দর্পণ পর্ব-৯+১০

0
209

#দর্পণ
#নূপুর_ ইসলাম
#পর্ব- ০৯

দীপা আস্তে আস্তে পা ফেললো। তাঁর পা ফোলা। পানি এসেছে। হাঁটতে অসুবিধা হয়। তবুও তাঁর ভালো লাগছে। অনেকদিন পরে সে এভাবে বাইরে আসলো। হামিদা বানু অবশ্য রাগারাগি করেছেন। পেট নিয়ে বউ মানুষ এলাকা ঘুরবে তিনি মানতে পারলেন না। তাঁর মধ্যে নজর টজরের ব্যাপার আছে। তাঁর ধারণা পোয়াতি মেয়েমানুষ ঘর থেকে বেরুলেই নজর লাগবে।

তিনি শুনেই রেগে ছটফট করতে লাগলেন। উমর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কতোক্ষণ দাদীর সেই ছটফটানি দেখলো। তারপর দাদীকে ধরে বসিয়ে আস্তে করে বললো,— টেনশন করো না। সাথে আমিও যাচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসবো।

হামিদা বানুর ছটফটানি কমলেও। রাগ কমলো না। দিলশাদ কে তো কিছু বলতে পারলো না। সুমির গালে ঠাস করে থাপ্পড় মেরে বসলেন । মেরে ভিতরে চলে গেলেন।
থাপ্পড়ে অবশ্য সুমির কিছু এলো গেলো না। তাঁদের গুষ্টির সবাই কম বেশি এই বুড়ির হাতে মার খেয়েছে এবং খাচ্ছে। এই আর কি। সে দিলশাদের দিকে তাকালো। দিলশাদ মুখ টিপে হাসছে। এই বুড়ির তেজের প্রশংসা করতেই হবে।

উমর আস্তে আস্তে দীপার পাশে পাশে হাঁটছে। দীপার হাঁটা দেখে উমরের একটু ভয় ভয়ই করছে। পরে টরে না যায়। সে একবার হাত ধরতে গিয়েছিলো। দীপা আস্তে করে হাত সরিয়ে নিয়েছে। তাই দ্বিতীয় বার আর সাহস হয়নি।

সে হাঁটতে হাঁটতেই দীপার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাঁকালো! দীপা আজ অনেকদিন পরে শাড়ি পরেছে। সুতিরশাড়ি! বেগুনী রং! দেখতে খুব মিষ্টি লাগছে! বিয়ের পরে অবশ্য সবসময় শাড়িই পরতো। বউ মানুষরা থ্রিপিস পরে বাড়িতে ঢং ঢং করে ঘুরবে দাদীর একদম অপছন্দ। তাই শাড়িই পরতো। বিয়ের পরে কোন কিছুতেই সে কখনও তার নিজের মর্জি দেখায়নি। যে যা বলেছে পতুলের মতো শুধু করে গেছে। তবে কনসিভ হওয়ার পর থেকে মেক্সি পরে। বেশি ভাগ সময়ই গেছে অসুস্থ। শাড়ি সামলাতে পারে না বলে।

সে সামনে তাকালো! দিলশাদ আর সুমি হেলেদুলে হাত ধরাধরি করে হাঁটছে। দু- দিনেই এদের মধ্যে এতো ভাব কিভাবে হলো কে জানে? দিন ভরে হেসে খেলে একজন আরেকজনের উপরে গাড়াগড়ি খাচ্ছে। খাক! এতে তার সমস্যা নেই। কিন্তু এদের ভাব, ভালোবাসা ভারী পড়ছে তাঁর উপরে এসে।

আজ সে বাড়ি ফিরেছে তাড়াতাড়িই। দিলশাদ আসার পরে থেকে তার ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে না। সকাল হতে না হতেই এই মেয়ে শুরু করে তাদের দরজায় টুকাটুকি। ঐ দিকে আবার রাতে যে পর্যন্ত দীপার ঘুম আসে না। বোনের সাথে টিকটিকির মতো লেগে থাকে। শুধু লেগে থাকে না। তার বউকে দিয়ে এটা ওটা করাতেই থাকে। না ভারী কোন কাজ না। তবে ঝিম মেরে বসে থাকতে দেয় না। আহারে তার বউটা! বোন আবার তার বউয়ের কলিজা। ভালো কথা বলতেও তার ভয় হয়। তাই মুখে তালা মেরে চাতক পাখির মতো শুধু তাকিয়ে থাকে। শ্যালিকা আর বউ এই দু- জনের মাঝে পড়ে সেতো দু- দিনেই চিড়েচ্যাপটা। ভবিষ্যতে কি আছে কে জানে?

