#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-১০
®মেহরুমা নূর
★এরমাঝে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। নূরের নিয়মিত ট্রিটমেন্ট আর থেরাপি চলছে। খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও কিছুটা উপকার দেখা যাচ্ছে। যেমন নূরের আর অ্যাটাক আসেনি। আর খাওয়া দাওয়ার প্রতিও একটু রুচিশীল হয়েছে। আগেতো খেতেই চাইতো না সে। আদিত্য নূরের শারীরিক ট্রিটমেন্টের সাথে সাথে তাকে বাহ্যিক নলেজেরও ট্রেনিং দিচ্ছে। বাসায় রোজ নূরকে পড়াতে বসে সে। আদিত্য বুঝতে পেরেছে নূরকে যেখানে ওর মা বাবা চিকিৎসা করানোই জরুরী মনে করেনি সেখানে পড়ালেখারতো প্রশ্নই আসে না। তাই আদিত্য যতটুকু পারে নূরকে শিক্ষিত করার চেষ্টা করছে যাতে সমাজে চলার মতো হয় সে। তবে দুষ্টু নূরকে পড়াতে নিলে আদিত্যর নাজেহাল অবস্থা হয়ে যায়। কিছু শেখাতে গেলেই হাজারটা প্রশ্ন করে আদিত্যকে পাগল করে দেয়।এই যেমন,যদি বলা হয় অ-তে অজগরটি ওই আসছে তেড়ে। তখন শুরু হবে নূরের অদ্ভুত প্রশ্নের মালা। বলবে,”অজগরটি তেড়ে আসছে কেন?,খেয়ে ফেলবেতো আমাদের!, আমার অজগর ভয় করে,ওকে আসতে মানা করুন না! এই বই ভালো না,অজগর ওয়ালা বই পড়বো না আমি।” আদিত্য বুঝতে পারে মেয়েটা চরম পড়া চোর। তাইতো এসব তালবাহানা করে না পড়ার জন্য। তবুও আদিত্য ধৈর্য নিয়ে নূরকে পড়ায়। সে তার এঞ্জেলের মাঝে কোনো কমতি রাখতে চায়না।
আদিত্য অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে। দরজার বেল বাজাতেই কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে গেল।আদিত্য হাসিমুখে সামনে তাকাতেই কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ওর সামনে নূর দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজকের নূর একেবারেই ভিন্ন। নূর শাড়ি পড়েছে। যদিও এটাকে শাড়ি পড়া বললে শাড়িরই অপমান হবে। কারণ শাড়িটা এলোমেলো ভাবে কোনরকমে পেঁচিয়ে রেখেছে। তবে সবচেয়ে অবাক হলো যখন নূরের চোখে পানি দেখতে পেল সে। আদিত্য চিন্তিত মুখে নূরের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“এঞ্জেল! কাঁদছ কেন? কি হয়েছে? ”
নূর মুখে শাড়ির আঁচল চেপে দুঃখিনী নারীর মতো ভঙ্গি করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
“তুমি এসেছ ময়নার বাপ!”
টিভি সিরিয়ালের মতো তিনবার করে একই কথা বলল নূর।বেচারা আদিত্য টুস করে যেন আকাশ থেকে পড়ল যেন এইমাত্র। তব্দা খেয়ে গেল সে। ময়নার বাপ! লাইক সিরিয়াসলি! সে বাপ কবে হয়ে গেল! বিয়েইতো হলো শুক্কুরে শুক্কুরে আষ্টো দিন! বিনা ইন্টারনেট কানেকশনে আপলোড কিভাবে হয়ে গেল! আদিত্যর বিস্ময় আরও বাড়িয়ে দিয়ে নূর আরও নেকা কান্না করে বলে উঠল,
“তুমি এসেছ ময়নার বাপ! দেখোনা শাশুড়ী আম্মা আমাকে কত মেরেছে! রান্নায় লবণ কম হয়েছে বলে আমার হাত পুড়িয়ে দিয়েছে।”
বেচারা আদিত্যর জ্ঞান হারাবার জো। তার মা মারা গেছে এক যুগ আগে। তাহলে শাশুড়ী কোথা থেকে পেল নূর! আদিত্যের কেমন মাথা ঘুরছে। ভাবছে হয়তো নূরের মানুষিক সমস্যা বেড়েছে। আদিত্য নূরের গালে হাত রেখে চিন্তিত মুখে বলল,
“নূর সোনা, কি হয়েছে তোমার! কি বলছ এসব আবোলতাবোল! শরীর খারাপ করছে!”
নূর প্রতিত্তোরে দুঃখিনীর মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ তুমিতো এটাই চাও। আমি অসুস্থ হয়ে মরে যাই। আর তুমি আরেকটা বিয়ে করতে পারো।”
বলেই নূর টিভি সিরিয়ালের নায়িকাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে গিয়ে সৌফার উপর ঠাস করে গিয়ে পড়ল। সোফায় দুই হাত আছড়ে আছড়ে আরও বেশি দুঃখিনী ভঙ্গিতে বলল,
“মে তো লুট গায়ি, বর্বাদ হো গায়ি। নাহয় তোমার বাড়তি যৌতুকের টাকা এনে তোমায় দিতে পারিনি। তাই বলে তুমি আরেক বিয়ে করবে! একবারও ময়নার কথা ভাবলে না! আর ময়নার যে ভাই বোন আসতে চলেছে তার কথাও ভাবলে না! আরে আর কতো যৌতুক আনবো!যৌতুক আনতে আনতেতো আমার বাপের ভিটামাটি সব শেষ করে দিলাম। আর কতো চাও! ”
এবারতো হার্ট অ্যাটাক হয়েই গেল বুঝি আদিত্যের।বিস্ময়ে, বাকরুদ্ধ, হতবিহ্বল সে। আদিত্য আর যৌতুক! এটাও শোনার ছিলো তার! আর তার বউ একের পর বাচ্চা দিয়েই যাচ্ছে তাকে! মাথা ঘুরে পড়েই যাবে বুঝি এবার আদিত্য। তবে তার থেকেও বেশি আহত হলো আরেক ব্যাক্তি। সে হলো দ্য গ্রেট আবির। মাত্রই এসেছিল সে। নূরের ওসব কথা শুনে দুই হাতে দুই কান চেপে ধরে নূরের থেকেও বেশি মেলোড্রামাটিক টিভি সিরিয়ালের ভঙ্গিতে তিনবার করে বলল,
“নেহিইইই…!, নেহিই..!নেহিইই…..! এ আমি কি শুনলাম! এ কথা শেনার আগে আমার তিন নাম্বার গার্লফ্রেন্ড কেন মরে গেলনা! এটা হতে পারে না। বলে দাও এসব মিথ্যে। আদি তুই এমন জালিম,অত্যাচারী হবি আমি ভাবতেই পারিনি! ভাবির সাথে তুই এমন অত্যাচার করিস! ছিঃ ছিঃ ছিঃ! ভাবতেই কলিজায় ম্যালেরিয়া হয়ে যাচ্ছে আমার! কেমনে পারলি এই মাছুম মেয়েটার সাথে এমন অত্যাচার করতে! উপরওয়ালার ভয় কর আদি। ল্যাংটা এসেছিলি, ল্যাংটাই যেতে হবে। টাকা পয়সা কিচ্ছু সাথে যাবে না বুঝলি!”
আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“শাট আপ ইডিয়ট! নাহলে তোকে এখুনি উপর ওয়ালার কাছে পৌঁছে দেবো।”
আবির ন্যাকা স্বরে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ দে দে, ভাবির সাথে সাথে এখন আমার উপরও তোর নির্যাতন চালাবি! এই ছিলো তোর মনে! ♬ দোস্ত দোস্ত না রাহা,পিয়ার পিয়ার না রাহা….”
তখনই বিহান সেখানে এসে বলল,
“কি ওইতাচে এইহানে!”
আবির বলল,
“আর হচ্ছে না। হয়ে গেছে। এই আদি ময়নার বাপ হয়ে গেছে তা জানিস তুই! তারউপর নাকি ভাবিরে যৌতুকের জন্য নির্যাতন এই নির্দয়,জালিম আদি।”
বিহান বিস্ময়ের সুরে বলল,
“কছ কি মামা! আমগো আদি এইছব করছে!”
“তাহলে আর বলছি কি! ওই দেখ ভাবি কিভাবে তার নির্যাতনের শিকার হয়ে হয়ে কাঁদছে।”
এবার বিহানও আদিত্যর উপর অসন্তুষ্ট হয়ে বলল,
“ছিঃ ছিঃ আদি, তোর কাছে এমনডা আছা করি নাইক্কা। দিলে বহুত চোট পাইলাম।”
আবিরও সহমত পোষণ করে বলল,
“হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। এই পাষণ্ড, জালিমের কাছে আমরা আর এক মুহুর্তও ভাবিকে রাখবোনা।”
আবির নূরের কাছে গিয়ে বলল,
“ভাবি চলো তোমাকে আমরা নিয়ে যাবো। এই জালিমের সাথে তুমি আর এক মুহুর্তও থাকবে না। চলো এখান থেকে। তোমার ভাই এখনো বেঁচে আছে।”
নূর মাথা তুলে আবারও টিভি সিরিয়ালের মতো তিনবার করে বলল,
“কিহ? কিহ? কিহ?”
“হ্যাঁ ভাবি চলো। তোমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবো।”
নূর দুঃখিনী ভঙ্গিতে বলল,
“না ভাই, তা হয়না। স্বামী যেমনই হোক। মারুক, কাটুক তবুও তার পায়ের তলে পড়ে থাকাই টিভি সিরিয়ালের নায়িকাদের নিয়ম। আমিও তাই করবো।নাহলে টিভি সিরিয়াল, টিভি সিরিয়াল কিভাবে খেলব! ”
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলল,
“এক মিনিট! টিভি সিরিয়াল খেলব মানে!”
তখনই জমিলা এগিয়ে এসে বলল,।
“আরে মানে আমি বলছি। বউমনি সেই সকাল থেকে একটানা একদম চোখ গেড়ে দিয়ে টিভি সিরিয়াল দেখছিল। তারপর থেকেই বলছে সে টিভি সিরিয়াল খেলবে। তখন থেকেই এসব করছে সে।”
আদিত্য বেচারা হাফ ছেড়ে বাঁচল। যাক তাহলে এসব তার দুষ্টু পরিটার খেলা ছিলো। নূর তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলল,
“আরে হ্যাঁ খেলছিলামইতো। অনেক মজা হচ্ছিল। আরেকটু খেলি? ”
আদিত্য এবার সরু চোখে আবির আর বিহানের দিকে তাকালো। আবির ফিচেল হেঁসে বলল,
“আরে আমিতো জানতামই ভাবি খেলা করছে। তাই আমিও একটু মজা করছিলাম। তাছাড়া কি আমি সত্যি সত্যিই তোকে ওসব বলতে পারি নাকি! তুইতো আমার একমাত্র কলিজার,ফুসফুস ওয়ালা দোস্ত, হে হে..”
বিহানও একইভাবে বলল,
“আরে হ আমিওতো মজাই করতাছিলাম মাইরি।”
আদিত্য স্মিথ হেঁসে মাথা দুইদিকে নাড়াল। ওর বাড়িটা যেন পুরো সার্কাস হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে। নূরের সাথে সাথে এই দুটোও যোগ দিয়েছে।রোজ নতুন নতুন ড্রামা খুলে বসে থাকে এরা। তবে এতে অখুশি না আদিত্য। বরং খুশি সে। তার এই মৃত বাড়িটা এখন প্রাণবন্ত মনে হয়। এসবকিছু হয়েছে শুধুমাত্র তার এঞ্জেলের কারণে। আদিত্য নূরের কাছে এগিয়ে গেল। গালে হাত রেখে বলল,
“আজকের জন্য অনেক খেলা হয়ে গেছে। এখন চলো, পড়তে বসতে হবে।”
নূর বাচ্চাদের মতো করে বলল,
“আমার পড়তে ভালো লাগে না। আরেকটু খেলা করি না!”
“দেখ এমন করলে কিন্তু তুমি পঁচা মেয়ে হয়ে যাবে। তুমি কি পঁচা মেয়ে হতে চাও!”
“না। ”
“তাহলে আমার কথা শোনো। চলো এখন৷ পড়াশোনা শেষ করে আবার খেল।”
আবির বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ ভাবি পড়াশোনা শেষ করে এসো। তারপর আমরা অনেক মজা করবো।”
“আচ্ছা।”
আদিত্য নূরের হাত ধরে উপরে নিয়ে গেল।
___
পরদিন বিকাল বেলা বিড়াল ছানা হাতে নিয়ে বাইরে হাঁটতে বের হলো নূর৷ তখনই আদিত্যও গাড়ি নিয়ে ফিরল বাসায়। গাড়ি থেকে নেমে নূরকে দেখে গাড়ি আর লক না করেই এগিয়ে গেল তার কাছে। নূরের কাছে এসে মুচকি হেঁসে বলল,
“কি করছে আমার এঞ্জেল টা!”
নূরও মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলল,
“এইযে রিমিকে হাঁটাতে নিয়ে এসেছি। ঘরে বসে বসে অলস হয়ে যাচ্ছে ও।”
“আচ্ছা তাই!”
