#তুমি_আমার (পর্ব ১৫)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
মেঘা কলেজ থেকে ফিরে দেখলো ওর বাবা খাবার সাজাচ্ছে টেবিলে।
– একি বাবা তুমি এসব করছো কেনো!! তুমি বসো আমি করবো।
– তুই তো রোজ করিস আজ না হয় আমি করলাম,এই গরমে কলেজ থেকে ফিরে তুই নিশ্চই ক্লান্ত। যা গিয়ে গোসলটা সেরে আয় একসাথে খাবো।
মেঘা আর কথা বাড়ালো না রুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর মেঘা এসে দেখলো ওর বাবা বসে আছে পাশে তন্ময়। মেঘা চেয়ারে বসতে বসতে বললো
– কিরে ভাই স্কুল থেকে আজ তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?
– প্রচুর গরম পড়ছে তাই এখন থেকে ১:৪০ এর মধ্যেই ছুটি হবে।
– ও আচ্ছা,বাবা তোমার অফিসের ও কি ভাই এর স্কুল এর মত সেম ব্যপার? তুমি আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছো।
– নারে মা আজ মনটা খুব ভালো তাই ছুটি নিয়ে চলে এলাম।
– মন ভালো! কেনো কি কারনে?
– বলবো খাওয়াটা শেষ কর।
খাওয়া শেষ হলে মেঘা সব কিছু গুছিয়ে রেখে সোফায় বাবার পাশে বসলো।
– বাবা এখন বলোতো আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে।
মেঘার বাবা হেসে দিয়ে বললো
– তোর জন্য খুব ভালো একটা সম্মন্ধ এসেছে,ছেলের বাবা আজ নিজে আমার অফিসে এসেছিলো। শুনেছি ধনীরা নাকি খুব অহংকারী হয় কিন্তু ছেলের বাবাকে দেখে তার ব্যবহারে তেমন কিছু মনে হলো না।
মেঘা চোখ বড় বড় করে চেয়ে আছে ওর বাবার দিকে। উনি আবার বলতে লাগলো
– ছেলের নাম আহনাফ আহমেদ এখনো পড়াশুনা করছে শেষ হলেই ওর বাবার বিজনেসের কাজে যুক্ত হবে। ফ্যামিলি সম্পর্কে যতটা শুনলাম ভালোই মনে হলো তাই আমি চাইছি…..
– কি চাইছো বাবা,আমাকে এত তাড়াতাড়ি পর করে দিতে?
– মেঘা এ কি বলছিস তুই! তুই আর তন্ময় ছাড়া আমার কে আছে বল।
– তাহলে এখনি বিয়ের কথা কেনো বলছো আমি তো মাত্র ইন্টার পড়ছি।
– ওরা তো এখনি বিয়েটা দিতে চাইছে না ওরা চায় কথা বলে ঠিকঠাক করে রাখতে।
– বাবা আমি এ বিয়ে করবো না।
মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে একটু হেসে বললো
– তোর ওপর কিছু চাপিয়ে দেবো না,তুই সময় নিয়ে ভেবে দেখ।
মেঘার আর বসে থাকতে পারছে না চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে ও কিছু না বলেই নিজের রুমে এসে দরজা আটকে দিলো। রেহানের কথা খুব মনে পড়ছে ওর,কি করে বাবাকে বলবে আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি,ও যে বাবার মুখের ওপর কিছু বলতে পারবে না। মেঘা বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে।
.
🌿
.
রেহান বের হচ্ছিলো বাড়ি থেকে,রেহানের মা ওকে ডাকলো
– হ্যা মা বলো
– কোথায় যাচ্ছিস তুই এই রোদের মধ্যে?
– তানভির ফোন দিয়েছিলো একটু কাজ আছে।
– বিকেলে গেলেই তো পারতি। যাই হোক শোন তোর বাবা আজ মেঘার বাবার সাথে দেখা করে কথা বলেছে।
– কি বলো! কখন কি বলেছে বাবা? আর মেঘার বাবা কি বলেছে?
