অতীত দেয়ালে লেখা গল্প পর্ব-২৫ এবং শেষ পর্ব

0
312

#অতীত_দেয়ালে_লেখা_গল্প
#তাহসিনা_অরিন
#পর্ব_২৫ (অন্তিম)

শরতের দিন। মৃদু বাতাস বইছে। আকাশে মেঘ নেই। শতশত তারা উঁকি দিচ্ছে সেথায়। চাঁদ উঠেছে, বিশাল বড় নয়৷ তবে দেখতে ভালো লাগছে। রাইমা বারান্দার দরজার পাশে বসে আছে। হাতে কালো মলাটে আবৃত ডায়েরিটা। ডায়েরিতে তারিখের বালায় নেই। যখন ইচ্ছে হয়েছে লিখেছে। শুধু মাঝে স্পেস দিয়েছে। রাইমা মাঝখানের একটা পৃষ্ঠা থেকে পড়তে শুরু করলো,

“ভীষণ ভালো লাগার এক খবর পেলাম আজ। আমাদের বাড়ি জুড়ে একটা ছোট্ট বাচ্চা আসবে। চৌধুরী নিবাসের দেয়াল গুলো তার হাসির শব্দে মেতে উঠবে। আমি বাবা হবো, একটা ছোট্ট প্রাণ বাবা বলে ডাকবে আমাকে! এর চেয়ে খুশির খবর হতেই পারে না।

আজ পাঁচদিন হলো রাইমাকে ওর বাবার বাড়ি রেখে এসেছে। রাইমা তালুকদার উহু এখন রাইমা চৌধুরী ভীষণ সুন্দর এক রমণী। চৌধুরী বাড়ির বড় বউ। হাহ! আমার বউ। হ্যাঁ, আমার বউ। যাকে আমি কোনদিন ভালোবাসিনি। মনে হতো সে আমার বিরক্তির কারণ। অথচ আজ পাঁচদিন মেয়েটা নেই। আমার ঘরটা খালি খালি লাগে। বিছানাটা শূণ্য লাগে। তানহার ভাবনা আসে না, আমার মন পুড়ে রাইমা নামক আগুনে। দেখতে ইচ্ছে হয়, কিন্তু জড়তার জন্য যেতে পারিনা।

আজ নওরীন আর পাপিয়াকে পাঠিয়েছিলাম ওই বাড়িতে। কেমন আছে রাইমা? কেমন আছে আমার বাচ্চাটা?

তানহা! মানুষ দ্বিতীয় বারও প্রেমে পড়ে। কারো শূণ্যতার প্রেমে আমি দ্বিতীয় বার পড়লাম।

প্রেম মানেয় কি দহন? আমার প্রেমে শুধু দহন আসে কেন?

আজ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুসংবাদ হলো আফজাল চৌধুরীর মেয়ে হয়েছে। পুতুলের মতো দেখতে একটা মেয়ে। মেয়ে তার মায়ের মতো রূপবতী হবে। কি সুন্দর আমার মেয়েটা।

রাইমা আর আমার বাচ্চাটা এখন আমার সাথে, চৌধুরী নিবাসে। বহুদিন পর আমার বাড়িটা ভালো লাগছে। চারদিকে খুশি খুশি আমেজ।

আমাদের মেয়ের নাম রেখেছি কুঞ্জ, কুঞ্জারি চৌধুরী। নামটা রাইমার পছন্দে রাখা। আমার আপত্তি নেই। মেয়ের মা যা রাখে তাতেই সন্তুষ্ট।

কদিন হয়েছে মেয়েটা মা হয়েছে, ওর কেন কাজ করতে হবে? আজকে এসেছিল আমার কাজে সাহায্য করতে। ইচ্ছেমতো বকেছি। রাগারাগি করেছি খুব। কি দরকার তার এত পাকনামি করার? বাড়িতে কি কাজের জন্য মানুষ কম আছে?

