অপ্রিয় মাস্টার পর্ব-১৬+১৭

0
208

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [১৬]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

সকাল সকাল জগিং থেকে ফেরার পথে আচমকা নিজের সামনে অরিন কে দেখে চমকে উঠে তুফায়েল।
অরিন সৌজন্য মূলক হাসি ঝুলিয়ে রেখেছে মুখশ্রীতে, আশপাশে এক নজর দেখে নেয় তুফায়েল।কেউ নেই,এত সকালে এই ঠান্ডায় থাকবেই বা কে? কিন্তু আশ্চর্য!এই মেয়ে এখানে কী করছে?
” তুমি!”

অরিন বেশ ফুরফুরে মেজাজে বলল।
” ইয়েস আমি,কেন আমাকে আশা করেননি তাই না?”
” অবশ্যই, কারণ এত সকালে এই নিরবে একা একজন মেয়ে কে তো অবশ্যই আশা করব না।”

অরিন নাক ফুলিয়ে বলল।
” কিন্তু কেন আশা করেননি?”
” আশ্চর্য!”
” আচ্ছা বাদ দিন, একটা কথা বলার ছিল?”

তুফায়েল বেশ বিরক্ত নিয়ে বলল।
” কী বলার আছে তারাতাড়ি বলো, আমার কাজ আছে।”

অরিনের মন খারাপ হলো, তবুও কিছু বলল না।
” কী হলো বলো?”
” বলছিলাম যে আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

তুফায়েলের মাথা ঘুরছে, মনে হচ্ছে এখুনি আকাশ ভে’ঙ্গে তার মাথায় উপর পড়বে।এই মেয়ে বলে কী?
” কী বলছো মেয়ে?”

অরিন কথা টেনে টেনে বলল।
” আমি আপনাকে ভালোবাসিইইইই, বুঝলেন মশাই? না বুঝলে নাই, আমি বুঝিয়ে দেব।”

বলেই ছুট লাগলো অরিন,তুফায়েল থমকালো,কী আশ্চর্য! মেয়েটার আচরণ সব-ই তাকে মুগ্ধ করে।তবে তা বেশী গুরুত্ব দেওয়া উচিত হবে না, এসব ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে উল্টো পথে হাঁটতে লাগল সে।
______________
” হ্যা বলো?”
” বিয়ের পর ভুলেই গেছিস দেখছি!একটা বার কল করা যায় না?”

নীলা বেশ গম্ভীর গলায় কথাটা বলল, কন্ঠ হাসলো।
” স্যরি আপু, একদম মনে নেই। আসলে সবার সাথে তুমি তো কথা বলোই তাই আর আমি কিছু বললাম না।”

নীলা বেশ অভিমান নিয়ে বলল।
” ওরা আমার শশুর বাড়ীর লোক,আর তুই আমার বোন হোস,সাথে জা ও বটে।তবে তার থেকে আগে বোনের সম্পর্ক।”

” আচ্ছা আচ্ছা,আর রাগ করো না। এবার থেকে নিয়ম করে ফোন করব।”
” মনে থাকে যেনো?”
” হ্যা হ্যা থাকবে অবশ্যই।”

কন্ঠ ফোন রেখে দেয়, লক্ষ্য করে দেখলো নিচে বেশ চেঁচামেচি শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
নিচের দিকে নেমে যায় কন্ঠ,চোখে ভাসমান হলো একটি সুন্দরী মেয়ে।কালো রঙের টপ্স এবং মিনি স্কার্ট, কন্ঠের চিনতে একটুও ভুল হলো না।উনিই তো সেই যার সাথে সেদিন তূর্য স্যার রেস্টুরেন্টে গিয়েছিল।তাকে দেখা মাত্র সরু চোখে তাকায়।
” আচ্ছা তাহলে এই হলো তূর্যের বউ?”

সহিতা বেশ কড়া গলায় বলল, কন্ঠ নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটা বুঝতে চেষ্টা করে,তার-ই মধ্যে অহনা খান বলে উঠে।
” হ্যা সহিতি,ও আমার ছেলের বউ।”

শাহা খান ভ্রু উঁচিয়ে সব কিছু দেখছে,সহিতা নিজেকে আগের মত গম্ভীর রেখে বলল।
” আন্টি আপনারা যা করেছেন আমার সাথে এটা একদমই ঠিক নয়,আর এই যে মেয়ে তুমি একটা কথা ক্লিয়ারলি শুনে নাও। তূর্যের সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।”

কন্ঠ হকচকিয়ে গেল,থমকালো। বিয়ে!
অহনা খান বেশ রেগে গেলেন,উনি কিছু বলার আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন শাহিনা খান।
” এই মাইয়া কী হইছে তোমার? এত্ত চেঁচামেচি করো ক্যা?”

