#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৭
গাড়ি আবারও থেমে গেল। রোদকে রেখেই বাহির হয়ে গেল আদ্রিয়ান। বেচারী কিছু বলার সুযোগও পেল না। আদ্রিয়ান একটু পর ফিরে এলো। গাড়িতে ডুকে রোদের কোলে এতোগুলা চকলেট আর ৫টা কটন কেনডি দিল। রোদের মুখে ফুটে উঠল ঠিক কটন কেনডির মতো মিষ্টি একটা হাসি। যা এক জনের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দিতে সক্ষম। রোদ হাসি মুখে আদ্রিয়ানকে বললো,
— অনেক গুলো থ্যাংকউ আপনাকে। আর হাওয়াই মিঠাইয়ের জন্য একস্ট্রা একটা ধন্যবাদ।
— হু।
রোদের দিকে না ফিরে গাড়ি স্টার্ট দিল আদ্রিয়ান। রোদ বুঝল যে আদ্রিয়ান একটু আপসেট। কেন যে ঐ প্রশ্ন করলো। নিজের উপর বিরক্ত হলো রোদ। কিন্তু যত যা ই হোক নিজের উপর টর্নেডো বয়ে যাক হাওয়াই মিঠাই তো আর মিস করা যায় না তাই না? তাই ঝটপট পাতলা পলিথিন নিজের ছোট দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেললো রোদ। এরপর আর কি খাওয়া শুরু। খেতে খেতে আরো একবার আদ্রিয়ানকে ধন্যবাদ দিল। এরপর তিন আংগুল দিয়ে একটু ছিড়ে আদ্রিয়ানের ঠোঁটর সামনে ধরলো। আদ্রিয়ান কি না বলে ঠোট ফাক করে দিলে রোদ সযত্নে তা আদ্রিয়ানের মুখে পুরে দিল। একটা হাসি দিয়ে উৎফুল্ল হয়ে রোদ বললো,
–মজা না?
এমন প্রশ্নে মনে হচ্ছে রোদ হয়তো নিজে এটা বানিয়ে এনেছে। কিন্তু আদ্রিয়ান কিছু না বলে শুধু মাথা নারালো। রোদের এখন মন খারাপ বেশি হচ্ছে। কেন এই লোক কথা বলছে না। কি করেছে রোদ যে এমন করছে। তবুও রোদ কিছু বললো না। শুধু নিজে খাচ্ছে আর মাঝেই আদ্রিয়ানের মুখে তুলে দিচ্ছে। আদ্রিয়ান বেশ উপভোগ করতে লাগলো এই মুহূর্তকে। এই যে তার ছোট বউটা বিচলিত হয়ে বারবার পিটপিট করে আদ্রিয়ানকে দেখছে। নিজে যে হাতে ঠোঁট ছুয়ে খাচ্ছে ঐ হাত দিয়ে আদ্রিয়ানের মুখেও তুলে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আদ্রিয়ান ওর ঠোঁট হালকা করে রোদের আংগুলে ছুয়িয়ে দিচ্ছে। তবুও কিছু বলছে না। চারটা কটন কেনডি খেয়ে শেষ। বাকি ১ টা। রোদ বললো,
— চারটা তো খেয়ে ফেললাম। ১ টা বাসায় নেয়া যাবে না। এগুলো মিষ্টিকে একদম দেয়া যাবে না। সুগার বেশি থাকে। আপনি গাড়ি থামান।
আদ্রিয়ান গাড়ি থামাতেই রোদ জানালা দিয়ে একটা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা পিচ্চিকে ডাক দিল।
— এই এই পিচ্চি।।।
পিচ্চিটা রাস্তায় বাদাম বিক্রি করে।তাই এসে বললো,
— জে আপা বাদাম দিমু।
— উমমম।। হু দাও ১০ টাকার।
পিচ্চি ১০ টাকার বাদাম দিল। রোদ ১০০ টাকার নোট দিলে আদ্রিয়ান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— পিচ্চি এখানে আয়। আমি দিচ্ছি টাকা।
রোদের মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। এই লোক ওর সাথে কথা কেন বলছে না। তাই একটু জোরে বললো,
— ওই পিচ্চি এই নে টাকা। আমি ডেকেছি আমিই দিব টাকা।
বলে ১০০ টাকা দিল আর কটন কেনডিটা দিল।
পিচ্চি বললো,
— আপা এইডা আমারে দিলেন।
— হুম। আর বাকি টাকা ও দিতে হবে না। ওই টাও তোমার।
পিচ্চি খুশি হয়ে চলে গেল। আর আদ্রিয়ান শীতল চোখে দেখলো তার ছোট পাখিটাকে।এরপর আবার গাড়ি স্টার্ট দিল। রোদ বাদামের খোসা ছাড়িয়ে প্রথমেই আদ্রিয়ানের সামনে দিল। আদ্রিয়ান কিছু না বলেই মুখ খুললে রোদ মুখে বাদাম পুরে দিল। আর বিরবির করে বললো,
— বাহ্ বাহ্!!! কি রাগ কি রাগ। রাগ দেখে বাচি না।
আদ্রিয়ান শুনে মুচকি হাসলো রোদের অগচরে।
_________________
বাসায় ডুকার সাথে সাথে একপ্রকার হইচই লেগে গেল। সবাই ব্যাস্ত রান্না বান্না করার জন্য। মিষ্টি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
— মাম্মা।।।
— আমার বাচ্চাটা বুঝি মিস করছিল তার মাম্মাকে।।
— হুমমমম।
বলে লাফ দিয়ে আবার আদ্রিয়ানের কোলে গেল। ওরা রুমে ডুকে গেল। রোদ কাবার্ড থেকে ড্রেস বের করছিল। এমন সময় সাবা, জারবা আর জাইফা এলো। হুরমুরিয়ে সাবা ডুকে বললো,
— রোদ আজকে সারি পরবি।
–কেন?? ( চিন্তিত হয়ে)
জারবা বললো,
— আম্মু বলেছে।
— ওহ। কিন্তু আমি পরতে পারি না তো। আর শাড়ি আনি ও নি।
রুমে ডুকতে ডুকতে আদ্রিয়ানের মা আর ছোট মামি বললো,
— তো কি হয়েছে। এই নে শাড়ি। তোর জন্য তোর শশুর এনেছে।
রোদ হেসে বললো,
— ধন্যবাদ আন্টি।
— হু হয়েছে। আর ধন্যবাদ দিতে হবে না মা। তুই তো আমদের বাড়ির খুশি ফিরিয়ে দিল তোকে কিভাবে ধন্যবাদ দিব। খাবার রুমে পাড়িয়ে দিচ্ছি। দুই জন খেয়ে নে। আর সাবা ওকে রেডি করিয়ে দিও।
উত্তরে সাবা হেসে বললো,
— মা আমি দেখে নিব। আপনি যান।
ছোট মামি হুট করে বললো,
— আন্টি কেন ডাক ছোট বউ? শাশুড়ীকে এখনো মা ভাবতে পারো নি মনে হয়।
— না আসলে….
