ভালোবাসার ভিন্ন রুপ পর্ব-৫১+৫২

0
420

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫১

সকালে উঠেই রোদের মা এলো রুদ্রকে দেখতে এমন সময় ছেলের রুমে মেয়ের জামাইকে দেখে চমকে গেলেন। আদ্রিয়ান রাতে কখন এসেছে তা রাদ বাদে কেউ জানে না। তারাতারি করে নিজের স্বামীকে জানালেন এ খবর। ডাক লাগলেন নিজের বড় জা কে। মেয়ের জামাইকে তো যেই সেই নাস্তা দেয়া যাবে না। জাইফা নেমেছে মাত্র। এই রাদ সকাল বেলা ওকে রুম থেকে বের হতে দিতে চায় না। যতক্ষণ না নিজে উঠে ততক্ষণ জাইফাকে ও উঠতে দিবে না। এটা ওটা নিয়ে দুষ্টামি করবে। এত রাগী রাদের যে এরুপ রুপ আছে তা মনে হয় ওর কাছের মানুষ ছাড়া আর কেউ জানে না। শাশুড়ীকে এত ব্যাস্ত দেখে এগিয়ে এলো জাইফা। মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করতেই জানলো বাড়ির জামাইয়ের জন্য এই তোর জোর। জাইফা নিজেও শাশুড়ী আর চাচী শাশুড়ীকে সাহায্য করলো। সাহায্য বলতে টেবিলে প্লেট রাখার কাজ পেয়েছে ও। এমন শশুড় বাড়ীও হয় জানা ছিলো না জাইফার।

একটুপরই ঘুম ভাঙলো আদ্রিয়ানের। নিজের অবস্থান বুঝলো একটুপর। রোদ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে ভায়ের পাশে। এই মেয়ের কোন ঠিক ঠিকানা নেই।আদ্রিয়ান উঠে ঠিক করে দিলো রোদকে। নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে গেল রোদ। ওর নড়াচড়ায় ঘুম ভাঙলো রুদ্রর। সকল বেলা সকালে বোন জামাইকে এখানে আশা করে নি রুদ্র। চিল্লিয়ে ডাকলো,

— দুলাভাইইই!

ভরকে গেল আদ্রিয়ান। ধরফরিয়ে উঠে বসলো রোদ। কি হয়েছে জানতে রাদ দৌড়ে ওর রুমে এলো। সবাই হা হয়ে গেল কি হয়েছে এটা ভেবে। রাদ তো দিলো এক ধমক।

— ওই তোদের দুইটাকে কতবার ব’লেছি গাধার মতো চিল্লাতে না।

রোদ ঘুমু কন্ঠে প্রতিবাদ করে বললো,।

— ভাইয়া আমি কিছু করি নি। আলুর চিপস এর প্যাকেট চিল্লিয়েছে।

রুদ্রও প্রতিবাদ করে বললো,

— ভাইয়া আমিও কিছু করি নি। দুলাভাইকে দেখে আবেগ সামলাতে পারি নি।

রোদ এবার রুদ্রর ভালো হাতে চাপড় মে’রে বললো,

— এজন্য তুই আবেগে আবুল হয়ে চিল্লাবি?

রাদ বিরক্ত হয়ে দুইটাকে ধমকে চুপ করালো। আদ্রিয়ান জোরে হেসে উঠলো।

_____________

আদ্রিয়ানদের বাসায় সবাই টেনশনে আছে। জারবা নিজের সবচেয়ে মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কখনো অবহেলা করে না। আর আজকে ওর দায়িত্ব ছিলো সবার রুমে ডুকে ডুকে বলা জারা কাল কি কান্ড ঘটিয়েছে এবং রোদ বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে এই শোকে আদ্রিয়ান ও বাড়ি ফিরে নি কাল রাতে। এতসব দায়িত্ব পালনের পর ক্লান্ত জারবা জুস নিয়ে সোফায় টান টান হয়ে শুয়ে পরলো। ফুপি তো সকালে জারাকে সবার সামনে চড় মে’রে বলেছিলো,

— এই থাপ্পড়টা কয়েক বছর আগে দিলে হয়তো আজ এই দিন আমায় দেখতে হতো না।

অন্য সময় হলে হয়তো সবাই জারাকে ধরতো কিন্তু আজ কেউ ধরলো না। একজনের ভরা সংসার ভাঙতে চেয়েছিলো জারা। ভালোবাসো ঠিক আছে তাই বলে নিজের ভালোবাসার মানুষের ভালোবাসা ধ্বংস করে দিবে এটা কখনো ভালোবাসা হতে পারে না।
মিষ্টি ঘুম জড়ানো চোখে কাঁদতে কাঁদতে নিচে এলো। ঘুম থেকে উঠে নিজেকে একা পেয়েছে ও। ফুপিও রুমে ছিলো না থাকবে কীভাবে সে তো অঘোষিত দায়িত্ব পালন করছিলো। বেচারী মিষ্টি মা-বাবার রুমে গেল তাও খালি। কেউ নেই। এই থেকে কান্না জুড়ে দিলো মিষ্টি। ওকে দেখেই তারাতাড়ি সাবা ধরলো। কিন্তু মায়ের স্বাদ কি আর খালা দিয়ে মিটে? না মিটে না তাই তো মিষ্টির কান্না ও থামলো না। চিন্তায় জড়জড়িত সবাই সিদ্ধান্ত নিলো রোদের বাসায় যাবে। যেভাবেই হোক রোদকে নিয়ে আসবে। প্রয়োজন হাত ধরবে তাতে কি? যেই ভাবা সেই কাজ সবাই সকাল বেলা সকালে রওনা হলো ছোট ছেলের শশুর বাড়ী উদ্দেশ্য ছোট ছেলের বউকে ফিরিয়ে আনা।

______________

এদিকে রোদ চিল্লাতে লাগলো আদ্রিয়ানের সাথে। কোন আক্কেলে মিষ্টিকে একা ফেলে এলো? মা না হোক বাবা থাকলে হয়তো মেয়েটা কাঁদতো না। নিশ্চিত এতক্ষণে উঠে পরেছে। এসব বলতে বলতে আলমারি থেকে একটা টিশার্ট বের করে দিলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান অপরাধীর সুরে বললো,

