ওগো বিদেশিনী পর্ব-০৯

0
132

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_৯
#সারিকা_হোসাইন

★★★
সাইসাই করে এগিয়ে যাচ্ছে মাহাদের ব্র্যান্ডেড দামী গাড়িটি।
মাহাদের ওরকম উদ্ভট কথায় ক্যামেলিয়া ব্যাতিত আর কেউ ভয় পায়নি।
কারন যেই মাহাদ নিজের থেকে বেশি এই মেয়েটিকে ভালোবাসে সে কখনো এই মেয়েকে গাড়ি চাপা খাইয়ে মারবে না।

সকলকে রিল্যাক্স থাকতে দেখে ক্যামেলিয়া আরো ঘাবড়ে গেলো।
এরপর মাহাদের উদ্দেশ্যে মিনমিন করে বললো

“মাহাদ ভাই আমি গাড়ি এ*ক্সি*ডে*ন্টে মরতে চাইনা।

“ভাই ডাকলে তো গাড়ি আরো এ*ক্সি*ডে*ন্ট করবে সোনা”

মাহাদের এমন উত্তরে বিচলিত হয়ে গেলো ক্যামেলিয়া।

“ভাই না ডাকলে এতো বড় দামড়া কে কি বলে ডাকবে সে?”

“আপনি গাড়ি থামান,আমি নেমে যাবো আমার ভয়ে কান্না পাচ্ছে”

“তুমি কাঁদলে পুরো শহরের গাড়ি এ*ক্সি*ডে*ন্ট করবে বউ! খবরদার একটুও কাঁদবে না।”

এবার ক্যামেলিয়ার সত্যিই কান্না পেলো।
“তবে কী তার বাইরে আসাই ভুল হয়েছে?

কোনো উপায় না পেয়ে ক্যামেলিয়া চোখ বন্ধ করে মনে মনে আল্লাহর নাম নিতে থাকলো।

যদিও মাহাদ খুব স্মুদলী গাড়ি চালাচ্ছে তবুও তার মুখে এসব আজেবাজে উদ্ভট কথা শোনার পর থেকে তাকে কোনো ভাবেই ভরসা করা যাচ্ছে না।

মিনিট পাঁচেক পার হতেই শহরের দামি সৌন্দর্যে ভরপুর রেস্টুরেন্টটির সামনে এসে গাড়িটা থামলো।

ক্যামেলিয়া চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে অক্ষত অবস্থায় দেখে এভারেস্ট জয়ের হাসি হাসলো।

একে একে সকলেই গাড়ি থেকে ধীরে ধীরে নেমে দাঁড়াচ্ছে।
টুসি নিজের ড্রেস ঠিক করতে করতে ক্যামেলিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

“কি ভেবেছিলি মাহাদ ভাই সত্যিই আমাদের ওপারে পাঠিয়ে দেবে?!

ক্যামেলিয়া হ্যা বোধক মৃদু মাথা ঝাঁকালো।

সুজানা মিষ্টি হেসে বললো

“আরে বোকা মেয়ে ,তুমি হচ্ছ ভাইয়ার প্রাণ ভোমরা,তোমার কিছু হবার আগে আমার ভাই ই মরে যাবে।

এরপর সবাই সিঁড়ি বেয়ে রেস্টুরেন্টের রুফটপ পার্ট এ উঠার জন্য পা বাড়ালো।

ক্যামেলিয়া উঠতে নিলেই মাহাদ খপ করে তার বাহুতে ধরে অনির্মেশ তাকিয়ে বলে উঠে

“ভয় দেখানোর জন্য অনেক গুলো সরি বউ”

“সত্যিই তুমি অনেক সুন্দর”

“তোমার সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দেবার মতো কোনো উপমা আমার জানা নেই ক্যামেলিয়া”

মাহাদের এমন আবেগঘন কথায় লজ্জায় ইতস্তত প্রকাশ করল ক্যামেলিয়া।
মাহাদ তা বুঝতে পেরে হাত ছেড়ে দিলো।
ক্যামেলিয়া দ্রুত পা চালিয়ে উপরে উঠে গেলো।