রোদকে বলতে না দিয়েই আদ্রিয়ানের মা বললো,
— আমারই তো মেয়ে যখন খুশি তখন বলবে। এখন চলো কিচেনে। মাগরিবের পর থেকে গেস্ট আসা শুরু করবে।
বলে তারা চলে গেল। রোদের একটু খারাপ লাগলো। মামি তো ঠিকই বললো। আবার শাশুড়ীর জন্য সম্মান ও একটু বাড়লো। আদ্রিয়ান রোদকে উদ্দেশ্য করে জারবাকে বললো,
— জারবা ঠান্ডা যদিও কমেছে তবুও এই সময় গোসল করলে ঠান্ডা লাগতে পারে। মাথায়তো আর গরম পানি ঢালা যাবে না তাই চুল ভেজাতে না বলিস তর ছোট ভাবীকে।
বলে আদ্রিয়ান নিজের ড্রেস নিয়ে জারবার ওয়াসরুমে চলে গেল নাহলে লেট হয়ে যাবে। জারবা বোকার মতো আবার এ কথা রোদকে বলতে শুরু করলো। জাইফা ওর মাথায় টোকা দিয়ে বললো,
— তুই গাধাই রয়ে গেলি। ভাইয়া তো রোদের সামনেই বললো তুই কেন রিপিট করছিস?
— ও তাইতো। আমার ভাই কতো পসেসিভ ভাবীকে নিয়ে।
সাবা বললো,
— হইসে চল এবার। রোদ লজ্জা পাচ্ছে।
বলে তিনজন বেরিয়ে গেল। আর রেখে গেল রাগী রোদকে। রোদের মেজাজ বেযায় খারাপ হচ্ছে। কষ্টে চোখে পানি চলে এলো আদ্রিয়ান কেন তার সাথে কথা বলছে না। রাগে গোসলের সময় চুল ভেজালো। চুল না ভেজালে ওর মনে হয় যে গোসল ই হয় নি। মা কতো বকতো এর জন্য। মা বকার থেকে বাচার জন্য রাদ হেয়ার ড্রায়ার ও এনে দিয়েছিল কিন্তু রেগুলার তা ইউজ করে না রোদ কারন তাহলে হেয়ার ডেমেজ হয়ে যায়।
আদ্রিয়ান রুমে আসতেই জারবা আর জাইফা খাবার দিয়ে গেল। আদ্রিয়ান ফোনে কথা বলতে ব্যালকনিতে গেল। রোদ চুলে টাওয়ার পেচিয়ে বের হলো। রুমের সাইড টেবিলে খাবার রাখা। উকি দিয়ে দেখলো আদ্রিয়ান বারান্দায়। তাই নিজে ফেসে ক্রিম আর হাতে পায়ে লোশন লাগিয়ে হাত ধুয়ে বের হলো।
আদ্রিয়ান রুমে এসে দেখে রোদ চুল ভিজিয়েছে। রাগ হলেও কিছু বললো না। রোদকে ধরে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে টাওয়াল খুলে নিজেই সুন্দর করে চুল মুছে দিচ্ছে। আয়নার মধ্যে আদ্রিয়ানকে দেখছে রোদ। কত যাত্ন করে মুছে দিল।
মুছে বেলকনিতে চলে গেল টাওয়াল নিয়ে। রোদ কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু আদ্রিয়ান সুযোগ দিল না। রোদের চোখে পানি চলে এলো। কি মনে করে নিজেও উঠে বেলকনিতে এসে দাড়ালো। আদ্রিয়ান তখন টাওয়ার শুকাতে দিয়ে রুমে ডুকবে এমন সময় কেউ পেছন থেকে দু হতে জড়িয়ে পিঠে মুখ গুজে কাদতে লাগলো। আদ্রিয়ান ভরকে গেল। পুরো ব্যাপার বুঝতে ২ মিনিট লাগলো। যখন বুঝতে পারল তখন রোদের কান্নার বেগ বেরে গেল। শীতের মধ্যে ও আদ্রিয়ান বুঝল তার পিঠের দিকে টিশার্ট ভিজে যাচ্ছে। কিন্তু রোদ কেন কাঁদছে। বাসায় যাওয়ার জন্য? এসব চিন্তা বাদ দিল আদ্রিয়ান। রোদকে শান্ত করার জন্য বুকের সামনে রাখা রোদের দু হাতের উপর হাত রেখে ছাড়াতে চাইলো। এতে রোদ আরো জোড়ে ধরে হু হু করে কেদে দিল। রোদের কান্নায় যে কারো বুকে ছুড়ি আঘাত করছে তা কি রোদ বুঝতে পারে? আদ্রিয়ান অস্থির হয়ে গেল। বললো,
— কি হয়েছে রোদ? আমার পাখি কেন কান্না করছে। দেখি ছাড় আমার সামনে আস।
রোদ আরো জোড়ে ধরে কান্না করছে আর বললো,
— ন না আমি ছাড়বো না।। আমি সরি অনেক গুলো সরি।
— আরে বাবা সরি কিসের জন্য?
— আপনি কেন আমার সাথে কথা বলছেন না? রেগে আছেন আমার উপর? মাফ করে দিন। আর কখনো ফুচকা খেতে চাইবো না তবুও কথা বলুন প্লিজ। আমার ভালোলাগে না আপনি কথা না বললে।
আদ্রিয়ানের হৃদয়ের মরুভূমিতে যেন একপশলা বৃষ্টি সব ভিজিয়ে দিল। আদ্রিয়ান উত্তর দিচ্ছে না দেখে রোদ আবারও কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিল আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি জোড় করে ছাড়িয়ে টাইট করে বুকে চেপে নিল। বুকের মধ্যের হৃদপিন্ডটা মনে হয় বেশি লাফালাফি করছে। উফ!! মেয়েটার কান্না সহ্য হয় না আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান বুকের মধ্যে ১০ মিনিট চেপে ধরে রাখলো। কান্না বেগ কমেছে তবুও ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান উচু করে রোদকে নিয়ে রুমে এলেো। নিজের থেকে ছাড়িয়ে কপালে চুমু খেয়ে কাপালে কপাল ঠেকিয়ে রাখলো। কতক্ষণ এমন থেকে ঘনঘন নিশ্বাস নিল দুজন। শ্বাস প্রশ্বাস এক হতে আর অপেক্ষা করলো না। আদ্রিয়ান সারামুখে তখন চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে তুলেছে রোদকে। আদ্রিয়ানের এমন স্পর্শে হালকা কেপে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান আবারও বুকে চেপে ধরে বিছানায় বসলো রোদ ওর কোলে। আদ্রিয়ান বললো,
— হয়েছে আজ আর না। এতো কান্না কেন হুম। কে বলেছে আমি রাগ করেছি?
