প্রণয়ী পর্ব-০৬

0
118

#প্রণয়ীপ্রণয়ী
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
|০৬.|
(লেখা কপি করা নিষেধ)
……….

প্রকৃতিতে কিছু মানুষ থাকে না যারা কম কথা বলতে পছন্দ কিংবা চাইলেও নিজের মনের কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারে না তাদের মধ্যেই একজন প্রিয়তা। খুব অল্প বয়সেই সে বুঝে গিয়েছিলো মেয়ে মানুষকে পুতুল হয়ে থাকতে হয় আর সেই পুতুলের চাবি থাকে পরিবারের হাতে। যেভাবে উঠবস করতে বলবে সেভাবেই চলতে হবে। প্রিয়তা নিজের মর্জি মতো কখনোই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এখনো তার পোশাক পছন্দ করে কিনে দেয় তার মা।ছোট বেলা থেকেই তার স্কুল কলেজ এমনকি ভার্সিটিতেও তার বাবা পছন্দ করে ভর্তি করিয়েছে। সেই সাথে সে কোন বিভাগ বা বিষয় নিয়ে পড়বেন সেটাও তার বাবা পছন্দ মতো। প্রিয়তা কখন কার সাথে কোথায় যায় বা যাবে সেটার বিষয়ে তার ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। সে স্কুল কলেজে অধ্যায়নরত থাকতে তার ভাই তুহিনই তাকে দিয়ে আসতো। ভার্সিটিতে উঠার পর রিমি আর হৈমন্তীর চাপাচাপিতে মাঝে মাঝে ফুচকা খেতে যায় কিংবা একটু দেরি করে বাসায় ফিরে কারণ তুহিন এখন নিজের চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। সেভাবে আগের মতো খবরদারি করতে পারে না।
এসব নিয়ে কখনো মন খারাপ করেনি প্রিয়তা। বুঝ হওয়ার পর একটা কথা তার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘মাইয়া মানুষের মন মর্জি বলতে কিছু নাই,ছাইড়া দিলে ছাড়া গরু।’

প্রতিবারের মতো এবারো ভার্সিটিতে নতুন ব্যাচের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান হবে আর এবারো প্রিয়তা তার ভাইয়ের কাছ থেকে অনুমতি পাবে না যাওয়ার। রিমি গত কাল থেকে তার সাথে কথা বলছেনা এই কারণে। প্রতিবার রিমি আর হৈমন্তী তাকে জোর করে কিন্তু সে বারবার বলে ‘ভাইয়া রাজি হবে না’ তখন রিমির ভীষণ রাগ হয়। এইবার সে আর রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে প্রিয়তার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছে। প্রিয়তা কি করবে ভেবে পায় না। সে তো ভালো করেই জানে তার ভাই তুহিন এসব পছন্দ করে না। সন্ধ্যা বেলা মিসেস মাসুমাকে একবার সাহস করে এ বিষয়ে বলেছিলো তার একই কথা ‘তোর ভাই অনুমতি দিলে যা।’

প্রিয়তা চিন্তা করে একবার বলে দেখবে। চিন্তা মাফিক বেশ কিছুক্ষণ ধরে নিজের কক্ষে পায়চারী করতে শুরু করে। অবশেষে শ্বাস ফেলে ভাইয়ের কক্ষের দিকে যায়। কক্ষের দরজার সামনে এসে ভাবতে থাকে কি করবে। তার ভাই না করে দিবে সে জানে তবুও নিজের মনের সন্তুষ্টির জন্য একবার জিজ্ঞেস করতে চায়।

‘কিরে কিছু বলবি? বিড়ালের মতো এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?’
তুহিনের ডাকে প্রিয়তার ধ্যান ভাঙে।

প্রিয়তা আমতাআমতা করে জবাব দেয়,’আসলে ভাইয়া..’

