#ভালোবাসার_ভিন্ন_রুপ
#সাইয়্যারা_খান
( সারপ্রাইজ পর্ব) ২
— রোদ!
আদ্রিয়ানের ডাকে কিচেন থেকেই রোদ উত্তর দিলো,
— কি হয়েছে?
— উপরে আসো একটু। আদ্র কান্না করছে।
— কখন কাঁদে না ও? কাজ করছি আমি। আসতে পারব না এখন।
বলেই আবার কাজে লেগে পরলো রোদ। আজ দ্বিতীয় রোজা। মিষ্টি এই বার প্রথম রোজা রেখেছে। রোদ অনেক না করলেও শুনেনি মিষ্টি। পরসু সেহরিতে না ডাকায় সারা সকাল কেঁদেছে ও। কোন মতেই কিছু খাওয়ানো যাচ্ছিল না। অবশেষে রোদ প্রমিস করলো যে কাল রাতে সেহরিতে ডাকবে এরপর যেয়ে খেল মিষ্টি। সারাদিন মিষ্টিকে রুমে রেখেছে রোদ। এটুকুন মিষ্টি রোজা রেখেছে সাথে আলিফ ও রেখেছে এ নিয়ে পুরোবাড়ি হৈ হুল্লোড় লেগে আছে। রাদ আর রুদ্র কয়েকবার ফোন করে বলেছে যাতে মিষ্টিকে নিয়ে এসে পরে এ বাড়ী কিন্তু রোদ না করে দিয়েছে। বলেছে অন্য দিন আসবে। মিষ্টি আজ মায়ের কাছে বায়না করেছে ইফতারে সে সিরখুরমা খাবে। রোদ তাই মেয়ের জন্য মনযোগ দিয়ে সিরখুরমা বানাতে ব্যাস্ত। ইফতারের আরো ১ ঘন্টা বাকি। সাবা আর শাশুড়ী ও কাজে ব্যাস্ত। জারবা শরবত বানাচ্ছে।
এরমধ্যেই আদ্রিয়ান আদ্রকে বুকে নিয়ে নিচে এলো। কিচেনে ডুকতে ডুকতে বললো,
— সোনাপাখি একটু আসো না।
রোদ শুনতে পেল আদ্রের কান্না। কিছু করার নেই তাই গ্যাসটা একদম অল্প করে উরনায় নিজের ঘার্মাক্ত মুখ মুছতে মুছতে বের হলো। আদ্র গলা ফাটিয়ে কেঁদেই যাচ্ছে। রোদ এতক্ষন বিরক্ত মুখ করে থাকলেও এখন ছেলের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
— আমার বাবা কাঁদে কেন? কি হয়েছে তার? আব্বু কি মেরেছে আমার বাবাকে?
মায়ের বুকে মুখ ঘষে মুখ তুললো আদ্র। চোখ ভর্তি পানি তার। নিচের ঠোঁট এখনও কান্নার প্রকোপে কাঁপছে। মায়ের কাছে এসেই তার কান্না থেমে গিয়েছে। মুখ দিয়ে লালা পরতেই রোদ উরনা দিয়ে মুছিয়ে দিলো।গোলুমোলু মুখটা নেড়ে আদ্র আওয়াজ করলো,
— আমমমা, আমমমা।
— হ্যাঁ বাবা আম্মা শুনছি তো। বলুন কি হয়েছে আমার বাবার।
আদ্র মায়ের গালে নিজের ছোট্ট আঙুল দিয়ে নেড়ে নেড়ে বললো,
— বাববা বাব্ববা।
আদ্রিয়ান রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— খাওয়াতে চাইলাম কিন্তু খেল না।
— রোজাদার না আপনার ছেলে তাই খেল না বোধহয়। নিন ওকে চুলায় দুধ বসিয়ে এসেছি আমি।
আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলতেই আবারও ঠোঁট ফুলালো আদ্র। আদ্রিয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
— ওর মনে হচ্ছে ক্ষুধা লেগেছে উপরে আসো একটু।
রোদ আদ্রকে আদ্রিয়ানের কোলে দিয়ে বললো,
— ওকে নিয়ে যান আসছি আমি।
আদ্রিয়ান আদ্রকে নিয়ে রুমে এলো। রোদও পরপরই রুমে এলো। ছেলেকে কোলে নিয়ে গালে চুমু খেয়ে বললো,
— কি হতো বাবার কাছে খেলে?