— তাহলে কথা কেন বলছিলেন না? আমার কেমন যেন লাগছিল।
বলে আবার কেদে দিল। আদ্রিয়ান এই প্রথম নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালো। কেন হারাবে না? তার রোদুপাখি এই প্রথম বললো যে তার নাকি ভালোলাগে না আদ্রিয়ানের কথা শুনলে। এই প্রথম নিজে থেকে এতো কাছে এলো। মনে সাহস জুগিয়ে হালকা করে ঠোঁটের ছোয়া দিল রোদের হালকা গোলাপি নরম ঠোঁটে।যদিও ১ সেকেন্ডের ও ছিল না তবুও এই প্রথম এতো কাছে আদ্রিয়ান এলো। জীবনে প্রথম এমন স্পর্শে কান্না থেমে গেল রোদের। লজ্জা ভর করলো দু গালে। কি করবে কোথায় লুকাবে এই চেহারা রোদ হায় আল্লাহ! আদ্রিয়ানের দেয়া লজ্জা লুকাতে আদ্রিয়ানের বুকে মুখ লুকালো রোদ। আদ্রিয়ান একটু ভয় পেয়েছিল রোদের কান্ডে জোরে হেসে উঠল। বললো,
— ওরে আমার লজ্জাবতী বিড়াল। আসো খাবে লেট হচ্ছে।
রোদ উঠল না বরং বুকে ডুকার চেষ্টায় আছে সাথে আদ্রিয়ানের বুকের ঘ্রাণ যেন মাতাল করে দিচ্ছে। আদ্রিয়ান রোদকে বুক থেকে তুলে আবার চুমু খেল কপালে এরপর বললো,
— বউ চুমু খেয়ে তো পেট ভরবে না। আসো খাবে।
— আগে বলুন রাগ করে নেই ।
— কিন্তু আমি তো রাগ করিই নি।
— তাহলে কথা কেন বলছিলেন না?
— কারণ তোমার প্রশ্নের উত্তর ছিল না আমার কাছে। আসো খাবে।
— খাব না মাথা ব্যাথা করছে।
— কি দেখি আসো খায়িয়ে দি। কান্না করলে তো মাথা ব্যাথা করবেই।
বলে আদ্রিয়ান ভাত মেখে রোদকে খাওয়ালো আর নিজেও খেয়ে নিল। রোদের মাথা ব্যাথা করছিল বলে বিছানায় গেল একটু ঘুমালে যদি ভালোলাগে। রোদ শুতেই একটা শক্ত হাত নরম ভাবে তার কপালে টিপে দিচ্ছে। ও জানে এটা কে তাই আলতো করে বালিশ ছেড়ে ওই হাতের মালিকের বুকে মাথা রাখলো।
একটু পরই সাবা রুমে নক করে বললো,
— রোদ!!
আদ্রিয়ান বললো,
— আসছি ভাবী।
আদ্রিয়ান দরজা খুলে দিলে সাবা, জাইফা রুমে এলো। সাবা বললো,
— গেস্ট রা এসে পরবে। রোদকে রেডি করাতে হবে।
আদ্রিয়ান চিন্তত হয়ে বললো,
— ওর তো মাথা ব্যাথা। এখন উঠলে তো আরো বেড়ে যাবে।
ওদের কথার মধ্যে জারবা জোরে জোরে কথা বলতে বলতে রুমে ডুকলো। ওর কথার আওয়াজে রোদের কাচা ঘুম ভেঙে গেল। আদ্রিয়ান শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে জারবাকে বললো যাতে কফি এনে রোদকে দেয়।
#চলবে….
#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৮
লাল সাদা মিশ্রণে জরজেটের পাথর বসানো সুন্দর একটা শাড়ি রোদকে পড়িয়ে দিল সাবা। ফুল হাতা ব্লাউস। চুলে সাইডে সিথি করে পেছনে খোঁপা করে দিল। ঠোঁট ম্যাট লিপস্টিক, নুড কাজল কারন রোদ কাজল দিতে পারে না চোখ দিয়ে পানি পরে আর মাসকারা যা ওর পাপড়ি গুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। মুখে আর কিছুর প্রয়োজন বোধ করলো না সাবা কারন এই মেয়ে এমনি অনেক সুন্দর। কানে স্বর্নের ঝুমকা, গলায় ছোট একটা হার আর দু হাতে শাশুড়ীর দেয়া চুরি। শাড়ীর আচল টেনে মাথায় দিয়ে দিল সাবা। রোদ আয়নার সামনে নিজেকে দেখা মাত্র চমকে গেল। পুরো নতুন বউ লাগছে। পরে মনে পরলো ও তো নতুন বউই। সাবা বললো,
— আমাদের রোদকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
জারবা তো চিৎকার দিয়ে বললো,
— ছোট ভাবী ভাইয়া তোমাকে দেখলে তো পুরাই ফিট।
লজ্জায় কান আর গাল গরম হয়ে গেল। জাইফা এসে বললো,
–ওমা রোদ তোমাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে। ভাবী ফুপি ডাকে নিচে।
— আসছি
বলে চলে গেল সাবা জারবা। এমন সময় আদ্রিয়ান রুমে ডুকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রোদের দিকে অজান্তেই মুখ দিকে বের হলো মাশাআল্লাহ ।এই প্রথম দেখলো রোদের এই রূপ। শাড়ি পরা রোদকে আজ মোটেও ছোট লাগছে না। মনে হচ্ছে ২০/২১ বয়সী যুবতী নতুন বউ। বিয়ের দিন ও রোদ শাড়ি পরেছিল কিন্তু ঐ দিনের চেহারা ছিল বিধস্ত আর আজ লজ্জাবতী। লাল সাদায় যেন রোদের সুন্দরর্য ফুটে উঠলো। আর এমন গয়নাতে আর ঘুমটাতে পুরোই বউ লাগছে। আদ্রিয়ানের নিজের উপর নিয়ন্ত্রন করা দিন দিন কষ্টের হয়ে যাচ্ছে। আদ্রিয়ান ধীর ভাবে রোদের দিকে দিকে এগিয়ে গেল। রোদ ওর দিকে তাকিয়ে নিজের চোখের দিকে আংগুল দিয়ে ইশারা করে বললো,
— দেখুন।
— হু দেখছি।
বলে আদ্রিয়ান এগিয়ে আসতে নিলেই রোদ বললো,
— আরে আরে কই আসছেন। আমার চোখে দেখুন মাসকারা ছড়িয়ে যায় নি তো।
রোদের কথায় আদ্রিয়ান হুসে আসলো।গলা ঝেরে বললো,
— উহু। ঠিক আছে।
— আর কিছু বলবেন না?
