মরুর বুকে বৃষ্টি ২ পর্ব-৩০+৩১

0
216

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-৩০
®মেহরুমা নূর

★ভারী নেত্রপল্লব দুখানা মেলে তাকানোর চেষ্টা করছে স্নেহা। চোখের সামনে অন্ধকার ঘুচিয়ে ধীরে ধীরে ঝাপসা আলো ফুটে উঠল। কয়েকবার পলক ঝাপকানোর পর ঝাপসা কেটে গিয়ে স্পষ্ট আলো দেখা গেল। ঝাপসা ভাব কেটে যেতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল আদিত্যর চিন্তায় ভারাক্রান্ত মুখখানা।যার চোখে মুখে কেবলই ভীতিকর আতঙ্কের ছাপ। আদিত্যর মুখখানা চোখের সামনে স্পষ্টত হতেই স্নেহার চোখেমুখের ভাব কেমন অন্যরকম হয়ে গেল। যেন হারিয়ে যাওয়া কোনো অমূল্য রতন আজ ফিরে এসেছে তার সামনে। আবেগে আপ্লূত চোখে তার নোনাজলের ভীড়। শঙ্কিত আদিত্য স্নেহার চোখ মেলে তাকানো দেখে সামান্য স্বস্তির হাসি দিয়ে স্নেহার মাথা-মুখে হাত বুলিয়ে ভারাক্রান্ত অস্থির কন্ঠে বলল,
“এঞ্জেল! তাকিয়েছ তুমি! বারবার কি হচ্ছে তোমার সাথে! আমারতো জান বেরিয়ে যাচ্ছে। কথা বলো এঞ্জেল। এখন কেমন লাগছে তোমার।”
স্নেহার যেন আদিত্যর কথা কিছু কানেই ঢুকছে না। সে কেমন অদ্ভুত অশ্রুসজল দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে আদিত্যর দিকে। দেখতে দেখতেই ঝট করে উঠে বসলো সে। অস্থির নজরে তাকিয়ে দুই হাতে আদিত্যর মাথা-মুখে পাগলের মতো হাত বুলিয়ে কান্না জড়িত গলায় বলতে লাগল,
“হি….হিরো! আমার হিরো….”
বলতে বলতে স্নেহা আদিত্যর সারা মুখে চুমু খেতে লাগল পাগলের মতো।তারপর আদিত্যকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। আদিত্যর কাঁধেও চুমু খেল ক্রমশ কয়েকটা।তারপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমার হিরো..আমি তোমাকে কিভাবে চিনতে পারলাম না! তুমিতো সত্যিই আমার হিরো। শুধু আমার। তোমার এঞ্জেলের হিরো।”
স্নেহার হঠাৎ এমন আচরণের কারণ বুঝতে পারলোনা আদিত্য। সে দু-হাতে স্নেহার মুখটা ধরে বলল,
“হ্যাঁ, আমিতো তোমারই হিরো। কিন্তু তুমি কাঁদছে কেন এঞ্জেল? শরীর খারাপ লাগছে তোমার?”
স্নেহা তার গালে রাখা আদিত্যর হাত দুটোর উপর নিজের দুই হাত রেখে আদিত্যর হাতের তালু ঠোঁটের উপর এনে চুমু খেয়ে, অশ্রুসিক্ত আবেগভরা নয়ন আর মুখে হাসির রেখা টেনে ক্রন্দনরত কন্ঠে বলল,
“উহুম, আর কোনো খারাপ লাগা নেই আমার কাছে। আর কোনো কষ্ট নেই। আমি যে আমার হিরোকে পেয়ে গেছি। আমার পৃথিবী পেয়ে গেছি। আমার সব মনে পড়ে গেছে হিরো। সব।”
নূর আবারও আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আর কখনো আমার কাছ থেকে আলাদা হইও না হিরো। কখনো না।”
আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আচ্ছা, হবোনাতো আলাদা। কখনো না। তুমি কেঁদোনাতো। তুমি কাঁদলে ভালো লাগে না আমার।”

কিছুক্ষণ পর আবির আর বিহান ডক্টর নিয়ে আদিত্যর রুমে এলো। স্নেহার জ্ঞান হারানো দেখে তারা ডক্টর ডেকেছিলো। ওদের আসা দেখে স্নেহা আদিত্যর আলিঙ্গন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সরে বসলো। আবির,বিহান এগিয়ে এসে বলল,
“জ্ঞান ফিরেছে মিস স্নে, আই মিন ভাবি? আপনি ঠিক আছেন এখন? ডক্টর এসেছে আপনার চেকাপ করতে।”
স্নেহা আবিরদের উদ্দেশ্যে বলল,
“আমার আর কোনো চেকআপের প্রয়োজন নেই দেবরজি। আমি এখন একদম ঠিক আছি। সব মনে পড়ে গেছে আমার।”
আবির ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মানে? ”
স্নেহা কিছু বলতে নিয়েও থেমে গেল। আদিত্যর সামনে আপাতত কিছু বলা ঠিক হবে না মনে করল। তাই কিছু একটা ভেবে স্নেহা আবিরদের দিকে চোখের ইশারায় বুঝালো আদিত্যর সামনে বলা যাবে না। তা বুঝতে পেরে আবির আপাতত ডক্টরকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। অনেকক্ষণ পর যখন আদিত্য আবারও ঘুমিয়ে পড়ল তখন স্নেহা তাকে রেখে বাইরে এলো। নিচে এসে দেখলো সবাই বসে আছে। ডক্টর ততক্ষণে চলে গেছে। স্নেহা নিচে আসতেই আবির বলে উঠল,
“এখন ঠিক আছেন আপনি? রাততো অনেক হলো। আদিও নিশ্চয় ঘুমিয়ে পড়েছে। চলুন আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”
স্নেহা জবাবে স্মিথ হেঁসে বলল,
“কোথায় যাবো দেবরজি। নিজের বাড়ি, নিজের সংসার রেখে আর কোথয় যাবো!”