এরপর তারা সকলে নিজেদের আগে থেকে রিজার্ভেশন দেয়া টেবিল টা খুঁজতে লাগলো।

রুফটপ রেস্টুরেন্ট টি খুব নান্দনিক ভাবে সজ্জিত।
চারপাশে বিভিন্ন ফুলের গাছ,তারমধ্যে বাঁশের তৈরি ছোট ছোট কুঁড়ে ঘর এর মতো ছোট ছোট কক্ষ যেখানে প্রেমিক প্রেমিকা অল্প অল্প খাচ্ছে আর প্রেম করছে,বিভিন্ন রঙের নিয়ন বাতি জ্বলছে সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের ডেকোরেটিং লাইটস,
সাথে একটা লাইভ কিচেন ও আছে।
কম ভলিউমে সফট মিউজিক বাজছে সাথে মৃদুমন্দ বাতাস।

নিমিষেই ক্যামেলিয়ার মনটা ভালো হয়ে গেলো।
ক্যামেলিয়া তার চেয়ার টেনে বসতে বসতে টুসি আর সুজানা কে ছোট করে থ্যাঙ্কস জানালো।

শেষ কবে সে এমন ভাবে আউটিং এ গিয়েছে তার মনেই নেই।নাফিজ হাসান সারাদিন অফিসে থাকতেন রাতে বাসায় ফিরে ক্যামেলিয়ার হালকা খুজ নিয়ে নিজের রুমে চলে যেতেন।

এমিলি মারা যাবার পর নাফিজ হাসান কেমন যেনো ছন্নছাড়া জীবন যাপন করতেন।
বাইরেই বেশিরভাগ সময় কাটাতেন তিনি।অফিস টাইম শেষ হবার পর ও তিনি বাসায় ফিরতেন না কখনো কখনো।

এদিকে ক্যামেলিয়া কে নিঃসঙ্গতা ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলেছিলো পুরোদমে।

কিন্তু যখন নাফিজ হাসান বুঝতে পারলেন যে, মেয়ে হয়তো মানসিক সমস্যায় ভুগছে,ততোদিনে অনেকটাই দেরি হয়ে গিয়েছে।

ক্যামেলিয়া সহজেই কারো সাথে মিশতে পারছে না।কথা বলতে পারছে না।।তার নিজের উপর ই তার কোনো বিশ্বাস ,ভরসা কিছুই নেই।সব সময় চলতে থাকে মনের আর মস্তিষ্কের দ্বন্দ্ব।
মাঝে মাঝেই সে চরম হাইপার হয়ে যায়।
এই হাইপার নেস একদিন তাকে মৃত্যু কূপে ঠেলে দিবে,তবুও ক্যামেলিয়া বাঁচার আশা খুঁজে।সুস্থ জীবন যাপন করতে চায়।

এই কদিনে টুসি আর সুজানা তার মনের অনেক কাছে চলে এসেছে।
ওদের সাথে মন খুলে কথা বলতে পারে ক্যামেলিয়া।
ওদের কাছে কথা শেয়ার করলে নিজেকেও অনেক ঝরঝরে মনে হয়।
মনে হয় বুকের মাঝে যেই পাথরের স্তুপ জমেছিলো তার ওজন অনেকটাই হালকা হয়ে এসেছে।

ধীরে ধীরে সংকোচ কাটিয়ে উঠতে পারছে সে।

কিন্তু মাহাদ?
একজন অষ্টাদশী যুবতী হিসেবে মাহাদের চোখের চাহনি ক্যামেলিয়া বুঝতে পারে।
কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ না হলে কিভাবে সে নিজের এই অভিশপ্ত ভারসাম্য হীন জীবনে এই সুদর্শন, ভদ্র,ব্যাক্তিত্ব বান ছেলেটিকে জড়াবে?

যদি ভবিষতে মাহাদের মনে আফসোস এর উদ্রেক হয় যে,ক্যামেলিয়া কে বিয়ে করে ভালোবেসে মস্ত বড় ভুল করেছে মাহাদ?

তখন কি ক্যামেলিয়া সেই অতীব অপ্রিয় সত্য কথাটা সহ্য করতে পারবে?

হঠাৎই মাহাদ ক্যামেলিয়ার চোখের সামনে দুই আঙুলের সাহায্যে চুটকি বাজালো।

ধ্যান ভাঙলো ক্যামেলিয়ার।এরপর কাচুমাচু করতে করতে এদিক ওদিক দৃষ্টি ফেললো।

মাহাদ আদুরে স্বরে জিজ্ঞেস করলো
“কি ভাবছিলে এতো সময় ধরে?