তাই আজ ভেবেছিলো দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু আরামের ঘুম দেবে। ঘুমোতে চলেও গিয়েছিলো। এর মধ্যে এই দুই-জন হাজির। তাঁরা ঘুরতে যাবে। উমর বিনা দ্বিধায় বললো যাও! এলাকায় ঘুরবে এটা আর এমন কি? সে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে গেলো। কিন্তু ঘুম চোখের কোণে আসতে না আসতেই ছুঁটে গেলো দাদীর চেঁচামেচিতে।

সে ধড়ফড়িয়র উঠে বাইরে আসতেই দাদী তেড়ে এলেন। বললেন, —- তুই কোন আক্কলে পোয়াতি বউরে ঘুরার জন্য অনুমতি দিছোস। তাও আমারে না জিগাইয়া।

উমর প্রথম বুঝলো না। সে দিলশাদ আর সুমির দিকে তাকালো। তাঁরা দু- জন নাদান বাচ্চা মতো দাঁড়িয়ে আছে। সে তাঁকাতেই দিলশাদ করুন মুখে বললো,— আসলে সব দোষ আমার! আমিই ভাবলাম আপু দিনভরে ঘরে উদাস ভাবে বসে থাকে। বসে থাকতে থাকতে পা ফুলে গেছে। তাই এই আশে পাশে একটু হাঁটিয়ে নিয়ে আসি। আপুর ভালো লাগবে। তাইতো প্রথমে আপনার কাছে গেলাম অনুমতি নিতে। আপনি দ্বিধা করলেন না। করবেনই বা কেন? আপুর ভালো বলে কথা। আমি জানি তো যেটায় আপুর জন্য ভালো তা আপনি র্নিদ্বিধায় করতে বলবেন। আপনার কাছ থেকে এসে আবার ভাবলাম এই বাসার প্রধান মুরব্বীতো দাদু। তারও তো অনুমতির প্রয়োজন আছে। তাইতো তাঁর কাছেও অনুমতি নিতে আসলাম। আমিতো আর এতো নিয়ম কানুন জানি না। দুঃখিত। ইশ! আপুকে কতো কষ্টে রাজি করিয়ে রেডি করালাম। এখন গিয়ে কি যে বলি।

উমর নিঃষ্পলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো! দীপার কথা কি এরা বলেছিলো? সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো! যেখানে দীপার কথা সেখানে উমর আর কিছু বলতে পারে না। তাই দাদীকেও রাজি করালো। তবে এখন মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে। তবে সে এটা বুঝতে পারে না, দিলশাদ সবসময় বলির বকরা তাকেই বানাচ্ছে কেন ? অথচো তাঁকে বললেই সে সব সুন্দর ভাবে মেনেজ করে দিতো । আর সে আরেকটা বিষয়ও খেয়াল করেছে। দিলশাদ তাঁকে কখনও কোন সম্বোধন করে না। না দুলাভাই না ভাইয়া। কথা বলে সম্বোধন এড়িয়ে। চলছে কি এই মেয়ের মনে?

দিলশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো! সামনে থেকে একটা বাইক আসছে। বাইকের পেছনে উসমান! সে এতো দূর থেকেও চিনলো। যে সাইজ না চিনে উপায় কি ? একটু কাছে আসতেই দেখলো ফোনে কথা বলছে। বিরক্তিতে চোখ মুখ ছেয়ে আছে।

সে মুখ বাঁকালো! ঢং দেখে আর বাঁচি না। সুমির দিকে তাকিয়ে বললো,— কিয়া বাত হে! তোমার ভাইদের তো বাইকেরও ড্রাইভার লাগে ?

সুমি হেসে ফেললো! হেসে বললো, —- এটা উসমান ভাইয়েরই বাইক। সামনের জন তাঁর বন্ধু। এইমনিই হয়তো চালাচ্ছে।

দিলশাদ আর কিছু বললো না। সে অন্য দিকে তাকালো! উসমানের বাইক তাদের সামনে এসে থেমেছে। এই লোকটাকে দেখলেই তাঁর শরীর এমন ফট করে জ্বলে উঠে কেন? মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলতে, তবে সাইজ দেখে ইচ্ছেকে অনেক কষ্টে দমায়। বেটা পাহাড় – পর্বতের হারিয়ে যাওয়া বংশধর।

উসমান নেমে দাঁড়ালো। সে অবাকই হয়েছে! সাথে ভালোও লাগলো। বিয়ের পরে ভাই ভাবি কখনও ঘুরতে যাইনি। এভাবে ঘুরতে দেখে ভালো লাগলো। তার বন্ধুও উমর আর দীপাকে সালাম দিলো।

— কোথায় থেকে আসলি? সকালে দেখলাম না। দুপুরেও তো খেতে আসলি না?

