প্রণয়ী পর্ব-২১

0
127

#প্রণয়ী
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
|২১.| (১৮+ এ্যালার্ট)
(লেখা কপি করা নিষেধ)
………

‘কিরে এক রাতের রে ট কত?’
এমন একটা বিশ্রী প্রশ্ন শুনে প্রিয়তা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। চারজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। সকলেই তার দিকে বাজে দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এদের মধ্যে আলামিনও আছে। প্রিয়তা এদের কথার জবাব না দিয়ে উঠে হাঁটা দেয়। প্রিয়তার পথ আঁটকে দাঁড়ায় তারা।

একজন বলে,’মা ল ডা কড়ারে।’

আলামিন বলে,’এই রে ট কত বললি না যে? আচ্ছা যা রে ট তার দ্বিগুণ দিবো।’

প্রিয়তা দাঁতে দাঁত চেপে আলামিনের গালে চড় বসায়।
প্রিয়তা চিল্লিয়ে বলে,’তোর মাকে গিয়ে জিজ্ঞেস কর তার রে ট কত জা নো য়া র।’

আলামিন প্রিয়তার ডান হাত চেপে ধরে বলে,’শা লি তোর বহুত গরম আয় আজকে গরম কমাই। আগের থা প্প ড় কিন্তু ভুলি নাই।’

প্রিয়তা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।
‘তোর মায়ের সাথেও এরকম অসভ্যতা করিস? এই শিক্ষা দিয়েছে তোকে?’

‘চুপ শা লি তোর কাছ থেকে জ্ঞান চাই নাই। চুপচাপ চল নইলে জোর করুম।’

‘পারলে জোর কর দেখি কত পারিস।’
জাইনের গলা পেয়ে সকলে চমকে পিছনে তাকায়। প্রিয়তাও চোখ তুলে তাকায়।

আলামিনের সাথের ছেলেরা ওর দিকে তাকায়। সকলে ভেবেছিলো জাইন চলে গেছে। জাইন এগিয়ে এসে প্রিয়তার ধরে রাখা হাতটার দিকে তাকায়। আলামিন সাথে সাথে প্রিয়তার হাত ছেড়ে দেয়।

আলামিন হাসি দিয়ে বলে,’ভাই আমাদের মধ্যে। আগে যা হইছে ভুলে যান। সাইডে আসেন কথা আছে।’

জাইন কিছু না বলে আলামিনের কথা মতো একটু সাইডে আসে। আলামিন বলে,’এমন একটা মা ল আপনি একা খাবেন এটা কি ঠিক বলেন। আপনি খাওয়ার পর আমাদেরকে একটু সুযোগ দিয়েন। তেইলে আমি মুখ বন্ধ রাখুম।’

জাইন প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,’তোর সুযোগ লাগবে?’

আলামিন খুশি হয়ে বলে,’হ ভাই। হেব্বি একটা মা ল।’

জাইন সাথে সাথে আলামিনের থোঁতা বরাবর ঘুষি দেয়। টাল সামলাতে না পেরে মাটিয়ে পড়ে যায় সে। সাথের ছেলেগুলো এগিয়ে আসতে নিলে জাইন ওদের দিকে ক্ষ্যাপা দৃষ্টিতে তাকায়। হাত দিয়ে ইশারা করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে বলে। জাইনের চোখমুখ দেখে ছেলেগুলোর সাহস হয় না আগাতে। তারা জানে এখন আগালে পরে জাইন তাদেরকে খুঁজে জা হা ন্না ম দেখাবে। আলামিন রাগের মাথায় উঠে আসে জাইনকে মারতে। জাইনের থেকে উচ্চতা কম হওয়াতে সহজেই জাইন তাকে আরো ঘুষি দেয়।
প্রিয়তা এতক্ষণ সবটা দেখছিলো কিন্তু জাইন যখনই আলামিনকে মাটিতে ফেলে মারছিলো তখন সে এগিয়ে এসে জাইনের হাত টেনে ধরে। আলামিনের নাক ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।
‘ছাড়ুন অনেক মেরেছেন।’
প্রিয়তা হাত টান দিতেই জাইন প্রিয়তার দিকে তাকায়। প্রিয়তার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে তার এসব ভালো লাগছে না। আলামিনকে ফেলেই সে উঠে আসে। প্রিয়তার ডান হাত নিজের বাম হাতের মুঠোয় তালুবন্দী করে নেয়। প্রিয়তা চমকে তাকায় জাইনের এহেন কান্ডে।