ক্যামেলিয়া মিন মিন করে বললো
“কিছু না।

মাহাদ একটা মেনুকার্ড এনে ক্যামেলিয়ার হাতে দিয়ে বললো

“সবাই যার যার পছন্দ সই খাবার ওর্ডার করেছে ,তুমি কি খাবে ক্যামেলিয়া?

ক্যামেলিয়া মেনুকার্ড উল্টে পাল্টে দেখে একটা ওভেন বেকড পাস্তা আর তিরামিসু ওর্ডার দিলো।

মাহাদ ক্যামেলিয়ার ওর্ডার শুনে মিষ্টি হেসে সাথে আরো দুটো ভারী খাবার এর ওর্ডার করলো।

সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছে
“কখন খাবার আসবে?

এমন সময় মাহাদের নজর আটকে গেলো পাশের টেবিলে।

লে,কর্নেল মুহিত ওয়াসিফ ,মেজর সৌম্য শাহরিয়ার আর লে, কর্নেল আদ্রিয়ান আভিয়াজ তাদের বউ বাচ্চা সহ বসে আছে।
মুহিত ওয়াসিফ খাবারের ওর্ডার দিচ্ছেন।

ওর্ডার শেষ করে ঘাড় ঘুরাতেই মুহিত আর মাহাদ এর দৃষ্টি এক হলো।
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলো না মুহিত।

হঠাৎই মুহিত গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো
“উইং কমান্ডার মাহাদ চৌধুরী?

সাথে সাথেই সৌম্য আর আদ্রিয়ান মাহাদের দিকে নজর দিলো।
মাহাদের পাশে ক্যামেলিয়া কে দেখে তারা আরো অবাক হয়ে গেলো।
সব ঘটনা শোনার জন্য তাদের মন আকুপাকু করতে লাগলো।
নিজেদের টেবিল ,চেয়ার মাহাদের টেবিলের সাথে সংযুক্ত করে বিশাল এক টেবিল বানিয়ে গোল বৈঠকের আয়োজন করে ফেললো।

স্বর্গ মাহাদদের দেখে মুহিত কে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো
“এরা কারা,?

মুহিত স্বর্গকে বলে উঠলো
দাঁড়াও পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।

সৌম্য মাহাদের কাঁধে চাপড় মেরে বললো

“হেই ডুড,অনেক দিন বাদে দেখা,কোথায় কি করছো এখন?

মাহাদ মৃদু হেসে জবাব দিলো
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের কমার্শিয়াল পাইলট ক্যাপ্টেন হিসেবে ইতিহাদ বিমানে আছি।

আদ্রিয়ান অবাকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো

“তাহলে বিমান বাহিনীর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছো?

মাহাদ মুখের হাসি বিলীন করে বলে উঠলো

“হ্যা”

আদ্রিয়ান অবাকের স্বরে জানতে চাইলো
“বিমান বাহিনীর চাকরি না তোমার ড্রিম জব ছিলো।

মাহাদ কন্ঠে কাঠিন্য এনে বললো

“ড্রীম জব যদি ড্রীম গার্ল কেড়ে নিতে চায় তখন কি করা উচিত?”

মুহিত হঠাৎই মাহাদের পাশে বসে থাকা নীল নয়নের অধিকারী বিদেশিনীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে উঠলো

“আমি যদি ভুল না হই ও ক্যামেলিয়া রাইট?

মাহাদ মাথা ঝাকিয়ে ঠোঁট প্রশস্ত করে বললো
“ইয়েস”

মুহিত সহসাই ক্যামেলিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো

হ্যালো মিস ক্যামেলিয়া, নাইস টু মিট ইউ”

ক্যামেলিয়া ভদ্রতা রক্ষার্থে কোনো মতে হাত এগিয়ে মুহিতের সাথে হ্যান্ডশেক করে বলে উঠলো

“সেইম টু ইউ”

একে একে মাহাদ– টুসি,সুজানা আর কোহিনুর এর সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিলো।

এরপর মুহিত ক্যামেলিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো

“ক্যামেলিয়া তুমি বয়সে আমার থেকে অনেক ছোট,তাই তুমি করেই বলি হ্যা?
প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড

ক্যামেলিয়া ঘাড় কাত করে সায় জানালো।

এরপর মুহিত বলতে থাকলো

আমি,সৌম্য, আদ্রিয়ান আর মাহাদ একসাথে আমরা কঙ্গতে মিশনে গিয়েছিলাম।
আমাদের কাজ ছিলো কম্পিউটার এ আর মাহাদ ছিলো যুদ্ধ বিমানে।

