তুমি আমার পর্ব-০৮

0
135

#তুমি_আমার (পর্ব ০৮)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
রেহান বাড়িতে এসেই জোরে জোরে ওর মাকে ডাকতে থাকে রেহানের ডাকে মিথিলা রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে
– কি হয়েছে ভাইয়া মাকে ডাকছো কেনো এভাবে?
– ভাবি মা কোথায়?
– মা তো ছাঁদে আছে।
রেহান দেরি না করে দ্রুত সিড়ি বেয়ে ছাঁদে চলে আসলো। রেহান ওর মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো
– মা আজ আমি বড়মাকে দেখেছি।
রেহানের কথা শুনে ওর মা চমকে উঠলো চোখ বড় বড় হয়ে গেলো,অস্থির কন্ঠে বলে উঠলো
– রেহান কি বলছিস তুই! আপাকে কোথায় দেখেছিস চিনলি কি করে?
– আমাদের কলেজের সামনে দেখেছি।আর এটা কি বলছো মা বড়মাকে আমি চিনবো না!
রেহানের মা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
– আপা হয়তো এখনো রেগে আছে,তা না হলে বাংলাদেশে যেহেতু আছে রাগ কমলে অবশ্যই আসতো আমাদের সাথে দেখা করতে। শুধু রাগ না খুব কষ্টও পেয়েছিলো সেদিন। জানিস তো রেহান তোর বড়মা তোকে খুব ভালোবাসতো নিজের ছেলেদেরকেও হয়তো এত ভালোবাসতো না আপা,,,কি থেকে যে কি হয়ে গেলো।
– মা বড়মা আমাকে দেখলে চিনতে পারবে এখন?
– প্রায় ৮ বছর হতে চললো তোকে দেখেনি চিনতেও পারে।
রেহান ওর মায়ের হাত চেপে ধরে বললো
– মা আমি বড়মাকে ফিরিয়ে আনবো আমাদের পরিবারটা সেই আগের মত হয়ে উঠবে দেখো।
– আপা কি সব ভুলে আসবে ফিরে? যদি আসতো সত্যি খুব ভালো হতো রে।
– আমি ফিরিয়ে আনবো বড়মাকে তুমি বাবাকে সবটা বলো।
রেহানের মা ওর কপালে চুমু একে দিয়ে ছলছল চোখে বললো
– আমি জানি তুই পারবি আপার রাগ ভাঙিয়ে ফেরাতে।
.
🌿
.
রেহান সারাদিনে মেঘার সাথে একটুও কথা বলে নি এমনকি এটাও জানা হয় নি ওর বড়মা আর ওকে কি বলছিলো, তাই রাতে ফোন দিলো মেঘাকে। পরাপর ৩ বার রিং হয়ে কেটে গেলো এমনিতেই রেহানের মন খারাপ তারওপর মেঘা ফোন না ধরাতে রেগে গেলো।
রেহানের খুব ইচ্ছে করছিলো মেঘার কন্ঠটা একটু শুনতে কিন্তু ও তো ফোনই তুলছে না। রেহান রুমের মধ্য এদিক ওদিকে পাইচারি করে বাইকের চাবিটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো।
রাত তখন প্রায় ১১:৩০ বাজে মেঘাদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো রেহান। আবারো ফোন দিলো মেঘাকে ধরলো না তারপর অনেক কষ্টে মেঘারা রুমের বারান্দায় পৌছালো রেহান রুমের দরজাটা খোলাই ছিলো। রেহান খুব সাবধানে রুমে ঢুকলো ওর চোখ পড়লো বিছানাতে মেঘা গুটিশুটি মেড়ে ঘুমাচ্ছে। রেহানের রাগটা নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো মেঘার ঘুমন্ত মুখটা দেখে। ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে রেহান মেঘার পাশে গিয়ে বসলো। অপলক দৃষ্টিতে রেহান মেঘার মুখের দিকে চেয়ে আছে,রেহান নিজের হাতটা মেঘার মুখে স্পর্শ করলো হাতটা কিছুটা ঠান্ডা হওয়ায় মেঘা হালকা নড়ে উঠলো।
রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো
– জানি না কি আছে তোমার মাঝে যা আমাকে সব সময় টানে পরম শান্তি অনুভব করি তোমার এই শান্ত মুখটির দিকে তাকালে। আমি যে তোমাকে কি ভাবে নিজের মনের কথা বলবো বুঝতে পারছি না।
রেহান আরো কিছুক্ষণ থেকে উঠে যেতে নিলেই পাশে থাকা টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে ওটার ওপরে থাকা ফুলদানিটা পড়ে গেলো। শব্দতে মেঘার ঘুম ভেঙে গিয়েছে।রেহান ফুলদানিটা তুলে রাখতে নিলেই মেঘা ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে উঠলো
কে ওখানে?
