#হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব৩২ [বিবাহ স্পেশাল (২)]
বধু বেশে লজ্জায় রঞ্জিত হওয়া মুখশ্রী নিয়ে বসে আছি আমার সেই কাঙ্খিত মানুষটির পাশে। আমার কোমল হাতটা এখনও তার শক্তপোক্ত পুরুষালি হাতের বাঁধনে আবদ্ধ হয়ে আছে। খানিক সময় বাদেই এই মানুষটার সাথে আজীবনের জন্য পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে যাব, ভাবতেই একরাশ রোমাঞ্চকর অনুভূতিতে শিউরে উঠছি আমি! কয়েক মুহূর্ত পূর্বে আদ্রিশের করা কর্মকান্ডে আমায় ভীষণ লজ্জায় পতিত হতে হয়েছিল!
..
কিছু মুহুর্তে পূর্বে,,,
আমায় দেখে হুট করে আদ্রিশ বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে খানিকটা চেঁচিয়ে বেশ উচ্ছ্বাসের সহিত বলে উঠল
-‘ মাশাআল্লাহ! আপনার সৌন্দর্য পূর্বের তুলনায় আরও বহুগুণে ঠিকরে পড়ছে যেন! ইশ আপনার দর্শন পাইয়া আমার যে হার্টবিট মিস হইবার উপক্রম হইয়া উঠিয়াছে! কার্ডিওলজিস্ট হয়ে শেষমেশ আমি-ই না আবার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে যাই!
আদ্রিশের এহেন বাক্যচয়নে উপস্থিত সকলে হো হো করে হেসে ওঠে। বাদ পড়েনি বাড়ির গুরুজনেরাও। সে ওতো ভালো সাধুরীতিতে কথা বলতে পারেনা তবে বউয়ের জন্য তো এতটুকু করাই যায়! আর এদিকে লজ্জায় আমার সর্বাঙ্গ প্রকম্পিত হতে থাকে। চরণ দুখানিও বাঁধ সাধে সামনে এগিয়ে যেতে! স্থির হয়ে তাই দাঁড়িয়ে পড়লাম এবার।
আদ্রিশ এবার বুকের বাঁ পাশটায় হাত ডলতে ডলতে, গেয়ে উঠল
-‘ “|বুক চিনচিন করছে হায়
মন তোমায় কাছে চায়|”
এতটুকু গেয়েই স্টেজের নিচে নেমে এলো আদ্রিশ। হাতে তার তাজা লাল টকটকে গোলাপ ফুলের বুঁকে! আমার একদম কাছাকাছি এসে, আমার একহাত নিজের হাতের বাঁধনে অতি সন্তর্পণে আগলে নেয়। আলতো করে ধরে আমার হাতে নিজের অধরজোড়া ছুঁইয়ে দিয়ে, হাঁটু মুড়ে আমার সামনে বসে পড়ে। গোলাপের বুঁকেটা আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল
-‘ জীবনেও তো কখনো প্রোপোজ করিনি। নিজের মনোভাবও সেভাবে প্রকাশ করিনি। কারণটা তুমি জানো। আমি অলটাইম চাইতাম আমরা দুজনেই ভালো একটা পজিশনে যাওয়ার পর এসব নিয়ে ভাববো। অ্যান্ড নাও আমরা দুজনেই একটা স্টেজে চলে এসেছি। অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ পূর্ণতা পেতে চলেছে আমাদের অন্তর্নিহিত প্রণয়ের! আর নয় অপেক্ষা, আর নয় লুকোচুরি। আজ তবে সবাইকে সাক্ষী রেখে বলেই ফেলি, “আই লাভ ইউ, আই রিয়েলি লাভ ইউ মাই কুইন!”
