দ্বিতীয় বসন্ত পর্ব-১৭

0
209

#দ্বিতীয়_বসন্ত
#লেখা_Bobita_Ray
পর্ব- ১৭

-‘মা…ও.. মা..?
বিধ্বস্ত দীপ্তিকে মেইন দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, সুর্বনারানীর বুকের রক্ত ছলকে উঠল। দীপ্তির ফর্সা মুখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে আঁতকে উঠল। এ কী হাল হয়েছে মেয়েটার? ঠোঁটদুটো ফুলে ঢোল হয়ে, রক্ত জমাট বেঁধে আছে। মুখের বিভিন্ন অংশেও একই অবস্থা। রাস্তায় কোন বিপদ হয়েছিল কী? দৌঁড়ে গিয়ে দীপ্তিকে বুকে টেনে নিল। মায়ের মন। ঝরঝর করে কেঁদে দিল। দীপ্তির মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
-‘কী হয়েছে মা তোর? শুনলাম, তোকে না কী গতকাল বিকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
একবারও ভেবে দেখেছিস? কথাটা শুনে আমার মনের অবস্থা কী হয়েছিল?
দীপ্তি চোখ তুলে মায়ের মুখপানে তাকাল। মা বোধহয় প্রচুর কেঁদেছে। চোখ-মুখ ফোলা। চোখের কোণেও শুকনো জলের রেখা চিকচিক করছে। দীপ্তি ক্লান্ত কণ্ঠে বলল,
-‘বলব মা। সব বলব। গতকাল থেকে আমি অভুক্ত। আমাকে আগে কিছু খেতে দাও? খিদেয় পেট জ্বলে যাচ্ছে গো মা।
-‘হ্যাঁ..হ্যাঁ। যা হাত-মুখ ধুয়ে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।
দীপ্তি খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিজের ঘরে চলে গেল। স্নান করতে গিয়ে টের পেল। কে যেন শরীরে লঙ্কা ঢেলে দিয়েছে। শরীরের কাটা-ছেঁড়া অঙ্গে জল পরলেই অসহ্য ব্যথায় কুঁকড়ে যাচ্ছে দীপ্তি। কাঁদতে কাঁদতে অনেক কষ্টে স্নান করল মেয়েটা। দীপ্তির সবগুলো জামা টাইট করে বানানো। এত টাইট জামা পরতেও হাসফাস লাগছে। সুপ্তির একটা পুরোনো রঙচটা ঢিলা ঢোলা জামা পরল দীপ্তি। এবার একটু আরাম লাগছে। স্নান সেরে মাথা মুছতে গিয়ে টের পেল চুলের গোঁড়ায় অসহ্য যন্ত্রণা করছে। মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। দীপ্তি ডুকরে কেঁদে উঠল। চোখের জল মুছতে মুছতে,
দীপ্তি ঘরে আসতেই দেখল, মা ভাতের থালা হাতে নিয়ে, চেয়ারে বসে আছে। দীপ্তি আস্তে-ধীরে মায়ের পাশে বসল।
মা ভাত মেখে নিজের হাতে খাইয়ে দিল। দীপ্তি গাপুসগুপুস খেলো। মনে হয়, কতশত যুগ অভুক্ত ছিল মেয়েটা। সুর্বনারানী একহাত দিয়ে চোখের জল মুছে, আরেক হাত দিয়ে মেয়েকে ভাত খাইয়ে দেয়। প্লেটের ভাত শেষ হতেই বলল,
-‘আর একটু ভাত দেব মা?
দীপ্তি ধীর কণ্ঠে বলল,
-‘দাও মা?
কয়েক গাল ভাত খেয়ে, দুই গ্লাস জল পান করতেই পেট ভরে গেল দীপ্তির। মুখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
-‘আর খেতে ইচ্ছে করছে না মা। পেট ভরে গেছে।
-‘আচ্ছা।
মা ভাতের এঁটো প্লেট নিচে নামিয়ে রেখে, হাত ধুয়ে, দীপ্তির মুখোমুখি বসল। বলল,
-“এবার বল? কী হয়েছে তোর? কাউকে কিছু না বলে, একা একা চলে এসেছিস কেন? জায়গাটা অচেনা। যদি তোর বড় কোন বিপদ হতো?