‘আজকে ছেড়ে দিলাম নেক্সটে প্রিয়র দিকে তাকালেও চোখ উপড়ে ফেলবো মনে রাখিস।’
জাইনের হু ম কি শুনে প্রিয়তা আরেক দফায় চমকায়। জাইন প্রিয়তার হাত টেনে হাঁটা দেয়। ছেলেগুলো আলামিনকে ধরে তুলে।

আলামিন বিরবির করে বলে,’এসবের শোধ আমি সুদে আসলে নিমু।’

ঘাসের উপর এক গুচ্ছ গোলাপ ছিলো সেগুলো জাইন তুলে নেয় হাতে। মূলত এই গোলাপ গুলো জাইনের গাড়িতে ছিলো। আসার সময় এনেছিলো প্রিয়তাকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু মনে ছিলো না তখন। একটু আগে গাড়ির কাছে গিয়েছিলো এগুলো আনতে। আর আসার পর দূর হতে ওদের দেখে গোলাপ ফেলে ছুটে আসে। প্রিয়তা জাইনের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়। জাইন সাথে সাথে প্রিয়তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকায়। প্রিয়তা সেই দৃষ্টি উপেক্ষা করে হাঁটতে থাকে।

ফুলগুলো এখনো প্রিয়তাকে দেয়নি সে। হাঁটতে হাঁটতে তারা গাড়ির কাছে চলে এসেছে। প্রিয়তা গাড়িতে উঠতে নিলে জাইন তাকে আটকায়। প্রিয়তা কিছু বলবে এর পূর্বেই জাইন তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে ফুলগুলো সামনে ধরে। টকটকে লাল রঙের সতেজ একগুচ্ছ গোলাপ।
জাইন বলতে শুরু করে,’আই লাভ ইউ প্রিয়। ম্যারি মি প্লিজ। অনেক আদরে রাখবো তোমাকে।’

প্রিয়তা দু কদম পিছয়ে জবাব দেয়,’অসম্ভব!’

‘কেনো অসম্ভব?’

‘না আমি কোনো গু ন্ডাকে বিয়ে করবো না আমার পরিবার রাজি হবে।’

‘আমার পরিবার গিয়ে তোমার পরিবারের সাথে কথা বলবে ওসব নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।’

প্রিয়তা মুখ ঘুরিয়ে বলে,’দেখুন আপনি যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছু না। বান্ধবীদের চাপে আমি আপনাকে কল দিয়েছিলাম। আমার মনে আপনার জন্য কোনো স্থান নেই।’

জাইন উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। গুটিগুটি পায়ে প্রিয়তার দিকে এগুতেই সে পিছিয়ে যায় তবে পিছনে জিপ থাকায় থেমে যায়। জাইন এগিয়ে এসে দুই পাশে হাত রেখে প্রিয়তাকে বন্দি করে ফেলে।

প্রিয়তা চেঁচিয়ে বলে,’এগুলা কোন ধরনের অসভ্যতা? সরে দাঁড়ান।’
এতে জাইন প্রিয়তার দিকে আরো চেপে দাঁড়ায়।

‘তুমি একাই জেদ করতে পারো আমি পারি না? আর সবসময় গু ন্ডা গুন্ডা বলে ডাকো কেনো? তোমার সাথে কখন গু ন্ডা মি করেছি?’

‘এই যে এখন করছেন। আমি না বলা সত্ত্বেও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন।’

‘ভয় পাচ্ছো? যদি টুকুস করে জাইন রহমানের প্রেমে পড়ে যাও সেটার?’