শেষোক্ত কথাগুলো উচ্চস্বরে বলে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল আমার পানে আদ্রিশ। হয়তো সে আমার উত্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে আমি এ মুহুর্তে উত্তর দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতে নেই! শুধু হাত বাড়িয়ে ফুলের বুঁকেটা সাদরে গ্রহণ করলাম। এতে আদ্রিশ অধরের কোণে লেপ্টে থাকা হাসির রেখা প্রশস্ত হয় আরও। হুট করেই উপর থেকে গোলাপের পাপড়ি পড়তে শুরু করল! আর সাথে সাথেই আমার পুরো কাজিনমহল হাত তালি দিতে দিতে সমস্বরে বলে উঠল
-‘ কংগ্রাচুলেশনস প্রিয় মেহাদ্রিশ! নতুন জীবনে তোমরা অনেক অনেক সুখি হও! শুভকামনা রইল।
এসব কান্ডকারখানা দেখে উপর উপর লজ্জা পেলেও, মনে মনে বেজায় খুশিই হলাম আমি। কেননা আমার স্বপ্নগুলো সব একে একে পূরণ হতে চলেছে যে!
আদ্রিশ এবার তার একটা হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠল
-‘ “| “ভালোবাসি” বলে দাও আমায়
বলে দাও, “হ্যাঁ, সব কবুল”
তুমি শুধু আমারই হবে
যদি করো মিষ্টি এই ভুল
হাতে হাত রাখতে পারো
সন্ধি আঙুলে আঙুল
ভালোবাসা বাড়াতে আরও
হৃদয় ভীষণ ব্যাকুল|”
পাশ থেকে আদ্রিশের বন্ধুরা বলে উঠল, ” ভাবি, ‘ভালোবাসি’ কথাটা বলেই দেন না!” আমি এবার সত্যিই ভীষণ লজ্জায় পরে গেলাম। ফলে মাথা নিচু করে নিলাম। আদ্রিশ হয়তো বুঝল আমার ব্যাপারটা তাই আমার কম্পনরত হাতখানা আগলে নিয়ে সবার সামনে দিয়ে এগিয়ে যায় স্টেজের দিকে। আর তখনই আমার গুণধর কাজিনগণ সাথে বন্ধুবান্ধবরাও একই সুরে সুর মিলিয়ে গেয়ে উঠল
-‘ “|সম্পর্ক বদলে গেলো একটি পলকে
কে আপন কে যে পর হলো রে
বধু বেশে কন্যা যখন এলো রে
যেন খুশির বন্যা বয়ে গেলো রে|”
এতোটুকু গেয়েই সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল। এই সবই ক্যামেরাবন্দি করতে একটুও ভুল করেনি ক্যামেরাম্যান।
সবার মধ্য থেকে এবার রিশতা কিছুটা রসিকতা করে বলে উঠল
-‘ চাচাতো ভাইবোন থেকে চাচাতো বর বউ হয়ে যাওয়ার যে ব্যাপারটা!
রিশতার তালে তাল মিলিয়ে অরনীও বলল
-‘ ভাইয়া ক্যান বি ছাইয়া ছাইয়া!
-‘ ওরা নাকি একে অপরকে ভাইবোনের মতো দেখত!
বিদ্রুপ করে উক্ত কথাটি বলে উঠল আমারই এক কাজিন সাবিহা আপু। আদ্রিশ এবার সোফায় বসতে বসতে তার কথার প্রেক্ষিতে জবাব দিল
-‘ প্রথমে চাচাতো বোনের নজরেই দেখতাম! আর এখন বউ!
আমি এবার আদ্রিশের দিকে কিছুটা ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিসিয়ে বললাম
-‘ চাচাতো বোন কথাটা কখনো উল্লেখ করেননি আপনি!
-‘ আপন বোন কথাটাও তো কখনো উচ্চারণ করিনি আমি!
সরু চোখে চেয়ে আমার কথার পিঠে উক্ত কথাটি বলল আদ্রিশ। বুঝলাম যা-ই বলি কেন ভুংভাং বলে চুপ করিয়ে দিবেন, অগত্যা তাই আর কথা বাড়ালাম না আমি। সে এবার আমার আঙুলের ভাঁজে নিজের হাতের আঙুল গলিয়ে শক্ত করে চেপে ধরে। হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই কন্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে সে বলল
-‘ একবার যখন নিজের সাথে তোমাকে জড়িয়েই ফেলেছি তখন আর আমি হতে এতো সহজে নিস্তার মিলবে না তোমার! তাই হাত ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই কোনো। ফলাফল ঐ শূন্যই।
এতোক্ষণ যাবত এসবই ভাবছিলাম, হুট করে সবার অগোচরে আদ্রিশ আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে আমায় নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আকস্মিক এহেন ঘটনায় চমকে উঠলাম আমি। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে কপট রাগ দেখিয়ে বললাম
-‘ সবার সামনে কিসব অসভ্যতামি করছেন!