উসমান একবার দিলশাদের দিকে তাকালো! সে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। বাড়িতে আসার পর থেকে মেয়েটার সাথে আর কথা হয়নি। তবে দু- দিন ধরে মেয়েটা আজব আচরণ করছে। যখনি দেখা হচ্ছে লজ্জায় গলে যাচ্ছে। ঠোঁটে থাকে অন্যরকম এক হাসি। প্রথম দেখার সাথে সেতো এর একেবারেই হিসেব মেলাতে পারছে না। ব্যাপারটা কি?

সে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো, — স মিলে ছিলাম! নতুন গাছেরগুঁড়ি এসেছে। সেগুলোর হিসাবটা ক্লিয়ার করলাম।

— দুপুরের খেয়েছিস?
— হ্যাঁ!
— তাহলে আর বাসায় গিয়ে কি করবি? বের যখন হয়েছি আয় সবাই মিলেই হেঁটে আসি।

উসমান দ্বিমত করলো না। সে তাঁর বন্ধুকে বাইক বাসায় রেখে চলে যেতে বললো।

দিলশাদ হাঁটতে হাঁটতে বিরক্ত হলো! গ্রামের রাস্তা অথচো এতো ব্যস্ত! রিকশা বাইকের জন্য একটু শান্তিতে হাঁটাও যাচ্ছে না। ইশ! কোথায় গেলে যে পাবে আগের মতো সুন্দর, শান্ত নির্মূল একটা গ্রাম। আফসোস করতে করতে সে দীপার হাত জাপটে ধরলো।

দীপা একটু হাসলো! কিছু বললো না।

সেই হাসি উমর ঠিক দেখলো! দেখে হিংসায় জ্বলেপুড়ে গেলো । এই দু- বোনের জুটিকে বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করলো। তাঁর বেলা কিছু নেই। বোনের বেলা ঠিক ষোল আনা।

সে তার মনের হিংসা মনে চেপে পিছিয়ে গেলো! চলমান রাস্তা! তিনজন একসাথে হাঁটা সম্ভব না।

উসমান পিছনেই হাঁটছিলো! দু-ভাই এখন একসাথে হলো।

দিলশাদ হঠাৎ থেমে গেলো! তাঁরা যেখান দিয়ে যাচ্ছিলো। পাশেই একটা কাঁদা পুকুর। একদল ছেলে কাঁদার মধ্যেই হুটোপুঁটি খাচ্ছে । দিলশাদ ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো। নিচু হয়ে বললো,—- এই ইউসুফ কাঁদায় কি করছো?

ইউসুফের নাম শুনতেই সবাই সেদিকে তাকালো! ইউসুফের মুখ ভোঁতা করে উঠে দাঁড়ালো। সে সবাইকে আগেই দেখেছে। দেখেই কাঁদায় আরো বেশি মাখামাখি হয়ে চুপ করে এক সাইডে বসে ছিলো। যেন তাঁকে চেনা না যায়। এই শেষ বিকেলে কাঁদায় মাখামাখি, বড় ভাই কিছু না বললেও মোজো ভাই ছাড়বেনা। অথচো শেষ রক্ষা হলো না। ধুর! সে মুখ ভার করে উত্তর দিলো।

— মাছ ধরি।

— ওমা তাই! দেখি! কোথায় তোমার মাছ?

ইউসুফ তাঁর গায়ের টির্শাট এগিয়ে দিলো। এক মাথা গিট্টু দিয়ে মাছ রাখা হয়েছে। দেখে বুঝার উপায় নেই যে এটা টির্শাট। কাঁদায় মাখামাখি।

উসমান এগিয়ে গিয়ে ধমকে উঠলো,— এই সন্ধ্যায় তোকে মাছ ধরতে কে বলেছে। ওঠ! এখনি ওঠ।
উমরও গলা মেলালো ! এই ছেলের নির্ঘাৎ ঠান্ডা লাগবে।

দিলশাদ বিরক্ত হয়ে দু- নো ভাইয়ের দিকে তাকালো! উমর চুপসে গেলো! কি জ্বালা বলোতো।

উসমান অবশ্য এখনও দিলশাদ কে গা করেনি। তাই দিলশাদও তার দিকে তাকিয়ে বিরক্ত মাখা কন্ঠে বললো,—- এভাবে ধমকাচ্ছেন কেন? বাচ্চা মানুষ।

উসমান এবার দিলশাদের দিকে তাকালো! তার হাতও কাঁদায় মাখামাখি। সে টির্শাট আঁকড়ে ধরে এমন ভাবে বসে আছে যেন এর ভিতরে মাছ না হীরা মানিক্য। তার হাসি পেয়ে গেলো। তবে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসি থামালো।

সে আবার কিছু বলবে তখনি সবাইকে অবাক করে দীপাও এগুলো। দিলশাদের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো, — কি মাছ?