তুহিন বিরক্ত প্রিয়তার আচরণে।
‘ন্যাকামি না করে কি বলবি জলদি বল।’

প্রিয়তা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,’কালকে ভার্সিটিতে অনুষ্ঠান আছে। আমি যেতে চাচ্ছিলাম।’

কথাগুলো বলে প্রিয়তা মাথা নিচু করে ফেলে। ভেবে নেয় এবার হয়তো তার ভাই তাকে ধমকাবে না হয় উপদেশ দিবে। তুহিনের কাছে এসব করা অহেতুক কাজ মনে হয়। তার কথা পড়াশোনা করতে হবে শুধু আর এসব অনুষ্ঠানে যাওয়া মানে সময় নষ্ট।

প্রিয়তাকে অবাক করে দিয়ে তুহিন বলে,’ওহ এই ব্যপার। ঠিক আছে যাবি না করছে কে। সকালে আমার সাথে বের হইস আমি তোরে ভার্সিটিতে দিয়ে অফিসে চলে যাবো।’

প্রিয়তা নিজের জীবনে এতোটা আশ্চর্য কখনো হয়নি। তার ভাই প্রথমবারের মতো তার কোনো কথায় সম্মতি দিলো। স্কুলে থাকতেও কখনো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে দেয়নি আর আজ ভার্সিটিতে অনুষ্ঠানে যেতে অনুমতি দিচ্ছে সেটা অবিশ্বাস্য!

‘অনুমতি পেয়ে গেছিস না? তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?’
তুহিনের কথা শুনে প্রিয়তা মাথা নিচু করে নিজের কক্ষের দিকে যেতে নেয়।

‘আর শোন অনুষ্ঠানে যাবি যখন শাড়ি পরিস। সবাই তো শাড়ি পরেই আসবে।’
তুহিনের মুখে এমন কথা শুনে প্রিয়তার মনে হয় এবার সে জ্ঞান হারাবে। তার ভাই হঠাৎ এতো উদার হচ্ছে কেনো? বেশি ভাবার সময় প্রিয়তা পেলো না এর পূর্বেই তুহিন তাকে আরেকবার নিজের কক্ষে যাওয়ার কথা বলে।
নিজের কক্ষে এসে হাসিমুখে ফোন বের করে রিমিকে কল দেয় প্রিয়তা। প্রথমে অভিমান করে কল রিসিভ না করলেও পরে ঠিকই রিমি কল রিসিভ করে। প্রিয়তা অনুষ্ঠানে আসবে শুনে রিমি চিল্লানী দেয়।
এদিকে কক্ষে বসে তুহিন ভাবছে কীভাবে কালকে বিষয়টা সবটা সামলাবে। প্রিয়তাকে অনুমতি দেওয়ার পিছনে তার অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে।

______________

সকাল সকাল মিসেস মাসুমা নিজের একটা শাড়ি বের করে প্রিয়তাকে পরিয়ে দিয়েছে। প্রিয়তার নিজের ব্যক্তিগত শাড়ি নেই। বড় হওয়ার পর এই প্রথম শাড়ি পরলো সে।
তার চুলগুলো বেশ লম্বা না হলেও পিঠ ছাড়িয়ে কোমড় ছুঁইছুঁই। চুলগুলো খোঁপা করে হাতে একটা ঘড়ি পরে নেয়। ব্যস তার সাজ শেষ। আঁচলটা টেনে মাথায় দিয়ে দেয়।

তুহিনের সাথেই বাসা থেকে বের হয় প্রিয়তা। তুহিন বারবার ফোন দেখছে আর কাউকে কল দিচ্ছে। প্রিয়তার নজরে আসলেও সে চুপচাপ হেঁটে চলেছে।
‘আচ্ছা শোন আমি তোকে কল দিয়ে ঠিকানা দিবো,ভার্সিটি থেকে বের হয়ে সেখানে যাবি।’

তুহিনের কথার মানে না বুঝেই প্রিয়তা মাথা নাড়ায়। তুহিন তাকে ভার্সিটিতে দিয়ে অফিসে চলে যায়।

ঘন্টা দুয়েক রিমি আর হৈমন্তীর সাথে বেশ ভালো সময় কাটায় প্রিয়তা। দুপুর হতেই তার ভাইয়ের কল আসে। সে তাকে একটা রেস্টুরেন্টের ঠিকানা দিয়ে সেখানে যেতে বলে। ভাইয়ের কথা রাখতে প্রিয়তা সেখানে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়। রিমি আর হৈমন্তীকে বিষয়টা জানায়নি।