সহিতা চুপ হলো,অহনা খান ফিসফিস করে বলল।
” আপাতত তুমি এখন যেতে পারো সহিতা,এক কাজ করো তুমি বরং তূর্যের সাথে কথা বলে নিও।”

সহিতা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। ওদিকে শাহিনা খান কে ঘরে দিয়ে আসে শাহা খান,অহনা খান কন্ঠের হাত ধরে রান্না ঘরে গিয়ে বলল।
” অন্যের কথায় মন খারাপ করতে নেই, তুমি সহিতার কথায় কিছু মনে করো না।”

কন্ঠ এদিক ওদিক মাথা নাড়ে বলল।
” আচ্ছা, কিন্তু উনি কে মা?”

অহনা খান মিষ্টি হেসে বললেন।
” তূর্যের বেস্ট ফ্রেন্ড।”

” বড় বউ…. এদিকে আসো একটু।”

শাহিনা খানের ডাক শুনে সেদিকে চলে গেলেন অহনা খান, ওদিকে স্তম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কন্ঠ।তার মধ্যে শাহা খান ভেতরে আসেন।
” সবসময় এত চুপচাপ থেকো না কন্ঠ, তুমি জানো কী না জানি না,তবে সহিতার সাথে কিন্তু তূর্য কিছু একটা ছিল।”

শাহা খানের কথা শুনে দ’মব’ন্ধ কর পরিস্থিতি হচ্ছে কন্ঠের, মনে হচ্ছে কেউ যেনো তার গলা চে’পে ধরেছে ।
” তাই বেশী লায় দিও না।”

কন্ঠ কিছু বলল না ঘরের দিকে পা বাড়ায়,সারাটা দিন এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে খেয়াল নেই। সকাল থেকে তূর্য বাইরে ছিল,যার দরুন বাড়ির কারো সাথেই তেমন কথা হয়নি।
রাতে বাড়ি ফিরে শুনতে পেলো কন্ঠ সকাল থেকে কিছু খায়নি,বেশ চিন্তিত হয় তূর্য। কাল মেয়েটার টেস্ট আর আজকে কী না সে এমন করছে? আশ্চর্য!
রুমে গিয়ে দেখে লাইট অফ করে শুয়ে আছে কন্ঠ,পরনের জামা বদলে বিছানায় গিয়ে বসে তূর্য। কন্ঠের মাথায় হাত রাখল,কেন জানি বেশ ভালো লাগলো মূহুর্ত।
_____________
” মা আজকে পরীক্ষা আছে আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে।”

রিয়া ত্বরিতে তৈরি হয়ে কলেজে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিল,এর-ই মধ্যে আনিকা আহমেদ এসে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠেন।
” খেয়ে যা।”
” উফ্ মা বুঝার চেষ্টা করো? আমার পরীক্ষা মানে টেস্ট, এখন সময় নেই।”

হাতের যে কটা বই ছিল তার ব্যাগে ঢুকাতে লাগল রিয়া,তনয়া আহমেদ অধরে মিষ্টি হাসি টেনে হাতে প্লেট নিয়ে আসে।
” এত্ত কথা না বলে মেয়েটাকে তো মুখে খাবার তুলে দিলেই হয়?”

আনিকা আহমেদ লজ্জিত হয়,এই আপার কাছে এখনও কত কিছু শেখা বাকি আছে তার বলার মত না।
তনয়া আহমেদ রুটির টুক’রো নিয়ে মুখে পুরে দেয় রিয়ার।আনিকা আহমেদ হেসেই রান্না ঘরে চলে গেলো।

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে কাগজের চিরকুট তৈরি করতে ব্যস্ত সান,তারিফ। ওদিকে সোহা,তাহিয়া রিয়া যতটা সম্ভব পড়ছে। এরই মধ্যে কলেজে আসে কন্ঠ, মুখে তার থমথমে ভাব, কন্ঠ কে দেখা মাত্র কাছে ডাকে রিয়া। এগিয়ে যায় কন্ঠ,একটা সিটে বসে পড়ে। হঠাৎ কন্ঠ কে এত চুপচাপ দেখে তারিফ মজা করে বলল।
” কী রে কন্ঠ মুখটা এমন আমের আটির মত চুপসে আছে ক্যা? জামাই কি চু’ম্মা দেয় নাই আজ?”

