#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১০
#সারিকা_হোসাইন
★★★
সারাদিনের মৃদু রোদের তেজ কমে গিয়ে সন্ধ্যার নম্রতা ঘনিয়ে এসেছে চারপাশে।সারা দিনের বিচরণ শেষে পাখি গুলো তাদের নীড়ে ফিরে যাচ্ছে।দিগন্তে হারিয়ে সূর্য তার সকল আলো লুকিয়ে কালিমা লেপন করছে সর্বত্র।
টানা সাতদিনের ছুটি কাটিয়ে মাহাদ আজ ডিউটি তে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে।
আজকে মাহাদের নাইট শিফটের ডিউটি।
মাহাদ তার ইউনিফর্ম পরে নিজের পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে ফ্লাইট লাগেজ সমেত সিঁড়ি বেয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দাড়ালো।
সুজানা মন খারাপ করে জিজ্ঞেস করলো
“কবে ফিরবে ভাইয়া”?
“পাঁচদিন পর।সবাই ভালো থাকবি আর ক্যামেলিয়ার খেয়াল রাখবি”
বলেই নিজের টাই টা ঠিক করতে লাগলো মাহাদ।
টুসি এসে ক্যামেলিয়ার কিছু পছন্দের চকলেটস এর নাম বললো
“ভাইয়া অবশ্যই অবশ্যই চকলেটস গুলো আনবে।মনে থাকে যেনো।
মিসেস মিতালি মন ভার করে বসে আছেন।
বাকি দুই মেয়ের থেকে মাহাদের প্রতি তার ব্যাপক ভালোবাসা।
ছেলে এই কদিন বাড়িতে ছিলো মনে হয়েছিলো বাড়িটা হাসিখুশিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
ছেলেটা চলে গেলেই পুরো বাড়ি খাঁ খাঁ করে।
বড় মেয়ে নিউইয়র্ক থাকে এতেও তার কোনো দুঃখ নেই।
কিন্তু মাহাদ এক সপ্তাহ বাড়িতে না থাকলেই মিসেস মিতালীর ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়।
মাহাদ সকলের থেকে বিদায় নেবার সময় চার পাশে চোখ বুলিয়ে ক্যামেলিয়া কে খুজলো।
কিন্তু কোথাও তাকে দেখা গেলো না।
টুসি,সুজানা কে জিজ্ঞেস করলে ওরা বললো আছে কোথাও একটা।
মাহাদের মন খারাপ হলো যাবার বেলায় ক্যামেলিয়া কে দেখতে না পাবার কারনে।
লাগেজ সমেত সবাইকে বিদায় জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো মাহাদ।
বাইরে এসেও এদিক ওদিক উকি দিয়ে ক্যামেলিয়া কে খুজলো।
যখন পেলোনা তখন বিরস মুখে টুটুল কে কল করলো।
কল করতেই টুটুল গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করার জন্য দৌড়ে এলো।
এদিকে ক্যামেলিয়া মাহতাব চৌধুরীর নিজ হাতে করা ফুলের বাগানের পাশে পাতানো সাদা বেঞ্চিতে বসে বসে মনে মস্তিষ্কে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
একজন সুদর্শন ব্যাক্তিত্ত্বপূর্ন যুবকের সান্নিধ্যে দিনে– রাতে বেশির ভাগ সময় কোনো মেয়ে মানুষ থাকলে সেই যুবকের প্রেমে পড়া অস্বাভাবিক কিছু না।
আর যুবক টি যদি হয় তার পরিবারের ঠিক করা হবু স্বামী তাহলে তো আরো কথা নেই।
মেজর মুহিতের কথা অনুযায়ী এবং ক্যমেলিয়ার নিজের চোখের দেখায় সে এটুকু বুঝে গিয়েছে যে,মাহাদ তার জন্য পাগলপ্রায়।
ছেলেটির দু চোখের চাহনির আকুলতায় ক্যামেলিয়ার প্রতি তার নিখাদ ভালোবাসার প্রমান স্পষ্ট।
“কিন্তু ক্যামেলিয়া কিভাবে তার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে?
“হুট করেই কি কাউকে বলা যায় যে,মাহাদ ভাই আমিও আপনাকে ভালোবাসি?”
“আপনাকে পছন্দ করি?
