সাজিয়েছি এক ফালি সুখ পর্ব-১৯

0
93

#সাজিয়েছি_এক_ফালি_সুখ
#লেখনীতে – #kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৯

দুই দশকের অধিক সময় পর নিজের মাকে চোখের সামনে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লো জারা, ডিভোর্সের পরও কিছুদিন জারার মা জারার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলো কিন্তু এরপর আর তার খোঁজ ছিলো না। জারা শুনেছিলো ওর মা দেশের বাইরে চলে গেছে।

‘ এতগুলো বছর পর আজ হঠাৎ তোমার মেয়ের কথা মনে পড়লো আম্মু? তুমি সত্যিই অনেক নিষ্ঠুর ‘

জারার নেত্রকোটর পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে, পা জোড়া যেনো রীতিমতো কাঁপছে। এ আকস্মিক সাক্ষাৎ যে জারার কল্পনার বাইরে ছিলো, ও ভেবেছিলো মায়ের সঙ্গে বুঝি আর কোনোদিন দেখা হবেনা। এগিয়ে এসে মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন জারার মা, আরো দুর্বল হয়ে পড়লো জারা। পরে মাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ কান্না করে বুকের ভেতরটা হালকা করলো… দু কাপ কফি নিয়ে বসেছে দুজনে, জীবনে প্রথমবারের মতো উপযুক্ত বয়সে মায়ের সঙ্গে বসে দুটো কথা বলার সুযোগ পেলো জারা।

‘ তুমি তো দেশের বাইরে থাকো তাইনা?’

‘ হুমম! আমি জাপানে সেটেল্ড। কয়েক মাসের জন্যে দেশে এসেছি, তোমার ঠিকানা জোগাড় করে এর আগে দেখা করতে এসেছিলাম কিন্তু তুমি এখানে ছিলে না ‘

‘ হুমম! আমি ভেবেছিলাম এমনি চেনা কেউ হবে, কিন্তু সেই মানুষটা যে তুমি হবে ভাবিনি। নিজের পরিচয়টাও দিয়ে যাওনি, তাহলে হয়তো আমাদের আরো আগেই দেখা হতো’

‘ আমি আসলে বুঝে উঠতে পারছিলাম না কি করবো, তোমার সঙ্গে এতগুলো বছর পর আমার দেখা করা আদৌ ঠিক হবে কিনা বা তুমি আমাকে দেখে কেমন রিয়েক্ট করবে এইসব নিয়ে ভাবনায় ছিলাম’

মলিন মুখে হাসলো জারা…

‘ আমি এখন আর বাচ্চা রইনি যে রিয়েক্ট করবো, বাস্তবতা বোঝা ও মেনে নেওয়ার উপযোগী বয়স হয়েছে আমার ‘

মেয়ের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন জারার মা..

‘ হুমম! শুনলাম, তুমি বিয়ে করেছো। কতদিন হলো?’

‘ প্রায় চার মাস ‘

‘ ছেলে কি করে?’

‘ জুয়েলারি ডিজাইনার ‘

‘ বাহ, খুব ভালো। তুমি বিয়ে করেছো জানার পর আমার ইচ্ছে ছিলো তোমাদের দুজনের সঙ্গে একেবারে দেখা করার, ওকে কি আসতে বলা যাবে?’

‘ এখন তো আসতে পারবে না, আজকে ব্যস্ত আছে। পরে কখনো না হয়…’

‘ পরে বোধহয় আর সুযোগ হবেনা, আমি এই সপ্তাহেই আবার দেশের বাইরে চলে যাবো। দেশে আর কত বছর পর আসা হবে বা আদৌ আসা হবে কিনা জানা নেই ‘

‘ দেশে একা এসেছো?’

‘ না, আমার ছেলেও সঙ্গে এসেছে ‘

ছেলের কথা শুনেই মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে এলো জারার, যদিও সে ছোটো থেকেই জানতো তার মা নতুন জীবন শুরু করেছে তবুও এতো বছর পর মায়ের সঙ্গে হঠাৎ দেখা আর তার মুখেই ছেলের কথা শুনে কষ্ট হলো জারার।

‘ ওহ, ভালো। তুমি – বাবা দুজনেই দেখছি নিজেদের সুখের জায়গা খুঁজে পেয়েছো। দুজনেই নিজেদের দিক থেকে ভালো আছো ‘

জারার কথায় অভিমান স্পষ্ট, মেয়ের হাতটা ধরলেন জারার মা..

