#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ২৫
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)
যে সুখের আলোর সন্ধানে আধাঁর চড়িয়ে বেরিয়েছে সে আলো আরো উজ্জ্বল হয়ে প্রস্ফুটিত হলো। দ্বিগুণ আমেজ চার দেয়ালে। আফতাবকে পেয়ে চোখ ভিজে যাচ্ছে বারবার।নিজের মাঝে জড়িয়ে রেখেছিল অনেক সময়।খুক খুক করে কেশে উঠলে খুশবু পুনরায় চিন্তিত হয়।কিছুটা ঘোলাটে নয়নে খুশবুর ফুলে থাকা মুখ স্পষ্ট নয় তবে আত্মা তৃপ্তকারী।অনেক সময় পর চোখে আলো পড়েছে।তাই চোখ মেলে তাকাতে অসুবিধে হচ্ছে আফতাব এর।চোখ জ্বালাতন করছে কিছুটা। আফতাবকে সাহায্য করলো বিছানার হার্ডবোর্ডে হেলান দিতে। দৌঁড় লাগাতে গিয়েও থেমে গেলো।দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে পেটে হাত রেখেছে।আজ তাকে পূর্ণরূপে অনুভব করলো খুশবু।এতদিন অভ্যন্তর খালি খালি লাগছিলো।তার বাবার অনুপস্থিতিতে অন্য কেউ যে নীরবে তার সঙ্গ দিয়েছে সেটা ভুলতে বসেছিলো।খুশবু একা একা বলতে লাগলো,
-“তোমার মামুনি খুব নিষ্ঠুর তাই না?”
নিজের পেটে হাত বুলিয়ে ফের বললো,
-“আমি সরি হ্যাঁ!এখন থেকে তোমার দিকেও খেয়াল রাখবো”
মা সন্তানের ক্ষুদ্র আলাপ শেষে ডাকলো নার্সকে।সাথে রফিকুজ্জামান মির্জা এবং রুমানা মির্জাকে।দুজনই কোনো চিন্তা চেতনাহীনভাবে তাড়াহুড়ো করে আফতাব খুশবুর ঘরে এলো। নার্স ডাক্তারকে কল করেন।জেনে নেন তার পরবর্তী কার্যক্রম।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিতে থাকা রুমানা মির্জা।তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-“কেমন ফিল করছেন মিস্টার মির্জা?”
আফতাব চাইলো তার দিকে কিন্তু চিনতে পারলো না। সাবলীলভাবে মাথা নেড়ে জবাব দেয়,
-“জ্বি মোটামুটি”
-“আচ্ছা আপনাকে কিছু প্রশ্ন করবো?আপনি উত্তর দেওয়ার জন্য তৈরি তো?সময় চাই?”
আফতাব জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়।এদিক ওদিক চেয়ে জবাব দিলো,
-“করুন”
-“ওকে?….এখানে আমি ব্যতীত কে কে উপস্থিত?”
আজগুবি প্রশ্ন!কোমায় ছিলো আফতাব। স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেনি। খুশবুরে দিকে চাইলে খুশবু আশ্বাস দেয় নিঃশব্দে।বলে,
-“আমার বাবা..মা।আমার স্ত্রী”
আফতাব এর কন্ঠস্বর ভঙ্গুর। বারবার কথা বলতে গিয়ে মুখ কুচকাচ্ছে।হয়তো গলায় খুসখুস ভাব। নার্স এগিয়ে এসে পানি দিলো অর্ধেক গ্লাস।বললো,
-“পানি খান।একদম অল্প অল্প করে সিপ নিবেন।অনেকদিন পর গলা দিয়ে তরল জাতীয় কিছু যাবে তাই একটু সাবধানে পান করবেন।
বুঝতে বাকি রইলো না উনি নার্স মহোদয়া।পানির গ্লাস হাতে তুলে অল্প অল্প করে পান করছে।অনুভব করলো এতে তার তৃষ্ণা মিটছে না।বরং বাড়তে লাগলো। গটগট করে গিলতে ইচ্ছে হচ্ছে পানি।নিজেকে কত জনমের পিপাসু মনে হলো।অর্ধেক গ্লাস পানি শেষ করে আরো একটু চেয়ে নেয়।মুখের তৃষ্ণা মিটিয়ে লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে তাকায় সম্মুখে।
নার্স প্রশ্ন করলেন,
– “আপনার হয়তো বিশ্রাম দরকার।তবে একটা কথা বলতে পারবেন?আপনার সাথে কি হয়েছিলো সেদিন?কিছু মনে আছে?অজ্ঞান হওয়ার পূর্বের ঘটনা?”
মাথার পেছনের দিকটা টনটন করে উঠলো।মনে আছে কিছু বিষয় আবছা।এতকাল এই পেশায় পাড় করে প্রথমবারের মতন জীবনের ভয় হয়েছিলো।আফতাব ঢোক গিলে বলতে শুরু করলো,
-“ভারী বর্ষণ হয়েছিলো সেদিন রাতে।সামনে থেকে যখন গোলাগুলির আওয়াজ পাই তখন আমরা এলার্ট হই সবাই। সন্ত্রাসীরা দক্ষিণ পাশ থেকে এসেছিল।যা সম্পূর্ণই আমাদের বিপরীতমুখী।”
বলে থেমে যায় আফতাব। নার্স তার এই এনার্জিটা বজায় রাখতে তাকে বেশি সময় চুপ থাকতে দিলো না।প্রশ্ন করলো,
-“হ্যাঁ তারপর?”