তোমার বাবা মেইবি মাহাদের সাথে তোমার জন্মের পরপরই বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলো।
সেই খুশিতে আমাদের কমান্ডার মাহাদ মজনু হয়ে গিয়েছিলো।

মিশনে গিয়ে আমরা সকলেই বেকায়দায় পড়েছিলাম।
ওই দেশের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিলো যে,আমরা কাজ করতে করতে ঘুমানোর টাইম ই পেতাম না।
আর রইলো পরিবারের সাথে যোগাযোগ!
সপ্তাহে দু মিনিটের জন্য কথা বলার সুযোগ পেতাম,আর যেই বাজে নেটওয়ার্ক ব্যাবস্থা।

তো মাহাদ তোমার কোনো খবর না পেয়ে তুমুল পাগলামি করতো।
তখন মনে হয় তোমার মাত্র পনেরো বছর বয়স।

বেচারা সুযোগ পেলেই চুপিসারে কেঁদে বুক ভাসাতো।
আমি সৌম্য আর আদ্রিয়ান তাকে অনেক বুঝালাম যে,

দেশে আমাদের ও মা বাবা আছে প্রেমিকা আছে,বউ আছে,আমাদের ও তো খারাপ লাগে।
দেশের কল্যানে,পৃথিবীর কল্যানে নিজেকে নিয়োজিত যেহেতু করেছিই, তাহলে আমাদের মন পাথরের মতো শক্ত হওয়া উচিত।

কিন্তু কোনো ভাবেই তাকে বুঝানো যাচ্ছিলো না।

একদিন তো ওর বিমানে অসতর্কতা বসত আগুন ই ধরে গিয়েছিলো, কিন্তু ওর যেই সহযোগী ছিলো, সে কোনো মতে ওকে বাঁচাতে সক্ষম হয়।

সারাক্ষন শুধু মাহাদ একটা কথাই বলতো
আমি বাড়ি চলে যাবো,ক্যামেলিয়া কে না দেখে আমি থাকতে পারছি না।মেজর মুহিত আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

কিন্তু ভাগ্য মাহাদের সহায় হয় নি।ছয়মাসের জন্য গিয়ে বেচারা তিন বছর ওখানে আটকে ছিলো।
যেদিন আমরা বাংলাদেশে ব্যাক করি ওইদিন মাহাদের বাচ্চাদের মতো সেকি কান্না।
উফ কি হৃদয় বিদারক ছিলো সেই দিন তাই না সৌম্য?

সৌম্য মুহিতের কথায় সায় জানিয়ে বললো
“জি স্যার।মনে পড়লে এখনো চোখে জল আসে।

আদ্রিয়ান তো কেঁদেই ফেলেছিলো ।

কিন্তু আমাদের মনকে শক্ত করে পিছনে মাহাদের দিকে না ফিরে তাকিয়ে স্বার্থপরের মতো আসতে হয়েছিলো।
জানালো আদ্রিয়ান আভিয়াজ।

এজন্য সে আমাদের কারোর বিয়েতেই এটেন্ড করতে পারেনি।
মুহিত বলে উঠলো।

মাহাদ ক্যামেলিয়া কে উদ্দেশ্য করে আরো বললো

“মাহাদ তোমাকে অনেক ভালোবাসে ক্যামেলিয়া।আমরা নিজ চোখে একজন কঠিন হৃদয়ের মানব কে তোমার জন্য অনবরত কাঁদতে দেখেছি।

শুধু তাই নয়,তোমাকে একনজর দেখতে পারবে বিনা জটিলতায় এজন্য মাহাদ তার বিমান বাহিনীর সামরিক পদ বাদ দিয়ে বেসামরিক কমার্শিয়াল বিমানের নরমাল ক্যাপ্টেন হয়ে পড়ে আছে।

বিমান বাহিনীর চাকরি পাবার জন্য মাহাদ ক্যাডেট কলেজে অনেক পরিশ্রম করেছে।
আমি আর মাহাদ একই ক্যাডেট কলেজে পড়েছি।মাহাদ আমার জুনিয়র ছিলো।

যখন তুমি একা একা দূরদেশে একাকীত্ব জীবন যাপন করছো,সে সময়েই কেউ একজন তোমাকে অনেক অনেক ভালোবেসে দিন রাত চোখে জ্বল ঝড়াচ্ছে, আর তুমি জানোই সেই মানুষের খবর।

কতোটা প্যাথেটিক ব্যাপার স্যাপার তাই না ক্যামেলিয়া?

