#আঁধারে_প্রণয়কাব্য
#পর্ব____১৫
#নিশাত_জাহান_নিশি
“হ্যাঁ মায়া আপু! আপনি তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছেননা। তাই এখন সিনিয়র আপুই আমার শেষ ভরসা!”
সানাম কপাল কুঁচকালো। নিতান্তই অবাক হলো সে। যাচ্ছে তাই মনে হলো ফায়েযকে। রাশভারি গলায় বলল,
“শেষ ভরসা মানে কি? তাছাড়া সিনিয়র আপুই কেন? পৃথিবীতে কি মেয়ের অভার পড়েছে? তবে সিনিয়র আপুর প্রতি যদি আপনার আলাদা রকম ইন্টারেস্ট থাকে সেটা অন্য ব্যাপার।”
“একদম মজা নিবেন না। সিনিয়র আপুই কপালে জুটে কিনা সন্দেহ আর আপনি আছেন পৃথিবীর অন্যসব মেয়েদের নিয়ে।”
“আরে মিস্টার ফায়েয আপনি বুঝতে পারছেননা। ইউ ডিজার্ভ বেটার। আপনি চাইলেই বেস্ট কাউকে বিয়ে করতে পারেন।”
“বেস্ট বলতে তো আপনি! ডিজার্ভ করলাম কোথায়?”
“উঁহু। আমি বেস্ট নই বলেই তো, আপনার জন্য বেস্ট কাউকে চাইছি।”
“আপনার চাওয়া না চাওয়ায় কি আসে যায়? যদি আপনি আমার ভালোই চাইতেন তবে আমৃত্যু আমার হয়েই থেকে যেতেন। এভাবে অপশন ছুঁড়ে দিতেন না। আকাশ ভরা দুঃখ দিয়া আমারে সুখের লোভ দেখাইয়েন না।”
সানাম নিশ্চুপ। ফায়েয ক্ষীণ গলায় বলল,
“ডোন্ট ওরি। মায়া আপু আপনার চেয়েও বেস্ট!”
মুখ ঘুরিয়ে নিলো ফায়েয। ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলো। অযথা সানামের সঙ্গে বকবক করে মন মেজাজ খারাপ করতে চাইলনা সে। ইতোমধ্যেই সানাম লক্ষ্য করল ফায়েয বাড়ির রাস্তা থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়েছে। বিপাকে পড়ে সানাম শুধাল,
“গাড়ি ঘুরালেন কেন?”
“চুপচাপ বসে থাকুন। কিডন্যাপ করছিনা আপনাকে।”
“বুঝলাম। বাট যাচ্ছেনটা কোথায়?”
“হোটেলে যাচ্ছি! রাত কাটাতে।”
“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?”
“পাগল ছাড়া দুনিয়া চলেনা।”
“আমি কিন্তু চিৎকার করব।”
“যত পারুন করুন। মানা করল কে?”
“আপনি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছেন মিস্টার ফায়েয।”
“এটা নতুন নয়। আমাকে রাগানোর পর এরচেয়ে ভালো ব্যাবহার আমার কাছ থেকে এক্সপেক্ট করবেন না।”
জানালার কাঁচ খোলার চেষ্টা করল সানাম। তবে হায় ব্যার্থ হলো সে। কেননা, সানামের পাশের জানালার সুইচটি কোনোভাবে জ্যাম হয়ে যাওয়ায় জানালাটি খোলা যাচ্ছিলনা। এজন্যই ফায়েয নির্দ্বিধায় বলছিল সানামকে চিৎকার করতে! ভীত সানাম পাশ ফিরে রূঢ় ফায়েযের দিকে তাকালো। বিদঘুটে হাসল ফায়েয। একহাতে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে অন্যহাতে সে চুল ঠিক করল। লুকিং গ্লাসের মাধ্যমে সানামকে দেখে বেহায়া গলায় বলল,
“কি করবেন এখন? আজ রাত তো শুধু আপনার আর আমার। শুধুই দুজনার। উফ, ভাবতেই মুড অন হয়ে গেল।”
গুমোট সানাম। মাথা নুইয়ে নিলো। যদিও তার মন বলছিল ফায়েয তার সাথে মজা করছে কিন্তু ফায়েযের আচরণ এই মুহূর্তে তার কাছে অস্বস্তিকর লাগছে। যদিও ফায়েযের এই আচরণের সঙ্গে সে নতুন পরিচিত নয়। মিনিট কয়েকের মধ্যে গাড়ি এসে একটি একতলা বাড়ির সামনে থামল। ফায়েয গাড়ি থেকে নামল। উল্টো পাশে ঘুরে গিয়ে সানামের গাড়ির দরজা খুলে দিলো। জড়তা ভেঙে সানাম গাড়ি থেকে নামল। ফায়েযের দিকে চোখ তুলে তাকালো। নির্জীব গলায় বলল,
“এটাতো একটা বাড়ি।”
“হ্যাঁ তো? আপনি কি ভেবেছেন এটা হোটেল?”