দীপ্তি বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,
-‘বিপদ নিয়েই তো এতদিন সংসার করেছি মা। নতুন করে আর কী বিপদ হবে?
সুর্বনারানী চমকে উঠল। ভীতু কণ্ঠে বলল,
-‘কী হয়েছে তোর? এমন কথা বলছিস কেন?
দীপ্তি হাসল। মলিণ হাসি। বলল,
-‘ আজ সব কথা বলব তোমাকে! এতদিন কথাগুলো মনের ভেতর চেপে রেখে, আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি মা।

দীপ্তি ধীর পায়ে উঠে গিয়ে, ভেতর থেকে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে এলো। তারপর গা থেকে একটানে কামিজটা খুলে ফেলল। সুর্বনারানী দীপ্তির কাণ্ড দেখে লজ্জায় অন্যদিকে তাকাল। দীপ্তির চোখের কোণে জল চিকচিক করছে। মলিণ হেসে বলল,
-‘অন্যদিকে তাকিও না মা। আমার শরীরের দিকে একবার ভাল করে, তাকিয়ে দেখো?
সুর্বনারানী চোখ তুলে মেয়ের দিকে ভাল করে তাকিয়ে, ভয়ে আঁতকে উঠল। মেয়েটার ফর্সা শরীরে এত আঁচড়, কামড়ের দাগ কেন? সারা শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে আছে। এত ক্ষত! শরীরে সুই ফেলার তিল পরিমাণ জায়গা নেই। সুর্বনারানী মেয়েকে জড়িয়ে ধরে, মুখে আঁচল চেপে ধরে, শব্দ করে কেঁদে দিল। অস্ফুট স্বরে বলল,
-‘তোর এই অবস্থা কে করেছে?
-‘কেন মা? তোমাদের সুপাত্র জামাই ছাড়া আর কে করবে? তারা তোমার বড়মেয়েকে রিজেক্ট করে, ছোটমেয়েকে বিয়ে করার আবদার রাখল। আর তোমরাও নির্লজ্জের মতো, পাঁচতলা বাড়ি, ছেলের দামী চাকরি দেখে, লোভ সামলাতে পারলে না। ছেলের স্বভাব-চরিত্র কেমন! ভাল করে খোঁজ-খবর না নিয়েই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলে। এখন কাঁদছো কেন মা?
সুর্বনারানীর মুখটা শুকিয়ে পাংশুবর্ণ হয়ে গেল। বলল,
-‘ছিঃ..ছিঃ..শৌভিক এতটা খারাপ? ওর এত নোংরা মন-মানসিকতা?
-‘তুমি এখন ছিঃ.. ছিঃ..করছো মা? বৌভাতের রাতে, তোমাদের সুপাত্র জামাই কী করেছিল, জানো? অতিরিক্ত উত্তেজনায়, আমার যৌনাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলেছিল। বেশি না মা! মাত্র চার-পাঁচটা সেলাই লেগেছে। আর দুই ব্যাগ রক্ত লেগেছে। চারদিন আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম।
ভয়ে সুর্বনারানীর গলা শুকিয়ে গেল। কী বলে মেয়ে? এ-ও কী সম্ভব?
দীপ্তি চোখের জল মুছে বলল,
-‘বিশ্বাস হচ্ছে না। তাই না মা? দেখবে তুমি? এখনো সেলাইয়ের দাগ গুলো স্পষ্ট বোঝা যায় কিন্তু।
-‘তুই আমাদের এসব কথা আগে কেন জানাসনি? আর আরও আগে কেন চলে আসলি না?
