আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি পর্ব-৩০

0
167

#আমি_তোমার_দ্বিধায়_বাঁচি
#Part_30
#ইয়াসমিন_খন্দকার

ঈশিতা ভীতি ভেঙে পড়েছে। এই কঠিন বাস্তবতা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে। যেই সন্তানকে ঘিরে সে বাঁচার আশা দেখেছিল সে তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো। এরইমাঝে আয়ুশ হঠাৎ এসে দাঁড়ালো তার সম্মুখে। আয়ুশকে দেখে ঈশিতার সব ক্রোধ গিয়ে পড়লো তার উপর। ঈশিতা চেচিয়ে বলে উঠল,”কেন এসেছেন আপনি এখানে? মজা দেখতে এসেছেন? আপনার জন্য আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আপনি আমায় কখনো বিশ্বাস করেন নি, সবসময় ভুল বুঝেছেন আপনি। আপনার জন্য আমি একটুও শান্তি পাইনি,একটুও না।”

আয়ুশ ঈশিতার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো৷ ঈশিতা আয়ুশের স্পর্শে কেপে উঠল। আহাজারি করে বলে উঠল,”আমার সন্তান, আমাদের সন্তান আর নেই আয়ুশ। আমি কিভাবে বাঁচব বাকি জীবনটা? আপনারা কেউ তো আমায় বিশ্বাস করেন না, ভালোবাসেন না। কিন্তু একটা বাচ্চা তার মাকে সবথেকে বেশি বিশ্বাস করে, সবথেকে বেশি ভালোবাসে। করি ভাগ্য আমার থেকে সেই সুযোগও কেড়ে নিলো।”

এমন সময় ডাক্তার সাহেব বলে উঠলেন,”আমাদের কিছুই করার ছিল না। আমরা মা এবং সন্তানের মধ্যে যেকোন একজনকেই বাঁচাতে পারতাম এবং আপনার স্বামীই বলেছিল আপনাদের সন্তানকে বাঁচাতে আর তাই…”

ডাক্তারের কথা শুনে থমকে গেল ঈশিতা। ছিটকে দূরে সরে এলো আয়ুশের থেকে। আয়ুশ অপরাধীর মতো তাকিয়ে রইল ঈশিতার দিকে। ঈশিতা বলে উঠলো,”তাহলে আপনি আমার সন্তানের খু*নি আয়ুশ?! আপনি মে*রে ফেললেন আমার বাচ্চাটাকে?”

আয়ুশ কান্নাভেজা চোখে বলল,”আমার কাছে আর কোন উপায় ছিল না ঈশিতা। আমাকে তোমাদের দুজনের মধ্যে যেকোন একজনকে বেছে নিতে পারতাম…আমি একটা বাচ্চাকে মাতৃহীনা করে দিতে চাই নি,তোমাকেও হারাতে চাইনি আর তাই…”

ঈশিতা বলে উঠলো,”তাই নির্দয়,পাষাণের মতো আমার বাচ্চাটাকে মে*রে ফেলতে বললেন। আপনি তো চান আমি কষ্ট পাই, কষ্টে কষ্টে শেষ হয়ে যাই তাই আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বাঁচিয়ে রাখলেন।”

“তুমি ভুল ভাবছ ঈশিতা।”

“ভুল আমি ভাবছি না। আপনি আমার সন্তানের খু**নি আয়ুশ। আর আমার এই ভাবনা ভুল নয়। আমি তো সব ছেড়ে চলে এসেছিলাম। আপনার বা আপনার পরিবারে তো কোন সমস্যা তৈরি করিনি তাহলে আপনি কেন এমন করলেন আমার সাথে? আমি নাহয় মরতাম তবু তো আমার বাচ্চাটা পৃথিবীর আলো দেখত। কিন্তু আপনি তো সেটা হতে দেবেন না। আমাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন আপনি, দেখুন আপনার সেই ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। এবার শান্তি পান।”

“এভাবে আমাকে অপরাধী করে দিও না ঈশিতা। আমি তোমাকে বোঝাতে পারব না এই সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় আমার মনের অবস্থাটা কেমন ছিল।”

“ব্যস, আমি আপনার আর কোন নাটক দেখতে চাই না। আমি আপনার কাছ থেকে মুক্তি চাই, মুক্তি দিন আমায়।”