শার্টের কলার ঝাকিয়ে ফায়েয রুক্ষ গলায় বলল,
“আমার রুচি এতটাও নিচে নেমে যায়নি যে আপনাকে নিয়ে আমাকে হোটেলে আসতে হবে! একটু আগে আপনি ঠিকই বলেছিলেন আমি বেস্ট কাউকে ডিজার্ভ করি। আর বেস্ট কেউই আমার সজ্জাসঙ্গিনী হবে! ফায়েয ফারনাজ চৌধুরীকে পাওয়া এত ইজি নাকি?”
“এই শুনুন? কিসের এত ভাব আপনার? এত চ্যাটাং চ্যাটাং কথা কিসের?”
“ভাবের তো কিছুই দেখেননি আপনি। যখন দেখাতে শুরু করব তখন আমার সামনে দাড়াতেও আপনার হাত পাঁ থুত্থুর করে কাঁপবে।”
“ওহ্ আচ্ছা। আমাকে ডুবাতে আপনার এতো আয়োজন?”
“ডুবলেই বা ক্ষতি কি? আমিতো সুইমিং জানি! সাঁতরে পাড়ে নিয়ে আসব।”
সানামকে উপেক্ষা করে ফায়েয গেট খুলে বাড়িটির ভেতর প্রবেশ করল। সানাম রাগে ফোঁস ফোঁস করছিল। ঘাড়ত্যাড়ামো করল সে। শক্ত হয়ে জায়গায় দাড়িয়ে রইল। ফায়েয পেছন ফিরল। চোখ রাঙিয়ে সানামের দিকে তাকালো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আসুন।”
সানাম তবুও একরোখা ভাব নিয়ে জায়গায় ঠায় দাড়িয়ে রইল। ফায়েয তেড়ে এসে সানামের বাঁ হাতটি শরীরের সমস্ত শক্তি দ্বারা শক্ত করে চেপে ধরল! মুহূর্তেই সানামের সাদা হাতটিতে লালচে দাগ পড়ে গেল। ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে সানাম বলল,
“উফ ছাড়ুওওওন।”
“ছাড়ব পরে। ত্যাড়ামির শাস্তি নিন আগে।”
“ব্যাথা লাগছে কিন্তু।”
“ব্যাথা পাওয়ার জন্যই ধরেছি। আদর করতে ধরিনি।”
তুখোর রাগে রাগান্বিত হয়ে ফায়েয সানামকে টেনে নিয়ে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল। সানামের হাতে বোধ হয় এতক্ষণে টেপ পড়ে গেল! সানাম অনেক চেষ্টা করেও তার হাত ছাড়াতে পারলনা। বাড়ির কলিংবেল বাজাতেই একটি আঠারো কি উনিশ বছরের যুবতী মেয়ে এসে সদর দরজাটি খুলে দিলো। সানামের হাতটি ছেড়ে দাড়ালো ফায়েয। মেয়েটি জিজ্ঞাসু হয়ে ফায়েযের দিকে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কে আপনি?”
“ফায়েয। মায়া আপুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।”
“ফায়েয বলতে কোন ফায়েয?”
“তুমি আমাকে চিনবেনা। তুমি জাস্ট মায়া আপুকে বলো যে সাদিদ ভাইয়ার রিলেটিভ এসেছে তার সাথে দেখা করতে।”
“সাদিদ ভাইয়া?”
