#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৮
অর্পি অবাক চোখে রূপাকে দেখছে। সে জেরিনকে শান্ত করতে ব্যস্ত। যদিও ঘটনার কিছুই এখনও কেউ জানতে পারেনি। সদ্য ঘুম ভাঙ্গা মস্তিষ্ক নিয়ে সবকিছু বুঝতে অর্পিকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
– জেরিন এভাবে কান্নাকাটি না করে কি হয়েছে বলবি তো!
জেরিনের সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে কান্না করে চলেছে। মনের সুখে নয়। মনের দুঃখে।
– আশ্চর্য! কাঁদবি তো নিজের রুমে যা। এভাবে মানুষের রুমে এসে পরিবেশ নষ্ট করছিস কেনো?
অর্পির ঘুমের রেশ কেটেছে এবং সে জেরিনের উপর বেজায় বিরক্ত হয়েছে। কেঁদেই চলেছে। যেনো পুকুর বানানোর দায়িত্ব নিয়েছে।
– আমার সব শেষ হয়ে গেছে রূপা।
– কিছু তো শুরুই হয়নি। শেষ হবে কিভাবে?
কেয়া বিরক্ত। রুমে এসেছিল বিশ্রাম নিতে। এই মেয়ে কান্না শুরু করেছে তো করেছেই। মাথা ব্যাথা শুরু হয়েছে তার।
– কি হয়েছে বল জেরিন। আমরা তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
নরম কণ্ঠে বলল রূপা। একটু থেমে শ্বাস নিলো জেরিন। বলতে শুরু করলো।
– বাসে যখন আমরা নাচছিলাম তখন সবুজ আমার সাথে বাজে ব্যবহার করেছে।
ফের কান্নায় ভেংগে পড়লো জেরিন। রূপা চমকে গেলো। অর্পি বোকার মত প্রশ্ন করলো,
– কিভাবে?
– একটা মেয়েকে কিভাবে অসম্মান করা যায়, কিভাবে তার সাথে অসভ্যতামি করা যায় এটা কি তোকে ভেঙে বলতে হবে?
কান্নার দমকে জেরিনের কথা বেঁধে বেঁধে আসছে। কেয়া এবার বাস্তবিকই চটে গেলো।
– তুই নিজেই ওর সাথে নাচতে গেছিস। এখন ওর দোষ দিচ্ছিস কেনো?
– আমি তো ওখানে একা ছিলাম না।
– তুই একা ছিলি না কিন্তু সবুজ তোর সাথেই নাচছিলো। আর যখন ও তোর সাথে গায়ে গা লাগিয়ে নাচছিলো তখন তুই নিজেও মজা করছিলি। আমরা দেখিনি মনে হচ্ছে! তখন নিষেধ করলি না কেনো তুই?
– সেটা না। তখন তো আমি নিজেই ওর সাথে তাল মিলিয়েছি। কিন্তু তারপর ও যেটা করেছে সেটাতে তো আমার সায় ছিলো না। সুযোগ পেয়ে..
থেমে যাওয়া কান্না আবার চালু হলো। রূপা স্তম্ভিত হয়ে আছে। অর্পি বুঝতে পারছে না কি বলা উচিত। কেয়া শক্ত কণ্ঠে বলল,
– তুই জানিস কাকে অসভ্যতামি বলে? নিজের সম্মান কোনটা সেটা বুঝিস? শুধুমাত্র তোর সায় ছিলো বলে অশ্লীল একটা কাজ কখনো বৈধ হয়ে যাবে না। তোর ভালো লাগলেই কোনো অন্যায় ন্যায় হয়ে যাবে না। তুই যেচে ওর সাথে নেচেছিস। যখন ও তোর কোমড়, ঘাড়, পিঠ ছুঁয়ে মজা নিচ্ছিল তখন সেটা তোর কাছে অসম্মানের মনে হয়নি কারণ এতে তোর সায় ছিল। আর যখনই সুযোগ পেয়ে ও একটা কাজ করল তখনই তোমার সব শেষ হয়ে গেলো তাই না? তোর ইজ্জতের কোনো দাম আছে তোর কাছে!
– তুই কি সবুজকে সাপোর্ট করছিস?