-“আমরা পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখি গোলা বর্ষণ বাড়ছে।অলরেডি রিলোড ছিলো আমাদের উইপেন।আমরাও ডিফেন্স করার জন্য শুট করি। বিপরীতমুখী গুলিটা আমার সহকর্মীর দিকে এসেছিল।তার সামনে কোনো সাপোর্ট ছিলো না।অনায়াসে তাকে গুলি ছুঁয়ে যেতো।আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে গিয়ে আমার পা স্লিপ করে।ততক্ষণে বেগতিক অবস্থা বুঝে বাকি টিম ছুটে এসেছে।আমি সবটা দেখেছি।মাথায় আঘাত পেয়েছি,ব্যথা অনুভব করেছি।তবে আমার মাথা থেকে রক্ত ঝরছে সেটা আমি সেই মুহূর্তে আন্দাজ করতে পারিনি।উঠে দাঁড়াই। এরপরও আমি রাইফেল চালিয়েছি।কিন্তু শেষমেশ কি যেনো হলো!চোখের সামনে সবটাই অন্ধকার লাগছিল।মাথার পেছনে হাত রাখলে ভেজা অনুভব করলাম।ভাবলাম হয়তো বৃষ্টির পানি।কিন্তু সেটা রক্ত ছিলো।….এরপর..আর কি হয়েছে আমি জানি না।”
আফতাব অস্থির হয়ে উঠছে।বুঝতে পেরে খুশবু তার পাশে গিয়ে বসলো। বাহুতে হাত রেখে সাহস দেওয়ার চেষ্টায়। নার্স ইতিমধ্যে আরেক গ্লাস পানি দিয়েছে তাকে।আর বললো,
-“আপনার স্মৃতিশক্তি খুব শার্প ক্যাপ্টেন।খুব শীগ্রই আপনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।আপনাকে ইনজেকশন দিচ্ছি।….পরিবারের সাথে সময় কাটান।এখনই ঘুমিয়ে পড়ার প্রয়োজন নেই।যেকোনো দরকারে আমাকে ডাকবেন।”
নার্স তার কাজ করছে।আন্তরিকতার সাথে। খুশবুর আসল চরিত্রটাও আফতাব এর সাথেই ফিরে এসেছে। গুমোট আবহাওয়া আর নেই সেখানে। ক্যাপ্টেন ডাক অন্য কারো মুখে শুনে আনমনে মেজাজ খারাপ হলো তার।যেনো ঘাড়ে দুজন বসে।একজন বলছে সে তার কাজ করছে।এতে তেমন জেলাস হওয়ার কিছু নেই।আরেকজন বলছে এই মহিলা তোর ক্যাপ্টেনকে ক্যাপ্টেন ডেকেছে।মানুষ আবার দুষ্টু বুদ্ধি দ্রুত গ্রহণ করে। খুশবুও করলো তাই।তবে এই জ্বালাতন প্রকাশ করার মতন পরিস্থিতি নয় এটা। নার্স খুশবুকে ডাকলেন।বললেন,
-“ওনার যত্ন নিন।মানসিক যত্ন।পুরোনো ভালো স্মৃতি তুলে ধরুন ওনার সামনে।কান্না আর দুঃখ প্রকাশ করে দুর্বল করলে হিতের বিপরীত হবে।”
-“জ্বি ধন্যবাদ মিস ইভা”
হেসে জবাব এলো,
-“ওয়েলকাম তবে আমি মিসেস ইভা”
খুশবু আপনাপানি হেসে ফেলে।মহিলা তাহলে বিবাহিত।এই যাত্রায় জ্বালাতন এর মাত্রা ক্ষীণ হয়ে এসেছে।ভালো লাগছে তার।
_______
জুতো ছিঁড়ে যাওয়ায় ভীষণ রকমের বিরক্ত জিনিয়া।একটু পর ক্লাস শুরু।এরপরই প্রেজেন্টেশন।শাড়ি পড়ে একেবারে টিপটপ হয়ে এসেছে।তার মধ্যে যদি জুতোটা ছিঁড়ে যায় কেমন লাগে?এভাবে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা যাবে না।ঠিক তখনই আশপাশের কিছু ছেলেপেলেদের চোখ পড়েছে তার উপর।তার পূর্বেই জুতোর দিকে।আজেবাজে ইঙ্গিত ছুঁড়ে দিচ্ছে।শুনতে পেলো জিনিয়া।রাগে গজগজ করে এগিয়ে দুটো থাপ্পড় দেওয়ার ইচ্ছে জাগলেও ছিঁড়া জুতো নিয়ে সেটা সম্ভব নয়। ছেলেগুলোর হাসির পরিমাণ বাড়লো।আরো কিছু নোংরা কথা ছুঁড়ে দিচ্ছে জিনিয়ার দিকে।দেহের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দিয়ে দিনে দুপুরে নোংরামো। কোথায় যাচ্ছে এই সমাজ!সমাজের মানুষ!ভাবলো নেহা।জুতোর দিকে খেয়াল না করেই হেঁটে যেতে থাকে ছেলেগুলোর দিকে।আজ এই ছেঁড়া জুতো দিয়েই পেটাবে।
হাঁটতে হাঁটতে পায়ের সাথে শাড়ি আটকে পড়ে যেতে চাইলে শক্তপোক্ত হাত পেছনে হাত টেনে ধরে।এক টানে সোজা করে দাঁড় করিয়ে ছেড়ে দিলো হাত তৎক্ষনাৎ।
নোমান বললো,
-“মুখের সাথে সাথে হাঁটা চলারও লাগাম টানতে হয়।”
-“আপনি আবার এসেছেন নীতিবাক্য ঝাড়তে?”