স্নেহার এমন অদ্ভুত কথায় সবাই কেমন থতমত খেয়ে গেল। আবির কপাল কুঁচকে বলল,
“মানে? কি বলতে চাচ্ছেন আপনি? আর এখানেতো আদি নেই তাও আমাকে দেবরজি কেন বলছেন?”
“কারণ আপনি আমার দেবরজি। কারণ আমিই আপনাদের নূর ভাবি। সেই পাগলী নূরটা আমিই।”
সবাই যেন বিস্মিত হয়ে গেল স্নেহার এমন বিস্ফোরক কথায়। বিহান বিস্মিত কন্ঠে বলল,
“কি কইতাচেন এইগুলা! আপনে কেমতে আমগো ভাবি হইবার পারেন! হে’তো দুই বছর আগেই আমগো ছাইড়া গেছে গা।”
আবির বলল,
“এসব কি ধরনের মজা মিস স্নেহা! আপনি কিভাবে নূর ভাবি হতে পারেন!”
স্নেহা বলল,
“আমি সত্যি বলছি। বিশ্বাস করুন আমিই নূর। আজ আমার পূর্বের সবকিছু মনে পড়ে গেছে। যা আমি এই দু-বছরে ভুলে গিয়েছিলাম। আজ আমার মনে পড় গেছে আমিই নূর। হিরোর এঞ্জেল নূর। আমি সেই পাগলী নূর।”
“এটা কিভাবে হতে পারে! আপনার চেহারা,কন্ঠ, পরিচয় সবইতো ভিন্ন! তাহলে এটা কি করে হতে পারে!”
“এটাতো আমিও পুরোপুরি জানি না। আমার সাথে কিভাবে কি হয়েছে তার সবটা বলতে পারছিনা। তবে গত দু বছর যাবৎ আমি নিজেকে স্নেহাই ভাবছিলাম। আর সেভাবেই জীবনযাপন করছিলাম। কিন্তু আদিত্যকে দেখার পর থেকেই ধীরে ধীরে আমার সব মনে পড়তে থাকে। আর আজ এ বাড়িতে আসার পর আরও বেশি করে সব মনে পড়তে থাকে। শেষে আপনার দেখানো ওই ভিডিও দেখে সব মনে পড়ে গেল আমার। যে আমিই হিরোর এঞ্জেল নূর।”
সবার যেন মাথা ঘুরে ওঠে স্নেহার কথায়। ওরা যেন কিছু বুঝতেই পারছেনা। আবির বলল,
“কিন্তু আমরা কেন আপনার কথা বিশ্বাস করব? এটাতো বিশ্বাসযোগ্য কোনো কথাই না। আপনি সিনেমার মতো মিথ্যে মনগড়া গল্প বলছেন না তার কি গ্যারান্টি আছে?”
স্নেহা আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“মিথ্যে কেন বলবো আমি! এতে কি লাভ আমার!”
বিহান বলে উঠল,
“অবছ্যই লাভ আছে। আপনে এই বাড়িতে আইছা আদির অবস্থান দেইখা লোভে পড়তে পারেন। ভাবতাচেন নাটকের বউ থেকে সত্যিকারের বউ হইয়া গেলে এইছবকিছুর মালকিন হইয়া যাইবেন। তাই ছবচেয়ে দূর্বল জায়গাটা কাজে লাগাইছেন।”
স্নেহা যেন ব্যথিত নজরে তাকালো। আজ তাকে নিজের পরিচয় দিতেই এত অপবাদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তবুও নিজেকে সামলে নিয়ে স্নেহা বলল,
“ঠিক আছে,আপনারাই বলুন কি করলে আমার সত্যতা প্রমাণ করতে পারবো আমি! আচ্ছা আমি আগের কিছু কথা বলছি তাহলেতো মানবেন আপনারা!”