তখনই আদিত্যর একটা অফিসিয়াল ইম্পর্ট্যান্ট ফোন এলো। ফোনে কথা বলে আদিত্য জানল একটা জরুরী মেইল পাঠাতে হবে।আদিত্য নূরের উদ্দেশ্যে বলল,
“তুমি খেলা করো এঞ্জেল, আমি এখুনি আসছি।”
নূর ঘাড় কাত করে বলল,
“আচ্ছা।”
আদিত্য ভেতরে যেতেই নূরে চোখ পড়ল আদিত্যর রেখে আসা দরজা খোলা গাড়িটার দিকে। উৎসুক জাগল তার মনে। সে উৎসুক চোখে তাকিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল গাড়ির দিকে। নূর একসময় গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। চোখ পিটপিট করে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো গাড়ির ড্রাইভিং সিটের দিকে। সে অনেকবার হিরোকে এখানে বসে এই মেশিনটা ঘুরিয়ে গাড়ি চালাতে দেখেছে। তারও খুব ইচ্ছে ভ্রুম ভ্রুম করে গাড়ি চালানোর। আজকে সে’ও গাড়ি চালাবে। অনেক মজা হবে৷ নূর বিড়াল ছানাটাকে নিচে নামিয়ে রেখে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসলো। গাড়ির স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মুখে ভ্রুম ভ্রুম শব্দ করতে লাগল নূর। কিন্তু গাড়িতো সেভাবে চলছে না যেভাবে হিরো চালায়৷ নূরের মজা হচ্ছে না। নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে নানান বাটনে টিপতে লাগল। এভাবে একসময় চাপ লেগে গাড়ির ইঞ্জিন চালু হয়ে গেল। গাড়ি এগুতে লাগল সামনের দিকে। এবার নূরের মজা লাগছে। নূর স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খেলতে লাগল। মজা পেয়ে হাসছে সে। গাড়ি লনের মাঝে এলোমেলো ঘুরছে শুধু। বিষয়টা দেখে গার্ডগুলোর খটকা লাগল। তারা ভালো করে খেয়াল করে দেখল গাড়িতে নূর বসে আছে। এটা দেখে ঘাবড়ে গেল। বুঝতে পারল কতবড় দূর্ঘটনা হতে চলেছে। তারা জোরে জোরে “ম্যাডাম ম্যাডাম” বলে ডাকতে লাগল। কিন্তু নূর তার মতো গাড়ি নিয়ে খেলেই যাচ্ছে। গার্ডরা সিচুয়েশন কন্ট্রোল করতে না পেরে এবার জোরে জোরে আদিত্যকে ডাকতে লাগল। আদিত্য স্টাডি রুমের কম্পিউটার থেকে মেইল পাঠাচ্ছিল। বাইরে থেকে হৈচৈ-এর আওয়াজ শুনে ভ্রু কুঁচকে আসে তার। কি হয়েছে দেখতে বাইরে বেড়িয়ে আসে সে। এবং বাইরে এসে যা দেখে তাতে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায় তার। মুহুর্তের মাঝে থমকে যায় যেন তার পৃথিবী।চোখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র আতঙ্ক। তার প্রাণভোমরার সাথে বড় রকমের দূর্ঘটনা হওয়ার আতঙ্ক। যে আতঙ্কে আদিত্যর অন্তর আত্মা কাঁপছে। আদিত্য দেখল নূরের গাড়ি সামনের সুইমিং পুলের দিকে এগুচ্ছে। আরেকটু এগুলেই গাড়ি পুলের মাঝে পড়ে যাবে। আদিত্য পাগলের মতো ছুটল গাড়ির দিকে। নূর তখনও আপন মন খুশিমতো গাড়ি চালানোর মজা নিচ্ছিল। আদিত্য নূরের গাড়ি থামাতে দৌড়ে ছুটল তার কাছে।চিল্লিয়ে ডাকতে লাগল নূরকে,
“নূরর….একি করেছ তুমি! গাড়ি বন্ধ কর। ওইযে ওই লাল বাটনটা চাপ দাও।”
কিন্তু নূর গাড়ির ভেতর থেকে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। আদিত্য নূরের গাড়ি থামাতে ওর গাড়ির কাছে আসতে চাইল। কিন্তু নূর এলোমেলো ভাবে স্টেয়ারিং ঘুরানোতে ঠিকমত যেতেও পারছেনা গাড়ির কাছে। বিহানও ততক্ষণে চলে এসেছে। সে’ও এসব দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গেল। আদিত্য-নূর দুজনের জন্যই চিন্তা হচ্ছে। কারণ আদিত্য নূরকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে গাড়ির সামনে চলে গেছে। বিহানও কোনোভাবে চেষ্টা করছে গাড়িকে থামানোর। কিন্তু এমুহূর্তে ভেতর থেকে ছাড়া গাড়ি বন্ধ করা যাবে না। আদিত্য গাড়ি ধরতে যাচ্ছে।কিন্তু নূরের এলোমেলো স্টেয়ারিং ঘুরানোতে সে ধরতে গিয়েও বারবার মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছে। পড়ে হাতে পায়ে অনেক জায়গায় ব্যাথা পেয়ে ছিলেও যাচ্ছে। তবে তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই আদিত্যের। তার জানতো আঁটকে আছে নূরের মাঝে। যে করে হোক নূরকে বাঁচাতে হবে তাকে। নাহলে যে সে নিঃস্ব হয়ে যাবে। নূরের কিছু হয়ে গেলে বাঁচবে কি করে সে! নিজের উপর তীব্র রাগ হচ্ছে তার। এতটা যে, নিজেকে গুলি করে দিতে ইচ্ছে করছে। সে কিভাবে এতটা বেখেয়ালি হয়ে গেল! গাড়ি লক করে আসলে এমনটা হতোনা৷ তার জানটা আজ এভাবে ভয়ংকর অবস্থায় পৌঁছাত না।গাড়ি প্রায় পুলের কাছে চলে এসেছে। আদিত্যর হৃদপিণ্ড চিপে আসছে তার প্রাণভোমরার কিছু হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আদিত্য এবার সুযোগ বুঝে লাফ দিলো গাড়ির উপর। গাড়ির ছাঁদে উঠে সজোরে ঘুষি মেরে গাড়ির দরজার কাচ ভাঙল। তাতে হাতও কেটে গেল তার। কাচ ভেঙে গাড়ির ভেতর হাত ঢুকিয়ে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ করল। গাড়িও বন্ধ হতেই দেহে প্রাণ ফিরে পাওয়ার মতো নিঃশ্বাস ছাড়ল আদিত্য। গাড়ির উপরই মাথা ঠেকিয়ে দম ছাড়ল সে। আত্মাটা যেন গলায় আঁটকে গিয়েছিল তার। হঠাৎ রাগ হলো ভীষণ। আদিত্য গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা খুলে নূরের হাত টেনে বের করল গাড়ি থেকে। আদিত্যর ওভাবে কাচ ভাঙায় নূর এমনিই ভয়ে চুপসে আছে।তারউপর আদিত্য নূরকে বের করে রাগে তার দিকে হাত তুলতে নিলো। ভয়ে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে আরও ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল নূর।রাগের বশে হাত তুললেও সে হাত নূরের গায়ে পড়লনা।হাত মুষ্টি করে রাগে গাড়ির ভাঙা কাচে আবারও ঘুষি মারল আদিত্য। রাগী সুরে ধমকে উঠে বলল,
“পাগল হয়ে গেছ তুমি! কি করছিলে এসব হ্যাঁ! সবকিছু তোমার কাছে খেলা! এখন কি হতে পারত তুমি জানো ইডিয়ট!”