রাইমার বোন থেকে শুনেছিলাম, ও চুপচাপ। একা থাকতে ভালোবাসে। অনেক মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করে না। মাঝে কয়েকদিন রাইমার মাঝে চঞ্চলতা দেখলেও এখন আবার চুপ হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে সব সময়। আমিও ঘাটায় না ওকে। ওর মতো করে থাক। যেভাবে ওর ইচ্ছে। সেভাবেই থাক। শুধু ভালো থাকুক।

আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় রাইমার সাথে বসে গল্প করি। কিংবা ঘুরতে যাই। কিন্তু ও কি মনে করবে, ওর একা থাকতে ভালো লাগে এসব ভেবে এগোয় না। এমনেই কম কষ্ট দেইনি মেয়েটাকে। এখন নাহয় তার মন মতো থাক। শুধু দূরে না যাক।

রাইমা আমার থেকে দূরে দূরে থাকে। আমিও মানা করি না। আমিও কাছে এগোয় না। মাঝে মাঝে এগোতে ইচ্ছে হয় কিন্তু থমকে যাই। এভাবেই চলছে।

আমাদের মাঝে ভালোবাসিটা বোধহয় হবে না। তবে মনে প্রেম আছে। রাইমা যেভাবে থাকতে চায় সেভাবেই থাক তবুও আমার থাক। আমার আর তাহনার জন্য আফসোস হয় না। শুধু মাঝে মাঝে মনে পড়ে। হাজার হোক ভালোবাসতাম তো৷ ভুলি কি করে। কিন্তু আফসোস হয় না। যার একটা রাইমা আছে তার আফসোস কোথায়? আমার একটা সংসার আছে। মিষ্টি একটা মেয়ে আছে। জগতে আর কিছু আমার চাইনা।”

রাইমা পড়া শেষ করে ফুপিয়ে কেঁদে ফেললো। আফজাল তাকে নিজের মতো করে থাকার স্কোপ দিয়েছে অথচ সে প্রেম চাইতো আর সে অনবরত দোষারোপ করে গেছে তাকে। দোষটা তাদের কারো নয়। অথচ দুজনেরই। রাইমা রাতভর কাঁদলো। কে জানে সুখের কান্না নাকি দুঃখের।

ধরার বুকে মৃদু আলো ফুটতে শুরু করেছে। রাইমা ঘর থেকে বের হয়ে আফজাল চৌধুরী রুমের সামনে এসে দাঁড়ালেন। কিয়ৎকাল দাঁড়িয়ে থেকে ভিরানো দরজা খুলে রুমের সামনে দাঁড়ালেন। আজানের শব্দ ভেসে আসছে। আফজাল চৌধুরী নড়েচড়ে চোখ দলে উঠে বসলেন। দরজার দিকে তাকাতেই অবাক হলেন। রাইমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে গেলেন তিনি। মনের ভুল ভেবে চোখে নামিয়ে ফেললেন। দ্বিতীয় বার তাকানোর আগেয় নিজের বুকে ভারি কিছু অনুভব হলো। তাকিয়ে দেখলেন রাইমা তার বুকের সাথে লেপ্টে আছে। আফজাল চৌধুরীর পুরো শরীরে শিরশির অনুভূতি হলো। কিছুক্ষণ পর তিনি অনুভব করলেন তার বুক ভিজে যাচ্ছে। তিনি রাইমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। আলতো স্বরে বললেন,
-কি হলো? মন খারাপ?
রাইমা জবাব দিলো না। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। আফজাল চৌধুরী দু’হাত দিয়ে আগলে নিলেন তার দ্বিতীয় প্রেম, একমাত্র বউকে। রাইমা চৌধুরী কান্না কমলো না কিন্তু অভিযোগ বের হয়ে আসতে লাগলো। কান্নারত স্বরে বলে উঠলেন,
-আপনি ভীষণ খারাপ। আপনি, আপনি কেন বলেননি কিছু। আমি মোটেও একা থাকতে ভালোবাসি না। মোটেও না। আপনি খা*রাপ খুব। আপনি আমাকে কাছে ডেকে নেননি। আমার কষ্ট হয়নি?
রাইমার ডায়েরি পড়ার কারণে আফজাল চৌধুরী সব বুঝলো। তিনি বারণ করলেন না। কাঁদুক আজ, সব অভিযোগ ঢেলে দিক। এরপর আর না কাঁদুক! রাইমা কাঁদতে কাঁদতে একসময় নিশ্চুপ হলো। মিশে রইলো স্বামীর বুকে। আফজাল চৌধুরীও নড়লেন না। আগলে রাখলেন তাকে।