স্নেহা এরপর তার কিছু পুরানো কথা বলল যা শুধু নূরই বলতে পারে। কিন্তু তাতে খুব একটা ফলপ্রসূ হলোনা। আবির বলল,
“এসব কোনো ব্যাপার না মিস স্নেহা। এমনিতেও নূর ভাবির অনেক ভিডিও, কথা সম্পর্কে জানানো হয়েছে আপনাকে। এসব থেকেই আপনি জানকারি নিয়েছেন।”
স্নেহা অসহায় কন্ঠে বলল,
“তাহলে আপনারাই বলুন আর কি করলে আপনাদের বিশ্বাস করাতে পারবো আমিই নূর! আপনারা যা বলবেন তাই করতে রাজি আমি। তবুও প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করুন।”
আবির আর বিহান দুজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। বিহান ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করল কি করা যায়। আবির তখন বলল,
“ঠিক আছে আপনাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। একটা উপায় আছে প্রমাণ করার। আপনার ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। আপনার মা-বাবার কারোর সাথে ডিএনএ ম্যাচ হলে তাহলেই প্রমাণ হবে আপনার কথা সত্যি। এরপর বাকিটা নাহয় পরে জানা যাবে।”
“ঠিক আছে আমি রাজি।”
আবির বিহানকে বলল গ্রামে ফোন করে নূরের মা-বাবাকে আসার ব্যবস্থা করতে। বিহান মাথা ঝাঁকিয়ে তাই করল। স্নেহা আবেগে আপ্লূত কন্ঠে বলল,
“মা,বাবা আসবে! কতদিন পর দেখবো তাদের! তাদের মেয়ে বেঁচে থাকা সত্ত্বেও তারা নিশ্চয় মৃত ভেবে কত কষ্ট পেয়েছে!”
আবির বলল,
“ঠিক আছে,তাহলে ওই কথাই রইলো।কাল তারা আসার পর ডিএনএ টেস্ট করানো হলেই সব সত্য সামনে আসবে। এখন তাহলে সবাই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
স্নেহা মাথা ঝাঁকিয়ে আদিত্যর রুমের দিকে গেল। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিহান আবিরের উদ্দেশ্যে বলল,
“তোর কি মনে হয়? উনার কথ কি হাঁচা হইবো?”
“জানি নাা। তবে সত্যি হলে এরচেয়ে বেশি খুশির আর কিছু হবে না। সবচেয়ে বেশি আদির জন্য। নূর ফিরে আসলে আদি নিশ্চয় আবার আগের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে আসবে। সবকিছু আবার সুন্দর হয়ে যাবে আগের মতো।”
হিয়া বিহানের কাছে এগিয়ে এসে বলল,
“আমার কিন্তু মনে হচ্ছে উনি সত্যিই বলছে। উনার চোখে সেই ভালোবাসার সত্যতা দেখা যাচ্ছিল। আমার মনে হয়না সে মিথ্যে বলছে।”
বিহান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“যা হয় দেখাই যাইবো কাল। এখন চলো রুমে গিয়া আরাম করো। এই অবস্থায় বেশি রাত জাগা ঠিক না।”

স্নেহা রুমের দরজার কাছে আসতেই হঠাৎ ভেতর থেকে আদিত্যের অস্থির কন্ঠে ডাক শুনতে পেল। ভয়ার্ত কন্ঠে এঞ্জেলের নাম ধরে ডাকছে সে। ঘাবড়ে গেল স্নেহা। দৌড়ে গেল ভেতরে। গিয়ে দেখলো আদিত্য জেগে গেছে। আশেপাশে তাকিয়ে ভীতিগ্রস্ত ভঙ্গিতে এঞ্জেলকে ডাকছে সে। স্নেহা দ্রুত ছুটে গেল কাছে। আদিত্য স্নেহাকে দেখে দ্রুত তাকে ধরে অস্থির কন্ঠে বলল,
“তুমি কোথায় চলে গিয়েছিলে এঞ্জেল! তোমাকে না পেয়ে কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম জানো! তোমাকে না বলেছি আমার কাছ থেকে একদম কোথাও যাবে না!”