– কোনো কুলাঙ্গারকে সাপোর্ট করতে যাবো আমি কোন দুঃখে? ও তো মজা নিয়েই খালাস। তোর সত্তায় যেই বিশ্রী দাগটা ও বসিয়ে গেছে সেটা তুই মুছবি কিভাবে? সবুজের শাস্তি হলে সেটা মুছবে? মুছবে না। তুই যেমন নিজেকে সস্তায় বিলিয়ে দিয়েছিস তেমন করেই সেই বিকানো জিনিসের মজা সবুজ নিয়েছে। নিজে যদি নিজের দাম না বুঝিস তাহলে আমি সারাদিন চেঁচিয়ে কি করবো?
জেরিনের কান্না থেমেছে আগেই। এবার ওর নিজেকে অপমানিত মনে হলো। দেরি না করে নিজের রুমে ফিরে গেলো সে। তখনই যেনো রূপা হুশ ফিরে পেলো।
– কেয়া তুই ওকে এসব বললি কেনো?
– কি বলেছি?
– এতো শক্ত কথা বোঝার মত অবস্থায় ও নেই।
– আমি ভুল কিছু বলিনি রূপা। নিজে নিজের মূল্য না বুঝলে সারা দুনিয়া মিলেও ওকে সম্মানিত করতে পারবে না।
– তাই বলে..
– তাই বলে টলে না। ও এতগুলো ছেলের মাঝখানে নাচতে গেছে কোন বুদ্ধিতে? কমন সেন্স থাকলে কেউ এটা করবে না। তবে যদি তার মজা নেওয়ার ইচ্ছে থাকে তাহলে আলাদা বিষয়।
– তুই কোন কথা কোন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছিস?
– আমি সহজ কথাই বলছি। তুই নিজেই বুঝছিস না। বাইরের,রাস্তার একটা ছেলের সীমানার মাঝে নিজেকে সপে দিয়ে তুই কি নিশ্চিন্ত থাকতে পারবি? পারবি না। নিজের আব্রু নিয়ে তোর চিন্তা হবে। কিন্তু সেটা যদি তোর না হয় তাহলে সে সুযোগ নিতে দেরি করবে না। সমাজে এখন পুরুষের রূপে হায়েনাই বেশি। তোর বয়ফ্রেন্ডের সাথে তুই গা ঘেঁষে বেড়াবি কিছু মনে হবে না কিন্তু যেই সে তোর অনুমতি না নিয়ে কিছু করবে অমনি তুই হাঙ্গামা বাঁধাবি। কেনো রে? একটা মেয়ের সম্মানহানি কি শুধু রেপ করলেই হয়?
কথা শেষ করে থামলো না কেয়া। বের হয়ে চলে গেলো। অর্পি এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কেয়ার কথা শুনছিল। মেয়েটার ভেতরে একটা আগুন আছে। কেমন যেনো সুপ্ত আগুন! অনাহুত কাউকে জ্বা-লি-য়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ঘাড় ঘুরিয়ে রূপাকে ধাক্কা দিলো অর্পি। হাই তুলে বলল,
– তুই ঝিম মেরে গেলি কেনো? ও তো তোকে বলেনি। নাকি তোর বয়ফ্রেন্ড আছে? তাই কথা গায়ে লাগছে।
ঢোক গিললো রূপা। কথাগুলো তার কোথায় লেগেছে সেই ভালো জানে।
• • • • • •
পুরো বাসে খুবই ক্লান্ত ছিলো দীপ্তি। বিষয়টা বেশ কিছুদিন ধরেই হচ্ছে। অল্প পরিশ্রমেই বেশ হাঁপিয়ে পড়ছে সে। সেদিনও ফাহাদ তাকে বলছিলো,”দীপ্তি তুমি অনেক শুকিয়ে গেছো”। দীপ্তি জানেনা কেনো এমন হচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়ার মত কোনো ঘটনাই নেই। যৎসামান্য কাজই সে করে। তবুও এমন কেনো হচ্ছে সে জানেনা। ফলাফলস্বরূপ হোটেলে উঠে সেই যে ঘুম সে দিয়েছে তাতেই বিকেল গড়িয়ে রাত নেমেছে। ফাহাদ কিছুক্ষন একা একা ঘোরাঘুরি করেছে। শেষে ক্লান্ত হয়ে সেও ঘরে ফিরেছে। ঘুমন্ত দীপ্তিকে জাগাতে উদ্যত হলো সে।
– দীপ্তি! এই দীপ্তি! ওঠো। আর কতো ঘুমাবে?