— তখন মাথা ঠিক ছিল না রোদ। আমি তো আর জানতাম না আমার ছোট্ট বড় এতটা বুঝদার।

রোদ এগিয়ে এসে বললো,

— রুদ্রকে রেখে আমি কীভাবে যাব? ভাইয়াকে বলি মিষ্টিকে এনে দিতে। ফোন তো ধরছে না জারবা।

আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই জাইফা ডাকতে এলো নিচে যাওয়ার জন্য। রোদ মুখ ভোতা করে বসে রইলো। মেয়েটা কি করছে আল্লাহ জানে। তাই উঠে সোজা রুদ্রর রুমে গেল। আদ্রিয়ানও পেছন পেছন গেল। রোদ রুদ্রকে নিজেকে নাস্তা খায়িয়ে দিলো। ঔষধ খায়িয়ে বললো,

— রুদ্র আমি এখন একটু ঐ বাড়ী যাই। আবার আসব।

রুদ্র ছলছলে চোখ করে বোনের এক হাত বুকে পুরে নিলো। এরমানে না যেতে দিবে না। রোদ কান্না আটকে বললো,

— ভাই না ভালো। বিকেলেই আসব।

— মিথ্যা তুমি আসো না।

— মিষ্টি ওখানে কান্না করবে সোনা। আমি ওকে নিয়ে আসি।

মিষ্টির কথা শুনে থামলো রুদ্র। তবুও ওয়াদা করালো যে রোদ আসবে। এমন সময় ডাক পরলো আদ্রিয়ানকে নিয়ে টেবিলে যাওয়ার। রোদ উঠে মাত্র রুম থেকে বের হলো এমন সময় হুরমুর করে বাড়িতে ডুকলো রোদের বাসার সবাই। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সবাই। মিষ্টি হিচকি তুলতে তুলতে আরিয়ানের কোল থেকে নেমে পরলো। হেলে ঢুলে পা ফেলে মায়ের কাছে আসতে লাগলো। ছোট্ট একটা প্যান্ট আর গেঞ্জি পড়া মিষ্টিকে দেখে অবাক হলো রোদ। এগিয়ে গিয়ে কোলে তুলে নিলো। মিষ্টি মায়ের কাঁধে মুখ গুজে হিচকি তুলছে। কথাও বলতে পারলো না। রোদ আদর করে জড়িয়ে ধরে বললো,

— কি হয়েছে মা? কাঁদছো কেন? এই তো মাম্মা। ঐ দেখ বাবাই।

একটু একটু করে থামলো মিষ্টি। মায়ের কাঁধেই মাথা দিয়ে রাখলো। এতক্ষণ কেঁদে ক্লান্ত সে। কিন্তু রোদ বুঝতে পারলো না সবাই হুট করে এখানে কেন? আদ্রিয়ানের মা এগিয়ে এসে রোদের হাত ধরে বললো,

— রোদ আম্মু আমার সব ঠিক হয়ে যাবে বাসায় চল।

ওর শশুর এগিয়ে এসে রোদের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

— বাসায় চলো মামনি।

আরিয়ান, জারবা, জুরাইন আর সাবাও একই কথা বললো। শেষ মেস ফুপি এসে রোদের হাত ধরে বললো,

— জারাকে মাফ করে দাও রোদ। ওর তরফ থেকে আমি মাফ চাচ্ছি।

রোদ তারাতাড়ি বললো,

— কি বলছেন ফুপি? আমি কিছু মনে করি নি। আর মামনি তোমারা হঠাৎ এখানে? আর আমি বাসায় কেন যাব না?

আরিয়ান এগিয়ে এসে বললো,

— তাহলে তুমি এখানে কেন এসেছিলে কাল রাতে আর আদ্রিয়ান?

এতক্ষণে রোদ সহ আদ্রিয়ান বুঝলো পুরো ব্যাপার। সবাইকে বুঝিয়েও বললো। রুদ্রকে রুমে যেয়ে দেখলো সবাই। রোদের মা, চাচিরা সবাইকে নাস্তা দিলো। এক প্রকার হইচই লেগে গেল। আদ্রিয়ানের পুরো পরিবার আজ রোদের আচরণে অবাক হয়ে গিয়েছিলো। এত সহজে যে সব মানবে রোদ তা তারা ভাবে নি।

_____________

পুরো তিন দিন লাগিয়ে সুস্থ হলো রুদ্র। সে কি কান্না সাইকেলের জন্য। তবুও গলে নি রোদ। চার দিনের দিন বাড়ি ফিরলো রোদ। রুদ্র সেদিন কাঁদলো। এই ছেলে এত ছিদ কাঁদুনে কেন ভেবে পায় না রাদ। অথচ নিজেও চোখ ভর্তি পানি নিয়ে বিদায় দিলো বোনকে। রোদও মন খারাপ করে বসে রইলো গাড়িতে।

বাসায় এসে প্লান করতে লাগলো রোদ। আদ্রিয়ানের জন্মদিন কাল। রোদ অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছে এদিনের জন্য। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটবে কাল। কি হবে না হবে আর ভাবতে পারলো না রোদ। আদ্রিয়ানের ভালোবাসার উত্তর দিবে রোদ কাল। আয়নায় দাঁড়িয়ে প্রেকটিস করলো কতক্ষণ কিন্তু ঠিক ঠাক কিছুই হলো না।
রোদের এসবের মধ্যেই আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো। রোদ তারাতাড়ি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। হেসে এগিয়ে গিয়ে আদ্রিয়ানের হাতের ব্যাগটা নিয়ে পাশে রাখলো। আদ্রিয়ান ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,

— ড্রেস বের করো তো। সাওয়ার নিবো।

বলে টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকলো। রোদ ও আদ্রিয়ানের টিশার্ট আর টাউজার বের করে খাটে রাখলো। আজ আদ্রিয়ানকে ক্লান্ত লাগছে ভাবতেই কফি করতে নিচে গেল। আদ্রিয়ান রুমে ডুকে রোদকে পেল না। একটু পরই রোদ আসলো। আদ্রিয়ান টিশার্ট পরতে পরতে বললো,

— কোথায় গিয়েছিলে?