রেস্টুরেন্টে এসে তার ভাইয়ের বলা টেবিলে সে বসে। প্রিয়তা বুঝতে পারছে না তুহিন তাকে এখানে কেনো আসতে বললো। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় না। এক ভদ্রলোকের কাশির শব্দে তার ধ্যান ভালো।

‘আপনি প্রিয়তা?’
মুখ তুলে প্রিয়তা নিজের সামনে এক লোককে দেখতে পায়। যার পরনে ইন করা শার্ট, প্যান্ট এবং পায়ে শু।

‘জি’
জবাব পেয়ে লোকটা তার বিপরীতে বসে। লোকটাকে দেখে প্রিয়তা আন্দাজ করে বয়স কমপক্ষে ৩৫হবে সেই সাথে মাথার তালুর টাকটা চকচক করছে।

‘সরি অপেক্ষা করালাম কিছু মনে করো না প্রিয়তা। তুমি করেই বললাম কারণ তুমি আমার ছোট হবা।’

‘জি আপনাকে তো চিনলাম না।’

‘আমি আশরাফ তুহিনের কলিগ।’

প্রিয়তা বুঝে উঠতে পারে না তার ভাই তাকে এখানে কেনো পাঠিয়েছে। এর মধ্যে তার ফোন বেজে উঠলে দেখে তুহিনের কল। রিসিভ করে ফোন কানে দিতেই অপরপাশ থেকে তুহিন এক গাদা কথা শোনায়।

‘এই শোন আশরাফ ভাইয়ের সাথে ভালো করে কথা বলবি। আমি যদি শুনি তুই ভালো ব্যবহার করিসনি বা উল্টাপাল্টা কিছু করেছিস তাহলে তোর খবর আছে। চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো সব কথার সুন্দর করে জবাব দিবি।’
কথাগুলো বলেই প্রিয়তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দেয় তুহিন। প্রিয়তা আহাম্মক বনে যায়। তার ভাই চাইছেটা কি?

আশরাফ নানান রকম প্রশ্ন করতে শুরু করে প্রিয়তাকে। সে শুধু ‘হু’ ‘হ্যা’ তে ই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে।
আশরাফের কথা শুনে একরাশ বিরক্তি এসে ভর করে প্রিয়তাকে। তার ভাইয়ের কলিগ হওয়াতে না পারছে কিছু বলতে না পারছে সইতে।

‘ও লাইলী তুমি দেখতে কি পাও
বেচারা মাজনুর এ হাল..’

আজগুবি গান শুনি প্রিয়তা পাশে তাকায়। তাকিয়ে দেখে মারুফ গান গাইছে। মারুফ,শাকিল এবং রফিককে দেখে পায়। তারা এসে পাশের টেবিলে বসেছে। জাইনকে তাদের সাথে না দেখে প্রিয়তা কিঞ্চিত অবাক হয়।

‘না মানাইতেছে না। মনে হইতেছে গোলাপের সামনে একটা ছাগল বসা।’
মরুফের কথা শুনে শাকিল আঁড়চোখে আশরাফকে দেখে নেয়।

শাকিল বলে,’ছাগলটারে দেখে মনে হয় জীবনে গোলাপ দেখে নায়। এতো সাজগোছ করার পরও ছাগলটারে আঙ্কেল লাগতেছে।’

রফিক বলে,’এটা মনে হয় গ্রাম্য রাম ছাগল। ঢাকায় এসে ইসটাইলিশ হইয়া গেছে। গ্রামের ছাগল ঢাকার ইসটাইলিশ বয়।’

প্রিয়তা সবটা শুনছে। কেনো জানি মনে হয় তাকেই এসব বলছে তারা। বেচারি পড়ে গেছে চিপায়।

‘প্রিয়তা আমার কথা শুনছো?’
প্রিয়তার ধ্যান ভাঙে আশরাফের ডাকে।

‘হ্যা’

‘মাথা থেকে আঁচল নামাও তোমার চুলগুলা দেখবো। আসলে আমি চাই আমার বাচ্চাদের মায়ের চুল পর্যাপ্ত হোক। যদিও তোমার ভাই বলেছে তোমার চুলগুলো বড় আছে। আমি আবার চুলের ব্যপার কোনো ছাড় দেই না।’