সবাই তারিফের কথায় হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো, কিন্তু তাতে কন্ঠের ভাবান্তর নেই সে নিজের মত করে ভাবছে। হঠাৎ ব্যাগ থেকে বই বের করে পড়তে শুরু করে। মিনিট পাঁচেক পর কলেজে তূর্য প্রবেশ করে,ওকে দেখা মাত্র কেন জানি কন্ঠের বেশ রাগ হয়।অপর দিকে তূর্য বেশ রেগে আছে, সকাল সকাল একা একা কলেজে চলে এসেছে,প্রতি দিন তো তার সাথেই আসে তাহলে আজ কী হলো?
তূর্য কে আসতে দেখে উঠে পড়ে কন্ঠ, উল্টো দিকে হাঁটতে লাগলো।সোজা ক্লাসে চলে গেল, তাতে কিছু বলল তূর্য।সেও অফিস রুমে চলে গেল। ওদিকে সবটা পরখ করতে ব্যস্ত বন্ধু মহল।রিয়া বলল
” গাইস আমার মনে হয় দুলাভাই আর কন্ঠের মধ্যে কিছু হয়েছে?”

সান ভ্রু উঁচিয়ে বলল।
” হয়েছে তো বটেই,তবে এখন এসব ভাবার সময় নেই চল ক্লাসে যাই। পরীক্ষা শেষে দেখি কী হলো?”

সবাই উঠে ক্লাসের দিকে রওনা দেয়।
পরীক্ষা শুরু হয় কিছুক্ষণের মধ্যেই, তার উপর হঠাৎ জুতার নিচ থেকে চিরকুট বের করতে শুরু করে তারিফ আর সান, ওদিকে বাকিদের গলা শুকিয়ে গেছে।যদি ধরে ফেলে?সান চোখের ইশারায় দু তিনটে চিরকুট সোহা, তাহিয়া,রিয়া কে দেয়, কন্ঠ কে দিতে চাইলে সে মানা করে দেয়।

পরীক্ষার হলে,হল পরিদর্শক আসেন, হঠাৎ করে ওনি আসাতে ঘাবড়ে গেল তারিফ।ত্বরিতে সব চিরকুট সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে হঠাৎ হল পরিদর্শকের চোখে পড়ে যায় বিষয়টি।
” হেই ইউ স্ট্যান্ড আপ।”

চলবে…………. ✨।

#অপ্রিয়_মাস্টার
পার্ট [১৭]
#লেখিকা_ফারহানা_নিঝুম

প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমে এক কোণে দাঁড়িয়ে নৈঃশব্দ্যে চোখের পানি ফেলছে কন্ঠ, সত্যি আজকের দিনের জন্য সে একদম প্রস্তুত ছিলো না।
সে তো কিছুই করেনি, ওদিকে বাকি সান,তারিফ,সোহা,তাহিয়া,রিয়া নিজেদের কর্মের জন্য আফসোস করছে।যদি চিরকুট বানাতে সময় নষ্ট না করে পড়তো তাহলে হয়তো আজ এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না কাউকে।

প্রিন্সিপাল তূর্যের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল।
” এসব কী হচ্ছে তূর্য? শেষমেষ ক’পি? তোমার স্ত্রী এমন করতে পারলো?যেখানে তুমি একজন প্রফেসর!”

তূর্য থমথমে মুখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কন্ঠের দিকে, ওদিকে কন্ঠ নিশ্চুপ।
প্রিন্সিপাল সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে ফের বললেন।
” বাকিদের অভিভাকরা এখুনি চলে আসবে, কিন্তু তুমি যেহেতু এই কলেজের অধ্যক্ষ তাই তোমাকে জানানো বেশী প্রয়োজন। আমি ওদের কে একটা শাস্তি দেওয়ার কথা ভেবেছি।”

তূর্য পূর্ণ দৃষ্টি দেয় প্রিন্সিপালের দিকে, অতঃপর গম্ভীর কন্ঠে আওড়াল।
” অবশ্যই স্যার, বিকজ এটা খুব সিরিয়াস ম্যাটার। একজন যেহেতু ভুল করেছে সে ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া উচিত।”

