#আনমনে_সন্ধ্যায়
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ১৯
রিমি রিকশা থেকে নেমে বাড়িটার দিকে তাকালো। মোটামুটি হাইফাই ধরনের দশ তলা বাড়ি। সামনে বিশাল উঁচু গেইট। ব্যাংক থেকে খুব একটা দূরে না। আসা যাওয়ার জন্য একদম পার্ফেক্ট।
সে খাবারের প্যাকেট গুলো হাতে নিয়ে ভাড়া দিলো।
দিয়ে এগিয়ে গেলো! গেইট ভেতর থেকে বন্ধ। সে দারোয়ান বসার জায়গায় টোকা দিলো, দিয়ে পেছনে একবার তাকালো । সন্দেহজনক অবশ্য কিছু নেই। ব্যস্ত গলি! রিকশা আসছে যাচ্ছে।
সাথে সাথেই তার কানে লাগানো ব্লু-টুথে শব্দ হলো। টুপি ঠিক করতে করতে রিমি কানে হাত রাখলো। রাখতেই শব্দ ভেসে এলো , ” ভয় নেই! আমরা আছি। কোন রকম সমস্যা মনে হলেই শুধু একটু সংকেত দেবে ওকে। ”
রিমি কিছু বললো না! সে স্বাভাবিক! আজকেও খুব শীত পড়েছে। শীতে হালকা কাঁপতে কাঁপতে টুপি টেনে ঠিক করলো। করে সে সামনে ফিরলো। তখনি দারোয়ান ছোট একটা জানালা খুলে উঁকি দিলো । দিয়ে বললো,
— জ্বি?
— আমি রিমি। ওলীদ আশফাকের কাছে এসেছি।
সাথে সাথেই দারোয়ান গেইট খুললো। খুলে একগাল হেসে বললো, — আসসালামু আলাইকুম ম্যাডাম?
রিমি অবাক হলো। অবাক হয়ে সালামের উত্তর নিলো।
দারোয়ান এগিয়ে এলো। হাতের ব্যাগ নিতে নিতে বললো, — আসেন ম্যাডাম। ওলীদ ভাই আপনার কথা বলেছেন।
রিমি কিছু বললো না। হালকা হাসলো। হেসে দারোয়ানের সাথে লিফটের দিকে এগুলো। ওলীদ থাকে সেভেন ফ্লোরে। মেসেজে ঠিকানার সাথে ডিটেলস লেখা ছিলো।
লিফ্ট থামতেই তারা নামলো। দারোয়ান এগিয়ে গিয়ে নিজেই কলিং বেল চাপলো।
সাথে সাথেই ওলীদ দরজা খুললো। তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। অসুস্থতা কোন রেশ তার মধ্যে দেখা গেলো না। সে হেসে হাত বাড়িয়ে ব্যাগ নিতে নিতে বললো, — ধন্যবাদ কালাম ভাই।
দারোয়ানও হাসলো। হেসে বিদেয় নিলো। নিতেই ওলীদ রিমির দিকে তাকালো। আজকে অবশ্য সেই আগের রিমিই লাগছে। পুরো প্যাকিং। শুধু মিষ্টি মুখটা বেড়িয়ে আছে। তবুও ওলীদের এতো ভালো লাগলো। সে হেসেই বললো, — ওয়েলকাম টু মাই হাউস প্রিন্সেস।
রিমি হাসলো! হেসে ভেতরে আসলো। সুন্দর, গোছানো রুচিসম্পন্ন দু- রুমের ফ্ল্যাট। ড্রয়িংটা বড় সাথেই ডাইনিং। সেখানে চার চেয়ারের ছোট্ট একটা টেবিল। সে এক নজরে যতোটুকু দেখা যায় ততোটুকু দেখে বললো, — উঁহু কুইন।
ওলীদ দরজা লাগালো। লাগিয়ে টেবিলের দিকে যেতে যেতে বললো, — কেন?
— আমার তো কোন বাবা, দাদার রাজত্ব নেই। তাহলে প্রিন্সেস কিভাবে হবো? আমি আমার রাজ্য নিজে তৈরি করবো। আর সেখানের একমাত্র রাণী আমি হবো।
ওলীদ হাসলো! হেসে রিমির দিকে তাকালো। সে ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাট দেখছে। কোন সংকোচ, জড়তা নেই।
— আপনার কলিগ কোথায়?
— তড়িঘড়ি করে তাড়ালাম।
রিমি অবাক হয়ে বললো!
— কেন?
— তুমি আসবে তাই।
— সে থাকলে বুঝি আপনার খুব সমস্যা হতো?
— উঁহু! আমার কি সমস্যা হবে? তবে এখন যেই সংকোচ ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছো, সেটা করতে না।
রিমি হাসলো! হেসে এগিয়ে এলো। আসুন নাস্তা করা যাক। ঔষুধ খেয়েছেন?