পড়ন্ত বিকেল। বারান্দায় অর্কের কোলে উঠে বসে আছে কুঞ্জ। কিছু সময় পর অর্কের কাঁধে মাথা রেখে মায়ের নাম্বারে ডায়াল করলো কুঞ্জ। রাইমা চৌধুরী তখন তাদের ঘরের বারান্দায় আফজাল চৌধুরীর কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছেন। মেয়ের ফোন দেখে রিসিভ করলেন তিনি। সাথে সাথে কুঞ্জ বলে উঠলো,
-হ্যাপি ভালোবাসাবাসি দিবস আম্মু।
-এটা তো ফেব্রুয়ারি মাস নয় কুঞ্জ।
-ভালোবাসাবাসি দিবস আসতে ফেব্রুয়ারি মাস লাগে না আম্মু। এই যেমন আজকে তোমার জন্য প্রেম দিবস।
ফোনটা লাউড স্পিকারে দেওয়া ছিল। আফজাল চৌধুরী অস্বস্তিতে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন। রাইমা একপলক তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-তোমায় কে বলেছে আজ আমার প্রেম দিবস?
কুঞ্জ নিঃশব্দে হাসলো। অভিমানী স্বরে বলল,
-তোমরা বলোনি বলে আমি জানিনা নাকি হ্যাঁ? এত কষ্ট করে দু’জনের ডায়েরি চুরি করে দুজনকে দিয়ে পড়ালাম। এই দিনটা দেখতে নিজের নামের পাশে চোর শব্দ যুক্ত করলাম তাও বলবে আমি কিছু জানি না?
রাইমা চৌধুরী অবাক হয়ে বলল,
-তুমি আমার ডায়েরি তোমার আব্বুকে পড়িয়েছো?
-হ্যাঁ, এমনি এমনি এত সুখ আব্বু প্রাপ্য ছিল না, আব্বুকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি আম্মু। সরি।
রাইমা হাসলো। বলল,
-দোষ তো আমারও ছিল!
-কি ভাবছো শাস্তি শেষ? মোটেও না। আমি তোমাদের দু’জনের ডায়েরি দু’জনকে পড়িয়েছি যাতে শাস্তি শেষ না হয়। দু’জন মিলে আফসোস করবে কত ভুল বুঝেই না পঁচিশটা বছর নষ্ট করেছো তোমরা। করো বসে বসে আফসোস হু।
রাইমা হাসলো। কথাটা আসলেই সত্য। তার ভীষণ আফসোস হচ্ছে। তিনি স্বামীর দিকে আর একবার তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল,
-তুমি আমি বেস্ট ফ্রেন্ড কুঞ্জ। কিন্তু বাকি দুই নাদান পুরুষ লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু। তোমার সাথে এ ব্যাপারে পরে কথা বলবো।
কুঞ্জ ফোনটা বাম হাতে নিয়ে দূরে সরালো। অর্কের সামনে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল,
-তুমি সত্যি লজ্জা পাচ্ছো?
অর্ক সেন্টি ইমোজির মতো করলে মুখটা। কুঞ্জ খিলখিল করে হেসে ফেললো। ফোনটা ফের কানের কাছে এনে বলল,
-আচ্ছা বাই।
বলে কল কাটলো। অর্ক বলল,
-কাহিনি কি বলোতো?
কুঞ্জ আলতো হাসলো। রহস্যময় কন্ঠে বলল,
-কাহিনি অতীত দেয়ালে লেখা এক গল্প!