‘মোটেও না। আমার এতো দূর্বল নই যে দু’দিনের পরিচয়ে প্রেমে পড়ে যাবো।’

প্রিয়তার কথা শুনে জাইন হাসে। জাইনের হাসির দিকে প্রিয়তা দৃষ্টি সরায়।

‘গু ন্ডা যখন ডাকো তাহলে গু ন্ডা মি করি কি বলো? এখন তোমাকে তুলে নিয়ে বিয়ে করে ফেলি তারপর দেখাবো কেমন গু ন্ডা আর কেমন অসভ্য।’

প্রিয়তা জাইনকে মৃদু ধাক্কা দেয় সরানোর জন্য।

জাইন গলার স্বর নামিয়ে বলে,’তুমি মুখে বলছো এক আর ভেতরে চাইছো আরেক। তোমার যদি আমাকে এতোই অপছন্দ হতো তাহলে এতক্ষণে চার পাঁচটা চ ড় বসিয়ে দিতে তোমার কাছে আসার জন্য। তোমার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য কাজটা করলাম।’

জাইনের কথা শুনে প্রিয়তা সাথে সাথে তার দিকে তাকায়। জাইন সরে দাঁড়ায়।

প্রিয়তা দূরে সরে বলে,’আপনার সাথে আমি শেষবার কথা বলতে চাই এই বিষয়ে। এরপর আপনি আমাকে বিরক্ত করবেন না আর।’

ফুলগুলো জিপের উপর রেখে জাইন জিপে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।

‘বলো শুনছি।’

‘আপনি আর আমাকে বিরক্ত কিংবা ব্ল্যাকমেইল করবেন না।’

‘আর?’

‘আপনি হুট করে সেদিন বাসায় ঢুকে গেছেন যদি কেউ দেখে ফেলতো তখন?’

‘দেখেনি তো।’

‘রাতের বেলা হাবিজাবি বলে আমাকে ছাদে নিলেন সে সময় তো কেউ দেখে ফেলতে পারতো।’

‘দেখলে তাকে চুপ করিয়ে দিতাম।’

‘হ্যা এটাই পারেন রি ভ ল ভা র দিয়ে ভয় দেখাতে। নিজে কখনো রি ভ ল ভা রের সামনে দাঁড়িয়েছেন? দাঁড়ালে বুঝতেন কেমন লাগে। ভয় দেখানো অনেক সহজ।’

প্রিয়তার কথা শুনে জাইন তার দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রিয়তাও চুপ হয়ে যায়।

জাইন গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে যায়। প্রিয়তা গগনের দিকে তাকিয়ে দেখে সন্ধ্যা নামছে। ইতিমধ্যে গগন হালকা রক্তিম বর্ণে ছেয়ে গেছে।

‘এটা আমার কপালে ধরো যেভাবে আমি সেদিন তোমায় বলে ভয় দেখিয়েছিলাম।’

কথাটা বলেই প্রিয়তার হাত টেনে তার উপর রি ভ ল ভা র রাখে জাইন। প্রিয়তার চক্ষুদ্বয় বড় বড় হয়ে যায়। সাথে সাথে সেটাকে এক প্রকার ছুঁড়ে দেয়।

‘আপনি এসব করে আমাকে উল্টো ভয় দেখাচ্ছেন।’

রাস্তা হতে রি ভ ল ভা র টা হাতে তুলে নেয় জাইন।
‘এটার মধ্যে কোনো বু লে ট নেই। আর সেদিন এটা সাথে নিয়ে তোমারকে ধমকাতে যাইনি। মাথা বেশি গরম ছিলো তাই আবোলতাবোল বলেছিলাম। সুস্থ মস্তিষ্কে কখনো এসব বলতাম না।’

প্রিয়তা দূরে সরে জাইনের হাতে থাকা রি ভ ল ভা রের দিকে তাকায়। বিষয়টা জাইনের দৃষ্টি এড়ায় না।

‘তুমি আমাকে না এটাকে ভয় পাচ্ছো।’

প্রিয়তা দৃষ্টি সরিয়ে বলে,’বাসায় যাবো।’