— না।
রিমি চেয়ার টেনে বসলো।
— তাহলে বসে পরুন। অবশ্য আমি ভেবেছিলাম হামাগুড়ি দিয়ে কুঁকাতে কুঁকাতে দরজা খুলবেন।
ওলীদ হেসে ফেললো! প্রাণ খোলা হাসি। হেসে বললো, — তোমার আসার কথা শুনেই ম্যাজিকাল এর্নাজি পেয়ে গেলাম।
— ভালোতো!
বলেই রিমি আর কথা বাড়ালো না। খাবারের প্যাকেট খুললো। ওলীদ প্লেট গ্লাস এগিয়ে দিলো। টুকটাক কথা বলতে বলতে তারা নাস্তা শেষ করলো। নাস্তার পরে রিমি ওলীদের রুমে আসলো। খাট বাদে সব পরিপাটি। ওলীদ হয়তো শুয়ে ছিলো। সে ঘুরে ঘুরে সব দেখলো। সাথে ছোট্ট একটা বারান্দা।
ওলীদ ঔষুধ খেয়ে খাটে বসলো। রিমি দেয়ালে টানানো ছবির দিকে তাকিয়ে বললো, — ঘুরতে পছন্দ করেন আপনি?
— হ্যাঁ ! খুব ভালো লাগে।
— অনেক জায়গায় গিয়েছেন।
— হুম! ব্যাচেলার মানুষ। ছুটি পেলেই চলে যাই।
— এটা কোন জায়গা?
— কাশ্মীর।
— কি সুন্দর তাই না।
— হুম, এক টুকরো স্বর্গ। বলেই ওলীদ তার মোবাইল বের করলো। গ্যাল্যারি খুলে রিমির দিকে বাড়িয়ে দিলো। আরো ছবি আছে দেখো।
রিমি এগিয়ে এলো। মোবাইল নিয়ে ওলীদের পাশেই বসলো। ওলীদ চমকালো। তবে রিমির মধ্যে কোন হেলদোল হলো না। সে ছবি দেখায় ব্যস্ত।
ওলীদ একধ্যানে তাকিয়ে রইলো। প্রথমে সে মুগ্ধ ভাবেই তাকিয়ে ছিলো। তবে ছবি দেখতে দেখতে রিমির চেহেরার পরিবর্তন হয়েছে। এটা সে খেয়াল করলো। আর এটাও খেয়াল করলো একটা ছবিতে একধ্যানে সে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথেই ওলীদের ভ্রু কুঁচকে গেলো। অবশ্য কিছু ভেবে উঠার সময় পেলো না। তার আগেই রিমি ফট করে উঠে দাঁড়ালো । কানে হাত রেখে বললো, — পেয়ে গেছি স্যার, আপনারা এখন ভেতরে আসতে পারেন।
ওলীদ যেভাবে বসে ছিলো সে ভাবেই বসে রইলো। এখন আর তার ভ্রু কুঁচকে নেই। নির্বিকার, স্বাভাবিক, শান্ত চোখ, মুখ। কোন ভুল না করা ওলীদ বড় রকমের একটা ভুল করেছে। সে বুঝতে পারলো। পারলো বলেই এই নির্লিপ্ততা। এই সাধারণ চেহেরার সাধারণ দেখতে মেয়েটাকে এতো হালকা ভাবে নেওয়া তার উচিত হয়নি। মেয়েরা যে ছলনাময়ী! সে আবার প্রমাণ পেলো। সে নির্বিকার ভাবেই বললো,— ধোকাটা এভাবে না দিলেও পারতে।
রিমি তাকালো! বড় একটা শ্বাস ফেলে বললো, — ইটস মাই জব ওলীদ। ওপর থেকে যা বলবে তা আমি করতে বাধ্য। তাছাড়া এগিয়ে আপনিই এসেছেন। আমি আপনাকে খুঁজে বের করিনি।
— কেন এগিয়ে গিয়েছিলাম, জানতে চাইবে না?