-“আমি এসেছি বাধ্য হয়ে।একই ভার্সিটির মেয়ে রাস্তায় মুখ থুবড়ে পড়ে গেলে সম্মান আমার ভার্সিটির যাবে।”
বলে ছেলেগুলোর দিকে চাইলো নোমান।চোখে কালো রংয়ের সানগ্লাস পড়া ছিলো।সেটি নামিয়ে শীতল দৃষ্টি ছুঁড়ে তাদের দিকে। ইতিমধ্যে সাথে থাকা ছেলেগুলো বখাটে ছেলেগুলোর দিকে এগিয়ে গেলেই দৌঁড়ে পালায় তারা।জিনিয়া দেখলো সবটা।বুঝলো।পরপর নোমানের দিকে চেয়ে বললো,
-“আমাকে বাঁচিয়ে,ছেলেগুলোকে ধাওয়া করে হিরো সাজা হচ্ছে?”
-“শাড়ি পড়লেই সবাই হিরোইন হয়না।তো আমার এখানে হিরো সাজার প্রশ্নই উঠে না।বরং আমি অবলা নারীর সম্মান রক্ষার্থে হাজির হয়েছি।জনসেবা আমার কাজ।”
এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারেনি জিনিয়া।এভাবে মুখের উপর অপমান করলো?জিনিয়া ফোন হাতে তুলে। বান্ধবীকে কল করে এই পাতি নেতার ফেসবুক একাউন্টটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিলো।এত সহজেই পরাস্ত করা সম্ভব হবেনা তাকে।
______
দুদিন যাবত লাপাত্তা ফাহাদ।কল করলে ধরছে না। মেসেজের উত্তর দিচ্ছে না।হদিস মেলা অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।আবারো মন আঙিনায় অভিমান জমলো।এই লোকটা তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে? বিয়ে করবে বলেছে ব্যাস এতটুকুই?এখন যাচ্ছেতাই করে যাবে?মুখ ফুলায় নেহা।প্রেমিকা না হয়েও প্রেমিকার মতন ব্যবহার এসে পড়েছে অজান্তেই।ফোন এলো আটচল্লিশ ঘন্টা পর।রিসিভ করে কোনো কথা বললো না নেহা।ফাহাদ বলে,
-“হুম বলো?কি হয়েছে?”
-“একটা ছেলে আর একটা মেয়ে”
-“কংগ্রাচুলেশন”
এমন জবাব কাম্য নয়।মুখের কুচকানো ভাব গাঢ়তর হলো।লোকটাকে ভালোবেসে আছে মহাবিপদে।পেয়েও যেনো পায়নি। ফোস ফোস নিঃশ্বাস ফেলতে থাকলো ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে।ফাহাদ শুনতে পায়।আলগোছে হেসে নেয়।আবার বলে,
-“মিষ্টি কি ঢাকা পাঠাবে নাকি সিলেট এসে খাবো?”
-“আপনি এমন কেনো?”
-“আমি এমন নই।হওয়ার চেষ্টা করছি।যেনো তোমার মনে বেহুদা প্রজাপতি না উড়ে।”
-“এভাবে চলবে না।”
-“চালাতে হবে।ভর্তি পরীক্ষায় মনোযোগী হও।”
-“এক পরীক্ষা যেতে না যেতেই আরেকটা।ভালো লাগেনা আমার এসব।”
-“তাহলে বিয়ে শাদি করে সংসার পাতো।”
নেহা ঠোঁট কামড়ে জবাব দেয়,
– “রাজি!”
-“বড্ড পেকেছো।আমি বাড়ি যাচ্ছি। পরে কথা হবে।”
-“শুনুন!”
-“হুম?”
-“আফতাব ভাইয়া ঠিক হয়ে গেছে।আসবেন না দেখতে?”
ফাহাদ গাড়ি স্টার্ট করতে করতে জবাব দেয়,
-“আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটায় সিলেটের মাটিতে পা রাখছি।এসে তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার পাকামোর ঔষধ ইনভেন্ট করবো।তৈরি থেকো।”
_______
জানা নেই খুশবুর গম্ভীরতা। সচক্ষে দেখেনি আফতাব।তবে বিগত তিনদিনে দেখেছে তার বদলে যাওয়া রূপ।এই চঞ্চলতায় মিশে থাকা দায়িত্ববান চরিত্র।কাজ সামলাচ্ছে। আফতাবকে সময় দিচ্ছে।তার দেহভার তুলে হাঁটাচ্ছে, ঔষধ দিচ্ছে,যত্ন করছে।বিছানায় পিঠ এলিয়ে দেখতে থাকলো মেয়েটিকে।কোনো নারীকে খুশবুর পূর্বে এতটা মনে ধরেনি।পাগলপ্রায় অন্তর তার মাঝে স্থির।আশপাশের কোনো চিন্তা নেই তার। নয়নজোড়া যেনো সবসময় এখানেই আবদ্ধ থাকে।
আলমারি থেকে নতুন কাপড় বের করে ঘুরে তাকাতেই ঘাবড়ে উঠলো খুশবু।লম্বা চওড়া দেহের মানুষটাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভড়কে উঠেছে।দূরত্ব বেশি নয়।কয়েক ইঞ্চি।অনেকটা কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মন ভোলানো দৃষ্টিতে তাকিয়ে।খুশবু চোখ নামিয়ে তুলে পর্যবেক্ষণ করলো।ঠোঁট ভিজিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“কি চাই?”
দূরত্ব আরো কিছুটা ঘুচে গেছে। খুশবুর আপনাআপনি পিঠ ঠেকালো আলমারির সাথে।আফতাব খুশবুর মুখশ্রীর কাছে ঝুঁকে এসে বলে,
-“আমার সবসময় সবভাবে আপনাকেই চাই।”
তাকানো গেলো না আফতাব এর চোখের দিকে। অগত্যা চোখ নামিয়ে নেয়।এরূপ মাদক চাহনিতে চাইলে শ্বাস কষ্ট উঠে যাবে।জবাব দেয়,
-“আমিতো আছিই….আপনি উঠতে গেলেন কেনো? শুয়ে থাকলেই পারতে…..”