জাইন বিনা বাক্যে জিপে চড়ে বসে। প্রিয়তাও জিপে উঠে। পুরো রাস্তা দু’জনে চুপ থাকে। সন্ধ্যা নেমে গেছে ইতিমধ্যে। পৌঁছাতে রাত হয়ে যায়। জাইন হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষে।

‘নামো বাকিটা পথ রিকশা করে যাবা।’
জাইনের গলা শুনে প্রিয়তা ভাবে সে রাগ করেছে। পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নামে। রাগ করুক গিয়ে তার কি!
একটা রিকশা ডেকে তাকে রিকশায় তুলে দেয় সেই সাথে অগ্রিম ভাড়াও রিকশাওয়ালাকে দিয়ে দেয়। প্রিয়তা বারন করলেও শোনেনি।

‘তুমি যতই না করো আমার পক্ষে অসম্ভব তোমার পিছু ছাড়া। তোমাকে আমার বেহায়াপনা সহ্য করতে হবে আম সরি প্রিয়।’

জাইনের কথাগুলো শুনে প্রিয়তা তার দিকে তাকায়। রিকশা চলতে শুরু করে।
জাইন ঠান্ডা গলায় ডাকে,’প্রিয়..’

প্রিয়তার বুকের ভেতর কেমন করে ওঠে। এর আগে ছাদে যখন এভাবে ডেকেছিলো তখন প্রিয়তার এমন লেগেছিলো। আজও জাইন সেভাবেই ডাকলো। আজ আবার এ অনুভূতির সাথে তার সাক্ষাৎ। ইচ্ছে করছে বলতে,’আরেকবার ডাকুন প্রিয় বলে।’
মনের কথা মনেই চেপে রাখলো। যতদূর রিকশা দেখা যায় জাইন দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিলো। প্রিয়তাও রিকশা হতে জাইনের দৃষ্টিতে দৃষ্টি মিলিয়ে ছিলো। তারও ইচ্ছে করছিলো না দৃষ্টি সরাতে।

..

প্রিয়তা বাসায় ফিরে তখন রাত আটটা বাজে। দরজা খুলেই মিসেস মাসুমা রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রিয়তার দিকে।

‘কয়টা বাজে? কোনো ভালো ঘরের মেয়ে এতো রাত করে বাড়ি ফিরে?’
প্রিয়তা মিসেস মাসুমা কথা উপেক্ষা করে ভেতরে প্রবেশ করে। চেয়ারে বেল্লাল হোসেন বসা। ঢাকা থেকে বিকালে ফিরেছেন। প্রিয়তা বাবাকে দেখে হাসিমুখে তার পাশে গিয়ে বসে। বেল্লাল হোসেন প্রিয়তার কেশে মমতার স্পর্শ দেন।

‘কেমন আছিস মা?’

‘তোমার মতো বাবা থাকতে আমি খারাপ থাকতে পারি? যত খারাপই থাকি তোমায় দেখলে সব দূর হয়ে যায়।’

মেয়ের কথায় বেল্লাল হোসেন খানিকটা হাসেন।

‘ডাক্তার কি বললো? তুমি ওদের বলোনি ভালো ঔষধ দিতে? দু দিন পর পর যাতে তোমার শরীর খারাপ না হয়।’

‘বয়স হয়েছে তো তাই এসব রোগ বালাই থাকবেই। তুই এতো রাতে কো থেকে এলি?’

‘হৈমন্তীর বাসায় গিয়েছিলাম।’

মিসেস মাসুমা বলেন,’যেখানেই যাস সময় জ্ঞান থাকে না তোর?’

