প্রিয় নিবেদিতা পর্ব-১৬

0
182

#প্রিয়_নিবেদিতা🖤
#লেখিকাঃ #ইশা_আহমেদ
#পর্ব_১৬

অন্ধকার রুম। জানলা দরজা আটকানো রুমটার। দক্ষিণ দিকের একটা জানালা হালকা খোলা সেখান থেকে দক্ষিণা হাওয়া প্রবেশ করছে রুমে। বাইরে আকাশে ঘন কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে। স্নিগ্ধার হৃদয়ে যেমন দুঃখের আনাগোনা আকাশের ও বুঝি দুঃখ হয়েছে। স্নিগ্ধা হাঁটুতে মাথা রেখে নিস্প্রভ দৃষ্টিতে জানার ফাঁকা দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আঁখি জোড়ায় অশ্রুকণা চিকচিক করছে। চুলগুলো অযত্নে পিঠ ছাড়িয়ে পরে আছে। মলিন মুখনায় বিষাদের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। স্নিগ্ধা বিড়বিড় করে বলল,,

“আমি তোকে এক আকাশ সম ভালোবাসি ধূসর। তবে আমার কোনো হলি না। দেখ তোকে জানানোর সুযোগটাও পেলাম না কত ভালোবাসি আমি তোরে। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। হৃদয়খানা বাজে ভাবে পুড়ছে। কেনো বাসলাম ভালো আমি তোকে। বাসলামই যখন তখন তুই কেনো বাসলি না আমায় ভালো। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে ধূসর। তোর হৃদয়ে অন্য কোনো নারীর বসবাস এটা মেনে নেওয়া ভীষণ যন্ত্রণা দায়ক।”

স্নিগ্ধা থামলো। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। তিন দিন ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না সে। কি করবে ভেতর পুড়ছে। বড্ড পুড়ছে। অন্য কারো সাথে নিজের ভালোবাসার মানুষকে সহ্য সে করতে পারছে না। ধূসর অন্য কারো এটা ভাবতেই তার অসহ্য লাগছে। নিজেকে শেষ করার ক্ষমতা বা সাহস তার নেই।স্নিগ্ধার বাবা আজমল হোসেন বেশ চিন্তিত মেয়ের অবস্থা নিয়ে।
স্নিগ্ধার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তিনদিন ধরে এক রুমে নিজেকে বন্ধ করে রেখেছে। তিনি দরজায় আঘাত করলেন সশব্দে। স্নিগ্ধা চমকে উঠলো। বাবার গলার আওয়াজ ভেসে আসছে দরজার অপর পাশ থেকে। স্নিগ্ধা এলোমেলো পায়ে গিয়ে দরজা খুললো। আজমল হোসেন মেয়ের অবস্থা দেখে থমকালেন।

তিনটা দিন মেয়ে তার সামনে আসেনি। সে ব্যবসার কাজে ব্যস্ত ছিলো বোধহয় খুব একটা খেয়াল রাখতে পারেনি। তবে তার আদরের মেয়ের এ কি অবস্থা। স্নিগ্ধা পরে যেতে নিলে তিনি দ্রুত ধরে ফেলেন মেয়েকে। দ্রুত ধরে বিছানায় নিয়ে বসান। এরপর মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন,,,
“কি হয়েছে আম্মু বল আমাকে?”

“আব্বু আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। হৃদয় পুড়ছে আব্বু। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আমি সহ্য করতে পারছি না আব্বু কিছু”

“কি হয়েছে মা বল আমায়”

“আব্বু আমার ভালোবাসার মানুষ অন্যকারো হয়ে গিয়েছে। বিয়ে করেছে সে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। সে কেনো আমায় ভালোবাসলো না। আমি কেনো তাকে জানানোর সুযোগ পেলাম না আব্বু বলো তো। সে আমায় ভালোবাসলে খুব কি ক্ষতি হতো। সে এখন অন্য নারীর এটা ভাবতেই অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে আমার”

