সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-০৪

0
92

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০৪

পানিটুকু শান্তিমতো খেতে পারলো না জারা, যেনো গলায় গিয়ে আটকে গেছে। কোনরকম পানিটুকু গিলে আবরারকে উদ্দেশ্য করে বললো…

‘ আপনি কি জানেন এই মুহূর্তে আপনি কি বলছেন?’

‘ আই নো, আমি আপনাকে একটা প্রপোজাল দিচ্ছি। এখন সেটা গ্রহণ করা না করা সম্পূর্ন আপনার ওপর নির্ভর করছে ‘

‘ আমি কেনো আপনার সঙ্গে সম্পর্ক করবো?’

‘ এখানে সমস্যার কি আছে? আপনি তো ছেলেই খুঁজছেন ‘

‘ হ্যা কিন্তু…’

‘ দেখুন জারা, আপনি এখনও পছন্দমতো ছেলে খুঁজে পাননি এটা তো সত্য। হয়তো আপনি যেমন ছেলে চাইছেন তেমন ছেলে এখনও নাগালের মধ্যে আসেনি। এর মাঝে আমরা একে অপরকে কিছুটা সময় দিয়ে দেখতে পারি। যেহেতু আমরা পূর্ব পরিচিত, আই থিঙ্ক এটা আমাদের জন্যে একটা প্লাস পয়েন্ট হবে’

‘ আমরা কর্মসূত্রে পরিচিত, আপনি আমার ইনভেস্টর। আপনি কিভাবে আশা করলেন যে আমি আপনার এই প্রপোজালে রাজি হবো? আর কেনোই বা হবো?’

‘ কেনো হবেন না? একটা কারণ বলুন!’

‘ কারণটা খুব সেনসিটিভ, আমি আপনার সামনে প্রকাশ করতে চাইছি না। হতে পারে কারণ শুনলে আপনার মনে আমার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা জন্মাবে, সেটা আমি চাই না ‘

‘ তবুও আমি শুনতে চাই ‘

‘ দেখুন, এটা আমার ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার আর আমি সেটা বাইরের কারো সঙ্গে শেয়ার করতে চাইছি না ‘

‘ আপনি একটু আগেই বললেন আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক আছে!’

‘ সেটা বিজনেস রিলেটেড সম্পর্ক, পার্সোনাল নয় ‘

‘ আমি আপনাকে পছন্দ করি জারা ‘

আবরারের সহজ স্বীকারোক্তি শুনে কয়েক মুহূর্তের জন্যে যেনো থমকে গেলো জারা, এমন কিছু যে ও কল্পনাও করেনি। আবরার ঠিক করে এসেছিলো, আজ বলেই দেবে কথাটা তাই আর সুযোগ পেয়ে বলতে দেরি করলো না! জারার বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন করলো..

‘ মানে?’

‘ আমি আপনাকে পছন্দ করি, এবার নিশ্চয়ই আপনার পার্সোনাল সেনসিটিভ কারণটা বলতে আর দ্বিধা নেই?’

‘ আপনি আমাকে কেনো পছন্দ করেন? পুরো দেশ.. আরে পুরো দেশ বাদ দিন এই শহরে মেয়ের অভাব নাকি?’

‘ ওসব নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না, ওটা আমার ভাবনার ব্যাপার ‘

‘ দেখুন আবরার, আমি জানিনা আপনি কি ভাবছেন বা আমাকে নিয়ে আপনার মাথায় কেনো এ ধরনের চিন্তার জাগরণ হয়েছে। তবে আমার কোনো ছেলেকে পছন্দ করার বা ভালোবাসার ইচ্ছে নেই ‘

‘ কেনো? আপনার কি কোনো অতীত আছে? কেউ কি আপনাকে খুব কষ্ট দিয়ে ছেড়ে চলে গেছিলো যার জন্যে আপনি…’

‘ অতীত আছে তবে এসব কিছু নয়! আর হ্যাঁ, আপনি আমার সম্পর্কে কিছুই জানেন না তাই বলছি আমাকে পছন্দ করে আপনার বিশেষ লাভ হবেনা ‘

‘ আমি অবশ্যই আপনার সম্পর্কে জানতে চাই, আর আমি আপনাকে কেনো পছন্দ করি সেই কারণটা না হয় আপাতত শুধু আমি অব্দিই থাক। ভবিষ্যতে যদি আপনি আমার জীবনে আসেন, তখন না হয় বলবো ‘