“ঈশিতা!”

~~~~~~~~~~~~~~
আয়ুশ মন খারাপ করে ঈশিতার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে। ঈশিতাকে সে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু ঈশিতা তাকে বুঝতে চায়নি, বুঝতে চায়না। আয়ুশ ঈশিতাকে তামিমের ব্যাপারেও সব বলেছে যে কিভাবে সে তামিমকে ধরেছিল এবং ঈশিতার উপরেও তার কোন সন্দেহ ছিল না। সব সে তামিমকে ধরার জন্য পরিকল্পনামাফিক করেছিল। এটাও বলেছে যে, শুধুমাত্র ঈশিতার জন্য সে এতদিন থেকে নিজের ঘরছাড়া। কিন্তু ঈশিতার উপর এসব কথার কোন প্রভাব পড়ে নি। সে এখনো নিজের সন্তানের জন্য শোক করতে ব্যস্ত। ঈশিতা আয়ুশের মুখের উপর বলে দিয়েছে,”আমি আর আপনার এসব কোন নাটক দেখতে চাই না। আপনি বেরিয়ে যান আমার চোখের সামনে থেকে। আপনি আমার সন্তানের খু*নি। আমি আপনার মুখ দেখতে চাই না।”

আয়ুশ জানে ঈশিতা এখন মানসিকভাবে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। তাই ঈশিতার সব গঞ্জনা চুপচাপ সহ্য করেছে। কোন প্রতিবাদ করে নি। আয়ুশ ঠিক করেছে এই অবস্থায় ঈশিতা যতই পাগলামি করুক সে ঈশিতার পাশে থাকবে। ঈশিতা সময় দেবে। ঈশিতাকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতেই হবে। এভাবে চলতে থাকলে যে ঈশিতা একদম পাগল হয়ে যাবে।

এদিকে ঈশিতার মাথায় অন্য চিন্তা ঘুরছিল৷ সে নিজের সন্তান হারানোর ব্যাথা কোন ভাবেই ভুলতে পারছে না। আয়ুশকে নিজের চোখের সামনে দেখলে তার ঘা তাজা হয়ে উঠছে। এজন্য ঈশিতা নিলো এক ভয়াবহ সিদ্ধান্ত। সে আর আয়ুশের মুখোমুখি হতে চায় না। চায় না আয়ুশের সাথে আর কোন সম্পর্কে আবদ্ধ থাকতে। এবার আয়ুশকে পরিস্কার করে সব বলে দেবে সে।

~~~~~~~~~~~~~

~~~~~~~
ঈশিতা যখন আয়ুশকে দোষারোপ করতে ব্যস্ত তখন আয়ুশ ব্যস্ত ঈশিতার কেয়ার করতে। ঈশিতাকে খাইয়ে দেবার জন্য নিজের হাতে ভাত নিয়ে এসেছে আয়ুশ। কিন্তু আয়ুশকে দেখেই ঈশিতা ক্ষেপে গেছে। আয়ুশের আনা ভাত ছুড়ে ফেলে বলে ওঠে,”এসব নাটক করার কোন প্রয়োজন নেই। তুমি আমার সামনে আর আসবে না। নাহলে কিন্তু আমি নিজেকে একদম শেষ করে দেব।”

“ঈশিতা তুমি সামলাও নিজেকে।”

আয়ুশের কথায় ঈশিতা আরো বেশি রেগে গিয়ে বলে,”আমার জীবনটা নরকে পরিণত করে এখন আমাকে বলছ সামলাতে? এটা সম্ভব নয়। আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না। এই তুমি আমায় ডিভোর্স দিয়ে দাও তো, ডিভোর্স দিয়ে দাও। তাহলে আমি একটু শান্তি পাবো। নাহলে আমার জীবনে শান্তির শ ও আসবে না।”

আয়ুশও এবার রেগে যায়। তবু নিজেকে সামলে বলে,”একবার যখন তোমার হাত ধরেছি তখন মৃত্যুর আগ অব্দি তোমার হাত আমি ছাড়বো না।”

ঈশিতা কিছু একটা মনে করে বলে,”বেশ তাহলে আমি মরে যাই। মরে গিয়েই মুক্তি পাই।”

আয়ুশ বুঝতে পারে ঈশিতা এখন নিজের মাঝে নেই। আয়ুশ ঈশিতার কাছে এসে তাকে মানানোর চেষ্টা করতে থাকে। ঈশিতা একটা কাচের গ্লাস ভেঙে নিজের হাত কাটতে চায়। আয়ুশ ঈশিতাকে আটকানোর জন্য তার হাত থেকে সেটা ছিনিয়ে নিতে চায়। কিন্তু বিধি বাম। সেই কাঁচটা উলটো আয়ুশের বুকে ঢুকে যায়। ঈশিতা চিৎকার করে ওঠে। গলগল করে রক্তের স্রোত নামে। আয়ুশ বলে ওঠে,”মুক্তি চেয়েছিলে না তুমি? আল্লাহ বুঝি এবার তোমার থেকে আমায় চিরতরে মুক্ত করার বন্দোবস্ত করে দিবেন।”

ঈশিতা বলে ওঠে,”নাহ,এমন কিছু হতে পারে না। আপনার কিছু হবে না। ইয়া মাবুদ, এটা কি হয়ে গেল।”

আয়ুশ লুটিয়ে পড়ে। ঈশিতা ডাক্তারকে ডাকতে থাকে। কিন্তু ডাক্তার আসে না। ঈশিতার এবার ভীষণ ভয় করতে থাকে। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে অতঃপর নিজেই উঠে পড়ে আয়ুশের শ্বাস প্রশ্বাস চেক করে। এখনো শ্বাস চলছে। এরমধ্যে ডাক্তার ছুটে এসে আয়ুশকে দেখে ঘাবড়ে যান।

“রোগীর অবস্থা তো বেশি ভালো না, ওনাকে জলদি অটিতে নিতে হবে।”

ঈশিতা হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। এ কোন নতুন বিপদে পড়তে হলো তাকে। ঈশিতা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগল যেন আয়ুশ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে। আয়ুশকে অটিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

to be continue…..