অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-১১

0
225

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [১১]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

প্রিয় পুরুষের স্পর্শ পেলে যেকোনো নারী মোমের ন্যায় গলে যায়। কন্ঠের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয়নি,সেও এখন প্রিয় পুরুষের স্পর্শে কেঁপে উঠছে বারংবার।

” আআপনাকে আমি বুঝতে পারছি না।”

কন্ঠের প্রশ্ন শুনে ঘাড় থেকে মুখ তুলে তাকায় তূর্য, ভালো করে পরখ করে দেখতে পায় চোখে মুখে লজ্জা।উঠে বসে তূর্য,উশকখুশক চুল গুলো হাতে নেড়ে পুর্ণ দৃষ্টি দেয় কন্ঠের দিকে।
কিছুক্ষণ আগেই পড়তে পড়তে ঘুমে চোখ লেগে আসছিল তার,এটা বুঝতে পেরে তূর্য বই খাতা গুলো নিয়ে গুছিয়ে রেখে দেয়। পিটপিট চোখে তাকিয়ে থাকে কন্ঠ,হুট করেই কন্ঠ কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুজে দেয়।কিয়ৎক্ষণের জন্য থমকে যায় কন্ঠ,যখন ব্যাপারটা বুঝতে পারছে তখন লজ্জায় নিজেকে খানিকটা গুটিয়ে নেয়। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর তূর্য আলতোভাবে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়। মৃদু কেঁপে উঠল কন্ঠ, অতঃপর প্রশ্ন করে বসে তূর্য কে।

” রাত অনেক হয়েছে শুয়ে পড়ো।”

কথাটা বলে বেড সাইডের লাইটা অফ করে দেয় তূর্য,গা এলিয়ে দেয় বিছানায়। তপ্ত শ্বাস ফেলে কন্ঠ, অতঃপর সেও বালিশে মাথা রেখে আবেশে চোখ বুজে নেয়,ঠিক সেই মুহূর্তে তূর্য আরেক দফা চমকে দিয়ে কন্ঠের পেটের উপর হাত রাখে।পাশ ফিরে তাকাল কন্ঠ, তূর্য চোখ বন্ধ রেখেই আওড়াল।

” কাল যেতে হবে না বাড়িতে? ঘুমাও।”

কন্ঠ কথার পিঠে কিছু বলল না, নিশ্চুপ হয়ে শুয়ে পড়ল। দু’জন কপত কপতি বিচরণ করল ঘুমের রাজ্যে।
____________
সকাল সকাল তূর্য, কন্ঠ এবং ফুপাতো বোন নূর তিন জনে মিলে রওনা দিল কন্ঠের মামার বাড়িতে।যেটাকে সে নিজের বাড়ি বলেই মনে করে।
গাড়ি জানালা খুলে দেয় কন্ঠ, বাতাস স্পর্শ করে তার এলোমেলো চুল গুলো কে।যার কারণে এলোমেলো চুল গুলো আরো বেশী মন খুলে উঠতে শুরু করে,ওর এমন অবস্থা দেখে স্ফীত হাসে নূর,সেও বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।বার বার লুকিং গ্লাস দিয়ে কন্ঠের মুখশ্রী দেখছে তূর্য, চোখাচোখি হওয়া মাত্র চোখ সরিয়ে নেয় সে।

বাড়িতে অনেক তোড়জোড় চলছে কন্ঠ জামাই কে নিয়ে আসবে বলে।তুফায়েল নিজ দায়িত্বে সবটা করছে,আহাদ আহমেদ এবং সাহাদ আহমেদ মিলে বাজার করে নিয়ে আসলেন।তনয়া আহমেদ ভালো ভালো রান্না করেছেন, তাতে কিছুটা সাহায্য করেছে আনিকা আহমেদ। তবে ওনার মধ্যে তেমন একটা উৎসাহ নেই কন্ঠের আসার জন্য।

সন্ধ্যায় দিকে বিছানায় শুয়ে আছে কন্ঠ,দু ঘন্টা হয়েছে ওরা এসেছে। আজ এক প্রকার কন্ঠের খুশীর দিন, ভীষণ আনন্দ লাগছে। বাড়িতে পা রাখা মাত্র আহাদ আহমেদ আজ নিজ থেকে তাকে জড়িয়ে ধরেছে,মা চলে যাওয়ার পর এই মানুষটি তাকে কখনোই কাছে টেনে নেয় নি, কিন্তু আজ?এত সুন্দর একটা মুহূর্ত ছিল বলার মত নয়, সবার সাথে বেশ কথা হয়েছে আজ। কিন্তু রিয়া বেশ মুখ গো’ম’ড়া করে রেখেছিল।যখন কথা বলল তখন কন্ঠ কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিয়েছিল মেয়েটা।কল কেন ধরলাম না?কথা কেন বললাম না?এসব নিয়ে বেশ অভিমান করেছিল সে। কিন্তু কেউ কখনো কী নিজের বোনের সাথে বেশিক্ষণ অভিমান করে থাকতে পারে?সেও পারেনি। অতঃপর দুই বোন এক সাথে অনেক ভালো সময় পার করল,তার মধ্যে খানিকটা মন খারাপ হলো, কাল তাকে চলে যেতে হবে, তার উপর বড় ভাই তুফায়েল কাজের জন্য মালয়েশিয়া যাচ্ছে।কবে ফিরবে কে জানে?