———–
কুঞ্জের ব্যাগ গোছানো শেষ। তেমন কিছু নেয়নি। অর্ক টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অসহায় চোখে দেখছে বউকে। কুঞ্জ ব্যাগের চেইন লাগিয়ে সামনে তাকাতেই অর্ক অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,
-এগুলো কিন্তু ষড়যন্ত্র। আমার বউকে আমার কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে।
অর্কের বলার ধরণ দেখে কুঞ্জ খিলখিল করে হেসে ফেললো। কৌতুকের ভঙ্গিতে বলল,
-বিয়ে আগে বর বউ আলাদা থাকে।
-আমাদের বিয়ে হয়নি?
-না তো।
আর্ক চোখ ছোট করে তাকালো কুঞ্জের দিকে। কুঞ্জ আবার হাসলো। হাসতে হাসতে বলল,
-আগামী বৃহস্পতিবার আমার গায়ে হলুদ, শুক্রবার বিয়ে।
অর্ক কিছু বলল না। কুঞ্জ এগিয়ে এসে অর্কের কপালে চুমু দিয়ে বলল,
-মাত্র সাতটা দিন মশাই। আপনার লাল টুকটুকে বউ হয়ে আবার ফিরবো।
আবার কাপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
-আসি, মিস্টার হবু বর। ভালো থাকবেন সাতদিন। এরপর ভালো রাখার জন্য আমি আবার আসছি।
অর্ক হেসে ফেললো। কুঞ্জ ব্যাগ নিয়ে বের হলো। নুহাস বোনের হাত থেকে নিয়ে নিলো ব্যাগ। সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো তিন ভাই-বোন।

চৌধুরী বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে। জাঁকজমকপূর্ণ পূর্ণ ভাবে শেষ হলো হলুদের অনুষ্ঠান। তার ভাই-বোনেরা তো আছেয়। পুরো চৌধুরী নিবাস আনন্দে ভরপুর। কুঞ্জ নিজেও খুশি। বাবা-মা কে একসাথে দেখতে কি ভালো লাগছে। তার মিশন সাকসেসফুল।
ভোর হতেই বিয়ের অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু হলো। কুঞ্জকে লাল টুকটুকে বউ সাজানো হলো। আফজাল চৌধুরী কতবার যে মাশাল্লাহ বললেন৷ কুঞ্জ হেসেই কুটিকুটি। রাইমা তাকিয়ে থাকলেন মেয়ের দিকে। মেয়েটা এতো সুন্দর কেন? তিনিও মনে মনে লাখবার মাশাল্লাহ বললেন। নজর ফোঁটা লাগিয়ে দিলেন মেয়েকে। বরযাত্রী আসতেই সেদিকে ছুট লাগালে সবায়। এই ফাঁকে মেয়েকে নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন রাইমা। কুঞ্জ খেতে খেতে বলল,
-চারদিকে কি সুখ আম্মু।
রাইমা হাসলো জবাব দিলো না৷ কুঞ্জ ফের বলল,
-মেয়ে বিদায়ের সময় তুমি কিন্তু কাঁদবে না।
-আচ্ছা।
কুঞ্জ ভাত চিবোতে চিবোতে বলল,
-হ্যাঁ, মনে থাকে যেন। ছোট মা কে কি করে সামলাবো। বাকি সবাইলে বলে দিয়েছি না কাঁদার জন্য।
রাইমা হেসে বললেন,
-মেয়েদের যেতে দেখলে মায়েদের চোখ দিয়ে এমনি পানি চলে আসে। তুমি যাওয়ার সময় তোমার তিন মা’য় কাঁদবে। তুমি কোনভাবে থামাতে পারবে না।
কুঞ্জ মায়ের দিকে তাকালো। আলতো হাসলো। কিছু বলল না।