স্নেহা দুই হাতে আদিত্যর মুখখানা ধরে মায়াময় হেঁসে বলল,
“কোথায় যাবো হিরো! তোমার এঞ্জেলের দুনিয়া তোমাতেই শুরু, তোমাতেই শেষ। তুমি নামেই তার অন্ত। তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা আমি তুমি শান্ত হও।”
আদিত্য একটু শান্ত হলো। স্নেহা আদিত্যর কপালে পরম আদরে অধর লিপ্টিয়ে চুমু খেয়ে বলল,
“এসো আমি তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি।”
স্নেহা বিছানায় উঠে পা টান বসে আদিত্যকে কাছে টেনে নিজের কোলে মাথা রেখে শোয়ালো। আদিত্যও পুলকিত মনে স্নেহার কোলে মাথা রেখে স্নেহার কোমড় জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল। স্নেহা হাতের আঙুলের মায়াময় স্পর্শ বুলিয়ে দিতে লাগল আদিত্যর চুলের গহীনে। নজরে যেন মায়ার এক সমুদ্র বয়ে ঝর্ণাধারা হয়ে ঝড়ে পড়ছে। যেন কতকাল পর দেখছে এই প্রাণপ্রিয় মানুষটাকে। পৃথিবীর সকল অনুভূতি জড়ো করে লুটিয়ে দিতে চায় শুধু এই মানবটাতেই।মনের পর্দায় ভেসে উঠছে আদিত্যর সাথে তার সুখময় সেসব স্মৃতি। যখন এই লোকটাই তাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসায় আগলে রেখেছিল। তাকে সে চোখের পলকে বসিয়ে রাখতো। সেসব ভেবল চোখের পারদে আবেগের শ্রাবণ ধারা জমছে স্নেহার। আদিত্য হঠাৎ বলে উঠল,
“এঞ্জেল ঘুম ধরছেনা। একটু গান গেয়ে ঘুম পারাও না!”
স্নেহা মুচকি হেঁসে বলল,
“আচ্ছা।”
স্নেহা আদিত্যর চুলে পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মনের সকল মায়া মাখিয়ে গেয়ে উঠল,
♬ তু আতা হে সিনে মে, যাব যাব সাসে ভারতাহু
♬ তেরে দিল গি গালিওমে, মে হার রোজ গুজারতি হু
♬ হাওয়া ও পে চালতা হে তু,মে রেত জেইসে উড়তাহু
♬ কন তুঝে ইউ পিয়ার কারেগা, জেইসে মে কারতি হু…..

মাথা হালকা কাত করে আদিত্যর মুখের দিকে অপলক মায়াময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর গান গাচ্ছে স্নেহা। একসময় আদিত্য আবারও ঘুমিয়ে গেল। স্নেহা নিজের মাথা ঝুঁকিয়ে আদিত্যর মাথায় পরপর কয়েকটা চুমু খেল। আদিত্যর মাথার উপর মাথা নিজের মাথা কাত করে রাখলো স্নেহা। হাত বোলালো আদিত্যর পিঠে। বিরবির করে বলল,
“তুমি তোমার এঞ্জেলের জন্য দুনিয়ার সব সুখ এনে দিয়েছিলে। সব খুশি লুটিয়ে দিয়েছিলে তার কদমে। এবার আমার পালা হিরো। এখন আমার সর্বস্ব শুধু তোমার জন্যই অর্পিত। আমার জীবন এখন কেবল শুধুই তোমার নামে হিরো। শুধুই তোমার নামে বিসর্জিত।”
__

সকাল বেলা যথারীতি নূরের বাবা-মা এসে হাজির হয় আদিত্যদের বাসায়। বিহানের জরুরি তলবে এসেছে তারা। স্নেহা তাদের দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে মাকে। জড়িয়ে ধরে মা বলে কাঁদতে থাকে। নূরের মা হকচকিয়ে যায় অপরিচিত মেয়ের এমন কান্ডে। তবে মেয়েটিকে তার কেমন আপন মনে হয়।মায়ের অজানা মন যেন কিছু উপলব্ধি করতে পারে কেমন। আবির তখন তাদের জানায় সবটা যে স্নেহা নিজেকে নূর দাবি করছে। তাই পরিক্ষা করতে হবে। স্নেহা তার মা বাবকে বলে,
“হ্যাঁ মা,আমি তোমার নূর।তোমমাদের পাগলী।”
স্নেহার কথায় স্নেহার মা বাবাও অনেক বিস্মিত হলো। স্নেহার মায়ের মনে একটু আনচান করলেও আপাতত তারা তেমন কিছু আর বলল না। অতঃপর স্নোহার ডিএনএ টেস্ট করানো হলো। সন্ধ্যার দিকেই টেস্টের রেজাল্ট আসলো। এবং রেজাল্ট দেখে সবাই খুশিতে আপ্লূত হয়ে গেল। কারণ সবাই বুঝতে পারল স্নেহাই আসলে নূর। সবাই যেন খুশিতে হঠাৎ পাওয়া খুশিতে ভাষা হারিয়ে ফেলল। স্নেহার মা তার মেয়েকে ফিরে পেয়ে খুশিতে কেঁদে ফেলল। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করল প্রাণভরে। আবির,বিহান নিজেদের ব্যাবহারের জন্য অপরাধী গলায় বলল,
“আমাদের মাফ করে দিন ভাবি। আমরা আপনাকে নাজানি কিসব বাজে কথা বলে দিয়েছি।”
স্নেহা হাসিমুখে বলল,
“না না ভাইয়া, মাফ চাইতে হবে না আপনাদের। আপনারা তাই করেছেন যা একজন সচেতন বন্ধুর করা উচিত। বরং আমিতো আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আমার হিরোর এত খেয়াল রেখেছেন। আপনারা না হলেতো আমি আমার হিরোর কাছে কখনো ফিরতেই পারতাম না। আপনারা সত্যি একজন সত্যিকারের বন্ধু।”
আবির বলল,
“আদি আজ আবারও প্রমাণ করে দিলো যে ওর মতো কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারবেনা। যেখানে আমাদের বলার পরেও আমরা বিশ্বাস করতে নারাজ। সেখানে আদিত্য অসুস্থ অবস্থাতেও তার ভালোবাসাকে ঠিকই চিনে ফেলল। তাও অন্য রুপেও।”
বিহান এই পর্যায়ে সন্দিহান হয়ে বলল,
“কিন্তু আবির এইসব হইলো কেমনে? মানে ভাবি এমনে কেমনে হইয়া গেল?”
