রোদরঞ্জন পর্ব-৩৮+৩৯

0
165

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩৮
#আশফি_শেহরীন_চিত্রা

[প্রাপ্তমনস্কদের জন্য। যারা ভায়োলেন্স পছন্দ করেন না তারা নিচের পার্ট স্কিপ করবেন]

[কপি করা নিষিদ্ধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজে এবং অন্য কোনো সাইটেও কপি করা যাবে না।]
.
.

শীতের আমেজ নেই বললেই চলে। বৃষ্টি এসে জানান দিচ্ছে শীতের শেষ এসে পড়েছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিই তার প্রমাণ। ইনান কপালে হাত রেখে আকাশের দিকে বিতৃষ্ণা নিয়ে তাকায়। বৃষ্টি আসার আর সময় পায় না! ইনানের ফুরফুরে মনটা নিমিষেই বিষণ্ন হয়ে গেল। বিকেলে পরিষ্কার আকাশ দেখে বের হয়েছিল কাঠ কাটতে। আজ তার আর জেহফিল দুজনেরই খুব ইচ্ছে করছিল ছাদে আগুন জ্বালিয়ে শীতের শেষটা উপভোগ করবে, শিক কাবাব বানাবে, গান গাইবে, গল্প করবে। গোডাউনে কাঠের স্বল্পতা দেখে ইনান বনে এসে কাঠ কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। জেহফিল সাথে আসতে চাইলেও ইনান জোর করে তাকে রেখে চলে আসে।

বৃষ্টির তেজ বেড়েই চলেছে। স্বচ্ছ নীলাকাশ ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে কালো মেঘেদের থাবায়। ধরণী তলিয়ে গেল আঁধারে,‌ যখন শোঁ শোঁ শব্দে জোরে বাতাস বইতে লাগল। ঝড় হবে। আকাশ ভেঙ্গে সজোরে বারিধারা আরম্ভ হলো। কয়েক পলের মাঝেই ইনান ভিজে চুপচুপে হয়ে গেল। কোমরে হাত দিয়ে অসহায় চোখে টুকরো করা কাঠের দিকে তাকালো। যেন ক্ষমা চাইছে। এত সময় নিয়ে সে মাত্র দুইটা কাঠ কাটতে পেরেছে। কয়েক টুকরো কাঠ দড়িতে বেঁধে একটা লম্বা ডাল কাটার জন্য প্রস্তুত হলো। এত অন্ধকার হয়ে গেছিল চারপাশ, সাথে গাছ এবং ঝোপঝাড়ের কারণে নিশানা ঠিক রাখা দুর্গম হয়ে পড়েছিল। হঠাৎ তার জেহফিলের কথা মনে পড়ল।

এই বৃষ্টি দেখে জেহফিল যে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবে না তা তার মাথা থেকেই বেরিয়ে গেল। নিশ্চয়ই জেহফিল ছাতা মাথায় ইনানকে খোঁজার জন্য রওনা দিবে। ইনান গাছের ডাল রেখে দ্রুত বাকিগুলো কাঁধে তুলে নিল। অন্ধকার বাড়ার আগে আগেই ঘরে যেতে হবে। কুড়াল এক হাতে নিয়ে পিছু ফিরতেই শক্ত কিছুর সাথে ধাক্কা খেল সে। আচানক ধাক্কায় কাঁদা মাটিতে পা পিছলে উল্টে পড়ে গেল। হাতের কুড়াল আর ভেজা কাঠ ছড়িয়ে পড়ল এদিক সেদিক। গাছের সাথে ধাক্কা খেয়েছে মনে করে বিরক্ত নিয়ে সেই গাছের দিকে তাকাতেই মেরুদণ্ড বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যায়। শরৎ পকেটে হাত দিয়ে কুটিল হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

‘বাহ! তোর তো দেখি অনেক শক্তি! তারমানে বেডে তোর সাথে জেহফিলের খুব ভালোই পারফরমেন্স হতো তাই না?’

বলতে বলতে চোখ তার জ্বলজ্বল করে উঠল, ‘চল না রে, তোর পারফরমেন্স দেখাবি আমাকে, আজাইরা কামে শক্তি নষ্ট না করে আমার উপরেই নষ্ট কর না হয়। লেটস হ্যাভ ফান।’

এই বলে এক পা এক পা করে ইনানের দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। জেহফিল আর তার সম্পর্কে এত বাজে মন্তব্য শুনে গা রি রি করে উঠল ইনানের।

ইনানের বাবা বলেছিল শরৎকে খোঁজার জন্য তার বাড়িতে গিয়েছে, কিন্তু কয়েকদিন ধরেই নাকি শরৎ লাপাত্তা। শরৎএর চারিদিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আগে থেকে কেউ অবগত ছিল না বিধায় ইফাজ খানের মেয়েকে হেনস্থা করার কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন শরৎএর বাবা। এমনকি ইফাজের মুখে শরৎএর অতীতের কিছু বাজে কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও জেনে নেন। এবং ইফাজ খানকে কথা দেন শরৎ বাড়িতে আসা মাত্রই তাকে ঘাড় ধরে জেলে দিয়ে আসা হবে।