বিহান সেখানে দৌড়ে এসে আদিত্যকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে বলল,
“শান্ত হ আদি। ভাবি কি আর এসব বুঝে! ”
“কেন বুঝবে না! কেন বুঝবে না ওর কিছু হয়ে গেলে কি করতাম আমি!”
“আচ্ছা, শান্ত হ। ভাবি ভয় পাইতাছে দেহছ না!”
বিহান জমিলাকে ইশারায় নূরকে নিয়ে যেতে বলল। জমিলা এসে নিয়ে গেল নূরকে। বিহান আদিত্যর হাতের অবস্থা দেখে জলদি ফাস্ট এইড বক্স এনে ওর হাত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। কিছুক্ষণ পর যখন একটু শান্ত হলো তখন তীব্র অপরাধবোধ জাগল তার। তখন চিন্তার মাথায় নূরকে কিভাবে বকে দিলো সে! ভুলতো ওর নিজের ছিলো। গাড়ি খোলা না রাখলে তো আর এসব হতোনা৷ তাহলে শুধু শুধু এঞ্জেলটাকে ওভাবে রাগ দেখালাম। কিভাবে ভুলে গেলাম ও’তো আর দুটো মানুষের মতো স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার না। মেয়েটা নিশ্চয় ভয় পেয়ে গেছে। এত কষ্ট করেতো ওর মন থেকে নিজের জন্য ভয় সরিয়ে ছিলাম। আজ আবারও একই কাজ করলাম আমি। নূর যদি আবারও ওর থেকে দূরত্ব করে ফেলে তাহলে কি করবে ও! এখন যে আর ওই দূরত্ব আর নিতে পারবেনা সে। আদিত্য দ্রুত পায়ে উঠে বাসার ভেতর গেল। নিজের রুমে এসে নূরকে পেলনা সে। ভাবলো হয়তো জমিলার রুমে আছে। কিন্তু সেখানে এসেও পেলনা। আদিত্য জোরে জোরে জমিলাকে ডেকে জানতে চাইল নূর কোথায়। জমিলা বলল,
“আমিতো বউমনিরে রুমে বসিয়ে রেখে তার জন্য দুধ আনতে গেছিলাম। কেন সে রুমে নেই?”
আবারও ভয় জমলো আদিত্যর মনে। সে’কি তার কঠোরতায় নূরকে হারিয়ে ফেলল! না না,নূরকে সে হারাতে দিবেনা। কিছুতেই না। নূর এখানেই কোথাও আছে। বাইরে যেহেতু যায়নি তাহলে ভেতরেই কোথাও আছে। আদিত্য পাগলের মতো হন্যে হয়ে সারাবাড়ি খুঁজতে লাগল। খুঁজতে খুঁজতে একসময় ছাঁদে এলো সে। ছাঁদের মাঝামাঝি আসতেই গুনগুন করে ফোঁপানোর শব্দ শুনতে পেল সে। শব্দের উৎস খুঁজতে গিয়ে দেখল নূর ছাঁদের ছোট্ট ঘরটার পেছন সাইডে দেয়াল ঘেঁষে বসে আছে। নাক টেনে টেনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সে। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখ নাক মুছছে আবার কাঁদছে। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যর অপরাধবোধ যেন তীব্র থেকে তীব্রতর হলো৷ চোখে করুন মায়া ভেসে উঠল। নূর তখনও আদিত্যকে দেখেনি। নূর ওর পুতুলটাকে হাতে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় করুন সুরে বলছে,
“জানিস টুকি, আমাকে কেউ ভালোবাসে না। সবাই বকে, সবাই মারে। পাগলতো তাই।মা বলে আমি পয়দা হতেই কেন মরে গেলাম না। বাবা বলে,আমি নাকি তাদের আপদ। বোনেরাও বকাঝকা করে, মারে। আজতো হিরোও আমাকে পাগল বলল। অনেক বকেছে। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে। হিরোও সবার মতো পাগল বলল আমাকে। আমাকে কেউ পছন্দ করে না। আমি আর থাকবোনা এখানে। আমি আর তুই সবার থেকে দূরে কোথাও চলে যাবো। অনেক দূরে।”
আদিত্যর দুচোখে নোনাজলে ভরে উঠল। বুকের মাঝে দুমড়েমুচড়ে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে যেন। চেহারা হলো আরও করুন। সে আজ তার এঞ্জেলটাকে এত কষ্ট দিয়ে ফেলেছে যে নূর ওকে ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছে! বাকিদের সে’ও কষ্ট দিয়ে ফেলল নূরকে। এই অপরাধে নিজেকে সহস্র ছু,রিকাঘাতে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে মন চাচ্ছে। কিভাবে কাঁদছে ওর কলিজাটা!