‘ জারা, আমার ওপর অনেক অভিমান আছে তোমার তাইনা? থাকাটা স্বাভাবিক, অবশ্য তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখও আমার নেই। আমি যা করেছি সেটা মা হিসেবে…’

‘ তুমি নিজেকে কেনো দোষ দিচ্ছো আম্মু? দোষ তো বাবার ছিলো, বাবা যদি তোমাকে ডিভোর্স না দিতো তাহলে…’

‘ এতে তোমার বাবার কোনো দোষ ছিলো না জারা, সে আমায় থাকতে বলেছিলো কিন্তু আমি থেকে যেতে পারিনি। সে মুহূর্তে স্বার্থপর হয়ে আমি শুধু নিজের কথা ভেবেছিলাম, জানিনা আমার কি হয়েছিলো যে একবারও তোমার খেয়াল মাথায় আসেনি ‘

মায়ের কথা শুনে চমকে উঠলো জারা, ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো…

‘ মানে? তুমি কি বলতে চাইছো?’

মেয়ের এই অবাক চোখে তাকানো দেখে খানিকটা বিস্মিত হলেন জারার মা…

‘ তোমার বাবা তোমাকে কিছু বলেনি? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি সব জানো ‘

‘ হ্যাঁ, আমি জানি যে বাবার সঙ্গে তোমার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছিলো। বাবা তোমার সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে পারছিলো না তাই উনিই তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছেন আর তোমাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেননি’

‘ আনোয়ার তোমাকে এইসব বলেছে?’

‘ সত্যিটা কি তবে অন্যকিছু ছিলো?’

মেয়ের কথা শুনে জারার মা নিশ্চিত এবার হলেন যে জারার বাবা ওকে আসল সত্যিটা জানায়নি, জারা জানেনা যে ওর বাবা নয় বরং ওর মা নিজেই এই বিচ্ছেদ চেয়েছিলো। নিরব হয়ে গেলেন জারার মা, মেয়ে তার সত্যিটা জানেনা এটা জানলে সে কখনোই এ কথা তুলতো না। মাকে নিরব দেখে জারা আবারো প্রশ্ন করলো…

‘ চুপ করে থেকোনা আম্মু, কথা যখন বললে পুরোটা বলে শেষ করো। এমনকিছু কি আছে যেটা আমি জানিনা বা আমার জানা দরকার?’

‘ আসলে, আমি জানতাম না যে তুমি জানো না। নাহলে..’

‘ জানতাম না? আমি জানাও, আমি জানতে চাই ‘

মেয়ের প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই বুঝে জারার মা ভাবলেন মেয়েকে সবটা বলবেন। জারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে ওর মা কি বলবে তা শোনার জন্যে, কি এমন কথা যা ওর বাবা এতোদিন জানায়নি?

‘ তোমার বাবার সঙ্গে আমার ডিভোর্সের কারণ হিসেবে তুমি কি জানো আমার জানা নেই, তবে..আনোয়ারকে ডিভোর্সের কথাটা সর্বপ্রথম আমিই বলেছিলাম ‘

‘ মানে? কেনো আম্মু? তোমরা দুজন তো একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলে তাইনা? তাহলে কেনো তোমার মাথায় এই বিচ্ছেদের চিন্তা এলো?’

‘ অ্যাডজাস্টমেন্ট বলে একটা কথা আছে জানো তো? সংসার জীবন সবে শুরু করেছো, হয়তো এখনো এর সাথে পরিচিত হওনি। আমি আসলে তোমার বাবার সঙ্গে আর অ্যাডজাস্ট করতে পারছিলাম না, দিনদিন আমাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিলো। এক পর্যায়ে তোমার চোখের আড়ালে আমাদের মধ্যে অনেক ঝগড়াও হয়েছে। একদিন আমিই বলেছিলাম ডিভোর্সের কথা, তোমার বয়স তখন সাড়ে চার হবে হয়তো ‘