‘আন্টি আসতে দিচ্ছিলো না তাই দেরি।’

বেল্লাল হোসেন বলে,’আচ্ছা গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে পোশাক বদলে নে।’

প্রিয়তা মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
মিসেস মাসুমা বলে,’বারবার নিষেধ করি মেয়েকে এতো আশকারা দিতে। এতো মাথায় তুলছো পরে কিনা পস্তাতে হয়।’

বেল্লাল হোসেন জবাবে বলে,’মেয়েটা অবুঝ না। যা করবে বুঝেই করবে।’

মিসেস মাসুমা বেল্লাল হোসেনের কথায় খুশি হননি মোটেও। সে রান্নাঘরের দিকে যায়। তুহিন এখনো ফেরেনি। ফিরলেই গরম ভাত না হলে খাবে না।

কক্ষে এসে ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দেখে প্রিয়তা। মেসেজ চেক করতেই দেখে জাইনের কোনো মেসেজ আসেনি। ফোন রেখে বাথরুমে ঢুকে।

জাইন জিপে বসা। সিটে হেলান দিয়ে চক্ষুদ্বয় বন্ধ করে আছে। তার ফোন বেজেই চলেছে অনেকক্ষণ ধরে। কিন্তু সে কল ধরছে না। তার মনোযোগ অন্য দিকে। চোখের সামনে প্রিয়তার মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। মেয়েটার প্রতি সে বড্ড দূর্বল অনুভব করে। নইলে একটা কল পেতেই গুরুত্বপূর্ণ সভা ছেড়ে সে চলে যেতো? কত মিথ্যে কথা বলে বেরিয়েছে শুধুমাত্র প্রিয়তা তাকে ডেকেছে তাই। সে অনুভব করে প্রিয়তার মনের এক কোনায় তার জন্য অনুভূতি রয়েছে কিন্তু মেয়েটা কোনো কারনে এগোয় না। জাইন এতটুকু বুঝেছে প্রিয়তা তাকে বিশ্বাস করে এবং ভয় পায় না শুধু তার সাথে থাকা জিনিসটাকে ভয় পায়।
ফোনটা এখনো বেজেই চলেছে। তুলে দেখে মারুফের কল। কল রিসিভ করেই অপরপাশ থেকে মারুফ তাকে গালি দেয়।

‘ঐ শালা তুই লাইলীকে পেয়ে সব ভুলে গেছিস। কত গুলা কল দিছি তোরে? এখন কই তোরা?’

‘প্রিয়কে পৌঁছে দিয়ে রাস্তার মাঝে জিপ বন্ধ করে বসে আছি।’

‘মানে? ওরে যাইতে দিলি কেন? তোরে না বললাম ওরে ম্যানেজ কর আমরা কাজী নিয়া আসি।’

‘উহু এভাবে জোর করে বিয়ে করলে ওকে পাবো কিন্তু ওর ভেতরের সত্ত্বাকে পাবো না।’

‘শালা কত ভালো সুযোগ হাত ছাড়া করলি। ঐ মেয়ে সহজে ধরা দেয় না। আজকে ধরা দিলো তুই ওরে যেতে দিলি।’

‘রাখছি ভালো লাগছে না।’

‘এখন ভালো লাগবে কেমনে।’

জাইন কল কেটে দেয়। তার দৃষ্টি যায় সামনে থাকা গোলাপের গুচ্ছের দিকে। প্রিয়তার জন্য শখ করে এনেছিলো কিন্তু প্রিয়তা একটা ফুলও নেয়নি। ফোন বের করে প্রিয়তাকে মেসেজ দিতে পরক্ষণেই মেসেজ না দিয়ে ফোন পকেটে রেখে আগের ন্যায় বসে থাকে।

_______________

প্রিয়তা সকাল থেকে বই সামনে নিয়ে বসে আছে কিন্তু তার মনোযোগ নেই একদমই। বারবার গতকালকের কথা মনে পড়ছে। ফোনের মেসেজ অপশন কয়েকবার দেখেছে কিন্তু এখনো কাংখিত নাম্বার থেকে কোনো মেসেজ আসেনি। প্রিয়তা ফোন দূরে রেখে পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার আবারো চেষ্টা করে কিন্তু একই অবস্থা। শেষে বিরক্ত হয়ে বই বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। সিদ্ধান্ত নেয় ছাদ থেকে ঘুরে আসবে। মিসেস মাসুমাকে বলে ছাদের দিকে পা বাড়ায়।