নড়তে থাকা ঠোঁট থামাতে তর্জনী আঙ্গুল ঠেকায় সেথায়।আফতাব এর মতলব বোঝা দায় হয়ে পড়ছে।গোলগোল চোখ ফর্সের দিকে নামিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে নির্বিকার ভঙ্গিতে।
আফতাব গালে গাল মিশায়। কানের কাছে মুখ এনে বলতে লাগলো,
-“আমার দেহ নাহয় নিথর ছিলো তবে মস্তিষ্ক সবসময় সচল ছিলো জানেন?”
খুশবু কোনো জবাব দেয়না।বহুদিন পর আফতাব এর স্পর্শ বিগলিত করতে শুরু করেছে।গলার সমস্ত জোর কেড়ে নিচ্ছে।উত্তরের অপেক্ষায় থেকে লাভ হয়নি।আফতাব নিজে থেকে বলতে লাগলো,
-“আমাকে যা বলেছেন,যতবার ছুঁয়েছেন সব অনুভব করেছি। খুশবু কত নির্লজ্জ হয়েছে!উম..নির্লজ্জ না উন্নতি হয়েছে।আমার ঠোঁট ছুঁয়েছেন অথচ আমি আপনাকে কাছে টানতে পারলাম না।বেশ অসহায় বোধ করছিলাম।এবার সরাসরি ভালোবাসা দিয়ে দেখিয়ে দিন”
খুশবু সময় নিয়ে মাথা দোলায়।জবাব আসে,
– “উহু!”
-“তাহলে অসুস্থ একজন পুরুষের ফয়দা লুটার জন্য আপনার শাস্তি ভোগ করা উচিত।বলুন কি শাস্তি দেওয়া যায় আপনাকে?”
খুশবু মিনমিন করে জবাব দেয়,
-“ক্ষমা করেও দেওয়া যায়।”
-“একদম না।একজন আর্মি অফিসার এর জীবনে ক্ষমা বলতে কোনো শব্দ নেই।”
-“আপনার বাবুর জন্য অন্তত তার মা’কে ক্ষমা করা হোক”
আফতাব মৃদু শব্দে হাসলো।ক্ষমা পাবে না কোনরূপে।মিষ্টি শাস্তি ভোগ করতেই হবে তার। বহুদিনের তৃষ্ণার্ত চাতক সে।প্রিয়তমার সান্নিধ্য প্রয়োজন ভীষণভাবে। শাড়ির ভাঁজে উন্মুক্ত উদরে স্পর্শ পেতেই আরো পেছনের দিকে হেলে পড়ে খুশবু। অস্থিরতা তাণ্ডব শুরু করে হৃদ গহ্বরে।স্পর্শ তার বিধ্বংসী।একেবারে নতুন মনে হচ্ছে এতদিনের দূরত্বে। যেনো প্রথম স্পর্শ। লজ্জাবতী গাছের ন্যায় নিজেকে গুটিয়ে নেয়।তবে ষদুষ্ণ প্রশ্বাস তাকে স্বস্তি দিলে তবেই না।অনুভব করা হয়েছে অনাগত প্রাণকে।এবার তার মায়ের শাস্তির পালা।দুহাতে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে অতিশয় অধীর সুর টেনে আফতাব বলে উঠে,
-“সে বলেছে তার মা’কে শাস্তি দিতে।”
ঝটপট চোখ মেলে খুশবু।এই চোখ একদিন হয়ে দাঁড়াবে মৃত্যুর কারণ।এরূপ সম্মোহন থাকতে পারে কারো চোখে? বধ করতে দুবার ভাববে না যে?অশান্ত হয়ে উঠে হৃদপিণ্ড। খুশবু বোকা দৃষ্টিতে চেয়ে বললো,
-“সে কখনও এমনটা বলতে পারেনা।”
-“সে এটাও বলেছে, আমি চোখে হাত দিয়ে আছি।তোমরা শাস্তি কার্যক্রম শেষ করে জানাও।”
হাসি আটকাতে পারেনি খুশবু।এত বড় একটা লোকের মুখে এসব কথা নিতান্তই হাস্যকর।কিছু সময় হেসে নেয়।এতে আফতাব এর ঘোর লাগানো দৃষ্টির কোনো হেরবদল নেই।চেয়ে আছে নিষ্পলক।বোঝা গেলো বখাটের মতলব ভালো না।পালানোর পাঁয়তারা করা উচিত।
খুশবু নড়চড় করলে আফতাব হাতের বাঁধন দৃঢ় করে।বলে,
-“পালাতে চাইছেন? এতোদিন থেকেও ছিলাম না।এখন ছুঁয়ে দিলে ক্ষতি কি?”
উত্তপ্ত অগ্নিশিখার কাছে দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করছে জ্বলসে গেলে ক্ষতি কি? খুশবু সাহস করে সরু চোখে তাকায় আফতাব এর আবেদন করা চক্ষু পানে।আকুল আকাঙ্ক্ষী মানবের আবদার সে জানে।তবে এবারে অনুমতি চাইলো না। ঘাড়ে লেপ্টে থাকা কিছু এলোমেলো কেশে ঝুঁকে যায়।কয়েক দফা ঝড়ো হাওয়ার মতো করেই নিঃশ্বাস ফেললো। খুশবুরে মেয়েলী হাত ঠেকলো সুঠাম পিঠে।আফতাব নিজেকে শান্ত করার প্রচেষ্টায়।সময় নিয়ে বলে,
-“নিজের দেহকে অচেনা মনে হয়েছে এই ক’টা দিন।তবে যতবার আপনাকে কাছে অনুভব করেছি।প্রতিবার শিউরে উঠেছি আমি।আমি সব মনে করতে পারছি না খুশবু।”
এবারে দুহাতের সাহায্যে যতটুকু সম্ভব আফতাবকে জড়িয়ে নেয়।কোনো শব্দ করলো না।চুপ রইলো তার কথার বিপরীতে।আফতাব ফের বললো,
-“বসন্তের শেষে কেনো দুঃখ এলো?”