— কি বলবো?
— কিছু না।
বেচারী রোদ ভেবেছিলো আদ্রিয়ান একটু হলেও প্রশংসা করবে কিন্তু কিছুই বলছে না। তাই মুখ ভেংচি দিয়ে হাতে চশমাটা নিয়ে চোখে পরে নিল। কারণ মাথা ব্যাথাটা কমার নাম নিচ্ছে না। তা দেখে আদ্রিয়ান বললো,
— মাথা ব্যাথা কমে নি?
— না।
— মেডিসিন দেই??
— এই না না। কমে যাচ্ছে।
আদ্রিয়ান জানে এই মেয়ে সহজে মেডিসিন নিবে না। কিছু বলার আগেই সাবা এসে রোদকে হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল। সিড়ি দিয়ে নামতেই সবার নজর রোদের দিকে গেল। রোদের শাশুড়ি দেখে বললো,
— মাশাআল্লাহ। আমার মেয়েকে তো অনেক সুন্দর লাগছে। এই প্রথম বউ বউ লাগছে।
বলে সবার সামনে নিয়ে গেল। রোদকে নিয়ে যেতেই রোদ সালাম দিল। আদ্রিয়ানের নানু তো বেশ খুশি এতো সুন্দর বউ তার আদ্রিয়ানের। নাতিটা আগের মতো হলেই শুকরিয়া। সবাই রোদকে নিয়ে নানা মন্তব্য করতে লাগলো। এর মধ্যে একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বললো,
— বউ কি চোখে কম দেখেনি?
রোদ এমন প্রশ্নের জবাবে কি বলবে আজকাল তো এটা স্বাভাবিক। তবুও বললো,
— না চাচি। মাথা ব্যাথার জন্য মাঝে মধ্যে পড়ি।
— ওওওহ।
টেনে টেনে বললো মহিলাটি। বাকি সবাই ভালো প্রশংসাই করছে। ওই মহিলার সাথের একজন বলে উঠলো,
— তোমাদের কি প্রেমের বিয়ে? এভাবে হঠাৎ করে যে হলো।
এবার কি বলবে রোদ। এটা বলবে ও নিজেই জানতো না ওর বিয়ে আর তাও আদ্রিয়ানের সাথে।
বাড়ির সবাই ওই দিকে ব্যাস্ত থাকায় এদিকের খবর কেউ জানতো না। হুট করে জারবা এসে রোদের পাশে ধপ করে বসে বললো,
— আল্লাহ আন্টি কি জানেন আমি প্রথম ভাবীকে দেখতে গিয়েছিলাম। আরো কি হয়েছে জানেন..
বলার আগেই ওর মা এসে ওকে থামালো। এরপর বললো,
— ভাবী আমরা পছন্দ করে এনেছি। আসুন খাবার খাবেন
বলে সবাইকে নিয়ে খাবারের ওখানে গেল।এর মধ্যে মিষ্টি এসে রোদের কোল বসলো। রোদ ওর গাল টেনে বললো,
— কি খাবে আমার বাচ্চা?
মিষ্টি মাথা এদিক ওদিক নাড়িয়ে বললো,
— নুডুলস।।
–আমি জানতাম তো চল।
বলে মিষ্ট তুলে কিচেন থেকে নুডুলস নিয়ে সোফার দিকে বসে খায়াতে লাগলো। খাওয়া শেষ হলে মিষ্টিকে কোলে নিয়েই বসে রইল। মাথা ব্যাথাটা যেন বেড়েই যাচ্ছে কিন্তু এখান থেকে যেতেও পারছে না। রোদের পাশে ঐদুইজন মহিলা বসে ওর সাথে কথা বলতে লাগলো। মিষ্টিকে ওর কোলে দেখে বললো,
— তা কিছু মনে করো না তোমার মা-বাবা কেন এখানে বিয়েতে রাজি হলো বুঝলাম না।
রোদ বুঝতে না পেরে বললো,
— মানে?
অন্য মহিলাটা বললো,
–না বুঝতে পারার কি আছে? তোমার মতো সুন্দর মেয়েকে বিবাহিত ছেলে যার নাকি মেয়েও আছে তার সাথে বিয়ে কেন দিল?
রোদ কি বলবে নিজেও জানে না। শুধু অসহায় চোখ করে তাকালো কারন রোদ কোনদিন ও এমনভাবে ভাবেনি। আদ্রিয়ানের আগে বিয়ে হয়েছে মিষ্টি ওর মেয়ে না এমন ভাবনা কখনো আসে নি। রোদের মুখে উত্তর না পেয়ে আরেকজন বললো,
— অনেক সময় মেয়ের সমস্যা থাকলে আবার বড়লোক ঘর দেখলে ছেলের কিছু দেখে না বুঝলেন ভাবী।
রোদের চোখে পানি আর আটকে থাকলো না। পানি মুছতে চশমাটা খুলে ফেললো। এরপর বললো,
— আপনি কি আমার চরিত্রের সার্টিফিকেট চাচ্ছেন নাকি আমার বাবার ব্যাংকের এমাউন্ট?