সুমি ঝট করে এগিয়ে এসে দীপাকে থামালো! থামিয়ে বললো, — এই সন্ধ্যায় মাছের কাছে যাওয়ার দরকার নেই তোমার। দাদী শুনলে, তোমাদের কিছু বলবে না। আমার গাল ফাটিয়ে দেবে।

সবাই হেসে ফেললো ! হাসলো দীপাও! হেসে ইউসুফের দিকে তাকিয়ে কোমল সুরে বললো,– উঠো এসো ভাই! ঠান্ডা লাগবে।

উমর, উসমান, ইউসুফ তিনজনেই চমকালো ! দীপা কখনও এভাবে তাদের তিন ভাইয়ের একজনের সাথে কখনও কথা বলেনি।

ইউসুফ না একটা শব্দ বললো, না এক সেকেন্ড দেরি করলো ! সাথে সাথেই উঠে এলো। এসে দিলশাদকে বললো,– কেও তো আমাকে চেনেনি! তুমি চিনলে কিভাবে?

দিলশাদ হাতে মাছ ভর্তি টিশার্ট! সেটা মুড়িয়ে ভালো করে ধরে নির্বিকার ভাবে বললো — তোমাদের মতো এই হাতির সাইজ এখনও এই গ্রামে আর একটাও দেখিনি। তাই সাইজ দেখেই বুঝেছি। দুইটা তো সাথেই আছে । তাই ধরেই নিয়েছি, বাকি যেটা ওটা নিঃসন্দেহে তুমি।

সবাই আবার হেসে ফেললো! সুমিরতো গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। উসমান হাসলো না! খুক খুক করে কাশলো! মনে মনে বললো,- এই মেয়ে ডেনজারাস! ভেরি ভেরি ডেনজারাস।

ইউসুফ অবশ্য হাসেনি! দুই ভাইয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,—- ডাইরেক্ট আমাদের হাতি বলছে। আর তোমরা চুপচাপ শুনছো?

উমর দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে করুণমুখে বললো — বাদ দে ভাই! বিয়ে তো করিস নাই । প্যারাও বুঝবি না।

দীপা এবারো খিলখিল করে হেসে উঠলো! এবার অবশ্য সবাই হাসলো না। অবাক হয়ে দীপার এই খিলখিলানো হাসি উপভোগ করলো। সেটা শেষ হতে না হতেই আরো এক অবাক করা বিষয় ঘটলো রাতে। যেখানে দীপার রাতে ঘুম হয় না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। আধা রাত ড্রইং রুমে বসে থাকে। সেখানে সে আজ দশটা বাজতে না বাজতেই ঘুমিয়ে পড়লো।

উমর কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে দিলশাদের দিকে তাকালো। আর দিলশাদ তাঁর সেই মিষ্টি মাখা হাসি দিয়ে লজ্জা মাখা মুখে বললো, —- এমন কিছু না! সকালে টেনে ঘুম থেকে উঠাই তার মধ্যে আজ বিকেলে দু- মাইল হাঁটিয়েছি। তাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেছে।

তাঁর কথায় সুর মেলালেন হামিদা বানু, —- হ! বুড়িগো কথা বাসি হইলেও ফলে। দিন ভরে শোয়া বসা। কাজ টাজ করলে শরীর যে কতো ভালো থাকে এগো কে বুঝাইবো। দিনভরে কাজ করলে রাতে ঘুম আইবো না ঘুমের বাপ আইবো।

উসমান হাই তুললো! রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,—- তুমিও দিনভরে শুয়ে বসেই থাক। একটু কাজটাজ করো। তাহলে আর লাঠি লাগবে না। এইটির মডেলের গাড়ির ভিতরে টুয়েন্টি ফোর এর ইঞ্জিল চলবে।

হামিদা বানু মডেল, ইঞ্জিল বুঝলেন না! শোয়া বসা ঠিকিই বুঝলেন। সাথে সাথেই উরাধুরা বকাবাজি শুরু করলেন।

এবার দিলশাদ হেসে ফেললো! উসমান যেতে যেতে ফিরে তাকালো। তার ঠোঁটের কোণায়ও হাসি! ভালো লাগার মুচকি হাসি।

চলবে…….