আদিত্য এগিয়ে গেল নূরের সামনে। আদিত্যকে দেখেই নূর ভয়ে আরও সিটকে জড়োসড়ো হয়ে গেল দেয়ালের সাথে। তা দেখে যেন আদিত্যর আরও কষ্ট হচ্ছে। আদিত্য নূরের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে দুই হাতে দুই কান ধরে করুন অপরাধী গলায় বলল,
“আম সরি এঞ্জেল। ভুল হয়ে গেছে আমার। অনেক বড় ভুল। আমার এঞ্জেলটাকে আমি বকে দিয়েছি।তখন তোমাকে ওভাবে দেখে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ এক্সিডেন্ট হয়ে যেত। তুমি অনেক ব্যাথা পেতে।তোমার কিছু হয়ে গেলে কি করতাম আমি! তাই তোমাকে তখন বকে দিয়েছি। তুমি আমাকে মারো। যতক্ষণ খুশি মারো। আমি কিচ্ছু বলবোনা। তবুও আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার কথা বলোনা। তুমি ছাড়া যে কেউ নেই আমার। ”
নূরের ভয় কমলো। চোখে মুখে যেন কোমলতা এলো আদিত্যের কথায়। হঠাৎ তার চোখে পড়ল আদিত্যর হাতে ব্যান্ডেজ। নূর মুহূর্তে যেন সব ভুলে আদিত্যর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে চিন্তাগ্রস্ত কন্ঠে বলল,
“তোমার হাত কেটেছে! ব্যাথা লাগছে বুঝি! অনেক ব্যাথা! কেঁদোনা হ্যাঁ, আমি তোমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবো। আল্লাহ তোমার ব্যাথা ঠিক করে দিবে।”
আদিত্য তৎক্ষনাৎ ঝট টেনে বুকের মাঝে শক্ত করে গেঁথে নিলো নূরকে। যাকে সে এত কষ্ট দিলো এখন সেই ওরজন্য দোয়া চাইছে। এই অমূল্য রত্ন কোথায় পাবে সে! আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে সারামুখে অসংখ্য চুমুয় চুমুয় ভরিয়ে দিলো। তারপর আবারও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো তাকে৷ যেন কলিজার মাঝে ঢুকিয়ে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছে। শক্ত করে বুকের মাঝে মিশিয়ে নিয়ে ধরা গলায় আদিত্য বলল,
“আমাকে ছেড়ে কখনো যাসনা পাখি। তুই আমার নিঃশ্বাসের মূল্যে কেনা সম্পদ। তোকে ছাড়া নিঃশ্বাস যে চলবেনা আমার!”
চলবে…..
#মরুর_বুকে_বৃষ্টি ( S-2)
পর্ব-১১
®মেহরুমা নূর
★আদিত্য আজ অফিস থেকে ফিরছেনা। রোজ যে সময় আসে তার অনেক বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে তবুও আদিত্য আসছেনা। নূর সেই কখন থেকে তার অপেক্ষা করছে কিন্তু আদিত্য না আসায় সে ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে। অতিবাহিত গত দুই মাসে নূর আদিত্যর প্রতি অনেক বেশিই বশীভূত হয়ে পড়েছে। আদিত্য ছাড়া কিছুই বোঝেনা সে। কিছুই ভালো লাগেনা তার। হবেই না বা কেন! সবার কাছে অবহেলিত নূর যে আদিত্যর কাছে রাজরানী। এত ভালোবাসা,আদর-যত্ন কখনো পায়নি সে। সেই মানুষটার প্রতি আসক্ত না হয়ে থাকেই বা কি করে। নূরও পারেনি। তার অবচেতন মনের সবটা জুড়ে এখন আদিত্যর বসবাস। অবুঝ নূর প্রণয় বোঝে না। সে জানে না এই অনুভূতির নাম কি। কিভাবে এর বহিঃপ্রকাশ করতে হয়।শুধু জানে আদিত্য ছাড়া তার চলে না। তাকে থাকতে তার ভালো লাগে না। আদিত্যের আসার সময় হলেই সে দরজা খুলে বসে অপেক্ষা করে তারজন্য। আদিত্যর গাড়ি আসা দেখলেই হাসি ফোটে তার মুখে। আদিত্য গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই ছুটে দৌড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে তার বুকে। দুই হাতে আদিত্যর গলা পেঁচিয়ে জড়িয়ে ধরে তাকে। আদিত্যও সানন্দে তার এঞ্জেলকে জড়িয়ে নেয়। দুই হাতে নূরের কোমড় পেঁচিয়ে ধরে তাকে শূন্যে তুলে গোলগোল ঘুরাতে থাকে।খিলখিলিয়ে প্রাণখোলা হাসির ঝর্ণা ঝড়ায় তখন নূর। যে হাসিতে ঝলমলে হয় আদিত্যর রাজ্য। তবে তা হচ্ছে না। নূর সেই কখন থেকে বসে আদিত্যের পথ চেয়ে। বিকাল থেকে বসে থাকতে থাকতে রাত হয়ে গেল। তাও আসছে না তার হিরো। নূর ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে।আদিত্যর কিনে দেওয়া ফোনে অনেকবার ফোনও দিয়েছে। এতদিনে সে শিখে গেছে কিভাবে ফোন দিতে হয়। কিন্তু আদিত্য এই প্রথম নূরের ফোন ধরছে না। এতে যেন নূর আরও অস্থির হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো ভাবে তার হিরো চাই এখন। ধীরে ধীরে নূরের অস্থিরতা বাড়ছে। সাথে যুক্ত হচ্ছে এবার কান্নাও । নূর নাক টেনে টেনে ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদছে আর বলছে,
“হিরোওও..আসো না! আসছ না কেন? আমার হিরোকে এনে দাও।”
জমিলা এসে অনেক বার বুঝিয়ে নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু নূর যাচ্ছে না। ওভাবেই বসে থেকে কাঁদছে আর আদিত্যর কথা বলছে। ধীরে ধীরে কেমন হাইপার হয়ে যাচ্ছে সে। এমন সময় আবির এলো সেখানে। নূরের এই অবস্থা দেখে দ্রুত তার কাছে গিয়ে চিন্তিত মুখে বলল,
“আরে আমার সুইট ভাবি কাঁদছ কেন? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে? শুধু নাম বলো একবার,দেখ এই আবির তার কি হাল করে! গাধার উপর উল্টো লটকিয়ে উগান্ডায় না পাঠিয়েছিতো আমার নামও দ্য লেডি কিলার আবির না। বলো কে কি বলেছে?”
নূর কাঁন্নার সুর ধরে টেনে বলল,
“হিরোওওওও….”
আবির বলল,
“জানতাম, এই আদি বজ্জাতের কাদিই দায়ি তোমার কান্নার পিছনে। আজতো এই আদিকে ছাড়বোনা আমি। আজ ওর একদিন কি আমার পরের জনম। কারণ একজনমেতো আর ওই বাহুবালিকে কিছু করতে পারবোনা।”
আবিরের বকবকানি শুনে নূর আরও জোরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“হিরো আসে না কেন? হিরো চাই আমার। হিরো এনে দাও। ”
“আসেনি মানে! আদি এখনো আসেনি?”