কন্ঠ মুখ তুলে তাকায় তূর্যের দিকে,সে ভয় পাচ্ছে না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে অনুতপ্ত।
” ওদের কে দু মাসের জন্য কলেজ থেকে রাসট্রিকেট করা হচ্ছে।”

সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলে কন্ঠ, তূর্য হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। কন্ঠ পিছু পিছু বেরিয়ে আসে, তূর্যের হাত ঝাপটে ধরে বলে।
” স্যার প্লিজ বিশ্বাস করুন আমি এসব কিছু করিনি।”
” কলেজ এটা! এখানে কোনো সিন ক্রিয়েট করতে চাই না।”

কন্ঠ ছল ছল চোখে তাকায় তূর্যের দিকে।
” প্লিজ আমি সত্যি বলছি,ওরা বলেছিল কিন্তু আমি এসবে ছিলাম না।”

তূর্য গাড়িতে উঠে বসে,আর কিছু বলার সুযোগ হয়ে উঠেনি কন্ঠের।তার আগেই হনহনিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল সে।
কন্ঠ হাতের পিছন দিক দিয়ে মুখ মুছে নেয়,
” কন্ঠ নিজেকে সামলা।”

রিয়া কে দেখে মাথা গরম হয়ে উঠে কন্ঠের ।
” চলে যা আজকে তোদের জন্য এমন হলো,তোরা যদি
ওমন কিছু না করতি তাহলে আজ এসব হতই না।”

কন্ঠ হনহনিয়ে কলেজ থেকে বেরিয়ে গেলো, সবাই মাথা নুইয়ে নেয়। সত্যি ভুল করলো, এখন কন্ঠ এবং স্যারের সম্পর্কে কী হবে আল্লাহ জানেন।
__________
” নেক্সট টাইম যদি এসব ফালতু কথা বলতে আসো তাহলে খুব খারাপ হবে।”

কথাটা বলে চোয়াল শক্ত করে নেয় তুফায়েল, ওদিকে সামনে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরিন।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, বারংবার কেঁপে উঠছে কমলার ন্যায় ঠোঁট দুটো।
সকাল সকাল তুফায়েলের অফিসে এসে হাজির হয় অরিন, আশেপাশে কাউকে তেমন গুরুত্ব না দিয়ে অফিসের মধ্যে ফুল দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে প্রেম নিবেদন করে।
” মিস্টার চমৎকার পুরুষ আমি আপনাকে ভালোবাসি।দয়া করে ফুল গ্রহণ করুন এবং আমার প্রেম নিবেদন এক্সেপ্ট করে নিন।”

এমনতর কান্ডে ভ্যা’বা ছ্যা’কা খেয়ে যায় তুফায়েল,এটা যদি অন্য কোনো জায়গা হতো তাহলে মানা যেতো কিন্তু এখানে!
প্রচন্ড রাগ হয় তুফায়েলের, কপালের শিরা উপশিরা গুলো ফুলে উঠে।
অরিন কে বসা থেকে উঠিয়ে অফিসের বাইরে নিয়ে যেতে লাগল, তার মধ্যে কিছু স্টাফ কানাঘুষা শুরু করেছে।বাইরে আসা মাত্র সজোরে থা’প্প’ড় পড়ে অরিনের ডান গালে, পুরুষালী হাতে এমনতর আঘাতে কিঞ্চিৎ ভ’য় পায় অরিন।
” তোমার কী মনে হচ্ছে?এসব করলেই তুমি আমাকে পাবে? আশ্চর্য!কেউ হঠাৎ প্রেমে পড়তে পারে তা তোমাকে না দেখলে জানতে পারতাম না।এই যে তুমি যে কাজ গুলো করছো তা মোটেও ভদ্রতার খাতিরে পড়ে না। আজকে যা করলে তা এক পর্যায়ে অসভ্যতা।”

অরিন নৈঃশব্দ্যে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,তার কোনো ভাবান্তর নেই তাতে যেনো রাগের পরি’মা’ণ তীব্র হচ্ছে তুফায়েলের।
” আমি তোমাকে ওয়ান্ট করছি নেক্সট টাইম এসব কিছু করলে খুব খারাপ হবে, আমার অফিসে কখনও আসবে না।”

কথাটা বলে পিছনে ঘুরে তুফায়েল, মাত্র যাওয়ার জন্য ডান পা বাড়াতেই অরিন বলে উঠে।
” অফিসে আসবো না ঠিক আছে তবে কী আপনার বাড়িতে চলে আসবো?”