আদ্র ঠোঁট ফুলিয়ে ডাকলো,
— আমমা দুদু।
রোদ গাল ফুলিয়ে আবারও হেসে দিয়ে ছেলেকে ফিডিং করাতে লাগলো। আদ্রিয়ান ওর সব খেলনা ঝুরিতে রেখে এসে বললো,
— ওর মনে পড়েছে মায়ের কথা বাবা দিয়ে কি আর চলবে? কত কি করলাম তবুও থামলো না।
— একদম ভালো হয়েছে? মিষ্টি কোথায় গেল?
— আলিফের সঙ্গেই আছে।
— থাকুক। আর একটু মাত্র।
— হুম। দেখতে দেখতেই কত বড় হয়ে গেল। রোজা রেখেছে আজ। আমার তো বিশ্বাস হচ্ছে না রোদ।
— হুম। আমারও।
এরমধ্যেই খেয়ে ঘুমিয়ে গেল আদ্র। রোদ ওকে আস্তে করে শুয়িয়ে দিয়ে বললো,
— আমি নিচে গেলাম। কাজ আছে।
— আচ্ছা ঠিক আছে।
রোদ যেতে নিলেই আদ্রিয়ান ডাকলো,
— রোদ?
— কি?
— বেশি কাজ করো না সোনা। আবার ব্যাথা বেড়ে যাবে।
— আচ্ছা।
বলে বেরিয়ে গেল রোদ। আদ্রিয়ান ছেলের দিকে তাকালো। এই ছোট্ট প্রাণটা আসার পর থেকেই হঠাৎ হঠাৎ পিঠে আর কোমড়ে ব্যাথা অনুভব হচ্ছে রোদের। ডক্টর দেখিয়েছে তবুও বেশিক্ষন ঝুকে কাজ করলেই ব্যাথা বেড়ে যায়। এরমধ্যেই রুমে মিষ্টি দৌড়ে এলো। বাবার বুকে লাফ দিয়ে উঠে বসে ডাকলো,
— বাবাই?
— জ্বি মা।
— ভাই ঘুম?
— হুম। মা কি ভাইয়ের সাথে খেলতো?
— হ্যা খেলতো তো? মাম্মা কোথায়?
— কিচেনে। তোমার জন্য স্পেশাল ইফতার রেডি করছে।
মিষ্টি মিষ্টি করে হেসে বাবার গালে চুমু খেয়ে বুকে মিশে রইলো। আদ্রিয়ান বুঝতে পারলো মেয়ের খারাপ লাগছে। তাই বুকে চেপে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
— আর একটু মা।
— হুম।
_____________
ইফতারের আর বেশি সময় বাকি নেই। সব কিছু টেবিলে গুছিয়ে রাখা হ’য়েছে। প্রায় ২০ মিনিট বাকি এখনও। রোদ রুমে ডুকলো। মিষ্টি বাবার বুকে মুখ গুজে কোলে বসে আছে। দ্রুত পায়ে রুমে ডুকলো রোদ। মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে আদ্রিয়ানকে বললো,
— ওর কি বেশি খারাপ লাগছে?
— হয়তো।
এরমধ্যেই মিষ্টি বাবার বুকে থেকে মুখ উঠিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
— মাম্মা ভাই ইফতার করবে না?
— করবে তো সোনা। বেশি খারাপ লাগছে মা?