জমিলা তখন এগিয়ে এসে বলল,
“না আসেনি এখনো। বউমনি তখন অস্থির হয়ে কেঁদে যাচ্ছে। কিছুতেই থামছে না। আপনিই কিছু করেন আবির বাবা।”
আবির বলল,
“আচ্ছা আমি ফোন দিয়ে দেখছি।”
আবির ফোন লাগাল আদিত্যর নাম্বারে। তবে ফোন বন্ধ আসছে।এমনকি বিহানের নাম্বারও বন্ধ আসছে। এবার আবিরও সত্যি সত্যিই চিন্তায় পড়ে গেল। আদিত্য সবসময় রিস্ক-এর মাঝে থাকে। শত্রুর অভাব নেই তার৷ সেদিন বিহানের কাছে শুনেছিল এসআর গ্রুপের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে অনেক বার।কারণ সব বিদেশি ডিলগুলো আদিত্যর হাতে আসে।কারণ আদিত্যর ক্ষমতার সামনে অন্য দল পেরে ওঠে না।আর তাতেই তাদের রাগ।এই রাগের জেরে আদিত্যর উপর প্রাণঘাতী হামলাও করার চেষ্টা করেছে অনেক বার। যদিও তা বিফলে গেছে। কিন্তু শত্রু সফল না হওয়া পর্যন্ত চেষ্টা ছাড়ে না।
সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে নূরের অবস্থা আরও বেহাল হতে লাগল। কিছুতেই তাকে সামলানো যাচ্ছে না। আবির ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ল। এভাবে চলতে থাকলে নূর জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। আবির আপাতত নূরকে শান্ত করার জন্য বলল,
“আচ্ছা ভাবি কেঁদো না। চলো আমি তোমাকে তোমার হিরোর কাছে নিয়ে যাচ্ছি।”
এবার একটু কান্নার সুর কমলো নূরের। সে তৎক্ষনাৎ বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ চলো,হিরোর কাছে যাবো আমি।”
“আচ্ছা চলো। আগে কান্না থামাও।”
আবির নিজের গাড়িতে নূরকে নিয়ে আদিত্যর অফিসের উদ্দেশ্যে বের হলো। যদিও জানে না অফিসে আদৌও আদিত্যকে পাওয়া যাবে কিনা। তবে নূরকে শান্ত করার আর কোনো উপায় মাথায় আসছে না আপাতত। তাই এখন এটাই একমাত্র উপায়। গাড়িতে যেতে যেতে আবির নূরকে স্বাভাবিক রাখতে বলল,
“এই স্বামীরা এমনই হয় বুঝেছ ভাবি৷ স্বামীদের টাইট দিয়ে রাখতে হয়। নাহলে একটু ঢিলা পেলেই হাত থেকে ছুটে যায় বুঝলে! আজকে পেলে একেবারে টাইট দিয়ে রাখবে। যাতে আর ঢিল না পায়।”
নূর কি বুঝল কে জানে। সে বিস্ময়কর চোখ করে বলল,
“ওও…তাই বুঝি!”
“আর বলছি কি তাহলে! বুদ্ধিমান বউদের আসল কাজই এটা। আমার কথা মনে রাখবে বুঝেছ।”
“আচ্ছা।”
মিনিট ত্রিশের পর আদিত্যর অফিস এসে পৌঁছাল ওরা। আবির নূরকে নিয়ে অফিসের ভেতর ঢুকল। ভেতরে রিসিপশনের মেয়েটির কাছে গিয়ে বাঁকা হেঁসে বলল,
“হেই বিউটিফুল, টেল মি আদি ভেতরে আছে?”
মেয়েটি জবাবে বলল,
“জি স্যার আছে। তবে এখন তার কাছে যাওয়া যাবে না। স্যারের একটা ইম্পর্ট্যান্ট সিক্রেট মিটিং চলছে। কাউকে সেখানে যেতে বা ডাকতে নিষেধ করেছে।”
আবির রিসিপশন ডেস্কের উপর হাত রেখে মেয়েটির দিকে ঝুঁকে ফ্লার্টি ভঙ্গিতে বলল,
“আই লাইক সিক্রেট মিটিং। আই থিংক তোমার আমারও সিক্রেট মিটিং করা উচিত। ইটস ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট ইউ নো! ইটস গুড ফর হেল্থ অলসো।এতে সিঙ্গেলেরিয়া রোগ সেরে যায়।আর বেশি বেশি সিক্রেট মিটিং করলে শরীরে ভিটামিন-এর ঘাটতিও পূরণ হয়ে যায়।”
আবিরের ফ্লার্টিং-এর মাঝে নূর পেছন থেকে ভেতরের দিকে চলে যায়। কিছুদূর এগুতেই আদিত্যকে দেখতে পেল সে। কাচের দেয়ালে ঘেরা রুমটার ভেতরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে কথা বলছে সে। তাকে দেখেই নূরের ঠোঁটে যেন কাঙ্খিত হাসি ফুটল। নূর দিকবিদিক না দেখে ছুটল আদিত্যের কাছে। দৌড়ে ছুটে গিয়ে দরজা ঢেলে ভেতরে ঢুকে কোনকিছু না ভেবে সোজা গিয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরল। দুই হাত আদিত্যর পিঠে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে কাঁদো কাঁদো গলায় নূর বলল,
“তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে হিরো? আসছিলে না কেন বাসায়? আমি সেই কখন থেকে তোমার অপেক্ষা করছিলাম। তুমি আসোনা কেন? নূরের কষ্ট হচ্ছিল। অনেক কষ্ট।”
আদিত্য মিটিংএ ছিলো। সামনেই মিটিংএর সব মানুষ বসে আছে। এমত অবস্থায় নূর এভাবে হুট করে চলে আসায় আদিত্য প্রথমে অনেকটাই অবাক হয়ে যায়৷ মিটিংএর লোকগুলোও হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ওদের দিকে।বিহানও একটু থতমত খেয়ে গেল। তবে আদিত্য বুঝল নূর ওকে না পেয়ে অস্থির হয়ে গেছে। তাই এখন তার নূর ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় নেই। আদিত্য নূরকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে মিটিংয়ের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“সরি জেন্টেল ম্যানস, দ্য মিটিং ইজ ওভার নাউ।”
বলেই আদিত্য নূরকে নিয়ে মিটিং রুম থেকে বেড়িয়ে গেল। বিহান সিচুয়েশন বুঝে সবাইকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করল। আদিত্য নূরকে নিয়ে নিজের কেবিনে এলো। নূর তখনও আদিত্যকে শক্ত করে ধরেই আছে। আর ফুঁপিয়ে যাচ্ছে। আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা সামনে ধরে আদুরে গলায় বলল,
“এই এঞ্জেল সোনা, কাঁদছ কেন! এই দেখ আমি এখানেই আছি। তোমার কাছে।”
নূর নাক টেনে বাচ্চাদের মতো ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,
“তুমি আসোনি কেন? নূরের কষ্ট হচ্ছিলতো। এত্তগুলা কষ্ট হচ্ছিল। এইযে এখানটায় ব্যাথা হচ্ছিল অনেক।”
আদিত্য মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নূরের মুখপানে। তার এঞ্জেল তাকে ফিল করতে শুরু করেছে। তাকে না পেয়ে ব্যাকুল হচ্ছে। এ যেন পরম প্রাপ্তির সমাহার আদিত্যর জীবনের। আদিত্য ক্রন্দনরত নূরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে প্রাপ্তিময় হেঁসে বলল,
“তাই! আমাকে না পেয়ে কষ্ট হচ্ছিল তোমার?”