— আরে আমরা কেন তা জানতে চাইব? বড়দের সাথে কথা বলতে জানো না? আর এমন ভাবে আদর করছ যেন নিজের মেয়ে।( মহিলা)
–আমি ঠিক ভাবেই কথা বলছি তার মানে এই না যে যে না সে এসে যা বলবে আর আমি উত্তর দিব না।আর রইল মিষ্টির কথা তা বুঝতে আগে নিজের মনমানসিকতা পাল্টান।
একদমে বলে উঠলো রোদ।এমন সময় আদ্রিয়ানের মা হাসি মুখে এসে বললো,
— ভাবী আপনি হয়তো জানেন না রোদ নিজে মেডিক্যালের স্টুডেন্ট। আর বাবা,ভাইয়ের নিজেদের ব্যাবসাও আছে। আর মিষ্টিকে ওর থেকে কেউ বেশি আদর করতে পারবে না এমন কি রিয়াও না।
ওই মহিলা ঘাবরে যেয়ে বললো,
— না না ভাবী আপনি ভুল ভাবছেন। আমরা তো এমনি বলছিলাম।
আদ্রিয়ানের মা আবার বললো,
— থাক। রাতে কিন্তু খেয়ে যাবেন।
মহিলারা আর কিছু বললো না। রোদ মিষ্টিকে কোলে তুলেই চলে গেল। চোখ দিয়ে টুপটাপ করে কয়েক ফোটা পানি পরলো। মিষ্টি বললো,
— মাম্মা ঐ আন্টি রা পচা। তোমাকে বকেছে।
রোদ চোখ মুছে বললো,
— কাউকে পচা বলতে হয় না মা। উনি বকেনি আমাকে। আচ্ছা দেখতো মাম্মার চোখে ময়লা গেল নাকি?
মিষ্টি মনযোগ দিয়ে দেখা শুরু করলো। কিন্তু কিছু বুঝলো না। এমন সময় জারবা, সাবা আর জাইফা এলো। সাবা মিষ্টিকে কোলে তুলে বললো,
— মিষ্টি আম্মু দেখতো আলিফ কোথায়।
বলতেই মিষ্টি চলে গেল আলিফকে খুজতে। সাবা রোদের দিকে ফিরে এসে ওর দুগালে হাত দিয়ে বললো,
— এই মেয়ে মন খারাপ কেন হুম? বাইরের মানুষের কথায় মন খারাপ করতে নেই? আমরা জানি তুই কি আমাদের কাছে। এখন মন খারাপ করিস না আমি পরে আসছি ঐ দিকে দেখে আসি।
রোদ হালকা হেসে কিছু বললো না। সাবা যেতেই জারবা বললো,
— ছোট ভাবী জানো ঐ আন্টি ওনার মেয়ের জন্য ভাইয়ার কথা বলতে এসেছিল কিন্তু ভাইয়াতো রেগে মেগে শেষ। ওনার মেয়ে আবার মিষ্টিকে আদর করতো তবুও ভাইয়া রাজি হয় নি। তাই তো তোমাকে এতো কথা শুনালো।
রোদ বুঝতে পেরে বললো,
— কি নাম ছিল?
— রিয়া।
— ওহ্
রোদ আর কিছু বললো না কিন্তু মনটা আর ঠিকও হলো না। রাতে খেয়ে দেয়ে সবাই চলে গেল।সবাই সালামি দিয়েছে রোদের হাতে। শাশুড়ী এসে রোদকে সোফায় বসিয়ে হাত ধরে বললো,
— সরি আম্মু। আমি থাকতেও তোকে কথা শুনতে হলো। প্রথমে ভাবী পরে ওনারা।
রোদ তড়িৎ বেগে বললো,
— প্লিজ আন্টি এভাবে বলবেন না। আমি তো উত্তর দিয়েছি। আপনি মন খারাপ করবেন না।
ওদের কথার মধ্যে আদ্রিয়ান, আরিয়ান,বাবা, জাইফ আর বাকি মামারাও এসে পরলো। এখন রাত ১০ঃ৪৫। সবাই খেতে বসলো। কিন্তু আদ্রিয়ান ওর মায়ের সাথে কোন কথাই বলছে না। উনি এতো করে এটা ওটা বললো কিন্তু লাভ হলো না। সবাই বিষয়টা খেয়াল করলো। কেউ কিছু বুঝলো না কারন। সবার খাওয়া শেষ। কিন্তু টেবিলে বসেই কিছু কথা বলছে। আদ্রিয়ান শুধু রোদকে খাবার কম খেতে দেখে চোখ ঘুরানি দিয়েছে কয়েকবার।রোদ মাথা নিচু করে একটু একটু করে খেয়ে আর খেতে পারলো না। আদ্রিয়ান এবার ধমক দিয়ে বললো,
— এই মেয়ে এখন শেষ করো এগুলো।
হঠাৎ ধমকে কেপে উঠলো রোদ। মিনমিন করে বললো,
— আর পারছি না।
এবার আরো জোড়ে ধমক দিয়ে বললো,
— তা পারবে কেন?
রোদের চোখ আবার ঝাপসা হয়ে গেল।আদ্রিয়ানের বাবা এবার গম্ভীর কণ্ঠে বললো,
— আদ্রিয়ান সবার সামনে ওকে এভাবে ধমকাচ্ছো কেন?
ওর মা বললো,
আস্তে আস্তে খাবে তাই বলে তুই ধমক দিবি নাকি? আমি আছি এখানে।
আদ্রিয়ান এবার দ্বিগুণ তেজে বললো,
— ওহ তুমি আছো আম্মু আছো সবাই আছে ভালোতো। আমি ধমক দিলে সমস্যা আর বাইরের মহিলারা আমার বাসায় এসে আমার বউকে আজেবাজে কথা শুনায় তখন কোথায় ছিলা তোমরা।
সবার বুঝতে আর বাকি নেই কি হয়েছে। আদ্রিয়ানের নানু বললো,
— নানুভাই রাগ করে না। ১০ জনের মধ্যে ১ জন খারাপ বলতেই পারে..
আর কিছু বলতে না দিয়ে আদ্রিয়ান বললো,
— নানুমনি রোদ এবাড়ি কারো কথা শুনতে আসে নি। বাড়ির মানুষদের কিছু বলি নি মানে এই না যে বাইরের কাউকেও কিছু বলবো না।
সবার বুঝতে আর বেগ পেতে হলো না যে আদ্রিয়ান এটা বড় মামিকে উদ্দেশ্য করেই বলেছে।আরিয়ান বললো,
— ঠিক বলেছে আদ্রিয়ান।
এরপর সবাই জারবার দিকে তাকালো। সবাই যানে এই কাজ এই মেয়েরই। জারবা একটা ঢোক গিলে দিল ভো দৌড়।আরো কিছুক্ষন কথা বলে সবাই চলে গেল। রোদের মন এখন খারাপ হয়ে আছে। শুধু শুধু ধমকালো সবার সামনে। এই লোক রোজই রোদের সাথে এমন করে। বকবে আবার আদর করবে। ক্যান রে শালা রোদ বুঝি সরকারি মাল যখন যা খুশি তা করবি। রোদ আজ মোটেও আদ্রিয়ানের চিকনি চুপরি কথাতে গলবে না। এসব ভেবেই মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল আর মরার উপর খাড়া এই মাথা ব্যাথা। উফ বলে রোদ রুমে গেল। হাতে থাকা টাকা গুলো ড্রেসিং টেবিল রাখলো। এগুলো ও আদ্রিয়ানকেই দিয়ে দিবে। পরে আবার কে কথা শুনায় আল্লাহ জানে। রুমে ডুকে মাকে কল দিল তারপর ২০ মিনিট কান্নাকাটি জুড়ে দিল। কথা কম কান্নাকাটি বেশি। রোজই এমন করে। ফোন রাখতেই ব্যাথা আবার বেড়ে গেল। রোদ খেয়ালই করেনি এতক্ষণ আদ্রিয়ান দরজায় দাড়ানো ছিল।
আদ্রিয়ান বললো,
— কান্না শেষ?