কিন্তু মাহাদের জন্য ধীরে ধীরে ক্যামেলিয়ার মনে সফট কর্নার এর তৈরি হচ্ছে।ক্যামেলিয়া বুঝতে পারে এটা।
কিন্তু নিজের মনের কথা গুলো সাজিয়ে কাউকেই বলতে পারছে না সে।
টুসি আর সুজানা মাহাদের প্রতি ক্যামেলিয়া কে ইম্প্রেস করার জন্য অনেক ট্রিক্স ফলো করেছে এপর্যন্ত।
ক্যামেলিয়া সবই বুঝতে পেরেছে।
বিদেশি মেয়েদের কাছে প্রেম ভালোবাসা,হ্যাঙ আউটস, রুম ডেট এগুলো সব কিছুই ডাল ভাতের মতো।
কিন্তু সামান্য একটু ভালোবাসা,কারো পবিত্র সঙ্গতা ক্যামেলিয়ার কাছে অতীব মূল্যবান বললেও কম হয়ে যাবে।
একজন ভালো বন্ধু,সঙ্গী,একটু মমতা জড়ানো ভালোবাসার কাঙাল ক্যামেলিয়া।
সবাই শুধু সহানুভূতি দেখাতেই ভালোবাসা দেখায়।
নিঃস্বার্থ ভালোবাসা চোখে পড়েনা বললেই চলে।
কিন্তু মাহাদের ভালোবাসা স্বার্থহীন।এই কদিনে এটা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছে ক্যামেলিয়া।
কিভাবে নিজের মনের দ্বার মাহাদের জন্য উন্মোচন করবে ক্যামেলিয়া?
দুই হাতের করপুটে মুখ ঢেকে বিভিন্ন ভাবনা ভেবে যাচ্ছে ক্যামেলিয়া।হঠাৎই ক্যামেলিয়ার ভাবনার সুতো ছিড়লো গাড়ির ইঞ্জিন চালুর শব্দে।
চকিত হতেই ক্যামেলিয়া দেখতে পেলো মাহাদের গাড়িটি ধীরে ধীরে মেইন গেট পেরিয়ে রাস্তা ধরেছে।
উদ্ভ্রান্তের মতো বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদ যে আজ চলে যাবে এটা সে জানতো,
যেহেতু মাহাদের যেতে যেতে সন্ধ্যা পার হবে সেটা ভেবেই হালকা আলো থাকতেই নিজেকে একটু রিল্যাক্স করার জন্য ব্রেইন এবং মনকে শান্ত করার জন্য সে গার্ডেনের কাছে এসেছিলো।
মাহতাব চৌধুরী দেশ বিদেশের বিভিন্ন নাম না জানা ফুলের গাছ কালেক্ট করেছেন এই গার্ডেনে।
এগুলোর সুবাস ও সৌন্দর্য ক্যামেলিয়ার মন কে শান্তি দেয় সেই সাথে মস্তিষ্কের আরাম দেয়।
সেজন্য ক্যামেলিয়া প্রায় বেশিরভাগ সময় ই এখানে কাটায়।
নিজের সাথে নিজের লুকোচুরি খেলতে খেলতে কখন যে এতোটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে ক্যামেলিয়া তা ঠাহরই করতে পারেনি।
মাহাদের চলে যাওয়া তাকে আফসোস এ পোড়াচ্ছে।
বুকে চিনচিনে ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে।
তবে কি অসময়ে বাইরে এসে ভুল করে ফেললো ক্যামেলিয়া?
মাহাদ কি তবে তাকে খুঁজেনি?
মনের সকল ভাবনা দূরে ঠেলে দৌড়ে গেটের কাছে আসতেই গাড়িটি মেইন রোডে উঠে সাই সাই করে স্পিড বাড়িয়ে চলে গেলো।
রোড লাইটস এর আলোতে রাস্তা ঘাট দিনের আলোর মতো ফকফকা লাগছে।
ল্যাম্পপোস্টের নিয়ন বাতির আলোর রশ্নি ছাড়িয়ে মাহাদের সাদা রঙের গাড়িটি হারিয়ে গেলো অন্ধকারের শেষ সীমান্তে।
মাহাদের গাড়ির কাছে পৌঁছুতে না পারার ব্যার্থতায় হাটু মুড়ে গেটের কাছে বসে গেলো ক্যামেলিয়া।
হঠাৎই মাহাদের জন্য তার খারাপ লাগতে শুরু করলো।অন্তরটা মাহাদ, মাহাদ করে কাতর হয়ে উঠলো।
চোখের দুকূল ছাপিয়ে মোটা মোটা অশ্রু দানা গড়িয়ে পড়তে লাগলো ভারী বর্ষনের ন্যায়।
নিজের উপর নিজেরই প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো তার।
নিজেকে অকাজের ঢেকি,আর নির্বোধ বই কিছুই মনে হলো না ক্যামেলিয়ার কাছে।
মাহাদ ফিরে আসার আগেই হয়তো তার টুসীদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে।
চাইলেও আর যখন তখন মাহাদের দেখা পাওয়া যাবেনা।কোনো বাহানা করেও একটু আধটু কথা বলা যাবে না।
আর এভাবেই ধীরে ধীরে ক্যামেলিয়ার ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে দূর দেশে পাড়ি জমানোর বীভৎস সময় এসে দুয়ারে কড়া নাড়বে।
নিজের কৃত এহেন ভুলের জন্য মনে মনে ক্যামেলিয়া এক অবুঝ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো।
“হ্যা সে নিজেকে শাস্তি দিবে।কঠিন শাস্তি।
******
এদিকে হঠাৎই মাহাদ টুটুল কে কঠিন স্বরে ওর্ডার দিলো
“টুটুল গাড়ি ঘোরাও!”