রোদ এগিয়ে এসে কফি দিয়ে বললো,

— এই নিন।

আদ্রিয়ান হেসে কফি হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বললো,

— ধন্যবাদ সোনা। প্রয়োজন ছিলো।

— জানি।

রোদ কিছু বলবে কিন্তু বলতে পারছে না।আদ্রিয়ানের এটেনশন পেতে ঘুরঘুর করতে লাগলো আশেপাশে। আদ্রিয়ান তা খেয়াল করে জিজ্ঞেস করলো,

— কিছু বলবে?

রোদ একটু সাহস পেল। আদ্রিয়ান ও নিজের কাছে ডাকলো। রোদ ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যেতেই আদ্রিয়ান টেনে কোলে বসিয়ে দিলো। নিজের ভেজা চুল রোদের গলায় লাগাতেই শিউরে উঠলো রোদ। আস্তে করে বললো,

— শুনুন।

আদ্রিয়ানের রোম্যান্টিক মোমেন্টে বাঁধা পরায় শাস্তি সরুপ রোদের গলায় কামড় খেল। ছটফট করে রোদ উঠে পরতে চাইলেই আদ্রিয়ান আটকে নিলো। চুমু খেল সেই স্থানে। সরে গিয়ে বললো,

— বলো?

— রাগ করবেন না বলুন।

আদ্রিয়ান ভ্রু কুচকে বললো,

— কি এমন কথা?

— আগে বলুন রাগ করবেন না।

— বলো।

রোদ সাহস জুগিয়ে বললো,

— আসলে কোচিং থেকে কল এসেছিলো। বাচ্চাদের সামনে এক্সাম। বায়োলজি টিচার আপাতত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই আমাকে পড়ানোর কথা..

এতটুকু একদমে বলে আদ্রিয়ানের দিকে তাকাতেই আতকে উঠলো। আদ্রিয়ান চোখ গরম করে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে আছে। রোদ ঝটপট বললো,

— আপনি বলেছেন রাগ করবেন না?

আদ্রিয়ানের যেখানে রাগ উপচে পড়ছে সেখানে রোদ কি না বলছে রাগ করতে না?

#চলবে……

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫২

রোদ মিষ্টিকে মাত্র খায়িয়ে ঘুম পাড়াতে লাগলো। আপাতত আদ্রিয়ান থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছে ও। তখন যেই বাঁচা বাঁচলো আল্লাহর শুকরিয়া। আদ্রিয়ান হ্যাঁ বা না কিছুই বলে নি কোচিং এর ব্যাপারে। যেই না রেগে কিছু বলবে ওমনি মিষ্টি আর আলিফ রুমে ডুকেছিলো। তাই আদ্রিয়ান ছেড়ে দেয় রোদকে। বেঁচে যাওয়ার খুশিতে রোদ মিষ্টি আর আলিফকে চকলেট ট্রিট ও দিয়েছে। মিষ্টি ঘুমিয়ে যেতেই রোদ ওর কঁপালে চুমু খেল। পরপর মিষ্টির ছোট্ট আঙুলে চুমু খেল। কেন জানো মায়া লাগলো আজ অনেক। না হোক রোদ ওর জন্মদাত্রী মা তবুও রোদই ওর মা। আজ হঠাৎ কি সব আজগুবি ভাবতে লাগলো রোদ। লাইট
অফ করে মিষ্টিকে আরেকটু বুকে জড়িয়ে নিলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজেরও চোখ বুজে এলো।

বাসায় জারবা আজ হাই লেভেলের ধমক খেয়েছে আরিয়ান আর ওর মায়ের কাছে। ফুপি নিজের শশুর বাড়ী গিয়েছেন আজ। এখানে থাকলে জারা না আবার কিছু করে। জারার বাবাও আজ ব্যাক করেছে দেশে তাই তিনি জারার বিয়ে সেখান থেকেই দিবে। ফুপি যখন চলে যাবে সেই মুহূর্তে জারবা ট্যাং ট্যাং করে হেঁটে এসে বললো,

— জারাপু মনোযোগ দিয়ে সংসার করো কিন্তু আবার বাংলা সিনেমার মতো বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যেও না।

জুরাইন আর জারবা হাসতে লাগলো। জারা চুপ করে গাড়িতে উঠলো। তার ভালোবাসায় কখনো কোন খাদ ছিলো না। আদ্রিয়ানের জীবনে দুজন নারীর প্রবেশ ঘটলো কিন্তু ভাগ্য সহায় ছিলো না জারার। ভালোবেসেও সে আজ এত বছর পর খালি হাতে ফিরেছে। কিন্তু আফসোস নেই সেই ভালোবাসা তো ভালো আছে।

জারবা বেচারী বকা খেয়ে মুখ গোমড়া করে নিজের রুমে গেল। জারবা যেতেই সাবা আরিয়ানকে বললো,

— এতো ধমকানোর কি ছিলো?

— দিনে দিনে বেয়াদব হচ্ছে ও।

— ও বেয়াদবী করে না বরং সত্যিটা নিদ্বিধায় বলে দেয় যা আমি তুমি পারি না।

দীর্ঘ নিশ্বাস নিল আরিয়ান। এখন এই পাগল জারবাকে আবার মাখন মারতে হবে। নাহলে রাতে আর খাবে না।

______________

আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো রাত ১০ টায়। বন্ধুদের সাথে আজ দেখা করতে গিয়েছিলো ও। রুম অন্ধকার দেখে ভ্রু কুচকালো। এসময়ে তো লাইট অফ রাখে না রোদ। লাইট অন করতেই চোখে পরলো ঘুমন্ত রোদের বুকে ঘুমন্ত মিষ্টি। ঠোঁটে নিজের অজান্তেই হাসি ফুটে উঠলো আদ্রিয়ানের।এগিয়ে গেল কাছে। মিষ্টির কপালে চুমু খেয়ে যেই না রোদের কপালে চুমু খাবে ওমনি দেখলো রোদের চোখের কোণে পানি জমে আছে সাথে পাপড়ি গুলো ভিজা। মেয়েটা আবার কেঁদেছে কেন? এই মেয়ে কি বুঝে না ওর কান্নায় যে আদ্রিয়ানের বুকে ব্যাথা অনুভব হয়? নিশ্চিত রাতে খায় নি। আদ্রিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছিলো। আদ্রিয়ান আস্তে করে ডাক দিলো রোদকে। রোদের কোন হেলদুল নেই। এবার কাছে যেয়ে আস্তে করে গালে চাপড় দিয়ে ডাকতে লাগলো। রোদ পুরোপুরি ঘুমায় নি তাই আস্তে করে চোখ মেলে তাকালো। আদ্রিয়ানকে দেখে মাথাটা আলগোছে আদ্রিয়ানের কোলে তুলে দিয়ে দুহাত কোমড় জড়িয়ে ধরলো। হঠাৎ কি হলো ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান। তাই মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

— মাথা ব্যাথা করছে?