আশরাফের এমন কথা শুনে মারুফ হো হো করে হেসে দেয়।

মারুফ হাসতে হাসতে বলে,’নিজের খা খা মরুভূমি থাকতে খুঁজে জঙ্গল।’

‘শালার জীবনে করলামটা কি। গোলাপ তো দূর শাপলাও জুটলো না।’
শাকিলের কথায় তাল মিলিয়ে রফিক বলে,’আজকাল আঙ্কলদের চাহিদা বেশি।’

‘এই যে আপনারা আস্তে কথা বলুন আমাদের সমস্যা হচ্ছে।’

আশরাফ গলা উঁচিয়ে বলে। আশরাফের কথা শুনে মারুফ আর শাকিল একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে।

মারুফ জিজ্ঞেস করে,’কেনো রেস্টুরেন্টটা কি আপনার? বাড়ি কই আপনার? আমরা কে জানেন?’

আশরাফ জবাব দেয়,’যে ই হন না কেনো আমি ভয় পাই না।’

‘তাই না কি? অনেক সাহস মনে হচ্ছে আপনার।’
জাইনের গলা পেয়ে প্রিয়তা চোখ তুলে তাকায়। জাইন তাদের টেবিলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

আশরাফ প্রশ্ন করে,’আপনি আবার কে?’

‘আমি কে দেখবেন?’
জাইন চুটকি বাজাতেই মারুফ,রফিক,শাকিল এসে আশরাফকে টেনে তুলে।

‘আরে গায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো? ছাড়ুন আমাকে।’

মারুফ বলে,’আমরা আইনের পক্ষের লোক আপনাকে তল্লাশী করবো। অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে দেখে সন্দেহ হইতাছে। আমাদের সাথে বাথরুমে চলেন।’

মারুফের কথায় আশরাফ ঘাবড়ে যায় প্রচন্ড।
এমন পরিস্থিতিতে প্রিয়তা কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। তুহিন জানলে লংকা কান্ড বাঁধাবে ভেবে সে মুখ খুলে।

‘আপনারা ওনাকে ছাড়ুন।’

‘এতক্ষণ যেভাবে পুতুলের মতো চুপ করে ছিলে এখনো চুপ থাকো।’
জাইনের কথা শুনে প্রিয়তা মাথা নিচু করে ফেলে। কেনো সে চুপ সেটা তো আর অন্যরা জানে না। তুহিনের কলিগ না হয়ে অন্য কেউ হলে সে এতক্ষণে ঝারি মেরে বাসায় যেতো। আশরাফকে টেনে বাথরুমের দিকে নিয়ে যায় তিনজন মিলে। প্রিয়তা সেদিকে চেয়ে থাকে।

‘লোকটা কে?’
জাইনের প্রশ্ন শুনে সামনে তাকালে দেখে সে আশরাফের চেয়ারে বসেছে। চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলে টেবিলে রাখে সে।

প্রিয়তা উত্তর দেয়,’আপনাকে কেনো বলবো? এটা আমার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।’

‘শাড়ি পরে দেখা করতে এসেছো তার মানে স্পেশাল কেউ। কিন্তু এই আঙ্কেলের সাথে কীভাবে কি বুঝলাম না। আর কাউকে পেলে না?’

জাইনের কথায় প্রিয়তা গায়ে আ°গু°ন ধরে যায়।

‘আঙ্কেল হোক কিংবা বুড়া তাতে আপনার কি? আমার যার সাথে ইচ্ছা ঘুরবো। আপনি এতো নাক গলাচ্ছেন কেনো?’

‘কি করবো বলো নাকটা তো বেহায়া তাই তোমার বিষয়ে আইমিন যেখানে সেখানে ঢুকে যায়।’

জাইনের কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে প্রিয়তা তাকায়।

‘গত দু’দিন ছাদে আসনি কেনো? অপেক্ষায় ছিলাম।’

‘আমি তো বলেই দিয়েছি আমি আসবো না। আপনি উপকার করেছেন তাই ধন্যবাদ হিসেবে গিয়েছিলাম সেদিন এরপর আপনার সাথে আমার কোনো প্রয়োজন নেই।’

‘সত্যিই প্রয়োজন নেই? এই যে এতক্ষণ ধরে আঙ্কেলটা আবোলতাবোল বলছিলো আর তুমি বিরক্ত হচ্ছিলে সেখান থেকে তোমায় বাঁচালাম এর বিনিময় কিছু দিবে না?’