আবরার যে কথাগুলো মন থেকে বলছে আর একটা কথায়ও ভেজাল নেই তা জারা বেশ বুঝতে পারছে। এতোদিন ওর সঙ্গে বেশ কয়েকদফা সাক্ষাৎ হয়েছে জারার, তা থেকেই যেটুকু আবরারকে চিনেছে তাতে লোকটা কল্পনার রাজ্যে বাস করার মানুষ নয়। কাজের ক্ষেত্রে কিছু পছন্দ হলে বা না হলে তা সোজাসুজি বলে দেন, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। জারা ভাবলো আবরারের মনে ওর জন্যে “ভালো লাগা” নামক যে অনুভূতি ঘুরপাক খাচ্ছে সেটা দুর করে দেওয়াটাই শ্রেয় হবে…

‘ আপনি আমার সম্পর্কে কিছু না জেনে আমাকে পছন্দ করেছেন, কিন্তু আমার সম্পর্কে জানলে হয়তো আজকের পর আর আমার সঙ্গে বসে কথা বলার ইচ্ছেও আপনার হবেনা ‘

জারার চোখমুখে হঠাৎই কেমন কঠোরতার ছাপ ফুটে উঠলো, আবরার নিরবে তাকিয়ে সম্মুখে বসে থাকা রমনীর মনে কি চলছে তা বোঝার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। এমন কি বলবে জারা যা আবরারকে ওর বিমুখী করে দেবে?

‘ আপনি জানেন এতগুলো ছেলের সঙ্গে দেখা করার পরও কেনো এখনও কেউ আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়নি? কারণ আমি স্বল্প সময়ের জন্যে বিয়ে করতে চাইছি, আর কোনো ছেলেই আমার এই শর্তে রাজি হচ্ছে না’

‘ স্বল্প সময়ের বিয়ে? ঠিক বুঝলাম না ‘

‘ ম্যাক্সিমাম ছয় মাস, ছয়মাস আমি সংসার করবো এরপর আলাদা হয়ে যাবো। বিয়ের ব্যাপারে আমার আগ্রহ ব্যস এইটুকুই ‘

আবরার ভেবেছিলো জারা বুঝি ভীষণ সিরিয়াস কিছু বলবে, মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুতও করে নিয়েছিলো ও কিন্তু জারার কথা শুনে হাসি পেলো ওর। আবরার হেসেই বলে বসলো…

‘ ছয় মাসের জন্যে বিয়ে? আপনি কি আমার সঙ্গে মজা করছেন?’

‘ মোটেই না, আমি এটাই করতে চাইছি ‘

‘ এরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ?’

‘ কারণ জানা তেমন জরুরি নয়, আপনি যেটা জানতে চেয়েছেন সেটা জানালাম। আমি মূলত নিজ স্বার্থে বিয়ে করতে চাইছি, আমার বাবা বলেছে আমি বিয়ে না করা অব্দি সম্পত্তিতে ভাগ পাবো না আর আমি নিজের ভাগ ছাড়তে রাজি নই। জরুরী ভিত্তিতে আমার এখন বিয়ে করতে হবে, ছয় মাস হলে আমরা আলাদা হয়ে যাবো ‘

জারার কথা শুনে আবরারের কপালে ভাঁজ পড়লো, মেয়েরা সাধারণত বিয়ে করে শখের সংসার সাজিয়ে তোলে। কিভাবে সেটা টিকিয়ে রাখা যাবে তার জন্যে লড়াই করে সেখানে জারা কিনা বলছে নিজের প্রয়োজন মিটলে সম্পর্ক ভেঙে দেবে?

‘ সামান্য সম্পত্তির জন্যে আপনি এরকম একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? বিয়েটা আপনার ছেলেখেলা মনে হয়?’