— না! সেটা আমার কাছে ইম্পোর্ট্যান্ট না।
ওলীদ হাসলো! হেসে বললো,— বসো রিমি। এতো লম্বা তুমি। এভাবে কথা বলতে ভাল লাগছে না। তাছাড়া তোমার টিম আসতে কিছুটা সময় লাগবে। দারোয়ান সহজে ঢুকতে দেবে না। তারা সত্যিই পুলিশের লোক কি না তা শিওর হবে। কেন এসেছে, কোন ফ্ল্যাটে এসেছে। বাড়ির মালিককে ইনফ্রম করবে তার পর। এটা কিন্তু মোটামুটি হাই লেবেলের একজনের বাড়ি।
রিমি বসলো না। ওলীদ নিজেই দাঁড়ালো। তাকে দাঁড়াতে দেখে রিমি পেছনে হাত দিলো। সে আজ থ্রিপিসের সাথে জিন্স পরেছে। তাছাড়াও এখানে আসার আগে শামীম স্যার তাকে সেফটির জন্য পিস্তলও দিয়েছে।
ওলীদ আবারো হাসলো! সোজা রিমির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো! শান্ত ভাবে বললো, — কিছু বের করো না রিমি। তোমাকে এভাবে দেখতে আমার ভালো লাগছে না। তুমি কি জানো? ভুল প্রফেশনে এসে পড়েছো তুমি। তোমার হাতে রিমঝিম রেশমি চুড়ি মানায়, অন্য কিছু না।
রিমি কোন উত্তর দিলো না। ওলীদ কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে রইলো। রিমির চোখে মুখে কাঠিন্য। অবশ্য নতুন কিছু না। এই মেয়ে প্রায় সব সময়ই এমন। সে ঘুরে ওয়্যারড্রবের কাছে গেলো। ওয়্যারড্রব খুলতে যাবে তখনি রিমি পিস্তল তাক করে বললো, — চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকুন ওলীদ। তা না হলে আমি সুট করতে বাধ্য হবো।
ওলীদ শুনলো না। সে ভাবলেশহীন ভাবেই ওয়্যারড্রোব খুললো। আরেকটা মোবাইল বের করতে করতে বললো, — তুমি নিশ্চিন্তে থাকতে পারো। তোমার ক্ষতি হবে এমন কিছু বের করবো না। যদি এমন কিছু করার ইচ্ছা থাকতো, তুমি এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে না।
— মোবাইল রাখুন ওলীদ।
ওলীদ তাকালো। রিমির চোখে চোখ রেখেই মোবাইলে কিছু একটা টাইপ করলো। করে সামনের টিটেবিলে রেখে দিলো। দিয়ে আবার খাটে গিয়ে বসলো। হেডবোর্ডে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করলো।
তখনি রিমির ব্লু-টুথে শব্দ হলো। রিমি কানে হাত রেখে বললো, — বলুন স্যার।
— ঠিক আছো?
— ইয়েস স্যার।
— দরজা খুলতে পারবে?
রিমি একবার ওলীদের দিকে তাকালো। তাকিয়ে বললো, — ইয়েস স্যার।
— ওকে ডু ইট।
রিমি ওলীদের দিকে নজর রেখেই দরজা খুলতে এগুলো।
তখনি ওলীদ তাকালো। মাথা হেলিয়েই বললো, — রিমি?
রিমি দাঁড়ালো।
— আমি তোমাকে ভালোবাসি।
রিমি থমকালো! সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিলো। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ তাকিয়ে কানে হাত রেখে বললো, — একটু ওয়েট করুন স্যার। বলেই আবার এগিয়ে আসলো। ওলীদের ঠিক সামনে সোফায় বসলো। পিস্তলটা নামিয়ে বললো, — ভালো তো চৈতিকেও বেসেছিলেন, তাহলে খুন করতে পারলেন কিভাবে?
ওলীদ রিমির দিকেই তাকিয়ে ছিলো। সেভাবেই চোখ রেখেই বললো,— আমিতো তাকে খুন করিনি। সে আমাকে ধোকা দিয়েছিলো। তার শাস্তি দিয়েছি।
— আমিও তো দিলাম এখন?
— তোমার আর তার মধ্যে পার্থক্য আছে। আর রইলো শাস্তি, সেটা তুমি অবশ্যই পাবে।
— আমার শাস্তির কথা থাক ওলীদ! নিজের কথা ভাবুন।
ওলীদ হাসলো!
— তুমি যখন বলেছো অবশ্যই ভাববো।
— আমি না বললে বুঝি ভাবতেন না?
ওলীদ আবারো হাসলো! তবে কিছু বললো না। বললো রিমিই,
— পার্থক্য টা কি জানতে পারি ? যে এমন নির্মম ভাবে তাকে টর্চার করে মেরেছেন?
— আজ থাক রিমি! আরেক দিন সময় নিয়ে বলবো। আজকে তোমার ধোকাটা হজম করি।
— সে সময় কি মনে হয় আর আপনি পাবেন?
— কতোটুকু জেনেছো আমার ব্যাপারে? খোঁজ খবরটা আরেকটু ভালো ভাবে নিলেও পারতে। অবশ্য পুলিশের কাছে এর চেয়ে বেশি আশা করা বোকামি।
— কন্ট্রাক্ট কিলার আপনি। টাকার বিনিময়ে নিরীহ মানুষদের খুন করেন। বাথরুমের লোকটাও সেই রকম ছিলো।
— তো! এখানে আমার দোষ কি? আমি না করলে অন্য কেউ করবে। এখানে মেইন কালপ্রিট কে?
— তাদেরও ধরা হবে, আপনি আছেন না।
ওলীদ ঠোঁট টিপে হাসলো। যেনো এরকম মজার কথা আর শুনেনি।
— আমার ফেসতো সেইদিন দেখোনি চিলনে কিভাবে?