আমার কথার পিঠে দায়সারা ভাব নিয়ে সে বলল
-‘ নিজের বউকে জড়িয়ে ধরেছি, তাতে কার কি!
-‘ ইতর লোক একটা!
-‘ ইতরামির দেখেছো কি, সবে তো শুরু! আর হ্যাঁ, যদি সত্যিই ইতর হতাম তাহলে সবার সামনে কোলে তুলে নিতাম! শুধুমাত্র আমার বউ লজ্জা পাবে বিধায় আর এমন কিছু করিনি আমি।
ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে উক্ত কথাগুলো বলে থামল আদ্রিশ। আর আমি হা করে চেয়ে রইলাম। কে বলবে এমন ইনোসেন্ট ফেসের আড়ালে এই লোকটা চরম লেভেলের ইতর!
আমাদের কথার মাঝেই ক্যামেরাম্যান বলে উঠল
-‘ ম্যাম, সুন্দর করে একটা পোজ দিন তো! আপনাদের সুন্দর কয়েকটা কাপল ফটো তুলে দিই।
ক্যামেরাম্যানের কথামতো আমরা ঝগড়া থামিয়ে পোজ দিলাম। একে একে সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব এসে হাজির হয়। সবার সাথে হাসিমুখে ছবি তুললাম। আমার খালা, মামারাও এসেছেন সবাই। ওদিকে আদ্রিশের একমাত্র মামাও স্বপরিবারে হাজির হয়েছে। হুট মুহুর্তে বিয়ে, এছাড়াও তারা প্রবাসী হওয়ায় আসতে দেরি হয়েছে। আদ্রিশের একটাই মাত্র মামাতো বোন, তার ছ’বছরের একটা ছেলেও রয়েছে। ছেলেটা বেশ দূরন্ত!
সবার সাথে ছবি তোলার পরপরই দলবেঁধে হাজির হয় রিশতা, অরনী, আহির, আলভি ভাইয়া। আদ্রিশের পাশে রিশতা বসতে গেলেই, চোখ গরম করে তাকালাম আমি। এতেই রিশতার যা বোঝার তা বোঝা হয়ে যায়। কোনোরূপ ভনিতা ছাড়াই তাই চুপটি করে আমার পাশে এসে বসল। অন্যদিকে আমার পাশে আহির বসতে যাচ্ছিল এমন সময় আদ্রিশ এমনভাবে তাকিয়েছে যে ওর কলিজার পানি শুকিয়ে যায়। অগত্যা তাই আমার পাশে না বসে আদ্রিশের পাশে গিয়ে বসে পড়ে। ছবি তোলার পর, রিশতা আর আহির কথা বলার এক পর্যায়ে, রিশতা বলে উঠল
-‘ দুইটাই এক গোয়ালের গরু!
যা কর্ণগোচর হয়না আদ্রিশের। গম্ভীর গলায় তাই সুধায়
-‘ আমাদের দেখলে তোর গরু বলে মনে হয়!
হুট করে আদ্রিশের এমন কথায় থতমত খেয়ে যায় রিশতা। পেছন ফিরে তাই মেকি হেসে বলল
-‘ না না ভাইয়া, আপনারা দুজনেই খুব সুইট বেবি!
কথাটা বলেই দৌড়ে চলে যায় রিশতা। আর এদিকে এসব দেখে হেসে ফেললাম আমি। আমায় এমনভাবে হাসতে দেখে আদ্রিশ বলল
-‘ ওরা আমাদের গরু বলে চলে গেল, আর তুই দাঁত কেলিয়ে হাসছিস মেহু!