ছাদে এসে দেখে কিছু মানুষ ছাদে রয়েছে। বিকাল বেলা ছাদে মানুষ থাকা অস্বাভাবিক কিছু না। আনমনে পাশের ছাদে প্রিয়তা তাকায়। এরপর দৃষ্টি সরিয়ে সামনে তাকায়। রুমা রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে মুখে ওড়না চেপে হাসছে। প্রিয়তা তাকে খেয়াল করে নিচে তাকাতেই দেখে রফিক দাঁড়িয়ে আছে। ইশারাতে দু’জন কথা বলছে। প্রিয়তা কিছুক্ষণ ছাদে হাঁটাহাঁটি করে তবুও তার অস্থিরতা কমে না। বিরক্ত হয়ে আবারো বাসায় চলে যায়।

….

জাইন বাসায় এসে ঘুমিয়েছে দু’দিন পর। গতরাতে এই যে ঘুমিয়েছে এরপর আর তার খবর নেই। ফোন বন্ধ করে দিয়েছে এক মহা ঘুম। মিসেস পারুল ছেলেকে বিরক্ত না করলেও রমিজউদ্দিন বারবার খবর নিচ্ছেন।

‘এই যে ছেলের খোঁজ নিও। এতো ঘুমায় এটা তো ভালো লক্ষ্মণ না। নে শা টে শা করে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে কিনা দেখো গিয়ে।’

মিসেস পারুল রাগ হয় রমিজউদ্দিনের কথায়।

‘আপনি আপনার মতো সবাইকে মনে করেন নাকি? আমার ছেলে ঐসব খাওয়া তো দূর ছোঁয় ও না।’

রমিজউদ্দিন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন,’আমার মতো মানে? তোমার ছেলে আমার মতোন হলে আজকে কোটি টাকার মালিক থাকতো। আর ও যদি ঐসব না খায় তাহলে প্যাকেট কোথা থেকে পেলাম?’

‘শুনেন আজকালকার পোলাপান একটু সিগারেট খাবেই এটা নিয়ে বলার কিছু নাই।’

‘আমি বরং বের হই। তুমি থাকো তোমার ছেলেকে নিয়ে।’

‘মেয়ে দেখতে কবে যাবেন?’

‘তারিখ ঠিক করো চলে যাবো।’

‘মেয়ে পছন্দ না হলেও ফাইনাল কিন্তু। আমার পছন্দই শেষ পছন্দ।’

‘ঠিক আছে তবে তোমার কপি না হলেই হলো। এক ঘরে দুটো ছিঁচকান্দুনি হলে সমস্যা। কোনটা রেখে কোনটা সামলাবো?’

মিসেস পারুল চেঁচিয়ে বলে,’কী বললেন?’

রমিজউদ্দিন চো রে র মতো বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। এখন আর কিছু বললেই মিসেস পারুল টুপ করে কেঁদে দিবেন।

হুট করে জাইনের তন্দ্রা ভেঙে যায়। মাথা উঁচিয়ে দেখে ঘড়িতে সময় সন্ধ্যা সাতটা। ঘুম ঘুম চোখে উঠে ফোন অন করে। ফোন অন করতেই দেখতে পায় কয়েকটা নাম্বার থেকে অনেক কল এসেছে। এর মধ্যে শাকিল এবং মারুফের কলও ছিলো। শাকিলের নাম্বারে কল দিতেই দেখে নাম্বার বন্ধ। এরপর মারুফের নাম্বারে কল দেয়। প্রথমবার কল রিসিভ করে না সে। এরপর আবারো কল দেয়। এবার কল রিসিভ করে সে।

মারুফ বলে,’কই তুই? হাসপাতালে আয় জলদি।’

‘কী হইছে?’

‘শাকিলের মাথা ফা ট ছে। ওরে ইমারজেন্সীতে নিছে।’

জাইনের তন্দ্রা উড়ে যায় মারুফের কথা শুনে।
‘মানে?’

‘তুই আয় বলতেছি সব।’

জাইন দ্রুত বিছানা থেকে নেমে কোনো মতে গোসল করে পোশাক বদলে ছুটে হাসপাতালে।

………….
(চলবে..)