#দর্পণ
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১০

দিলশাদ ধীরে ধীরে দরজা খুললো! এখন বাজে প্রায় রাত দুইটা। দিলশাদ একটা মুভি দেখছিলো। মোবাইলে! এতো রাত হয়ে গেছে সে খেয়ালই করেনি। কারো হাঁটা চলার শব্দে সে সজাগ হলো। হতেই চোরের মতো আস্তে আস্তে বেড়িয়েও এলো। কাহিনী কি?

ইউসুফের রুমের আলো জ্বলছে ! দরজা চাপানো। সে এগিয়ে গিয়ে উঁকি দিলো। দিতেই উসমান বললো,– ভিতরে আসুন দিলশাদ।

দিলশাদ হকচকালো! সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিলো! এতোক্ষণ যে সে চোরের মতো উঁকিঝুঁকি মেরেছে, তাকে দেখে বুঝার উপায় নেই। বরং এমন ভাব যেন নিজেদের রুম, যখন তখন আসে। সে সেই ভাব নিয়েই ভিতরে আসলো। এসে ইউসুফের দিকে তাকালো।

ইউসুফ কাঁথা মুড়ে শুয়ে আছে। চোখ মুখ শুকনো, ঠোঁট লাল। তাঁর পাশে উসমান। মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে। দিলশাদের দেখে এতো মায়া লাগলো! বাবা, মা ছাড়া সন্তান। তাঁদের মতো হতোভাগা কি আর পৃথিবীতে কেও আছে?

সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেলো। এগিয়ে গিয়ে উসমানের সামনে দিয়ে ঝুঁকে বিনা দ্বিধায় ইউসুফের কপালে হাত রাখলো।

উসমানের ভালো লাগলো! মেয়েটাকে সে বুঝতে পারে না। মাথায় দিনভরে কি চলে কে জানে না। তবে মেয়েটার একটা দিক ভালো। যে কাজটি করতে চায় তা সে নির্দ্বিধায় করে । কে, কি ভাবলো, কি মনে করলো তাতে তাঁর কিছু আসে যায় না।

— ইশ! গরমে তো গা পুড়ে যাচ্ছে। জ্বর মেপেছেন?
— না!

— বসে বসে তাহলে কোন ঘোড়ার ডিম করছেন আপনি। সরেন দেখি। শরীর দিয়েছে আল্লাহ ইয়া বড়। ব্রেইন তো তার সিকি ভাগও দেয়নি।

উসমান নিঃশব্দে উঠে দাঁড়ালো! আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করলো, এই মেয়ের কথা তার গায়ে লাগছে না। বরং এই যে চোখে মুখে টেনশনের ছাপ, দেখতে তার ভালো লাগছে।

দিলশাদ ইউসুফের কপালে গালে হাত ছুঁইয়ে ভালো করে দেখে বললো, —- উঁহু! পানি পট্টিতে কাজ হবে না । মাথায় পানি দিতে হবে। আপনি ইউসুফকে এদিকে ঘুরিয়ে দিন তো। আমি বাথরুম থেকে পানি আনছি।

উসমান এগিয়ে গেলো! ইউসুফকে ঘুরিয়ে শোয়ালো। ছেলেরা সব কিছুতে যতোই পারদর্শী হোক । যত্নের ক্ষেতে মেয়েরা সেরা। এদের মতো মমতা নিয়ে যত্ন কোন ছেলের পক্ষে সম্ভব না।

দিলশাদ ইউসুফের পাশে বসে মাথায় পানি ঢালছে। সাথে মাথায় হাত বুলিয়েও দিচ্ছে। ইউসুফ জ্বরের ঘোরে হাত উঠিয়ে দিলশাদের হাত ধরলো। অস্ফুট ভাবে বললো, — মা।

দিলশাদ থমকে গেলো! তাঁর গাল বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা পানি ইউসুফের কপালে পড়লো। সে পরম মমতা নিয়ে তা মুছে দিলো।

উসমান দাঁড়িয়ে আছে দিলশাদের পাশেই। তার চোখেও পানি চিকচিক করছে। বাবা, ভাই সবাই যতোই আদরে রাখুক! মায়ের শূণ্যতা কেও পূরণ করতে পারে না।

সে এক ধ্যানে দিলশাদের দিকে তাকিয়ে রইলো। যেমনটা তাকিয়ে ছিলো সেই দিন রাতে।
পিচ্চি পাচ্ছি ছোট্ট একটা মেয়ে। তবুও তাঁর কি বিশাল ক্ষমতা! মা হারা একজন সন্তানকে কেমন মমতায় আগলে ধরছে। সাথে আরেকজন শক্ত পিষ্ট মানুষকেও কাবু করে ফেলছে। আর এতো এতো ক্ষমতা যাদের কাছে দুনিয়া তাদেরই বলে দুর্বল। আর এই দুর্বল নারীদের কাছে পুরুষেরা এতো শক্তিমান হয়েও বার বার হারে।
______