-‘ আরে ওরা আমায় না, তোমায় গরু বলেছে।
হাসতে হাসতে এতোটুকু বলে থামলাম আমি। আদ্রিশ আর ওসব ব্যপারে পাত্তা না দিয়ে এবার কিছুটা শীতল গলায় বলল
-‘ আমায় আগের মতোই তুমি করে ডাকবি। তুই আমায় আপনি করে ডাকলে, মনে হয় যেন আমি তোর পর কেউ হই। তখন খুব খারাপ লাগে আমার।
তার কথায় হাসি আপনাআপনিই থেমে যায় আমার। আড়াই বছর আগে সে চলে যাওয়ার পর থেকে তাকে আপনি বলেই ডাকি। এই আড়াই বছরে সে আর না হলে শতবার বলেছে এই কথাটা। কিন্তু আমি খোঁচা মারার জন্য ইচ্ছে করে আপনি করে বলতাম। কেন জানিনা এই আদ্রিশ ব্যাটাকে জ্বালাতে, এক অন্যরকম শান্তি অনুভূত হয় আমার!
এরই মাঝেই, কাজী এসে হাজির হন! তিনি এসেই আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেন। কবুল বলার সময়টাতে আদ্রিশ ঝড়ের বেগে কবুল বলেছিল আর আমি কিছুটা সময় নিয়ে থেমে থেমে বলেছিলাম।
অবশেষে তিন কবুলের মাধ্যমে আমরা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে গেলাম! আজ থেকে আমরা আর চাচাতো ভাইবোন নই, আমাদের মাঝে এক নতুন সম্পর্কের সৃষ্টি হয়েছে যার নাম স্বামী-স্ত্রী! আদ্রিশ এবার শক্ত করে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলল
-‘ শত প্রতীক্ষার অবসান ঘটল তবে। এবার তো আর কোনো বাঁধল রইল না।
বলেই আশপাশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে টুপ করে আমার গালে চু’মু খেয়ে বসল আদ্রিশ! আচমকা ওর এহেন আচরণে চোখ বড় বড় করে চাইলাম আমি। সে এবার দুষ্ট হেসে ফিসফিস করে বলে ফেলল
-‘ এমন করে তাকিও না জান। তুমি এভাবে তাকালে তো অবাধ্য ইচ্ছেরা মনে আতিপাতি শুরু করে দেয়। আমি জানি তুমিও ভীষণ ব্যাকুল, তবে আর একটু সবুর করো। একেবারে বাসরঘরেই নাহয়..। বাকিটা তুমি সামলে নিতে পারবে তো বউ?🧛🏻
শেষোক্ত কথাটা ভ্রু নাচিয়ে বলল আদ্রিশ। ওর এমন কথায় আমার মাথাটা কেমন যেন ঘুরে উঠল। লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় আমার। চোখ বুঁজে তাই আদ্রিশের বুকে মাথাটা এলিয়ে দিলাম আমি।
আচমকা নিজের বুকের উপর মেহরুনকে এভাবে ঢুলে পড়তে দেখে বোকা বনে যায় আদ্রিশ। সে ধরেই নিয়েছিল তার বউ নির্ঘাত তার এমন কথা শুনে মূর্ছা গেছে। মেহরুনের মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে বলে উঠল
-‘ যাব্বাবা! এখনো তো তেমন কিছুই হলো না, তাতেই এমন মূর্ছা গেল মেয়েটা?
পূর্বের ন্যায় চোখ বুঁজে রেখে আমি এবার দাঁতে দাঁত পিষে বললাম
-‘ এখনও মূর্ছা যাইনি তবে আপনার এমন অসভ্যমার্কা কথা শুনলে পটল তুলতে আর বেশি সময় লাগবে না আমার!
#চলবে~
#হৃদয়ে_লাগিল_দোলা 🫶
#নুসাইবা_জান্নাত_আরহা
#পর্ব৩৩
#বোনাস_পর্ব
[পর্বটা একটু রোমান্টিক হতে পারে। তাই নিজ দায়িত্বে পড়বেন]
বিয়ের সাঁজ পোশাক ছেড়ে নিজের কক্ষে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। সারাদিনে শরীরের উপর দিয়ে বড্ড ধকল গেছে। ভ্যাপসা গরমে একেবারে নাজেহাল অবস্থা হয়েছে। এদিকে উপরি পাওনা স্বরূপ আমার কক্ষের এসিটাও নষ্ট হতে হলো! এই বিয়ে বিয়ে করে গতরাতে না ঠিকমতো ঘুম হয়েছে আর না সারাদিন সেভাবে খাওয়া দাওয়াও করা হয়েছে। সব মিলিয়ে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ঘিরে ফেলেছে আমায়।
আমার ক্লান্তি লাগছিল বলে একটু আগে অরনী এসে ঠান্ডা শরবত দিয়ে যায়। এখন ওরা ব্যস্ত আমাদের বাসর ঘর সাঁজাতে। এজন্য আদ্রিশের কক্ষে না গিয়ে তাই নিজের কক্ষে চলে এলাম। ভারী ভারী স্বর্ণের অলংকার খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে, বেনারসি গায়ে জড়িয়েই শুয়ে পড়লাম। মাথার উপর সিলিং ফ্যান চলছে, তবুও গরম কমার নাম নেই যেন! বিরক্ত হয়ে তাই গায়ের উপর থেকে শাড়ির আঁচল খানিকটা সরিয়ে ফেললাম। শরবতটা খাওয়ার পর অবশ্য একটু ভালো লাগছিল!