তবে হুট করে শরৎ যে অসময়ে এইখানে এসে পড়বে তা ভাবনাতীত ছিল ইনানের।‌ শরৎএর এগোনো দেখে ইনান আশপাশটায় নজর বুলিয়ে নিলো। এইখান থেকে দুই মিনিটের পথ তাদের বাড়িতে যেতে। কিন্তু শরৎ সেই পথের মাঝেই বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই তাকে উল্টো পথ বেছে নিতে হবে। জঙ্গলের প্রতিটা ঝোপঝাড় ইনানের চেনা। অনেক বার জেহফিলের সাথে এখানে এসেছে সে।

ইনান হাতের নাগালে কাঠ পেল একটা। তা শরৎএর পায়ের দিকে ছুঁড়ে মেরে কল্পনামাফিক দৌড় দেয়। শরৎ সাইডে সরে যাওয়ায় পায়ে লাগেনি আর।

‘তেজ কমাবো তোর, জাস্ট ওয়েট।’ চোখ মুখ কুঁচকে বলল শরৎ। কাঠটা হাতে নিয়েই ইনানের পিছু পিছু ছুট লাগায়।

ঘনিয়ে আসা অন্ধকারে গাছের ডালপালা, লতাপাতা মাড়িয়ে দৌড়াতে বেশ বেগ পেতে হয় ইনানের। বাতাসের ঝাপটায় গাছের ডালপালা ভেঙে পড়ছে হঠাৎ হঠাৎ। কয়েকবার ইনানের কাঁধ, পায়ের উপরেও সরু ডাল পড়েছে, এছাড়া কাঁদা মাটিতেও পিছলে পড়েছে। পরনের ক্রপ টপ আর জিন্সে ভেজা মাটি, গাছের পাতা লেপ্টে আছে। বড় বড় গাছের আড়ালে লুকানোর চেষ্টা করেও পারে না ইনান, এভাবে খোলা জায়গায় লুকানো যায় না। ইনানের হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলছে। অবিশ্রান্ত দৌড়ানোর ফলে ঠান্ডা আবহাওয়াতেও গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ঝমঝম বৃষ্টি, ভূতুড়ে পরিবেশ, বড় বড় গাছের অন্ধাকার ডালপালা, শরৎএর আক্রমণ- সবকিছুর ভয় একসাথে ইনানকে জেঁকে ধরেছে।

দৌড়ানোর মাঝে শরৎ কয়েকবার কাঠ নিয়ে ইনানের পা বরাবর ছুঁড়ে মেরেছিল। ভাগ্য সহায় ছিল ইনানের যে একটাবারও কাঠ পায়ে লাগেনি।

এখন তাজবীর কোথায়? এই নাকি তাকে চোখে চোখে রাখে তাহলে এখন কোথায় গেল? ইনান আর জেহফিল যখনই একটু বারান্দায় কিংবা রুমে খুনসুটি করে তখন তাজবীর বেয়াদবের মতো হা করে তাকিয়ে থাকে, মিটিমিটি হাসেও। আবার ইনান এও লক্ষ্য করেছে তাজবীর মোবাইলটা সবসময় হাতে একভাবেই রাখে, ইনানের কয়েকবার সন্দেহ হয়েছিল তাজবীর তাদের ছবি তুলছে না তো। তাজবীরের এসব ব্যবহারে অনেক ত্যক্তও হয়ে গেছিল ইনান। সারাক্ষণ নজরে রাখে এখন যখন বিপদ আসলো তখন বান্দা কোথায় গেল? তাজবীরের গোষ্ঠী উদ্ধার করতে লাগল ইনান‌।

ছুটতে ছুটতে হঠাৎ তার পকেটে মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। গড! ইনান তো ভুলেই গিয়েছিল সাথে যে মোবাইল ছিল। দৌড়ানো অবস্থাতেই ইনান বের করে দেখে পানিতে মোবাইল সম্পূর্ণ ভিজে গেছে। যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সে দ্রুত কল ধরল।

‘ইনান তুমি কোথায়, ঘরে এসে বসে আছি। এই বৃষ্টির মাঝে কোথায় গেলে?’

‘বাবা…’

ইনানের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার এলোমেলো নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুনে ধরফড় করে উঠলেন ইফাজ।

‘কী হয়েছে ইনান? এমন শোনাচ্ছে কেন তোমার আওয়াজ? তুমি কোথায়?’

