক পড়লো।তুমি বলতে পারলে না।আর আমি শুনতেও পারলাম না।তাই ভাবছি চাঁদনি রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে তোমার তখনকার না বলা কথা শুনবো।আর সাথে প্রেমালাপ করবো।”

একটু সময় নিয়ে জারিফ ফের বলল,”যা বলার সব বলে দিয়েছি।এখন তুমি আসবে কি আসবে না ভেবে দেখো।”

লিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জারিফ কল কাটল। লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে ফোনের দিকে চাইল।আবার ঘাড় ঘুরিয়ে তুলি আর ইভার দিকে ফিরলো।লিয়া বিরক্তিতে চ জাতীয় শব্দ উচ্চারণ করলো।লিয়া বেশ দোটানায় পড়লো।

চলবে,,,

(ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)