“কেনো স্যার?
অবাকের স্বরে জানতে চাইলো টুটুল।
কোনো প্রশ্ন না করে কুইক গেটের কাছে চলো।।
উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো মাহাদ।
টুটুল মাহাদকে সিরিয়াস অবস্থায় দেখে ঘাবড়ে গেলো।তাই বেশি না ঘাটিয়ে মাহাদদের বাড়ির উদ্দেশ্যে গাড়ি ঘুরালো।
মিনিট দশেক পার হতেই মাহতাব চৌধুরীর বিশাল বাড়ির প্রবেশ দ্বারে গাড়ির কড়া ব্রেক কষলো টুটুল।
ক্যামেলিয়া মাথা নিচু করে কেঁদেই চলছে।
পাঁচদিন সে আর মাহাদ কে দেখতে পাবে না।মাহাদের কন্ঠস্বর ও শুনতে পারবে না।
“কেনো সে ওই সময়ে বাইরে বেরোলো?
কান্নার দমকে আর নিজের মধ্যে চিন্তায় বিভোর থাকার কারনে আশেপাশের কোনো শব্দ ক্যামেলিয়ার কর্ণ কুহরে পৌঁছুলো না।
মাহাদের গাড়ি তার নিকটে চলে এসেছে সেটাও সে খেয়াল করেনি।
গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে মাহাদ এক প্রকার দৌড়েই ক্যামেলিয়ার কাছে আসলো।
শক্ত মাসেল যুক্ত পুরুষালী হাতের সহায়তায় ক্যামেলিয়ার দুই বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো ক্যামেলিয়া কে।
আকস্মিক এহেন পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে গেলো ক্যামেলিয়া।
কান্না থামিয়ে সামনে দাঁড়ানো পুরুষটির দিকে তাকিয়ে আরো জুড়ে কেঁদে উঠলো সে।
ক্যামেলিয়ার চোখের জল মুছে দিয়ে দুই চোখের পাতায় মৃদু চুম্বন দিয়ে নিজের সাথে আবার ক্যামেলিয়া কে মিশিয়ে ফেললো মাহাদ।
যেই হুতাশন হৃদয়ের কুঠরীতে দীর্ঘ বছর ধরে জ্বলে জ্বলে হৃদয় কে পুড়ে আগ্নেয়গিরির লাভার মতো অঙ্গার করেছে তা যেনো নিমিষের ব্যাবধানেই বরফের সাগরে রূপান্তরিত হলো।
ধীরে ধীরে ক্যামেলিয়ার কান্নার তেজ কমে এলো।কিছুক্ষণ পরেই ছোট বাচ্চার ন্যায় শান্ত হয়ে মাহাদের সাথে সেটে রইলো।
কিন্তু নিজের দুটো হাত বাড়িয়ে মহাদকে জড়িয়ে ধরার মতো দুঃসাহস হলোনা তার।
মাহাদ নিজের বুক থেকে ক্যামেলিয়া কে ছাড়িয়ে কপালে গভীর মমতায় গাঢ় চুম্বন একে দিলো।
এরপর এলোমেলো হয়ে যাওয়া বাদামি কোঁকড়ানো চুল গুলো চোখ মুখের উপর থেকে সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে হাত ধরে টেনে বলে উঠলো
“চলো ওই বেঞ্চটাতে গিয়ে বসি।
ক্যামেলিয়া মাহাদকে অনুসরণ করে সাদা রঙের লোহার বেঞ্চে গিয়ে বসলো।
কান্নার চোটে তার চোখ নাক লাল হয়ে উঠেছে।
মাহাদ ক্যামেলিয়া কে বলে উঠলো
“একমিনিট অপেক্ষা করো প্লিজ।একটা জরুরি কল করবো।
ক্যামেলিয়া বাধ্য বাচ্চার ন্যায় সায় জানিয়ে চুপ করে ভূমির দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে রইলো।
স্নিগ্ধ ঠান্ডা বাতাসে ক্যামেলিয়ার চোখের জল শুকিয়ে দাগ হয়ে চটচটে হয়ে আছে।
******
মাহাদ ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে ডিপার্চার ম্যানেজার এর কাছে ফোন করলো।
“হ্যালো”
” ক্যাপ্টেন মাহাদ স্পিকিং।”
“টুডে আম নট এবল টু ফ্লাই।
ক্যান ইউ গ্রান্ট মি মোর টু ডেইজ অফ?