বিয়ের অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় বার মুখোমুখি হলে আফজাল-রাইমা ও তানহা-আলম দম্পতি। দুই দম্পতির মুখেয় হাসি। কুশলাদি বিনিময় করলে তারা। কোন জড়তা নেই মাঝে। অতীত দেয়ালে লেখা গল্পটা তারা ভুলে যেতে চায়। নতুন সম্পর্ক গুলোকে আকড়ে ধরতে চায়।

কুঞ্জের ধারণা ছিলো শুধু তার তিন মা কাঁদবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে কাঁদলো পুরো চৌধুরী বাড়ি। পূর্বকে কাঁদতে দেখে কুঞ্জের বুকটা ফেটে গেলো। তার চাপা স্বভাবের ভাইটা কাঁদছে? কুঞ্জের সত্যি সহ্য হলো না। বাবার বুকে মাথা গুঁজে সেও কাঁদলো। মাকে জড়িয়ে ধরে, বোনকে আগলে নিয়ে, ভাইদের সাথে, সবার সাথে কাঁদলো। তারপর মেয়ে বিদায় হলো। আফজাল চৌধুরীর মনে হলো অর্ক তার কলিজাটা ছিড়ে নিয়ে গেলো। আর সবার মনে হলো চৌধুরী নিবাসের প্রদীপ টা ছিনিয়ে নিলো কেউ।

পরিশিষ্ট,
ছয় বছর পর!

কুঞ্জ দারুণ ছবি আঁকে। আজও আঁকছিল। হুট করে দৌড়ে ঘরে এলো তার চার বছরের ছেলে ওয়াহিদ অয়ন। মায়ের আঁকা ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকলো বহুক্ষণ। তারপর বলল,
-এটা কিতের ছবি আম্মু?
কুঞ্জ হেসে ছেলের দিকে তাকলো। তারপর আবার ছবিটায় দিকে তাকালো। হেসে বলল,
-এই যে এটা হলো অতীতের দেয়াল। ওই দেয়ালে একটা গল্প লেখা আছে। গল্পটা ভালো নয়৷ আর এই যে এগুলো হলো কুঞ্জলতা। কুঞ্জলতায় ছেয়ে যাচ্ছে অতীতের দেয়ালটা, তাহলে পচা গল্পটা আর সামনে আসবে না। কুঞ্জবনে ঢেকে যাবে।
ছেলের দিকে তাকালে কুঞ্জ। ছেলে তার মনোযোগী শ্রোতা। কুঞ্জ হেসে ছেলেকে কোলে তুলে নিলো। বলল,
-বুঝেছো আব্বা?
অয়ন মাথা নাড়লো বিজ্ঞের মতো করে। চোখ দুটো পিটপিট করে বলল,
-বুদেছি আম্মু।
কুঞ্জ হেসে ছেলেকে কুতুকুতু দিলো। অয়ন খিলখিল করে হাসতে লাগলো। তখনই রুমে আসলো অর্ক। হেসে বলল,
-কি হচ্ছে?
অয়ন হাসতে হাসতে বলল,
-মদা হত্তে
অর্ক হাসলো। ফ্লোরে হাঁটু মুরে বসে ছেলেকে চুমু খেলো এরপর বউয়ের কপালে। তখনই বাইরে থেকে ডেকে উঠলো তাহনা,
-কুঞ্জ, মা এদিকে আসো। রাইমা আপু ফোন দিয়েছে। কথা বলো।
কুঞ্জ তৃপ্তির শ্বাস ফেললো। কে বলবে এককালে দুই রমণীর মাঝে একটা অদৃশ্য অতীত দেয়াল ছিল! অতীত দেয়ালে লেখা গল্পটা এখন শুধুই অতীত!

সমাপ্ত