দীপ্তির একটা ভালো অভ্যাস। কখনও একবারের বেশি দুইবার ডাক দিয়ে হয় না। খুবই পাতলা তার ঘুম। ফাহাদের এক ডাকেই সে উঠে বসলো। কিছুক্ষণ বসে থেকে ওয়াশরুমে গেলো। আয়নার দিকে তাকাতেই মনে হলো তাকে একটু বেশি কালো দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে রোদে পুড়ে রং এমন হয়েছে। প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করতে যেয়ে আজও র-ক্ত দেখতে পেলো দীপ্তি। জিনিসটা বেশ কিছুদিন খেয়াল করেছে সে। ফাহাদকে বলার কথা ভাবলেও বলা হয়নি। কেমন যেনো জড়তা অনুভব করে। মাকে বলেছিল। মা অতটা পাত্তা দেননি। বলেছেন, “বেশি বেশি পানি খাবি। ঠিক হয়ে যাবে।” মায়ের সকল রোগের ঔষধ পানি। সে এক অদ্ভুত মানুষ।
বের হয়ে এলে তাকে জেঁকে ধরলো ফাহাদ।
– চলো দীপ্তি বের হই।
– বের হই মানে? এখন এই রাতে কোথায় যাবে?
– একটু বিচে হেঁটে আসি। রাতে ভালো লাগার কথা।
– আমি যাবো না। আমার ভালো লাগছে না।
– চলো না দীপ্তি যাই। সবসময় তুমি এমন করো।
সন্তর্পনে স্ত্রীর হাত ধরলো ফাহাদ।
– সবসময় আমি কি করি! বরং তুমি এমন করো। ছোটলোকের মতো সবসময় জোড়াজুড়ি! অসহ্য!
চিৎকার করে উঠলো দীপ্তি। “ছোটলোক” শব্দটা খচ করে ফাহাদের বুকে বিধলো। অপমানে মুখটা রাঙা হয়ে উঠল। এর আগেও দীপ্তি তার সাথে এমন ব্যবহার করেছে। অসম্মানের পাহাড় গড়েছে। ফাহাদ জানেনা এই পাহাড় কতো বড় হবে। কবে ধ্বংস হয়ে সব উড়িয়ে নিয়ে যাবে সেটাও সে জানে না। আচ্ছা! দীপ্তি জানে? ঠিক কতটা অপমান করলে ফাহাদ ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে?
বাকি রাতটা আর দীপ্তির মুখোমুখি হলো না ফাহাদ। নির্জন বিচে একা হাঁটতে থাকলো। দূরে দেখতে পেলো ছেলেমেয়েদের একটা দল। কি আনন্দে জলকেলি করছে! সকালের আলো ফোঁটার সময় হলে ঘরে ফিরল ফাহাদ। রুমের একপাশে থাকা ডিভানে পিঠ ঠেকিয়ে দিলো। তার খুব ক্লান্ত লাগছে। খুবই ক্লান্ত।
চলমান।
#রিটেক
#বিনতে_ফিরোজ
পর্ব:৯
হোটেলের বিরাট করিডোরে সবাই একত্রিত হয়েছে। এক কোণায় জেরিনকেও দেখা গেলো। রূপা একবার ভাবলো ওর কাছে যাবে কি না। পরক্ষণেই মত পাল্টাল। আশপাশে তাকিয়ে অর্পিকে খুঁজলো। এই মেয়েটার কোনো টাইম টেবিল নেই। তবে তার বিরক্তি প্রকাশের আগেই অর্পি এসে হাজির হলো।
– হাই রূপা!
রূপা বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকালো। অর্পির অভিব্যক্তি দেখে মনে হচ্ছে যেন কতকাল পরে তাদের দেখা।
– হাই।
– কেমন আছিস?
– ভালো?
– কতোটুকু ভালো?
– জানিনা।
– জেনে বল।
– কার থেকে জেনে বলবো?
– তোর ভালো কি মানুষ বলবে? নিজের থেকে জেনে বল।
– ভালো থাকা মাপার কোনো যন্ত্র থাকলে মেপে বলতাম। তুই এবার চুপ কর।
– প্রথমটা শুনলাম কিন্তু পরেরটা মানতে পারলাম না। এখানে সবাই জড়ো হয়েছে কেনো?
চারদিক তাকিয়ে বলল অর্পি। রূপার বিরক্তি তখন অনেকটাই কমে গেছে।
– জানিনা। আমাকে তো কেয়া ডেকে আনলো। দেখি কি বলে।
– যাই বলিস রূপা। কেয়া এক্কেবারে জোশ একটা মেয়ে। তোর কি মনে হয়?