ওপাশের উত্তরে মাহাদের ভ্রু কুঞ্চিত হলো।
মাহাদ বিভিন্ন ভাবে তাদের বুঝানোর চেষ্টা করলো তার ছুটিটা বিশেষ প্রয়োজন।
যখন ওপাশের নাছোড়বান্দা ব্যাক্তিকে মাহাদ ভালো ভাবে বুঝাতে অপারগ হলো তখনই রাগে মাহাদের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো।কপালের আর ঘাড়ের শিরা গুলো ফুলে উঠলো।
কন্ঠে খানিক তেজ আর গাম্ভীর্য ঢেলে বলে উঠলো
“আম নট এ স্ল্যাভ টু এনিওয়ান্স কমান্ড,আ উইল গিভ মাই রেজিগ্ন্যাশন লেটার টুমরো।”
বলেই খট করে লাইন কেটে দিলো মাহাদ।
যেই শ্রেয়সী কে একটু চোখের দেখা দেখার জন্য নিজের ক্যারিয়ার ফেলে সাধারণ একজন পাইলট হিসেবে যোগদান করেছে হাসি মুখে !
যখন সেই প্রাণেশ্বরীই তার জন্য চোখের জল ফেলছে সেখানে তাকে কান্না অবনত অবস্থায় ফেলে মাহাদ কারো হুকুম মানতে রাজি নয়।
দরকার হলে মাহাদ ক্যামেলিয়া কে সারাজীবন তার বুকের মধ্যে খানে লুকিয়ে বসে থাকবে।
তবুও সে কারো হুকুমের গোলাম হয়ে ক্যামেলিয়াকে ফেলে দূরে যাবে না।
এদিকে মাহাদের মুখে এমন কথা শুনে ক্যামেলিয়া চোখ তুলে অবাক হয়ে মাহাদের দিকে তাকালো।
“এসব কি বলছে মাহাদ?
“চাকরি কেনো ছেড়ে দেবে সে?
মাহাদ হাসি মুখে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে আলতো ভাবে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো
“তোমার শশুর জীবনে বহুত টাকা কামিয়েছে।এসব দু টাকার চাকরি আমার না করলেও চলবে ক্যামেলিয়া।
“কিন্তু তোমাকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ড ও চলবে না।
“মানুষ তার ক্যারিয়ার গড়ে জীবনে ভালো ভাবে বেঁচে থাকার জন্য।
“কিন্তু সেই ক্যারিয়ার ই যদি আমার ভালো ভাবে বেঁচে থাকার সকল কারন কেড়ে নিতে চায় তাহলে সেই ক্যারিয়ার দিয়ে কি করবো আমি বলোতো?
মাহাদের এমন কথায় ক্যামেলিয়া আলতো করে মাহাদের হাত জড়িয়ে ধরলো।
মুখে অনেক কিছুই বলতে চাইলো, কিন্তু কিছুই গুছিয়ে উঠতে পারলো না।
শুধু অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো
“আমার কথা বলতে অনেক কষ্ট হয় মাহাদ ভাইয়া।
আমিও সুস্থ হয়ে সকলের মতো স্বাভাবিক লাইফ লিড করতে চাই।
বলেই মাহাদের দিকে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদ মুচকি হেসে ক্যামেলিয়ার গালে হাত রেখে বলে উঠলো
“সুস্থ হতে গেলে যে আমাকে বিয়ে করতে হবে”!
একা একা থাকেল কি আর সুস্থ হওয়া যাবে,??
ক্যামেলিয়া মাথা নেড়ে মাহাদের কথায় সায় জানালো।
তাহলে কি করবে তুমি নীল নয়না?
ক্যামেলিয়া মাথা নিচু করে মিনমিন স্বরে জানতে চাইলো
“আমাকে কি করতে হবে ভাইয়া?
মাহাদের কাছে মনে হলো এটাই নিজের মনের ভাব প্রকাশের চূড়ান্ত সুযোগ।
ক্যামেলিয়াকে এই মুহূর্তে ম্যানিয়া স্টেজের মনে হচ্ছে।আচরণ স্বাভাবিক রয়েছে।
যখন তখন পাগল ক্ষেপে যেতে পারে।
পাগল খেপার আগেই ক্যামেলিয়াকে বাগে আনতে হবে।
সকল ভাবনা দূরে সরিয়ে গলার টাই লুজ করতে করতে গলা খাকড়ি দিয়ে মাহাদ বলে উঠলো
“তুমি কি আমার সত্যিকারের বউ হবে ক্যামেলিয়া”?
#চলবে।
#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১১
#সারিকা_হোসাইন
______
মিসেস মিতালি ডাইনইন রুমে সকলের জন্য বিষন্ন মনে রাতের খাবার গুছাচ্ছেন।
এই কদিন মাহাদ হাসি দুস্টুমিতে বাড়িটা মাতিয়ে রেখেছিলো।কিন্তু আজ সর্বত্র শুনশান বিরাজ করছে।
মাহাদের বরাদ্দকৃত চেয়ার এর দিকে নজর দিতেই মাতৃহৃদয় হু হু করে কেঁদে উঠলো।
ঘরের ছেলে ঘরে না থেকে যখন দেশ বিদেশে যাযাবরের মতন ঘুরে বেড়ায় তখন বাবা হয়ে এসব সহ্য করা দুষ্কর হয়ে উঠে।
হঠাৎই কলিং বেলের টুং করে আওয়াজ হলো।
মিসেস মিতালি ধ্যান ফিরে পেয়ে মিস্টার মাহতাব কে দরজা খুলে দিতে বললেন।
নিউজের চ্যানেল টা বন্ধ করে মিস্টার মাহতাব দরজার কাছে এলেন।
দ্বিতীয় বার কলিং বেল বেজে উঠার সাথে সাথেই মাহতাব চৌধুরী দরজা খুলে হতভম্ব হয়ে গেলেন।
“একি দুঃস্বপ্নেও সম্ভব?”