আবির তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
“এর জবাবতো একজনরাই দিতে পারবে। এবং তাদের জবাবদিহিতো করতেই হবে এবার।”

চলবে…..

#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-৩১
®মেহরুমা নূর

★দরজা খুলে দিতেই আবির আর বিহানকে সম্মুখে দাঁড়ান দেখতে পেল জাকিয়া। তাদের এমুহুর্তে এখানে দেখে অনেকটাই অবাক হলেন তিনি। তার মনে চিন্তার টান পড়ল। তার মেয়েটার কিছু হলোনাতো আবার! উদ্বেগ প্রকাশ করে জাকিয়া বলে উঠল,
“তোমরা এখানে! স্নেহার কিছু হয়নিতো আবার! আমার মেয়েটা ঠিক আছে! ওই পাগলটা কিছু করে বসেনিতো আবার!”
আবির তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,
“সে ঠিক আছে। আমরা আপনাদের সাথে কথা বলতে এসেছি। অনেক ইম্পর্ট্যান্ট বিষয়ে।”
জাকিয়ার ভ্রু কুঁচকে এলো। কি কথা বলবে তার ভাবনা ঘুরতে লাগল। জাকিয়া ওদের ভেতরে আসার আমন্ত্রণ দিলে আবির আর বিহান ভেতরে সোফায় এসে বসলো। ওরা স্নেহার বাবাকেও ডাকতে বলল। স্নেহার বাবা আসলে জাকিয়া আর স্নেহার বাবা দুজন ওদের মুখোমুখি হয়ে বসলো। স্নেহার বাবা জিজ্ঞেস করল,
“বলো কি বলতে চাও তোমরা!”
আবির বলে উঠল,
“স্নেহাকে আপনারা কোথায় কিভাবে পেয়েছেন?”
আবিরের এমন প্রশ্নে যেন স্নেহার মা-বাবার মাঝে বিস্ফোরণ ঘটালো। আতঙ্কিত হলো যেন মুখয়ব। স্নেহার বাবা বলল,
“এটা কি ধরনের কথা! আমার মেয়েকে আবার কোথায় পাবো!”
“দেখুন, এসব ড্রামা করে কোনো লাভ নেই। আমরা জেনে গেছি স্নেহা আপনাদের মেয়ে না। বরং সে আমাদের নূর ভাবি। আমাদের আদিত্যর বউ। দু’বছর পূর্বের এক্সিডেন্টে আমরা ভেবেছিলাম সে হয়তো মারা গেছে। তবে সে বেঁচে আছে। এবং আপনাদের কাছেই ছিলো। এখন আপনারা খুলে বলুন কিভাবে কি হয়েছে?আর স্নেহা কিভাবে হলো সে? টেল আস এভরিথিং।”
স্নেহার মা-বাবার চেহারার রঙ উড়ে গেল যেন। আতঙ্কিত মুখ আর ঘামে ভেজা কপালে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল। তবুও নিজেকে ঠিক দেখানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে স্নেহার বাবা ভারী মেজাজী কন্ঠে বলল,
“কিসব আবোলতাবোল বলছ তোমরা! মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমাদের! স্নেহা আমাদের মেয়ে। সে কেন নূর হতে যাবে! মেয়েটা ভালো মানুষী দেখিয়ে তোমাদের পাগল বন্ধুর সেবা করছ আর তোমরা কিনা তার সুযোগ নিয়ে এসব উল্টো পাল্টা কথা বলছ! আর একটা বাজে কথা শুনতে চাইনা আমি। তোমরা এখন আসতে পারো।”
বিহান এই পর্যায়ে এক হাত উঁচিয়ে থামানোর ইঙ্গিত দেখিয়ে দাপুটে ভঙ্গিতে বলল,
“থামেন চাচা, এত চিল্লাইয়েন না। বুড়াকালে এত চিল্লাইলে দম বাড়াইয়া যাইবোগা। আমরা এইহানে আপনের বাড়ি দাওয়াত খাইবার আছি নাইক্কা। আমরা আইছি নিজের মর্জিতে, যামুও নিজের মর্জিতে। অহন প্যাঁচাল কম পাইড়া আছল কথায় আছেন। ফটাফট ছত্যিটা ঝাইড়া ফলান। নাইলে আমগো কাছে আরও অনেক উপায় আছে ছত্যি বাইর করার।”
“কিসের সত্যি! স্নেহা আমাদের মেয়ে এটাই সত্যি। আর কোনো সত্যি নেই।”
