তুমি আমার পর্ব-১৭

0
173

#তুমি_আমার (পর্ব ১৭)
#মেঘা_আফরোজ
·
·
·
রাফিন প্রতিদিনের মত আজও ছাঁদে দাড়িয়ে সিগারেটের ধোয়া উড়াচ্ছে। মিতু এসে রাফিনের পাশে দাড়ালো। রাফিন সামনে তাকিয়েই বললো
– মিতু এখানে কেনো এসেছো?
– আমি এসেছি আপনি বুঝলেন কি করে! আপনি তো সামনে তাকিয়ে আছেন।
– আমি এতটাও অন্যমনা হয়ে ছিলাম না,যে কেউ পাশে এসে দাড়ালে বুঝতে পারবো না।
– ও আচ্ছা।
দুজনেই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে মিতু কিছু বলতে চেয়েও পারছে না রাফিন নিজেই বলে উঠলো
– কি বলতে চাইছো বলে ফেলো।
মিতু অবাক হয়ে বললো
– আপনি এটাও বুঝে গিয়েছেন আমি কিছু বলতে চাই!!
– বেশি কথা না বলে কি বলতে চাও বলো আর না বললে যাও এখান থেকে।
– ওকে বলছি। আপনি যে এভাবে সব সময় মন খারাপ করে থাকেন,এতে যে আপনার মায়ের কষ্ট হয় সেটা কি বুঝেন আপনি?
– আমার মাকে নিয়ে তোমার না ভাবলেও চলবে।
– কেনো ভাববো না হুম,আপনি যে মেঘাকে ভালোবেসে সবসময় কষ্ট পাচ্ছেন নিজের মাকে কষ্ট দিচ্ছেন সে মেঘা তো ভালোই আছে নতুন সম্পর্কে ও জড়িয়ে গিয়েছে। তাহলে আপনি কেনো পারছেন না নিজেকে স্বাভাবিক করতে?
– আমি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাইছি না,যাও এখান থেকে।
– দেখুন আমার কথাটা একটু…..
মিতুকে আর কিছু না বলতে দিয়ে রাফিন রেগে ধমক দিয়ে বললো
– এই মেয়ে তোমাকে যেতে বলেছি না,কেনো বিরক্ত করছো আমাকে?
মিতু কিছুটা কেঁপে উঠলো চোখের কোনে পানি জমে গিয়েছে আর কিছু না বলে দৌড়ে নেমে গেলো ছাঁদ থেকে। মিতু চলে যাওয়ার পর রাফিন নিজেকে একটু শান্ত করে মনে মনে ভাবছে
– আমি মেয়েটির সাথে এমন ব্যবহার না করলেও পারতাম,ও তো ভুল কিছু বলেনি। ধুর আমিও না নিজের রাগটা কনট্রোল করতে পারি না।
.
🌿
.
মিতু নিজের রুমে এসে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলো,নিরবে চোখের জল ফেলে তাকালো দূর আকাশের দিকে। আকাশটাও আজ মেঘাচ্ছন্ন,মিতুর চোখের জলের মত আকাশের বুক থেকে যখন তখন বৃষ্টির ফোটা গড়িয়ে পড়বে। মিতু নিজে নিজেই বলতে লাগলো
– ভালোবাসা সত্যি বড় যন্ত্রণাদায়ক। এ যন্ত্রণা যে কোনো ভাবেই কমার নয়। আজ বুঝতে পারছি রাফিন মেঘাকে ভালোবেসে কতটা কষ্ট পাচ্ছে।রাফিন তো আমাকে সহ্যই করতে পারে না কিন্তু আমি যে চাই খুব করে চাই রাফিনের পাশে থাকতে ওর কষ্টগুলো নিজের করে নিতে। এ কটা দিনে খুব বেশি ভালোবেসে ফেলেছি ওকে বার বার আমাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে তারপরেও ওর সামনে গিয়েছি একটু আশায়। তবে আজ একটু বেশি কষ্ট হচ্ছে আমার বড্ড অসহায় লাগছে নিজেকে।আমি কখনো কি বলতে পারবো না রাফিন””””তুমি আমার””””।