‘ বিয়ের সম্পর্কে আমি কখনোই জড়াতে চাইনি, আমার মনে ইচ্ছেও জাগেনি। এ সম্পর্কে জড়ানো মানেই জীবনের একটা সময় গিয়ে কষ্ট পেতে হবে, তখন আর করার কিছুই থাকবে না। কিন্তু এখন আমি বাধ্য, তাই বিয়েটা করতেই হবে। এমনিতেও আমাদের সমাজে ডিভোর্সী মেয়েদের নিয়ে যতোটা জলঘোলা হয় ডিভোর্সী ছেলেদের নিয়ে তার সিকিও হয়না। তাই আমার মনে হয় না আমার হাসবেন্ডকে ছাড়লে তার জীবনে কোনো প্রভাব পড়বে, যা প্রভাব পড়ার আমার ওপর পড়বে ‘

জারার কথা শুনে রীতিমত হতভম্ব হয়ে গেছে আবরার, ভেবেছিলো আজ নিজের মনের কথা বলে জারাকে চমকে দেবে এদিকে জারা নিজেই যে ওকে এভাবে চমকে দেবে কখনো ভাবেনি। জারার শীতল চাহনি, ওর বলা একেকটা কথা যেনো তীরের মত গিয়ে বিধলো আবরারের মস্তিষ্কে। এমন একটা মেয়ে যার মাঝে বিয়ের মতো একটা বিষয় নিয়েও বিন্দুমাত্র অনুভূতি নেই তাকে নিজের জীবনে চাওয়া কি ভুল হবে?

‘ জারা, আপনি কি জানেন আপনি এই মুহূর্তে ঠিক কি বলছেন?’

‘ আমি সজ্ঞানেই কথা বলছি মিস্টার আবরার, কিন্তু আপনি বোধহয় আমার কথাগুলো হজম করতে পারছেন না ‘

দ্বিতীয়বারের মতো প্রশ্ন করে আরেকটু বাজিয়ে নিলো আবরার, যদি জারা অন্যকিছু বলে? কিন্তু নাহ, মেয়েটা একই কথাই বললো। আবরারের মলিন মুখপানে তাকিয়ে জারা বললো…

‘ আমার কথা শুনে আমার প্রতি বিরক্তি চলে এসেছে আপনার তাইনা? আগেই বলেছিলাম, কারণ জানলে আপনি নিজেই সরে যাবেন ‘

আজ সকাল অব্দি আবরার ভীষণ উৎসাহিত ছিলো জারার সঙ্গে দেখা করার জন্যে, কিন্তু এই মুহূর্তে জারাকে আর এক মুহূর্তের জন্যেও দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে! চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো আবরার, কড়া স্বরে জারাকে বললো…

‘ জারা, আমি জানিনা আপনার মনে কি চলছে কিন্তু আপনি যা করতে চাইছেন সেটা অন্যায়। ইচ্ছে হলো তো সম্পর্ক গড়বেন, ইচ্ছে হলো ভাঙবেন? বিয়ের সম্পর্ক এতোই সহজ মনে হয় আপনার? আর ছেলেদের কি কোনো ফিলিংস নেই? সবাইকে যদি আপনি নিজের মতো ফিলিংসলেস ভাবেন তাহলে ভুল করছেন, আপনার মস্তিষ্ক আপনার নেওয়া একান্ত কিছু সিদ্ধান্ত ও ভাবনায় সীমাবদ্ধ হতে পারে তাই বলে বাকিসব আপনার ইচ্ছেমতো চলবে তার মানে নেই ‘

চুপ করে রইলো জারা, চোখ তুলে আবরারের দিকে তাকিয়ে দেখার এই মুহূর্তে ইচ্ছে হচ্ছে না ওর। ইচ্ছে হচ্ছে না বললে ভুল হবে, আসলে ওর সাহস হচ্ছেনা। প্রথমবার আবরারের কথায় প্রচণ্ড ক্রোধের উপস্থিতি উপলব্ধি করতে পারলো জারা!

‘ আপনি অনেক নি’ষ্ঠু’র জারা, আপনাকে এমনভাবে দেখতে চাইনি ‘

কথাটা বলেই আবরার আর এক মুহুর্তও দাড়ায়নি, বেরিয়ে গেছে। ও যাওয়ার পর ওয়েটার খাবার দিয়ে গেছিলো, আবরারের খাবারটা ওভাবেই রইলো। জারা নিজের খাবারটা আর খেতে পারেনি, এ মুহূর্তে গলা দিয়ে নামবে না, তাই প্যাক করে নিয়ে এলো।
_____________________________________

গত কুড়ি মিনিটে পাঞ্চিং ব্যাগে যে কতগুলো পা’ঞ্চ করেছে তার হিসেব নেই আবরারের কিন্তু মাথা যে কিছুতেই ঠান্ডা করতে পারছে না। জারাকে যে সুন্দর মনের একটা মেয়ে ভেবে পছন্দ করেছিলো আবরার, কিন্তু মেয়েটার মন মানসিকতা এমন হবে সেটা কিছুতেই মানতে পারছে না। একসময় ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো ও… লম্বা শ্বাস ফেলতে ফেলতে আনমনে বলে উঠলো…

‘ তোমাকে তো আমি এমন ভাবিনি জারা, এতোটা নি’ষ্ঠু’র মন একটা মেয়ের কিভাবে হতে পারে?’