গ্রীবা দেশে কালো উষ্ণ স্পর্শ পেয়েই পুলো শরীরে শিহরণ খেলে গেল, ঘুরে তাকাতেই দেখলো তূর্য কে। নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে সে, আচ্ছা লোকটির মাঝে মাঝে কী হয়?যখন ইচ্ছে কাছে আসেন আবার হুট করে দূরে চলে যায়।
কন্ঠ হুট করে প্রশ্ন করে বসলো।

” আপনি কন্ট্রোল করতে পারেন না তাই না?”

ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে তূর্য,কী কন্ট্রোল করতে পারে না সে? কন্ঠ নিজের করা প্রশ্ন শুনে নিজেই থতমত খেয়ে গেল। তূর্য পকেটে দু হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে জিগ্যেস করে।

” কী কন্ট্রোল করতে পারি না??”

কন্ঠ হঠাৎ যেন লাজু লতার মত নুইয়ে পড়ে, নাকের ডগায় সুড়সুড়ি লাগছে ভীষণ, ইস্ হঠাৎ কী জিজ্ঞেস করে ফেলল?
তূর্য মাথা খানিকটা ঝুঁকিয়ে বলল।
” তূর্য খান সব কিছু পারে।”

কন্ঠ দু পা পিছিয়ে গিয়ে দাঁড়ায়,এই লোকটার মতিগতি বোঝা বড় দায়।
হাতের ঘড়ি খুলে বিছানার পাশে সাইট টেবিলের উপর রেখে দেয় তূর্য, আবার ফিরে তাকাল কন্ঠের দিকে।

” ঘুমাতে এসো।”

তূর্য বিছানায় গিয়ে বসে, কন্ঠ এক পলক দেখে দেয়ালে টাঙ্গানো ঘড়িটাতে। ঘড়ির কাঁ’টা দশটা ছুঁই ছুঁই করছে।

” মাত্র দশটা বাজে স্যার, এখুনি ঘুমিয়ে যাব?”

সরু দৃষ্টি আকর্ষণ করে তূর্য।হুট করে বলে উঠলো।
” তাহলে চলো সাপ লুডু খেলা যাক।”

আরেক দফা লজ্জার সম্মুখীন হতে হয় কন্ঠ কে,এই স্যার কে একদম চিনতে পারছে না সে।

” খেলবে?”
নাকের পাটাতন ফুলে উঠে কন্ঠের,ধমক সহকারে বলে উঠে।

” অসভ্য কথাবার্তা।”

তূর্যের মুখ কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল,এই কথা গুলো অস’ভ্য কেমনে হলো?
বিছানায় গিয়ে গুটিসুটি হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল কন্ঠ, তূর্য কথা বাড়াল না, শুয়ে পড়ে।
___________

সকালে ঘুম থেকে উঠে গায়ে চাদর জড়িয়ে বাইরে হাঁটতে বের হয় কন্ঠ,বেশ ঠান্ডা পড়েছে।পড়বে না-ই বা কেন?গরম তো আর কম ছিল না? গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে এবার ঠান্ডা বেশ পড়বে বলে মনে হচ্ছে।

গুট গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে সেই,সাত সকালে বেরিয়ে কাউকে না বলেই,তবে এবার বেশ খারাপ লাগছে। জানিয়ে আসলে বোধহয় ভালো হতো।
এটা সেটা ভেবে বাড়ির পথে রওনা দেয় কন্ঠ, দেখতে এসেছিল সেই, আর মাত্র কিছু সময় একটু পরেই তো ওরা চলে যাবে।

নানা রকম খাবারের আয়োজন করেছে তনয়া আহমেদ, ওনাকে টুকিটাকি সাহায্য করেছে আনিকা আহমেদ।

তূর্য ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে, কন্ঠ কে খুঁজছে চারিপাশে, কিন্তু কোথাও নেই সে। হঠাৎ দেখা হলো আহাদ আহমেদের সাথে,উনি সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে সোফায় বসতে বলল। তূর্য সাধারণত কারো পায়ে ধরে সালাম করে না,তবে মুখে অবশ্যই করে। আজকেও তাই করল,আহাদ আহমেদ কে মুখে সালাম দিল, উনিও বেশ আনন্দিত হয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বললেন।

” বাবা তূর্য তুমি বেশ ভালো ছেলে আমি জানি আমাদের কন্ঠ তোমার ওনাকে ভালো থাকবে।আর এটাও মানি তুমি আমাদের মেয়ের খেয়াল রাখবে।”

তূর্য খানিকক্ষণ কিছু একটা ভেবে বলল।
” ইনশাআল্লাহ, কন্ঠ এখন খান বাড়ির বউ,ওর কোনো অসুবিধে হবে না।”

সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেলো কন্ঠ গায়ে চাদর জড়িয়ে ভেতরে আসছে।আহাদ আহমেদ কে দেখে খানিকটা গুটিয়ে নিল নিজেকে, নিশ্চুপ ভঙিমায় মাথা নিচু করে রান্না ঘরে চলে গেল।যেতে যেতে পিছন ফিরে এক নজর দেখে নিল তূর্য কে, তূর্য তখনো ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখাচোখি হওয়া মাত্রই চোখ সরিয়ে রান্না ঘরে প্রবেশ করে।

দুপুরের দিকে রওনা দেয় খান বাড়িতে কন্ঠ আর তূর্য,আসার সময় অনেক কেঁদেছে কন্ঠ। ফলস্বরূপ এখন ভীষণ মাথা ব্যথা করছে, তূর্যের ঘাড়ে মাথা রেখে শুয়ে আছে সে।ঘুম যেন দু চোখ ভরে উঠেছে, সবাই কে ছেড়ে আসার য’ন্ত্র’না খুব বেশী হয়।
__________
কলেজের গেটে দাঁড়িয়ে আছে কন্ঠ, মাত্র এসেছে কলেজে। ভেতরে যাওয়ার পূর্বে তূর্য কে বলল গাড়ি থামাতে, হঠাৎ গাড়ি থামানোর কথা শুনে অবাক হয় সে। জিজ্ঞেস করে।

” কেন কী হয়েছে?”

কন্ঠ ফুস করে শ্বাস টেনে বলে।
” আপনার সাথে যাবো না, আমার অস্বস্তি হয়।”

স্ফীত হাসে তূর্য,মেয়ে যে বড্ড বেশী অবুঝ।মূলত ভীষণ লজ্জা লাগছিল কন্ঠের,আগে একা একা রিয়া এবং সে হেঁটে আসতো। কিন্তু এখন স্যারের সাথে এক গাড়ি কলেজে আসতে ভীষণ অস্বস্তি লাগছে,ব্যাপরটা বুঝতে পেরে তূর্য কন্ঠ কে নামিয়ে দেয়।

ক্যাম্পাসের ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখল রিয়া,সোহা,তাহিয়া,সান,তারিফ দাঁড়িয়ে আছে।কেউ ভ্রু কুঁ’চকে তাকায় আবার কেউ কপালে হাত,কেউ বা কোমড়ে আর রেখে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁ’ড়ে দিচ্ছে দিকে। ওদের দেখে শুকনো ঢুক গিলে নেয় কন্ঠ,মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
ওদের কাছে যাওয়া মাত্র সোহা,তাহিয়া কন্ঠের উপর হা’ম’লে পড়ে।

” ওমা ছাড় ছাড় কী করছিস তোরা ব্যথা লাগছে?”

কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তারিফ,সান সোহা এবং তাহিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে।

” উড়াধুড়া দে,কী ডাই’নি বিয়ে হতে না হতেই আমাগো ভুলে গেলো?”

কন্ঠ রিতিমত দৌড়ে ওদের থেকে পালিয়ে যায়, ক্লাসে ঢুকা মাত্র দেখলো আজ সিডিউলে প্রথম ক্লাস তূর্য স্যারের।
বেশ হিজিটেড লাগছে কন্ঠের, কিন্তু তার কারণ অজানা।বাকি সবাই এসে ওর পাশে এবং পরের বেঞ্চে বসে পড়ে।

সান কন্ঠের কানে ফিসফিস করে বলে উঠে।
” ওই দেখ কন্ঠ তোর জামাই আইতাছে।”

কন্ঠ চোগ রাঙিয়ে তাকায় সানের দিকে,ওর এমন অবস্থায় হেসে কুটিকুটি অবস্থা বাকিদের।
তূর্য ক্লাসে প্রবেশ করা মাত্র চোখে চোখ পড়ে কন্ঠের, কিন্তু তাতে কোনো ভাবান্তর দেখা দেয় না তূর্যের। সে নিজের মত করে ক্লাস শুরু করে,তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো আজ পুরো ক্লাসের সময় কন্ঠ তূর্য কেই দেখছিল, কেমন জানি এক অদ্ভুত সুন্দর ছিল।চোখে মুখে মায়া মেখে ছিল তূর্য,সেটা দেখতে দেখতেই কখন যে ক্লাস শেষ হলো তা বুঝতেই পারল না সে।

বিকেলের দিকে বাড়ি যাওয়ার সময় তূর্য কন্ঠ কে গাড়িতে বসতে বলে, কিন্তু তাতেও বেশ লজ্জা লাগছে কন্ঠের।তারিফ কন্ঠের কানে কানে এসে বলে।

” শুন ব্যাডা তোরে লং ড্রাইভে নিয়া যাইবো,যা যা।”

কিঞ্চিৎ ফাঁক হয়ে গেল কন্ঠের অধর দুটি।কী অস’ভ্য বন্ধুগন্স তার, হুটহাট তাকে এমন এমন কথা বলে তাতে মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করে।

চলবে……….. ✨।