আজমল হোসেন থমকালেন। মেয়ের কষ্ট সহ্য হচ্ছে না। মেয়ের হাহাকার তাকে বড্ড কষ্ট দিচ্ছে। তবে এখানে তো কিছু করার নেই। কারণ বিয়ে হয়েছে সেই ছেলেটির। আর ভালোবাসা কখনোই জোর করে হয় না। আজমল হোসেন মেয়েকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করলেন। তবে স্নিগ্ধা নিজেকে শান্ত করতে ব্যর্থ হলো। চাপা আর্তনাদ করতে লাগলো বাবার শার্ট খামছে। আজমল হোসেনের চোখের কোনে অশ্রুকণা দেখা গেলো। মেয়ের কষ্ট কম করতে বলল,,,

“আম্মু তুমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমাও। কিছু হয়নি আম্মু। কিছু না। আমি আছি তো। তোমার আব্বু তোমার পাশে আছে তো”

কি হলো স্নিগ্ধার কে জানে! তবে সে চুপ হয়ে গেলো। আজমল হোসেন দেখলেন মেয়ের চোখ বন্ধ। সে মেয়েকে শুইয়ে দিলেন সযত্নে বিছানায়। এক দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। মেয়ের মলিন মুখ খানা দেখে কষ্টে তার বুক ফেটে যাচ্ছে। তবে কিছু করতে পারছে না। তার কিছু করার নেই। কি করবে সে! ছেলে বিবাহিত তা না হলে সে হাতে পায়ে ধরতো না হয়। মেয়ের সুখের জন্য এটুকু সে করতেই পারতো।

অরিন আর ধূসরের বিয়ের পঞ্চম দিন। অরিন বাড়িতে আজ। শুক্রবার বিধায়। এই একটা দিনই সে বাড়িতে থাকার সময় পায়। নিজের রুমে শুয়ে আছে। আকাশে ঘন কালো মেঘ। জানালার কাছে চেয়ার নিয়ে বসে আছে। শীতল হাওয়া তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে তার। সে বিবাহিত। পাঁচ দিন এতো ব্যস্ত ছিলো যে ধূসরের সাথে ঠিকমতো কথা বলার ও সুযোগ পায়নি। আজ একটু বের হবে ভেবেছিলো তবে আকাশের যে অবস্থা মনে তো হয় না আজ আর বেরোতে পারবে। তবে দুঃখ নেই তার তাতে।

সে এখন একান্ত ধূসরের। ধূসর তার ব্যক্তিগত পুরুষ। শুধু মাত্র তার। কি ভীষণ সুন্দর ভালোবাসা! ভালোবাসা ভয়ংকর সুন্দর। অনেক বেশি সুন্দর দু’জন দু’জন মানুষকে ভালোবাসলে, পেয়ে গেলো। ভালোবাসা সুন্দর তবে সবার ক্ষেত্রে নয়। অরিনের ভাবনার মাঝে মুঠোফোনটা শব্দ করে বেজে উঠলো। অরিন চমকে গেলো। ভয় পেয়েছে হুট করে শব্দ হওয়ায়। নিজেকে ধাতস্থ করে ফোনটা তুললো। স্ক্রনি জ্বলজ্বল করছে রুষ্ট পুরুষ নামটা। রুষ্ট পুরুষ নামটা দেখতেই ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা দেখা গেলো। অরিন মিষ্টি হেসে রিসিভ করলো।

“ নিবেদিতা কি করছো?”

“আকাশ দেখছি রুষ্ট পুরুষ। আপনি কি জানেন আজ আবহাওয়াটা অনেক সুন্দর”

ধূসর মন খারাপ করে বলল,,
“আবহাওয়াটা তো বলে দিচ্ছে বউকে কাছে পেতে, একটু আদর করতে। তবে বউ তো কাছে নেই। বিবাহিত হয়েও সিঙ্গেলদের মতো থাকতে হচ্ছে”

অরিন এবার শব্দ করে হেসে ফেললো। ধূসর মুগ্ধ হলো। প্রিয় নারীর হাসির শব্দ ও বোধহয় খুব মিষ্টি। অরিন হাসতে হাসতে বলল,,,
“রুষ্ট পুরুষ আপনি কি বলছেন এগুলো আপনি। বিবাহিত হয়েও সিঙ্গেল?”