আবির এই পর্যায়ে হাতের ফাইলটা ঠাস করে সামনের টি টেবিলের উপর এক প্রকার আছাড় দিয়ে রেখে বলল,
“তাহলে এটাই একটু চোখ বুলিয়ে নেন। আপনার হয়তো মনে পড়তে সাহায্য করবে।”
স্নেহার বাবা থতমত ভঙ্গিতে ফাইলটা উঠিয়ে দেখলো। সেটা ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট। তা দেখে যেন ভয়ে আরও আৎকে উঠল তারা। আবির বলল,
“দেখুন ভদ্রতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। তাই আপনিও সেটাই রাখতে দিন আমাদের। যেহেতু নূর ভাবিকে আপনারাই এতদিন রেখেছেন তাই রুড হতে চাইনা। আমরা সত্যিটা জেনে গেছি। শুধু তাই না। নূর ভাবি, মানে স্নেহার স্মৃতিও ফিরে এসেছে। এবং সেই আমাদের জানিয়েছ যে, সে আমাদের নূর ভাবি। সো কোনো তালবাহানা না করে ভালোই ভালোই সত্যিটা বলে দিন। আমাদের বাধ্য করবেন না অন্য পন্থা অবলম্বন করার জন্য। সেটা আপনাদের জন্য মঙ্গলময় হবে না। ”
স্নেহার মা-বাবা যেন এবার আর মিথ্যে রাগ বজায় রাখতে পারলোনা। বুঝতে পারল তারা হেরে গেছে। এখন আর কোনো কিছু লুকিয়ে লাভ নেই। জাকিয়া মুখে আঁচল চেপে গুমরে কেঁদে উঠল। হয়তো মেয়েকে হারিয়ে ফেলার ভয় তাড়া করল তাকে। স্নেহার বাবার মুখও মলিন হয়ে গেল। আবির তখন বলল,
“এবার শুরু থেকে বলুন কিভাবে কি হলো। আমাদের নূর ভাবি স্নেহা কিভাবে হলো?”
স্নেহার বাবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করল,
“স্নেহা আমাদেরই মেয়ে। তবে সে তোমাদের নূর ভাবি না, আমাদের আপন মেয়ে ছিলো স্নেহা। নূরের বয়সেরই ছিলো সে। আমাদের অতি আদরের মেয়ে ছিলো। নার্স হওয়ার স্বপ্ন ছিলো তার। রুগীর সেবা করার তার ইচ্ছে ছিলো। নাসিংএ ডিপ্লোমা কমপ্লিট করেছিলো মাত্র। তখনই এক তুফানে সব কেঁড়ে নিয়ে যায় আমাদের।হসপিটালে নার্সের চাকুরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার পথে একটা রোড এক্সিডেন্টে সে আমাদের ছেড়ে চলে যায়। তার এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মেনে নিতে পারছিলাম না আমরা। বিশেষ করে ওর মা। জাকিয়া একেবারে শয্যাশায়ী হয়ে গিয়েছিল মেয়েকে হারিয়ে। সে কোনোমতেই মেয়ে হারানোর শোক সইতে পারছিল না। এতটাই অসুস্থ হয়ে যায় যে, তাকে বাঁচানো তখন মুশকিল ব্যাপার হয়ে যাচ্ছিল। এরইমাঝে একদিন আমি একটা কাজে নদীর কাছাকাছি যাই। তখন দূর থেকে কিছু ভাসতে দেখি। মানুষের মতো মনে হচ্ছিল।ভলো করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারি কোনো কাঠের বড়ো টুকরোর উপর একটি মেয়ের দেহ ভাসছে। তখন আমি আশেপাশের মানুষের সাহায্যে পানি থেকে তাকে উপরে তুলে আনি। দেখতে পাই একটি মেয়ের বিধ্বস্ত দেহ। শরীরের অধিকাংশ অংশই পুড়ে গিয়েছিল। মুখের কোনো আকৃতি বোঝা যাচ্ছিল না। পালস চেক করে দেখলাম মেয়েটি তখনো বেঁচে আছে। দ্রুত তাকে হসপিটালে নিয়ে যাই। ডাক্তার দেখে বলে অপারেশন করতে হবে আর মেয়েটার চেহারার প্লাস্টিক সার্জারিও করতে হবে। আমি তখন বলি আমার মৃত মেয়ের চেহারাটা দিতে। সেই অনুযায়ী নূরের সার্জারী করা হয়। এবং নূর তখন স্নেহার রুপ নেয়।