মুহিতের মুখে এসব কথা শোনার পর হঠাৎই ক্যামেলিয়ার নেত্রকূল ছাপিয়ে অশ্রুদানা গড়িয়ে পড়তে চাইলো।

ক্যামেলিয়া নিজেকে বহুকষ্টে সামলে ওয়াশ রুমে যাবার কথা বলে বেরিয়ে এলো।

******
মুহিতের ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে গিয়েছে, সৌম্য আর পিউয়ের ঘর আলো করে একটি কন্যা সন্তান এসেছে।
আদ্রিয়ান আভিয়াজ একজন সাধারন মেয়েকে বিয়ে করে সুখের সংসার পেতেছে।
এখন শুধু মাহাদের না হওয়া সংসার টা হবার অপেক্ষা।

******
ওয়াশরুমে কল চালু দিয়ে ক্যামেলিয়া হুহু করে কেঁদেই চলেছে।
আজকে তার বাবা মা বেঁচে থাকলে তার জীবন টাও সুন্দর সুখের হতো।
হয়তো ধীরে ধীরে মাহাদ সম্পর্কে জেনে মাহাদের জন্যও তার মনের দুয়ার খুলে দিতে পারতো।
কিন্তু যেই সময়ে এসে ক্যামেলিয়া মাহাদের গভীর ভালোবাসার কথা জানতে পেরেছে যা মাহাদের ভালোবাসা গ্রহণের উপযুক্ত সময় নয়।
কিভাবে মাহাদ কে প্রত্যাখ্যান করে সুইজারল্যান্ডে ফিরে যাবে ক্যামেলিয়া?
কেনো তার জীবন টা এমন নরকে পরিণত হলো?

তার বাবা মা ভালোবেসে বিয়ে করেও দীর্ঘদিন একসাথে কাটাতে পারেনি।
ঠিকই তার মা তার বাবাকে ফাঁকি দিয়ে অসহায় করে ফেলে চলে গিয়েছে এই পৃথিবী থেকে।
এজন্য সেই শোক সইতে না পেরে ধীরে ধীরে তার বাবাও দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছে।

যদি মাহাদ আর ক্যামেলিয়ার জীবন ও এমন হয়?

তখন তাদের ভবিষ্যত সন্তান ও ক্যামেলিয়ার মতো ভুগবে।
এসব ভাবতেই ক্যামেলিয়ার কান্নার দমক আরো বাড়তে থাকলো।

হঠাৎই দরজায় নকের আওয়াজ পাওয়া গেলো।

ক্যামেলিয়া চোখে মুখে পানি দিয়ে দ্রুত দরজা খুলে মাহাদ কে দেখে দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো।

ক্যামেলিয়ার ফোলা ফোলা চোখ মুখ আর লাল নাকের ডগা দেখেই মাহাদ বুঝে ফেললো ক্যামেলিয়া কেঁদেছে।

ফুঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মলিন কন্ঠে বলে উঠলো

“খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চলো খাবে!

ক্যামেলিয়া বাধ্য বাচ্চার ন্যায় মাহাদের পিছে পিছে চলতে লাগলো।

বিভিন্ন আড্ডা গল্পে শেষ হলো সকলের রাতের ভোজন।

রেস্টুরেন্ট থেকে বের হবার আগে মুহিত মাহাদের কাঁধ ধরে বলে উঠলো

“তোমাকে বিমানবাহিনীর পোশাকেই ভালো মানায় কমান্ডার মাহাদ চৌধুরী।
বিশেষ অনুরোধ থাকবে তুমি আবার তোমার আগের জায়গায় ফিরে যাবে।

আর ক্যামেলিয়া, বেস্ট উইশেষ ফর ইউর নিউ লাইফ।
দোয়া করি দ্রুত সুস্থ হয়ে এই মাহাদের লাগাম টা ধরবে।

কি পারবে তো?ওর্ডারের স্বরে জিজ্ঞেস করলো মাহাদ।

ক্যামেলিয়া গলায় তেজ নিয়ে বললো
পারবো স্যার।

#চলবে।