শুনেছি প্রতিটা মেয়েই নাকি বিদায়বেলায় তাদের মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে প্রচুর কান্নাকাটি করে। এরপর সম্পূর্ণ অপরিচিত স্থান – শশুরবাড়িতে গিয়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয় আর সকলের মন জুগিয়ে চলতে হয়! অরনীর ক্ষেত্রেও তেমনটা ঘটেছিল। ওর বিয়েতে ওতো রিচুয়ান্স মেইনটেইন করা হয়নি। অনেকটা হুট করেই বিয়েটা হয়েছিল ওর। এখনো মনে পড়ে, আমাদের ছেড়ে যাওয়ার সময় সবাইকে জড়িয়ে ধরে ভীষন কান্নাকাটি করেছিল অরনী। সেদিন সন্তর্পণে সামলে নিয়েছিল আরাভ ভাইয়া।
যদিও আমার বেলায় এর ব্যতিক্রমটাই ঘটেছে। আমায় আর কোথাও যেতেও হয়নি আবার এমন কান্নাকাটিও করতে হয়নি। আগে ছিলাম এই বাড়ির নয়নের মণি আর আজ থেকে এই বাড়ির বউরাণি!
আচমকা মৃদু আওয়াজ তুলে মোবাইলের রিংটোন বেজে ওঠায় আমার ভাবনার সুঁতোয় টান পড়ে। ক্লান্ত ভঙ্গিতে কোনোরকমে উঠে বসে, বেড সাইড টেবিল থেকে হাতরিয়ে তুলে নিলাম মোবাইলটা। ফোনের স্ক্রিন সামনে ধরতেই দেখলাম, আমার ছোটবেলার কিছু বান্ধবীরা ওয়াটস্ অ্যাপে কল দিয়েছে। বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমানোর কারণে ওতো দূর থেকে ওদের পক্ষে আমার বিয়েতে এটেন্ড করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
ওদের সাথে আলাপচারিতার এক পর্যায়ে হঠাৎ কারো চিৎকার ভেসে আসতেই কল কেটে দিয়ে চকিত সামনে ফিরে চাইলাম আমি। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আদ্রিশ চিৎকার করে চোখ বন্ধ করে বলে উঠল
-‘ আরে বউ, আমাদের বিয়েটা হয়ে পারেনি এখনই তুমি আমায় সিডিইউস করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছো! বাহ্ তুমি দেখি আমার চাইতো বেশি ফার্স্ট!
আদ্রিশ হতে এমন অশোভনীয় কথায় নিজের দিকে এক পলক তাকিয়ে আঁতকে উঠলাম। আয়হায়, গরম লাগছিল বলে শাড়ির আঁচল খানিকটা সরিয়েছিলাম কিন্তু এখন দেখি পুরোটাই সরে গেছে! ইশ কি লজ্জা! তড়িঘড়ি করে শাড়ির আঁচলটা নিজের গায়ে জড়িয়ে নিলাম তাই। আদ্রিশের দিকে একবার অসহায় চাহনিতে দৃষ্টিপাত করে আবারও মাথা নত করে ফেললাম। আর মনে মনে অরনীকে কয়েকদফা ঝারলাম। কেননা যাওয়ার আগে বারবার করে ওকে বলে দিয়েছি, দরজায় যেন লক করে যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা!