মাহাদ ক্যামেলিয়ার হাত শক্ত করে ধরে হাসি মুখে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মাহতাব চৌধুরী দরজা খুলে দিতেই মাহাদ ক্যামেলিয়া কে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো।
মাহতাব চৌধুরী ঘটনা বুঝার জন্য দরজা লক করে সোফায় এসে বসলেন।
মিসেস মিতালি হঠাৎই মাহাদ আর ক্যামেলিয়া কে একত্রে চিপকে থাকতে দেখে অবাকই হলেন বটে।
ক্যামেলিয়া সকলের অবাক চাহনি দেখে ইতস্তত করে লজ্জায় মাথা নুইয়ে মাহাদের হাত ছেড়ে দেবার জন্য মুরামুড়ি করতে লাগলো।
ক্যামেলিয়া যতই হাত ছাড়াতে চায় মাহাদ ততোই শক্ত করে চেপে ধরে তার হাত।
মিসেস মিতালি সন্ধিৎস্যু হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
“চাকরি ছেড়ে দিয়েছিস তবে?”
“হু”
মাহাদের সাবলীল উত্তর।
মিসেস মিতালি লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে টুসি আর সুজানা কে ডেকে উঠলেন।
টুসি আর সুজানা মাহাদ কে ফিরতে দেখে ঠিকই আন্দাজ করে ফেলেছে ইতিমধ্যে যে,ঘটনা কি?
সকলের অবকতাকে চরম আকারে রূপ দিতে মাহাদ উৎফুল্ল হয়ে বলে উঠলো
“দ্রুত বিয়ের সকল আয়োজন করা হোক”!
মাহতাব চৌধুরী কেবলই এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে মুখে তুলছেন।
মাহাদের মুখে এমন ভয়ানক কথা শুনে সমস্ত পানি মুখ থেকে ছিটকে বাইরে ঝির ঝির করে বেরিয়ে এলো।
টিস্যু দিয়ে দ্রুত মুখ মুছে চশমা ঠিক করতে করতে বলে উঠলেন
“সেকি সাংঘাতিক কথা”!
“কেনো বাবা! ছেলেকে বিয়ে দেবার ইচ্ছে নেই নাকি?
বলে উঠলো সুজানা ।
মিসেস মিতালি খুশিতে আত্মহারা হয়ে ক্যামেলিয়ার চিবুক ধরে আদুরে স্বরে বলে উঠলো
“হ্যারে মা!আমার ছেলেটাকে আঁচলে বেঁধে রাখতে পারবি তো?
ক্যামেলিয়া লজ্জায় লাজুক লতার ন্যায় নুইয়ে পড়তে চাচ্ছে।
এই মাহাদ ব্যাটা বজ্জাতের হাড্ডি।
সুযোগ বুঝে বিয়ের আবদার করে বসেছে।
এতো তুলতুলে নরম আদুরে আবদার কিভাবে ফেরাবে ক্যামেলিয়া?
সেজন্যই তো বাধ্য হয়ে মাথা দুলিয়ে সায় জানিয়ে এখন বেকায়দায় পড়ে আছে।
বেহায়া লোক বাবা মায়ের সামনেই হাত ধরে সেটে আছে,ছুটতেই দিচ্ছে না।
কোনো হায়া নেই কেনো এই অসভ্য পুরুষের?
ছেলের সংসার হবে,বউ হবে এসব ভাবতেই মাহতাব চৌধুরীর চোখের কোনে জল জমা হলো।
তিনি দীর্ঘ বছর ধরে ছেলের এহেন বেগতিক অবস্থা দেখে আসছেন।
ক্যামেলিয়ার ভাবনায় সারাক্ষন ছেলেকে ডুবে থাকতে দেখেছেন।
কাউকে না দেখে দূর থেকেও যে এভাবে পাগলের মতো ভালোবাসা যায়,নিজের ছেলেকে না দেখলে মাহতাব চৌধুরী জানতেই পারতেন না।
বাবা ছেলের সম্পর্কের উর্ধে গিয়ে মাহাদ আর মাহতাব চৌধুরী হয়েছিলেন ভালো বন্ধু।
মাহাদ ক্যামেলিয়ার অসুস্থতা জবে থেকে জানতে পেরেছে তবে থেকে প্রায় ই মন খারাপ করে মাহতাব চৌধুরীর রুমে এসে মেঝেতে হাটু গেড়ে বসে ভেজা কন্ঠে বলে উঠতো
“ক্যামেলিয়া কবে সুস্থ হবে বাবা?