দীপার আজ ঘুম ভাঙলো খুব ভোরে! শরীর ঝরঝরে লাগছে। অনেক দিন পরে মনে হলো, সে শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছে।

সে পাশে তাকালো! তাঁর কাছ ঘেঁষে গুটিয়ে উমর ঘুমিয়ে আছে। তাঁর গা খালি। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা যাই থাক এই ছেলে গায়ে কাপড় দিয়ে ঘুমাতে পারে না। গা থাকবে সম্পূর্ণ খালি।

সে চোখ ফিরিয়ে হালকা একটু নড়লো! চিত হয়ে শোয়ার কারণে কোমর ধরে আছে। সে নড়তেই উমর মাথা তুললো! তাঁর চোখে মুখে ঘুম! এতো পাতলা ঘুমও কারো হয়? দীপা যতোবার নড়েচড়ে এই লোক ততোবারই টুপ করে জেগে উঠে ।

উমর ভালো ভাবে চোখ খোলার আগেই দীপা চোখ বন্ধ করে ফেললো! ঘুম ঘুম চোখেই উমর কিছুক্ষণ তাঁকিয়ে রইলো। তারপর আরেকটু কাছে এগিয়ে গিয়ে পেটের উপর দিয়ে হালকা করে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে ঘুম জড়ানো কন্ঠে ফিসফিস করে বললো,— আই লাভ ইউ জান!
দীপা নড়লো না, কিছু বললোও না। যেভাবে চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিলো, সেভাবেই শুয়ে রইলো।

উমর বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে করুণ সুরে বললো, — আমি জানি তুমি তোমার বাবা,মা, বোনকে অনেক অনেক ভালোবাসো। সেই ভালোবাসার দোহাই। আমাকে ক্ষমা করো। এই অধমের প্রতি একটু দয়া করো। প্লিজ!

দীপা এবারো কিছু বললো না। তবে তাঁর চোখের কোণা থেকে চুপ করে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। উমর সেই পানি স্বযত্নে মুছে দিলো।

সেই ফ্ল্যাটের ঘটনার পরে চুপচাপ দীপা আরো চুপচাপ হয়ে গেলো। বাসা, ভার্সিটি লেখাপড়া ছাড়া আর কোন কিছুতে তাঁর আর আগ্রহ দেখা যেতো না। বাসার সবাই এটা নিয়ে অবশ্য অতো মাথা ঘামালো না। সে আগে থেকেই চুপচাপ! তাই আর নতুন কোন সন্দেহও হলো না ।

সে আস্তে আস্তে সব ভুলে এগিয়ে যাচ্ছিলো। তখনি হাজির হলো তাঁর সেই বান্ধুবী। যার বিয়েতেই উমর তাঁকে দেখেছিলো। সে বাহিরে চলে যাবে। তাই শেষবার সবার সাথে দেখা করতে এলো। এক কথায়, দুই কথায় উমরের কথা উঠলো। সে কিভাবে দীপার নাস্বারের জন্য পাগল হয়েছিলো সেই কথা মনে করে সবাই হাসাহাসি করছিলো।

তবে দীপা বসে ছিলো কাঠ হয়ে। উমরের ব্যাপারে এরা কিছু জানে না। তাদের মধ্যে সম্পর্কের কথাও না।

তখন সেই বান্ধুবী বললো,— ভালো হয়েছে ফোন টোন আর দেয়নি! বারো মেয়েদের সাথে সম্পর্ক বুঝলি। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ও অতো ভালো না । বাবা নামকরা নেতা টেতা টাইপ। টাকা পয়সা আছে, তবে ব্রোকেন ফ্যামেলি।

দীপার ভেতর ভেঙেচুরে গেলো! কি ভুলই না করেছে সে। বোকা তো, অভিনয় ধরতে পারেনি। মানুষ কতো জঘন্য। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলো। সে তাঁর মন, মস্তিষ্ক সব থেকে উমরকে মুছে ফেলবে।

কিন্তু চাইলেই কি আর মুছে ফেলা যায়। একবছর এমনিতেই কেটে গেলো! দীপা সেই কথা ভুলতে না পারলেও এখন আর কষ্ট হয় না। সে স্বাভাবিক আছে। সেই স্বাভাবিক জীবনে আবার উমর আসলো। ভালো ভাবেই আসলো।

সে প্রতিদিনের মতোই স্বাভাবিক ভাবে ভার্সিটিতে আসলো। রিকশা ভাড়া দিয়ে নামতেই দেখলো গাড়িতে হেলান দিয়ে উমর দাঁড়িয়ে আছে। সে থমকালো! তবে উপরে কোন পরির্বতন দেখালো না। সে স্বাভাবিক ভাবে চলে যেতে চাইলো। কিন্তু সামনে উমর এসে দাঁড়ালো।

দীপা মুখ অন্ধকার করে ভ্রু কুঁচকে চাইলো!