রূপার কি মনে হয় সেটা জানার আগেই বিশ জন নিয়ে গঠিত দলের নেতা সবাইকে জানালো তারা এখন বিচে যাবে। অনেকে আনন্দে উল্লাস করলো। তবে অর্পি যারপরনাই বিরক্ত হলো।
– কি আশ্চর্য! এই রাতের বেলা বিচে যেয়ে কি করবো? উষ্টা খেয়ে শেষে পানিতে পড়বো, ভেসে সাগরে চলে যাবো। আমার এখনও বিয়ে হয়নি রূপা!
– তোর ভাবনা চিন্তাকে আমার লাত্থি দিতে মন চাচ্ছে। তুই এসেছিস কেনো? ঘরের ভেতর বসে থাকার জন্য?
হাই তুলে অর্পি বলল,
– ঘুরতেই এসেছি যেনো ভবিষ্যতে নাতি নাতনীদের বলতে পারি যে সেন্ট মার্টিনে ঘুরতে গিয়েছিলাম।
– তুই চুপ কর অর্পি! প্লিজ!
দুই একজন ছাড়া সবাই বের হলো। রাতের আঁধারে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ তাদের মাঝে আলোড়ন তুলল। সবাই ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে সাগরের পানিতে পা ভেজালো। কেউ কেউ জলকেলি করতে শুরু করলো। সুযোগ পেয়ে রূপার কাছে চলে এলো হিমেল। আঁধারের মাঝে কেউ তাদের অতোটা লক্ষ্য করলো না।
– রূপা!
নিজের নাম শুনে ঘুরে তাকালো রূপা। হিমেলকে দেখে আশপাশে তাকালো। কেয়া এখানে নেই। অর্পি কিছুটা দূরে। সন্তর্পনে হিমেলের কাছে চলে গেলো সে।
– এতক্ষণে তোমার সময় হলো আমাকে মনে করার?
– আরে কি বলো! আমি তো বাসে সারাক্ষণ তোমাকে দেখেছি।
– বাসে কি যে দেখেছো সেটা আমি ভালোই জানি। আচ্ছা একটা কথা বলো তো।
– কি কথা?
– তুলিকে কি তোমার অনেক পছন্দ?
– এটা আবার কেমন কথা? এখানে তুলি এলো কোত্থেকে?
– তুলি আসেনি। কিন্তু বাসে দুজনে মিলে যা করছিলে যে কেউ ভাববে এটা।
– এসব তোমার থার্ড ক্লাস চিন্তা ভাবনা রূপা। তুলি আমার ফ্রেন্ড। সে যদি আমার সাথে হাসি ঠাট্টা করে এতে এতো ভাবনার কি আছে?
– হাসি ঠাট্টার নমুনা দেখলে গা জ্ব-লে যায়।
– এসব কোন ধরনের কথা রূপা! আমি তোমাকে অনেক উদার মনের জানতাম। তোমার থেকে এটা এক্সপেক্ট করিনি।
মুখ ঘুরিয়ে থাকলো রূপা। হিমেলের এসব কথার জবাব সে দিতে পারে,”জিজ্ঞেস করতে পারে তুলি যখন গায়ে ঢলে পড়ে তখন তুমি ওকে বারণ করো না কেনো? তোমার কি অনেক ভালো লাগে?”কিন্তু এতে ঝগড়াটা বিশ্রী পর্যায়ে চলে যাবে। রূপা সেটা চায় না। হিমেলও বোধহয় সেটা চাইছিলো না। নরম গলায় সে রূপাকে ডাকলো। তার বেশ কাছে চলে গেলো।
– রূপা! আসো আমরা নিজেদের মতো সময়টা কাটাই। অন্য কারো কথা বলো না তো এখন।
হিমেলের কণ্ঠে এক অন্য রকম অনুভূতির জোয়ার। রূপা সেটা বুঝতে পারলো। মুখের ভাঁজ মুছে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
– চলো হাঁটি।
– ধুর! এই অন্ধকারে কে হাঁটে?
রূপা চাইছিলো হিমেলের হাত ধরে হাঁটতে। সে বলল,
– তাহলে?