কপালে ভাঁজ পড়ে তুফায়েলের,এ মেয়ে কী বলে?”
” ওয়াট ননসেন্স?”

অরিন ফট করে চোখ মুছে বলে।
” আপনি তো বললেন অফিসে না আসতে,তাই ভাবলাম আপনার বাড়িতে চলে যাই।তখন তো আমাকে ভালোবাসবেন তাই না?”

তুফায়েল হাত মুষ্টিবদ্ধ করে তাকে নিয়ে এই মেয়ে ফাজলামি করছে।সাহস হলো কী করে?

” তোমার এত সাহস আমাকে নিয়ে মজা করছো?”
অরিন ব্যস্ত কন্ঠে আওড়াল।
” আরে না না মজা করতে যাবো কেন? আমি তো আপনাকে বোঝাচ্ছি। আমি কত ভালোবাসি।”
” স্যাট আপ।”

অরিন কী একটা ভেবে হুট করে অধর ছুঁয়ে দেয় তুফায়েলের গালে,চোখ দুটো বড় আকৃতির হয়ে উঠে।হয়তো মনিকোঠা থেকে বেরিয়ে আসবে।

অরিন দাঁত দেখিয়ে দৌড়ে চলে গেল,কিয়ৎক্ষণের জন্য তুফায়েলের মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবী থমকে গেছে হয়তো। আশ্চর্য ব্যাপার হলো তুফায়েল অনুভব করতে পারছে তার হৃদয় এই স্পর্শ কোথাও একটা আটকে গেছে। হৃদয় স্পন্দন দ্রুত গতিতে বেড়ে গেছে।
___________
” না মা আমরা কিছু করিনি, হঠাৎ কারণে অকারণে আমাদের দোষ দেওয়া হচ্ছে।”

রিয়া সাফাই দিতে চেয়েছে অক্ষম হলো,আনিকা আহমেদ রাগান্বিত ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
সকাল সকাল কলেজে গিয়ে নিজের মেয়ের সম্পর্কে এত বাজে খবর পাবে ভাবেনি উনি। ওদিকে সাহাত আহমেদ এখনও কিছু জানেন না, জানলে কী হবে তাও বুঝতে বাকী নেই ওনার।
” আহা আনিকা ছেড়ে দে বাচ্চা তো ভুল হয়ে গেছে।”
” না আপা ও দিন দিন খারাপ হচ্ছে,বুঝানোই যাচ্ছে না একদম।”

তনয়া আহমেদ সূক্ষ্ম শ্বাস ফেলেন, রিয়া নিরবে চোখের জল ফেলে।

রাতের দিকে গা কাঁপিয়ে জ্বর এসেছে কন্ঠের, জ্বর থেকে শরীর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে গুটি বসন্ত। প্রচন্ড জ্বালা করছে শরীর,এক পর্যায়ে কেঁদে উঠে কন্ঠ। হঠাৎ কারো বলিষ্ঠ হাত দুটো আঁ’ক’ড়ে ধরে কন্ঠ কে।
” কাঁদে না, কাল সকালেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো।”

তূর্যের চোখ মুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ,ব্যতি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে সে।ত্বরিতে বিছানা থেকে উঠে বেড সাইডের লাইট অন করে কম্বল সরায় তূর্য।
কন্ঠ শুকনো ঢুক গিলে ফেলল,ভেতরে লজ্জায় জড়িয়ে নিচ্ছে তাকে।
তূর্যের কপালে ভাঁজ পড়ল, কন্ঠের ধবধবে ফর্সা শরীরে লাল লাল হয়ে ফুটে উঠেছে গুটি বসন্ত।
তার উপর গরমের মধ্যে সিল্কি জামা পড়েছে কন্ঠ।
তূর্য বিছানা থেকে উঠে রান্না ঘরে গেল, কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে তবে হাতে গরম ঠান্ডা পানি নিয়ে। ছোট খাটো বালতিতে পানি নিয়ে কাছে এগিয়ে আসে কন্ঠের।
কন্ঠ বারংবার কঁকিয়ে উঠছে, তীব্র জ্বা’,লা হচ্ছে । তূর্য আলগোছে উঠতে সাহায্য করে কন্ঠ কে।
” তাড়াতাড়ি জামা চেঞ্জ করে নাও।”

কন্ঠ চমকে উঠে,ভয় লাগে তার।
‘কী বলছেন?”

