#মরুর_বুকে_বৃষ্টি (S-2)
পর্ব-৪০
®মেহরুমা নূর
★আজ বিয়ের অনুষ্ঠান আদিত্য নূরের। সকাল থেকেই তোড়জোড়ে ব্যস্ত সকলে। বাড়ির বিশাল লনেই ডেকোরেশন করে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। ডেকোরেশনের থিম রাখা হয়েছে সাদা রঙের। সাদা রঙের ফুল,সাদা ডেকোরেটেড ফেব্রিক্স আর হোয়াইট স্টোনের অপূর্ব সাজে বিয়ের আসর সাজানো। শুভ্রতায় মোহনীয় যেন পুরো জয়গাটা। ক্যাটারাররা খাবারের আয়োজনে ব্যাস্ত। আর বাসার লোকজন ব্যস্ত সাজসজ্জার আয়োজনে। নূরকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক এসেছে। আহানা আর হিয়াও তাদের কাছেই সাজবে। বিহান আর আবির আদিত্যকে রেডি করতে। সাদা পাঞ্জাবির উপর খয়েরি রঙের শেরওয়ানি আর মাথায় সাদা পাগড়ি। বিহান তাকে রেডি করতে করতে বলল,
“বাহ! মাশাল্লাহ! কি লাগতাছে মাইরি! পুরাই রাজপুত্র! ভাবি নির্ঘাত ফিট খাইবোগা আইজকা!”
পাশ থেকে আবির দুষ্টুমি করে বলে উঠল,
“আরে লুক দেখে ফিট না খেলেও আদির পারফরম্যান্সে ঠিকই ফিট খাবে ভাবি। বেচারা আজ কতবছড় ধরে ক্ষুধার্ত বাঘ হয়ে আছে। আজ পর্যন্ত তার ভরা যৌবনে কেউ সাঁতার কাটতে পারেনি। তার যৌবনতো ওভারলোড হয়ে গেছে। আজতো সিডোর আনা পারফরম্যান্স দিবে আদি!”
বিহান হেঁসে দিলো। আদিত্য গরম চোখে তাকিয়ে দুম করে আবিরের পিঠে কিল মেরে দিয়ে নলল,
“শাট আপ ইডিয়ট।”
শরীর কাঁপিয়ে হাসলো আবির। সন্ধ্যার দিকে মেহমানরা আসা শুরু হলো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা পুরোপুরি শুরু হয়ে গেল। বর বেশে আদিত্যকে নিয়ে আবির আর বিহান যখন বিয়ের আসরে পৌঁছাল তখন তাদের সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াল আহানা, হিয়াসহ একদল রমনী। মাঝখানে ফিতা বাঁধা। এই ফিতার বাঁধা অতিক্রম করে যেতে হলে রমণীদের দাবি মানতে হবে এমনটাই পরিস্থিতি। আহানা জোড় গলায় বলল,
“এত সহজ না ভাইয়া, আপনার বউয়ের কাছে যেতে চাইলে আগে আমাদের দাবি মানতে হবে। পঞ্চাশ হাজার দিতে হবে। তাহলেই যেতে পারবেন।”
আবির আৎকে ওঠার ভঙ্গিতে বলল,
“হোয়াট! এক মিনিট! এখানে কি এইমাত্র পঞ্চাশ হাজারের উল্লেখ হলো?”
“জি হ্যাঁ বিয়াই সাহেব। কানে কি কম শোনেন?”
“জি না বিয়াইন সাহেবা, কানে ঠিকই শুনি। তবে আপনাদের দাবি শুনে কানের পর্দা ফেটে গেছে আমার। বলে নাকি পঞ্চাশ হাজার! আরে দিন দুপুরে ডাকাতি করা হচ্ছে! এই বিহান পুলিশ কে ফোন লাগা। বল এখানে বিয়ে বাড়িতে কুখ্যাত ডাকাতনীর দল হাজির হয়েছে। ফুলন দেবীর সদস্য সবগুলো।”
আদিত্য পাশ থেকে বলল,
“আরে ছাড়না, আমি দিচ্ছি ওদের টাকা। তাতে কি হয়েছে!”
“আরে বললেই হলো নাকি! খবরদার কোনো টাকা দিবিনা তুই! আরে আমরা দেশের জাগ্রত নাগরিক। এভাবে অনৈতিক কর্মকান্ডকে চুপচাপ মেনে নিতে পারিনা আমরা কিছুতেই। এটাতো মানবাধিকার লঙ্ঘন! এদের একটা দাবি মানলে এদের লোভ বাড়তেই থাকবে। কখন নাজানি বলে আমাদের ইজ্জতও চাই তাদের! তখন এই অবলা ছেলেদের কি হবে! এই ডাকাতনীদের হুমকির সামনে দমে যাবোনা আমরা। বিদ্রোহী তরুণ আমরা! যার হাতে যা আছে তাই নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ো। বাঁধা যখন দিয়েছি, বাঁধা আরও দিবো। এই ডাকাতনীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করেই ছাড়বো আমরা। এবারের সংগ্রাম টাকা না দেওয়ার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম ডাকাতনীদের তাড়ানোর সংগ্রাম!”
আবির বিহানের উদ্দেশ্যে বলল,
“কিরে তুই চুপ আছস ক্যান? তুইও প্রতিবাদ কর।”
“হ হ কইতাছি তো। আমরা এই দাবি…..”
বিহানের কথার মাঝেই হিয়া এক ভ্রু উঁচিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“এই দাবি কি?”
বেচারা বিহান বউয়ের ভয়ে তড়িৎ গতিতে কথার মোড় ঘুরিয়ে বলে উঠল,
“মাইনা লমু। আর কি! আমি কি মানা করবার পারি নাকি! তোমারা কতো ভালো কথা কইতাছ এইডা না মানার মতো কথাই না।”
আবির টিভি সিরিয়ালের মতো ঠাস করে ঝটকা খাওয়া চোখে তাকালো বিহানের দিকে। আহত স্বরে বলল,
“সালা রাজাকার! আজ তোদের মতো রাজাকারদের জন্যেই এই নারী জাতি নামক ডাকাতনীদের দ্বারা শোষিত হচ্ছি আমরা। তোরেতো আমি পরে দেখছি হারামি!”
আহানা এরমাঝে বলে উঠল,
“ও হ্যালো হ্যালো, এখানে কি মাছ বাজার চলছে নাকি! ক্যাচাল বাদ দিয়ে টাকা ছাড়েন। নাহলে আপনাদের বিদ্রোহীহের টোকরি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। বউয়ের কাছে আর যেতে পারবেনা।”
“হাহ্! বললেই হলো নাকি! কোনো টাকা ফাঁকা ছাড়া হবে না। আর ফিরেও যাবোনা। দেখি কিভাবে আটকান আমাদের! আজতো দেখাই যাক কার আছে কতো দম!”