আফতাব এর বেড়ে যাওয়া চুলের গভীরে হাত ডুবিয়ে খুশবু জবাব দেয়,
-“বসন্তের শেষে দুঃখ এসেছিলো বটে।সামান্য আঁচড় কেটে এক ঝুড়ি সুখ দিয়ে গেছে ক্যাপ্টেন।আপনার সন্তানকে আপনি ভুলে গেছেন?”
ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে আফতাব। খুশবুর দৃষ্টি গোচর হয়নি সে হাসি। গাঢ় স্পর্শ একে দেয় ঘাড়ে।পরপর বারংবার।
-“আমার ফুলের গর্ভে আরো এক ছোট্ট ফুল”
খুশবু দুষ্টু স্বরে শুধায়,
– “আর সেই ফুল বাগানের মালি আপনি।”
মুখ তুলে চায় আফতাব।চোখ ছোট ছোট করে চেয়ে বললো,
-“শেষমেশ মালির কাজ?ভাবলাম মালিক বলবেন।”
-“হুহ্! আসছে আবার মালিক হতে!যা দিয়েছি তাতে সন্তুষ্ট থাকুন। লোভী কোথাকার!সবাই আপনাকে এখন অ্যাটেনশন দিচ্ছে।আমাকে দেখে না আর কেউ।আপনাকে মাথায় নিয়ে নাচছে।”
ললাট মিলিত হয়। খুশবুর দিকে মাদকীয় ভঙ্গিতে চেয়ে আফতাব প্রশ্ন করলো একেবারে নিচু স্বরে,
-“অ্যাটেনশন লাগবে?”
-“আর কি লাভ…কয়ে বলে অ্যাটেনশন আমার ….”
শব্দসমগ্র পূর্ণ হওয়ার পূর্বে থামানো হয় তাকে। শক্তি প্রয়োগ করে নিজের সঙ্গে চেপে আছে আফতাব।বিচলিত মিঠা স্পর্শে খুশবুও দমে গেছে। মোহগ্রস্ত হলো শ্যাম পুরুষের।হারাতে শুরু করে সমগ্র চিন্তা চেতনা। উন্মাদ হতে দেখা যায় তাকে। শান্তশিষ্ট মানুষের এমন রূপ কেই বা জানে?বিগত দিবা নিশির সমস্ত পীড়া কেড়ে নিয়ে আদরের পরশ দেয় তার সন্তানকে। পা ভাঁজ করে বসেছে তার সম্মুখে।একের পর এক চুমু খেয়ে যাচ্ছে।স্তব্ধ খুশবু শুধু অনুভব করলো।শব্দ করলো না কোনো ধরনের।বাবা সন্তানের আদর ভালোবাসা শেষে প্রথম ভালোবাসার দিকে ফিরে আসে মুখমণ্ডল।বলে,
-“আমার সমস্তটাই তোমার মাঝে আবদ্ধ।দেখো আমার অংশটাও তোমার মাঝেই….আমাদের মাঝে…”
চলবে…
#তেইশতম_বসন্ত
পরিসংখ্যা ২৬
লেখনীতে – Azyah(সূচনা)
হাতের মুঠোয় জগৎ।নেট দুনিয়াতে অসম্ভব বলতে অনেক কমই বিষয়াদি অবশিষ্ট রয়ে গেছে। ইন্টারনেট এর রঙিন দুনিয়াতে নোমান এর সোশাল মিডিয়া একাউন্টটা খুঁজতে কোনো রকমের বেগ পেতে হয়নি জিনিয়াকে।খুঁজে খুঁজে বের করেছে হাতুড়ে নেতাকে।রাজনীতি অপছন্দের তালিকায় সর্বপ্রথম।আজকালকের ছেলেপেলেরা রাজনীতি করে শুধু ক্ষমতার লোভে।মিটিং মিছিলে যাবে,বড় ভাইদের পাশে ‘সহমত ভাই’ বলে চেঁচাবে।তাতেও তাদেরই লাভ। পদোন্নতি পেয়ে ক্ষমতা দেখাবে পুরো ক্যাম্পাসে।ভয়ে ভয়ে রাখবে সাধারণদের। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখার জায়গা। রঙবাজী করার নয়। বান্ধবীকে পাশে বসিয়ে ফেইক একাউন্ট দিয়ে মেসেজ করলো নোমানকে।প্রথমে ভেবেছিলো আচ্ছামত গালি দিয়ে আইডি বন্ধ করে ফুরুৎ হয়ে যাবে।তবে না!এভাবে সাময়িক শান্তি পেলেও দীর্ঘদিন প্রভাব থাকবে না এর।
সীমা ওৎ পেতে বসে আছে।এই মেয়েটা আস্ত একটা বদ।কখন মাথায় কি আসে কিছুই বলা যায় না।সীমা ভার গলায় প্রশ্ন করলো,
-“তুই কি করতে চাইছিস বলবি?”