এদিকে মেহরুনের শরীরটা খারাপ লাগছিল বলে সবার সাথে বসে খেতে পারেনি আর। এজন্যই তো আদ্রিশও না খেয়ে একেবারে তার আর তার বউয়ের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিল, দুজন মিলে একসাথে খাবে বলে! কিন্তু এসেই যে মেহরুনকে এমন অর্ধ উন্মুক্ত অবস্থায় দেখতে হবে তা কখনো ভাবেনি আদ্রিশ। তাই তো নিজেকে দমিয়ে না রেখে উক্ত কথাটা অকপটেই বলেই ফেলল। আজকাল কেন জানিনা তার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে মন চায়না!
বউকে এমন অবস্থায় দেখলে কার মাথা ঠিক থাকে! তবে আদ্রিশ নিজেকে সামলে নেয় কেননা বউ তার সারাদিন খায়নি, বেচারিকে তো এখন খাওয়াতে হবে নইলে তো অসুস্থ হয়ে পড়বে! তাই ওসব অবাধ্য চিন্তাগুলোকে দূরে ঠেলে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে আদ্রিশ শান্ত গলায় বলে উঠল
-‘ আমার ঘরে না গিয়ে তুমি এখানে কেন?
তখনের ওমন ঘটনার জন্য আমি এখনো ইতস্তত বোধ করছি। তবুও আদ্রিশের দিকে না তাকিয়েই মাথা নত রেখে জবাব দিলাম
-‘ আপনার ঘর সাজাচ্ছিল ওরা। আর আমার খারাপ লাগছিল তাই এখানেই চলে এলাম।
-‘ আবার আপনি! সারাজীবনেও আপনি করে বলিসনি আর এখন নতুন নতুন ঢং করছিস! খবরদার আমায় আপনি করে না বলে তুমি করে বলবি!
রাগ করে এতোটুকু বলে আমার পাশে এসে বসে পড়ল আদ্রিশ। খাবারের প্লেটটা হাতে নিয়ে এক লোকমা খাবার মুখে তুলে দিল আমার মুখে। সত্যিই ভীষণ খিদে পেয়েছিল তাই আমিও আর কোন কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলাম। অর্ধেক খাবার খাওয়া হতেই আমার টনক নড়ে, আদ্রিশও তো খায়নি। আমি তাই প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম
-‘ এই তুমি তো খাওনি!
-‘ তুমি খেলেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে!
আমার কথার পিঠে একগাল হেসে উক্ত কথাটা বলল আদ্রিশ। তার কথায় পাত্তা না দিয়ে, উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে, প্লেট হাতে নিয়ে খাইয়ে দিলাম তাকে। সে খাবার খেতে খেতে বলে উঠল
-‘ আহ্ কি অপূর্ব স্বাদ!
-‘ অপূর্ব তো হবেই। নামকরা বাবুর্চির রান্না এটা, অপূর্ব না লেগে যাবে কোথায়?
-‘ আরে তা তো। তবে বউয়ের হাতে খাবার খাচ্ছি বলে রান্নার স্বাদ বহুগুণে বেড়ে গেছে!
আহ্লাদে গদগদ হয়ে কথাটা বলে উঠল আদ্রিশ। আর আমি ভেংচি কেটে বললাম, ‘যতসব ঢং!’
খাওয়া দাওয়া শেষে প্লেটগুলো টেবিলের উপর রেখে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। আদ্রিশ এসে এবার বলল
-‘ চলো যাই।
-‘ কোথায়?
-‘ কোথায় আবার আমাদের বাসর ঘরে। আজ না আমাদের বাসর রাত!
দুষ্ট হেসে কথাগুলো বলে, আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কক্ষে চলে এলো আদ্রিশ।
আমার কাজিনরা এখানেই ছিল এতোক্ষণ। আমাদের আসতে দেখে তারা মিটিমিটি হেসে কেটে পড়ে। তবে যাওয়ার আগে রিশতা আমায় ফিসফিসিয়ে বলে যায়
-‘ কংগ্রাচুলেশনস এণ্ড ইনজয় দিস মোমেন্ট! আর হ্যাঁ কাল সকালে তোর এক্সপেরিয়েন্সটা শেয়ার করতে ভুলিস না যেন!