উমর সেই ভ্রু কুঁচকানো চোখের দিকে তাঁকিয়ে সোজাভাবে বললো —– আমি বিয়ে করতে চাই।

দীপার রাগ হলো! দাঁতে দাঁত চেপে বললো,—- তো! আমি কি করবো? মেয়ে খুঁজে এনে দেবো।

উমর মৃদু হাসলো! হেসে বললো,— এতো কষ্ট তোমার করতে হবে না। কারণ, তুমিই সেই মেয়ে।

দীপা দাঁতে দাঁত চেপে বললো— ফাজলামি করছো?

— না! আমি সিরিয়াস।
— কেন? এই একবছরে অন্য কোন মেয়ে পটাতে পারো নি বুঝি! নাকি যেই কাজ অসমাপ্ত ছেড়ে গেছো তা আবার পূরণ করতে চাইছো। বিয়ে মেয়েদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়ার নতুন টেকনিক বুঝি।

উমর কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। ধীর গলায় বললো,—- তোমার এক একটা মুখের শব্দ যে কোন মানুষের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । সেই দিনও দিয়েছিলে। তাই ভুল যা আমার তার অর্ধেক দায়ভার তোমারও।

দীপা আরেকটু এগুলো! এগিয়ে বললো,— তাই! তাই বুঝি! তাহলে তোমার শরীরে এখনও ধরছে না কেন। তুমি জ্বলছো না কেন? আমি তোমাকে জ্বালাতে চাই! জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দিতে চাই।

— সেটা তুমি অলরেডি করেই দিয়েছো। একবছর কি পরিমাণ জ্বলেছি আমি। তা তুমি কখনও বুঝতে পারবে না । তাই নতুন করে আবার জ্বালানোর সুযোগ করে দিচ্ছি। বসে বসে সারা জীবন জ্বালাও। বিয়ে করো আমাকে।

দীপা তাচ্ছিল্যর হাসি হাসলো! হেসে বললো,– বড় গলায় না বলে গিয়েছিলে! এই মুখ আর কখনও দেখাবে না। তো সেই বড় গলার কি হলো?

উমর নির্বিকার ভাবেই উত্তর দিলো, —- আমি কোন মহাপুরুষ তো না। যে একবার বলেছি বলে তা আর খন্ডানো যাবে না। আমি খারাপ! অবশ্যই খারাপ! তুমি যতোটুকু দেখেছো হয়তো তাঁর চেয়েও খারাপ। তবে এই খারাপ মানুষকেই তোমার বিয়ে করতে হবে।

দীপা কিছুক্ষণ আগুন চোখে তাকিয়ে রইলো! তাঁর আর কথা বলার ইচ্ছা হলো না। সে হনহনিয়ে ভার্সিটির ভিতরে চলে গেলো।

ভার্সিটির ভিতরে যেতেই তাঁর মোবাইলে মেসেজের পর মেসেজ আসতে লাগলো। সে বিরক্ত হয়ে ওপেন করলো। তাঁর আর উমরের ছবি। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ভাবে তোলা। নিচে তাঁর বাবার নাম্বার দেওয়া। তাঁর পাশে লেখা, —- তুমি যদি আমাকে বিয়ে না করো! তোমাকে আমি নিঃশেষ করে দেব। অন্য কারো সাথে বিয়ে তো ভালোই কাওকে মুখও দেখাতে পারবে না।

দীপা বসে পড়লো! তার হ্নদয় ভেঙে চুরে কাঁদতে চাইলো। তবে সে কাঁদতে পারলো না। কিছুক্ষণ কাঠ হয়ে চুপচাপ বসে রইলো। তারপর সেও মেসেজ পাঠালো, —- তোর যা খুশি কর! যা! তোকে বিয়ে করা আমার কাছে মৃত্যুর সমান। তাই তোকে বিয়ে করার চেয়ে আমি হেসে হেসে মৃত্যুকে বরণ করে নেব। আর রইলো অন্যকে বিয়ে করা। সেটা আমি এমনিতেও করবো না। তোর মতো কুত্তার সাথে দেখা হয়ে আমার সব সখ অহ্লাদ মরে গেছে।

মেসেজ সেন্ড করে সে ক্লাসে গেলো। তবে মন দিতে পারলো না। চিন্তা ঘিরে রইলো! দুটো ক্লাস করেই বেড়িয়ে এলো। ভালো লাগছে না। তার পরেই আবার পরপর কয়েকটা মেসেজ আসলো। তাঁর এবার হাত কাঁপতে লাগলো । না জানি কি?