— আমার ফটোগ্রাফিক মেমোরি ভালো। বলতে গেলে অনেক ভালো। আপনাদের মতো ক্রিমিনালের চিন্তা শক্তির বাইরে। তাই কফি সপে আপনার কন্ঠ শুনে চিনতে এক সেকেন্ডও লাগেনি আমার । ঐ যে বলে না, চোরের দশদিন গৃহস্থের একদিন। তাই হয়তো সেঁধে নিজেই এসেছিলেন। শুধু একটু প্রমাণের প্রয়োজন ছিলো।
— হুম! সাধারণের মাঝে অসারণ গুণ। তাইতো ভাবতাম রিমি তোমার বিশেষত্ব টা কি? তো কি প্রমাণ পেলে অসাধারণ মেয়ে।
— রিমি ওলীদের মোবাইল তুলে ধরলো। সেখানে ওলীদ একটা জ্যাকেট গায়ে বরফের মাঝে দাঁড়িয়ে। সেই দিন তারা সি সি ক্যামেরায় সাদা শার্ট গায়ে দেওয়া লোক খুঁজেছে। কিন্তু ওলীদ মার্ডারের সময় গায়ে সাদা শার্ট থাকলেও পরে জ্যাকেট গায়ে বের হয়েছে।
— এটা কোন শক্ত প্রমাণ না রিমি। এরকম জ্যাকেট হাজারো মানুষের থাকতে পারে।
— তা পারে, তবে কাঁধের ব্যাগ। দু-টো জিনিসতো আর কনসিডেন্ট হবে না। তাছাড়া পুলিশের কাছে ছোট্ট একটা কোণা থাকলেই হলো। সেই কোণা ধরে টেনে বের করা তাদের বা হাতের কাজ। তাছাড়া রিমান্ড শব্দটা নিশ্চয়ই শুনেছেন। কে জানে হয়তো আপনিই সব বের করবেন। বলেই রিমি উঠলো। ওলীদের আরেকটা মোবাইলও হাতে নিলো। এই মোবাইলে আবার কি গুটুরগু করলো কে জানে।
— সি ইউ সুন রিমি।
রিমি হাসলো! হেসে বললো, —- আমার দায়িত্ব এখানেই শেষ। তাই দেখা হওয়ার আর কোন চান্সই নেই মিষ্টার ওলীদ আশফাক।
ওলীদও হাসলো! হেসে মাথা আবার হেডবোর্ডে রেখে চোখ বন্ধ করতে করতে বললো, সম্পর্ক যাই হোক রিমি এতো সহজে আমি ছাড়ি না। আর তুমি তো আমার হ্নদয়ে বসেছো।
রিমি আবার তাকালো! নিশ্চুপ কিছুসময় তাকিয়ে রইলো! তবে আর কিছু বললো না। সে দরজা খুলতে এগিয়ে গেলো।
চলবে…….
#আনমনে_সন্ধ্যায়
#নূপুর_ইসলাম
#পর্ব- ২০
ওলীদ গাড়িতে উঠেছে নিশ্চুপ। কোন রকম কথা বা ঝামেলা সে করেনি। রিমি একটু দূরেই ছিলো। সে আর ওদিকে যায়নি এমনকি তাকায়ওনি । তবে সে বুঝেছে, গাড়ি না যাওয়া পর্যন্ত ওলীদের দৃষ্টি তার উপরই ছিলো।
রিমি আর থানায় গেলো না। কেন জানি তার যেতে ইচ্ছে করলো না। অবশ্য এখন বলতে গেলে তেমন কাজও নেই। সে ওলীদ এর বাসার সামনে থেকেই রিকশায় উঠলো। উঠেও বিপাকে পড়ে গেলো। যাবেটা কোথায়? বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে একদম হলো না। আয়াশের জন্মদিন,এতোক্ষণেতো ধুম ধারাক্কা লেগে যাওয়ার কথা।
সে ঘড়ি দেখলো। বাজে মাত্র দশটা। এই বোরিং সময় সে কোথায় পার করবে? সে রিকশায় বসে বসে ভাবতে লাগলো। ভেবে অবশ্য তেমন লাভ হলো না। যাওয়ার মতো তার কোন জায়গা নেই। রংপুর হলে অবশ্য ভিন্ন কথা ছিলো। কোন বন্ধু-বান্ধবীর বাসায় গিয়ে আরামছে সময় পার করা যেতো।
সে লোকাল মার্কেটের সামনে এসে নেমে গেলো। রিকশায় বসে বসে সে করবেটাই বা কি? সে নেমে কিছুক্ষণ এমনিই দাঁড়িয়ে রইলো। মাঝে মাঝে নিজেকে এতো শূণ্য মনে হয়।
— এখানে কি করছো?
রিমি ভীষণ ভাবে চমকে উঠলো। সাব্বির অবাক হলো। অবাক হয়ে বললো, — রিল্যাক্স কি হয়েছে?