“হ্যাঁ হচ্ছিলতো। অনে…..ক, ওইযে মগনলালের ইয়া বড় ভুড়িওয়ালা পেটের চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছিল।”
হাসলো আদিত্য। তার এঞ্জেলটা সত্যিই যাদুর কাঠি। মুহূর্তেই তাকে খুশিতে ভরিয়ে দেয়। এইযে এতক্ষণ টেনশনে ছিলো। তার শত্রুপক্ষ তাদের ক্ষতি করার জন্য নতুন নতুন চাল চালছে। আদিত্যর বিজনেসের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এসব নিয়েই মিটিং চলছিল। আদিত্যর বিশ্বস্ত পার্টনারদের সাথে সিক্রেট মিটিং চলছিল।একারণেই সেফটির উদ্দেশ্যে ফোনও বন্ধ ছিল সবার। তবে নূর আসতেই তার সব টেনশন যেন মুহুর্তেই গায়েব হয়ে গেছে। এখন তার মন মস্তিষ্ক জুড়ে খুশিময় প্রশান্তির ছায়া। আদিত্য নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে ওর কেবিনের নিজের আসনে বসিয়ে দিলো। তারপর নিজে নূরের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসল। নূরের দুই হাত নিজের হাতের মাঝে নিয়ে চুমু খেল তাতে৷ নূরের দুই হাত নিজের দুই গালে চেপে রেখে আদুরে অপরাধী সুরে বলল,
“হিরোর অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। হিরো অনেক গুলো সরি এঞ্জেল। আর কখনো এমন ভুল হবে না। কখনো আমার এঞ্জেলকে কষ্ট দিবোনা। এবার কান্না বন্ধ করো প্লিজ। তাহলে একটা যাদু দেখাবো তোমাকে।”
নূর এবার চোখ বড় বড় করে কৌতুহলী কন্ঠে বলল,
“যাদু! কি যাদু বলোনা!”
“এখুনি দেখাচ্ছি।”
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে ওর গদি চেয়ারটা জোরে একটু ঠেলা দিলো। সাথে সাথেই চেয়ারটা গোলগোল ঘুরতে লাগল। তা দেখে বিস্ময়ে আনন্দিত হয়ে গেল নূর। আদিত্য বারবার ঘুরাতে লাগল। আর নূর বিস্ময়ের আনন্দে খিলখিল করে হাসির ঝর্ণা ঝড়াতে লাগল। খুব উপভোগ করছে সে এই যাদুটা। তার হাসির ঝর্ণাধারায় ভিজছে আদিত্যর হৃদয় রাজ্য। মুখ নামিয়ে এক হাত নূরের কানের নিচে রেখে তার কপালে পরম ভালোবাসাময় চুমু খেয়ে বলল,
“আমার যাদুর ময়না পাখিটা।”
হঠাৎ দরজায় কড়া পড়ল। আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“কাম ইন।”
দরজা ঢেলে ভেতরে এলো অফিসের এক ফিমেল কর্মচারী। আদিত্যর উদ্দেশ্যে বলল,
“স্যার, এই ফাইলে আপনার সিগনেচার লাগত। এটা হলেই মেইল সাবমিট করে আমি চলে যেতে পারতাম।”
“ওকে, আনুন।”
মেয়েটি এগিয়ে গিয়ে আদিত্যকে ফাইল দিলো। আদিত্য ফাইল চেক করছে আর ফাঁকে ফাঁকে নূরকে দেখছে। নূর আপন মনে চেয়ারে ঘুরছে।”
আদিত্য ফাইল দেখা শেষে সিগনেচার করে মেয়েটিকে দিয়ে বলল,
“নিন,সময় অনেক হয়ে গেছে। আপনি এখন বাসায় যেতে পারেন।”
“ওকে স্যার।”
মেয়েটি ফিরে যাওয়ার জন্য ঘুরে দাঁড়াতেই ফ্লোরের কার্পেটের সাথে তার হিল বেঝে গিয়ে পড়ে যেতে নিলো সে। আচমকা এমন হওয়ায় মানবিকতার মনোভাবে আদিত্য মেয়েটিকে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচাতে তার দুই কাঁধের পেছনে হাত ঠেকিয়ে তাকে বাঁচাল। মেয়েটিকে দাঁড় করিয়ে বলল,
“ইউ ওকে?”