— না তো একটু পানি খেতাম শুধু।
রোদের খারাপ লাগলেও ভালোলাগাটাও বেশি। নিজে ওয়াসরুমে ডুকে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে বের হলো। এরমধ্যেই আদ্র জেগে উঠলো। মিষ্টি আবার ছোট্ট আদ্রকে খেলতে লাগলো। আদ্রও অস্পষ্ট আওয়াজ তুলতে লাগলো,
— আপপা,আপ্পাপা।
মিষ্টি খুশি হয়ে বাবাকে ডেকে বললো,
— বাবাই বাবাই দেখ আজকেও আমাকে ডেকেছে।
আদ্রিয়ান খুশি হয়ে ছেলের কপালে চুমু খেয়ে আবার মেয়ের কপালে চুমু খেল। আদ্র এখন একটু আধটু মা,বাবা,বোন, দাদা,দাদী, মামা সহ অনেক কিছুই বলতে পারে। তবে পুরোপুরি বুঝা যায় না। টুকটুক করে হাটতেও পারে। আবার রোদ একটু ধমক দিলেও আদ্রিয়ান আসলে বিচার দিয়ে দিয়ে বলবে,
— বাব্বাহ আমমা পিটটি।
আদ্রিয়ান এরপর রোদকে একটু বকুনি দিলেই আদ্র বাবার বুকে লুটোপুটি খাবে।
রোদ এগিয়ে এসে মিষ্টির মাথায় ছোট্ট একটা হিজাব পড়িয়ে দিয়ে বললো,
— আসো মা। আজান দিবে একটু পর।
আদ্রিয়ান টুপি পরে আদ্রকে কোলে তুলে নিলো। চারজনই নিচে গেল এরপর। টেবিলে সবাই উপস্থিত। আরিয়ানা টুকটুক করে হেঁটে রোদের কাছে এসে ডাকলো,
— চাচিম্মু খাব।
রোদ হেসে কোলে তুলে নিলো ওকে। পরপরই পিঠে ব্যাথা অনুভব হলো। আরিয়ান বুঝতে পেরে তাড়াতাড়ি এসে আরিয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
— তোকে না কতবার বারণ করেছি কিছু তুলতে না।
— এমন করো কেন? কিছু হবে না এখন ঠিক আছি আমি।
বলেই জোর করে কোলে তুলে নিলো আরিয়ানাকে। ওকে নিয়ে টেবিলে বসতেই আদ্র আদ্রিয়ানের কোলেই মুখ বিকৃত করে ভেঙিয়ে, “আমমা, আমমা ” করতে লাগলো। রোদ চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,
— আল্লাহ জানে কার মতো হিংসুটে হয়েছে এই ছেলে?
আরিয়ান মাঝখান থেকে বললো,
— আর কার মতো ওর বাপের মতো হয়েছে। ছোট বেলায় আমাকে আম্মু কোলে নিলেই ও মুখ ফুলিয়ে রাখতো।
সবাই হেসে উঠলো এই কথা শুনে। আদ্রিয়ান প্রতিবাদ করে বললো,
— মিথ্যা বলছিস কেন তাও রোজা রেখে। তুই মুখ ফুলাতি আমি না।
আদ্রিয়ানের মা এসে বসে দু’জনকেই ধমক দিয়ে বললো,
— তোরা দুইটাই মুখ ফুলাতি।
এবার সবাই আরো জোরে হেসে উঠলো। একটু পরই আজান দিবে তাই সবাই মোনাজাত ধরলো। আদ্রিয়ানের কোলে বসে ছোট্ট আদ্র সবাইকে মোনাজাত ধরতে দেখে নিজেও দুই হাত এক করার চেষ্টা করলো। এরপর নিজের হাতেই কি জানি খুঁজতে লাগলো। সবাই যখন মোনাজাত শেষ করলো আদ্রও ধুম করে নিজের চেহারায় নিজের হাত মেরে দিলো। সবাই ওর কান্ড দেখে হেসে উঠলো কিন্তু ঠোঁট ফুলিয়ে রাখলো আদ্র। বেচারা ব্যাথা পেয়েছে চেহারায়৷ আদ্রিয়ান একটু হেসে ছেলের গালে আদর করে দিলো। আজান দিতেই সবাই খেজুর খেল। রোদ একটা খেজুর মিষ্টির মুখে তুলে দিলো এরপর নিজে খেল। আদ্রিয়ানও আগে খেজুরের ছোট্ট একটা টুকরো হাত দিয়ে ডলে নরম করে আদ্রর মুখে দিলো এরপর নিজে খেল। একসাথে সবাই ইফতার শেষ করলো। মিষ্টিকে খায়িয়েই রুমে রেখে এলো রোদ। আদ্রর সাথে খেলতে লাগলো মিষ্টি। ছোট্ট আদ্র বোনকে দেখলেই, “আপপা আপপ্পি” ডাকতে লাগলো। মিষ্টি তো বেজায় খুশি হয়ে ভাইয়ের হাতে চুমু খেল। একটু পরই আলিফ আর আরিয়ানাও এলো। চার ভাই বোন মিলে খেলতে লাগলো। পুরো বাড়ী মাতিয়ে রাখে এই চারজন।