রিমি সাথে সাথেই নিজেকে সামলে নিলো। মাথা নাড়িয়ে বললো, — কিছু না।
— সকালে এতো হন্তদন্ত হয়ে বেরুলে, বললে কাজ আছে। এখন এখানে কি করছো?
— কাজ কমপ্লিট। আপনি এখানে কি করছেন?
— কেকের অর্ডার দিয়েছিলাম। তাদের সাথে কথা বলতে এসেছিলাম।
— ওহ।
— এখন আবার থানায় যাবে?
রিমি দু- পাশে মাথা নাড়লো। সাব্বির কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর শান্তভাবে বললো,
— তুমি ঠিক আছো?
— হুম।
— তাহলে চলো বাসায় যাই।
— আপনি যান। আমি একটু পরে আসছি।
— শিওর।
— হুম।
সাব্বির আবারো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর চলে গেলো। রিমি সাব্বির যাওয়ার পর কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর হাঁটতে লাগলো। সামনে একটা সিএনজি স্ট্যান্ড আছে। তার উদ্দেশ্য এখন ওখানে।
রিমি সিনএনজি থেকে নামলো। সে এসেছে বাস কাউন্টারে। সে ঠিক করেছে রংপুর যাবে । অবশ্য নানু বাসায় না। একজন এতো যত্ন করে চিঠি লিখলো দেখা যাক ব্যাপার স্যাপার কি? সে দুটো টিকিট কাটলো। আচেনা একজনের পাশে বসে সাত আট ঘন্টা পার করার মতো অসহ্যকর ব্যাপার আর কি হতে পারে। তাই এমনিই ভালো।
সে বাসে বসে মিথিলা ম্যাডামকে ফোন করলো। মিথিলা ফোন রিসিভ করেই উচ্ছাসিত কন্ঠে বললো, — এই রিমি কি করেছো এটা?
রিমি হালকা হাসলো।
— শামীম স্যারতো তোমার প্রশংসা করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে। নতুন মেয়ে তাও তোমার পারফরম্যান্স নাকি দেখার মতো ছিলো। এক অতি চালাক কন্ট্রাক্ট কিলারকে ঘোল খাইয়ে দিয়েছো।
রিমি মনে মনে একটা বড় শ্বাস ফেললো! বললো,
— সেখানের অবস্থা কি ম্যাডাম?
— থানা পুরো গরম। তবে আসামি বেটা শান্ত। একেবারে নিশ্চুপ। শামীম স্যার এখনও কোন জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেনি। তবে করবে। ভালোয় ভালোয় সব স্বীকার করলে ভালো। না করলে জমের ঘর দেখবে। শামীর স্যার এসব ব্যাপারে খুব উগ্র।
— দ্বিতীয় মোবাইলটার ব্যাপারে কিছু জানেন?
— নারে! শামীম স্যার কারো কাছে কিছু বলে নাকি?
— ওহ।
— তোমার খবর কি? এখানে আসলে না কেন? স্যার বললো, দেখে নাকি অসুস্থ মনে হলো।” ঠিক আছো?
— তেমন কিছু না ম্যাডাম। ভেবেছিলাম একটু রেস্ট নিয়ে আসবো। কিন্তু একটা জুরুরী কাজ পরে গেলো। আজ আর যদি না আসি সমস্যা হবে ?
— কিসের সমস্যা! আমি এক্ষুণি শামীম স্যারের সাথে কথা বলছি। তুমিতো এখন স্যারের হ্নদয়ের কোণা কাঞ্চিতে আছো। তার প্রমোশনের রাস্তা পুক্ত করেছো। এখন এক সপ্তাহ না আসলেও কিছু বলবে না।
— আমি কালকে সকালে যথা সময়ে হাজির হবো ম্যাডাম।
— আচ্ছা বাবা আমি দেখছি। এতো টেনশনের কিছু নেই।
— থ্যাঙ্কিউ ম্যাডাম, বলেই রিমি ফোন কাটলো। কেটে সাইডে তাকাতেই আবার চমকে উঠলো। সাব্বির পাশের সিটে বসা। তার মুখ আপনা আপনি হা হয়ে গেলো। স্বপ্ন দেখছে নাকি?
সাব্বির চোখ মুখে কুঁচকে বললো, — মুখ বন্ধ করো স্টুপিড।
রিমির ঘোর কাটলো। বুকে থুতু ঝিটালো। সাথে সাথে বললো, — এভাবে দিনে দুপুরে পর পর চমক খাওচ্ছেন কেন?
সে সেই কথায় ধারের কাছে গেলো না। চোখ মুখ কুঁচকে বললো—- ইয়াক! ছিঃ! কি করছো?
— কি করেছি?
— গায়ে থু থু দিচ্ছো কেন?
— তো কি হয়েছে? নিজের ই তো।
— নিজের হলেই দিতে হবে?