রেহান চমকে উঠলো
– এইরে মেঘা জেগে গিয়েছে এখন কি করবো আমি!
মেঘা বিছানা থেকে নামতে নামতে বললো
– কি হলো কথা বলছেন না কেনো?
রেহান কিছু না বলে সামনের দিকে পা বড়াতেই মেঘা বললো
– চুরি করতে এসে এখন পালানোর ধান্দা তাইনা,ব্যবস্থা করছি আমি।
মেঘা যেইনা বাবা বলে জোড়ে ডাকতে যাবে ওমনি রেহান ঘুরে দাঁড়িয়ে মেঘার মুখটা চেপে ধরলো। মেঘা রেহানকে দেখে চরম পর্যায় অবাক হলো চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। মুখ চেপে ধরে রাখায় মেঘা কথা বলতে না পেরে উম উম করছে রেহান বুঝতে পেরে মেঘাকে ছেড়ে কিছুটা পিছিয়ে দাড়িয়ে আস্তে করে বললো
– মেঘা চেঁচিয়ো না প্লিজ।
– আপনি এত রাতে আমার রুমে কি করছেন ভাইয়া?
তখনি দরজায় টোকা পড়লো মেঘার বাবা দরজার ওপার থেকে বললো
– মেঘা কি পড়ার শব্দ হলো তোর রুমে? মেঘা দরজাটা খোল।
মেঘা রেহান দুজনেই চমকে তাকালো মেঘা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না মেঘার চিন্তিত মুখ দেখে রেহান বললো
– মেঘা তুমি গিয়ে দরজাটা খোলো আমি বেড়িয়ে যাচ্ছি।
– কিন্তু আপনি কেনো এসেছিলেন?
– সেটা পরে জেনে নিও তুমি যাও দরজাটা খোলো।
মেঘা মাথা নাড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো আর রেহান খুব সাবধানে বেড়িয়ে আসলো।
রেহান রাস্তায় এসে জোড়ে নিশ্বাস নিলো আর নিজে নিজেই হাসতে লাগলো এই ভেবে যে মেঘার কাছে এভাবে ধরা খেয়ে গেলো আর মেঘা ওকে চোর ভেবেছিলো! কিন্তু মেঘার সাথে দেখা হলে কি উত্তর দিবে ও মেঘাকে সেটাই ভাবছে?
.
🌿
.
পরের দিন কলেজে এসে রেহান তানভিরকে সব বলার পরে তানভির তো হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
– তানভির হাসিস না ভাই আমার তো গলা শুকিয়ে আসছে মেঘাকে কি বলবো সেটা ভেবে।
– কি বলবি মানে যেটা সত্যি সেটাই বলবি ওকে আজই বলবি তুই ওকে ভালোবাসিস।
– কিন্তু ও যদি না মানে?
– আরে সেটা পরের বিষয় আগের কথাটা তো বল আগে।
রেহানরা গেটের পাশেই ছিলে তখনি মেঘা আর তানিশা কলেজে ঢুকলো,ঢুকতেই চোখ পড়লো রেহানের দিকে,মেঘা হালকা হেসে এগিয়ে গেলো সামনের দিকে।
রেহান তানভিরকে বললো
– কি হলো রে মেঘা হাসলো কেনো এভাবে!আর কিছু তো বললো ও না এসে!