মায়ের কথা শুনে রীতিমত হতভম্ব হয়ে গেছে জারা, এতো বছর জেনে এসেছে..জেনে এসেছে বললে ভুল হবে। ও ভেবে এসেছে আর পাঁচটা ডিভোর্স কেসের মতো এখানেও হয়তো দোষ ওর বাবার ছিলো। বাবাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে উত্তরস্বরুপ সবসময় নীরবতা পেয়ে জারা ধরেই নিয়েছিলো ওর ধারণা ঠিক, ওর বাবা ওর মাকে ছেড়েছে। আনোয়ার সাহেব কখনো জারাকে জানাননি আসল সত্যিটা, পাছে জারা তার মাকে ঘৃনা করে। তখন না হলেও, এতগুলো বছর পর মায়ের কথা শুনে জারার ভুল ভেঙেছে। এতো বছর পর মাকে দেখে জারার মনে যে উল্লাস শুরু হয়েছিলো, নিমিষেই তা বিষাদে পরিণত হয়েছে। মায়ের প্রতি কেমন যেনো ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে মনে। একজন মা তার সন্তানকে ছেড়ে কিভাবে যেতে পারে?

‘ আমার কথাও ভাবলে না তুমি আম্মু? একবারও মনে হলো না যে মাকে ছাড়া এই ছোটো মেয়েটা কিভাবে থাকবে, কি করবে?’

মেয়ের কথা শুনে মাথা নিচু করলেন জারার মা…

‘ আমাকে ক্ষমা করো জারা, আসলে ওই মুহূর্তে আমি তোমার বাবার সঙ্গে আলাদা হওয়া ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারছিলাম না। আনোয়ার অবশ্য আমাকে ছাড়তে চায়নি, এরপরও দু – তিনমাস আমরা এ বিষয়ে অনেক আলোচনা করেছি। আমি আর পারিনি আমার মনকে মানাতে, আনোয়ার বুঝে গেছিলো আমাকে জোর করে আর ধরে রাখতে পারবে না তাই আমার প্রস্তাবে শেষমেশ রাজি হয়ে গেছিলো ‘

কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে জারার চোখ দুটো আবারো নোনাজলে ভরে উঠেছে। তবে এবার আনন্দে নয়, বেদনায়। মায়ের কথাগুলো শুনে যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছিলো মেয়েটা, কিছুক্ষণ চুপ থেকে হুট করেই শক্ত করে জারা প্রশ্ন করলো…

‘ তুমি তো চাকরি করতে তাইনা আম্মু?’

‘ হুমম!’

‘ তুমি কি পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলে যার জন্যে হুট করেই এতদিনের ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হচ্ছিলো?’

মেয়ের মুখে এমন সোজাসাপ্টা প্রশ্ন শোনার জন্যে প্রস্তুত ছিলেন না জারার মা, উনি কিছুক্ষণ চুপ রইলেন। জারা নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে, যদিও মায়ের মুখ এবং মৌনতা দেখে বুঝেই গেছে যে ওর ধারণা সঠিক!

‘ চুপ করে আছো যে?’

মেয়ের দিকে অপরাধীর ন্যায় তাকালেন জারার মা, মায়ের চাহনি দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে জারা বললো…

‘ তোমার নীরবতাকে আমি তাহলে হ্যাঁ বলেই ধরে নিচ্ছি, আই অ্যাম রাইট! আমি যদি ভুল না করি তাহলে যার জন্যে তুমি নিজের ভালোবাসা সন্তান ছেড়ে গেছিলে সেই পুরুষটিই তোমার বর্তমান স্বামী, রাইট?’

‘ হুমম ‘

জারার কেমন অস্থির লাগছে। ওর বাবা ওর মায়ের সব ছবি ফেলে দিয়েছিলেন বিধায় জারা ওর মায়ের চেহারাও ভুলে গেছিলো। যে মাকে এতগুলো বছর একনজর দেখার জন্যে ছটফট করেছে তাকেই কেনো যেনো আর এক মুহূর্তের জন্য দেখতে ইচ্ছা করছে না। কি একটা ভেবে ব্যাগটা কাঁধে তুলে উঠে দাড়ালো জারা, মেয়েকে উঠতে দেখে ওর মা প্রশ্ন করলেন…

‘ কোথায় যাচ্ছো?’