— উহু।

— কিছু হয়েছে?

— উহু।

— আচ্ছা উঠো। খাবে চলো। ক্ষুধা লেগেছে আমার বউ।

আদ্রিয়ানের ক্ষুধা লেগেছে শুনে সরে গিয়ে উঠে বসলো রোদ। ওর মন কিছু নিয়ে যে খারাপ তা জানে আদ্রিয়ান তবুও কিছু বললো না। খেতে গেল নিচে।
উপরে রুমে আসতেই আদ্রিয়ান রোদকে নিয়ে শুয়ে পরলো। বুকে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

— মন খারাপ কেন?

— জানি না। কিন্তু কেমন জানো লাগছে।

— আচ্ছা ঘুমাও।

বলে আদর করে দিলো রোদকে। রোদ ও আজ আদ্রিয়ানের বুকে মিশে রইলো।

_____________

মিষ্টি ঘুম থেকে উঠেই মায়ের গালে চুমু খেল। বাবা এখনও ঘুম তাই বাবাকে জাগানো এখন ওর নৈতিক দায়িত্ব। মনের ভুলে সে আগে মাকে ডেকে তুলবে না। বাবার পেটের উপর চড়ে বসলো মিষ্টি। আঙুল দিয়ে চোখ টেনে নিলো। গালে কামড় দিলো তো আবার আদর করে দিলো। আদ্রিয়ান সজাগই ছিলো তবুও কিছু বললো না। মিষ্টি এবার কিছু না করে সোজা মায়ের বুকে মুখ গুজে শুয়ে রইলো।
অবাক হলো আদ্রিয়ান। এমন তো হয় না। এই মা মেয়ের মন একসাথে খারাপ হলো নাকি?
ভাবতেই উঠে বসলো। মিষ্টির পিঠে আলত করে হাত বুলিয়ে দিতেই মুখ ঘুরে তাকালো মিষ্টি। বাবাকে দেখে হাসলো। আদ্রিয়ান ওকে নিজের বুকে নিয়ে কতক্ষণ খেললো। এরপর ফ্রেশ করিয়ে এনে রোদকে ডাক দিলো। বেশ সময় নিয়ে উঠলো রোদ। ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আদ্রিয়ান ওকে টেনে নিজের কাছে আনলো। টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিলো। গালে চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,

— এখনও মন খারাপ?

— না।

— তাই?

— হুম।

— আচ্ছা চলো নিচে।

বেশ ফুরফুরে হয়েই রোদ আজ আদ্রিয়ানের জন্য নাস্তা তৈরি করলো। টেবিল থেকে যখন সবাই উঠে গেল রোদ তখন নিজের প্লেট থেকে একটু আদ্রিয়ানকে খায়িয়ে দিলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আদ্রিয়ান কিন্তু কিছু বললো না।
নিজের মনে মনে সব প্লান করলো রোদ। কিন্তু হেল্প তো লাগবেই। ১২ টার আগে আদ্রিয়ানকে রুমে ডুকতে দেয়া যাবে না। আরিয়ান আর জারবা হেল্প করলো এতে। ওরা আদ্রিয়ানকে আটকে রাখবে বলেছে।

রাতে যখন আদ্রিয়ান বাসায় ফিরলো তখন সবাই স্বাভাবিকই ছিলো। মিষ্টি আজ জারবার রুমে ছিলো রাতে। রোদ ওখানেই ওকে ঘুম পারিয়ে দিলো। আরিয়ান আদ্রিয়ানের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,

— চল ছাঁদে যাই। অনেক দিন আড্ডা দেই না দুই ভাই।

আদ্রিয়ান ও খুশি মনে গেল। রাত তখন ১০ টা। সাবা রোদকে সাদা গোল্ডেন মিক্স করা শাড়িটা পড়িয়ে দিলো। কুনুই পর্যন্ত ব্লাউজ। আজ চুল গুলো মাঝ বরাবর সিথি করে ছাড়া একদম যা কোমড় সমান। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক আর কিছু না। সাবা আর জারবা কতক্ষণ প্রসংসা করলো রোদের। ছোট্ট একটা টেবিলে কেক রাখা যাতে লিখা “হ্যাপি বার্থ ডে জামাই।” আর ছোট ছোট কালারিং ক্যান্ডেল জ্বালানো। পাকনামি করে জারবা আবার গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়েছে যার ফলে সারারুমে ফুলের ঘ্রাণে ভেসে যাচ্ছে। সব গোছগাছ করতে করতে ১১:৩০ বেজে গেল। এই তো আর কিছুক্ষন। সাবা আর জারবা চলে গেল। আদ্রিয়ান আসবে ১২ টার সময় প্লান মোতাবেক।
রোদের এখন রীতিমতো হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে এই শাড়ী টাড়ী খুলে ফেলতে। না জানি কি হয়? আদ্রিয়ানের রিএক্ট ই বা কি হবে? ভাবতে পারলো না রোদ। হাত পা কাঁপছে ওর।

চোখের পলকে ১১:৫৫ বেজে গেল। রোদ চাইলেও স্বাভাবিক হতে পারলো না। আসলে অতিরিক্ত উত্তেজিত হলে যা হয় আর কি? রোদেরও তাই। ওর ভাবনার মাঝেই খট করে দরজা খুলে গেল। আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো। লাইট অফ হলেও মোমের আলোতে উজ্জ্বলতায় বুঝা যাচ্ছে। এগিয়ে এলো আদ্রিয়ান। রোদ এতক্ষণ উল্টো দিকে ঘুরে ছিলো। এখন সোজা হয়ে তারাতারি জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই শুনতে পেল,

— হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।

আদ্রিয়ানের ঠোঁট ভর্তি হাসি ফুটে উঠলো। রোদ আরো কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আদ্রিয়ান নিজেও ওকে শক্ত করে জড়িয়ে রাখলো। মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— ধন্যবাদ বউ।

রোদ ওকে ছেড়ে দাঁড়ালো। হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে গিয়ে বললো,

— যদিও কেক কাটা ঠিক না। তবুও কাটুন।

আদ্রিয়ান রোদকে নিজের বুকের সামনে এনে উল্টো ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে দুজন মিলে কেক কাটলো। এক জন আরেক জনকে খায়িয়ে দিলো। আদ্রিয়ান রোদের গালে চুমু খেয়ে বললো,

— অনেক ধন্যবাদ বউ। আমি আসলেই সারপ্রাইজড হয়ে গিয়েছি।

এতক্ষণ খেয়াল না করলেও আদ্রিয়ান হঠাৎ খেয়াল করলো রোদ কি পরে আছে। অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে। এ যেন সাদা গোল্ডেন মিশ্রনের হুর আজ আদ্রিয়ানের ঘরে। আদ্রিয়ান নিজেকে আটকাতে পারলো না। দুই হাত দিয়ে রোদের দুই গাল ধরলো। রোদ চোখ বন্ধ করতেই আদ্রিয়ান ডুব দিলো রোদের ঠোঁটে। বেশ কিছু সময় ছেড়ে দিতেই হাঁপিয়ে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান দুষ্টামি করে বললো,

— বউ আমার গিফট?

রোদ লজ্জায়, জড়তায়, টেনশনে জড়জড়িত হয়ে কিছুই বলতে পারলো না। শুধু খামচে ধরলো আদ্রিয়ানের পিঠ। বুকে মুখ গুজে দিলো। একটা মেয়ে হয়ে কি করে বলবে সে যে আজ আদ্রিয়ানের গিফট হিসেবে সে আজ নিজেকে দিতেই প্রস্তুত। বলতে পারলো না রোদ। আদ্রিয়ান রোদকে ছাড়াতে নিলেই আরো শক্ত হলো রোদের হাতের বাঁধন। মুখ গুজে দিলো আদ্রিয়ানের বুকে। নাক দিয়ে ঘষতে লাগলো বারবার সাথে সাথে পিঠ খামচাতে লাগলো। প্রাপ্ত বয়স্ক আদ্রিয়ানের বুঝতে বাকি নেই রোদ কি চায়। আদ্রিয়ান নিজেও আজ কন্ট্রোল করতে পারছে না। অনুভূতি গুলো আজ যেন সব উপচে পড়ছে। তবুও সে আগে আগে শুধু মাত্র নিজের ধারণার উপর বেস করে কিছু করতে চায় না। পরে না আবার আফসোস করতে হয়। তাই কোনমতে রোদকে বললো,

— রো..রোদ তুম..মি কি…

আর কিছু বলার আগেই রোদ খামচে ধরলো আদ্রিয়ানের বুকের দিকের টিশার্ট। মাথা নাড়ালো শুধু। এর বেশি আর কিছুই করতে পারলো না রোদ। তার অবশ্য প্রয়োজন ও ছিলো না। আদ্রিয়ান একাই যথেষ্ট। কোলে তুলে নিলো রোদকে। বেডে শুয়িয়ে কান ঠোঁট ছুঁয়ে বললো,

— ভালোবাসি।

উত্তর দিতে পারলো না রোদ। কি ভাবে দিবে?অতিরিক্ত আবেগে আজ সে বাকহারা হয়ে গিয়েছে যেন।
আদ্রিয়ান আজ আর কিছুর অপেক্ষা করলো না। অপেক্ষার পালা শেষ তার। সংযত রাখলো না আজ আর নিজেকে। গভীর থেকে গভীর হলো সকল ছোঁয়া। ভালোবাসাময় এক নাম না জানা যন্ত্রনায় ভুগলো রোদ। আদ্রিয়ান যেন আজ আর নিজের মধ্যে নেই। এ যেনে অন্য এক আদ্রিয়ানকে আবিষ্কার করলো রোদ।
যেই আদ্রিয়ান সামান্য কষ্টে দেখতে পারে না রোদকে সেই আদ্রিয়ানই আজ সকল যন্ত্রণার মূল।

_____________

রাত ৩টা। আদ্রিয়ান রোদকে বারবার উঠানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যার্থ হচ্ছে বরাবর। ধরতে গেলেই কেঁদে উঠে রোদ। যেন আদ্রিয়ান বিষ মিশ্রিত ছোঁয়া দিচ্ছে তাকে। নিজের প্রতি রাগ হলো আদ্রিয়ান। অপরাধ বোধ জাগ্রত হলো মনে। শেষ বারের মতো কাতর কন্ঠে ডাকলো আদ্রিয়ান,

— রোদ। সোনাপাখি আমার একটু উঠো।

রোদের পিটপিট করা চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা পানি। আদ্রিয়ান সযত্নে তা মুছে দিলো। কপালে চুমু খেল। বেডশিট সহ রোদকে ফট করে কোলে তুলে নিলো। জোরে কেঁদে উঠলো রোদ। অসহ্য ব্যাথায় জর্জরিত সারা দেহ ওর। তবুও বুঝি মায়া হলো না আদ্রিয়ানের? ওয়াসরুমে নিয়ে গোসল করিয়ে টাওয়াল পেচিয়ে রুমে নিয়ে এলো রোদকে। কোল থেকে কাউকে শুয়িয়ে দিলো। ঝটপট বেড সিট চেঞ্জ করে নিলো। নিজেও দুই মিনিটে সাওয়ার নিয়ে এলো। রোদকে কোলে তুলে বেডে শুয়িয়ে দিলো। চেঞ্জ করিয়ে চুল গুলো মুছে ছড়িয়ে দিলো যদি ঠান্ডা লেগে যায়?