আবিরের এতো প্রটেস্টের উপর এক বালতি গোবর পানি ঢেলে দিয়ে আদিত্য চেকবুক কেটে পঞ্চাশ হাজার টাকার একটা চেক আহানাদের দিয়ে বলল,
“এই নাও বোনেরা। এবার আমাকে আমার বউয়ের দর্শন করতে দাও একটু।”
আহানাদের মুখে বিশ্বজয়ের উল্লাস! আর হতাশ আবির। ঠাস করে হৃদয় ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল টাইপ অবস্থা তার। ব্যাকরাউন্ডে গান বাজলো যেন,♬ সানছে যো টুটে কই সাপ্না, জাগ সুনা সুনা লাগে, কই রাহে না যাব আপনা….।ফিতা কেটে আদিত্য ভেতরে এগুলো। সাথে বাকিরাও। ভাঙা মনে থেকে গেল কেবল আবির বেচারা। বিড়বিড় করে বলল,
“এ কাদের জন্য লড়ছে সে! এখানেতো সবাই বিরোধী দলের কবলে! মানবতা আজ কোথায়!”
আদিত্যকে স্টেজে এনে বরের সিংহাসনে বসানো হলো। কিছুক্ষণ পর এলো তার হৃদয়ের রাণীটি। লাল রঙের বেনারসিতে বঁধুর সাজে সুসজ্জিত সে। যেন আসমান থেকে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসছে কোনো অপ্সরাদের রাণী। যার আগমনে আদিত্যর হৃতরাজ্য নূরানী আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছ যেন। আহানা আর হিয়া নূরকে নিয়ে এসে বসালো আদিত্যর পাশে। নূর তাকালো আদিত্যর পানে। তখনই আদিত্যর একাগ্র নজরে নজর বিঁধল তার। লাজুক হেঁসে নজর নুইয়ে ফেলল নূর। তার চুড়িতে ভরা,মেহেদী রাঙা হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিলো আদিত্য। মুগ্ধ মনে বলল,
“আমার সুন্দরী বঁধু!”
নূরও প্রতিত্তোরে বলল,
“আমার সুদর্শন বর।”
হাসলো দুজন একসাথেই। একটু পরেই কাজী সাহেব এসে আদিত্য-নূরের বিয়ে আবারও নতুন করে পড়াল। বিবাহের বন্ধনে আরও একবার আবদ্ধ হলো তারা। এতে তারা খুশি হলেও অন্যদিকে আবির মিছে গঙ্গা যমুনা বের করতে লাগলো চোখ দিয়ে। তার মরা কান্না দেখে বিহান পাশ থেকে বলে উঠল,
“কিরে হালা,তুই কান্তাছচ ক্যালা? এমতে খুছির ছময় কেউ কান্দে! কান্দার কি হইলো এইহানে?”
“আরে কাঁদবোনা! চোখের সামনে কিডনির বন্ধুটা এভাবে শহীদ বনে গেল আর আমি কিছুই করতে পারলাম না! প্রথমে একটা ছিলো। এখনতো আমার দুই দুইটা বন্ধুই শহীদ বনে গেল। দুঃখ ভরতে ভরতে কলিজা পোয়াতি হয়ে গেল আমার!”
বলতে বলতে খাক করে নাকের পানি রুমালে মুছলো আবির। বিহান চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
“হ হাঁচাই কইছচ! দেখনা তোর পোয়াতি কলিজা বাচ্চা দেওয়াও শুরু করছে।”
বলেই হেঁসে দিলো বিহান।
খেতে বসলো সবাই। আবির গিয়ে বসলো আহানার পাশে। বসেই এটিটিউড নিয়ে বলল,
“এইযে বিয়াইন সাহেবা তখনতো খুব লুটে নিলেন আমাদের। এবার আপনাদের সেবার পালা। নিন সুন্দর করে খাইয়ে দিন আমাকে।”
আহানা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“বয়েই গেছে আমার! নিজের হাত দিয়ে পারলে খান নাহলে হাওয়া খান।”
বলেই উঠে যেতে চাইলো আহানা। কিন্তু সক্ষম হলোনা তাতে সে। আবির তার হাত ধরে টান মেরে ঘুরিয়ে এক ঝটকায় নিজের কোলের উপর এনে বসালো। হকচকিয়ে উঠল আহানা। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টাও করলো অনেক। কিন্তু আবিরের শক্ত বাঁধনের জোরে পারলোনা। আহানা রাগ দেখিয়ে বলল,
“কি করছেন দেখছে সবাই! ছাড়ুন।”
“হু কেয়ারস! আবির বরাবরই উচ্ছন্ন। আপনাদের অনেক দাবিদাওয়াতো পূরণ করলেন বিয়াইন সাহেবা। এখন একটু আমাদেরও করা হোক। খাইয়ে না দিলে এখানেই বসে থাকতে হবে সারারাত। এন্ড বিলিভ মি, আই লাভ টু ডু দিস!”
আহানা বুঝল আবির তাকে এভাবে ছাড়বেনা। ঘাড়ত্যাড়াটাকে সে ভালো করেই চেনে। তাই অগত্যা তার কথা মেনে নিয়ে বলল,
“আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি। আগে নামান আমাকে।”
বাঁকা হেঁসে হাত সরিয়ে আহানাকে ছাড়ল আবির। আহানা সামনের চেয়ারে বসলো। আবিরের জেদ রক্ষার্থে সে প্লেটে খাবার বাড়ল। হাতে লোকমা নিয়ে আবিরের মুখের সামনে ধরলো। আবির মুখে নিলো খাবার। সাথে আহানার আঙুলগুলোও। মুখে নিলোতো ঠিকই কিন্তু বের আর করছেনা। আহানা পড়ে গেল বিপাকে। হাত বের করছেনা দেখে সে বলল,
“আরে হাত শুদ্ধ খাবেন নাকি! হাততো ছাড়ুন।”
আবির হাত ছেড়ে বলল,
“আরে বিয়াইন সাহেবা আপনার হাতটাইতো বেশি টেস্টি লাগছিলো। রোস্টের চেয়েও মজাদার। আপনার হাতে কি রাধুনি মসলা মাখিয়ে রান্না করেছেন বলুন না! একদম মুখরোচক আঙুলগুলো।”
“ধ্যাৎ! ”
খাবার রেখে দ্রুত দৌড়ে চলে গেল আহানা। হাসতে হাসতে কুটিকুটি আবির।
অবশেষে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সময় এলো আদিত্যর রুমে যাওয়ার। যেখানে বাসর ঘরে অপেক্ষা করছে তার নববধূ। যদিও সেখানে যেতেও আবারও দস্যুদের দাবি মানতে হলো তাকে। আহানারা আবারও খসালো তার পকেট। তবে এই পর্যায়ে আবির একদম চুপচাপ ছিলো। একটা টু শব্দও করেনি। তা দেখে বিহান একটু অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করল,
“কিরে কিছু কইলি না! চু মাইরা গেলি ক্যালা?”