রেস্টুরেন্টে জারার কথাগুলো শোনার পর যে অসস্তি শুরু হয়েছিলো তার রেশ এখনো কাটেনি, পছন্দের মানুষের মুখে অমন কঠোর কথা শোনার আশা যে ওর ছিলো না। রেশটা হয়তো আরো কিছুদিন থাকবে। আপাতত চোখ বুজলো আবরার, এই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা করতে একটু ঘুমানো দরকার। রাতে, ডিনার টেবিলে ছেলেকে না দেখেই নওয়াজ সাহেব স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন…

‘ ছেলে কোথায়?’

‘ ঘরে, আমি ডাকলাম। বললো খাবে না ‘

‘ জ্বর এসেছে নাকি দেখো তো, কতদিন বলেছি রাত জেগে অফিসে পড়ে না থাকতে। অতিরিক্ত কাজের চাপে মনে হচ্ছে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ‘

‘ না আব্বু, জ্বর টর আসেনি হয়তো। আজ অফিস থেকে আগে ফিরেছে আবার এসে সেই যে ঘরে ঢুকেছে আর বের হয়নি। হয়তো কোনো কাজ নিয়ে চিন্তায় আছে ‘

‘ সারাদিন ওইসবই করুক, আর কোনদিকে চিন্তা ভাবনা তো আর নেই। ওইদিন নিজেই বললো কোন মেয়েকে পছন্দ করে, আমি ভাবলাম একটা ছবি তো অন্তত দেখাবে। এতদিন হলো তারও খবর নেই ‘

‘ আব্বু, ওকে একটু সময় দাও। এতদিন তো মেয়েদের কথাই শুনতে চাইতো না, এবার নিজে থেকেই যখন বলেছে একটু সময় দাও। দেখবে ও নিজেই আমাদের সবার সঙ্গে মেয়েটাকে দেখা করাতে আনবে ‘

মেয়ের কথা শুনে নওয়াজ সাহেব আর খাবার সময় কথা বাড়ালেন না। ওদিকে, জারা ওর টেবিলে বসে কাজ করছে। আজকে অনেকটা সময় নিয়ে একটা ডিজাইন করেছে, যদিও ডিজাইনটা একদম সাধারণ মনে হচ্ছে ওর কাছে। তো ও ভাবলো এর মধ্যে আরেকটু ছোটখাটো কাজ করে দেবে, অনেকক্ষণ একভাবে বসে থাকায় ঘাড়ে টান ধরে গেছে ওর। টেবিল ল্যাম্পটা বন্ধ করে বিছানার ওপর ধপাস করে গিয়ে শুয়ে চোখ বুঝলো জারা, হঠাৎই দুপুরে আবরারের বলা একটা কথা জারার অবচেতন মস্তিষ্ককে জাগিয়ে তুললো। বিড়বিড়য়ে জারা বলে উঠলো…

‘ আমি কি সত্যিই খুব নি’ষ্ঠু’র?’
____________________________________

ফিহার স্কুলের পনেরো দিনের গ্রীষ্মকালীন ছুটি শেষ হবে আগামী দুদিনের মধ্যে, ওর বাবার আজ ওদের নিতে আসার কথা ছিলো কিন্তু ব্যস্ততার কারণে আসতে পারেনি তাই আজ সকালে অফিস যাওয়ার আগে আবরার ওদের বাড়ি দিতে এসেছে, ও ড্রাইভ করছে। পাশে ওর বোন আর পেছনের সিটে ফিহা, ও হঠাৎ ওর মামাকে বললো…

‘ মামা, আমি এরপর যখন আসবো তখনও কিন্তু আমাকে জারা মামীর সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে যাবে। আমার মামীকে বেশ পছন্দ হয়েছে ‘

‘ ফিহা, তোমার দেখা করতে যেতে হবে না। দেখো কদিন পর মামীই আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবে তোমার মামার সঙ্গে, ঠিক বললাম তো আবরার?’