– উফ থাম ধৈর্য টাও দিন দিন হারিয়ে ফেলছিস দেখছি।
মিথিলা পাশে থেকে মুখ টিপে হেসে বলে উঠলো
– মা আপনার ছোট ছেলের মনে রঙ লেগেছে সে কি আর ধৈর্য রাখতে পারবে বলুন।
– ভাবি এভাবে কেনো বলছো হুম,তোমাদের যখন সময় হয়েছিলো তখন বুঝি তোমরা চুপ করে ছিলে। আমি কিন্তু ভাইয়ার মত তেমন হাত পা তুলে ডান্স করছি না।
মিথিলা চোখ রাঙালো আর রেহান দাঁত কেলিয়ে হাসছে।
রেহানের মা বললো
– তোর বাবা চেয়েছিলো আমাদেরকে সাথে নিতে পরে আবার ভেবে বললো আগে একা গিয়ে মেঘার বাবার সাথে কথা বলবে দেখবে ওনার মতামত কেমন।
– মেঘার বাবা কি বলেছে মা?
– উনি বলেছে কাল জানাবে।
রেহান তো ভেবেই নিয়েছে মেঘার বাবা যখন ওকে সবটা বলবে তখন মেঘা খুব খুশি হবে। রেহান মেঘাকে ফোন দিতে গিয়েও দিলো না। মনে মনে বললো
– নাহ ফোন দিবো না আমি মেঘা যখন জানবে ও নিজেই ফোন দিবে। ভাবতেই অবাক লাগছে আমার মেঘপরীকে আমি নিজের করে পাবো!
.
🌿
.
রাত ১০ টা বেজে ১৫ মিনিট মেঘা একবারো ফোন দেয়নি রেহান চিন্তায় পড়ে গেলো, নিজেই ফোন দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ বলছে বারবার। রেহান বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে,এমন একটা খুশির খবর শুনেও মেঘা কিছু বললো না কেনো কেনোই বা ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে। নাকি মেঘার বাবা রাজি নয়। রেহান এসব ভাবছে বসে বসে। আর থাকতে না পেরে বেড়িয়ে পড়লো।
মেঘা খাটে সাথে মাথা রেখে নিচে বসে আছে,কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গিয়েছে। মেঘা বার বার রেহানকে ফোন দিতে গিয়েও দেয় নি রেগে ফোনটা দেয়ালে ছুড়ে মেরেছে। ওর বাবা এসে ডেকে গিয়েছে খাওয়ার জন্য,দরজা না খুলেই বলেছে এখন খাবে না।
হাটুতে মাথা গুজে বসে আছে হঠাৎ কিছু পড়ার শব্দ পেয়ে চোখ তুলে তাকালো।
সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলো,রেহান মেঘার সামনে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে মেঘার দিকে ওর চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে।
রেহান মেঘার হাত ধরে টেনে তুলে খুব জোরে থাপ্পড় মারলো মেঘার গালে। মেঘা কিছুই বললো না একদৃষ্টিতে চেয়ে আছে রেহানের দিকে। রেহান মেঘার বাহু ঝাকিয়ে রেগে বললো
– কি প্রবলেম তোমার হ্যা, ফোন বন্ধ কেনো তোমার? তোমার কোনো ধারনা আছে কতটা টেনশনে ছিলাম আমি? বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো আমার। চুপ করে আছো কেনো,উত্তর দাও আমার কথার।
রেহান খুব রেগে কথাগুলো বলছে মেঘাকে মেঘা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠছিলো। ও আগে কখনো রেহানকে এভাবে রাগতে দেখেনি।
.
🌿
.
রেহান খেয়াল করলো মেঘার ফোনটা পাশেই ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে,রেহান মেঘার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো নিমিষেই ওর রাগটা কমে গেলো আলতো করে মেঘার গালে হাত দিয়ে বললো
– মেঘা তোমার চোখ ফোলা কেনো!! কেঁদেছো তুমি??আর ফোনটা ভাঙলো কি করে?