আবির তখন বলল,
“আমার এই ভরা যৌবনে মরার শখ নাই ভাই। আরে বাসর যাওয়ার সময় ক্যাচাল করলে দেখা গেল টাকার যায়গায় আমার মাথাটাই কেটে ওদের হাতে ধরায় দিলো। তখন কি করুম আমি! তাই এই সময় কথা বলে মরার শখ নাই আমার। বাঁইচা থাকলে বাপের নাম।”
সকল বাঁধা অতিক্রম করে বাসর ঘরে শেষমেশ পা রাখল আদিত্য। ফুলে সজ্জিত বিছানার মাঝে ঘোমটা টেনে তার অপেক্ষায় বসে আছে তার বঁধুটি। তার মোহনীয়তায় আদিত্যর ঘরটা যেন ঝলমল করে উঠছে। দরজা লাগিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বিছানার উপর পা ঝুলিয়ে নূরের সামনে বসলো। দু’হাতে ঘোমটা তুলে মুখ দর্শন করে বলল,
“মাশাল্লাহ! আজতো চাঁদও ঝুঁকে যাবে তোমার কদমে। আমার রাজ্য আলোকিত তোমার পবিত্র আগমনে।”
অধর ছোঁয়াল আদিত্য নূরের ললাটে। আবেশে চোখ বুঁজে নিলো নূর। আদিত্য উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে একটা প্যাকেট বের করে এনে নূরের হাতে দিয়ে বলল,
“চেঞ্জ করে এটা পড়ে এসো। মেকাপের কৃত্রিমতা ছাড়িয়ে আমার প্রকৃতির ন্যায় স্নিগ্ধ নূরকে দেখতে চাই আমি।”
নূর প্যাকেটটা হাতে নিয়ে বিছানা থেকে নামলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে প্যাকেটটা রেখে আগে নিজের সারা শরীরে জড়ানো ভারী গহনাগুলো আলাদা করতে চাইলো। আগে নাকের মোটা নতটা খুলল সে। তারপর হাতের আঙুলের উপর দিয়ে টানা স্টোনের ব্রেসলেটটা খুলল। আংটি আর হাতভরা চুড়িগুলোও খুলতে লাগল একে একে। চুড়িতে ভরে গেল ট্রেসিং টেবিলটা। হাত খালি হলে সে এবার মাথার ঘোমটায় হাত দিলো।কিন্তু পেছনে পিন অনেকগুলো লাগানো। সে হাতড়িয়ে হাতড়িয়ে খুঁজে পিন খোলার চেষ্টা করতে লাগলো। তবুও না দেখে সবগুলো কেমন খুলতে পারছেনা সে। পার্লারের মেয়েগুলো এমনভাবে লাগিয়েছে এখন খোলাই মুশকিল হচ্ছে। হঠাৎ মাথায় অন্য হাতের উপস্থিতি টের পেল নূর। হালকা চকিত নজরে আয়নায় তাকাতেই নিজের পেছনে আদিত্যর অবস্থান পেল সে। থমকিত হলো খানিকটা। আজ যেন এই পুরুষটার আবহ তাকে কেমন অন্যরকম অনুভূতির আলোড়নে জর্জরিত করছে। লজ্জাগুলো যেন আজ বেশিই বশিভূত করছে তাকে। আদিত্য আস্তে আস্তে নূরের ঘোমটার পিনগুলো খুলে ঘোমটা নামিয়ে দিলো মাথার উপর থেকে। উন্মুক্ত হলো নূরের খোঁপার নিচে গলা, কাঁধ। আদিত্যর হাত পৌঁছালো গলার পেছনে নেকলেসের হুঁকে। হুঁক খুলতে খুলতে হাতের আঙুল ছুঁয়ে গেল নূরের কোমল গলা,পিঠের উন্মুক্ত স্থানে। নিঃশ্বাস বেসামাল হতে শুরু হলো যেন। হুঁক খুলে নেকলেস গলা থেকে নামিয়ে দিলো আদিত্য। সামনে থেকে সেটা ধরে ফেলে নামিয়ে রাখলো নূর। সবগুলো নেকলেস খোলা শেষে গলার পেছনে অধর লিপ্টে দিলো আদিত্য। তৎক্ষনাৎই চোখ বুঁজে ফেলল নূর।শিহরণে মাঘের হার কাঁপান শীতের মতো কাটা দিয়ে উঠল প্রতিটি লোমকূপ। খুব গভীর ভাবে চুমু খেয়ে মুখ তুলল আদিত্য। মুখ এগিয়ে নিলো এবার কানের পেছনে। দাঁতের সাহায্যে কানের দুলের হুঁক টেনে খুলল নূরের। শিহরণে কাঁধ হালকা বেঁকে এলো নূরের। নিঃশ্বাসের ভারীর মাত্রাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। হুঁক খুলে ফেললে নূর দুলটা নামিয়ে নিচে রাখলো। একইভাবে অন্য দুলটাও খুলল। খোলা শেষে কানেও চুমু খেল আদিত্য। এরপর মাথার চুলের ক্লিপগুলো খুলে খোঁপা খুলে দিলো। চুলের মাঝেও অধর ছোঁয়ালো সযত্নে।এরপর শাড়ির আঁচলে হাত দিলো সে। কাধের উপর ব্লাউজের সাথে আঁটকে রাখা সেপ্টিপিনটা খুলতেই আঁচল গড়ে পড়ে যেতে নিলে নূর সেটা চেপে ধরে কম্পিত স্বরে বলল,
“আ…আমি নিজেই করে নিবো। আমি এখন ওয়াশরুম থেকে চেঞ্জ করে আসছি।”
আদিত্য নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে লো ভয়েসে বলল,
“কি হলো বউ,লজ্জা পাচ্ছো? শুধু এই শাড়ি কেন। আজতো আমাদের মাঝে এক ইঞ্চি সুতোরও অবস্থান রাখতে দিবোনা আমি।”
নূর লজ্জায় আর দাঁড়াতে পারলোনা। প্যাকেটটা হাতে নিয়ে মুখের সামনে চেপে ধরে দৌড়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল। পেছন থেকে ঠোঁট কামড়ে হাসলো আদিত্য। হাসতে হাসতে বলল,
“কাম সুন সুইটহার্ট। আই কান্ট ওয়েট।”
নূর আসতে আসতে আদিত্য নিজেও তার বিয়ের পোশাক পাল্টে নিলো। সাদা প্যান্ট আর সাদা পাতলা একটা শার্ট পড়লো সে। শার্টের বোতাম উপরের তিনটাই খোলা। শার্টের ফাঁকে বুক দৃশ্যমান তার। রেডি হওয়ার পর রুমের লাইট ডিম করলো সে।জানালা আর বেলকনির দরজা দিয়ে ভরা চাঁদের রুপালী আলো প্রবেশ করে পরিবেশ যেন আরও মোহময় করছে। সাথে প্রকৃতিও আজ তাদের এই মধুর রাতলে মধুময় করতে শীতল পবন ছেড়েছে। বাতাসে জানালার পর্দা উড়ছে এলোমেলো। নিজের কাজ শেষে নূরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো সে।