বাবার অফিসের ছবি, আমাদের বাড়ির ছবি, দিলশাদের স্কুলের ছবি। তাঁর নিচে লেখা, —- আমি কখনও বড় রকমের কোন খারাপ কাজ করিনি দীপা । তবে তোমার জন্য করবো! আমাদের জীবনে অনেকেই আসে। তবে কিছু কিছু মানুষ রক্তের শিরায় শিরায় মিশে যায়। তোমার ভাগ্য খারাপ বলো আর ভালো। তুমি আমাতে মিশে গেছো। বিশ্বাস করো! এই এক বছরে নিজের সাথে আমি যুদ্ধ করেছি। তবুও তোমাকে ভুলতে পারিনি। আমি পাগল হয়ে গেছি দীপা। এই পাগলের একমাএ ঔষুধ তুমি। তুমি চাও আর না চাও তোমাকে আমার হতেই হবে।

দীপার শরীর দিয়ে চিকন ঘাম দিলো। কি করবে সে? সে উঠে দাঁড়ালো! বাবা, মাকে সব বলতে হবে। তাঁর বাবার অবস্থা সাধারণ হলেও। তাঁর আত্মীয় স্বজন অনেকেই ভালো পজিশনে আছে। তাঁরা নিশ্চয়ই কিছু করবে। মেয়ে ভুল করেছে বলে ফেলেতো দিবে না। উমরের বাবার যতো ক্ষমতা থাক। এক জায়গার ক্ষমতা আরেক জায়গায় খাটেনা। সে চুপচাপ ভার্সিটিতেই বসে রইলো। এখনও ছুটির সময় হয়নি! ছুটি হলেই ভিরের মধ্যে সে বাসায় যাবে। গেলেও তাই। বাসার সামনে পৌঁছতেই সে হাঁফ ছাড়লো!

রিকশা থেকে নেমে এগুতেই পেছন থেকে কেও মুখ চেপে ধরলো। এই হাত, এই স্পর্শ, এই শরীর তাঁর চেনা। অনেক অনেক চেনা। সেই চেনা মানুষটাই চোখের পলকে তাঁকে গাড়িতে তুলে ফেললো। দীপার বাবা,মা বুঝতেও পারলো না। সেদিন তাদের আদরের মেয়ে তাদের বাড়ির সামনে থেকেই গায়েব হয়ে গেলো ।

দীপা গাড়িতে হতম্বভ হয়ে বসে রইলো! তাঁরা পেছনে। ড্রাইভ কে করছে দীপা চিনলো না। কাজি অফিসের সামনে গাড়ি থামতেই, দীপা কঠিন ভাবে বললো,—- আমি মরে গেলেও তোকে বিয়ে করবো না।

উমর দীপার দিকেই তাকিয়ে ছিলো! সে নির্বিকার ভাবে বললো —– আচ্ছা! না করলে নেই! বিয়ে আমি তোমার জন্যই করতে বলেছিলাম। কারণ আমি জানিতো! বিয়ে ছাড়া আমার সাথে থাকতে তোমার কষ্ট হবে। আমার তো তুমি পাশে থাকলেই হলো। বিয়ে হোক আর না হোক।

দীপা অনূভূতি শূণ্য হয়ে উমরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। সে বুঝতে পারলো। তাঁর মুক্তি নেই।

উমর সামনে বসা লোকটাকে গাড়ি ঘুরাতে বললো।যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তাঁদের এখান থেকে যাওয়া দরকার! একবার দীপাকে তাদের ওখানে নিতে পারলেই হলো। কারো ক্ষমতা নেই তাঁর কাছ থেকে তাঁকে কেড়ে নেওয়ার।

গাড়ি অবশ্য ঘোরাতে হলো না। দীপা শেষ হয়ে নিস্তেজ হয়ে বললো,— আমি বিয়ে করবো।

বিনা ঝামেলায় সেইদিন তাদের বিয়ে হলো। দীপা নির্বিকার ভাবে সাইন করলো। উমর বুঝতেও পারলো না। সে যেই দীপাকে ভালোবেসে পাগল হয়েছে। সে সেই দীপাকে না, বিয়ে করলো দীপার চলমান লাশ কে।

চলবে……