– চলো হোটেলে যাই।
– হোটেলে যেয়ে তো তুমি এক জায়গায় আমি আরেক জায়গায়।
– এক জায়গাতেই যাই চলো।
– হেয়ালি করো না হিমেল। কি বলতে চাইছো সোজাসুজি বলো।
– ঘণ্টা দুয়েকের জন্য একটা রুম নিই চলো।
বি-স্ফো-রিত চোখে তাকালো রূপা। আলো না থাকলেও হিমেল সম্ভবত সেই দৃষ্টি বুঝতে পারলো।
– এভাবে তাকানোর কি আছে?
– তুমি এসব কি বলছ হিমেল?
– অস্বাভাবিক কিছু বলিনি। একটু আলাদা টাইম স্পেন্ড করতে চাইছি ব্যস।
– আমরা এখনো বিয়ে করিনি।
– উফ! আবার বিয়ে! এক রুমে বসে একটু গল্প করব তাতেও তোমার বিয়ে করা লাগবে? তুমি কোনো ছেলের সাথে কথা বলতে চাইলেই কি তাদের সাথে বিয়ে করো নাকি?
– আমি কারো সাথে দুই ঘণ্টা হোটেল রুমে আটকা থাকতে চাই না হিমেল। তুমি যেটা ভাবছো বিয়ের আগে সেটা কখনোই হবে না। কখনোই না।
রূপার কণ্ঠে চাপা আক্রোশ ছিলো। সেটা টের পেলো হিমেল। তাই রূপার চলে যাওয়া আর আটকালো না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রূপার প্রস্থানের দিকে।
• • • • • •
ঘুম থেকে চোখ মেলে ফাহাদকে ডিভানে পেলো দীপ্তি। ঘুমন্ত মানুষকে দেখতে নিষ্পাপ লাগে। তবে ফাহাদকে এই মুহূর্তে বিরক্ত লাগলো দীপ্তির কাছে। ফাহাদের সাথে তার মন মানসিকতা কোনোভাবেই মেলে না। ফাহাদ অনেক চেষ্টা করে মানিয়ে নিতে। ততোটা না করলেও দীপ্তি চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ধৈর্য ধরে থাকতে পারেনি। মায়ের কাছে থাকার সময় বাবা বারবার করে বলে দিয়েছে যেনো একটু মানিয়ে নেয়। মাও কম বলেননি। কিন্তু বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান হিসেবে ছোটো থেকেই আশকারা একটু বেশি পেয়েছে। যেকোনো কাজ নিজের মতো করতে, নিজের মত প্রতিষ্ঠা করে সে অভ্যস্ত। তাই চেষ্টা করেও ফাহাদের সাথে মিলিয়ে উঠতে পারছে না।আজকাল ওকে আরো বেশি অসহ্য লাগতে শুরু করেছে। কাল রাতের জন্যেও তার কোনো অনুশোচনা হলো না।
ফ্রেশ হয়ে এসে কর্কশ কণ্ঠে ফাহাদকে ডাকলো দীপ্তি।
– এই ফাহাদ! ওঠো!
ফাহাদের ঘুম গাঢ়। সহজে ভাঙ্গে না। বেশ কয়েকবার ডেকে রেগে গেলো দীপ্তি। সেন্টার টেবিলে থাকা গ্লাস ভর্তি পানি ছুড়ে দিলো ফাহাদের মুখে। ধপ করে উঠে বসলো ফাহাদ। কিছুক্ষণ সে কিছু বুঝতে পারলো না। তবে তাকে বোঝানোর দায়িত্ব নিয়েছে দীপ্তির কর্কশ কণ্ঠ।
– এখানে কি পড়ে করে ঘুমানোর জন্য এসেছো? সেজন্য এসে থাকলে তুমি আজই চলে যাবে। নিজেতো ঘুরছো না আমার ঘোরার আনন্দকেও মাটি চাপা দিচ্ছো।
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ফাহাদ। ঠিক এই কথাগুলোই সে কাল রাতে বলতে পারতো। তার না বলা কথা দীপ্তি বলে দিলো। এই নাহলে স্ত্রী!
পুরোটা দিন তারা ঘুরল। পাশাপশি কিন্তু অচেনা মানুষের মতো। ফাহাদ অনুভব করলো গায়ে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার সাথেও এক আলোকবর্ষ দূরত্ব থাকতে পারে। সেই দূরত্ব মিটিয়ে তার মন পর্যন্ত যাওয়ার কোনো যান কি এই পৃথিবীতে আছে? ফাহাদ জানে না।
চলমান।