মিনিট বিশেক পর নূর বের হলো। দরজা খোলার শব্দে সেদিকে ফিরে তাকালো আদিত্য। তাকাতেই বুঝি সর্বনাশ হলো তার। সকল ইন্দ্রিয় যেন তৎক্ষনাৎই ক্রিয়াহীন হয়ে পড়ল। সে যে সচক্ষে কোনো মানবীকে না। যেন কোনো তপ্ত লাভা দেখতে পাচ্ছে। যা আদিত্যর সর্বস্ব ধ্বংস করে দিচ্ছে। নূর সাদা পাতলা জর্জেট শাড়িতে নিজেকে জড়িয়ে। গোসল করায় ভেজা চুলের পানি টুপটাপ ঝড়ছে এখনো। গায়ে আর কোনো কৃত্রিমতার লেশ নেই। শুধুই শুভ্র আর স্নিগ্ধতার প্রতিমা এখন সে। বাইরে থেকে আসা মাতাল পবনে পাতলা শাড়ি আরও লেপ্টে যাচ্ছে তার বদনে। যার দরুণ তার চিকন কোমড়,পেট স্পষ্টিত হচ্ছে। যে রুপ আদিত্যকে বিমোহিত করে দিচ্ছে। ঘায়েল করে দিচ্ছে সর্বত্র। নূর মাথা নুইয়ে ধীর পায়ে একটু সামনে এগিয়ে এসে স্থির হলো। আদিত্যর ওই নজরে সব অগোছালো হয়ে যাচ্ছে তার। কোথায় দাঁড়াবে,কোথায় বসবে কিচ্ছুটি ঠাহর করতে পারছেনা সে। আদিত্যর কদম অগ্রসর হলো ওই মহীয়সী নারীর পানে। চোখের পারদে তীব্র নেশার মাতালতা। নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আদিত্য একসময় এসে দাঁড়াল নূরের খুব কাছে। নূর তখনও মাথা নুইয়ে। আদিত্যর হাত পৌঁছাল নূরের কোমড়ে। শাড়ির ফাঁকে হাত গলিয়ে কোমড় পেঁচিয়ে টেনে নিলো তাকে নিজের বাহুডোরে।নূরের মাথা ঠেকলো আদিত্যর বুকে। আর হাত দুটোতে ধরল আদিত্যর বুকের পাশে শার্টের অংশ। সদ্য শাওয়ার নেওয়া ভেজা চুলে নাক ডোবালো সে। চুলের ঘ্রাণে নিঃশ্বাস মাতোয়ারা করতে ব্যাস্ত। নূর বিমূঢ় হলো। নিঃশ্বাসের জোর বাড়ল তার। আদিত্য চুলে নাক ডুবিয়ে মাতাল কন্ঠে বলল,
“এতটা ধ্বংস করছ যে, পারবে কি পরে সামলাতে! আমি যে আজ ভিঞ্চি হবো। আর তুমি হবে আমার মোনালিসা। তোমাকে আবিষ্কার করবো আজ নিজের সবটা দিয়ে।”
চুল থেকে মাথা তুলল আদিত্য। বুক থেকে নূরের মুখটা তুলে ধরল সামনে। চোখ বন্ধ নূরের। আদিত্যর নেশালো নজর নূরের কম্পিত অধরে। মাথা নুইয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হলো সেই অধরপানে। প্রায় ছুঁই ছুঁই, ঠিক তখনই হঠাৎ নূর আচমকা আদিত্যর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ছুটে পালালো অন্য দিকে। লাজুক হেঁসে বলল,
“এতো সহজে না জনাব।”
আদিত্য হালকা হেঁসে বলল,
“আচ্ছা তাই নাকি! দেখাই যাক।”
নূর ছুটতে লাগলো আদিত্যর হাত থেকে বাঁচতে। আদিত্যও তাকে ধরার জন্য ছুটলো তার পিছে। ঘরের চারিদিকে গোলগোল দৌড়াতে লাগলো দুজন। নূর একসময় গিয়ে জানালার পর্দার পেছনে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল। দুই হাতে পর্দা টেনে মুখের উপর ঢেকে ফেলল। তা দেখে হাসলো আদিত্য। সেও দৌড়ে গেল নূরের সামনে। নূরের দুই পাশ দিয়ে হাত রেখে আঁটকে দিলো তাকে।পর্দার উপর দিয়েই নূরের কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
“এখন কোথায় পালাবে বউ! এবারতো আটকা পড়ে গেছ।”
নূর কিছু বললো না। শুধু ভারী নিঃশ্বাসের শব্দ আসছে। আদিত্য ধীরে ধীরে এক হাত পর্দা ভেদ করে নূরের কোমড়ে গলিয়ে দিলো। আরেক হাতে নূরের মুখের উপর থেকে পর্দা সরিয়ে দিলো। চোখ বুঁজে কাঁপছে নূর। ভারী তার নিঃশ্বাসের ওঠানামা। যা আদিত্যকে করছে আরও তীব্র মাতাল। কাঁধের উপর থেকে চুল সরিয়ে সেথায় অধর ছোঁয়ালো নিবিড় ভাবে। বিদ্যুৎ বয়ে গেল যেন নূরের সর্বাঙ্গে। দুই হাতে পর্দা চেপে ধরল সে। আদিত্য তার কাজে আরও মগ্ন হলো। গলা, কাঁধে চুমুর বর্ষণ করল। কোমড়ে হাতের বিচরণ আরও জোড়ালো হচ্ছে। গলা থেকে মাথা তুলে আবারও মাথা তুলে নূরের মুখের দিকে তাকালো সে। নূরও সেই মুহুর্তে চোখ মেলে তাকালো। আদিত্যর নেশালো নজরে নজর পড়তেই লজ্জায় হঠাৎ উল্টো হয়ে ঘুরে গেল সে। জানালার গ্রীল ধরে হাঁপাতে লাগল সে। আদিত্য পেছন থেকে পিঠের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলো। পেছনের ফিতাটা একটানে খুলে ফেলল সে। ফর্সা মোলায়েম পিঠে আলতো করে কামড় বসালো এবার আদিত্য। নূরের অবস্থা করুন। দাঁড়িয়ে থাকা দায় তার। গ্রীল চেপে ধরে থরথর করে কেঁপে যাচ্ছে নারী। পিঠেও অজস্র চুমুতে ঢেকে দিলো আদিত্য। নূরের কাঁধ ধরে আস্তে করে সামনে ঘোড়ালো তাকে। বিবশ নূর ঝট করে আদিত্যর বুকের মাঝে নিজের আশ্রয় খুঁজল। নিজেকে লুকিয়ে ফেলার ইচ্ছে যেন। আদিত্য ঝুঁকে কোলে তুলে নিলো তাকে। নূরকে নিয়ে এসে ফুলে সাজানো বিছানায় শুইয়ে দিলো। মিলিত করলো অধরে অধর। ডুব দিলো অতল সমুদ্রে। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে নিলো নূরকে। দুজন দুজনাতে খুঁজে পেল নতুন মোহনা।