রিমি হেসে ফেললো! হেসে বললো, — ছোট বেলায় এরকম কতো করতাম। ছিলাম তো এক গাদা কাজিন টাজিনের মধ্যে। মারামারি, ঝগড়ায় জিততে না পারলেই দিয়ে দৌড়। আবার এর খাবার ওর, ওর খাবার এর নিয়ে টানাটানি লেগেই থাকতো। তবে কেউ যদি আমার খাবার নিতে আসতো। তাহলেই হয়েছে কাজ। দিয়ে দিতাম এক গাদা থু থু। নে এবার, কতো খাবি খা।
— গায়ে?
— আরে না, গায়ে দেবো কেন? আমার খাবারে দিতাম। কেউ আর নেওয়ার চেষ্টা করতো না। আমারটা তো আমি খেতেই পারবো। আপনি তো আর পারবেন না, তাইনা?
সাব্বির ভ্রু উঁচু করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। তারপর অনেক কষ্টে হাসি থামালো। থামিয়ে বললো, — তো? এখন তোমাকে কে নেওয়ার চেষ্টা করছে। যে গায়ে থু থু দিচ্ছো ?
— এটা তো নেওয়ার জন্য দিচ্ছি না। ভয় দূর করার জন্য দিচ্ছি।
— আচ্ছা! থু থুর যে এতো গুণ তা তো জানতাম ই না।
রিমি দু- ঠোঁট ছড়িয়ে হাসলো! কি আশ্চর্য! হঠাৎ করে তার এতো খুব খুশি খুশি লাগছে কেন? খুশির ঠ্যালায় কি হাবিজাবি বলছে সে নিজেও জানে না। কিছুক্ষণ আগেও তো কেমন মেঘ জমে ছিলো। যখনি এই সুন্দরাকে দেখলো সব একনিমিষে’ই গায়েব, ফুরুৎ। কি জাদু জানে কে জানে, দেখলেই সে দিনদুনিয়া ভুলে যায়। সে হেসেই বললো, — আপনি এখানে কেন? পিছু করেছেন?
— হ্যাঁ! উদ্ভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে ছিলে। টেনশন হলো! হাজার হলেও দূর সম্পর্কের আত্মীয়। থাক ভিন গ্রহের প্রাণী। থাকছো তো আমাদের বাসায়ই। তাই ভাবলাম যদি বাস ট্রাকের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়ো। ফাঁসবো তো আমরাই। বলতে পারো নিজেদেরই বাঁচালাম।
রিমি মুখ গোঁজ করলো! করে বললো — আমাকে সেরকম মনে হয় নাকি ?
— কোন রকম?
— বাংলা ছবির নায়িকা টাইপ! কথা নেই, বার্তা নেই। দৌড়ে যাবে বাস, ট্রাকের নিচে চাপা পড়তে।
— কি জানি?
— তো বললেন কেন?
— কি বললাম?
— ঐ যে।
— কি যে?
— আপনি, বলেই রিমি থেমে গেলো। বেটা পরিষ্কারগির তার সাথে ইয়ার্কি করছে। তার বোমা তার উপরই নিক্ষেপ। এতো সোজা! সে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে শক্ত চোখে তাকালো।
সাব্বির হেসে ফেললো! হেসে বললো, — তুমি বাসের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়া টাইপ মেয়েই না। বরং বাস, ট্রাক দিয়ে নিজের হাতে অন্যদের ভর্তা বানানো টাইপ মেয়ে। আর কেউ না জানুক, অনন্ত আমি সেটা জানি।
রিমি মুখ বাঁকালো! সাব্বির আবারো হাসলো! হেসে বললো,
— রংপুর যাচ্ছো বুঝলাম। হঠাৎ এই সুমতি কেন?
— সেটা তো আমি আপনাকে বলবো না।
— কেন?
— এমনিই!
এমনি’ই বলতেই রিমি থমকালো! ওলীদের কথা মনে পড়লো। তার মুখটা একটু কালো হলো। সে সব জানতো। প্রথম দিন কফি হাউজে কথা বলতেই সে বুঝে গিয়েছিলো এই সে’ই লোক। সে শামীম স্যারের সাথে কথা বললো। আইনে প্রমাণ বিশ্বাসী। তাদের কাছে মনে হওয়া ব্যাপারটা হাস্যকর। স্যার অবশ্য শুনে হেসে উড়িয়ে দেয়নি। সে সব শুনে কিভাবে কি করতে হবে বলেছে। যদি হয় ভালো, না হলে সমস্যা নেই। জানবে তো আর কিছু না।
তবে সে শিওর ছিলো ওই লোকটাই ওলীদ। তিল পরিমান ও সন্দেহ ছিলো না। তবুও লোকটার সাথে যখন কথা বলতো,মনে মনে হাজার বার বলতো, ” তার ধারণা ভুল হোক। সত্যিই ভুল হোক। ”
সাব্বির রিমির দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তার চেহেরার পরিবর্তন সে লক্ষ্য করলো। অবশ্য এখন না। যখন রাস্তায় চমকে গেলো তখন থেকে। কিছু একটা মেয়েটাকে খুব ভাবাচ্ছে। সে মায়া ভরা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো, — কি হয়েছে? কোন সমস্যা?
