সুরেলা গল্প পর্ব-০১

0
313

#সুরেলা_গল্প ১
#AbiarMaria

আমার জীবনটা ঠিক সিনেমার মতো।

এখন বলবেন, গল্পে এরকমই হয়, সব সিনেমাটিক ভাবেই ঘটে!

না ভাই, এজন্য না। আমি আমার জীবনের যে গল্পটা বলবো, এটা সত্য। একদম বাড়িয়ে বলছি না কিন্তু! বাড়িয়ে বলে আমার কি কোনো লাভ আছে? গল্পের শুরুতেই প্রতিজ্ঞা করছি-
যাহা বলিব, সত্য বলিব। সত্য বৈ মিথ্যা বলিবো না।

গল্পে আসি এবার। ছোট্ট একটা সিনেমাটিক গল্প। গল্পের শুরুতে নায়িকা, মানে আমি কখনো ভাবতে পারিনি এটা সিনেমার মতো হবে।

তখন মাত্র নবম শ্রেণির ছাত্রী। আমার বান্ধবীরা সব কাঁধে পাঙ্খা লাগিয়ে উড়ে বেড়ানোর প্রেক্টিস করছে। আমিও তাদের দেখে দেখে উৎসাহী খুব। রাস্তায় কোনো ছেলে তাকালে মিটিমিটি হাসি। কাউকে এটেনশন দিতে দেখলে একটা আনন্দ লাগে। তার সাথে আরেকটু মশলা মাখিয়ে সে গল্প বান্ধবীদের কাছে বলে খিলখিল করে হাসি। গার্লস স্কুলে পড়ার সুবাদে সবাই মিলে বয়দের সাথে ক্যামিস্ট্রির ক্যামিক্যাল রিএকশন নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত।

ঠিক সেরকম এক রাতের কথা।

আমরা তখন থাকতাম পূর্ব রামপুরায়। আমাদের এলাকার রাস্তা খুব বেশি খারাপ না হলেও খুব ভালোও না। আশেপাশে পাঁচ তলার বেশি বিল্ডিং নেই। আমাদের বিল্ডিংটা চারতলা। ছাদে উঠলে বেশ আয়েশ করে বাতাস উপভোগ করা যায়। যেহেতু উড়ু উড়ু বয়স, আমি সুযোগ পেলেই বিকেলে ছাদে চলে যেতাম। এখনকার মতো আমরা সারাদিন মোবাইলে টিকটক আর ফেসবুকের রিলস দেখে সময় নষ্ট করতাম না। আমরা সময় নষ্ট করার কিছু অনন্য উপায় বের করে নিয়েছিলাম।

এসব জেনারেশন গ্যাপের গল্প থাক। মূল গল্পে আসি।

আমি ছাদে গেলে মাঝে মাঝে গিটারের টুংটাং আওয়াজ পেতাম। কিন্তু কোথা থেকে সে শব্দ আসতো, তা বের করতে পারতাম না। ইতিউতি উঁকি দিয়ে ছাদ গুলো পর্যবেক্ষণ করতাম। ছাদে বসে গিটারের তার ঠিক করা কোনো ছেলে নজরে পড়তো না। গিটারিস্টদের প্রতি আমাদের জেনারেশন এর প্রায় সব মেয়েদেরই বোধহয় দুর্বলতা ছিল।

সেই রাতে আমি বারান্দায় গিয়ে বসেছিলাম। আম্মু গিয়েচজে গ্রামে নানু বাড়ি, বড় আপু পরীক্ষার শেষে ফুপুর বাড়ি বেড়াতে গেছে। ফুপু থাকে সেগুনবাগিচায়। আপুর সমবয়সী ফুফাতো বোন আছে, তারা সবাই মিলে মজা করবে। আমি আটকে গেছি প্রেক্টিক্যাল পরীক্ষার জন্য। এক টানা প্রেক্টিক্যাল খাতায় লিখে রিলাক্স হতে বারান্দায় এসে বসেছিলাম।

তখন শরতকাল চলছে। আকাশে শুক্লপক্ষের চাঁদের সাথে টুকরো টুকরো তুলোর মতো মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাসে আমি চুল খুলে দিলাম। আজকে তেমন একটা গরম লাগছে না, অন্তত আমার বারান্দায় বসে না। আমি সেখানে বসে চোখ বুঁজে গিটারের টুংটাং এর সাথে একটা পুরুষালি কন্ঠও পেলাম।

“আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে,
তুমি আনমনে বসে আছো।
আকাশ পানে দৃষ্টি উদাস।
আমি তোমার জন্য এনে দেবো
মেঘ থেকে বৃষ্টির ঝিরিঝিরি হাওয়া,
সে হাওয়ায় ভেসে যাবে তুমি…”

আমার ভেতরে কি যেন নাড়া দিয়ে গেল। এ কি আমাকে নিয়ে গাইছে নাকি? আমাকে দেখতে পাচ্ছে? অদ্ভুত তো! কোথায় সে!

দ্রুত উঠেদাঁড়িয়ে আশেপাশে খুঁজলাম। কাউকেই চোখে পড়ছে না। কন্ঠটাও খুব কাছ থেকে আসছে না, আশেপাশের কোনো বিল্ডিং থেকে আসছে। আমি বুঝার চেষ্টা করলাম। পারলাম না। গানটা যেন বাতাসের মৃদুমন্দ তালে ভেসে ভেসে আমার কর্ণকুহরে বৃষ্টি বর্ষণ করছে।

আমি কন্ঠের মালিককে খোঁজা বাদ দিয়ে গান শুনতে লাগলাম মগ্ন হয়ে। গ্রিলে হেলান দিয়ে গ্রিল ঘেঁষে বসে পড়লাম।

গান শেষ হতে না হতেই আমার মাথায় এক দুষ্টু বুদ্ধি চাপলো। সময়ক্ষেপন না করে দ্রুত সেটা কাজে লাগালাম।

আমি জানি না কে কোথা থেকে গাইছে। কিন্তু যে গাইছে, তার কন্ঠ আমি শুনতে পাচ্ছি মানে সেও আমাকে শুনতে পাবে- এই নিশ্চিয়তা নিয়ে আমিও কন্ঠ উপরে তুলে গাইলাম,

“তুমি চাইলে বৃষ্টি
মেঘও ছিল রাজী,
অপেক্ষা শুধু বর্ষণের।
মাতাল হাওয়া বইছে,
দূরে পাখি গাইছে গান,
বৃষ্টি তোমার আহবান…”

আমার গান শেষ হওয়া পর্যন্ত ওই দিক থেকে কোনো শব্দ পেলাম না। ঐ ছেলে মনে হয় রেগে গেছে গো!

এখন?

চলবে…