চলবে……
#মরুর_বুকে_বৃষ্টি(S-2)
পর্ব-৪১
★ঘুমের মাঝেই মুখের উপর পানির ছিটা পড়তেই কপাল কুঁচকে চোখ মেলে তাকালো আদিত্য। বালিশের উপর উবু হয়ে ঘুমিয়ে ছিলো সে। উন্মুক্ত শরীরের কোমড় পর্যন্ত সাদা চাদরে ঢাকা। চোখ মেলে তাকালে সে সাক্ষী হয় এক অপরুপ দৃশ্যের। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভেজা চুল ঝাড়ছে তার একান্ত আপন রমণী, তার বঁধুটি। সেই চুলের পানির ছিটাই এসে লেগেছে তার মুখে। সদ্য শাওয়ার নিয়ে এসেছে সে বোঝা যাচ্ছে। আকাশী রঙের সুতীর শাড়ি তার অঙ্গে।কাঁধ হালকা বাঁকিয়ে ভেজা চুল একপাশে এনে তোয়ালে দ্বারা পুঁচছে তা। চুলের পানিতে পেছনের অনেকটা অংশ ভিজে গেছে। কোমড়ের উন্মুক্ত স্থানে বিন্দু বিন্দু পানির কণা জমে যেন মুক্ত দানার মতো চিকিচিক করছে। সাথে গলা,ঘাড়,পিঠে গতরাতে আদিত্যর দেওয়া ভালোবাসার চিহ্ন গুলোও জ্বলজ্বল করছে। সকাল সকাল চোখ খুলে এমন অপূর্ব মোহনতা দেখে যেন আদিত্যর হৃদয়,মন বিমোহিত হয়ে গেল মুহুর্তেই। সকাল যে কখনো এত সুন্দরও হতে পারে তা জানাই ছিলোনা তার। যেমন গতরাতটা ছিলো তার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর রাত,তেমনি আজকের সকালটাও আদিত্যর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সকাল। যতটা সুন্দর হলে মানুষ নিজেকে পৃথিবীর সর্বসুখীর জায়গায় পায়। নূরের উপস্থিতি মানেই তার জীবন সুখের সাম্রাজ্য। সর্বসুখী সে। বিছানা ছেড়ে ধীরে ধীরে দাঁড়াল আদিত্য। সাদা চাদরটাই কোমড়ে পেঁচিয়ে বাঁধল পড়নে। তারপর এগুলো নূরের দিকে। নজরের সীমানা জুড়ে মুগ্ধতা আর নেশার ঘনঘটা। নূর তখনও নিজের মতোই চুল ঝাড়তে মগ্ন। হঠাৎই নিজের শীতল কোমড়ে উঞ্চ হাতের স্পর্শে কেঁপে উঠে আয়নায় দৃষ্টি তুলে তাকালো নূর। নিজের পেছনে আদিত্যকে দেখে তৎক্ষনাৎই লাজে রাঙা হলো তার মুখমণ্ডল। থতমত গলায় বলল,
“উঠে পড়েছ তুমি!”
তৎক্ষণাৎ জবাব দিলোনা আদিত্য। নূরের শাড়ির ফাঁকে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো সে। মুখ নামিয়ে নূরের কাঁধে জমে থাকা পানির কণা নিজের অধর লাগিয়ে শুষে নিলো। চোখ বুঁজে হাতে তোয়ালে চেপে ধরল নূর। আদিত্যর অধরের চলন বাড়ল। কাঁধ থেকে পিঠে অধর লেপ্টিয়ে নিয়ে এলো। সকল জলকণাগুলো একইভাবে টেনে নিলো সে। হাতের বিচরণ আরও সুগভীর হচ্ছে। নূরের ভারী নিঃশ্বাসের পালা বাড়ছে। পায়ের আঙুল গুলো ভাজ হয়ে চেপে এলো তার। পিঠ থেকে মুখ তুলে এবার কানের কাছের চুলে নাক ডুবালো আদিত্য। চুলে নাক ঘষতে ঘষতে নেশাময় কন্ঠে বলল,
“গুড মর্নিং এঞ্জেল! আমার জীবনে এই সকালটা আনার জন্য অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। এমন সকাল আমি রোজ চাই। প্রতিটা মুহূর্ত তোমার রঙে রাঙাতে চাই৷ তোমার সুবাস আমার নিঃশ্বাসে চাই প্রতিক্ষণ। আমার বলতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই আমার মাঝে। সব তোমার মাঝে বিলীন। শুধু তুমিতেই আমি অমলিন।”
নূর চোখ বুঁজে শুনে যাচ্ছে আদিত্যর অনুভূতি বার্তা। সুখময় অনুভবে হৃদয় নিমজ্জিত। তনু মনে হাজা রঙের প্রজাতির মেলা জমছে। খানিক বাদে চোখ মেলে তাকিয়ে লাজুক সুরে নূর বলল,
“যাও, শাওয়ার নিয়ে এসো। আমি তোমার কাপড়চোপড় বের করে দিচ্ছি।”
বলেই নূর আদিত্যর বাহুডোর থেকে বেড়িয়ে চলে যেতে নিলো। কিন্তু তা হতে দিলোনা আদিত্য। পেছন আঁচল টেনে ধরল সে। নূর থেমে গিয়ে কাঁধে হাত দিয়ে তার আঁচল চেপে ধরল। আদিত্য আচল ধরে একটু জোরে টান দিলে নূর আবারও এসে আদিত্যর বুকে পড়ল। আদিত্য নূরের কোমড় ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুড়ালো। গালে আঙুল বুলিয়ে থুতনি ধরে মুখ উঁচু করে তুলে ধরল।লাজে রাঙা গাল আর ফর্সা নাকটাতে ডায়মন্ডের ছোট্ট নাকফুলটা চিকচিক করছে। বউটাকে যেন এতে আরও আকর্ষণীয় লাগছে। আদিত্য চুমু খেল নাকফুলের স্থানে।তারপর দুষ্টু হেঁসে বলল,
“কোথায় পালাচ্ছ বউ! আমার মর্নিং কিস কোথায়? আগে মর্নিং কিস তারপর বাকিসব।”
নূর লাজুক হেঁসে বলল,
“কোনো কিস টিস হবে না। আগে যাও গোসল সেরে এসো। এমনিতেই উঠতে দেরি হয়ে গেছে। বাইরে গেলে সবগুলো লজ্জা দিয়ে মেরে ফেলবে দেইখো।”
“উহুম,ডোন্ট চেঞ্জ দ্য টপিক ওয়াইফি। আগে মর্নিং কিস হবে। তানা হলে কোথাও যাওয়া যা-ই নেই। এখন থেকে ঘুম থেকে উঠে সবার প্রথম আমার মর্নিং কিস চাই। নাহলে হবে না। এখন ফটাফট কিস দাও চলো।”
“কি দুষ্টুমি শুরু করলে সকাল সকাল! ছাড়োনা প্লিজ!”