‘আমি… বাবা, শরৎ আমার পিছু নিয়েছে। আমি এখন… আমি এখন বাড়ির পেছ…পেছনের জঙ্গলে…’ হড়বড়িয়ে এক নিঃশ্বাসে বলল ইনান।

‘কল কেটো…’

ইফাজ খানে কথা কেটে গেল। ইনান মোবাইল সামনে এনে দেখল মোবাইল অফ হয়ে গেছে। পকেটে ঢুকিয়ে পা চালায়। উদ্দেশ্য আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া। ঐখানে গেলেই ঘরে যাওয়াটা সহজ হয়ে যাবে।

ঠিক তখনই পেছন থেকে শরৎএর ছুঁড়ে মারা কাঠ আঘাত হানে ইনানের পায়ে। কয়েকবার চেষ্টার পর অবশেষে ইনানের পায়ে লাগল। তার সাত আট কদম দূরেই ইনান। ইনান ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল, চিৎকার করে উঠল জেহফিলের নাম ধরে। মনে মনে সে চাইছে জেহফিল আসুক, তাকে এই জানোয়ারের হাত থেকে বাঁচাক।

আহত পা নিয়েও ইনান থামল না। শরীরের সব শক্তি এক করে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড় দেয়‌। যেহেতু শরৎ এই রাস্তার সাথে পরিচিত নয় তাই তার জন্য ইনানকে ধরাটা একটু কঠিনই হয়ে পড়েছে। নাহলে কখন ইনানকে ধরে মাটির সাথে চেপে…

সন্ধ্যা নেমে গেছে। আকাশের অবস্থা দেখলে মনে হয় এখন রাত একটা। অন্ধকারে বৃষ্টির পানিতে পা আছড়ে ফেলে শেষ পর্যন্ত ইনান আগের জায়গায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়। এইখান থেকে বাড়ির পথ সহজ হবে।
___

ইফাজ খান ছাতা হাতে দৌড়াচ্ছেন আর ইনানের মোবাইলে লাগাতার কল দিচ্ছেন। কত বড় বড় অপরাধীদের তিনি ধাওয়া করেছেন। তখন ততটাও বুক কাঁপেনি এখন যতটা কাঁপছে। তার মেয়ে এখন বিপদের মুখে। তাকেই যে বাঁচাতে হবে তার মেয়েকে।‌ তিনি চিৎকার করে ইনানকে ডাকছেন, আর চোখ যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই দৌড়াচ্ছেন। পকেট থেকে ব’ন্দুক বের করে হাতে রাখলেন। শরৎকে দেখা মাত্রই তার মাথার খুলি উড়িয়ে দিবেন।

____

শরৎ হাঁপাতে হাঁপাতে আগের জায়গায় ফিরে আসে। বৃষ্টির পানিতে চোখ খোলা দায় হয়ে যাচ্ছে। ইনান এত সহজে পালাতে পারবে না তার হাত থেকে। নিশ্চয়ই কোথাও লুকিয়ে আছে। ইনানের আওয়াজ শোনার চেষ্টা করে, কিন্তু বৃষ্টির ভারী আওয়াজ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। চোখের উপর জোর দিয়ে ঝোপঝাড়ে ইনানকে খুঁজতে থাকে সে।

ঠকঠক! শরৎএর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে কিছু একটার জানান দিচ্ছে। বৃষ্টির খরশান শব্দের চেয়েও অন্য একটা শব্দ তার কানে ধাক্কা খায়। কান পেতে শোনার চেষ্টা করল সে। গাছ কিংবা কাঠের উপর লোহার কিছুর একটার ঘর্ষণের আওয়াজ, সাথে একটা মানুষের কিছু বলার আওয়াজ।

যখন টের পেল আওয়াজটা তার পেছন থেকে আসছে তখন ঘুরল পেছনে, আর সঙ্গে সঙ্গেই তার সে মাটিতে পড়ে গেল, চোখ বড় বড় করে অন্ধকারে সে দেখল তার নিচের মাটি গাঢ় লাল হয়ে আছে, উৎসের দিকে খেয়াল করতেই দেখল একটু দূরে তার ব্র্যান্ডের ঘড়িটা এবং তার শার্টের হাতা। ধাঁধালো মস্তিষ্ক ততক্ষণাৎ ধরতে পারে না ব্যাপারটা। ক্রমান্বয়ে শরীরের মাঝে একটা ঝাঁকুনি অনুভব করল শরৎ। চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট হয়ে গেল, দেখল তার ঘড়ি আর শার্টের হাতাই নয়, তার আস্ত হাতটা তার থেকে ছয় ফুট দূরত্বে মূর্তির হাতের ন্যায় পড়ে আছে। রক্ত মাখানো হাতের কাটা অংশ আর হাড্ডি জ্বলজ্বল করছে। গগন কাঁপিয়ে চিৎকার দিলো শরৎ যখন বুঝল তার এক হাত নেই। পাগলের মতো এপাশ ওপাশ করতে থাকে অসহ্য যন্ত্রণায়।