রিমি চোখ তুলে তাকালো। বাস ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সে মনে মনে একটা শ্বাস ফেলে বললো,— বাস ছাড়বে, আপনি এখন নেমে যান।
— আমার সময় হলে আমি নিজেই চলে যাব। এখন বলো কি হয়েছে?
রিমি নিজের মনের কথা কখনও কাউকে বলেছে বলে মনে পরে না । নির্ভয়ে মনের কথা বলার মানুষ অবশ্য তার ছিলোও না। নানু বাসায় এক গাদা লোক! এক গাদা বাচ্চা কাচ্চা। তাদের মধ্যে যে ই আকাম টাকাম করুক। অধিকাংশের দোষ তার ঘাড়েই পড়তো। প্রথম প্রথম বলার চেষ্টা করতো। তবে শুনে কে? বিশ্বাসই বা করবে কে? তার পর সব ছেড়ে দিয়েছে। যা হবার হোক। কি আসে যায়।
যা মন চায় করেছে। বেয়াদব, অসভ্যের তকমা পেয়েছে। তার আর এখন কিছু আসে যায় না। সে নিজেকে নিজে ভালো রাখতে পারে।
সে মুখে কুলুপ আঁটলো। জানালার দিকে তাকালো। কিচ্ছু বলবে না সে। কিচ্ছু না। কাউকে না। তার কারো দরকার নেই।
সাব্বির হালকা হাসলো। বাস ছাড়ছে। সে আয়েশ করে সিটে হেলান দিয়ে বসলো। নেমে যাওয়ার কোন লক্ষন তার মধ্যে দেখা গেলো না।
রিমি আবার ফিরে তাকালো!
— আপনি যাচ্ছেন না কেন?
— কি হয়েছে বলো। তাহলেই চলে যাবো।
— আশ্চর্য! আপনি শুনে করবেন টা কি ?
— সব সময় কিছু শুনে কিছু করতে হবে, এমন কোন কথা নেই রিমি। মাঝে মাঝে নিজেকে হালকা করার জন্যও বলতে হয়।
— সেই বলার জন্যও, বলার মতো মানুষের দরকার হয়।
সাব্বির এবার সোজা রিমির চোখের দিকে তাকালো। রিমিও তাকিয়ে ছিলো। চোখে চোখ রেখেই বললো, — একবার বলে দেখেতো সেই রকম মানুষটা হতে পারি কি না?
রিমি নিশ্চুপ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে বুঝে না। কখনও না। তারপরও সে ধীরে ধীরে সব বললো। কেন বললো সে নিজেও জানে না।
সাব্বির এক ধ্যানে এক মনে সব শুনলো। মাঝে কোন কথা বললো না। রিমি যখন থামলো সে শুধু হালকা হাসলো।
সাব্বিরের হাসি সুন্দর। পুরুষ মানুষের হাসি কি এতো সুন্দর হয়? রিমি জানে না। বরং এতোদিন তার ধারণা ছিলো, পুরুষ আর দৈত্য দানবের হাসি একই কেটাগরির। যখনি হাসবে ভূমিকম্পের মতো দুনিয়া দুলে উঠবে। এখনও অবশ্য উঠছে। তবে দুনিয়া না, বরং রিমি নিজে। সে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললো, — হাসছেন কেন?
— তুমি কি লোকটার প্রেমে পড়েছো রিমি?