“কিস না দিলে ছাড়াছাড়ি নেই।”
নূর বুঝল আদিত্য তাকে এভাবে ছাড়বেনা। অগত্যা নূর ঝট করে আদিত্যর গালে এজটা চুমু খেয়ে লাজুক মুখ করে বলল,
“নাও দিয়েছি। এখন ছাড়ো প্লিজ! ”
আদিত্য সরু চোখে তাকিয়ে বলল,
“এটা কি ছিলো! আমি কি বাচ্চা নাকি! বুঝতে পারছি তোমার দ্বারা হবে না। আমারটা আমাকেই নিতে হবে।”
বলেই নূরের সাথে অধর মিলিত করল আদিত্য। সময় নিয়ে নিজের কাজ সম্পন্ন করল সে। নূর মাথা নুইয়ে লজ্জায় মরি মরি হয়ে বলল,
“এখনতো যাও। গোসল করে এসো।”
“সে যাবো, আগে বলো তুমি আমাকে রেখে আগেই উঠেছ কেন?”
“আরে আমার ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তো আমি কি করব!এমনিতেই এত বেলা হয়ে গিয়েছিল আর কতো ঘুমাবো!”
“যতক্ষণ আমি না উঠি। ঘুম ভেঙে গেলেও আমার বুকের মাঝে শুয়ে থাকবে তুমি।”
“আচ্ছা বাবা সরি। এখন যাও প্লিজ গোসল সেরে আসো।”
“তুমিও চলো আমার সাথে। একসাথে গোসল করবো আমরা।”
“কিন্তু আমিতো এইমাত্র গোসল করে আসলাম।”
“হ্যাঁ তো কেন করলে? আমাকে রেখে একা একা গোসল করতে কে বলেছে তোমাকে! এখন আমার সাথে আবার চলো।”
“এই না না প্লিজ! গোসল করে এসে আবার কেউ গোসল করে!”
আদিত্য দুষ্টু হেঁসে বলল,
“ঠিক আছে,তাহলে আবার নাহয় গোসল করার কারণ দিয়ে দেই তোমাকে!”
আদিত্যর মতলব বুঝতে পেরে নূর চোখ বড় বড় করে বলল,
“এই এই, দেখ! এখন এসব মাথায় আনবেনা কিন্তু একদম!”
বলেই নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আদিত্যকে ঠেলে ওয়াশরুমের দিকে পাঠাতে চাইলো। আদিত্য হাসতে হাসতে বলতে লাগল
“আরে সত্যি বলছি এঞ্জেল! এসোনা, মজা হবে অনেক।”
অনেক কষ্টে ঠেলেঠুলে আদিত্যকে ওয়াশরুমে পাঠাতে সক্ষম হলো নূর। ওয়াশরুমে ঢুকেও আদিত্য দরজার ফাঁক দিয়ে মাথা বের করে বলল,
“আরেকবার ভেবে দেখো এঞ্জেল! এমন সুযোগ হাত ছাড়া করতে নেই।”
নূর দরজা টেনে লাগিয়ে দিলো আদিত্যর মুখের উপর। ভেতর থেকে আদিত্যর হাসির আওয়াজ শোনা গেল। নূরও লাজুক হেঁসে দুই হাতে মুখ ঢেকে ফেলল।
__
রেডি হয়ে একটু পড়ে নিচে নেমে এলো আদিত্য-নূর। বাকিরা ততক্ষণে নাস্তার টেবিলে এসে পড়েছে। আদিত্যদের আসতে দেখেই আবির চেয়ারে আয়েশি ভঙ্গিতে গা এলিয়ে দিয়ে মুখ বানিয়ে বলল,
“ভাই আজকাল কি দিন এসে গেল। লিপস্টিক খাওয়া পাবলিক আবার খাবারও খেতে আসে! মানে লিপস্টিকও তারাই খাবে আবার খাবারও তারাই খাবে। আর আমরা গরুর ঘাস খাবো! মানবতা আজ কোথায়!”
আবিরের কথায় আদিত্যর মাঝে তেমন ভাবাবেগ না হলেও নূর লজ্জায় মরি মরি। বিহান পাশ থেকে বলে উঠল,
“তো তোরে কেঠাই ঠেকাইছে! যানা তুইও লিপস্টিকের ডিনার কর।”
আবির তখন আরচোখে আহানাকে দেখে বলল,
“খাইতে দিলেতো কেউ! একজন অনাহারী এখানে লিপস্টিকের পিপাসায় অনাহারে মরে যাচ্ছে। মরুভূমির বুকে যেমন পথিক পানি না পেয়ে ছটফটিয়ে মরে যায় তেমনি আমিও লিপস্টিক না পেয়ে মরে যাচ্ছি। অথচ কোনো সহৃদয়বান নারীর দয়াই হচ্ছে না আমার উপর! একজন মৃত্য পদযাত্রীকে একটু স্ট্রবেরি ফ্লেভারের লিপস্টিকের আহার দিয়ে বাঁচিয়ে তোলার মতো কি কেউ নেই! কি নির্দয় নারী জাতি! মানবতা আজ নর্দমায়!”
বিহান আর আদিত্য হাসতে লাগল ওর কথায়। আহানা পাশ থেকে কটমটে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। আদিত্য তখন বলে উঠল,
“বিষয়টা আসলেই গুরুতর গাম্ভীর্যপূর্ণ। এটাকে লাইটলি নেওয়া যাবে না একদম! আমাদের বন্ধুটাকে এভাবে লিপস্টিকের অভাবে অকালে মরতে দিতে পারিনা আমরা। কি বলিস বিহান! আমাদের অবশ্যই তাকে লিপস্টিকের ব্যবস্থা করে দেওয়া উচিত তাইনা!”