নামাজ পড়ে রোদ নিচে সাবা আর শাশুড়ীকে হেল্প করতে লাগলো। সাবা বারকয়েক না করলেও শুনেনি। রোজা সবাই রেখেছে, ক্লান্ত সবাই তাই বলে তো রুমে বসে থাকা যায় না? জারবাও হেল্প করতে লাগলো। কাজ শেষ হতেই রুমে ডুকলো রোদ। আদ্রিয়ান রেডি হচ্ছে তারাবির নামাজের জন্য। রোদ বিছানা গুছিয়ে মিষ্টিকে ফ্রেশ করিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো। আদ্র একাই খেলনা দিয়ে খেলতে লাগলো। মিষ্টি ঘুমাতেই রোদ সব চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে এলো। আদ্রকে ঘুম পারানোর চেষ্টা করলো কিন্তু দুষ্ট আদ্র কি আর ঘুমায়? আদ্রিয়ানকে রেডি হতে দেখেই ওর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। বাবা ওকে রেখে কোথায় যাচ্ছে তা বুঝে গিয়েছে আদ্র। তাই মায়ের বুক থেকে উঠে ডাকতে লাগলো,
— বাবব্বা, বাব্বাহ
আদ্রিয়ান রেডি হয়ে এলো ছেলের কাছে। কোলে তুলে নিয়ে আদর করে বললো,
— কি হয়েছে আমার বাব্বার? বাবা ও কি নামাজ পড়তে যাবে?
আদ্র মুখ বিকৃত করে বললো,
— বাব্বাহ যাব্বেহ।
আদ্রিয়ান হেসে ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— আমার বাবা তো এখন অনেক ছোট আরেকটু বড় হলেই বাবার সাথে মসজিদে যাবে।
আদ্র কি আর বাবাকে ছাড়ে? বাবার বুকে মুখ গুজে রইলো। রোদ টেনে নিলো দেখে ঠোঁট কাঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। রোদ আদর করলেও থামলো না। বিরক্ত হয়ে রোদ বললো,
— কার মতো হয়েছিস তুই? কিছু হলেই কেঁদে উঠিস?
আদ্রিয়ান হেসে ছেলের কপালে চুমু খেয়ে বললো,
— এটা আবার জিজ্ঞেস করতে হয় বউ? ছেলে এই ব্যাপারে একদম নিজের মায়ের মতো হয়েছে। যদিও চেহারার মিল আমার সঙ্গে বেশি।
রোদ রাগ করে বললো,
— আমি কাঁদি ওর মতো কথায় কথায়?
— সেটা আবার বলতে। এদিক ওদিক হলেই তো কেঁদে আমার বুক ভাসিয়ে দাও।
বিরক্ত হয়ে রোদ বললো,
— যান তো আপনি। নাহলে ওকে ধরে বসে থাকুন।
আদ্রিয়ান ভয় পাওয়ার ভান করে ছেলের মাথায় চুমু খেয়ে আবার রোদের ঠোঁটে চুমু খেয়ে চলে গেল হারতার করে। রোদ ফিক করে হেসে উঠলো। মায়ের হাসি দেখে আদ্রও খুশি হয়ে, উঙ্গা বুঙ্গা আওয়াজ করতে লাগলো। রোদ আরেকদফা হেসে ছেলেকে বুকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ঘুম পাড়াতে লাগলো। কিন্তু আদ্রও আজ ঘুমাবে না ভেবে রেখেছে। ক্লান্ত হয়ে রোদ ওকে নিজের পাশে খেলনা দিয়ে বসিয়ে রেখে বললো,
— ঘুমালেন না তো আব্বাজান। এখন দয়া করে এখানে বসে খেলুন। মা নামাজ পড়ি।