রিমির মুগ্ধতা ফুরুৎ করে উড়ে গেলো। যেতেই সে কটমট করে তাকালো! সাব্বির আবার হেসে ফেললো।
রিমি দীর্ঘশ্বাস ফেললো! ফেলে শান্ত ভাবে বললো, — দুনিয়াতে প্রেম ভালোবাসাই সব কিছু না। এর বাইরেও অনেক অনুভূতি আছে। তাই তার জন্য আমার খারাপ লাগছে। আমি যখন তাকে দেখতে গেলাম। তার চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ছিলো। সেই ঝিলিকে কোন ভাণ ছিলো না।
— মানুষ যতো খারাপ হোক, একটা সময় না একটা সময় সে কারো প্রতি টান অনুভব করে। সেও করেছে, তোমার প্রতি। সে জানতো তুমি পুলিশে চাকরি করছো। একটু সন্দেহ হলেও রিক্স । তবুও সে নিজে থেকে এসেছে। ইচ্ছে করে মিশেছে। আমার মনে হয় তার লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হয়েছিলো।
রিমি চোখ তুলে সাব্বিরের দিকে তাকালো! এজন্যই হয়তো সে নিজে থেকেই এসেছিলো। নাকি খুঁজে বের করেছে? কফি হাউজের দেখা কোন কোইন্সিডেন্স ছিলো না। নিশ্চয়ই সে’ই বাথরুমের ঘটনার পর থেকেই তাকে ফলো করছে।
সাব্বির আবারো হাসলো! রিমির মেয়েদের মতো জড়তা সংকোচ কম। হঠাৎ হঠাৎ ডাইরেক্ট চোখের দিকে তাকায়। কি দেখে কে জানে! এই গাধী মেয়ে কি জানে? কোন ছেলের দিকে এভাবে তাকাতে নেই।
সে হেসেই নড়েচড়ে বসলো, বসে বললো — এসব ক্রিমিনাল টাইপ মানুষের মাইন্ড অন্য ট্রাকে চলে। তাইতো সে নিজে থেকেই এগিয়েছে। তবে ক্রিমিনাল হোক আর যাই হোক। সবার ভালোবাসার ধরন এক, অন্ধ! তাই সে তোমার অভিনয়টা ধরতে পারেনি।
আর রইলো তুমি! তুমি যতই উপরে শক্ত খোলস দেখিয়ে ঘুরে বেড়াও। ভেতরে তুমি নরম। শুভ্র তুষারের মতো। দেখতে কঠিন তবে একটু উষ্ণতা পেলেই গলে পানি হয়ে যাও। তাই সব জেনেও তুমি চেয়েছো সব মিথ্যা হোক আর লোকটা সত্যিই তোমার বন্ধু হোক। কখনও তো কারো সাথে সেভাবে মিশোনি। তাই মনে দাগ কেটেছে। তাই তো থানায় যেতে পারছো না । তুমি জানো এখন তার সাথে কি হবে। সেটা তোমার সহ্য করতে কষ্ট হবে। তাই তো পালাচ্ছো। অবশ্য নতুন কি? পালানোতো তোমার হবি। ছোট বেলার অভ্যাস।
রিমি মুখ ফোলালো! তবে কথাগুলো সত্য। সে মনে মনে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই বাবা পরিষ্কারগির তো দেখা যায় সবজান্তা। এজন্যই বুঝি ভার্সিটিতে এতো সুনাম।
— যখন এই শক্ত পেশায় এসেছো। তোমারও শক্ত হওয়া উচিত। তবে নিজের পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ দু- টো আলাদা রেখে। কখনও কোন কিছুতে এতো ডুবে যেতে নেই । যে চাকরির জন্য ডুবে যাচ্ছো, সে কিন্তু তোমাকে ফুল টাইম সিকিউরিটি দেবে না। একটা জিনিস কি খেয়াল করেছো রিমি?
রিমি প্রশ্ন বোধক ভাবে তাকালো।
— সে কিন্তু খুব কনফিডেন্ট।
রিমি ভ্রু কুঁচকালো।
— এসব ক্রিমিনাল টাইপ লোকেদের সমস্যা কি জানো ? এরা সহজে কাখনো মুগ্ধ হয় না, ভালোবাসে না। কিন্তু ভুলেও যদি একবার ভালোবাসে, তারা তার জন্য সব করতে পারে। এমন কি ভয়ংকর কোন স্টেপ নিতেও তারা একবার ভাবে না।
রিমি থমকালো! ওলীদের কথা গুলো তার মাথায় ঘুরতে লাগলো । ” সি ইউ সুন রিমি, শাস্তি তুমি পাবে, আমাকে কতোটুকু চেনে তুমি? ”
রিমি ভাবতে লাগলো! দ্বিতীয় মোবাইল! সে খুন করছে নতুন না। কতোদিন ধরে করে কে জানে । তার পেছনে সার্পোট আছে। শক্ত সার্পোট ! সে জানে তার কিছু হবে না। তাই সে নির্বিকার। সাথে সাথেই তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো ।
সাব্বির রিমির হাত নিজের হাতের মধ্যে নিলো। সুরু চিকন একটা হাত। মোজায় ঢাকা! আজকাল মেয়েদের ফ্যাশনের কাছে শীতও হার মেনে যায়। আর এ মেয়ে দিব্যি পুরো প্যাকিং হয়ে ঘুরে বেড়ায়।কোন সংকোচ, জড়তা ছাড়াই।
সে এই মোজায় ঢাকা হাতের আঙ্গুলের ভাজে আঙ্গুল রাখলো।
রিমি চমকালো! চমকে বড় বড় চোখে সাব্বিরের দিকে তাকালো।
সাব্বির হাসলো! হেসে হাত দু- টো আরো শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রেখে বললো, — আমি জানি! আমার রিমি ভয় পায় না। তবুও বলছি, ” নিজের খেয়াল রেখো আর আমি আছি! সব সময় সব পরিস্থিতিতে।
চলবে……