“আমার যে বুকের এই খানটায় অনেক কষ্ট হয় ।
“ও কি আদৌ স্বাভাবিক মানুষের মতো জীবন যাপন করতে পারবে বলো না বাবা?
ছেলের আকুতি ভরা প্রশ্নে মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বাস দেয়া ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন নি তিনি।
মাঝে মাঝে মাহতাব চৌধুরীর মনে হতো তার কাছে ম্যাজিক থাকলে এক্ষুনি ক্যামেলিয়া কে সুস্থ করে মাহাদের হাতে বউ করে তুলে দিতেন।
কিন্তু এবার যেহেতু সুযোগ এসেছেই সেহেতু ছেলেকে তিনি আর নিরাশ করবেন না।
কালই বিয়ে দিবেন তিনি ছেলেকে।
জাকজমক করে মানুষকে দেখানোর মতো দেরি করে তিনি ভুল করতে রাজি নন।
কারন মেয়েটির মানসিক অবস্থা যখন তখন পরিবর্তন হয়।
যেহেতু আজ সে রাজি হয়েছে।তাহলে কালই তিনি বিয়ে দেবেন ওদের।
★★★★★
নাবিল হাসানের বাড়িতে খুশির লহরী উঠেছে।নাজনীন সুলতানা কোনো মতেই হাসি থামাতে পারছেন না।
আবেশেষে বিদেশিনী যে মাহাদের জালে ধরা পড়েছে এতেই তিনি হাফ ছেড়ে বাঁচলেন যেনো।
রিজভী বিয়ের আয়োজন এখনই শুরু করে দিয়েছে।
নাবিল হাসান কে মাহতাব চৌধুরী বলেছেন সে রকম কোনো জাকজমক পূর্ন আয়োজন হবে না।
যেহেতু ক্যামেলিয়া বেশি মানুষের সংস্পর্শে আসতে পছন্দ করেনা।
এজন্য নিজেদের সকল আত্মীয় স্বজন নিয়ে ঘরোয়া ভাবে ছেলের বিয়ে দেবেন তিনি।
আশফিক হাসান তার স্ত্রীর পুরাতন গহনা গুলো আলমারি থেকে বের করলেন।
সহধর্মিণী আলিয়া কে তিনি অল্প অল্প টাকা জমিয়ে গহনা গুলো গড়ে দিয়েছিলেন।
মানুষটি আজ নেই।শুধু তার স্মৃতি গুলো পরে রয়েছে।
তাই তিনি ঠিক করেছেন গহনা গুলো ক্যামেলিয়ার হাতে তুলে দেবেন।
এমিলি আর নাফিজ বেঁচে থাকলে মেয়েটির হয়তো ধুমধাম, জাকজমক, বিশাল আয়োজনের সহিত বিয়ে হতো।
নিজের মিথ্যে অভিমান আর অহমিকায় একটা মেয়ের পুরো জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেলো।
এই অন্ধকার জীবনে কবে আলো জ্বলবে সেটাও অজানা।
মেয়েটার সামনে দাঁড়ালেই তার অসহায় নীল চোখ দেখলে অন্তর কেঁপে উঠে বৃদ্ধ আশফিক হাসানের।
তার কেনো যেনো মনে হয় মেয়েটি বারবার তাকে অভিসম্পাত করে বলে উঠছে।।
“তুমি আমাদের প্রতি অবিচার করেছো।
“আমাকে এতিম করেছো”
“তুমি অহংকারী, তুমি আমাকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছো দাদু।”
হঠাৎই ক্যাচ ক্যাচ শব্দে খুলে গেলো কাঠের বড় পাল্লার দরজা।
আচানক শব্দে চমকে উঠলেন বৃদ্ধ।
“কি ব্যাপার বাবা এভাবে একা বসে আছো কেনো?
নাবিলের প্রশ্নে নিজেকে ধাতস্থ করে আশফিক বলে উঠলেন
“গহনা গুলো তোমার মায়ের ছিলো।এখান থেকে কিছু গহনা ক্যামেলিয়া কে দিতে চাই।
আমার কাছে মেয়েটিকে দেবার মতো আর কিছুই নেই বাবা।
সর্বদা আমার মনে হয় মেয়েটির থেকে আমি সব কেড়ে নিয়েছি।
প্রচুর পাপবোধ হয়।
“কিন্তু সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত কি তা আমি জানিনা।”
নিজের লম্বা দীর্ঘ শ্বাস টাকে লুকিয়ে নাবিল হাসান বিধস্ত আশফিক হাসান কে বাহু ধরে বিছানা থেকে তুলে দাঁড় করলেন।
এরপর নিচু স্বরে বলে উঠলেন
“নীচে চলো বাবা,মাহাদের বাবা আসছেন।
********
এদিকে দুরুদুরু বুকে ক্যামেলিয়া নিজের কক্ষে এসে একমনে ভেবে চলেছে
“কাজটি কি ঠিক হলো?