আদ্রর ঘুমাতে হলো না এতেই বেজায় খুশি ও। মায়ের পাশে বসেই খেলতে লাগলো। রোদও নামাজে দাঁড়িয়ে গেল। এশারের নামাজ শেষ করে আদ্রকে একটু খাওয়ালো। এবারও চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুমালো না আদ্র। তাই রোদ তারাবির নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে গেল। প্রথম ১০ রাকাতে আদ্র তেমন না জ্বালালেও এরপরই শুরু হয়ে গেল ওর বান্দামী। খেলনা রেখে সিজদা দেয়ার জায়গায় নিজেই সিদজা দিয়ে রাখলো। রোদ কোন মতে সাইডে সিজদা দিয়ে শেষ করলো। এখনও বিতের বাকি। যেই না রোদ বসলো আদ্র ওমনি পেছন থেকে গলা জড়িয়ে ধরলো। ছাড়লো না তো ছাড়লোই না। ওর মতে ও মায়ের সাথে খেলছে। রোদ ওমনিই সিজদা দিতে লাগলো আর বাকিটুকু পড়তে লাগলো। আদ্রও মায়ের গলা জড়িয়ে কাঁধে মাথা দিয়ে রাখলো। আর মাত্র ১ রাকাত বাকি তখনই দরজা খুলে ভিতরে ডুকলো আদ্রিয়ান। সাথে সাথেই ঠোঁট জুড়ে হাসি ফুটে উঠলো আদ্র আর রোদকে দেখে। এই দুই মা ছেলে সারাদিন লেগে থাকে আবার একজনকে ছাড়া একজন ১ মিনিট ও টিকতে পারে না। পরক্ষণেই রোদের পিঠ ব্যাথার কথা মনে করে তাড়াতাড়ি আদ্রকে ছাড়িয়ে কোলে তুলে নিলো।
রোদও নামাজ শেষ করে দাঁড়িয়ে গেল। সাথে সাথেই আবার ধপ করে বসে পরলো নিচে। পিঠ ব্যাথায় কেঁদে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান তাড়াতাড়ি আদ্রকে বিছানায় রেখে রোদকে ধরলো। মুখ খিঁচে রাখলো রোদ। আদ্রিয়ান ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— সোনা বেশি ব্যাথা করছে?
বলে আবার নিজেই উঠে ব্যাথার মলম বের করে নিয়ে রোদকে উল্টো করো শুয়িয়ে টিশার্ট উঠিয়ে পিঠে মালিশ করতে লাগলো। এখনও ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে রোদ। আদ্রর মায়ের কান্না তেমন একটা পছন্দ হলো না তাই মায়ের বুকের দিকে ডুকার চেষ্টা করলো আর ডাকতে লাগলো,
— আম্মমা, আমমা।
রোদ একটু মুখ উঁচু করে ছেলেকে বুকে ডুকয়ে নিলো। আদ্রও ওমনি রইলো। একটু পরই আবার ঘুমিয়েও গেল। আদ্রিয়ান মলম লাগাতে লাগাতে বললো,
— রোদ?
–হু।
— বুড়ো হচ্ছি আমি অথচ বুড়ীদের মতো পিঠ ব্যাথা আর কোমড় ব্যাথা হচ্ছে তোমার। কই আমি বলবো যে বউ এই বুড়োর সেবা করো তা না উল্টো নিজের যুবতী বউয়ের সেবা করছি এই বুড়ো বয়সে।
রোদের মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। এই আদ্রিয়ান ইদানীং প্রায়ই রোদকে ক্ষেপায় এই কথা বলে। আদ্রিয়ান জানে যদি আদ্রিয়ান বলে ও বুড়ো হচ্ছে তাহলেই তেঁতেঁ উঠে রোদ। ওর কথা কেন বলবে রোদের জামাই বুড়ো?
রোদ মেজাজ খারাপ করে বললো,
— সরুন আপনি। আমি বলেছি আমার সেবা করুন?
আদ্রিয়ান হাসতে হাসতে আবারও মালিশ করতে লাগলো। রোদ মেজাজ খারাপ করে বললো,
— ছাড়েন না কেন এখন? লাগবে না আপনার সেবা।
আদ্রিয়ান রোদের ড্রেস ঠিক করে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে রোদের কাছে ঝুঁকে বললো,
— রেগে যাও কেন? ভয় পাই তো আমি। এমনিতেই দুর্বল হার্ট আমার।
রোদ ওকে সরিয়ে উঠার চেষ্টা করলো কিন্তু আদ্রিয়ান উঠতে দিলো না। রোদ একটু নরম হয়ে বললো,
— সরুন। খাবেন না?