বাকি রাত টুকু রোদকে বুকে নিয়ে রইলো আদ্রিয়ান। শেষ রাতে আজানের সময় ঘুমিয়ে গেল দুজন। ভালোবাসা গুলো আজ যেন পূর্ণতা পেল। অপেক্ষার পালা শেষ হলো। রোদের শুধু মনে পরলো রাতে আদ্রিয়ানের কথাগুলো। এই লোক কতবার কানে কানে যে বললো, “ভালোবাসি” তার হিসেব নেই। কতবার ঠোঁটে ঠোঁট নেড়ে নেড়ে বললো,”ভালোবাসি”। আফসোস রোদ তখনও বলতে পারলো না “ভালোবাসি।”

#চলবে…..

#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
#পর্বঃ৫২(বর্ধিতাংশ)

সকালে ঘুম ভাঙলো রোদের। আজ প্রথম যেন নিজের ঘুম ভাঙানোর জন্য কাউকে প্রয়োজন পরে নি। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো। একটু নড়াচড়া করাতেই শরীরের ব্যাথা গুলো পুণরায় জাগ্রত হলো। একটু অল্প স্বরে কেঁদে উঠলো রোদ। জেগে গেল আদ্রিয়ান। নিজের বুকের উপর আবিষ্কার করলো রোদকে।নিজের ভালোবাসাকে যে কাল রাতে নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছিলো আদ্রিয়ানকে। রোদের ব্যাথায় আদ্রিয়ানেরও খারাপ লাগছে। আস্তে করে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ান। সারা মুখে চুমুতে ভরে দিলো। ব্যাথায় কম্পমান ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেল। আস্তে করে চোখ খুলে তাকালো রোদ। সাথে সাথে গড়িয়ে পরলো কয়েক ফোটা পানি। আদ্রিয়ানের মধ্যে অপরাধ বোধ যেন বাড়তে লাগলো। রোদের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,

— আ’ম সরি সোনা।

দূর্বল রোদ নিজের আঙুল ছোঁয়ালো আদ্রিয়ানের ঠোঁটে। আদ্রিয়ান তাতে চুমু খেল। রোদ ইশারায় মন খারাপ করতে না করলো। আদ্রিয়ান দেখলো রোদকে। গলায় অসংখ্য লাল দাগ হয়ে আছে, ঠোঁটের কোণেও দাগ হালকা সরে যাওয়া টিশার্ট ভেদ করে দেখা যাচ্ছে পেট যাতে অজস্র খামচির দাগ। আলত করে হাত বুলিয়ে দিলো আদ্রিয়ান। উঠে হেলান দিয়ে বসলো বেডে। রোদ আদ্রিয়ানের পেটে মুখ গুজে শুয়ে রইলো।

সকাল ৯ টা বাজার আগেই আদ্রিয়ান নিচে গেল। হালকা কিছু নিয়ে এলো রুমে। রোদকে খায়িয়ে মেডিসিন দিতে হবে। শরীরের ব্যাথায় নড়তে পারছে না মেয়েটা। ভাবতে পারলো না আদ্রিয়ান। এই ছোট্ট বউটা কি না কাল রাতে এত এত সুখ দিলো আদ্রিয়ানকে। ভাবতেই রুমে ডুকলো। রোদ এখনও সোজা হয়ে শুয়ে আছে। আদ্রিয়ান আস্তে করে ডাকলো। সাড়া দিলো না রোদ। এবার আস্তে করে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। রোদ ব্যাথার্ত মুখ করে তাকাতেই আদ্রিয়ান বললো,

— খাবে একটু।

— উহু।

— প্লিজ রোদ। একটু খেয়ে নাও। ব্যাথার মেডিসিন নিতে হবে।

দ্বিমত করলো না রোদ। খেয়ে নিলো আদ্রিয়ানের হাতে। বেশি খেতে পারলো না আদ্রিয়ান ও জোর করে নি। মেডিসিন খায়িয়ে দিয়ে আবারও শুয়িয়ে দিলো। গালে আদর করে বললো,

— বেস্ট গিফট ছিলো এটা বউ।

রোদ কিছু না বলে লজ্জায় মুখ গুজে দিলো আদ্রিয়ানের কোমড়ের দিকে। আদ্রিয়ান লজ্জা দেয়ার জন্য বললো,

— আরো কিছু আছে?

রোদ চুপ করে রইলো। আদ্রিয়ান ওকে আদর করে বললো,

— সব ঠিক হয়ে যাবে। তুমিও মা হবে দেখো।

–আমি তো মা ই। আর কোন ভাবে মা হতে চাই না। আমি কোন ট্রিটমেন্ট করবো না।

আদ্রিয়ান ভাবে নি রোদ এমন উত্তর দিবে। কিছু বলতে ও পারলো না।

____________

কিছুক্ষন পরই মিষ্টি এলো রুমে। আদ্রিয়ান সজাগই ছিলো। মিষ্টি এসেই বাবার বুকে ঝাপিয়ে পরলো। বাবার ঠোঁটে চুমু খেয়ে নেমে আবার মায়ের ঠোঁটে চুমু খেল। আদ্রিয়ান ও মেয়েকে আদর করলো। মিষ্টি বাবার বুকে লেগে রইলো। আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে ফ্রেশ করিয়ে আনলো। খাওয়ার জন্য বলতেই মিষ্টি মায়ের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ান বুঝতে পেরে মিষ্টিকে বললো,

— মা মাম্মা একটু অসুস্থ। আজ বাবাই খায়িয়ে দিই?

মায়ের শরীর অসুস্থ শুনে আর বায়না করলো না মিষ্টি। মায়ের গলা জড়িয়ে একটু আদুরে চুমু খেল মায়ের গালে। আদ্রিয়ান ওকে নিয়ে দরজা ভিরিয়ে নিচে গেল। ব্রেকফাস্ট টেবিলে রোদকে না দেখে সবাই জিজ্ঞেস করলো। আদ্রিয়ান কি বলবে ভাবতে লাগলো। সাবা হয়তো কাল রাতে রোদকে নার্ভাস দেখেই আইডিয়া করেছিলো যে এতদিনে এদের সম্পর্ক হয়তো পূর্ণতা পাবে। তাই ঝটপট বললো,

— রোদের শরীর ভালো না। ওর নাস্তা আমি রুমে দিয়ে আসবো নে।

আদ্রিয়ান হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বাকি সবাই জিজ্ঞেস করলো,

— কি হয়েছে? বেশি অসুস্থ কি না?