“আমার নিজের অবস্থারই কোনো ঠিক ঠিকানা নেই।
ডক্টর বলেছে যদি আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ব্যার্থ হই তবে ধীরে ধীরে আমি সব কিছু ভুলতে থাকবো।
নিজের অস্তিত্ব ভুলে যাবো।
মানুষকে আঘাত করার টেনডেন্সি চলে আসবে।
নিজের অগোচরে যদি মাহাদকে আমি কোনো আঘাত করে ফেলি তখন?
“যদি আমার অসুস্থতার কারণে আমি মাহাদকে ভুলে যাই,মাহাদ কি তখন আমাকে আগলে রাখবে?
হঠাৎই প্রচুর কান্না পেলো ক্যামেলিয়ার।
সুখ,শান্তি সংসার বিধাতা সবার জন্যই লিখেনি।
না হলে তার লাইফ সব কিছুতেই কেনো এতো সাফার করবে?
মাহাদের ভালোবাসার লোভ ক্যামেলিয়া সামলাতে পারেনি।
বহুবার চেষ্টা করেও উপেক্ষা করতে পারেনি মাহাদের কাতর দৃষ্টি।
কাঙালিনির মতো মাহাদের সকল ভালোবাসা লুফে নেবার জন্য মাহাদকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে সে।
নিজের প্রয়োজনে একটু স্বার্থপর নাহয় হলোই সে।
তাতে কি বড় কোনো ঝড় আসবে সকলের জীবনে??
হঠাৎই রুমে প্রবেশ করলো টুসি আর সুজানা।
আনন্দে তাদের হাসি এসে যাচ্ছে তবুও হাসতে পারছে না।
কারন ক্যামেলিয়া এটা অন্য ভাবে নিতে পারে।
এরকম বহু বার হয়েছেও তাদের সাথে।
কোনো একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে হাসলেই ক্যামেলিয়া তাদের প্রতি রাগী দৃষ্টি প্রয়োগ করে বলে উঠতো
“আমাকে নিয়ে হাসছো কেনো তোমরা?
এই মুহূর্তে তীরে এসে কোনো ভাবেই তরী ডুবতে দিতে রাজি নয় তারা দুজনে।
টুসি আর সুজানা কে দেখে ক্যামেলিয়া মুচকি হেসে সোজা হয়ে বসলো।
তাদের উদ্দেশ্য করে ক্যামেলিয়া বলে উঠলো
“কিছু বলবে তোমরা?
টুসি আর সুজানা সমানভাবে মাথা নাড়লো।
ক্যামেলিয়া ইতস্তত করে জিজ্ঞেস করলো
“কি বলতে চাও তোমরা?
সুজানা বলে উঠলো
“দেখো ক্যামেলিয়া বলার অনেক কিছুই আছে।কিন্তু সেসব বলবো না।
শুধু তোমার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ
“ভাইয়া তোমাকে নিজের থেকেও হাজার গুণ বেশি ভালোবাসে।
প্লিজ ভাইয়াকে কখনো ভুলে যেও না।
তাহলে আমার ভাই মরে যাবে।বদ্ধ উন্মাদ হয়ে সারা দুনিয়া ঘুরে বেড়াবে।
বলেই ক্যামেলিয়ার দিকে আহত দৃষ্টি প্রয়োগ করে ক্যামেলিয়ার হাত চেপে ধরলো সুজানা।
সুজানাকে কিভাবে আস্বস্ত করবে ক্যামেলিয়া এটা তার অজানা।
কোনো শ্রুতিমধুর বাক্য বা হাত বুলিয়ে শান্তনা দিতে ব্যার্থ হলো ক্যামেলিয়া।
শুধু মায়াভরা দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো টুসি আর সুজানার দিকে।
ক্যামেলিয়ার এহেন অবুঝ অবস্থা দেখে ফুঁস করে বুকে জমানো ব্যাথিত শ্বাস ছাড়লো সুজানা।
নিজের ভাইয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে সে খুব চিন্তিত এবং হতাশা গ্রস্থ।
সৃষ্টিকর্তার কাছে তার একটাই প্রার্থনা
“তার ভাইয়ের জীবনে কোনো দুঃখ কষ্ট না আসুক।খুশিতে আনন্দে অতিবাহিত হোক তার দীর্ঘ জীবন।
*******
বিয়ের খুশির উত্তেজনা আর আলাপ চারিতায় কারোরই আর রাতের খাওয়া হয়নি।
ঘড়ির কাটা এগারোর ঘরে গিয়ে জানান দিলো এখন রাত এগারোটা।
বাইরে মৃদু বাতাস বইছে সাথে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে।
কালো মেঘের আড়ালে একটু একটু কৃষ্ণপক্ষের চাঁদটাকে দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎই ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলো।