রোদ ভয় পেয়ে তাকালো। আদ্রিয়ান বললো,
— বাসায় বিচার দিলে না আমার নামে?
রোদ ভ্রু কুচকে তাকালো। রোদ কখনোই এমন করে না। এবাড়ির কথা ওবাড়ি বলে না। এতে সমস্যা বাড়ে। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে দরজা অফ করে দিল। হাতে একটা প্যাকেট। তা ড্রেসিং টেবিলে রাখলো। টেবিলে টাকা দেখে বললো,
— এখানে টাকা রাখা কেন?
— আপনার টাকা ওগুলো।
— আমার মানে?
— গেস্টরা দিয়েছিল।
— তো তুমি রাখ তোমাকে দিয়েছে।
রোদ মুখ ফসকে বললো,
— হ্যা আমি রাখি পরে আবার বকা শুনি।
বলেই জিহবায় কামড় দিল।কি বলতে কি বলে ফেললো। আদ্রিয়ান বুঝতে পেরে মনটা খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা আসছে পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে কথা শুনতে হচ্ছে। আদ্রিয়ান ওর সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,
— সরি।
— কেন?
— তোমাকে আজ কথা শুনতে হলো।
— আমিও উত্তর দিয়েছি। ব্যাপার না।
বলে আবার বিরবির করে বললো,
— নিজে ধমকায় তা কিছু না।
আদ্রিয়ান শুনে বললো,
— কি বলছো বিরবির করে সবই তো শুনছি।
রোদ আর কিছু না বলে উঠে গেল চেন্জ করবে বল। রোদ উঠতেই আদ্রিয়ান পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। রোদ ছাড়ানোর জন্য ছটফট করতে লাগলো। এই লোক এভাবে ধরে রাখলে রোদের রাগ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে যাবে। আদ্রিয়ান ওভাবেই রোদের ঘাড়ে মুখ গুজে দিল।
#চলবে….
#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ২৯
আদ্রিয়ানের এমন স্পর্শে রোদ রাগ কিভাবে করবে ওতো রীতিমতো কাঁপা কাপি শুরু করেছে। আদ্রিয়ান ও ছাড়ার পাবলিক না ঐভাবেই ধরে আছে। রোদ অনেক কষ্টে বললো,
— ছাড়ুন।
— উহু।
— আজব চেঞ্জ করব আমি। আর কতক্ষণ শাড়ী পরে থাকব?
— যতক্ষণ আমি বলবো।
— আমি কেন আপনার কথা শুনব?
— কেন শুনবা জানো না?
— না।
— তাহলে কি আজ দেখাব কেন শুনবা আমার কথা?
এমন কথায় দমে গেল রোদ। তবুও বললো,
— কোন দরকার নেই। ছাড়ুন। আপনি রোজ রোজ ধমকাবেন আর পরে এসে এটা ওটা বলবেন নাহয় চকলেট দিবেন? আমি কি বাচ্চা?
— বাচ্চা ই তো। চকলেট দিলেই তো মেনে যাও।
— ওহ তাই না। ভালো আজ আর কোন মানা মানি নাই। থাকব না আপনার সাথে এখনই আব্বুকে বলবো।
— আমি বলতে দিলে তো বলেই রোদকে উচু করে হেটে ড্রেসিং টেবিলের সমনে এল। রোদকে নামিয়ে দিয়ে প্যাকেট খুলে সুন্দর দুটো রজনীগন্ধার মাঝে গোলাপের গাজরা বের করলো। এরপর তা যত্ন করে রোদের দু হাতে পরিয়ে হাতে চুমু খেল। রোদের দিকে তাকিয়ে দেখলো রোদ অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর হুট করে আদ্রিয়ান এক হাত জড়িয়ে ধরে ঝাকিয়ে বললো,
— থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ সো মাচ।।। আল্লাহ কতো সুন্দর। কোথায় পেলেন??
বলে আদ্রিয়ানকে ছেড়ে আবার নিজের মতো দেখা শুরু করলো আবার একটু করে ঘ্রাণ নিলো। আদ্রিয়ান হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। এতো খুশি যে রোদ হবে তা আদ্রিয়ান ইহকালে ও ভাবে নি। ওর তো জাস্ট রোদকে শাড়ীর সাথে এভাবে দেখতে মন চাচ্ছিলো তাই তো নিয়ে এলো। এত সামান্য জিনিসের বিনিময়ে এতো খুশি আর হাসি দেখবে ভাবে নি আদ্রিয়ান। অথচ ঐ দিন কতো শপিং করে দিল, এতো লাখ টাকার জুলরি দিল তাদের রোদের তেমন কিছুই দেখি নি আদ্রিয়ান। মেয়েটা একদম বাচ্চা সুলফ অল্পতেই সন্তুষ্ট। আদ্রিয়ানের ধ্যান ভাঙলো রোদের কথায়।
— আমি আপুপি,জারবা আর জাইফাকে দেখিয়ে আসি এরপর আম্মুকে আর রুদ্রকে ও কল দিয়ে দেখাব।
বলেই যেতে নিচ্ছিল এমন সময় আদ্রিয়ান পেছন থেকে পেচিয়ে ধরে আটকায় রোদকে। রোদ হকচকিয়ে বললো,
— আরে আরে এখন তো পরে যেতাম।
— আমি পরতে দিলে তো?
— ছাড়ুন আমি বাইরে যাব।
— উহু কোথায় যাবে না?
— আজীব কেন?