ডক্টর জানায় মেয়েটার বাকযন্ত্রেও নাকি একটু পরিবর্তন হবে তাই কন্ঠও পাল্টে যাবে তার। মেয়েটার জ্ঞান ফিরলে সে কাউকে চিনতে পারেনা। ডক্টর জানায় মেয়েটা তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। আমার মনে তখন স্বার্থপর লোভ জাগে। মনে নতুন আশা জাগে। ভাবি উপরওয়ালা বুঝি এক মেয়ে নিয়ে আমাকে আরেক মেয়ে দান করেছে। আমিও খুশিমনে তা আপন করে নেই। এরপর মেয়েটাকে আমি পুরোপুরি স্নেহা বানানোর কাজে লেগে পড়ি যাতে মেয়েটা নিজেই নিজেকে স্নেহা ভাবা শুরু করে দেয়। তখন পাভেলের সাথে কথা বলি আমি। পাভেল আর স্নেহা ছোটকালের বন্ধু ছিলো। দুজন দুজনকে ভালোও বাসতো। দুই পরিবারে বিয়ের কথাও পাকা ছিলো। পাভেলও স্নেহার ওভাবে চলে যাওয়ায় কেমন পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নূরকে স্নেহার রুপে দেখে তার মাঝেও কেমন শান্ত ভাব দেখা যায়। যেন সেও নতুন আশা খুঁজে পায়। তারপর পাভেল মেয়েটাকে ওর পরিচিত এক সাইকোলজিস্ট বন্ধুর কাছে নিয়ে যায়। যে হিপনোটিজম থেরাপি জানে। সে হিপনোটাইস করে শুধু মানুষের অতীতের কথাই জানে না, বরং হিপনোটিজমের মাধ্যমে মানুষের মাঝে নতুন স্মৃতিও যোগ করতে পারে। মেয়েটার সাথেও তাই করে। তাকে হিপনোটাইজ করে তার মস্তিষ্কে এটা বসিয়ে দেয় যে, সে স্নেহা,আমরা তার মা-বাবা। স্নেহার সাথে হওয়া স্মৃতি গুলোর কিছু কিছু অংশ মেয়েটার মস্তিষ্কে গেঁথে দেওয়া হয়। যাতে সে মনে করে এসব তারই স্মৃতি তারই। এবং তাই হয়।এরপর থেকে মেয়েটা নিজেকে স্নেহাই মনে করতে থাকে। জাকিয়া তাকে দেখে নতুন জীবন ফিরে পায় যেন। মেয়েটার মাঝে স্নেহাকে পায় যেন সে। এবং ধীরে ধীরে জাকিয়া আবার স্বাভাবিক হতে থাকে। স্নেহাও ততদিনে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্নেহার জীবনযাপন শুরু করেছে। ধীরে ধীরে ওকে বাসায়ই পড়াশোনা শেখাতে থাকি আমরা। দুবছরে ওকে অনেকটাই শিক্ষিত করে ফেলি। স্নেহার স্বপ্নটাকে ততদিনে নতুন স্নেহা নিজের স্বপ্ন বানিয়ে নিয়েছিল। আমাদের মেয়ের স্বপ্নটাকে পূরণ করতে চেয়েছিলাম আমরা। তাই অনেক কৌশলে স্নেহাকে প্রথমে ছয় মাসের একটা বেসরকারি নার্সিং-এর কোর্স করাই। তারপর আমাদের আসল স্নেহার সার্টিফিকেট দিয়ে হসপিটালে নার্সের চাকুরির ব্যবস্থা করি। পরিচিত লোক থাকায় আর তেমন সমস্যা হয়নি। তো এটাই হলো স্নেহার পুরো সত্য।”

সব শুনে আবির আর বিহান স্তব্ধ হয়ে যায়। যার শোকে আদিত্য উন্মাদ হয়ে মরতে বসেছিল সে কিনা এখানে অন্য কারোর জীবনযাপন করছিল! আসলে নিয়তি কি একটা খেলাই না দেখালো তাদের! কিছু বলার যেন ভাষায় খুঁজে পেলনা তারা। তখনই হঠাৎ সেখানে নূর এসে উপস্থিত হলো। অশ্রুসজল চোখে সে এগিয়ে এলো সবার সামনে। তাকে দেখে স্নেহার মা-বাবা চমকে গেল। ভয়ার্ত নজরে তাকিয়ে উঠে দাঁড়াল তারা ধীরে ধীরে। নূর স্নেহার মা-বাবার সামনে দাঁড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল,
“আমাকে একবার সত্যিটাতো বলতে পারতে তোমরা! এভাবে অন্ধকারে কেন রেখেছিলে আমাকে?”