জিনিয়া তাকালো সীমার দিকে।দাঁত বের করে হেসে জবাব দিলো,
-“নয়ে আকার না”
সীমার মুখে বিরক্তি ভাব এসে হাজির। দাঁত খিঁচিয়ে বললো,
-“দেখ এমন কিছু করিস না যাতে করে তোর বিপদ হয়”
জিনিয়া ফোন রাখলো ব্যাগে। বেঞ্চিতে হেলান দিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,
-“প্রথমে প্ল্যান ছিলো একে আচ্ছামত গালি দিয়ে ব্লক করবো।তারপর ভাবলাম না!এতে আমার মনের স্বাদ পূরণ হবে না। আরেকটু মশলা এড করা উচিত।তার সাথে প্রেম করলে কেমন হয় রে?”
সীমা চমকালো।চোখ বড় বড় করে চাইলো এই গর্দভ মেয়েটার দিকে।সাহস কত বড় ওর!নোমান সম্পর্কে তার কোনো ধারণা আছে?
-“তোর কি মাথা খারাপ জিনিয়া!তুই নোমান ভাইকে চিনিস না।ধরা পড়লে তোর সম্মান যাবে।রাজনীতি করা মানুষ থেকে যত দূরে থাকা যায় তত ভালো!”
-“আমি কি ভয় পাই নাকি?”
-“জিনিয়া তোর মনে হয় না এবার তুই বেশি বেশি করছিস?”
-“কোনো বেশি বেশি করছি না।তুই চুপ থাক!”
জিনিয়ার দুঃসাহসিকতার দেখে ভয় পায় সীমা।ভুল যেনো না করে বসে।কি এমন আক্রোশ তার নোমান এর প্রতি কে জানে!হাত ধুয়ে ওর পিছনে পড়লো!পানি কতদূর গড়াবে কে জানে?
ক্যাম্পাসের কার্যক্রম শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা।জিনিয়া যৌথ পরিবারের সবচেয়ে ছোট সন্তান।বাবা,মা,চাচা চাচী,চাচাতো ভাই,ভাবি এবং বোনসহ একত্রিত পরিবার।বাড়ি ফিরে কখনো একাকীত্ব বোধ হয়না। মেতে থাকে সবার মাঝে।আজও তাই।ফ্রেশ হওয়ার সাথে সাথেই চাচাতো বোন হামলে পড়ে হবু স্বামীর গল্প শোনাতে।বড় ভাবি চা নিয়ে হাজির সাথে পেঁয়াজু।বাবা,চাচা এবং ভাই ফিরবে রাত দশটায়। হাস্যোজ্জ্বল পরিবার।কারো মধ্যে তেমন কোনো গাম্ভীর্য নেই।যেকোনো বিষয়ে একে অপরের সাথে ভীষণ ফ্রি।
আড্ডা শেষ হয় রাত দশটায়।একে একে সকলে খাবার খেয়ে যারযার রুমে অবস্থান করছে। জিনিয়া নিজেও।আগামীকাল হতে তিনদিন বন্ধ ক্যাম্পাস।হাতে সময়ই সময়।অনেকদিন হলো রাত জাগা হয়না।আজ সিদ্ধান্ত নিলো রাত জেগে মুভি দেখবে।ঠিক তখনই মেসেজ আসে ফোনে। জিনিয়া হাতে তুললো ফোন।প্রেরকের নাম দেখে মুখে হাসি ফুটে!নেতা সাহেব যে!
জিনিয়া মুভি দেখার প্ল্যান বাদ দিয়ে রিপ্লাই দিতে উদ্যত হয়। নোমান জিনিয়ার মেসেজের বিপরীতে জানতে চায়,
-“কে আপনি?”
-“আমি মানুষ”
নোমান কপাল কুচকালো।লিখলো,
– “ঠিক আছে।পরিচয়টা জানতে পারি?”
-“আসলে আপনি আমাকে চিনবেন না।তবে আমি আপনাকে চিনি।”
-“ওহ!কি সাহায্য করতে পারি?”
কান্নার ইমোজি সহকারে জিনিয়া লিখতে শুরু করে।জায়গা বুঝে কোপ দিবে।যেনো এড়িয়ে যেতে না পারে,
– “আমি আপনার ক্যাম্পাসের একজন।আপনাকে চিনি বেশ কিছুদিন।আপনার কাছ থেকে সাহায্য চাইতেই আপনাকে নক করা।আমার ভীষণ শখ ছিল জানেন রাজনীতি করবো।তবে মেয়ে মানুষ হওয়াতে সেই শখটা পূরণ হচ্ছে না।তাছাড়া আমার পরিবারেরও মত নেই এসবে।কিন্তু আমি আমার এই ইচ্ছেটাকে বাঁচতে চাই।আপনি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবেন?”
নোমানের কপালের ভাজ দৃঢ় হলো।কথাবার্তা কেমন অগোছালো। সন্দেহও হচ্ছে।তবে নিজেকে যত সাবধানে রাখা যায় তত ভালো।উত্তর দেয়,
-“আপনার ইচ্ছেকে বাঁচতে আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি?”
-“আমাকে বলুন না আমি কিভাবে আসতে পারি রাজনীতিতে।মেয়ে বলে কি আমাদের শখ আহ্লাদ নেই?রাজনীতি কি শুধু ছেলেদের জন্য?”
-“না একদমই না।আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী।”
-“সেটাইতো।একজন নারী দেশ চালাতে পারলে আমি রাজনীতিতে যোগ দিতে পারবো না?”
-“পারবেন”
-“আমাকে সবকিছু নিয়ে বিস্তারিত বলবেন প্লিজ?”