আদ্রিয়ান আস্তে করে সরে গেল। রোদকে ধরে বসিয়ে দিলো। মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
— কাল থ্রেরাপিস্ট আসবে।
— কি দরকার?
— তোমার না হলেও আমার দরকার। এই এক ব্যাথা নিয়ে আর কত ভুগতে চাও? জানোই তো তোমার ব্যাথা সহ্য হয় না আমার।
রোদ নিজের মাথাটা হেলিয়ে দিলো আদ্রিয়ানের বুকে। ওভাবে থেকেই বললো,
— দেখতে দেখতে মিষ্টিটা বড় হয়ে গেল। আজ রোজা রাখলো কীভাবে।
— হুম।
এমন সময় দরজায় নক হলো। আদ্রিয়ান উঠে খুলতেই চমকে গেল কারণ হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে রাদ আর রুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। রুদ্র তো রোদকে দেখেই দৌড়ে ডুকে ব্যাগ রেখে জড়িয়ে ধরলো। কলেজ পড়ুয়া রুদ্র যতই বড় হোক না বোনের কাছে আজও ছোট্ট ও। রাদও জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বললো,
— পিঠ ব্যাথা কমেছে?
— হুম।
পাশ থেকে আদ্রিয়ান বললো,
— একটু আগেও কাঁদছিলো ব্যাথায়।
রাদ চোখ গরম করে তাকাতেই রোদ একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
— এখন নেই তো ব্যাথা। তুমি এই সময় হঠাৎ করে?
রাদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,
— ছোট্ট মা যে রোজা রেখেছে প্রথম তাই এসেছি। সারাদিন টাইম পাই নি তাই মিষ্টির গিফট নিয়ে এখন এলাম।
রুদ্র একটু মন খারাপ করে বললো,
— লাভ হলো কি? মিষ্টি তো ঘুম।
বলে আবার আদ্রকে দেখলো। দুই ভাই বোন একসাথে ঘুমাচ্ছে। আদ্রিয়ানের মায়ের জোরাজুরিতে রাতে খেয়ে গেল দুই ভাই। ওরা যেতেই রুমে ডুকলো রোদ। মিষ্টিকে না দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— মিষ্টি কোথায়?
আদ্রকে দোলনায় রাখতে রাখতে আদ্রিয়ান উত্তর দিলো,
— জারবার রুমে।
— আজব এখানেই থাকতো।
আর কিছু বলার সুযোগ পেল না রোদ। আদ্রিয়ান কথা বলা বন্ধ করে দিলো নিজের মতো। কোলে তুলতেই রোদ মুখ গুজে দিলো আদ্রিয়ানের বুকে। আদ্রিয়ান হেসে বললো,
— আমার লজ্জাবতী।
_________________
রাত ২:৩০। আদ্রিয়ানের উপরে শুয়ে আছে রোদ। আদ্রিয়ানও দু’হাতে পেচিয়ে ধরে আছে। একটু পরই আদ্রিয়ান হালকা স্বরে ডাকলো,
— রোদ?