ইফাজ খান থমকে যান কারো চিৎকার শুনে। খুব বেশি দূরে নয়। বুক কেঁপে উঠে তার। সেদিকে ছুটেন তিনি।

শরৎ ছটফট করতে করতে ঝাপসা দেখে তার সামনে কেউ একজন পা হেঁচড়ে এগিয়ে আসছে। হাতে ধরা ইনানের সেই কুড়ালটা। শরৎ ভয়াতুর চোখে তাকায় তার যমের দিকে। অন্ধকারে বুঝতে পারে না। শুধু ঝাপসা একটা অবয়ব দেখতে পারে সে, সাথে কানে বাজে কিছু শব্দ,

‘…র বা….ই’

এই সেম একটা বাক্যই বারবার শুনছে সে, কিন্তু ধরতে পারছে না কথাটা।

হাড়হিম হয়ে গেল শরৎএর শরীর। কোনো কথা বের হচ্ছে না তার মুখ দিয়ে, খুব ‘প্লিজ, তুমি যেই হও, ছে…ড়ে দেও আমাকে। আ..আই প্রমিস, আর কখনো ইনানের ক্ষতি করবো না… চোখ তুলেও তাকাবো না..প্লি…’

শরৎএর কথা শেষ না হতেই অবয়বটা কুড়াল দুইহাতে তুলে কপাল বরাবর আঘাত করল। মুহূর্তের মাঝেই শরৎএর ভ্রূ থেকে উপরের অংশ অর্থাৎ মাথা আলাদা হয়ে গেল। মগজের প্যাঁচানো অংশগুলো ছোট ছোট পোকার মতো আশেপাশে ছিটিয়ে পড়ল। শরৎএর শরীরের কম্পন ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে, চোখ খোলা এবং মুখ হা হয়ে ঘাড় কাত করে পড়ে আছে সে। বৃষ্টির পানিতে র’ক্তগুলো মিশে গেল মাটিতে। চারিদিক র’ক্তে রঞ্জিত হয় গেছে।

অবয়বটি সেখানেই ক্ষান্ত হলো না। আরো কয়েকবার কো’প দিল শরৎএর বুকে, পেটে, গলায়, পায়ে। কো’পাতে থাকল যতক্ষণ না তার মনের আঁশ মিটে। গরগর করে কাঁপতে কাঁপতে কত শতবার কো’প দিল হিসাব নেই। শরৎএর চোখ খুলে নিচে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আরেক চোখ কানের সাথে ঝুলে আছে। গলার হাড্ডি দেখা যাচ্ছে। তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।

শরৎকে বিচ্ছিন্ন করা শেষে মানুষটা জ্বলন্ত চোখে শরৎএর কা’টা দেহের দিকে চেয়ে থাকে। তারপর বসে থেকে শরৎএর অঙ্গগুলো একত্রিত করে সাজাতে থাকে, ইংলিশে লিখে,

‘ MY BUTTERFLY’

লেখাটা থেকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছিল। এত ভয়ানক লাগছিল দেখতে কিন্তু তার কাছে যেন খুবই সাধারণ। সে কুড়ালটা ফেলে পা টেনে টেনে চলে যায়…

ঝোপের আড়াল থেকে সবটা লক্ষ্য করছিলেন ইফাজ খান। তার শরীর কাঠ হয়ে গেছে। কিছুই টের পাচ্ছিলেন না তিনি। রক্ত যেন নেই শরীরে। হাত পা থরথর করে কাঁপছে তার। শরীরের প্রতিটা লোম দাঁড়িয়ে গেছে ভয়ে। মাথা চক্কর মে’রে উঠল। এক্ষুনি যেন ঘুরে পড়বেন। গাছের সাথে হাত ঠেকিয়ে নিজেকে সামলান। এত ভয়ানক দৃশ্য দেখার আগে তার মৃ’ত্যু হলো না কেন?

.
.
চলবে…

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩৯
#আশফি_শেহরীন_চিত্রা

[কপি করা নিষিদ্ধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজে এবং অন্য কোনো সাইটেও কপি করা যাবে না।]
.
.