সাদিদের নাম উচ্চারণ করেই মেয়েটি চোখের জল ছেড়ে দিলো। মাথা নুইয়ে ভারী গলায় ফায়েযকে বলল,
“ভেতরে এসে বসুন ভাইয়া।”
সানামের হাতটি পুনরায় চেপে ধরে ফায়েয বাড়ির ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করল। ফায়েয ও সানামকে সোফায় বসতে দিয়ে মেয়েটি দ্রুত পায়ে হেঁটে মায়ার রুমে গেল। গত পরশু থেকেই মায়া নিজেকে একঘরে বন্দি করে রেখেছে। নাওয়া খাওয়া বিসর্জন তার। দুনিয়ার সঙ্গে যেন কোনো সংযোগই নেই তার। অবশেষে অন্ধকার রুমের বাতি জ্বালালো মোহনা। মায়ার ছোটো বোন সে। বিছানার এক কোণে মায়া অগোছালোভাবে শুয়ে রয়েছে। গলা ঝাঁকালো মোহনা। কান্না জড়িত গলায় বলল,
“আপু শুনছ? সাদিদ ভাইয়ার রিলেটিভ এসেছে তোমার সাথে দেখা করতে।”
মায়া শোয়া থেকে ওঠে বসল। এই দুইদিনে চোখের নিচে কালি পরে গেছে তার। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া শেষ অশ্রু কণাটুকুকে মুছে সে অবাক স্বরে শুধালো,
“কে এসেছে?”
“ফায়েয নামের কেউ।”
হন্ন হয়ে মায়া রুম থেকে বের হলো। সাদা শাড়ির আঁচলটি তার মেঝেতে অবলীলায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে সে ফায়েযকে দেখামাত্রই শুকনো হাসল। ফায়েয বসা থেকে ওঠে দাড়ালো। মায়ার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখে ফায়েয বড্ড আঘাত পেল। আমতা আমতা করে শুধাল,
“কেমন আছেন আপু?”
“তোমার ভাই যেমন রেখে গেছে তেমনই আছি!”
সোফায় বসল মায়া। ফায়েযকেও বসতে বলল। মায়ার চোখেমুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা। খুবই বিভৎস অবস্থা তার। ফায়েয ভারাক্রান্ত হলো। ক্লেশ ভরা গলায় বলল,
“ইট’স নট ফেয়ার আপু। নিজেকে এভাবে কষ্ট দিয়ে তো আপনি নিজেই নিজের সাথে অন্যায় করছেন।”
“সাদিদ কি এটা ঠিক করল ফায়েয? আমার তো এখনও বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে সাদিদ এমন একটা স্টেপ নিতে পারে। গত পরশু ও তার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। কি সুন্দর কথা বলছিল। যদিও তাকে দেখে আমি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছিলাম সে ভালো নেই। জিজ্ঞেস করব করব করে আর করা হয়নি। শয়তানই হয়ত ভুলিয়ে রেখেছিল। আর আমার ভুলটা ঠিক এখানেই ছিল। আমিই তাকে বুঝতে পারিনি৷ ব্যার্থতা আমার।”
ফায়েয মাথা নুইয়ে নিলো। চোখের কার্ণিশে জল ছুঁইছুঁই তার। নিচু গলায় সে বলল,
“নাথিং টু সে আপু। কজ দোষটা আমার আপুরই ছিল। আমার আপুর জন্যই আজ দুই দুইটা জীবন এভাবে নষ্ট হয়ে গেল।”
“আমার জীবনটাও তো নষ্ট হয়ে গেল ফায়েয। আমার জীবনের কি কোনো মূল্য নেই?”
ফায়েয নিশ্চল দৃষ্টিতে মায়ার দিকে তাকালো। নিথর গলায় বলল,
“সাদিদ ভাইয়ার একটি শেষ ইচ্ছে ছিল আপু। শুনবেন না সেই ইচ্ছেটা কি?”
“হুম বলো?”
“ইচ্ছেটা কিন্তু আপনাকেই পূরণ করতে হবে আপু।”
মায়া তৎপর হয়ে ওঠল। গড়িয়ে পড়া চোখের জল মুছে সে আগ্রহী গলায় শুধালো,
“কি ইচ্ছে বলো? আমি আমার জীবন দিয়ে হলেও রক্ষা করব।”
“প্রমিস?”