‘ রাত হয়েছে, আমার বাড়ি ফিরতে হবে। তোমার নিশ্চয়ই তাড়া আছে ‘

‘ জারা..’

‘ আম্মু, আমি আর কিছু শুনতে চাইনা প্লিজ! তোমার থেকে এমনকিছু শুনবো আশা করিনি। তোমার জন্য এতগুলো দিন বাবাকে ভুল বুঝে এসেছি আমি? সরি আম্মু, আজকের পর হয়তো তোমাকে ঘৃনা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবো না ‘

‘ জারা, আমি..’

‘ ভালো থেকো, আর ভবিষ্যতে প্লিজ দেশে ফিরলেও আমার সঙ্গে দেখা করতে এসো না। ২৪ বছর আগে যখন আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে দুবার ভাবোনি, এখন আর ভাবতে হবে না। আমি অনেক ভালো আছি, তোমাকে ছাড়া ‘

মাকে রেখেই বেরিয়ে গেলো জারা, একবারের জন্যও পেছনে ফিরে তাকায়নি। বেরোনোর সময় ওর সেক্রেটারি প্রশ্ন করলো কিন্তু জারা কোনো উত্তর দিতে পারেনি। কি উত্তর দেবে? মেয়েটা নিজেই যে বড় শক পেলো আজ। ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের পার্ক করা গাড়িতে গিয়ে বসে জানালা আটকে দিলো, এতক্ষণ যে কান্না আটকে রেখেছিলো তা আর আটকে রাখতে পারলো না। ঢুকরে কেঁদে উঠলো মেয়েটা, এমনকিছু তো কখনো শুনতে চায়নি ও। মায়ের প্রতি যেমন রাগ হচ্ছে তেমনি নিজের প্রতিও হচ্ছে, এতো বছর বাবাকে ভুল বোঝার জন্যে। কথিত আছে, বাবা ফেলতে পারলেও মায়েরা কখনো তার সন্তানকে ফেলে না। তবে মাঝে মাঝে কিছু ব্যতিক্রম ঘটনাও ঘটে, যা জারার ক্ষেত্রে ঘটেছে। আনোয়ার সাহেব তার মেয়েকে আগলে রেখেছেন এতগুলো বছর, সবটা জানার পর জারা বুঝতে পারছে না কি করবে। কি করা উচিৎ? আজকের পর বাবার সামনে যখন দাঁড়াবে কি বলবে? ক্ষমা চাইবে বাবার কাছে না অন্যকিছু করবে? এসব ভাবতে ভাবতে কান্নার গতি আরো বেড়ে গেলো মেয়েটার। মিনিট পাঁচেক পর, সামনের দিকে তাকিয়ে জারা দেখলো আবরারের গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে আবরার ফোন হাতে নিলো, ওকেই ফোন করবে হয়তো। জারা কিছু না ভেবেই গাড়ি থেকে নেমে এসে সামনে দাঁড়ালো, জারাকে গাড়ি থেকে বেরোতে দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এলো আবরার। পাংচার হওয়া গাড়ির চাকার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো…

‘ তোমার না গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেছে? তাহলে গাড়ির ভেতরে বসে কি করছো?’

চোখ মুছে বেরিয়েছে জারা, কান্না করেছে সেটা আবরারকে বুঝতে দিতে চায়নি। মেয়েটা চাহনি দেখে আবরার পুনরায় প্রশ্ন করলো…

‘ এভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? আমাকে আসতে বললে বিকেলে, ভুলে গেলে নাকি? আর চোখমুখের এই হাল কেনো তোমার?’

চোখমুখ ফুলে গেছে জারার, কান্না করেছে ও? এবার চিন্তিত হয়ে পড়লো আবরার। চিন্তিত স্বরে প্রশ্ন করলো..

‘কি হয়েছে?’

জারা কিছু না বলেই আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো, আবরারও ওকে জড়িয়ে ধরে পিঠে হাত বুলিয়ে প্রশ্ন করলো…

‘ জারা, কিছু হয়েছে? বলো আমাকে। কান্না করেছো কেনো?’

‘ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো, প্লিজ!’