ঠাণ্ডা বাতাস শরীরের প্রতিটি লোমকূপে আঘাত হানতেই ইনানের হুশ ফিরে। পিটপিট করে চোখ খুলে সে। ঘোলাটে হয়ে আসা দৃষ্টি মেলতে থাকে ধীরে ধীরে। মাথাটা ভারী লাগছে অনেক। যেন দশ মণ পাথর দিয়ে কেউ তাকে চেপে ধরেছে। শরীর যেন প্যারালাইজড। মাথার নিচে তুলতুলে। মন্থর গতিতে মাথা তুলে বোঝার চেষ্টা করে অবস্থা। বাইরের বাতাস এবং বৃষ্টির শব্দ ছাড়া আর কিছুই কানে যাচ্ছে না তার। উঠে বসল সে ঢলতে ঢলতে। অনুভব করল তার শরীর জিন্স প্যান্ট ভেজা, টপ ভেজা ছিল হয়তো। পাতলা কাপড়ের হওয়ায় শুকিয়ে গেছে। চুলের গোড়া ভেজা।

টের পেল সে তার বাবার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। রুমের আলো কম। সেই কম আলোতেই দেখল তার বাবা ইনানকে দুহাতে আগলে রেখে বুকে জড়িয়ে কাঁদছেন।

‘বাবা, কাঁদছ কেন? কী হয়েছে?’

ফ্ল্যাশের মতো ইনানের চোখের পর্দায় ভেসে উঠল কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। ছাদে আগুন পোহানোর প্ল্যান, বনে কাঠ কাটতে যাওয়া, বৃষ্টি, শরৎ, শরৎএর ধাওয়া, বাবার কল, প্রাণপণে ছোটা, তারপর? তারপর কী?

ইনান বাবার দিকে তাকায় ঝট করে, ছটফট করতে করতে বলে,

‘শরৎ? শরৎ কোথায় বাবা? আর…আর আমি ঘরে আসলাম কীভাবে? জেহফিল, জেহফিল কোথায়?

ইফাজ খান নিজেকে সামলান। কান্না বন্ধ করে শক্ত করেন নিজেকে। কেঁদে তো লাভ নেই, যা হওয়ার হয়ে গেছে। কণ্ঠ দৃঢ় রেখে বললেন,

‘রিল্যাক্স ইনান। কোথায় যাচ্ছি না তো আমি। ধীরে ধীরে বলছি সব।’

ইনান শান্ত হয় না। তার শরীরের শক্তি ফিরে পাচ্ছে না বিধায় উঠে দাঁড়াতে পারছে না। ঘড়ির কাঁটা এখন এগারোটা বরাবর। বৃষ্টি যখন হয়েছিল, জেহফিল যে ভাঙ্গা পায়েও ছাতা হাতে তার কাছে যাবে সে ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত ছিলো। এখন জেহফিলকে সে কোথাও দেখতে পারছে না। সে বারবার জেহফিলের খোঁজ জানতে চাইছে বাবার কাছে।

‘জেহফিল কি আমাকে খোঁজা জন্য বাইরে গিয়েছিল বাবা? প্লিজ চুপ থেকো না।’

ইফাজ খান কিছুটা ইতস্তত করে জবাব দেন,

‘কী যে বলো না ইনান, জেহফিলের হাঁটতেই তো কত কষ্ট হয়, ও কীভাবে সিঁড়ি ভেঙে নিচে যাবে এই অবস্থায়? ওকে ঔষধ দিয়ে দিয়েছি আমি। এখন ঘুমাচ্ছে। তোমার কাওসার আঙ্কেল আসছে, চেকাপ করবে জেহফিলের আর তোমার। এই মাসের টাইম এসে গেছে তো।’

কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে ইফাজ। ফোন হাতে নিয়ে কাওসারকে কল লাগান। নিজেকে ব্যস্ত দেখান যেন ইনান কোনো প্রশ্ন করতে না পারে।

কিন্তু ইনান মুখ বন্ধ রাখল না।

‘তাহলে আমাকে নিয়ে আসলো কে?’

‘সিঁড়িতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলে, বৃষ্টির ঠাণ্ডায় আর প্যানিক অ্যাটাকে। আমি এসে তোমাকে নিয়ে এসেছি।’

‘আর শরৎ?’

কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইফাজ খান ইনানের চোখ চোখ রেখে জোর করে হেসে বলল,

‘জেলে পাঠিয়ে দিয়েছি।’

ইনানের চোখ ঝলমল করে উঠল।

‘থ্যাংকিউ সো মাচ বাবা। তুমি জানো না ও আমার লাইফটাকে হেল করে ছেড়েছে। ও যাতে বের না হতে পারে।’

‘ডোন্ট অরি। আমি ওর ফাঁ’সির ব্যবস্থা করব।’

ইনান কিছুটা নিভে, ‘এটা করা কি ঠিক হবে? একটা জীবন নিয়ে নেয়া? মৃ’ত্যু ছাড়া তো আরো কত ধরনের শাস্তি আছে‌। ওগুলো দাও। কিন্তু প্লিজ বাবা, এসব না। আমার জন্য কেউ প্রাণ হারাক এটা আমি চাই না।’

ইফাজ খান কিছু বললেন না। কয়েকবার শুকনো গলায় ঢোক গিললেন যে ইনান বৃষ্টির আওয়াজকে ছাপিয়েও সেই শব্দ শুনতে পায়। সে পূর্ন দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকায়‌। কেমন অস্বাভাবিক লাগছে তাকে। হাত কচলাচ্ছে, পা নাচাচ্ছে, এদিক ওদিক বারবার তাকাচ্ছে, মুখের আদলে বয়স্কের ছাপ দ্বিগুণ বেড়ে গেছে যেন। ইনান জানে যখন তার বাবা অতিরিক্ত টেনশন করেন তখনই এমন করে। ইনানের কৌতুহল হলো। কী নিয়ে এত টেন্সড? শরৎএর বাবা পাওয়ারফুল, শরৎকে ছাড়িয়ে নিবে বলে?