এতোটুকু বলেই দৌড়ে চলে যায় রিশতা। ওর যাওয়ার পানে কটমট করে চেয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। কি অসভ্য মেয়ে রে বাবা!
ওরা চলে যেতেই দরজা আঁটকে দেয় আদ্রিশ। এরপর মাতাল করা এক চাহনি নিয়ে একপা একপা করে এগিয়ে এলো আমার পানে। তার অধরের কোণে লেপ্টে আছে দুষ্ট হাসি। আড়ষ্ট গলায় সে বলে উঠল
-‘ ইশ, ছোট থেকে আমার বউটাকে একপ্রকার কোলে পিঠেই মানুষ করেছি বলা চলে! আমার সেই ছোট্ট মেহুপাখি আজ আমার বউরাণি! আসো বউ কাছে এসো, একটু আদর করে দেই তোমায়!
আদ্রিশের এহেন বাক্যচয়নে লজ্জা পেয়ে বসলাম এবার। তাই পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে পড়লাম আমি। এরই মাঝে আমায় পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল সে। ইতোমধ্যে শাড়ির আঁচল ভেদ করে তার বলিষ্ঠ হাত জোড়া গভীর স্পর্শে আমার পেটের ওপর বিচরণ করতে থাকে। ঘটনার এমন আকস্মিকতায় এক অজানা অদ্ভুত শিহরণে শিউরে উঠলাম আমি। এভাবে সে আমায় কখনোই স্পর্শ করেনি! ফলে সর্বাঙ্গ কেঁপে ওঠে আমার। মনের কোণে বয়ে যায় এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির! আমি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই সে আরো জোড়ালোভাবে আঁকড়ে ধরে। আমার ঘাড়ে তার অধরজোড়া গভীরভাবে ছুঁইয়ে দিয়ে ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে উঠল
-‘ ভালোবাসি বউপাখি! এদিনটারই অপেক্ষায় ছিলাম এতোদিন!
বলেই আমায় ছেড়ে এবার নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয় আদ্রিশ। আমার চিবুকে হাত রেখে হুট করে বলে উঠল
-‘ আচ্ছা ভালো কথা, খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়া উত্তম! তো আমার মিষ্টি কই?
-‘ ফ্রিজেই আছে। ওখান থেকে খেয়ে নিন না!
কোনোমতে এতোটুকু বলে থামলাম। আদ্রিশ আমার ওষ্ঠাধরে স্লাইড করতে করতে বলল
-‘ আমি তো ভিন্ন রকমের মিষ্টির কথা বলছিলাম!
আমি এতোক্ষণ তার দিকে না তাকালেও এবার অবাক হয়ে তার পানে চাইলেন। সে আবারও দুষ্ট হেসে ফিসফিস করে বলল
-‘ কি বুঝলে না তো! দাঁড়াও বুঝিয়ে দেই। ওয়েট!
বলেই আবারও শক্ত করে কোমড় জড়িয়ে ধরে তার প্রেয়সীর। এরপরেই তার অধরের ভাঁজে নিজের ওষ্ঠাধর ডুবিয়ে দেয় আদ্রিশ।
কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে মুচকি হেসে সে বলল
-‘ একজন বিবাহিত পুরুষের জন্য সবচেয়ে উত্তম ভিটামিন হচ্ছে তার স্ত্রীর এই ঠোঁট! আমার এই ভিটামিনটার বড্ড অভাব ছিল আর আজ তা পূরণ হলো! বুঝলে বউ তুমি আমায় নিয়ম করে প্রতিদিন চু’মু খাবে নয়তো আমিই আমার অধিকার আদায় করে নিব কিন্তু!
এতোটুকু বলে আবারও কিছু বলার পূর্বেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তার প্রেয়সী। সে নিজের শরীরের সমস্ত ভর এখন আদ্রিশের উপর ছেড়ে দিয়েছে ইতোমধ্যে। প্রতিনিয়ত তার হৃদয়ে তোলপাড় বয়ে যায়, আর নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। আদ্রিশ বুঝে যায় তার বউয়ের সম্মতি। শব্দ করে হেসে তাই কোলে তুলে নেয় বউকে। শত অপেক্ষার অবশেষে আজ তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেল তবে!
#চলবে ~