তূর্য ফুস করে শ্বাস টেনে আলমারি থেকে পাতলা একটা সেমিজের মত কাপড় বের করে।
” এটা পড়ে নাও তাহলে জ্বালা কম করবে।”

কন্ঠ খানিকটা বিস্ময় নিয়ে বলল।
” এত পাতলা? সব কিছু দেখাই যাবে!”

তূর্য বেশ বিরক্ত হয়।
” তো যাক, আমি কেউ আছে?”
” আপনাকেই তো ভয়।”

কন্ঠ বিড়বিড় করে বলল কথাটা,তবে তা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে তূর্য।
‘” আমি ছাড়া কাকে দেখানোর ইচ্ছে আছে?”
” ছিঃ ছিঃ কী নির্ল’জ্জ কথাবার্তা।”
” যেটা বললাম সেটা করো।”

কন্ঠ কথা বাড়ালো না, কোনো রকমে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নেয়। তূর্য এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে চারিদিকে, হঠাৎ যেনো অন্তঃপটে কিছু একটা অনুভব হচ্ছে।
কন্ঠ আড়ষ্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে,বুকের দ্রিম দ্রিম শব্দ প্রকট হচ্ছে। কন্ঠের শরীরের প্রতিটি ভাঁজ স্পষ্ট, তূর্য হাতের ইশারায় কন্ঠ কে কাছে ডাকে। কন্ঠ ধীর গতিতে এগিয়ে যায়, তূর্য আচমকা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে শক্ত পোক্ত পুরুষালী অধর ছুঁয়ে দেয় কন্ঠের কপালে।
” শুয়ে পড়ো আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দেই।”

কন্ঠ আদুরে গলায় বলল।
” আমাকে ভালোবাসেন?”
তূর্য কথার পিঠে মুচকি হাসলো, কন্ঠ কে হাত ধরে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিল।
সকালের দিকে বেশ গা কাঁপিয়ে জ্বর উঠে কন্ঠের, শরীর নাড়াতে পারলো না একদম।সেই জন্য সকাল থেকে বাড়িতে থেকে কন্ঠের সেবা করছে তূর্য।

ওদিকে কলেজ থেকে রাস্ট্রিকেট করার জন্য আপাতত কেউই কারো সাথে দেখা করতে পারছে না, সবাই মে’সেঞ্জা’রে কলে কথা বলছে। সবার মধ্যে সোহা,তাহিয়া বার বার বলছে কন্ঠ কোথাও?ওর কোনো খবর নেই।
রিয়া সবাই কে বলেছে কন্ঠের গুটি বসন্ত হয়েছে, কাল বাড়ি থেকে দেখতে যাবে ওকে।

” তুমি আমার সাথে এটা কী করে করতে পারলে তূর্য?”

মাত্র চোখ লেগেছিল তূর্যের ,সারা রাত ঘুমোতে পারিনি কন্ঠের জন্য। কন্ঠ হয়তো মাত্র ঘুমিয়েছে, মেয়েটা পুরো রাত কেঁদেছে।
ফোন বেজে উঠার সাথে সাথে তন্দ্রা কে’টে যায় তূর্যের।বেড সাইড টেবিল থেকে ফোন তুলে দেখে সহিতা কল করেছে।
ফোন কানে তুলা মাত্র সহিতা কান্নাকা’টি করতে লাগলো।
” প্লিজ তূর্য তুমি কন্ঠ কে ছেড়ে আমার কাছে চলে এসো।আই লাভ ইউ।”
” ওয়াট ননসেন্স সহিতা?তুই কী পাগল হয়ে গেছিস! আমার বিয়ে হয়েছে,আ’ম ম্যারেড।”
” সো ওয়াট? আমার এতে কোনো প্রবলেম নেই, তুমি বলেছিলে আমাকে বিয়ে করবে।”
” স্টপ, আমি কখনও কথা দেইনি,বাই দা ওয়ে তুই আমাকে জোর করেছিলি ।বার বার ফোর্স করতি।”
” তূর্য আমি কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি, ভীষণ।প্লিজ আমার কাছে চলে এসো?”
” সহিতা তুই নিজেকে সামলা,কী বলছিস মাথা ঠিক নেই। আমি পরে কথা বলছি।”

তূর্য ফোন কে’টে দেওয়া মাত্র সহিতা রাগান্বিত হয়ে ফ্লোরে ফোন ছু’ড়ে ফেলে দেয় ।
” তূর্য আই লাভ ইউ ড্যামেড।”

চলবে………. ✨।