“হ্যা প্রমিস!”
ফায়েয ক্ষীণ হাসল। মায়ার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“আপনার বিয়ে! সাদিদ ভাইয়ার শেষ ইচ্ছে ছিল আপনার বিয়ে!”
মায়া হকচকিয়ে ওঠল। সঙ্গে সঙ্গেই বসা থেকে ওঠে দাড়িয়ে গেল। সাদিদের এই ইচ্ছে তার মোটেও পছন্দ হলোনা। মুখশ্রী কালো করে অকপটে বলল,
“এটা তুমি ঠিক করোনি ফায়েয! সাদিদ ব্যাতীত কোনো পুরুষ আমার জীবনে আসবেনা।”
অবলীলায় কাঁদতে কাঁদতে মায়া প্রস্থান নিলো। ফায়েয রুদ্ধশ্বাস ফেলল। পাশ ফিরে চুপচাপ ও শান্ত হয়ে বসে থাকা সানামের দিকে তাকালো। শক্ত গলায় বলল,
“পুরোটাই আপনার কার্বন কপি!”
“হুম। এক পুরুষে আসক্ত নারী।”
দুঃখের সময় ফায়েয রসিক গলায় বলল,
“এমন হলে পটাব কি করে? আমার ভাগ্য মা*য়রি!”
সানাম মুখ টিপে হেসে বলল,
“খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়!”
“মজা পরে নিন। আগে আইডিয়া দিন।”
“আই হ্যাভ নো আইডিয়া। কারণ, এক পুরুষে আসক্ত নারীরা খুব ভয়ঙ্কর হয়।”
“উঁহু। এক নারীতে আসক্ত পুরুষ এরচেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর হয়। যেদিন সেটা বুঝবেন সেদিন আপনি হয়ত এই পৃথিবীতেই থাকবেননা!”
সানামকে একপ্রকার হুমকি দিয়ে ফায়েয প্রস্থান নিলো। সানাম শুকনো ঢোঁক গিলল। মোহনা ততক্ষণে শরবত ও হালকা নাশতা নিয়ে এলো তাদের জন্য। সানাম সামনে পড়ে গেল মোহনার। এদিক ওদিক তাকিয়ে মোহনা শুধাল,
“ফায়েয ভাইয়া কোথায়?”
“চলে গেছে। তুমি অযথা কষ্ট করে এতকিছু নিয়ে এলে। আরেকদিন এসে খাব কেমন? আজ বরং যাই।”
মোহনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সানাম তড়িঘড়ি করে প্রস্থান নিলো। ছুটে গিয়ে বাড়ির বাইরে রাখা গাড়িতে ওঠে বসল। সানাম ওঠে যেতেই ফায়েয গাড়ি ছেড়ে দিলো। কঠিন গলায় ফায়েয বলল,
“আগামী এক সপ্তাহ আপনার কোনো কাজ নেই। সো আপনি চাইলেই বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।”
হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচল সানাম! খুশিতে আত্মহারা হয়ে বলল,
“তাহলে আজই বাড়ি চলে যাই?”