“জি স্যার, সরি.. ”
“ইটস ওকে।”
মেয়েটি চলে যেতে চাইলে আরেক সমস্যা হলো। মেয়েটির কিছু চুল আদিত্যর শার্টের বোতামের সাথে পেঁচিয়ে গেছে। যার দরুন চুলে টান লেগে আবারও আদিত্যর দিকে আসতে হলো তাকে।দ্রুত ভয়ে ভয়ে আদিত্যর বোতাম থেকে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করল সে। এতে মেয়েটাকে আদিত্যর অনেকটা কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে। আদিত্য কিছুটা অস্বস্তি আর বিরক্তিও বোধ করছে। কিন্তু মেয়েটাকে কিছু বলা রুড হবে বলে বলছে না। কারণ মেয়েটা ইচ্চাকৃত তো আর কিছু করেনি। চুল খুব বাজে ভাবে পেঁচিয়ে গেছে। মেয়েটাকে আদিত্যর বুকের উপর ঝুঁকে তা ছাড়াতে হচ্ছে।
নূর নিজের মতোই চেয়ার ঘোরার মজা নিচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎই তার নজর যায় আদিত্যর দিকে। পেছন থেকে দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটি আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে আছে। নূরের কেমন যেন লাগল হঠাৎ। এই চেয়ারের ঘোরা আর মজা লাগল না মোটেও। তার ভেতর হঠাৎই কেমন রাগের উৎপত্তি ঘটল।অবুঝ নূর এই রাগের কারণ জানে না।শুধু জানে মেয়েটিকে তার হিরোর সাথে দেখে ভীষণ পরিমাণ রাগ হচ্ছে তার। জ্বলনও হচ্ছে তার। সে কেন তার হিরোকে ধরল! এটাতেই তার যত রাগ।মেয়েটা চুল ছাড়িয়ে নিয়েছে প্রায়।তখনই নূর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। তেড়ে ওদের সামনে গিয়ে দুই হাতে সজোরে ধাক্কা দিয়ে মেয়েটিকে ফেলে দিলো। আচমকা এমন কান্ডে আদিত্য আর মেয়েটি দুজনেই হতভম্ব। মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে নূর আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মেয়েটির দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে বাচ্চাদের মতো রাগী সুরে বলল,
“আমার হিরোকে ধরলে কেন? পঁচা মেয়ে! একদম আমার হিরোকে ধরবে না। আমার হিরোকে শুধু আমি ধরবো। হিরো শুধু আমার হিরো। যাও এখান থেকে, পঁচা মেয়ে।”
আদিত্যের হৃদয়, মনে যেন এক প্রবল প্রাপ্তির আলোড়ন সৃষ্টি করল।কারণ সে বুঝতে পারল নূর জেলাস ফিল করছে। অন্য মেয়েকে তার পাশে সহ্য করতে পারছেনা। তারমানে নূরের অবুঝ মন তাকে নিজের করে নিয়েছে। এ যেন জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি আদিত্যর। এত খুশি কিভাবে সামলাবে সে! আপাতত নিজেকে সামলিয়ে আদিত্য মেয়েটির উদ্দেশ্যে বলল,
“সরি মিস কনা, ও আসলে একটু অবুঝ। কিছু মনে করবেন না।”
কনা মুচকি হেঁসে বলল,
“ইটস ওকে স্যার, আমি বুঝতে পেরেছি।”
কনা যেতে যেতে একবার পেছনে তাকিয়ে আবারও দেখল ওদের। ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে।এভাবেই ভালো থাকুক ভালোবাসা গুলো।
কনা যেতেই আদিত্য আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিলো নূরকে বুকের পিঞ্জিরায়। নিজেকে আজ সার্থক মনে হচ্ছে। সর্বসুখী সে। কারণ তার কাছে তার এঞ্জেল আছে যে। আদিত্য খুশিতে নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিয়ে গোল গোল ঘোরাতে লাগল আর হাসতে লাগল। তার সাথে তাল মিলিয়ে হাসলো নূরও।
___
নূরকে নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে প্রায় বারোটা বেজে গেল।আসার সময় বাইরেই খেয়ে এসেছে সবাই। গাড়িতে নূরের ঘুমু ঘুমু ভাব দেখে আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই রুমে এলো।নূরকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আদিত্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে হাতের ঘড়ি খুলছিল। তখনই কিছু একটা মনে আসতেই হঠাৎ নূরের ঘুম উড়ে গেল। ঠাস করে উঠে বসল সে। আদিত্যর দিকে পিটপিট নজরে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে এলো আদিত্যের সামনে। তাকে দেখে আদিত্য মুচকি হেঁসে বলল,
“কি হলো,এঞ্জেলের ঘুম ভেঙে গেছে? ”
নূর ফট করে বলে উঠল,
“হিরো তোমার শার্ট খোল।”
ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল আদিত্য। থতমত কন্ঠে বলল,
“মানে? শার্ট খুলব কেন?”
“কারণ আমি বউদের আসল কাজটা করবো আজ। সেটার জন্য শার্ট খোলা জরুরি।”
বেচারা আদিত্য তব্দা খেয়ে গেল পুরো। চোখ চড়কগাছ তার। কাশি উঠে গেল তৎক্ষনাৎ। আমতাআমতা স্বরে বলল,
“হো….য়াট! কি বলছ এসব এঞ্জেল! কিসের আসল কাজ?”
“যেটা সব বউ করে। আমাকেও করতে হবে ওটা। খুবই জরুরি। তাড়াতাড়ি শার্ট খোলেন।”
আদিত্যর জ্ঞান হারাবার জোগাড়। কি বলে তার বউ এসব! আদিত্য কোনরকমে অপ্রস্তুত স্বরে বলল,
“দে…দেখ এঞ্জেল,এসব বলতে নেই। আর তোমার ওসব করার সময় হয়নি। এসব ফালতু কথা কে শিখিয়েছে তোমাকে?”
“আবির দেবর বলেছে। এটা করা জরুরি।”
আদিত্যর চরম রাগ হলো আবিরের উপর। ইডিয়ট টা কিসব বলেছে নূরকে! আদিত্য ফিচেল গলায় বলল,
“দেখ এঞ্জেল ওর কথা শুনো না। ওর কাজই শুধু ফালতু কথা বলা।”
নূর জেদ ধরে বলল,
“না আমিতো করবোই ওটা। আপনি শার্ট খুলুন এক্ষুনি। নাহলে আমিই খুলে দিচ্ছি।”
বলেই নূর আদিত্যর শার্টের দিকে হাত বাড়াল। বেচারা আদিত্য ভয়ে পিছিয়ে যেতে লাগল। পিছিয়ে যেতে যেতে বলতে লাগল,
“দেখ সোনা এমন করে না। তুমি না আমার লক্ষী এঞ্জেল। আমার কথা শোনো।”
কে শোনে কার কথা। নূর আদিত্যর শার্ট খোলার জন্য বদ্ধপরিকর। এদিকে আদিত্য বেচারা নূরের হাত থেকে বাঁচার জন্য সরে যাচ্ছে শুধু। তবে একসময় নূর ধরেই ফেলল তাকে। আদিত্যকে ধরে তার শার্টের বোতাম খুলতে লাগল। আদিত্য করুন সুরে বলেই যাচ্ছে,
“নূর, মাই এঞ্জেল, আমার ময়না পাখি এমন করোনা৷ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো। এসব এখন তোমার জন্য ঠিক না।”
নূর যেন কিছু শুনতেই নারাজ। সে ধীরে ধীরে আদিত্যর শার্টের সবগুলো বোতাম খুলে ফেলল। তারপর শার্টের নিচের দুই মাথা একসাথে করে অনেক জোরে টাইট দিয়ে গিট্টু মেরে দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ, এখন হয়ে গেছে কাজ।”
আদিত্য আবারও ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে বলল,
“হয়ে গেছে মানে? কি হয়ে গেছে? ”
“আরে টাইট দেওয়া হয়ে গেছে। এটাইতো বউদের আসল কাজ। দেবর বলেছে বরকে টাইট দিয়ে রাখতে হয়। নাহলে হাতছাড়া হয়ে যায়। তাই টাইট দিলাম। এখন ঠিক আছে। আর সমস্যা নেই। আমি এখন ঘুমুতে যাই।”
বলেই নূর গিয়ে বিছানায় আবারও আগের মতো শুয়ে পড়ল। বেচারা আদিত্য ওভাবেই টাস্কি খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সে ভাবল কি আর হলোটা কি!
চলবে….