জাকিয়া শব্দ করে কেঁদে উঠে করুন সুরে বলল,
“আমাদের মাফ করে দিস মা। আমরা লোভী হয়ে গিয়েছিলাম। তোকে শুধু আমাদের মেয়ের মতো রাখতে চেয়েছিলাম আর কিছু না। বিশ্বাস কর আমাদের মনে অন্য কোনো খারাপ মতলব ছিলোনা। আমরা শুধু তোকে হারাতে চাইনি। আমাদের করে রাখতে চেয়েছিলাম সারাজীবন। তাই তোকে বলিনি।”
নূর জাকিয়ার হাত ধরে বলল,
“আমিতো তোমাদের মেয়েই। সবসময়ই থাকবো। তোমরা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছ। এইযে জীবিত দাঁড়িয়ে আছি এটাতো তোমাদের বদৌলতেই। তাহলে তোমাদের কিভাবে ভুলতে পারি আমি! আমার জন্মদাতা মাতাপিতা অন্য কেউ হলেও তোমরাও সবসময় আমার মা-বাবাই থাকবে। আর তোমাদের স্নেহা।”
জাকিয়া কান্না জড়িত মুখে হেসে বলল,
“সত্যি বলছিস!”
নূর জাকিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“হ্যাঁ মা আমি তোমাদের জন্য তোমাদের স্নেহাই থাকবো সর্বদা।”
তারপর মাথা তুলে বলল,
” তবে আমি এখন থেকে তোমাদের সাথে আর থাকতে পারবোনা মা। আমার যে সংসার আছে। আদিত্য আমার স্বামী, আমার জীবন,আমার সব। ওকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবোনা। আমি এখন থেকে আমার আদিত্যর কাছেই থাকবো। তবে চিন্তা করোনা। তোমরা যখন খুশি আমার সাথে ফোনে কথা বোলো,মন চাইলে এসে দেখাও করতে পারবে।”
জাকিয়া বলল,
“ঠিক আছে মা। তুই আমাদের মেয়ে হয়ে থাকবি এটাই আমাদের জন্য অনেক। তুই যেখানেই থাক ভালো থাক। আর এই মা-বাবাকে একটু মনে রাখিস তাহলেই হবে।”
“আচ্ছা মা,আসি আজ।আদিত্য ঘুম থেকে ওঠার আগে বাসায় ফিরতে হবে আমাকে।”
“আচ্ছা যা। ভালো থাকিস।”

নূর বিদায় নিয়ে আবির আর বিহানদের সাথে ফিরতে নিলেই হঠাৎ দরজার সামনে পাভেলকে দাঁড়ান দেখতে পেল সে। শরীরের জায়গায়, জায়গায় এখনো ব্যান্ডেজ আর ক্ষতের চিহ্ন।তাকে হঠাৎ দেখে একটু বিভ্রান্তিতে পড়ল নূর। কি বলবে বুঝতে পারছেনা সে। পাভেল এগিয়ে এলো নূরের সামনে৷ চোখে তার কেমন আহত চাহুনি। নূরের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি রেখে বলল,
“আর আমি! আমার কি হবে স্নেহা! আমার কথা তুমি একবারও ভাবলে না! আমার ভালোবাসায় কোথায় কমতি আছে বলো! আমি তোমাকে কোথাও যেতে দেবোনা স্নেহা। তুমি শুধু আমার।”
নূর শান্ত সুরে বলল,
“দেখো পাভেল আই আম সরি। আমার জন্য তোমাকে এভাবে আঘাত পেতে হয়েছে। তবে শুধু এই কারণটার জন্যই সরি। আর কোনো কারণে না।তুমি সবকিছু জেনেও মিথ্যে মোহে নিজেকে ভুলিয়ে রেখেছ। শুধুমাত্র আমার চেহারা স্নেহার মতো দেখে আমাকে তুমি নিজের স্নেহা মনে করে নিয়েছ। কিন্তু আমিতো স্নেহা না। আমি নূর।আদিত্যর নূর। আমি আদিত্যর বিবাহিত স্ত্রী। আমার মনে শুধু আদিত্য ছাড়া কেউ কখনো আসতে পারবেনা। এই নূরের উপর কেবল আদিত্যর অধিকার আছে আর কারোর না। তাই তুমিও এই মোহ ভুলে নিজেকে সামলে নাও। স্নেহাকে মৃত মেনে নিয়ে নিজের জীবনে অগ্রসর হও। এতেই তোমার জন্য ভালো। আসি।”

বলেই নূর বেড়িয়ে গেল। সাথে আবির আর বিহানও। পাভেল পেছন থেকে লালিমা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। মনে মনে বলল,”এত সহজে না স্নেহা। তুমি শুধু আমার। আর আমারই হবে।”

চলবে….