‘আপনি দেখি ছুতো খুঁজছেন। আমি কি বলেছি সাহায্য করতে?’

‘যা মনে করো তা-ই। চা খাওয়ার প্রস্তাবের উত্তর এখনো পাইনি।’

‘আপনি আপনার বন্ধুদের বলুন ওনাকে ছাড়তে আমি বাসায় যাবো।’

‘চলো দিয়ে আসি।’

জাইনের কথায় প্রিয়তা বিরক্তিকর চাহনি দেয়।

‘রাগ করছো কেনো ডেকে দিচ্ছি তার আগে বলো আজকে ছাদে থাকবা।’

‘পারবো না।’

প্রিয়তার ত্যাড়ামির কাছে জাইন অসহায়বোধ করে।

‘এই তোমাকে আল্লাহ কোন মাটি দিয়ে বানাইছে? আমার মনে হয় তোমাকে মাটি না পাথর দিয়ে বানাইছে। মায়া দয়া করে লোহাও গলে যায় কিন্তু তুমি গললা না।’

প্রিয়তা ব্যাগ কাঁধে তুলে হাঁটা দেয়। জাইনও উঠে তার সাথে সাথে যেতে থাকে। প্রিয়তা দ্রুত পা চালায় জাইনও তার সাথে তাল মেলায়।

প্রিয়তা থেমে জিজ্ঞেস করে,’কি সমস্যা?’

‘আমার কোনো সমস্যা নেই। তোমার সমস্যা থাকলে বলো দিয়ে আসি।’

কথা না বাড়িয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে প্রিয়তা বের হয়। জাইনও তার সাথেই বের হয়।
প্রিয়তা চিন্তা করে কথা না বলে হাঁটতে থাকবে। কিছুক্ষণ হাঁটার পরও জাইন তাকে একলা ছাড়ে না। এবার প্রিয়তা নিজেই বিরক্ত হয়।

‘আপনি বখাটেদের মতো আচরণ করছেন কেনো?’

প্রিয়তার প্রশ্ন শুনে জাইন ভান ধরে উত্তর দেয়,’আমি আবার কি করলাম?আমি তো কথা না বলে চুপচাপ হাঁটছি।’

‘এই যে আমার সাথে সাথে হাঁটছেন এতে আমি বিরক্ত হচ্ছি।’

‘ওটা তোমার সমস্যা আমার না। আমি তো আমার পথ ধরে হাঁটছি। এখন রাস্তা যদি তোমার হতো তাহলে নিষেধ করতে পারতে যেহেতু সরকারি রাস্তা আমার যেখান থেকে মন চায় হাঁটবো।’

প্রিয়তা আশেপাশে বারবার তাকায় আর আঁচলটা টানতে থাকে। একবার কেউ দেখে নিলে তার রক্ষে নেই। এমনিতেও মেয়েদের দোষ ধরতে লোকের অভাব নেই। বাসায় কেউ কোনো কথা লাগিয়ে দিলে অঘটন ঘটবে।

‘আচ্ছা আমি আজকে ছাদে আসবো আপনি দয়া করে এখন আমাকে একলা যেতে দিন।’

প্রিয়তার মুখে এমন কথা শুনে জাইন বিজয়ের হাসি দেয়।
‘শাড়িটা পরে চুল খুলে এসো। আমি অপেক্ষায় থাকবো।’

কথাগুলো বলেই জাইন চলে যায়। জাইন যেতেই প্রিয়তা হাঁপ ছেড়ে বাঁচে। আপাততঃ তাকে বিদায় করতে পেরে শান্তি, পরেরটা পরে দেখা যাবে।

পা চালায় দ্রুত বাসায় যেতে। রাস্তা পাড় হওয়ার জন্য থামে। গাড়ি একটু কমতেই সে পা বাড়ায়। হঠাৎ একটা গাড়ি হর্ণ বাজিয়ে দ্রুত গতিতে আসতে থাকে। প্রিয়তা যতক্ষণে দেখে ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়।

……
(চলবে..)