______
বোন জামাইকে দেখতে তৃতীয়বারের মতন ছুটে আসে ফাহাদ সিলেটে।সাথেই লোকমান চৌধুরী এবং নায়লা বেগম।এবারে তাদেরও খুশি দ্বিগুণ। বোনের পানে চায় বারবার। কবে এতো বড় হয়ে গেলো মেয়েটা?এইতো কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে।তারপর এক আকস্মিক তুফান উঠে তার কোমল জীবনে।লণ্ডভণ্ড করেছিলো।তার ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিবারের সকলের পরিচয় করিয়েছিলো।কখনো দায়িত্বশীল তো কখনও রূঢ়।এখন কোন রূপে দেখবে?একজন মা?তাকে মামা ডাকতে কেউ আসছে ভাবতেই মন ভরপুর হয় ভালো লাগায়।এসে বসে খুশবুর কাছে।আফতাব একটু দূরেই বসেছে।করুক আলাপ ভাই বোন।সে মধ্যে দিয়ে বাগড়া দিতে যাবে কেনো?
ফাহাদ বললো,
– “কিরে ছোট মস্তিষ্ক!”
খুশবু রেগে গেলো। নাক ফুলিয়ে বলে উঠলো,
-“ভাইয়া!”
-“কি ভাইয়া?আমি টেনশনে আছি রে!”
-“কিসের টেনশন?”
-“তোর বাচ্চাটাও যদি তোর মতন হয়?…নাহ এমনটা হবে না।সে তার বাবার মতন শান্ত,বুদ্ধিমান আর বুঝদার হবে”
-“অপমান করছো আমায়?”
-“উম…. হ্যাঁ!”
খুশবু তার হাতিয়ার তৈরি করলো।তাকে অপমান করা!মজা না দেখিয়ে ছাড়া যাবে না। আস্তে ধীরে হাত বাড়িয়ে খামচে দেয় ফাহাদের হাত।নখ দাবিয়ে দস্যু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।ফাহাদ ব্যথিত হলো।হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নিয়ে বললো,
-“রাক্ষসী!….তোর যা অবস্থা দেখছি তুই একটুও পরিবর্তন হোস নি”
-“হবোও না।”
-“তাহলে এতদিন সতী সাবিত্রী হয়ে ঘুরছিলি যে?”
-“পরিস্থিতি অনুযায়ী ভঙ ধরেছিলাম।”
একটা বিষয় উপলব্ধি করে ফাহাদ প্রতিবার।তার একমাত্র বোনের কাছে সব কথার জবাব আছে।বিশেষ করে তার কথার জবাব।ছোট হয়ে বড় ভাইকে হতভম্ব করে তুলে।খোঁচাতে শুরু করে সে আর সেই শেষ করে।সুযোগ দেয় মধ্যে মধ্যে ফাহাদকে।চুপ হয়ে থাকা ফাহাদের নাক টেনে ধরে খুশবু বললো,
-“বাচ্চা কোলে লটকে তারপর তোমার বিয়ে খাবো।এর আগে বিয়ের প্ল্যানিং করলে নেহাকে অপহরণ করার দায়িত্ব আমার আর আমার আর্মি বরের আর আমাদের পুঁচকের।সে মামার বিয়ে সচক্ষে দেখতে চায়।আমাকে ওয়ারিং দিয়েছে। মটরের দানার মত মামীর কোলে চড়ে তাকে নিয়ে আসতে চায়”
_______
-“একবার টিলায় চলুন বাবুর হবু ক্যাপ্টেন বাবা।আপনার পিচ্চিটাকে ঘুরিয়ে আনি।সেখানে না গেলে যে আমাদের ষোলো কলা পূর্ণ হবেনা।”
নব্য জীবন ফিরে পেয়েছে আফতাব।এতে পুরাতনের সুগন্ধির সহিতে নতুনত্বের স্বাদ আছে।উঁচু টিলায় স্নিগ্ধ রাত্রি প্রহর আরো একবার নেত্র আর বক্ষে ধারণ করবে।প্রিয় মানুষের কোলে মাথা রেখে আছে নির্ভয়ে।কিছুটা উন্নতির দিকে এগোতে থাকা আফতাব এর যেনো কোনো সমস্যা না হয় সেই বিষয় বিবেচনা করে শক্ত টিলায় নরম মাঝারি আকারের পাতলা তোষক বিছিয়ে দিয়েছে খুশবু।কি অদ্ভুত!আজ আফতাব এর আগমনে প্রকৃতির কি সুন্দর আয়োজন। গ্রীষ্মকালের শুরু অথচ গরমের কোনো লক্ষণ নেই।আকাশে চাঁদের আলো মাখা মাখা।প্রেমের খুশবু চারিপার্শ্বে।প্রত্যাবর্তন এর আনন্দে অধর চূড়ায় লেপ্টানো হাসি।দুটি মন এক হয়ে জেগে ওঠেছে ভালোবাসার নিশিতে।রাতের নীরবতা ভেঙে হৃদয় বলে কথা চোখে চোখে।স্তব্ধ সুরে বাঁধা অনাগত স্বপ্নের ব্যাখা।
-“এভাবে তাকিয়ে আছেন যে?”
প্রেমিকের চোখের গভীরতা যেন নীল আকাশের সীমানা।তাতে মিশে থাকা ভালোবাসার অতল ঢেউ।
নিঃশব্দে বলে যায় সে চোখ হাজারো অজানা কথা,
প্রেমের আবেশে মোহিত অন্তরের হালত, উদ্দীপিত ব্যাকুলতা।
-“দেখছি তোমায়,যেনো এক জনম পর দর্শন দিলে।যেনো বহু সাধনার পর এই মাতাল খুশবু ঘ্রাণেন্দ্রিয়তে হানা দিলো।”
চোখে চেয়ে দেখলো খুশবু। এক অনন্ত আকাশের চিত্র।এই চিত্রের মধ্যমণি তারই মুখমণ্ডল।প্রতিটা পলকে মেলে করে আছে ভালোবাসার চিরন্তন সূত্র। হৃদপিণ্ডের উঠানামা তরঙ্গের মতো করে হৃদয়ের মিষ্টি অনুরাগ প্রকাশ করছে।এইতো দুর্বলতা।এখানেই হারায় খুশবু বারবার।মনে হয় যেন ডুবে যাচ্ছে প্রেমের গভীর সাগর জাহাজিতে।
-“খুশবু”
-“হুম”
-“ভালোবাসা চাই ভাগ হওয়ার পূর্বেই”
-“ভাগ হবে মানে?”