‘বাবা.. আমার কথা…’

ইনানের চোখ আটকে যায় ইফাজের পরনের গেঞ্জির একটা নির্দিষ্ট অংশে। ইনান কথা থামিয়ে মনোযোগী চোখে তাকায়। ইফাজের হাতে ধরা মোবাইলের আলো তার পরিহিত গেঞ্জিতে গিয়ে পড়েছে।

ইনান খপ করে তার গেঞ্জির সাইডের অংশটা ধরে। যেখানে শুকিয়ে যাওয়া গাঢ় লাল র’ক্ত এবং কাঁদা মাটি লেগে আছে।

‘রক্ত! রক্ত কেন?’ প্রায় চিৎকার করে উঠে ইনান, ‘বাবা, তোমার কিছু হয়েছে? বলো না? এত রক্ত কেন আসলো?’

ইনান অস্থির হয়ে পড়ে, শরৎ কি তার বাবাকে মে’রেছে? নিশ্চয়ই মে’রেছে, কতটা বিবেকহীন হলে বাবার বয়সী লোকের গায়ে হাত তুলে।

ইফাজ খান থতমত খেয়ে যান। শরৎএর বডির প্রত্যেকটা অংশ সে কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে ডিসচার্জ করে আসেন। চাইলে এইখানের জঙ্গলেই পুঁতে ফেলতে পারতেন। কিন্তু এই জঙ্গলে ইদানীং কাঠুরেদের উৎপাত বেড়েছে, তার যদি কোনোভাবে শরৎএর লাশ পেয়ে যায়, তাহলেই বিপদে পড়ে যাবে তারা। কারণ এই জঙ্গলের কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জেহফিলের বাড়ি ছাড়া আর কোনো বাড়ি নেই। সুতরাং সবার আগে আঙুল উঠবে এই বাড়িটার দিকেই। তাই তিনি দূরের এক গভীর জঙ্গলে শরৎকে পুঁতে দিয়ে এসেছেন।‌ ঘরে আসার পর গায়ের জ্যাকেট খুললেও ভুলে গেছিলেন গেঞ্জির কথা। তার ধারণা ছিল জ্যাকেটেই র’ক্ত লেগেছে। গাঢ় নীল রঙেল গেঞ্জিতেও যে র’ক্ত ছিল তা তার চোখের আড়ালেই রয়ে গেল।

ইনান এবার নিজের দিকেও খেয়াল করে দেখল তার হলুদ টপেও র’ক্ত লেগে গেছে ইফাজের গেঞ্জি থেকে। রক্তের বোটকা গন্ধে ইনানের মাথা দুলে গেল। এমনিতেই সে রক্ত দেখতে পারে না।

ইফাজ খান দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে বললেন,

‘শরৎএর সাথে জাস্ট একটু মা’রামারি লেগেছে। তবে টেনশন করো না, আমার কিছুই হয়নি। তুমি তো জানো তোমার বাবা কত স্ট্রং। ওকে মে’রে কুপোপাত করেছি আমি। আর ওর গায়ে র’ক্তই আমার জামায় লেগেছে।’

‘জেহফিল জানে শরৎএর কথা?’

‘ন..নাহ, ও’কে এসব বলিনি। বলেছি তুমি কাঠ কাটতে গিয়ে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েছো, ব্যস।’

ইনান নিশ্চিন্ত হলো।

‘আচ্ছা বাবা, তাহলে আমি রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে আসছি। তুমি জেহফিলের একটা শার্ট পরে নাও।’

ইনান দূর্বল শরীরে রুমে যেতেই পা থেমে যায় তার। জেহফিল খাটে নেই। সে জেহফিল বলে ডাকবে তার আগেই তার কোমর জড়িয়ে ধরে এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত।

ইনান না দেখেই চিনতে পারে মানুষটা কে। জেহফিলের হাতের প্রগাঢ় স্পর্শে দূর্বল শরীর আরো দূর্বল হয়ে যায় তার। ঢলে পড়তে নিলেই জেহফিল শক্ত করে চেপে ধরে নিজের কাষ্ঠ বুকের সঙ্গে।

ইনান জেহফিলের দিকে ফিরে দেখল স্নিগ্ধ হাসির রেখা জেহফিলের বাদামী ঠোঁটে। মুচকি হেসে ইনান জেহফিলের কাঁধে এক হাত রেখে মাথায় আরেক হাত রাখে। হাসি বন্ধ হয়ে যায় জেহফিলের ভেজা চুল দেখে।

‘আপনার চুল ভেজা কেন?’