— কারণ আমার মন ভরে নি তোমাকে দেখে।
বলে রোদকে নিজের দিকে ঘুরালো আদ্রিয়ান এরপর এক ধ্যানে দেখতে লাগলো তার ছোট্ট বউটিকে। এই যে অবাধ্য কিছু চুল বারবার চোখে আসছে, ঠোঁটের লিপস্টিকের মুছে যাওয়া ফিকে রং, হাতে গাজরা, মাথায় ঘোমটা দেওয়া তার সামনে দাড়ানো তার প্রানপাখি যাকে ছাড়া বাচা ইদানীং অসম্ভব। আচ্ছা একসময় তো অনিমার জন্য এমন ফিলিংস ছিল এখন কি সময়ের সাথে তা শেষ হয়ে গেল? উহু কখনোই না আদ্রিয়ান তার সেই ভালোবাসা বুকের বা পাশে সযত্নে পলিত করছে। মানুষ বলে এক হৃদয়ে কিভাবে দুজনের স্থান দিব? তা নাকি অসম্ভব, কই এই যে আদ্রিয়ান করছে। বুকের মধ্যে তার দুজন স্ত্রী সমান ভাবে বাস করছে।তবে এ কোন রুপ আদ্রিয়ানের ভালোবাসার?
প্রশ্নের উত্তর আদ্রিয়ানের হৃদয় ই দিল। এতো তার #ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ।
রোদ তাড়া দিয়ে বললো,
–আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো? কখন ভরবে আপনার মন?
উত্তরে আদ্রিয়ান রোদকে চমকে দিয়ে গান ধরলো,
— তুমি আমার এমনই একজন…….
যারে একজনমে ভালোবেসে ভরবে না এমন মন……
এই দু লাইনই যথেষ্ট ছিল রোদকে পাগল করার জন্য। বুকের ভেতর যেন তোরপাল শুরু হলো।এই লোকের সমস্যাটা কি? রোদকে কেন জ্বালায়? এখন তার এই দু লাইনের উত্তর রোদ কিভাবে দিবে? আদ্রিয়ান হেসে উঠল রোদের এদিক ওদিক চাহনি দেখে। আল্ত হাতে রোদের পরনে সব জুলরি খুলে দিল শুধু আদ্রিয়ানের দেয়া রেগুলার ইউজের গুলো বাদে। রোদ শুধু শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রিয়ান সব খুলে একটু সরতেই রোদ বুক ভরে শ্বাস নিল। আদ্রিয়ান রোদের খোপা খুলে চুলে নাক ডুবিয়ে বললো,
— আমার বউকে আজ প্রথম বার এমন রুপে দেখলাম। চোখ দুটো যেন ধন্য হলো। তোমাকে এতো সুন্দর হতে কে বলেছে হু? আমার বুকে যে ব্যাথা হয় তা কি বুঝ তুমি? মন তো চায় একদম টুকুস করে গিলে ফেলি।
যে আদ্রিয়ানের প্রসংশা শুনতে রোগ আকু বিকু করছিল এখন তার থেকে শুনা প্রশংসায় শরীরের লোম সব হরতার করার জন্য দাড়িয়ে পরেছে। রোদ এবার নিশ্চিত হার্ট ফেইল করবে? রোদের এমন অবস্থা টের পেয়ে হালকা করে হসলো আদ্রিয়ান ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
— যাও ফ্রেশ হয়ে আসো। বেশি পানি নারবে বা ওকে।
— হু।
বলে রোদকে আর পায় কে। ওয়াশরুম দিল দৌড়। আদ্রিয়ান এবার শব্দ করে হেসে উঠল।
__________________
আদ্রিয়ান রোদকে বুকে নিয়ে শুয়ে চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। রোদ এটা ওটা বলছে। আদ্রিয়ান কিছুক্ষন পরে বললো,
— রোদ!!
— হু।
— কাল মেডিক্যাল শেষ কখন হবে?
যেহেতু কাল কচিং করাবে না তাই রোদ বললো,
— কাল মেবি ১২ঃ৩০ এ শেষ হয়ে যাবে?
— ওহ। কাল এক জায়গায় যাব?
— কোথায়?
— হসপিটাল।
রোদ লাফ দিয়ে উঠে বললো,
— হ হসপিটাল। কেন? আর ইউ ওকে? এই এক মিনিট আমার বাসায় সবাই ঠিক আছে তো?
আদ্রিয়ান আবারও বুকে টেনে বললো,
— এতো অস্থির কেন তুমি। পুরোটা শুনবা তো নাকি।
— বলুন তারাতাড়ি।
— তোমার জন্য যাব?
— মানে। আমি তো ফুল ফিট এন্ড ফাইন। লুক আলহামদুলিল্লাহ।
— আই নো বাট তোমাকে তো কাল যেতেই হবে।
— আমি যাব না।
— জেদ করে না সোনা।
রোদ আদ্রিয়ান ঠেলে উঠে পরলো।
— আজব আমি বুঝতে পারছি না আমি সুস্থ হয়ে কেন যাব।
— আমায় বিশ্বাস করো না?
— আল্লাহ এখানে বিশ্বাসের কি হলো? আপনি যাই বলুন আই এম নট গোয়িং উইথ ইউ।
আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো যে মেয়ে কিনা সাধারণ টেবলেট খেতে ১ ঘন্টা পার করে সে মেয়েকে এতো সহজে হসপিটালের নেয়া যাবে না। তাই বললো,
— আচ্ছা শুনো তাহলে।
— কি শুনব। বললাম তো যাব না। কবে থেকে বলছি বাসায় বাসায় যাব তা না উনি আমায় হসপিটাল নিয়ে যাবে আজব।
লাস্টের কথাটা বিরবির করে বললো তাও আদ্রিয়ান শুনে ফেললো।রোদকে আবারও টেনে নিজের কাছে এনে বললো,
— শুনো রোদ আমি বা আমরা শিওর না তবুও যতোটুকু জানি ছোট বেলায় তোমার খাদ্য নালিতে সমস্যা ছিল তার জন্য ট্রিটমেন্ট ও করানো হয়েছে। ইদানীং আমি খেয়াল করছি তুমি কম খাও। জোর করলেও খেতে পারো না। ব্যাপারটা বাসার সবাই খেয়াল করেছে। তাই শিওর হওয়ার জন্য কাল ডক্টরের কাছে যাব। আর একটা কথাও না। বুকে আস ঘুমাবা আমি ও ঘুমাব।
— আপনি শুধু শুধু এমন…
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ান চোখ ঘুরানি দিল রোদ ঠোঁট উল্টিয়ে আদ্রিয়ানের বুকে ধুম করে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান হালকা ব্যাথা পেয়ে “উফ” শব্দ করতেই রোদ বললো,
— আহারে ব্যাথা পেলেন বুঝি? হসপিটালে যাবেন?