“এজ ইউর উইশ।”
“থ্যাংক ইউ।”
ফায়েয অট্ট হাসল। নিজের ওপর সে নিজেই হাসল। প্রেমিক হিসেবে সে এতটাই ব্যার্থ যে, তার একমাত্র শখের নারীই কিনা তাকে কোনো রকমে ছেড়ে যেতে পারলেই বাঁচে! ধীরে ধীরে সানাম তার ব্যাবহারের মাধ্যমে ফায়েযের মনকে পিষে দিচ্ছিল। যা সানাম অনুমানও করতে পারছিলনা।
________________________
সেদিন রাতেই সানাম বাড়ি ফিরে গেল। ফাযেয়ের মনের কথা একটুও ভাবলো না! খুশি খুশি সে বাড়ি ফিরে এলো। যদিও ফায়েয এ নিয়ে সানামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি কিন্তু মনে মনে ক্ষোভ জমিয়ে রাখল।
গোসল সেরে সদ্য তোয়ালে পেঁচানো অবস্থায় সানাম ওয়াড্রব থেকে হন্ন হয়ে তার জামা কাপড় খুঁজছিল। আর গিজগিজিয়ে বলছিল,
“কয়েকবছর বাড়িতে ছিলাম না বলে আমার জিনিসপত্র কোনোকিছুরই ঠিক নেই। জামা কাপড় কিছুই খুঁজে পাচ্ছিনা। মাথাটা গরম হয়ে যাচ্ছে জাস্ট।”
ইতোমধ্যেই সানাম সিফরার জামার ভাঁজে একটি ডায়েরি খুঁজে পেল। কৌতূহলবশত ডায়েরিটি হাতে তুলে নিলো সানাম। ডায়েরিটির উপরের মলাটে গোটা গোটা অক্ষরে সিফরার নাম লিখা। ডায়েরিটি সিফরার পার্সোনাল ডায়েরি ভেবে সানাম ডায়েরিটি পুনরায় পূর্বের জায়গায় রেখে দিতে গেলেই আচমকা ডায়েরিটি থেকে একটি ছবি মেঝেতে পড়ে গেল। সানাম উবুড় হলো। ছবিটি হাতে তুলে নিয়ে উৎসুক দৃষ্টিতে ছবিটির দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেল!
ফায়েয আজ বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরল। আকরাম ফারনাজ চৌধুরী নতুন একটি সফটওয়্যার কোম্পানির কাজ ধরেছিলেন গত একসপ্তাহ আগেই। এতোদিন তিনি কাজটি নিজে থেকে তত্ত্ববধান করলেও এখন মানসিক অবস্থা তেমন ভালো নেই তার। রাইয়ের মৃত্যুর শোকে তিনি কাতর হয়ে গেছেন প্রায়। আর সেই কারণেই তিনি এই কাজের দায়িত্ব ফায়েযের উপর দিয়েছেন। এখন থেকে ফায়েযের তত্ত্ববধানেই কোম্পানির কাজ চলবে। ফায়েয শক্ত মনের বলেই হয়ত এই করুণ পরিস্থিতিতেও তার পক্ষে সব দিক ঠিক রাখা সম্ভব হচ্ছে।
রাতের খাবার খেয়ে ফায়েয তার রুমে প্রবেশ করল। গাঁ থেকে টি-শার্টটি খুলে খাটের এক কোণায় ফেলল। উৎ হয়ে সে বিছানায় শুয়ে পড়তেই তার ফোন বেজে ওঠল। স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে দেখল সানামের নাম্বার থেকে কল। কলটি দেখেও ফায়েয যথাসম্ভব এড়িয়ে গেল! চাপা অভিমান আঁকড়ে ধরল তাকে। ফোনটিকে এয়ারপ্ল্যান মোডে রেখে সে কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ল!
পরদিন সকাল হলো। ঘুম ভাঙল ফায়েযের। গতকাল রাতের কথা মনে পড়ল তার। তড়িঘড়ি করে সে ঘুম জড়ানো চোখেই ফোনটি সক্রিয় করল। আউলা ঝাউলা হয়ে সে সানামের নাম্বারে ডায়াল করল। কলটি অনবরত বেজে গেল। তবে সানাম কলটি তুললনা! উত্তেজিত হয়ে ওঠল ফায়েয। ভীষণ ভয়ও চেপে বসল। রাগের বশে সানাম তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো না তো?
চট করে ফায়েয শোয়া থেকে ওঠল। কোনো রকমে রেডি হয়েই সে খালি মুখে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। গাড়ি বের করে সে সানামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই ফায়েয সানামের বাড়ি এসে পৌঁছাল। সদর দরজার কলিংবেল বাজাতেই আফিয়া শিকদার দরজাটি খুলে দিলেন। বেশ আতঙ্কগ্রস্ত দেখাচ্ছে ওনাকে। গলায় লেগে থাকা ঘাম মুছে তিনি ফায়েযকে বললেন,
“তুমি এসেছ?”
ফায়েয কপাল কুঁচকালো। উদ্বিগ্ন গলায় শুধাল,
“কেন আন্টি? কি হয়েছে?”
“কাল রাত থেকেই সানাম দরজা বন্ধ করে বসে আছে বাবা। কিছুতেই দরজাটা খুলছেনা!”
#চলবে_____?