আজকাল হুটহাট ঢাকা শহরে ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায়।
অন্ধকার ক্যামেলিয়ার সবচেয়ে বড় ভয়ের কারন।
কক্ষ অন্ধকার হতেই ঘেমে অস্থির হয়ে উঠলো ক্যামেলিয়া।
গলার আওয়াজ উঁচু করে কাউকেই ডাকতে পারছে না সে।
মনে হচ্ছে কেউ গলা টিপে ধরে আছে সজোড়ে।
ক্রমাগত শরীর কেঁপে শ্বাস টান উঠে যাচ্ছে।
বিছানাময় হাতড়ে মোবাইলটা খুঁজে চললো।
কিন্তু কোথাও পাচ্ছেনা।
হঠাৎই হ্যালুসিনেশন হতে লাগলো।
ঐতো ক্যামেলিয়ার মা আর বাবা ঘনকালো জঙ্গলের ভেতর দাঁড়িয়ে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকিয়ে হাত ইশারায় ডাকছে।
ক্যামেলিয়ার মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তার বাবা মায়ের কাছে যাবার জন্য পা বাড়ালো।
যতোই ক্যামেলিয়া এগিয়ে যায় ততই মরীচিকার ন্যায় তার বাবা মা দূরে সরে যায়।
সমস্ত দিকবিদিক হারিয়ে পায়ের গতি জোড়ালো করলো সে।
সামনে তার চকচকে মসৃণ রাস্তা।ঝকমকে আলো।
এইতো আরেকটু হলেই ক্যামেলিয়া ধরে ফেলবে তার মায়ের হাত।
হঠাৎই শক্ত পুরুষালী হাতের বেষ্টনী রোধ করলো ক্যামেলিয়ার পথ।
হুশ হারিয়ে রাগে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে হাত দুটো খামচে ধরলো ক্যামেলিয়া।
ক্যামেলিয়াকে শান্ত করতে আদুরে স্বরে বার কয়েক ডেকে উঠলো মাহাদ।
ধীরে ধীরে স্থির হলো ক্যামেলিয়া।
চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে ছাদের রেলিংয়ের উপর আবিস্কার করে ভয়ে কেঁপে শক্ত করে মাহাদের হাত চেপে ধরলো।
ক্যামেলিয়ার কোমর শক্ত করে ধরে রেলিংয়ের উপর থেকে নিচে নামালো মাহাদ।
থরথর করে কাপুনিরত ক্যামেলিয়া কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিলো মাহাদ।
বাইরে থেকে ক্যামেলিয়া মাহাদের হৃদস্পন্দন এর ধুপধাপ শব্দ শুনতে পাচ্ছে।
হঠাৎই অষ্টাদশীর শরীর আবেশে শিহরিত হয়ে উঠলো।
সর্বাঙ্গে খেলে খেলো বৈদ্যুতিক ঝটকা।
না চাইতেও প্রথম বারের মতো ক্যামেলিয়া দুই হাত মেলে মাহাদের পিঠ শক্ত করে খামচে ধরলো।
এরপর নেশাক্ত চোখে মাহাদের দিকে তাকিয়ে আবেশ মেশানো কন্ঠে বলে উঠলো
“ক্যান আই বাইট ইউর লিপ্স?”
মাহাদ কোনো প্রতিউত্তর না করে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো।
আরেকটু দেরি হলেই হয়তো মাহাদ চিরতরে আজ তার হৃদ্যেশ্বরী কে হারিয়ে ফেলতো।
সেই শঙ্কায় মাহাদের বুকের ছাতিতে ক্রমাগত হাতুড়ি পিটিয়ে গলা শুকিয়ে এলো।
শুষ্ক ঠোঁট জোড়া জিহবার সাহায্যে ভিজিয়ে ছয়তলা বিল্ডিংটির ছাদের রেলিংয়ের দিকে দৃষ্টি দিলো।
ক্যামেলিয়া তার নরম তুলতুলে কম্পনরত আঙ্গুল গুলো দিয়ে মাহাদের চোখের জ্বল মুছিয়ে দিলো।
এরপর মাহাদের পায়ের পাতার উপর নিজের পদ্মের ন্যায় চিকন লম্বা নগ্ন পা তুলে দাঁড়িয়ে
নিজের গোলাপি ফিনফিনে পাতলা ঠোঁট দুটো দিয়ে ছুঁইয়ে দিলো মাহাদের পুরু লাল মরুভূমির ন্যায় শুষ্ক ঠোঁটে।
যেখানে মাহাদের বেসামাল হবার কথা সেখানে মাহাদ চোখ বন্ধ করে অশ্রু বর্ষণ রোধের বৃথা চেষ্টা করতে ব্যাস্ত।
*******
ইলেক্ট্রিসিটি চলে এসেছে বহু আগেই।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির ছিটায় ক্যামেলিয়ার সাদা রঙের জামা ভিজে গেছে অনেক খানি।
বাইরে থেকে শরীরের নিষিদ্ধ জিনিস গুলো স্পস্টমান।
মাহাদ তার গায়ের শার্ট খুলে ক্যামেলিয়ার গায়ে জড়িয়ে মর্মাহত কন্ঠে বলে উঠলো
“চলো।”
#চলবে