– আমিও তো বুঝলাম না। তবে যাই হোক তুই আজকেই ওকে প্রপোজ করবি।

কলেজ ছুটির পর রেহান আর তানভির দাঁড়িয়ে আছে মেঘার অপেক্ষায় মেঘাকে লাইব্রেরির দিকে যেতে দেখে তানভির রেহানকে সেখানে যেতে বললো। রেহান মেঘার পেছনে এসে লাইব্রেরির মধ্য ঢুকলো তখন ওখানে তেমন কেউ ছিলো না। রেহান মনে সাহস জুটিয়ে মেঘার সামনে গিয়ে দাড়ালো। মেঘা রেহানকে দেখেও কিছু মনে করলো না বই দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
রেহান হা করে তাকালো বিড়বিড় করে বলতে লাগলো
– এটা কি হলো! মেঘা আমাকে সামনে দেখেও কেনো কিছু বলছে না?
রেহান আবারো মেঘার সামনে গিয়ে ওর হাত থেকে বইটা নিয়ে নিলো,মেঘা সরে যেতে নিলে রেহান ওর হাত ধরে ফেললো
– কি হয়েছে মেঘা,আমাকে দেখে কিছুই তো জানতে চাইলে না কাল রাতের ব্যাপারে?
– হুম বলুন কি জন্য গিয়েছিলেন?
– মেঘা আসলে কি ভাবে যে বলবো তুমি কিভাবে নিবে,মেঘা আ আমি তোমাকে ভা…..
রেহানকে থামিয়ে মেঘা বললো
– আমাকে ভালোবাসেন তাইতো?
রেহান জাস্ট অবাক হয়ে গেছে ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না মেঘা কি করে জানলো!
রেহান কিছু বলছে না দেখে মেঘা মুচকি হেসে বললো
– ভাবছেন তো আমি কি করে জানলাম?
– হুম কিভাবে জানলে?
মেঘা নিজের ব্যাগ থেকে রেহানের ফোন বের করে ওর সামনে ধরে বললো
– চুরি করতে গিয়ে তো ফোনটা ফেলে এসেছিলেন এটা থেকেই জেনেছি। সরি আপনাকে না বলে আপনার ফোনটা দেখার জন্য।
– মেঘা আমি মটেও চুরি করতে যাই নি আমি তো তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম।
– ওই একি তো হলো তাইনা।
রেহান মুচকি হেসে বললো
– মেঘা আমি তোমাকে যতটা চুপচাপ ভেবেছিলাম ওতটাও চুপচাপ তুমি নও। যাই হোক তুমি যেহেতু জেনেই গিয়েছো সবটা তাহলে এখন তোমার উত্তরটা কি সেটা বলো। নাহ থাক বলতে হবে না তুমি হ্যা বললেও তুমি আমার আর না বললেও তুমি আমার।
– যদি না হয় আমার উত্তরটা তাহলে কি জোর করে নিজের করবেন নাকি!
– দরকার পড়লে তাই করবো।
মেঘা আর কিছু বললো না মিষ্টি হেসে বেড়িয়ে গেলো,দরজার বাইরে তানভিরকে দেখে কিছুটা লজ্জা পেলো মেঘা। রেহান যেনো অবাকের পর অবাক হচ্ছে মেঘা যে এতটা স্বাভাবিক কি করে আছে সেটাই ভাবছে!!
তানভির ভেতরে ঢুকে রেহানের কাধে হাত রেখে বললো
– রেহান ফোনে কি এমন দেখে মেঘা বুঝে গেলো সবটা?
-তুই শুনেছিস সবটা?
– হুম শুনলাম তো। এখন বল কি ছিলো ফোনে?
– মেঘাকে নিয়ে তোর সাথে ম্যাসেজ এ যে কথা গুলো বলছিলাম ওসবই দেখে বুঝেছে হয়তো।
– হুমমম বুঝলাম আর এটাও বুঝলাম মেঘাও তোর প্রতি দুর্বল।
– শুধু দুর্বল হলে চলবে না আমাকে ভালোবাসতেও হবে।
– এত অধৈর্য হোস না ভাই লেগে থাক সব হবে।
·
·
·
চলবে………………….