আফতাব খুশবুর কোলে মাথা পেতে শুয়ে আছে।সামান্য ঘুরে তার তার সন্তানের দিকে।হাত রাখে উদরে।বলে,
-“এই যে উনি আমার ভাগেরটা নিয়ে নিবেন যে? তাছাড়াও তার মা কঞ্জুস।বাবার কাছ থেকে আদর ভালোবাসা নিয়ে নিয়ে রাজকোষ পূর্ণ করেছে।কেউ চাইতে আসলে কুটিল শাসকদের মতন স্বার্থপর আচরণ করে।”
হাসি আসে আফতাব এর কথায়।তার কথা সুন্দর তবে কখনো নির্বোধ মনে হয়নি। খুশবুকে মাতিয়ে রাখার কোনো সুযোগ ছাড়ে না। উপহার দেওয়ায় যায়। উল্টো ঘুরে খুশবুর কোমর জড়িয়ে বাবা সন্তান নিঃশব্দ আলোচনায় ব্যস্ত।খুশবু ঝুঁকে এসে কানের কাছটায় চুমু খায়। তৎক্ষনাৎ আফতাবও ভালোবাসার স্পর্শ ছোঁয়ালো উদরে।মুখ ঘুরিয়ে খুশবুর দিকে বলে উঠলো,
-“হস্তান্তর করলাম।যেনো ভবিষ্যতে হিংসে না করে সে।”
গভীর চাহনি দেখে লাজুক মনোরথ।আবেশে মিশে দুজন দুজনায়।তবে এখানে আছে আরো একজনের উপস্থিতি। অপেক্ষা আছে তার। সরেজমিনে পাবে তাকে।তারপরও অনুভবে কোনো কমতি নেই।আফতাব বললো,
-“তোমার বাবা ভীষণ দুঃখিত।সে বেঁচে থেকেও তোমার আসার সংবাদ শুনে তোমার মাকে আর তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারেনি।তুমি একটু একটু করে তৃতীয় মাসে পদার্পণ করেছো।আমি ছিলাম না।তিনটে মাস হারিয়ে ফেলেছে তোমার বাবা।”
-“তাহলে সে যখন আসবে তাকে তিনগুণ বেশি ভালোবাসবেন।”
-“জীবন পুরোটা উৎসর্গ করে দিলে কেমন হয়?”
মাথায় কোনো উত্তর এলো না খুশবুর।কথার অর্থ কি?বুঝেনি।একটু আগে ভাইয়ের বলা ছোট মস্তিষ্ক কথাটা মনে পড়লো।ভুল বলে না।ঠিকই বলে।তার মধ্যে পেয়েছে এক কবি কবি ভাব সম্পন্ন স্বামী।অর্ধেক কথা বুঝলে বাকি অর্ধেক বোধগম্যতার বাহিরে থেকে যায়।
আফতাব হেসে বললো,
– “তোমার মা আমার কথা বুঝেনি।কতটা বোকা সে ভাবতে পারছো?আমাকে আর তোমাকে মিলেই সামলাতে হবে তাকে।”
ঠোঁট উল্টে গেলো খুশবুর।এতে তার দোষটা কোথায়?সহজ বাংলায় বলা যায় না?আফতাব আবার বলে,
-“তুমিও বাবার মতন সেনাবাহিনীতে যোগ দিবে?”
চেঁচিয়ে উঠলো খুশবু।বললো,
– “খবরদার!আপনার মাথা দুই টুকরো করে ফেলবো আমি। অনশন শুরু করবো এই চিন্তা যদি মাথায়ও এনেছেন!”
শব্দ করে হাসে আফতাব।তার হাসিতে চোখ অব্দি হাসছে।নাক ফুলিয়ে বললো,
-“হাসিটা আপনার মুখে ভীষণ সুন্দর লাগছে বলে কিছু বললাম না।নাহয় নাক মুখ এখনই ফাটিয়ে দিতাম।ছেলে হোক আর মেয়ে সেনাবাহিনীর ত্রিসীমানায় যাবে না।নাহ মানে নাহ।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে…”
খুশবু নিজেকে শান্ত করলো।তারও ফোবিয়া হয়েছে।কোনো প্রকার কষ্ট চাই না তার জীবনে আর।সন্তান স্বামী আর পরিবারকে নিজে বাঁচতে চায় সুস্থভাবে।
গলা খাঁকারি দিয়ে খুশবু বলে,
– “শুনুন”
-“জ্বি ম্যাডাম?”
চোখ পিটপিট করে খুশবু বলে উঠে,
-“ভালোবাসি আপনাকে”
অবাক আর বিমূঢ় হওয়ার চেয়ে হাসি বেশি আসছে।আফতাব না পারতে হেসে উঠলো।বললো,
-“এভাবে? ধমকে?”
-“বলেছিতো অন্তত!”
-“সুন্দর করে বলো বউ”
-“কিছু মানুষ আছে বসতে দিলে শুতে চায়।আপনি হলেন তেমন”
-“আমিতো শুয়েই আছি।”
নিজেকে আবারো শান্ত করে লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে।মুখে হাসি টেনে বললো,
-“আমি আমার সন্তানের বাবাকে ভালোবাসি।অনেক অনেকটা…..”
চলবে…