আদ্রিয়ান বুঝলো রোদ ওকে টিটকারি মারছে তাই ওকে বুকে চেপে ধরে বললো,
— আর কোন কথা না।
_______________
মেডিক্যালের সামনে দাড়ানো রোদ আর ইয়াজ। দুজন কথা বলছিল এমন সময় আদ্রিয়ান এলো। ইয়াজ সালাম দিতেই আদ্রিয়ান হেসে উত্তর নিল। রোদ ভেবে পেল না আজ কেন সুন্দর ব্যবহার? এমনিতে রোদকে ইয়াজের সাথে দেখলে ওনার মাথায় ঠাটা পরতো। ইয়াজের থেকে বিদায় নিয়ে রোদকে নিয়ে হসপিটালে গেল। গাড়িতে রোদ অনেকবার বললো কিন্তু কে শুনে কার কথা। এই আদ্রিয়ান হলো এক নাম্বার ঘাড়ত্যাড়া।
হসপিটালের সামনেই রাদকে দেখে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো রোদ। রাদও পরম যত্নে আগলিয়ে ধরলো বোনকে। রোদ বললো,
— এখানে কেন তুমি?
— তোর জন্য।
— ভাইয়া কি দরকার বল তো?
— দরকার আছে।
বলে তিনজন উপরে উঠলো। রিশান আর রাইফকে দেখে রোদ সালাম দিল। ওরা ওদের নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে ডুকলো। যেখানে রুগির সাথে ১জনের বেশি ডুকতে দেয় না সেখানে তারা ৪ জন ডুকলো রোদের সাথে।ডাক্তারের সাথে আগেই সব কথা বলা ছিল। ওনি রোদকে ভালোমতো একজেমিন করে বেশ কিছু টেস্ট করতে দিল। আদ্রিয়ান রাদকে বললো রোদকে নিয়ে বাইরে যেতে ওরা বের হতেই আদ্রিয়ান বললো,
— কি মনে হয়?
ডক্টর শাহ্ বললো,
— আপতত বলা যাচ্ছে না রিপোর্ট দেখে বাকি সব বলা যাবে। রোদকে সব জানিয়েছো?
— না জাস্ট খাদ্য নালির কথা বলেছি।
রিশান বললো,
— এতো টেস্ট দেখে ও বুঝে গেলে?
— বুঝতে দিব না আমি।
বলে উঠলো আদ্রিয়ান।
__________________
এতো ব্লাড, ইউনির, আলট্রাসাউন্ড সহ বাকি টেস্ট দেখে বেকে বসলো রোদ। কিছুতেই করাবে না টেস্ট। জোর করে রাদ ইউরিন আর আলট্রা করালো। এতেই রোদ কেমন নেতিয়ে আছে। ব্লাড টেস্ট কিছুতেই করাবে না। জোর করেও কাজ হচ্ছে না। লাস্টে কান্না করেই দিল। রাদ কোনমতে বুকে চেপে ধরে বললো,
— আচ্ছা আচ্ছা করাতে হবে না তোর। দেখি কাদে না বোন আমার।
আদ্রিয়ান শক্ত কন্ঠে বললো,
— টাইম নেই কুইক রাদ।
বলেই রাদকে ইশারা করলো। রাদ রোদকে ছেড়ে দাড়িয়ে বললো এদিকে আয়। আদ্রিয়ান রোদের হাত ধরে ওদিকে নিয়ে গেল। রাইফ দ্রুত নার্সকে নিয়ে হাজির হলো। রোদ বললো,
— এখানে কি করব?
— একটু কাজ আছে।
বলে আদ্রিয়ান রোদকে বুকে চেপে ধরলো। রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই রাদ রোদের ডান হাতের হাতা কুনুই পর্যন্ত উঠিয়ে দিতেই রোদ ছটফট শুরু করে নিজেকে ছাড়াতে চাইলেই আদ্রিয়ান আরো জোড়ে চেপে ধরলো। রোদ হাউমাউ করে কেদে দিল। রোদের হাত রাদ আর রিশান মিলে টাইট করে ধরে আছে নার্স তারাতাড়ি করে এক সিরিজ ব্লাড নিল। রোদ আবারও চিতকার করে কেদে উঠে মা মা ডেকে উঠলো। আদ্রিয়ানের বুকটা ছেঁত করে উঠলো। রাদের চোখে পানি যে কোন মুহূর্তে গড়িয়ে পরবে।
এতোসবের পরও রোদকে ছাড়া হলো না। টেস্ট অনেক তাই ব্লাড বেশি লাগবে। আদ্রিয়ান ওভাবেই ধরে আছে পথরের মত শক্ত হয়ে আছে।রাদ আর সহ্য করতে পারলো না। একমাত্র বোনকে এমনভাবে দেখতে পারলো না। কোন মতে কান্না আটকে বললো,
— আদ্রিয়ান ছাড়ো ওকে। পরে আবার নাহয়।
— উহু। এখনই। এক কষ্ট ওকে বারবার দেখতে পারবো না আমি।
এবার নার্স রক্ত নেয়ার সাথে সাথেই রোদ আবারও জোরে জোর চিল্লাতে লাগলো। পালাতে চাইলো। লাভ হলো না আদ্রিয়ান ছাড়লো না। ব্লাড নেয়ার পর রোদ এখন গোংরাতে লাগলো আদ্রিয়ানের বুকের মধ্যে। রাদ আর আদ্রিয়ান ভয় পেয়ে গেল। রোদক বুক থেকে তুলতেই রোদের এক বিধস্ত চেহারা দেখলো আদ্রিয়ান। বুকের মধ্যে জ্বলে উঠল। এমন কেন লাগছে তার পাখিটাকে? আদ্রিয়ান রোদের গাল হাত দিয়ে বললো,
— র..রো দ। শুনো
আর কিছু বলার আগেই আদ্রিয়ানের উপর হেলে পরলো রোদ। আদ্রিয়ান ভয় পেতেই রিশান বললো,।
— ওর কি ব্লাড এ ফোবিয়া আছে?
রাদ বললো,
— আগে ছিল। বাট এনেমিয়া আছে।
— হুম এর জন্যই গেয়ান হারিয়েছে। আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে কেবিনে আয়।
আদ্রিয়ান রোদকে কোলে তুলে নিয়ে কেবিনে ছুটলো।বুকটা কাপছে। তার রোদ তো আসতে চায় নি। ওইতো আনলো।
#চলবে…..