-‘কী করে আসতাম মা? আমি চলে এলে যে দিদির ভাল ঘরে বিয়ে হতো না৷ এমনিতেই আমার জন্য ওর বিয়ে ভেঙ্গে গেছে। তুমি ওকে ভাইয়ের মেয়ে ভাবতেই পারো। কিন্তু আমি তো ছোটবেলা থেকেই জানি ও আমার মায়ের পেটের আপন বোন। কখনো দিদিকে অন্যনজরে দেখিইনি।
সুর্বনারানীর এত রাগ হচ্ছে। কিন্তু রাগটা কার উপরে হচ্ছে! সঠিক বুঝতে পারছে না। আহারে..তার ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েটার এ কী হাল করেছে অমানুষটা? দীপ্তি বলল,
-‘মানুষটা তখন আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করল। এখন আবার বলে, সে না কী দিদিকে ভালোবাসে। দিদির উপর প্রতিশোধ নিতেই গতকাল আবারও আমার উপর অমানবিক অত্যাচার করেছে। এটা কোন যুক্তিযুক্ত কথা হলো মা? তুমিই বলো?
ঘৃণায় সুর্বনারানীর গা রি রি করে উঠল। ছিঃ..সুন্দর মুখের আড়ালে এত কুৎসিত, ভয়ংকর, মন-মানসিকতা লুকিয়ে আছে? সুর্বনারানী রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
-“আমি…আমি.. ওদের নামে মামলা দেব। আমার মেয়েটার এ কী হাল করেছে? সবাইকে এর জবাব দিতে হবে।
-‘কোন দরকার নেই মা। শুধু শুধু দিদির সংসারে অশান্তি হবে।
সুর্বনারানী রাগে ফুসফুস করছে। চোখের জল মুছে দীপ্তির শরীরে আলতো করে, স্নেহের হাত বুলিয়ে দিল। বলল,
-‘হোক অশান্তি। তাতে আমার কী?
-‘স্বার্থপরের মতো কথা বলো না তো মা। দিদিকে জন্ম না দাও। সেই ছোটবেলা থেকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করেছো তো? তাছাড়া ওই বাড়ির মানুষগুলো অসম্ভব ভাল। শুধু শৌভিকটাই অতিরিক্ত আদর পেয়ে পেয়ে বিগড়ে গেছে। আমি আর ওর সংসার করব না মা।
-‘তুই কী সংসার করবি না? আমিই তোকে ওই জানোয়ারের সংসার আর করতে দেব না। তবে সম্পর্ক চুকেবুকে যাওয়ার আগে সব হিসাব আমি কড়াই-গন্ডায় বুঝে নেব। এত সহজে ওদের ছেড়ে দেব, ভেবেছিস?
-‘সে তুমি নিও। তবে বেশি অশান্তি করার দরকার নেই। আমি এখন ঘুমাব। লাইটটা অফ করে দিয়ে যেও।
দীপ্তি ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে টানটান হয়ে বিছানায় শুয়ে পরল। না চাইলেও মানুষটার হিংস্র মুখখানি বার বার চোখের পাতায় ভেসে উঠছে।

আবির কী করবে বুঝতে পারছে না। এখানকার স্থানীয় লোক লাগিয়ে পুরো চা বাগান, দোকানপাট, রাস্তাঘাট চষে ফেলেছে। আফসোস কোথাও দীপ্তি নেই। এদিকে শৌভিক গো ধরে বসে আছে। দীপ্তিকে না নিয়ে কোথাও যাবে না। সুপ্তির কাঁদতে কাঁদতে চোখ-মুখের অবস্থা ভয়াবহ। মেয়েটার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। শৌভিক বউয়ের শোকে গতকাল থেকে কিচ্ছু দাঁতে কাটেনি৷ সুপ্তিও আদরের ছোট বোনকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা। কিচ্ছু মুখে নেয়নি। ওদের রেখে আবিরেরও খাওয়ায় রুচি হলো না। এদিকে খিদেয় পেট চু চু করছে। ফোন দিয়ে দীপ্তির মিসিং হওয়ার কথাটা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে আবির। সবাই খুব টেনশনে আছে। এদিকে কী একটা বাজে নিয়ম। চব্বিশ ঘণ্টা না গেলে না কী থানায় কেইস নেবে না। আবির মুখ খিঁচে বলল,
-‘বালের পু**শ.. বালের নিয়ম।

শৌভিকের বুকপকেটে সেল-ফোনটা বেজে উঠল। ঘরের এক কোণে বিষণ্ণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল শৌভিক। ফোনটা বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে। রিসিভ করার কোন তারা অনুভব করছে না। আবির বিরক্ত হয়ে বলল,
-‘এমনিতেই সারারাত ঘুম হয়নি। মাথা ব্যথায় ফেটে যাচ্ছে। ফোনটা ধর? না হয় অফ করে রাখ? বাল বাজতেছে কানের কাছে। অসহ্য!