মেঘা আবারো ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো,রেহান আতকে উঠে বললো
– এই মেঘা কি হয়েছে বলো আমায়। আমি মেরেছি বলে রাগ করেছো তুমি? আমার ভুল হয়ে গেছে আর এমন হবে না প্লিজ মেঘা কেঁদো না। মেঘাকে রেহান খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। বুকে জড়িয়েই বললো
– আমাকে বলো কি হয়েছে?
মেঘা বুকে মাথা রেখেই বলতে লাগলো
– আজ নাকি কেউ বাবার কাছে আমার বিয়ের কথা বলেছে,বাবা রাজি আছে কিন্তু আমি কি করবো আমি তো আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাইনা। বাবার মুখের ওপর কখনো কিছু বলি নি আমি,কি করবো আমি এখন।
রেহান হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না মেঘাকে বুকে থেকে তুলে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো
– ছেলের নাম কি তোমার বাবা বলেনি?
– হ্যা বলেছে, আহনাফ আহমেদ।
রেহান যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো জোরে একটা নিশ্বাস ফেলে মুচকি হেসে মেঘার কাধে হাত রেখে বললো
– আমার পুরো নাম জানো তুমি?
মেঘা মাথা নাড়ালো মানে ও জানে না।
– আল্লাহ এ কোন পাগলির প্রেমে পড়েছি আমি! যে এখনো আমার পুরো নামটাই জানে না।
– আপনার পুরো নাম জেনে কি হবে! আপনি কি নিজের নাম নিয়ে গবেষণা করতে এসেছেন?
রেহান মেঘার নাক টেনে বললো
– ম্যাডাম নাম নিয়ে গবেষণা না করলে আপনি তো কেঁদে কেঁদেই অসুস্থ হয়ে পড়বেন তখন আমি বউ পাবো কোথায়!
– মানে! কি বলছেন আপনি কে বউ?
– তুমি আমার হবু বউ, আর আমার পুরো নামটা হলো আহনাফ আহমেদ রেহান। বুঝেছো আমার পাগলিটা?
মেঘা পুরোই বোকা বনে গেলো অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো
– আপনার বাবা এসেছিলো আমার বাবার কাছে?
– জ্বি ম্যাম।
– আপনি তো খুব খারাপ নিজের পুরো নাম আগে বলেন নি কেনো,জানেন কতটা কষ্ট হচ্ছিলো আমার।
রেহান মেঘাকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে বললো
– তুমি এত বোকা কেনো বলোতে একবার আমাকে ফোন দিয়ে বললে তখনি সব ক্লিয়ার হয়ে যেতো।
– আমার মাথায় কিছু আসেনি তখন।
– হুম তা আসবে কেনো। আসলেই তুমি এখনো পিচ্চিটাই আছো,নিজে তো কষ্ট পেয়েছো আমাকেও ভয় পাইয়ে দিয়েছো।
মেঘা রেহানকে জড়িয়ে ধরে বললো
– আমি বুঝতে পারি নি,ক্ষমা করে দিন আমাকে।
– এই পাগলি ক্ষমা চাইছো কেনো,আমি তোমাকে মেরেছি তুমি আমাকে…..
– মারতেই পারেন আপনার অধিকার আছে।
– হুমম ঠিক বলেছো আমার অধিকার আছে। বলে মেঘাকে আরো কাছে টেনে নিলো।
মেঘা কেঁপে উঠে বললো
– এভাবে ধরেছেন কেনো?
– কিভাবে ধরেছি! ইসস আমার মেঘপরীটা কেঁদে চোখ মুখ কেমন ফুলিয়ে ফেলেছে।
রেহান আলতো করে মেঘা দুচোখে ঠোঁট ছোয়ালো।
·
·
·
চলবে……………………