ড্রাইভ করতে করতে গম্ভীর স্বরে উত্তর দিলো আবরার..

‘ আমি এই মুহূর্তে ওর বিষয়ে কথা বলতে চাইছি না আপু ‘

‘ ওমা, তুই নিজেই না আমায় বললি এখন আবার নিজেই ভাব দেখাচ্ছিস? রিজেক্ট করে দিয়েছে নাকি তোকে হুমম?’

আয়েশা যদিও মজার ছলে কথাটা বলেছিলো কিন্তু ভাইয়ের তরফ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো…

‘ কিছু হয়েছে আবরার?’

‘ নাথিং, সি ইজ জাস্ট নট মাই টাইপ ‘

‘ তুই কি ওর সঙ্গে দেখা করেছিলি? ও তোকে কিছু বলেছে?’

‘ অনেককিছুই বলেছে আপু, এমন কিছু কথা বলেছে যা আমি অন্তত ওর মুখ থেকে শুনবো বলে আশা করনি। আসলে আমারই ভুল হয়েছে, দুর থেকে মানুষের মন বোঝা সম্ভব না ‘

ভাইয়ের কথা শুনে আর পাল্টা প্রশ্ন করতে পারলো না আয়েশা, বুঝলো এ মুহূর্তে এসব আলোচনা করা আর উচিত হবেনা। ওদিকে, বান্ধবীর সঙ্গে আজ বহুদিন পর চেনা ভার্সিটির ক্যাম্পাসে এসেছে জারা। ক্যাম্পাসের বিখ্যাত চা ও ডালপুরি খেতেও মিস করেনি, খেতে খেতে আড্ডার ফাঁকে এলিনা জারাকে জিজ্ঞাসা করলো…

‘ আঙ্কেল নাকি তোর পছন্দের ছেলের সঙ্গে দেখা করার জন্য খুব জোরাজুরি করছে? কি করবি কিছু ভেবেছিস?’

‘ বিকল্প উপায় বের করে ফেলেছি, এখন আর চিন্তা নেই। বাবা যেদিন বলবে নিয়ে যাবো ‘

‘ বিকল্প উপায়? ছেলে পেয়ে গেছিস?’

‘ পেয়েছি, তবে আমার অনেক খরচ হয়ে যাবে এটাই একটু সমস্যা আর কি ‘

‘ মানে? শেষমেশ ভাড়া করা হবু স্বামী নিয়ে বাবাকে দেখাবি নাকি?’

‘ টাকা ছাড়া তো কাজ হলো না, টাকা দিয়ে হলেও কাজটা তো শেষ করতে হবে তাইনা?’

জারার কথা শুনে তাজ্জব বনে গেলো এলিনা, সত্যিই যে ও বিয়ের জন্যে ছেলে ভাড়া করার মতো পাগলামিটা করে বসবে সেটা অন্তত এলিনা ভাবেনি! আজ কোম্পানির সব কর্মকর্তার সঙ্গে মিটিংয়ে বসেছিলো আবরার। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কেটে লঞ্চ করা কোন জুয়েলারির কেমন রিভিউ আসছে, কেমন প্রফিট হলো এসব নিয়ে আলোচনা করেছে। মিটিং শেষে ও মিটিং রুমেই একটু বসলো, বাকিরা বেরিয়ে গেছে। আবরার একটা ফাইল ঘাটছিলো তখন ওর সেক্রেটারি বললো…

‘ স্যার, একটা কথা ছিলো ‘

‘ বলুন ‘

‘ আপনি যে মেয়ের সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছিলেন, মানে মিস. জারা। ওনার সম্পর্কে একটা নতুন…’

‘ আপনাকে আর ওনার সম্পর্কে কোনো খোঁজ করতে হবে না, আর কাজের সময় আমি বাইরের কোনো ব্যাপারে শুনতে চাইনা ‘

‘ ঠিক আছে স্যার, কিন্তু যে খবরটা কষ্ট করে জোগাড় করেছি সেটা কি বলতে পারি?’

‘ বলুন ‘

‘ অদ্ভুত কিছু শুনলাম স্যার, মানে এরকম আগে শুনিনি। যাকে আমি ইনভেস্টিগেশন করতে পাঠিয়েছিলাম সে বললো, মিস. জারা গত সপ্তাহে একটা ছেলেকে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছে। শুনলাম ছেলেটা নাকি তার বাগদত্তা হিসেবে অভিনয় করবে ‘

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]