শৌভিক ফোনটা সুইচঅফ করতে গিয়ে, দীপ্তির মায়ের নাম্বার দেখে, ফোনটা কৌতূহলবশত রিসিভ করল।
-‘হ্যালো?
-‘শৌভিক বলছো?
-‘হ্যাঁ।
-‘দীপ্তি আমার কাছে আছে।
শৌভিক রেগে গেল। মেজাজ দেখিয়ে উঁচু কণ্ঠে বলল,
-‘মানে কী? ফাজলামো পাইছে না কী ও? আমাদের কাউকে কিছু না বলে দীপ্তি কোন সাহসে, কার অনুমতি নিয়ে চলে গেছে?
সুর্বনারানী ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলল,
-‘সেই কৈফিয়ত তো আমি তোমার মতো অমানুষকে দেব না।
শৌভিক দমে গেল। দীপ্তি…দীপ্তি ওর মাকে সব সত্যি বলে দিয়েছে না কী? সত্যিই গতকাল একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। তবে ফুলসজ্জার রাতের মতো ওতটাও তো বাড়াবাড়ি হয়নি। সেদিন তো কাউকে মুখ ফুটে কিচ্ছু বলেনি দীপ্তি? তাহলে আজ কেন বলল? মেয়েটাকে শৌভিক যতটা বোকা আর ভীতু ভাবতো। মেয়েটা ততটাও ভীতু না। বেশ সাহস আছে। নাহলে ওতদূর একা একা যেতে পারতো না। সুর্বনারানী বলল,
-‘ফিরে আসো তোমরা। তোমার মা-বাবাকেও খবর দিয়েছি। সবাই একসাথে বসব।
-‘ফিরে তো আসবোই। আর একসাথে বসবেন মানে কী?
সুর্বনা রানী ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলল,
-‘আমার মুখ ছুটিও না শৌভিক। আমার মেয়ে কোন ফেলনা না। যে তুমি দিনের পর দিন শারীরিক, মানসিক অত্যাচার করবা। আর আমি টিপিক্যাল মায়েদের মতো উল্টো মেয়েকেই দোষ দেব। আর বলব,
-‘আর একটু ধৈর্য ধর মা। আর একটু মানিয়ে নে। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। দিন পাল্টেছে শৌভিক। আমি এতটাও মহান মা নই। আমার মেয়েটার সুখ সবার আগে, পরে অন্যকিছু। তুমি কোন সাহসে আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছো? বলো? জবাব দাও?