ভাঙ্গা কণ্ঠে জারার মুখে এ কথা শুনে আবরার আন্দাজ করার বহু চেষ্টা করলো কি হয়েছে, এসব ভাবতে ভাবতেই জারাকে ওখান থেকে নিয়ে একটু কোলাহলমুক্ত জায়গায় নিয়ে আসে আবরার। ছোটো একটা লেকের পাশে সিমেন্টের বেঞ্চিতে বসে আছে দুজনে, জারা আবরারের কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে। আবরার শক্ত করে পাশ থেকে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে আছে, এখানে আসার পর একবারও প্রশ্ন করেনি কি হয়েছে। একটু পরে জারা নিজেই বললো…

‘ আজকে আম্মু এসেছিলো আমার সঙ্গে দেখা করতে ‘

অবাক হলো আবরার…

‘ তোমার আম্মু?’

‘ হুমম!’

‘ এতবছর পর তোমার আম্মু এলো কোত্থেকে? আর যদি এসেও থাকেন, তাকে দেখে তোমার হ্যাপি হওয়ার কথা। কিন্তু চোখমুখ এমন ফুলে আছে কেনো? কি কথা হয়েছে তোমাদের দুজনের?’

দীর্ঘশ্বাস ফেললো জারা…

‘ অনেককিছু নিয়ে কথা হয়েছে, এমনকিছু যা আমি আজ প্রথম জানলাম! জানো? শেষবার আম্মুকে কবে দেখেছিলাম আমার মনে নেই। আজ এতগুলো দিন পর আম্মুকে দেখে অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু…আম্মু এভাবে আমার সব খুশি শেষ করে দেবে ভাবিনি, নিজের ওপরই কেমন রাগ হচ্ছে আজ’

‘ জারা, টেল মি! কি বলেছেন উনি তোমাকে?’

মায়ের বলা কথাগুলো মনে পড়তেই আবারো চোখের পানি বাড়লো জারার…

‘ আবরার, আমি এতগুলো বছর আমার বাবাকে এক মিথ্যে দোষে দোষী সাব্যস্ত করে ভুল বুঝে এসেছি। যেখানে সব দোষ আমার মায়ের ছিলো ‘

‘ তোমার মা কি আজ তোমাকে এই সত্যিটা বলতে এসেছিলেন?’

আবরারের কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো জারা..

‘ তুমি আগে থেকেই জানতে?’

‘ হুমম, আব্বু বলেছিলো আমাকে। আমি চাইলেই তোমাকে সবটা জানাতে পারতাম কিন্তু তুমি বিশ্বাস নাও করতে পারো, তাই ভেবে আর বলা হয়নি আর তোমার বাবাও মানা করেছিলেন ‘

আবরারের কথা শুনে যেনো নিজেকে আরও অসহায় লাগছে জারার…

‘ আমাকে আগে কেনো বললে না তুমি আবরার, কেনো? আম্মুর মুখ থেকে সব শোনার পর নিজের প্রতি কতোটা রাগ হচ্ছে আমার তুমি আন্দাজ করতে পারবে না ‘

নিরব রইলো আবরার, জারার বাবা বলেছিলো কিছু বিষয় অজানা থাকাই উত্তম। আবরারও জারার কথা ভেবেই আর কিছু বলেনি কিন্তু জারা যে এভাবে সব জানবে ভাবেনি। দীর্ঘশ্বাস ফেললো জারা, বাবার সঙ্গে করা প্রতিটা বেয়াদবি ও তর্কের মুহূর্তগুলো যেনো হুট করেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওর!

‘মেয়ে হিসেবে আমার নিজেকে ব্যর্থ মনে হচ্ছে জানো? এতো বছর বাবার সঙ্গে থেকেও আমি ওনাকে বুঝতে পারিনি। উনি সবসময় আমার ভালোর জন্য ভেবেছেন, আর আমি? আমি সবসময় ওনাকে শুধু ভুলই বুঝে গেছি। জেদ করে এমন কতো কাজ করেছি যে উনি কষ্ট পেয়েছেন, কিন্তু আমায় কখনো কিছু বলেননি! আমি বাবাকে বুঝতে পারিনি আবরার, আই অ্যাম অ্যা ব্যাড ডটার! ‘

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]