রাফিন ভুল করেছে বুঝতে পেরে মিতুর কাছে সরি বলতে এসেছিলো। দরজা খোলা ছিলো নক করে কোনো সারা না পেয়ে রুমে এসে মিতুকে না পেয়ে ব্যালকনির কাছে এসে মিতুর কান্নাজরিত কন্ঠ শুনে দাড়িয়ে পড়েছিলো। মিতুর বলা কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে রাফিন। মিতু ওকে ভালোবাসে এটা যেনো ও মানতেই পারছে না। কি করে মানবে মিতুর সাথে এ পর্যন্ত খারাপ ব্যবহার ছাড়া ভালো ব্যবহার করেনি। তাহলে মিতু কেনো ভালোবাসলো ওকে!!
.
🌿
.
রাফিন ধীর পায়ে এগিয়ে মিতুর কাধে হাত রাখলো,মিতু চমকে তাকালো পেছনে। রাফিনকে দেখে চরম পর্যায় অবাক হলো মিতু,তাড়াতাড়ি চোখের পানিটা মুছে মৃদু হেসে বললো
– আপনি আমার রুমে! কোনো দরকার?
– ভালোবাসো আমাকে?
রাফিনের এমন কথায় মিতু বিষ্ময় চোখে তাকালো,রাফিন হঠাৎ এ কথা কেনো বললো মিতু বুঝতে পারছে না। মিতুকে চুপ থাকতে দেখে রাফিন আবার বললো
– কি হলো বলো ভালোবাসো আমাকে?
– হুম। মাথা নিচু করে বললো।
– কি দেখে ভালোবাসলে? আমি তো ভালো ছেলে নই তোমার সাথে অলটাইম বাজে ব্যবহার করি এমনকি সিগারেট ও খাই তাহলে??
মিতু মাথা নিচু করেই বললো
– কি দেখে ভালোবেসেছি জানিনা তাছাড়া মানুষের ওপরের রুপটা সবসময় তার আসল ব্যক্তিত্বর পরিচয় দেয়না। আপনার মনটা খুবই ভালো আমি মনে করি আর সে মনটাকেই আমি ভালোবেসেছি।
রাফিন কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকলো তারপর মিতুর দিকে একটু এগিয়ে বললো
– বিয়ে করবে আমায়?
মিতু মুখ তুলে অবাক চোখে তাকালো রাফিনের দিকে,রাফিন মৃদু হেসে মিতুর গালে হাত রেখে বললো
– কি হলো বিয়ে করবে না? এটাই কিন্তু সুযোগ পরে কিন্তু আর সুযোগ দিবো না।
মিতুর চোখ থেকে অঝরে পানি পরতে লাগলো ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বললো
– ভালোবাসিতো তাহলে সুযোগটা কেনো হাতছাড়া করবো। কিন্তু আপনার হঠাৎ কি হলো??কিছুক্ষণ আগেও তো আমাকে সহ্য করতে পারছিলেন না!!
– কি হলো জানি না,তবে এখন থেকে এই মুহুর্ত থেকে জানবো অতীতকে মনে করে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ কে অন্ধকারে ঠেলে দেবো না।
রাফিন মিতুর হাত ধরে বললো
– দূরে সরিয়ে দিও না কখনো তাহলে হয়তো নিজেকে আর গড়তে পারবো না।
মিতু মুচকি হেসে বললো
– প্রান থাকতে কখনো দূরে সরিয়ে দিবো না।
.
🌿
.
পরের দিন সকালে রাফিন ওর মাকে নিজে গিয়ে বলেছে ও মিতুকে বিয়ে করতে চায় ওর মা কিছুটা অবাক হলেও খুব খুশি হয়েছে । অবশেষে তার ছেলেটা আবারো আগের মত হয়ে উঠছে। সব মা চায় তার সন্তান হাসি আনন্দের মাঝে বাচুক। রাফিন ওনার ছেলে নয় সেটা রাফিনকে কখনো বুঝতে দেয় না নিজের ছেলের মতই ভালোবাসে ওকে। আজ অনেক দিন পর রাফিনের মুখে হাসি দেখে ওনার চোখেও পানি চলে এসেছে। রাফিন মায়ের চোখ মুছে দিয়ে বললো
– মা কাঁদছো কেনো তুমি!!
– সুখে কাঁদছি। তুই যে সব ভুলে নতুন করে সব শুরু করতে চাইছিস এ খুশিতে কাঁদছি আমি। মিতু তোকে ভালোবাসে জানিস তো?
– হ্যা জানি সবটা জেনেই তো ওকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
– ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিস,মিতুকে আমারো খুব ভালো লাগে। তাহলে এখন মিথিলাকে সবটা বলি ওর বাবার সাথেও তো কথা বলতে হবে।
– হুম দেখো কি করবে। আমি রুমে যাচ্ছি।

রেহান বড়মার রুমে এসে ওদের সব কথা শুনে নিজেও খুব আনন্দিত। রাফিনের জীবনটা আবারো স্বাভাবিক হয়ে উঠবে এটাই চেয়েছিলো রেহান।
রাফিন বেরনোর সময় রেহানকে দেখে দাড়িয়ে পড়লো,রেহান মুচকি হেসে বললো
– আমি অনেক খুশি হয়েছি রাফিন,তুই যে নিজেকে অন্ধকার লাইফ থেকে বের করতে পেরেছিস এটাই অনেক।মিতু খুব ভালো মেয়ে আর ও তোকে অনেক ভালোবাসে।
– হুম,কিন্তু মিতু আমাকে ভালোবাসে তুই জানলি কি করে?
– তুই তো ওকে সহ্য করতে পারতি না মিতু মনে মনে খুব কষ্ট পেতো একদিন রাতে আমি ভাবিকে খুজতে ওর রুমে ঢুকতেই শুনতে পেলাম ও কারো কাছে কেঁদে কেঁদে ফোনে বলছিলো তোকে খুব ভালোবাসে। আর ও যেভাবে তোকে চোখে হারাতো আমি সবই খেয়াল করতাম। যাই হোক আল্লাহ যেনো তোদের ভালো রাখেন,দোয়া রইলো।
রাফিন মৃদু হেসে বললো
– হুমম। আচ্ছা রেহান ভাবি কেমন আছে?
রেহান ভ্রু কুঁচকে বললো
– ভাবি কে?
– কে আবার তোর হবু বউ মেঘা,আর আমার ভাবি।
রেহান হেসে দিয়ে বললো
– হুম ও ভালো আছে। ভাই তুই এভাবেই হাসি মজা করবি এতেই মানায় তোকে।
বড়মা ওদের সামনে এসে বললো
– রেহান একদম ঠিক বলেছে। রাফিন আমি তোর মুখে সব সময় হাসিটা দেখতে চাই।
– হুম হাসবো তোমার জন্য হাসবো।
রেহান বলে উঠলো
– শুধু বড়মার কথা ভাবলি মিতুর কথা কে ভাববে হুম?
রাফিন হেসে বললো
– ওর জন্যই তো আজ আমি নিজেকে বদলাতে পারছি ওকে তো হ্যাপি রাখতেই হবে।
·
·
·
চলবে………………….