জেহফিলের হাসি সরলো না,

‘গোসল করেছিলাম, গরম লাগছিল।’

‘এই ঠাণ্ডায় গরম লাগবে কেন? নাকি আমাকে বৃষ্টির মাঝে খুঁজতে বের হয়েছিলেন?’ চিন্তার সুর ইনানের কণ্ঠে।

জেহফিল জবাব না দিয়ে ইনানের গলায় মুখ গুঁজে ঘ্রাণ নেয়।

‘আমার বাটারফ্লাই…’

ইনান পুলকিত হয়, উষ্ণ শিহরণ বয়ে যায় শরীরে। জেহফিলের চুলে হাত বুলিয়ে মৃদু গলায় বলল,

‘আপনি নাকি ঘুমাচ্ছিলেন?’

‘ঔষধে কাজ করে না বাটারফ্লাই। এসব কৃত্রিম ঔষধে আমি ঠিক হবো না। আমার সুস্থ হওয়ার ঔষধ শুধুই তুমি।’

এই বলে ইনানের ক্রপ টপ গলে হাত ঢুকিয়ে পেটে বিচরণ শুরু করে। ইনান কাঁপছে। জেহফিল ক্রাচ দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রেখেছে‌। ইনান ক্রাচটা না নিয়েই জেহফিলকে ধরে খাটে বসায়। এবার নিজেও জেহফিলের কোলের উপর বসে দুই পা দিয়ে জেহফিলের কোমর চেপে ধরে।

জেহফিল নেশাতুর চোখে ইনানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার ধূসর চোখের শাণিত চাহনি এখন কোমল চোখে ইনানকে দেখছে।

জেহফিল আচনক ইনানের ঠোঁট চেপে ধরে নিজে্য ওষ্ঠাধরে। যেন কতদিনের ক্ষুধার্ত সে। দম ফেলার সুযোগ পায় না ইনান, তবে আগের মতো জেহফিলের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টাও করল না, বরং দুই হাতে জেহফিলের ঘাড় জড়িয়ে ধরল। লম্বা সময়ের চুম্বনের পর জেহফিল ইনানের গলায় নেমে আসে। ইনানের পিঠে থাকা জেহফিলের হাত দুটো চলে আসে ইনানের পেটের কাছে। তখনই তার নজর গেল ক্রপ টপে লেগে থাকা রক্তের দিকে। চোখে ধিক করে জ্বলে উঠল আগুন। ইনান জেহফিলের দৃষ্টি বরাবর তাকালে বুঝে যায় জেহফিলের চাহনি বদলালো কেন। সে নিজেকে ব্যাখ্যা দেওয়ার মতো করে বলল,

‘আমার কিছুই হয়নি জেহফিল। ঐ শরৎএর সাথে বাবার একটা হয়েছিল বুঝলেন, ওরই রক্ত বাবার গেঞ্জিতে লেগেছিল। আর বাবা আমাকে হাগ করেছিল তা-ই আমার টপেও লেগেছে।’

জেহফিল ইনানের কথা কানে তুলল না। তার ঘাড়ের রগ ফুলে গেছে,

‘টেক ইট অফ রাইট নাউ।’ জেহফিল অগ্নি ঝড়া গলায় বলল,

‘তোমার শরীরের অন্যের রক্ত মাখা জামা কেন থাকবে? হোয়াই? আই ফাকিং হেইট ইট। তুমি ভুলে গেছ তোমার শরীর, মন যে একান্তই আমার? তোমার শরীরে রক্ত দিয়ে আমার নাম লেখাটা ভুলে গেছ? এই বাজে জামাটা তাড়াতাড়ি খুলো, হারি আপ।’

জেহফিল রাগে কাঁপছে। অ্যাক্সিডেন্টের পর এই প্রথম ইনান জেহফিলের অগ্নিমূর্তি দেখল। জেহফিলের রাগ দেখে ইনান হেসে ফেলল। তার গাল দুইহাতে চেপে ধরে দুই গালে চুমু খায় সে, যেন জেহফিল একটা বাচ্চা।

ইনান জেহফিলের চুলে বিলি কেটে বলল,

‘আপনার এই অশান্ত রূপকেই আমি ভালোবাসি জেহফিল। প্লিজ, বদলাবেন না।’