কী বলবে শৌভিক? এই প্রশ্নের আদৌও কোন উত্তর হয় না বোধহয়। সুর্বনারানী বলল,
-‘আমার মেয়ে অন্যায় করতো, বেয়াদবি করতো, মুখে মুখে তর্ক করতো। তুমি ওর গায়ে হাত তুলতা। আমি মেনে নিতাম। কিন্তু তুমি তো মেরেছে অন্যকারণে। দেখতে আসলা আমার বড়মেয়েকে, পছন্দ হলো তোমাদের মা-ছেলের আমার ছোটমেয়েকে। পরে আবার তোমার আমার সেই বড়মেয়েকেই পছন্দ হলো কেন? তুমি তো গিরগিটির থেকেও দ্রুত রং পাল্টাও শৌভিক। তোমাকে তো আমি এমনি এমনি ছেড়ে দেব না।
শৌভিক মনে মনে বলল,
-‘আপনি আমার কোন বালডা ফালান। আমিও দেখব। তবে মুখে কিছু বলার সাহস পেল না। শৌভিক এতটাই কথায় মত্ত ছিল। ফোন যে লাউডস্পিকারে দেওয়া আর পেছনে যে আবির-সুপ্তি দাঁড়িয়ে আছে, সে খেয়াল নেই। ওদের দিকে চোখ পড়তেই চমকে উঠল শৌভিক। আবিরের চোখদুটো অতিরিক্ত রাগে রক্তলাল হয়ে গেছে। শৌভিক হাসার চেষ্টা করল। আবির তেড়ে গেল। শৌভিকের শার্টের কোণা চেপে ধরে, চাপা কণ্ঠে বলল,
-‘গতকাল দীপ্তির সাথে কী করেছিস তুই? সত্যি করে বল? আর সুপ্তিকে পছন্দ করিস, মানে কী? ছিঃ.. ছিঃ..তোকে আমার নিজের ভাই বলেও পরিচয় দিতে ঘৃণা লাগছে। বিয়ের রাতে দীপ্তিকে তুই শারীরিক ভাবে জখম করে, হাসপাতালে পাঠিয়েছিলি। আমরা কেউ তোকে কিছুই বলিনি। ভেবেছি নেশা করেছিস দেখে, ভুলে হয়ে গেছে। আজ কিসের অজুহাত দিবি তুই? বলতো? গতকাল তো আর নেশা করিসনি? তুই কবে এতটা সাইকো হয়ে গেলি শৌভিক?
-‘ছাড় ব্রো। আমাকে যেতে হবে। বাবা ইত্যিমধ্য মেসেজে বলে দিয়েছে। দীপ্তিকে ফিরিয়ে না আনলে আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করবে।
আবির হেসে দিল। ইচ্ছে করছে শৌভিককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিতে। অনেক কষ্টে রাগ সংবরণ করল। তাচ্ছিল্য করে বলল,
-‘পাগলের সুখ মনে মনে। এতকিছুর পরও ভাবছিস, দীপ্তি তোর কাছে ফিরে আসবে?
আমার তো মনে হয় না।
শৌভিক দৃঢ় কণ্ঠে বলল,
-‘দীপ্তিকে আমার কাছে ফিরে আসতেই হবে।
বলেই শৌভিক হন্তদন্ত পায়ে চলে গেল। শৌভিক চলে যেতেই আবির, সুপ্তির দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। সুপ্তির চোখে-মুখে অবিশ্বাস। সুপ্তি…সুপ্তি, আবিরকে অবিশ্বাস করছে? কিন্তু কেন?

সুপ্তি বুকচিরে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। চোখের জল মুছে নিয়ে বলল,
-‘আমার বোনের ফুল সজ্জার রাতে কী হয়েছিল আবির?
আবির চোখ নামিয়ে নিল। বলল,
-‘কিছু না।
সুপ্তি আচমকা আবিরের শার্টের কলার চেপে ধরল। মরিয়া হয়ে বলল,
-‘আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সত্যি করে বলো?
-‘সুপ্তি তুমি ঠাণ্ডা হও লক্ষ্মীটি? আমার কথাটা শোনো, প্লিজ?
-‘না আবির। আজ আমি তোমার কোন কথা শুনবো না। তুমি বরং আমার কথার উত্তর দাও? ভয়ে…! আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে তোমরা সবাই আমাদের কাছ থেকে সত্যিটা লুকিয়েছো। তাই না?
আবির অস্থির হয়ে ছটফটিয়ে বলল,
-‘তুমি ভুল বুঝছো আমাকে!
সুপ্তি, আবিরকে ছেড়ে দিল। চোখের জল মুছে নিয়ে বলল,
-‘আমি বাড়ি যাব আবির?
-‘অবশ্যই।
সুপ্তি চিৎকার করে বলল,
-‘তোমার বাড়ি না। আমার বাবার বাড়ি যাব।

(চলবে)