রোদ আদ্রিয়ানের গলা থেকে মুখ সরিয়ে একটু তাকালো আবারও গলায় মুখ গুজে দিয়ে বললো,
— উমম।
— উঠবে না সোনা? তাহাজ্জুদের সময় হয়ে যাচ্ছে।
— হুমম।
বলে আবারও ঘুমিয়ে পরলো। আদ্রিয়ান জানে এভাবে বলে লাভ নেই। তাই ওভাবেই পেচিয়ে কোলে তুলে নিলো। ওয়াসরুমে সাওয়ার অন করতেই ধরফরিয়ে উঠলো রোদ। আদ্রিয়ান হেসে উঠলো। রোদ মুখ কুচকে বিরক্তি প্রকাশ করলো। দু’জন ফ্রেশ হয়ে বের হতেই আদ্রিয়ান জায়নামাজ বিছিয়ে দিলো দুটো। একসাথে নামাজ পড়ে নিলো দুজন। সেহরির সময় বাকি তাই আদ্রিয়ান কোরআন শরিফ পড়তে লাগলো। এরমধ্যেই আদ্র ফুপিয়ে উঠলো। রোদ নিচে থেকে দুধ গরম করে এনে বেবি ফুড মিক্স করে আদ্রর মুখে ধরলো। এই ছেলে জেগে থাকলে সহজে খেতে চায় না তাই ঘুমালে খাওয়াতে হয়। সেহরি খেয়ে নামাজ পড়ে রোদকে আর আদ্রকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে গেল আদ্রিয়ান।
সকালে আজ রোদের মেডিকেলে যেতে হবে কিছু করার নেই। ওকে রেডি হতে দেখেই গুটি গুটি পায়ে আদ্র এগিয়ে এসে হাটু জড়িয়ে ধরলো। রোদ একটু ঝুঁকে কোলে তুলে নিলো। ফুলা ফুলা গাল দুটো আরেকটু ফুলিয়ে ডাকলো আদ্র,
— আম্মামম।
— কি হয়েছে মা? মা এসে পড়বো আজ তাড়াতাড়ি। আপি থাকবে তো বাসায়। আমার বাবা খেলবে আপির সাথে।
আদ্র ছোট্ট দুই হাতে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে রাখলো। আদ্রিয়ান অসহায় চোখে তাকালো। রোজকার কাহিনি এটা। আদ্র কাঁদবে মাকে যেতে দেখলে আর রোদ কাঁদবে সারা রাস্তা গাড়িতে। মিষ্টি এগিয়ে এসে বললো,
— মাম্মা বাসায় কখন আসবে?
রোদ একহাতে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে বললো,
— দুপুরেই এসে যাব মা। ভাইয়ের সাথে থেক।
— আচ্ছা।
আদ্রকে কোলে নিয়েই নিচে নামলো রোদ। শাশুড়ীকে সব খাবার বুঝিয়ে দিয়ে আদ্রর অগোচরে বেরিয়ে গেল। গাড়ীতে উঠে অন্য দিকে ফিরে চোখ মুছলো। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আদ্রিয়ান টেনে ওকে বুকে নিয়ে বললো,
— আর কাঁদে না সোনা।
— ও কাঁদবে আমায় না পেলে।
— আর কয়েকটা মাস রোদ।
— হুম।
আদ্রিয়ান ওর মাথায় চুমু খেয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো।
মেডিক্যাল থেকেও ভিডিও কলে কয়েকবার কথা বললো মিষ্টি আর আদ্রর সাথে। ছোট্ট আদ্র ফোনের স্ক্রিনেই চুমু খায়। মা ছাড়া কি আর চলে ওর?
দুপুরেই রোদ এলো। আগে মিষ্টিকে গোসল করিয়ে পরপরই আদ্রকে গোসল করিয়ে দিলো। ওকে খাওয়াতেই লেগে গেল প্রায় ১ ঘন্টা। এরপরই আবার মিষ্টিকে খায়িয়ে ঘুম পাড়াতে লাগলো। আদ্রিয়ান এলো ৩ টার দিকে। রোজার পুরো মাসে পুরো পরিবার একসাথে ইফতার করে। আদ্রিয়ান গোসল করে এসেই বাচ্চাদের কাছে শুয়ে পরলো। রোদের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আজ থেকে যেন ইফতারের পর নিচে বেশিক্ষণ না দেখি।
রোদ মুখ কুচকে বললো,
— বারবার এক কথা কেন বলেন? আমি থাকতে মামনি কিচেনে কাজ করবে আর আমি ঘাপটি মেরে কি আপনার কোলে বসে থাকবো?
আদ্রিয়ান টান দিয়ে রোদকে নিজের বুকে নিয়ে বললো,
— প্রয়োজনে তাই করবে। আর আজ রোজার মাসের জন্য নতুন একজন মহিলা রাখা হয়েছে তিনিই ইফতারের পরের কাজ গুলো করে দিয়ে যাবে।
— কি দরকার ছিল?
— আমার দরকার ছিল। এই বয়সে বউ আমার থেকে দূরে থাকলে টেনশন হয় আমার।
— আপনি আবারও শুরু করলেন?
আদ্রিয়ান হাসতে লাগলো। রোদকে বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
— রাতে তো ঘুমাতে পারলা না এখন একটু ঘুমাও।
#চলবে….