আদ্রিয়ান কোন মতে বুঝালো তেমন কিছু না। মিষ্টিকে খায়িয়ে আদ্রিয়ান ও হালকা খেল। রোদের জন্য খাবার নিয়ে রুমে ডুকলো। রোদ তখনও ঘুম। আদ্রিয়ান যেয়ে ডেকে তুললো। রোদের চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। আদ্রিয়ান গালে হাত দিয়ে বললো,

— এখন কেমন লাগছে? ব্যাথা করছে?

— অল্প।

আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলে ওয়াসরুমে ডুকলো। ফ্রেশ হতেই বেরিয়ে এলো দুজন। রোদের চুল গুলো গুছিয়ে বেঁধে দিয়ে হেলান দিয়ে বসিয়ে আদ্রিয়ান খাওয়াতে লাগলো। রোদ দূর্বল গলায় জিজ্ঞেস করলো,

— মিষ্টি খেয়েছে?

— হুম

— কোথায় ও? আসলো না।

— বাইরে ও। এসেছিলো তখন আপনি ঘুমচ্ছিলেন ম্যাডাম।

— আজ আমাকে ছাড়াই খেল?

— তুমি অসুস্থ শুনে আর জেদ করে নি।

খাওয়া শেষ হতেই আদ্রিয়ান সব রেখে আসলো। রোদের মাথায় চুমু খেয়ে বললো,

— আজ যেতে মন চাইছে না বউ কিন্তু আজকে একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে।

— সমস্যা নেই আমি ঠিক আছি।

— ভালোবাসি।

রোদ মুখ নিচু করে তাকালো। আদ্রিয়ান বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। রোদও জড়িয়ে ধরলো। আদ্রিয়ান ওভাবেই বললো,

— সব তো আমাকে দিয়ে দিলা তবুও বলতে পারো না। কবে বলবে হু?

— মৃত্যুর আগে বলে যাবো দেখেন।

এর আগেও রোদ একথা বলেছে কিন্তু আজ কেন যেন কথাটা ভালোলাগলো না আদ্রিয়ানের। তাই রোদের মুখ ভর্তি ভালোবাসাময় ছোঁয়া দিয়ে বললো,

— এভাবে বলো না রোদ। শুনতে ভালোলাগে না আমার।

— হুম।

— আজ তো অফ তোমার। রেস্ট করো। রুম থেকে বের হবে না। আমি দুপুরের দিকে ব্যাক করার চেষ্টা করবো।

— আচ্ছা।

আদ্রিয়ান আবারও ডুব দিলো রোদের ঠোঁটে। যাওয়া আগেও বলে গেল যাতে ও বের না হয়।

_______________

আজ ফোন এসেছে রোদদের বাসা থেকে। তারা চান রোদ আর আদ্রিয়ানের বিয়ের অনুষ্ঠান করতে। এর আগেও এ নিয়েও কথা হয়েছিলো কিন্তু রাদের বিয়ে হুট করে হয়ে গিয়েছিলো তাই এ বিষয়ে কথা তুলে নি কেউ।এখন যেহেতু সব ঠিক আছে তাই তারা এখন অনুষ্ঠান করতে চান। যেহেতু আদ্রিয়ান এর আগে মত দিয়েছিলো তাই আদ্রিয়ানের পরিবার তাদের দাওয়াত করলো কাল আসতে। আলোচনা করে সব ঠিক ঠাক করবে। তারাও রাজি হয়ে গেল।

এই প্রথম রোদের পরিবার আসবে এই বাসায়। এ নিয়ে পুরো দমে আয়োজন শুরু হয়ে গেল। আদ্রিয়ান বাসায় এসে এতকিছু দেখে জিজ্ঞেস করতেই জানলো ওর শশুর বাড়ীর লোকজন আসবে বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে। আদ্রিয়ানের যেন একটু লজ্জা লাগলো। কি সব অবস্থা এত বড় আদ্রিয়ানের বিয়ে তাও কি না মেয়ে আছে তার। এ নিয়ে আবার লজ্জা পাচ্ছে সে। এই লজ্জা বাড়িয়ে দিতে স্ব দায়িত্ব দৌড়ে এলো আদ্রিয়ানের নিজের মেয়ে। বাবার কোলে উঠে বললো,

— বাবাই বিয়ে।

লজ্জায় যেন কান গরম হয়ে গেল আদ্রিয়ানের। ওর মেয়ে বলছে ওর বিয়ে। আদ্রিয়ান ওকে আদর করে বললো,

— মা গোসল করেছে?

— হুম। মাম্মা করিয়ে দিলো তো।

এই রোদকে উঠতে না বলার পরও ও উঠলো ভেবেই রাগ হলো আদ্রিয়ানের। মিষ্টিকে রেখে নিজের রুমে গেল। ওয়াসরুমের দরজা অফ। যেয়ে নক করলো আদ্রিয়ান। রোদ কে জিজ্ঞেস করতেই আদ্রিয়ান ডাকলো,

— রোদ!

— বলুন।

— দরজা খুলো।

— কেন।

— তারাতাড়ি খোল।

রোদ সাত পাঁচ না ভেবে দরজা একটু খুলে উকি দিতেই দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকলো আদ্রিয়ান। হকচকিয়ে গেল রোদ। কিছু বলতে বা করতে পারলো না আর। আদ্রিয়ানের সাথেই বেরিয়ে এলো রুমে।

দুপুরে খাওয়ার জন্য নামবে না রোদ। আদ্রিয়ান জিজ্ঞেস করতেই রোদ জানালো,

— আমার লজ্জা লাগবে না।

ভরকে গেল আদ্রিয়ান। জিজ্ঞেস করলো,

— লজ্জা কেন লাগবে?