এই বলে ইনান জেহফিলের ঠোঁটে টুপ করে চুমু খেয়ে জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে চলে গেল। চেঞ্জ হয়ে এসে জেহফিলের কাছে চলে এলো। ইনান খাটের কাছে আসা মাত্রই জেহফিল ইনানের হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে বুকের উপর ফেলে। ইনানের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে ইনানের কাছাকাছি এগিয়ে যায় সে। সেই মোমেন্টেই দরজায় আওয়াজ পড়ে।

‘ইনান মামনি, জেহফিলকে নিয়ে আসো, তোমার কাওসার আঙ্কেল এসেছে।’

জেহফিল দাঁতে দাঁত চাপল।

‘কোথাও যাচ্ছ না তুমি।’

ইনান উঠে গেল জেহফিলের বুক থেকে। জামা ঠিক করে জেহফিলকে শার্ট ঠিক করে দিলো, ‘শুধু আমি যাবো না, আপনিও যাচ্ছেন সাথে।’

জেহফিল কিছু বলার আগে ইনান এক আঙ্গুল চেপে ধরল জেহফিলের ঠোঁটে,

‘শশহ, একটা কথাও না। চেকাপ না করলে পা ঠিক হবে কীভাবে? চুপচাপ বসে থাকবেন। ভদ্র ছেলের মতো। গট ইট?’

জেহফিল মুখ গোমড়া করে রইল।

ইনান দরজা খুলে দেয়। কাওসার এসে ইনান আর জেহফিল দুজনকেই ভালো করে চেকাপ করে।

‘ইনান, ঠিক মতো ঔষধ খাচ্ছো তো মা?’

‘জি আঙ্কেল।’

‘আচ্ছা, আর চাপ নিবে না বেশি, টেনশন কম করবে। আর জেহফিলকে হাঁটা চলা করিও না। ওকে বেড রেস্টেই থাকতে বলবে। যত কম হাঁটবে তত ভালো। পায়ের উপর প্রেশার কম পড়বে।’

ইনান জেহফিলের কাছে গিয়ে বসে। জেহফিল চঝখ বন্ধ করে মাথা ঠেকিয়ে আছে হেডবোর্ডে তার মুখ কঠিন। চোখ বুজে শক্ত মুখে বলল,

‘ওনাদেরকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলো।’

ইফাজ আর কাওসার কিছুটা চমকে উঠেন। ইনান ইতস্ততবোধ করে। আমতা আমতা করে বলে,

‘সরি আঙ্কেল প্লিজ কিছু মনে করবেন না। ওনার শরীরটা একটু খারাপ লাগছে আজ।’

কাওসার মুচকি হেসে বললেন,

‘ইটস ওকে। বুঝতে পেরেছি।’

তারপর ইফাজকে ইশারা করে রুমের বাইরে নিলেন।

‘কী হয়েছে সবটা বল আমায়।’

‘যেতে যেতে বলব। এইখানে বললে ইনান শুনে ফেলবে।’

‘আচ্ছা। তবে.. যা বুঝলাম, পরিস্থিতি যথেষ্ট ঘোলাটে। মনে হচ্ছে না…’

ইফাজ হঠাৎ কাওসারের হাত চেপে ধরে জোল করে হেসে বললেন,

‘আরে ইনান, কিছু লাগবে?’

কাওসার ফিরে দেখেন ইনান পেছনে। ভাগ্যিস ইফাজ তাকে থামিয়েছে।

‘আঙ্কেল, বসুন না। আমি একটু আসছি।’

‘কিচ্ছু করতে হবে না ইনান। ব্যস্ত হইয়ো না। আমি এখনি চলে যাব ইফাজকে নিয়ে। আর্জেন্ট বুঝলে।’

ইনানের সাথে আরো কিছুক্ষণ ভালোমন্দ বলে কাওসার আর ইফাজ বিদায় নিলেন।

ভেজা কাপড়গুলো মেলতে ভুলে গেছিল ইনান। বাবাকে বিদায় দিয়ে দ্রুত গেল বারান্দায়। কাপড় মেলতে গিয়ে দেখল, এই বৃষ্টির মাঝেও তাজবীর বারান্দায় বসে ইনানের বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ রুমে পর্দা টানানো ছিল ভাগ্যিস।

আজ তাজবীর আগের দিনের তুলনায় একটু বেশিই হাসছে মনে হচ্ছে। চওড়া হেসে ইনানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার হাতে আজ আর মোবাইল নেই। যেন বড় কোনো অর্জন হয়েছে তার, সেই খুশিতেই মেতে উঠেছে সে।

তাজবীর ইনানকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল,

‘বায় বায়, গেমের ফাইনাল রাউন্ড চলে এসেছে। ইটস গনা বি ফান।’

এই বলে চোখ মেরে রুমে চলে গেল হাসতে হাসতে।

ইনান তাজবীরের কথার আগামাথাও বুঝতে পারল না। বোঝার চেষ্টাও করল না। বারান্দার দরজা আটকে দিলো ঠাস করে।

.
.
চলবে…