ধূসর রাগ করার ভান করে বলল,,,“নিবেদিতা মজা নিয়ো না। সত্যিই তো আমি বিবাহিত হয়েও সিঙ্গেল এর মতো বসবাস করছি। বউ দূরে রেখে”

অরিন মজা করে বলল,,
“আচ্ছা তাহলে আরেকটা বিয়ে করাই আপনাকে।”

ধূসর বিরক্ত হয়ে বলল,,“আমার অন্য কাউকে লাগবে না। অরিন ওয়াসিনাতকে লাগবে এবং সে আমার বউ ও। আমার তো তাকে একটু জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে এই মুহুর্তে”

“একটু সবুর করুন সাহেব। অপেক্ষার ফল তো মিষ্টি হয় তাই না। অপেক্ষা করুন। আর এখন আমি তো আপনারই। আমায় হারানোর ভয় নেই তো”

“অপেক্ষায় তো করছি কবে আমার মিষ্টি বউটা আমার কাছে আসবে। কবে তাকে নিজের বকু নিয়ে থাকবো। কবে তার স্নিগ্ধ মুখ খানা দেখবো”

“দেখবেন সব হবে। আমি আপনারই, আর আপনারই থাকবো আজীবন। ভালোবাসি ধূসর সাহেব, একটু না অনেক বেশি।”

ধূসর শান্তি পেলো। সে ও মৃদু হেসে বলল,,
“আমিও তোমায় ভীষণ ভালোবাসি নিবেদিতা।”

দু’জন বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলো। ধূসর লজ্জা দিচ্ছিলো তার নিবেদিতাকে। নিবেদিতা ও তার রুষ্ট পুরুষের কথায় লজ্জায় লাল হচ্ছিল। ধূসর খুব হেসেছে তার নিবেদিতার কথায়। বোকা বউ তার। ধূসর নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান মনে করে। নাহয় সে কি নিবেদিতার মতো কাউকে নিজের বউ হিসাবে পায়। নিবেদিতা যে তার বউ এই অনেক। কাছে না হয় কিছু বছর পর পেলো।

সন্ধ্যা নেমেছে শহরে। বৃষ্টি হয়েছিলো দুপুরে। সে কি বৃষ্টি। একন বাইরে শীতল হাওয়া বইছে। রাহিয়া আজ হালকা সেজেছে। জাহিন কিছুক্ষণ বাদে পড়াতে আসবে তাকে। জাহিনকে দেখানোর জন্যই সেজেছে। যদিও কখনো জাহিন তার দিকে তাকায় না তবুও সে আজ সেজেছে। চোখে কাজল পরেছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। এতেই তাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। সে ঠিক করেছে সে কষ্ট পাবে না। জাহিনকে পাওয়ার চেষ্টা করবে। একটা চান্স পেয়েছে সে। সেই চান্স টা কিভাবে মিস করবে সে। সে জাহিনকে হারাতে হারাতেও হারায়নি। তবে এবার সে নিজের সব দিয়ে চেষ্টা করবে।

তার ভাবনার মাঝেই রুমে কেউ নক করে। রাহিয়া দরজা খুলতেই রাফাকে দেখলো। রাফা তাকে পড়ার রুমে যাওয়ার কথা বললো। রাহিয়া দ্রুত পড়ার রুমে চলে গেলো। জাহিন এসেছে তাহলে। রুমের সামনে আসতেই তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো। নিজেকে শান্ত করে প্রবেশ করলো। জাহিন বেশ বিব্রত হয় সেদিনের পর থেকে। কি একটা বাজে কান্ড ঘটিয়ে ফেললো সে। জানে রাহিয়া কিছু মনে করেনি তবুও তার নিজের কাছেই নিজে ভীষণ লজ্জিত। কি ভীষণ বাজে ঘটনা। সে অরিনকে ভুলে থাকার চেষ্টা চালাচ্ছে। কয়েকটা ইন্টারভিউ ও দিয়েছে মাঝে। টেকেনি তবে সে হাল ছাড়ছে না।

নিজেকে ব্যস্ত রাখছে। তার ভাবনার মাঝে রাহিয়া বলল,,,
“স্যার আপনি এখন ঠিক আছেন তো?”

রাহিয়ার এমন প্রশ্নে বেশ বিব্রত হলো জাহিন। কোনো মতে জবাব দিলো,,,“হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি”

#চলবে~