রোদ মুখ গুজে বালিশে শুয়ে রইলো। আদ্রিয়ান হুট করে বুঝতে পারলো। হু হা করে হেসে উঠলো। উপুর হয়ে শুয়ে থাকা রোদকে জড়িয়ে ধরে বললো,

— আমার বোকা পাখি। বিয়ের আজ কয় মাস হয়ে এলো। তুমি ধরা দেড়ীতে দিয়েছো বলে কি সবাই ভাববে যে এতদিন আমি নিরামিষ ছিলাম। সবাই তো আগেই ভেবেছে আমি আমিষ।

নিজের ভাবনায় নিজেই লজ্জা পেল রোদ। আসলেই তো। আদ্রিয়ান ওকে ধরে উঠে বসালো। চুল ঠিক করতে করতে বললো,

— চল এবার।

ওরা নিচে খেতে গেল। রোদ ও জানলো ওর বাসা থেকে সবাই আসবে কাল। খুশি আর লজ্জা একসাথে ঘিরে ধরলো ওকে।

পুরো বাড়ী আয়োজনে ভরে উঠলো। ক্লান্ত আদ্রিয়ান রুমে ডুকলো রাত ১১ টায়। মিষ্টি আর রোদ ঘুমাচ্ছে। ফ্রেশ হয়ে এলো আদ্রিয়ান। আস্তে করে মিষ্টকে তুলে নিলো। জারবার কাছে দিয়ে এলো ওকে। রুমে এসে রোদকে ডাকলো। রোদ কি আর উঠে? মেজাজ খারাপ হলো আদ্রিয়ানের। এই মেয়ে এত কেন ঘুমায়? কাল যে সুখ আদ্রিয়ান পেয়েছে তা পাওয়ার লোভ সামলাতে পারলো না। টেনে টুনে তুললো রোদকে। ঘুম জড়ানো রোদ কিছু বুঝার আগেই ভালোবাসায় সিক্ত করলো আদ্রিয়ান ওকে। বাকীটা রাত যেন ভালোবাসার সাগরে ভাসলো দুজন।

_____________

ভোরের দিকে ঘুম ভাঙলো আদ্রিয়ানের। কয়েকঘন্টা আগেই ঘুমিয়েছিলো সে। রোদকে আগে ঘুম পারাতে হয়ছিলো। রোদের কথা ভাবতেই নিজের দিকে তাকালো। আদ্রিয়ানের বুকে লেপ্টে রয়েছে রোদ। মুখটা আদ্রিয়ানের গলায় দেয়া। আদ্রিয়ানের একহাত রোদের উন্মুক্ত পিঠে। কম্ফোডারটা আরেকটু টেনে ঢেকে দিলো রোদকে। আদ্রিয়ানের নড়াচড়া যেন পছন্দ হলো না রোদের। গলা থেকে মুখ সরিয়ে বুকে ডুকার চেষ্টা করলো। বেচারী ডুকতে না পেরে ঠোঁট ফুলিয়ে মুখ গুজে দিলো বুকে। হেসে উঠলো আদ্রিয়ান। মনে পরলো প্রথম দিনের কথা। সেদিন ও এমন করেছিলো রোদ। কিন্তু পরিস্থিতি ঐ দিন এবং আজ সম্পূর্ণ আলাদা। ঐ দিন শুধু ভয়, কীভাবে কি করবে তার তীব্র চিন্তা কিন্তু আজ ভিন্ন, আজ আদ্রিয়ান তার রোদকে নিয়ে সম্পূর্ণ।
রোদকে পেচিয়ে নিজের বুকে তুলে নিলো আদ্রিয়ান। হঠাৎ এমন হওয়ায় চোখ একটু চোখ খুলে তাকালো। আদ্রিয়ানের মুখ দেখে আবার ঘাড়ে মুখ দিয়ে শুয়ে পরলো। আদ্রিয়ান কিছুক্ষন ঐ ভাবেই নিজের সাথে জড়িয়ে রাখলো রোদকে। এই মেয়েটাই পারলো এতদিনের তৃষ্ণান্ত আদ্রিয়ানের তৃষ্ণা মিটাতে।
বেশ কিছু সময় পর একটু জেগে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান ওর কানে মুখ দিয়ে বললো,

— গুড মর্নিং বউ।

— হুমম।

— উঠবে না?

— উহুম।

— তাহলে কি আরেকটু ভালোবাসা চাই?

হুট করে তাকালো রোদ। নিজেকে আবিষ্কার করলো সম্পূর্ণ উন্মুক্ত আদ্রিয়ানের উপর। আদ্রিয়ান হাসছে। রোদ উঠার চেষ্টা করেও পারলো না। আদ্রিয়ান ছাড়লো না। রোদ মোচরাতে মোচরাতে বললো,

— ছাড়ুন।

— তুমি না বললা আদর চাই?

— আজব আমি কখন বল্লাম। সকাল বেলা কি শুরু করলেন? ছাড়ুন।

— উহু। একটু আদর করো।

রোদ একটু ধরে বললো,

— সারারাত তাহলে কি আমি ফুটবল খেলছিলাম?

— না তো আমরা তো টি টুয়েন্টি খেলছিলাম।

রোদ কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

— প্লিজ।

একটু মায়া হলো আদ্রিয়ানের তাই শুধু আদর দিলো সারা মুখে। কোলে তুলে ওয়াসরুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে বের হলো দুজন। আদ্রিয়ান রোদের চুল মুছতে মুছতে বললো,

— খেয়ে ব্যাথার মেডিসিন নিতে ভুলো না কিন্তু।

— আচ্ছা।

বলে রোদ পিছনে ঘুরে জড়িয়ে ধরলো আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান হেসে উঠলো। বললো,

— আদর টাদর করবা নাকি বউ?

— প্রমিজ করুন।

— কি প্রমিজ করবো?

— আপনি আর কখনো বিয়ে করবেন না। আপুর পর আপনার উপর শুধু আমার অধিকার। আপনার জন্য বিয়ে হারাম করলাম আমি বুঝলেন।

প্রথমের কথাগুলো কান্না জড়ানো কন্ঠে বললেও পরেটা বললো কঠোর গলায়। আদ্রিয়ান চমকে তাকালো। আরেকটু জড়িয়ে ধরে বললো,

— আমার বাগানে ফোটা শেষ পুষ্প তুমি রোদ। আর কোন দিন এই বুকে কেউ শুবে না। না কেউ আমার রাজ্যের রাণী হবে। তুমিই শেষ। ভালোবাসি বউ।

কেউ কিছু বললো না। আজ যেন আর কোন কথা বের হলো না।

#চলবে…..