বিহানের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো আদিত্য। বিহান বুঝতে পেরে মাথা ঝাকিয়ে বলল,
“হ হ এক্কেরে হাঁচা কতা কইছচ। আমগো লুঙ্গি ফাটা দোস্তোরে এমতে মরবার দিবার পারিনা আমরা।”
আবির নাক টেনে নেকা সুরে বলল,
“তোরা আমাকে এত ভালোবাসিস! আমারতো জানাই ছিলোনা। কাঁদাই দিলি পাগলা! আমি জানতাম তোরা বুঝবি আমার দুঃখ।”
আদিত্য বলল,
“তাহলে কি বলিস করে দেই লিপস্টিকের ব্যবস্থা!”
আবির মাত্রাতিরিক্ত লাজুক ভঙ্গিতে বলল,
“তোরা যখন বলছিস তাই কথা ফেলতেতো আর পারিনা।”
“হাউ সুইট! তাহলে কালই চল।”
“কোথায়?”
“আহানাদের বাড়ি। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”
গলায় খাবার আঁটকে গেল আবিরের। কাশি উঠে গেল জোরে জোরে। কাশতে কাশতে চোখ বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম বেচারার। কথার মোড় হঠাৎ এভাবে ঘুরবে বুঝতে পারেনি সে। আহানাও অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল এই কথায়। তবে মনের মাঝে অজানা খুশিও কাজ করছে বটে। তার মন যে সেই নাজানি কবে থেকে আবিরের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু এই বেপরোয়া মানবের সেই খেয়াল কই। ভালোবাসাটা বুঝতেই এতবছর লাগিয়ে দিলো! সেখানে বিয়ের কথা আর কি বলবে! আবির কোনোরকমে কাশি থামিয়ে থতমত গলায় বলল,
“বি…..বিয়ে! বিয়ের কথা কোথাথেকে আসলো হঠাৎ!”
“আরে তুইতো আমাদের দেখে আপসোস করছিলি। তো এখন তোকেও আমাদের কাতারে আনবো। তাহলেতো আর আপসোস হবে না। তখন তুইও ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ আর ডিনার তিনবেলা লিপস্টিকের আহার করিস যতখুশি। কেউ ঠেকাবে না।”
আবির ফিচেল হেঁসে বলল,
“আ….আরে আমিতো মজা করছিলাম। তোরাতো দেখি সিরিয়াস হয়ে গেলি। আরে আবিরের কথা আর কুমিরের কাঁদা দুটো একই সমান৷ এদের কোনো অস্তিত্ব নেই।”
“আরে না না তা বললে কি হয়! লিপস্টিকের অভাবে তোকে কি মরতে দিতে পারি আমরা! কিছুতেই না।”
“আরে ধুর,আমার কোনো লিপস্টিকের চাহিদা নেই। আরে আমারতো চরম এলার্জি আছে লিপস্টিকে। এতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মরার সম্ভববনাও আছে আমার। তাইতো টিভিতে লিপস্টিকের এড এলেও আমি চোখ বন্ধ করে বসে থাকি। সত্যি বলছি। এখন এসব বিয়ের টপিক ছাড়তো।”
আবিরের কথার পর হঠাৎ আহানা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। মলিন মুখে সবার উদ্দেশ্যে শুধু বলল,
“আমি এখন আসি। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষ। এখন ফিরতে হবে আমাকে। বাসা থেকে ফোন দিয়েছিল।”
বলেই আহানা চেয়ার সরিয়ে চলে যেতে নিলো। সবাই বুঝতে পারল আহানা মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে। হিয়া তখন আহানার উদ্দেশ্যে বলল,
“আরে এত তাড়াতাড়ি যাওয়ার কি হলো! আজকের দিনটা থেকে যাও। তোমার বাসায় আমি কথা বলে নিবো।”
আহানা মাথা নুইয়ে কাঁধের ভ্যানিটি ব্যাগের ফিতা টানতে টানতে বলল,
“না ভাবি যেতে হবে আমাকে। সামনে এক্সাম। পড়া মিস যাচ্ছে আমার।”
“আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু একা যাবে কেন? আবির ভাইয়া তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আসবে বাসায়।”
“সমস্যা নেই ভাবি৷ আমি একাই যেতে পারবো। কাউকে পেরেশান হতে হবে না। আসি।”
বলেই আহানা দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে গেল। আবির তার যাওয়ার পানে স্থির তাকিয়ে রইলো। আদিত্য তখন গম্ভীর সুরে বলল,
“দিলিতো মেয়েটার মন খারাপ করে! সমস্যা কি তোর! সারাজীবন কি এমন সন্ন্যাসী হয়েই থাকবি! মেয়েটাকে আর কত কষ্ট দিবি তুই! আমি জানি তোর বিয়ের উপর বিশ্বাস নেই। তোর বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হওয়া দেখে এই ধারণা পোষণ করিস তুই। কিন্তু তুই কবে বুঝবি যে দুনিয়াতে যেমন সব মানুষ এক হয়না তেমনি সব সম্পর্কও একরকম হয়না। বিয়ের বন্ধনে মানুষ সুখী হয় এমন উদহারন হাঁড়ী হাঁড়ী আছে। তুই কেন শুধু খারাপ উদাহরণটা নিয়েই পড়ে থাকবি সারাজীবন! আমি বলছিনা স্বামী স্ত্রীতে বিভেদ হয়না। তাই বলে কি ভালোবাসা শেষ হয়ে যায়! দেখ এখনো সময় আছে। নিজেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আন। ঘরমুখো জীবন কর। নাহলে সারাজীবন ছন্নছাড়া পথিক হয়েই ঘুড়বি। সবকিছু হারিয়ে শুধু শূন্যতা ভাড় ছাড়া কিছুই পাবি না।”
নূর তখন কোমল গলায় বলল,
“ও ঠিকই বলেছে ভাইয়া। আর আহানা যথেষ্ট ম্যাচিউর আর সহনশীল বুদ্ধিমত্তা সম্পূর্ণ মেয়ে। ওর চোখে আমি আপনার জন্য ভালোবাসা দেখেছি। আমি জানি ও আপনাকে ঠিকই সামলে নিবে নিজের মতো করে। শুধু একটু হাত বাড়ানোর দরকার আপনার। দেখবেন ও নিজেই আপনার জীবনের সকল পথ সুগম করে দিবে।”
আবির কিছু বলছে না। সুবোধ বালকের মত শুধু চুপচাপ শুনে গেল ওদের কথা। আদিত্য বলল,
“এখন গাধার মতো বসে না থেকে যা মেয়েটাকে মানা।”
কথাটা বলতেই আবির দ্রুত উঠে গেল বাইরের দিকে। আদিত্য ফোঁৎ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“এবার যদি গাধাটার মাথায় একটু সুবুদ্ধি হয়!”
আবির দ্রুত বাইরে এসে দেখলো আহানা এখনো যায়নি। পুল সাইডের ছাতা বিশিষ্ট চেয়ারে বসে আছে। আবির এগিয়ে গেল সেদিকে। কাছাকাছি যেতেই বুঝতে পারল আহানা কাঁদছে। আবির কাছে এসে বলে উঠল,
“কিরে বিয়ের আগেই বিধবাদের মতো মরা কান্না করছিস কেন? নাকি আমাকে লিপস্টিক না খাওয়ানোর শোকে কাঁদছিস? ব্যাপার না এখনো চাইলে খাওয়াতে পারিস। তুইতো জানিসই আমি কতো মহান। কারও কান্না দেখতে পারিনা আমি।”
আবিরের কথার বিপরীতে আহানা দ্রুত চোখ মুছে উঠে চলে যেতে পা বাড়াল। কিন্তু যেতে পারলোনা। আবির তার হাত ধরে টান মেরে নিজের বাহুডোর আঁটকে ফেলল। আহানা মোচড়ামুচড়ি করে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য সর্বশক্তি লাগালো। কিন্তু ছাড়লোনা আবির। এক পর্যায়ে ফুঁপিয়ে উঠল আহানা। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“ছাড়ুন আমাকে। যেতে দিন। কেন আঁটকে রেখেছেন? ”
আবির দুষ্টু হেঁসে বলল,
“স্ট্রবেরি চুমু নিতে। যাওয়ার আগে পাওনা শোধ করেতো যা। তা-নাহলে যেতে দিচ্ছি না কোথাও।”
ক্ষিপ্ত অশ্রুসিক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করল আবিরের পানে। নাক ফুলিয়ে চোয়াল শক্ত সর্বশক্তি দিয়ে আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো সে। আবারও যেতে উদ্যত হলো। আবির এবার দৌড়ে সোজা আহানাকে কাঁধের উপর তুলে নিলো। আহানা হাত পা ছোড়াছুড়ি করতে লাগলো নিজেকে ছাড়ানোর জন্য। আবিরের পিঠে কিলাতে লাগলো রাগে। কিন্তু কাজ হলোনা কিছুতেই। আবির তাকে নিয়ে আবারও পুলের পাশের চেয়ারে এনে বসালো। নিজেও বসলো তার পাশে। কিন্তু আহানা উঠে চলে যেতে চাইলো আবারও। আবির আহানার দুই বাহু ধরে ধমকে উঠে বলল,
“চুপ! একদম নড়বি না। একটু নড়বিতো উঠিয়ে পুলের পানিতে ছুঁড়ে মারবো। কখন থেকে তিড়িং বিড়িং করছিস। পুরো এনার্জি শেষ করে দিলি আমার।”
আহানা অভিমানী সুরে বকল,
“কে বলেছে শেষ করতে! ছেড়ে দিন আমাকে। কেন আঁটকে রেখেছেন? আপনিতো চান না আমাকে। আমার যা খুশি হয়ে যাক তাতে আপনার কি! আপনি আপনার সিঙ্গেল লাইফ নিয়ে খুশি থাকুন। আমি আমার বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে চলে যাবো আপনার জীবন থেকে। আর কোনো ভেজাল থাকবেনা।”
“চুপ ইডিয়ট! অনেক বেশি প্যাটর প্যাটর করা শিখে গেছিস তুই। পানিতে চুবালে মগজ ঠিকানায় চলে আসবে তোর।”
আহানা অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে অশ্রু ঝড়াতে লাগলো। আবির এক হাতে আহানার মুখ ঘুরিয়ে কপালে কপাল ঠেকিয়ে শান্ত সুরে বলল,
“এমন করছিস কেন আন্নি! শান্ত হ না! এক তুইতো বুঝিস আমাকে। হ্যাঁ তোকে আমার চাই। তোকে হারাতে চাইনা কখনো। কিন্তু বিয়ে নামক জিনিসটাকে আমি অনেক ভয় করি। ভয়টা আমার নিজের জন্যই বেশি। আমার নিজের উপর ভরসা পাইনা আমি। আমি স্বামীর দায়িত্ব আদৌও ঠিকভাবে পালন করতে পারবো কিনা এই ভয় পাই আমি৷ আমার মাঝেও সেই একই র,ক্ত বইছে। যদি আমিও একই রকম করি। তোকে যদি সেই একই পরিণতি দেই তাহলে সেদিন বেঁচে থেকেও মরে যাবো আমি। এই ভয়েই আমি সবসময় বিয়ের বন্ধনকে দূরে রাখি।”
আহানা এবার যেন একটু নরম হলো। দুই হাতে আবিরের মুখটা ধরে শান্ত সুরে বলল,
“আমার উপর কি ভরসা নেই আপনার? আমি আছিতো। আপনার র,ক্তে বিচ্ছেদ থাকলে আমার রক্তেও বন্ধনের শক্তি আছে। আমি নাহয় দুজনের পক্ষেরটা একাই সামলে নিবো। শুধু একটু আমার হাতটা ধরে নিজের জীবনে আসার সুযোগ দিন৷ তারপর সব দায়িত্ব আমার।”
“কিন্তু বিয়ে করবো কিভাবে? পোশাক কেনার আগে একটু ট্রায়ালতো হয়! তো বিয়ে পার্মানেন্টলি হওয়ার আগে একটু ট্রায়ালতো দে। লিপস্টিক খাওয়ার ট্রায়াল।”
বলেই চোখ টিপ মেরে দুষ্টু হাসলো আবির। আহানা আবিরের বুকে কিল মেরে বলল,
“সে গুড়ে বালি। আগে বিয়ে তারপর সব।”
আবির হঠাৎ উচ্চস্বরে গলা উঁচিয়ে বলল,
“আদি,বিহান! কাজী ডাক জলদি। আজতো লিপস্টিক সংঘটন সম্পন্ন করেই ছাড়বো।”
আহানা চোখ বড় বড় হতভম্ব চোখে তাকিয়ে বলল,
“আজ বিয়ে মানে! কি বলছেন এসব?”
“থাক আর ঢং করতে হবে না। আমাকে লুটেপুটে খাওয়ার জন্যইতো এত কারসাজি তোর! অবলা ছেলেটাকে আর আস্ত রাখবিনা তুই! ভায়োলেন্ট বেডি! নাজানি কি হবে আমার এখন!”
আহানা হেঁসে দিয়ে মুখ গুঁজল আবিরের বুকে। আবির জোরে জোরে গানের সুর ধরে বলল,
♬ওরে আয় আয় আয়, ভীষণ প্রেমের ঝড় উইঠাছে আমার অন্তরায়…….
চলবে……